Tuesday, January 31, 2017

ইফসু(IFSO) এবং আন্তর্জাতিকক্ষেত্রে শিবিরনেতা ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহেরের তৎপরতা


-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

বিশ্বব্যাপী পরিচালিত ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমূহকে সমন্বয় সাধনের মহান লক্ষ্যে International Islamic Federation of Student Organizations(IFSO) অর্থাৎ ইসলামী ছাত্র সংগঠন সমূহের আন্তুর্জাতিক জোট প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যে কয়জন মাহমনীষির চিন্তা-চেতনা কাজ করছিল তারা হচ্ছেন মাওলানা মওদূদী রহ: ইলাল ফার্সী রহ? ও ড: মুহাম্মদ নাসের।

১৯৬৬ সালের প্রথম দিকে নাইজেরিয়ার ইসলামী ছাত্র সংগঠন- Muslim Student Society of Nigeria- এর উদ্যোগে ইফসু প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়ে নানা পার্যায় অতিক্রম করে ১৯৬৯ সালে ১৭ই জুন পশ্চিম জার্মানিতে এক সপ্তাহব্যাপী প্রথম প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে এক ঘোষণায় আনুষ্ঠানিকভাবে IFSO আত্মপ্রকাশ করে। ঘোষণাপত্রে বিভিন্ন দেশের সাতটি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দ সাক্ষর করেন। ১৯৭১ সালে পশ্চিম জার্মানীতে দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নয়টি ছাত্র সংগঠন এতে অংশগ্রহণ করে এবং বিভিন্ন দেশের আরো নয়টি সংগঠন উহার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। তুরষ্কের প্রাচীন নগরী ইস্তাম্বুল ১৯৭৫ ও ১৯৭৭ সালে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চতুর্থ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ আরো অনেক দেশের ছাত্র প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। এই সম্মেলনে ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়। সেগুলোর মধ্যে চৌদ্দটি ভাষায় ইসলামী সাহিত্য অনুবাদ ও প্রকাশের ব্যবস্থা ছিল। এভাবে IFSO এ পর্যন্ত ১১৫টি পুস্তক প্রকাশ করে। মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ইসলামী ব্যক্তিত্ববৃন্দ ও সম্মেলনে আলোচনা করেন। বাংলাদেশের অধ্যাপক গোলাম আজম ও এতে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। এরপর পঞ্চম সম্মেলন ১৯৮০ সালে মালয়েশিয়ায় এবং ষষ্ঠ সম্মেলন সুদানের রাজধানী খার্তুমে ১৯৮৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এ সবগুলোতেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রতি বছরেই IFSO এর আঞ্চলিক সম্মেলন ও লীডারশীড ট্রেনিং ক্যাম্প বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকা, এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল এবং আফ্রিকার প্রায় ৫৫টি ইসলামী ছাত্র সংগঠন IFSO এর অন্তর্ভূক্ত হিসাবে কাজ করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্র শিবির ২৫তম সদস্য।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রক্তন সভাপতি ডা: আব্দুল্রাহ মোহাম্মদ তাহের IFSO এর সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে ১৯৯৩-৯৬ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তার দায়িত্ব পালনকালে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, সিম্পোজিয়াম ও সেমিনার উপলক্ষ্যে আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার ৮৪ টি দেশে একশত বারের ও বেশী সফর করেন এবং ভাষণ দেন। সফরকালে তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড: মাহাথির মোহাম্মদ, পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডোন্ট জিয়াউল হক, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড: নাসের, সুদানের প্রসিডেন্ট জেনারেল ওমর হাসান আল বশীর, প্রাক্তন পেসিডেন্ট সুয়াির আদ্দাহাব, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাফর আল নিমেরী, কুয়েতের বর্তমান আমীর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ ও শেখ শাদ, আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রফেসর বোরহান উদ্দীন রব্বানী, তুরস্কের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাজমুদ্দীন আরবাকান প্রমুখ রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া আফগান মুজাহিদ নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার, কাশ্মীঅর মুজাহিদনেতা হেকীম গোলাম নবী, আনব্দুর রশিদ এবং আমান উল্লাহ খান, ফিলিপাইনের মিন্দানাও এম,এন, এল, এফ এবং এমআইএল এফ নেতা নূর মিসৌরী, থাইল্যান্ডের মুসলিম মুজাহিদ নেতা ড: শুকরি, মিশরের ইখওয়ানুল মুসলেমীনের মুর্শিদে আম ড: নাসের, সুদানের ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান ড: হাসান তুরাবী, সাউথ আফ্রিকার নেতা আহম্মের দিদাদ ইউকে এর প্রখ্যাত সঙ্গিতজ্ঞ নওমুসলিম ইউসুফ ইসলাম, আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভী, জামান কাদাউই প্রমূখ বিশ্ব ইসলামী নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করের। একটি সাক্ষাতকারে ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ইফসুর সেক্রেটারী জেনারেল থাকার সময়ের উল্লেখযোগ্য দুএকটা ঘটনা উল্লেখ করতে যেয়ে বলেন :

‌‌‌“ক) IFSO জাতিসংঘের Olserver member, সে সুবাদে জাতিসংঘের অধীনে জেনেভাস্থ Human Rights Commission এরও সদস্য। ১৯৯৪ সালে Human Rights Commission এর International Conference অনুষ্ঠিত হয়েছিল জেনেভায়। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা সেই Conference এ যোগ দিয়েছিলেন। IFSO সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে আমিও সেই সম্মেলনে যোগ দেই। প্রথম দিনেই কনফারেন্স হলের লবীতে সাক্ষাৎ পাই Kashmir America concil এর সভাপতি মুজাহিদ নেতা ড: গোলাম নবী ফাই এর সাথে। তিনি আমেরিকা থেকে এসেছেন কাশ্মীর এ মানবাধীকার  লংঘন সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরার জন্য। কিন্তু তিনি কোনভাবেই কনফারেন্স হলে ঢুকার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি তাকে আমার টীম এর সদস্য করে একটি এক্সেস কার্ড ইস্যু করি। আমার কার্ড নিয়ে কনফারেন্স এর চেয়রম্যান এর কাছে গেলে তাকে গ্রহন করা হয়। ড: গোলাম নবী ফাই কনফারেন্স এ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে কাশ্মীঅর এর উপর অত্যন্ত বলিষ্ঠ বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবাধিকার সংস্থার আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কাশ্মীরের উপর বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দিতে পেরে IFSO এর সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে আমার খুব আনন্দ অনুভব হয়েছিল।

খ) ১৯৯৬সালে IFSO-এর  ইন্টর্নেশনাল কনফারেন্স এর জন্য হোস্ট হওয়ার অনুরোধ জানানোর্ জন্য তুরস্কের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড: নাজমুদ্দিন আরবাকানের সালে ইস্তাম্বুলে তার অফিসে সাক্ষাতের সুযোগ পাই। IFSO সম্বন্ধে আগে থেকেই তিনি ওয়াকেফহাল ছিলেন। তুরস্কে আমরা সম্মেলন করতে চাই শুনে উনি খুশি হলেন এবং তাৎক্ষনিকভাবে অনুমতি দিলেন এবং ইস্তাম্বুলের বসফরাস নদীর তীরে ফাইভ স্টার হোটেলেটি পুরো এক সপ্তাহের জন্য কনফারেন্স ডেলিগেটদের জন্য ভাড়া দেন।
প্রসঙ্গ ক্রমে তিনি তার উদ্যোগে জি-সেভেন এর এগেইনস্টে ডি-৭ গঠনের কথা বললেন। এত বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আমি বিনয়ের সাথে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানালে তিনি বিবেচনার আশ্বাস দেন। পরে ডি-৭, ডি-৮ হয় এবং বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভূক্ত হয়”  (ছাত্র সংবাদ, মার্চ-এপ্রিল ২০০০)। এখানে উল্লেখ্য যে, আটটি মুসলিম উন্নয়নশীল  দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের নিয়ে ডি-৮ সম্মেলন ১ম হাসিনা সরকারের আমলে মার্চ ১-২ , ১৯৯৯ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেটা ছিল ডি-এইট -এর ২য় সম্মেলন।  এ সম্পর্কে জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন: উন্নয়নশীল ৮টি দেশ। 


Monday, January 30, 2017

অত্যন্ত কঠিন সতর্কবার্তার হাদিসগুলোর একটি - গোপন পাপ বিষয়ে

অত্যন্ত কঠিন  সতর্কবার্তার হাদিসগুলোর একটি নিচে দেয়া হলো।  মনোযোগ দিয়ে পড়ুন:

রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'আমার উম্মতের অনেকের কথা আমি জানি, যারা কিয়ামাতের দিন তিহামা অঞ্চলের সাদা পর্বতমালা পরিমাণ নেকি নিয়ে উপস্থিত হবে, কিন্তু আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেবেন।
এই কথা শুনে সাওবান (রা.) বললেন, "হে রাসূলাল্লাহ! তাদের পরিচয় দিন, আমরা যেন নিজেদের অজান্তে তাদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে যাই।"

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তারা তোমাদেরই ভাই, তোমাদের সাথেই থাকে। তোমরা যেমন রাত জেগে ইবাদাত করো, তারাও করে।
কিন্তু যখন একাকী হয় তখন আল্লাহর নিষিদ্ধকৃত হারামে লিপ্ত হয়।'
[ইবনে মাজাহ ৪২৪৫; হাদিসটি সহিহ]  

আমরা যারা সুযোগ পেলেই দৃষ্টির খেয়ানত করি, লজ্জাস্থানের খেয়ানত করি, মানুষের অধিকার নষ্ট করি ও নির্জনে বিভিন্ন হারামে লিপ্ত হই - এই হাদিস আমাদের জন্য মহাসতর্কবার্তা। হে আল্লাহ আমাদেরকে গোপন গুনাহ থেকে রক্ষা করুন। আমিন৷

ফেইসবুক পোস্ট থেকে: 

গোপন গুনাহ কতটা ভয়াবহ |  POWERFUL REMINDER:


Friday, January 27, 2017

শিবির সভাপতি ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদের বিশ্বব্যাপী মানবসেবায় নেতৃত্ব প্রদান

ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদ চট্টগাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদের কৃতি সন্তান।   তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।   তিনি দীর্ঘ বহু বছর যাবৎ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইসলামী সেবা সংস্থায় কর্মরত আছেন।   তিনি যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক ত্রাণ ও উন্নয়ন সংস্থা মুসলিম এইডের বহু দায়িত্ব সাফল্যের সাথে পালন করেন । ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই সংস্থার বৈদেশিক কর্মসূচির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  তিনি ফেইথ রিজেনের কমিউনিটি ও আন্তর্জাতিক কর্মসূচির প্রধান হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি চার বছর  মুসলিম এইডের সহকারী প্রধান নির্বাহী ছিলেন। সাহায্য সংস্থা ও কমিউনিটি উন্নয়ন কর্মসূচিতে তার ১০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি মুসলিম এইডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) হিসেবে নিয়োগ পান।  তার প্রতিক্রিয়ায় হামিদ হোসাইন আজাদ বলেছিলেন:  ‘এই চ্যালেঞ্জিং কাজের দায়িত্ব নিতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ। আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় ও সাহায্য কামনা করছি। আমি মুসলিম এইডকে ভালোবাসি এবং এর ল্ক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আমি সবসময়ই উৎসাহী। এই মহান সংগঠনের উন্নয়নে এবং মানবতার সেবায় আমি নিরলসভাবে কাজ করে যাবো ইনশাল্লাহ।’

উল্লেখ্য, দুর্যোগ-আক্রান্ত দেশ ও দরিদ্র মানুষের সেবার জন্য ১৯৮৫ সালে যুক্তরাজ্যে মুসলিম এইড প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে সংস্থাটি বিশ্বের ৭০টি দেশে তার সেবার পরিধি বিস্তৃত করেছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকেই সাহায্য করে থাকে মুসলিম এইড। এর ওয়েবসাইট এড্রেস: www.muslimaid.org 

মুসলিম দীর্ঘদিন দায়িত্বপালন শেষে ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদ যোগদান করেছেন যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংস্থা “মুনতাদা এইড” এ। আর নিয়োগ পান এর প্রধান নির্বাহী (CEO) হিসেবে। উল্লেখ্য যে “মুনতাদা এইড” দুনিয়াব্যাপী ১৮টি দেশে ২৪ টি সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে তাদের স্বেচ্ছাসেবী মূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দূর্গত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা, স্বাস্থ্যখাত, বিশুদ্ধ পানি ও শিক্ষাখাতসহ আর্তমানবতার সেবায় সাহায্যের বাড়িয়ে দেয়াসহ আরো বিভিন্ন সহযোগিতামূলক  কাজ  এ সংস্থাটি  করে থাকে। এর ওয়েবসাইট এড্রেস: www.muntadaaid.org । 
Facebook address: www.facebook.com/hamidh.azad

See these video: 

Friday, January 20, 2017

ও, আই, সি, গঠন ও জামায়াতে ইসলামীর অবদান


ও. আই. সি. গঠনের ক্ষেত্রে ও জামায়াতে ইসলামী তথা জামায়াত নেতাদের অবদান রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠাতা যুগশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহ:) মক্কা মুকার্রামায় ১৯৬২ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইসলামী সম্মেলনে যোগদান করেন এবং ইসলামী বিশ্বের সাথে সংযোগ সম্পর্ক স্থাপনকারী রাবেতায়ে আলমে ইসলামী নামক সংস্থার প্রতিষ্ঠায় আল্লামা মওদূদীর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি একান্ত ভাবে কামনা করতেন যে, বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ইসলামের ভিত্তিতে একটি কমনওয়েলথ গঠিত হোক। এ ম্পর্কে তিনি বার বার সওদী আরবের বাদশাহ শাহ  ফয়সালকে অনুরোধ জানান। অবশেষে ষাটের দশকের শেষাংশে মরক্কোতে অনুষ্ঠিত মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর শীর্ষ সম্মেলনে ইসলামী সেক্রেটারীয়েট সংস্থা গঠন করা হয়।  ১৯৬৯ সালে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে সকল সরকারী প্রতিনিধিদলের মধ্যে ব্যতিক্রম একমাত্র বেসরকারী ব্যক্তিত্ব হিসাবে আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ) উপস্থিত ছিলেন। কারণ তারই নিরবিচ্ছিন্ন সাধানার ফলশ্রুতিতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর এই ঐক্য সংস্থা বাস্তবরূপ লাভ করে। তিনি ওআইসির সামনে কতগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব রাখেন। তার মধ্যে অন্যতম মুসলমানদের একটি নিজস্ব সংবাদ সরবরাহ সংস্থা এবং একটি সম্মিলিত অস্ত্র নির্মাণ কারখানা প্রতিষ্ঠা। আল্লামা মওদূদীর ক্রমাগত অসুস্থাতার কারণে এসব বিষয়ে তিনি চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি এবং বিশেষ করে শাহ ফয়সালের শাহাদাতের পর ঐ সব প্রস্থাব ও পরামর্শগুলো কার্যকর করতে পারেননি। আল্লামা মওদূদী এবং বাদশাহ ফায়সালের মত ব্যক্তিত্বের অভাবে ওআইসির সত্যিকার রূপ প্রকট হয়নি। তথাপি এই ওআইসি মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী ঐক্যচেতনাকে জাগ্রত রেখেছে এবং কিছু না কিছু পরিমাণে কাজ ও হচ্ছে। ওআইসি গঠনে জামায়াতে ইসলামীর অবদান অবশ্যই আবিস্মরণীয় ঘটনা। 

Thursday, January 19, 2017

ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও আন্তর্জাতিকভাবে এর বিস্তার এবং জামায়াতে ইসলামী


সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহ:) সহ আরো কয়েকজন ইসলামী চিন্তাবিদদের চিন্তাধারা সমন্বয়ে গঠিত ইসলামী ব্যাংকের পরিকল্পনা ও, আই, সি(ওয়ার্ল্ড ইসলামিক কনফারেন্স) এ গৃতীত হয়। ১৯৭৪ সালে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ওআইসি সদস্যভুক্ত মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সম্মেলনে মুসলিম রাষ্ট্র সমূহের সক্রিয় সহযোগিতায় ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (এল,ডি,বি) নামের একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৭৫ সালের জেদ্দাকে কেন্দ্র করে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে সর্বপ্রথম ইসলমী উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর পূর্বেই সোশ্যাল ব্যাংক নামে মিশরে একটি শক্তিশালী ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর মুসলিম বিশ্বে ব্যাপকভাবে ইসলামী ব্যাাংক প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দুবাই, কুয়েত, সওদী আরব প্রভৃতি দেশে বেশ কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ও ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার জন্য এগিয়ে আসে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। 
                                                        See this video:
(একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন)

Wednesday, January 18, 2017

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে তুরস্কের প্রখ্যাত আলেম নুরুদ্দিন ইলদিজের লেখা একটি চিঠি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে তুরস্কের প্রখ্যাত আলেম, বহু গ্রন্থ প্রণেতা নুরুদ্দিন ইলদিজের লেখা একটি চিঠি: 
এই মহাবিশ্বের মালিক, মহা শক্তিধর মহান আল্লাহ তালার সালাম বর্ষিত হোক তোমাদের উপর, হে এশিয়ার বীর সেনানীগণ।তোমাদের অন্তর আজ হযরত (রা) হামযা (রা) , হযরত সুমাইয়া (রা) , হযরত ইয়াসসির (রা) , মিহরাবে শহীদ হওয়া হযরত উমার (রা)এর ঈমানের মত ঈমানে পরিপূর্ণ হয়েছে সালাম তোমাদের সেই প্রশান্ত আত্মার প্রতি।
আজ তোমরা, উহুদের সাহসী সেই যোদ্ধাদের প্রতিনিধি, আজ যারা তোমাদেরকে নির্মূল করতে চায় তারা জানে না যে তোমাদের এই রক্ত তোমাদের উত্তরসূরিদেরকে জাগিয়ে রাখবে যুগের পর যুগ , শতাব্দীর পর শতাব্দী। তারা মৃত্যুবরণ করবে, তাদের নিশানা মুছে যাবে, তাদের নাম মানব ইতিহাসে খুজেও পাওয়া যাবে না কিন্তু পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন এই মানবতা তোমাদেরকে স্মরণ করবে, তোমাদের এই ঢেলে দেওয়া রক্ত দিয়ে লিখব নতুুরিদেরকে, ভাঙ্গা কেল্লায় উঠবে ইসলামের বিজয় পতাকা, তোমাদের দেখে আসবে আর লাখো মুজাহিদ। তোমারা মানুষের অন্তরে, ফেরেশতাদের দলিলে বেঁচে থাকবে অনন্তকাল। ওরা কিয়ামাতের দিন নিকৃষ্ট হয়ে উঠবে আর তোমরা শহীদ হিসাবে বীরের বেশে কিয়ামতের দিন জেগে উঠবে।

হে এই সময়ের হামযাগন;
আব্দুল কাদের মোল্লা
মুহাম্মাদ কামারুযযামান
আলী আহসান মুজাহিদ
গোলাম আযম
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
মৌলানা মতিউর রহমান নিজামী .................
আপনারা মৃত্যুকে হত্যা করেছেন। এই উম্মত আপনাদেরকে কক্ষনো ভুলে যাবে না। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের শাহাদাতকে কবুল করুন। পরবর্তী বংশধরদের মাঝে আপনাদের মর্যাদা বুলন্দ করুন।
আমরা শারীরিকভাবে হয়ত আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পারিনি, কিন্তু আমরা আপনাদেরকে ভালবাসি, অন্তর থেকে মহব্বত করি, আমরা আপাদেরকে দেখে ঈর্ষান্বিত হই। আমরা আপনাদেরকে আল্লাহ তালার কাছে সঁপে দিলাম। আল্লাহ তালার কাছে দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা আপনাদেরকে যেন হামযা (রা) এর সাথে রাখেন সকল শহীদদেরকে এক সাথে রাখেন।

আল্লাহ আপনাদের পথ খুলে দিন। আল্লাহ আপনাদের মর্যাদাকে আকাশের সমান বুলন্দ করুন। ফেরেশতাদের মত ডানা মেলে ঘুরে বেড়াও আরশে আযীমে। আমাদেরকেও সাথে রাখতে ভুলবেন না, আমাদেরকেও নিয়ে যান আপনাদের কাছে ।
তোমাদের উপর সালাম হে এশিয়ার বীর সেনানীরা।
হে উম্মতের সেনাপতিগণ, অগ্রগামী বীর সেনানীরা সালাম তোমাদের উপর সালাম।

Friday, January 13, 2017

আমি জামায়াতে ইসলামী না করেও কেন তাদের প্রতি মুগ্ধ!! - অধ্যাপক আনিসুর রহমান ||



বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতিতে সবচেয়ে দ্রুত জনপ্রিয় দলে পরিনত হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী!কিন্তু কেন? ভার্সিটিতে যান,শিবিরের সহযোগিতা পাবেন।ইসলামী ব্যাংকে যান আপনাকে তারা পরিপূর্ণ হেল্প করবে। রাস্তায় বিপদে পড়ুন তারা আপনাকে উদ্ধার করবে। আপনার প্রিয়জনের মূমুর্ষ অবস্থায় তারা রক্ত দেবে।বন্যার্তদের তারা ত্রাণ দেবে। যেকোন মানবিক ইস্যু নিয়ে তারা রাজপথ মাতাবে।

.
শুধু আপনার কথাগুলি তাদের বলেই দেখুন।কখনো তার বিনিময়ে অর্থ নেবেনা। শুধু আপনাকে আল্লাহর রাস্তার দাওয়াত দিয়ে যাবে। কিন্তু তারা রাজাকার, তারা সন্ত্রাসী। বাংলাদেশে যত অপকর্ম হয় সবকিছুর নাটের গুরু তারাই।এই কথাগুলো তাদেরই শুনতে হবে।যতক্ষণ আপনি সত্যের সন্ধান না করবেন। সবাই ভাল করেই জানেন, কেন প্রগতিশীলরা জামায়াতকে অপছন্দ করে? জামায়াত এককভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় গেলে মাত্র ৫ বছরে দেশ থেকে দূর্নীতি, অশ্লীলতা ,ভেদাভেদ ইত্যাদি বিতাড়িত হবে।
.
কিন্তু আমাদের শত্রু প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি এটা হতে দেবে না।তারা চায় তাদের চারপাশের দেশগুলোতে সবসময় গন্ডগোল লেগে থাকুক, আর মুরব্বীয়ানা দেখিয়ে তারা তার ফায়দা নেবে।আপনি আপনার এলাকার জামায়াত কর্মীকে কখনো অন্যায় করতে পেয়েছেন? কেন আপনি প্রচার যন্ত্রে বিভ্রান্ত হয়ে তাদেরকে খারাপ বলে থাকেন? আপনার পরিবারে যা কিছু হোক না কেন যৌথ পরিবারটি ভেঙ্গে যেতে দিতে আপনার মন চাইবে না।আপনার প্রতিবেশী কিন্তু ভাঙ্গনে ইন্ধন যোগাবে। আপনার ঘরের একজন সদস্যকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে সে এটা করবে।হয়তো পরবর্তীতে আপনি এটা অনুধাবন করতে পারবেন।
.
ভারত ঠিক একই কাজটি করছে ৭১'এ।আর তখনকার দেশপ্রেমিক জামায়াতকে এখন বহন করতে হচ্ছে রাজাকার উপাধী! আপনার নিজের ব্যস্ততায় আপনি দল হিসেবে জামায়াতের ভাল কর্মকান্ডের খোজঁ নেন না।কিন্তু না বুঝেই অপবাদ ঠিকই দেন,এটা কি হুজুগে হলোনা? বেশকিছুদিন আগে ছাত্রদের অধিকার আদায়ে ছাত্রশিবির আন্দোলন করেছে। শিক্ষা খাতে ভ্যাট বাতিলের জন্যে সে আন্দোলন। আপনার মূল্যায়ন কি? আপনার পছন্দের সংগঠনটি কি বন্যার্তদের পাশে দাড়িয়েছে? মানুষকে অস্বাভাবিকভাবে যে হত্যা করা হচ্ছে, কে তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে? এমন অনেক না বলা উত্তম কাজের জন্যে আপনি কি কখনো জামাত শিবিরকে বাহবা দিয়েছেন? অথচ, যেই অপবাদটিকে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আপনার এত ক্রোধ, তা শুধুমাত্র একটি প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই না আন্তর্জাতিক আদালত নয়, আপনার বিবেকের আদালতে বিচার করুন!!

Thursday, January 12, 2017

সরকারী ক্ষমতায় সীমিত সামর্থ নিয়ে জামায়াতের সাফল্য



> বিগত পাঁচ বছর চারদলীয় জোট সরকারে অংশগ্রহণ করে জামায়াতের দুইজন মন্ত্রী দেশবাসীর সামনে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, সকল প্রকার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অন্যায়-অবিচার হতে সম্পূর্ণ মুক্ত থেকে দক্ষ ও যোগ্যতার সাথে সরকার পরিচালনা করা সম্ভব। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে জামায়াতের দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাদের মন্ত্রণালয়ে কোন দুর্নীতির প্রমাণ না পাওয়া তার বড় প্রমাণ।


> জামায়াতের এমপিগণ জাতীয় সংসদে ভূমিকা পালনের সাথে সাথে নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে নিষ্ঠা ও সততার সাথে কাজ করে জনগণের মধ্যে এক নবজাগরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন।


> জামায়াতের আমীর কৃষি মন্ত্রী থাকাকালে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে সচিবালয় থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত কৃষি সেক্টরে ব্যাপক গতি সঞ্চার করা হয়।

> রফতানিযোগ্য কৃষি পণ্যের উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি করা হয়।

> দারিদ্র্য বিমোচন ও কৃষকের ক্ষমতায়নের জন্য “চাষীর বাড়ি-বাগান বাড়ি” প্রকল্প চালু করা হয়।
> সহজে পণ্য বিক্রয়ের জন্য কমিউনিটি মার্কেট প্রতিষ্ঠা করা হয়।

> বৃক্ষরোপন অভিযানের সাথে ফলজ গাছের রোপণ অন্তর্ভুক্ত করে ফল চাষের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করা হয়। দেশীয় ফলের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুন হয়।
> প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সকল গবেষণা প্রতিষ্ঠানে চলতি দায়িত্বের স্থলে পূর্ণকালীন মহাপরিচালক নিয়োগ করা হয়।
> মাঠ পর্যায়ের প্রায় ১২০০০ ব্লক সুপারভাইজারদের পদ আপগ্রেড করে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার পদে পদায়ন করা হয়- যুগান্তকারী এ পদক্ষেপের ফলে কৃষি উন্নয়নে তাদের আগ্রহ ও নিষ্ঠা বৃদ্ধি পায়।

> দেশে দ্রুত শিল্পায়ন, বেকারত্ব দূরীকরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, দেশব্যাপী ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্পের ব্যাপক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিল্প নীতি-২০০৫ এবং এসএমই উন্নয়ননীতি কৌশল-২০০৫ প্রণয়ন করা হয়।

> দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা আরো বেগবান করার জন্য স্মল এন্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ (এসএমই) ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
> বিএসটিআই’র আধুনিকায়ন, ন্যাশনাল এ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড গঠন, পেটেন্ট অফিস এবং ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রি অফিসকে একীভূত করে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর গঠন, বিএসটিআই’র আধুনিকায়ন করা হয়।

> বন্ধ শিল্প যেমন কর্ণফুলী পেপার মিলস লিঃ (কেপিএম)-এর কস্টিক ক্লোরিন প্লান্ট ও খুলনা হার্ডবোর্ড মিল পুনঃচালু করা হয়।

> ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে মহিলাদের কর্মসংস্থান ও সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে শিল্পোদ্যোক্তা ফোরাম গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

> সফল সার ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পখাতের উন্নয়ন, মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অর্গানাইজেশনের আধুনিকায়ন করা হয়।

> লবন উৎপাদন দ্বিগুন হয়। চিনি শিল্পে প্রথম দু’বছরের প্রচেষ্টায় ১২ বছর ধরে চলা লোকসান বন্ধ হয় এবং ৩য় বছরের শেষে লাভজনক শিল্পে পরিণত হয়।
> এ সময়ে শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধির হার অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়।

> এছাড়াও কৃষি ও শিল্প সেক্টরে অনেক উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়, ফলে দেশের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জিত হয়।

> জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী থাকাকালে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক দারিদ্র্য বিমোচন ও মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে ঋণ, অনুদান, আয়বর্ধক, প্রশিক্ষণ, ইত্যাদি কর্মসূচী গ্রহণ ও সম্প্রসারণ করা হয়।
> উপরোক্ত কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য বাজেট প্রায় ৪ গুণ বৃদ্ধি করা হয় ।

> বয়স্ক ভাতাভোগীদের সংখ্যা ৪ লক্ষ থেকে বৃদ্ধি করে ১৭ লক্ষে উন্নীত করা এবং ভাতা বৃদ্ধিসহ বাজেট প্রায় ৮ গুণ বৃদ্ধি করা হয়।

> গরীব-দুস্থ-অসহায় ব্যক্তিদের জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য ডায়াবেটিক হাসপাতাল, হার্ট ফাউন্ডেশন ও অন্যান্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও সম্প্রসারণ করা হয়।

> প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন ও কল্যাণে ৮ দফা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়।

> প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ভাতা ও বিনাসুদে ঋণ প্রদান এবং প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য ছাত্রবৃত্তি প্রদানের স্থায়ী নিয়ম চালু করা হয়।

> প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আয়বর্ধক কমসূচী যেমন, মিনারেল ওয়াটার উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও বিপণন ব্যবস্থা চালু করা এবং প্লাষ্টিক দ্রব্যের উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করা হয়।

রচনাকাল: ৫ মার্চ ২০১২, সোমবার

Tuesday, January 10, 2017

জুমার দিনের মর্যাদা নিয়ে কিছু হাদীস


জুম’আর দিন প্রসঙ্গে আরো কিছু সহিহ হাদিস:

রাসুল (সাঃ) বলেনঃ জুম’আর দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, তা-ই তাকে দেওয়া হয়। আর এ সময়টি হল জুম’আর দিন আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত, একটি সময়। [বুখারীঃ ৯৩৫]
হযরত আবু হুরাইরা(রা) হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-” যে গোসল করে জুমু’আর উদ্দেশ্যে আসে এবং যে পরিমাণ নফল নামায পড়ার তাওফীক হয় তা পড়ে, এরপর ইমামের খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকে এবং ইমামের সঙ্গে নামায আদায় করে, আল্লাহ তা’আলা তার দশ দিনের (সগীরা) গুনাহ মাফ করে দেন।” [সহীহ মুসলিমঃ ১/২৮৩]
জুমুয়ার দিন মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত এর জন্য একটি মহান দিন। এ জুম’আর দিনটিকে সম্মান করার জন্য ইহুদী-নাসারাদের উপর ফরজ করা হয়েছিল; কিন্তু তারা মতবিরোধ করে এই দিনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। অতঃপর ইহুদীরা শনিবারকে আর খ্রিষ্টানরা রবিবারকে তাদের ইবাদতের দিন বানিয়েছিল। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতের জন্য শুক্রবারকে মহান দিবস ও ফযীলতের দিন হিসেবে দান করেছেন। আর উম্মতে মুহাম্মদী তা গ্রহন করে নিল। [বুখারী ৮৭৬; মুসলিমঃ ৮৫৫]
আবদুল্লাহ ইবনে আমর [রাযি] থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম প্রত্যেক জুমুআর দিনে নিজের গোঁফ ছোট করেতেন এবং আংগুলের নখ কাটতেন। [আখলাকুন নবী [সা], হাদিস নং-৭৭০]
আবু হুরায়রা [রাযি] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেন, জুমুআর দিন মসজিদের দরজায় ফিরিশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি মোটাতাজা উট কুরবানী করে। এরপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি গাভী কুরবানী করে। এরপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি দুম্বা কুরবানী করে তারপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগী দানকারীর ন্যায়। এরপর আগমনকারী ব্যক্তি ডিম দানকারীর ন্যায়। তারপর ইমাম যখন [খুৎবার প্রদানের জন্য] বের হন তখন ফিরিশিতা তাঁদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহকারে খুৎবা শুনতে থাকেন। [বুখারি শরীফ হাদিস নং-৮৮২]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন সূরা কাহ্ফ পড়বে তার জন্য এক জুম’আ থেকে আরেক জুম’আ পর্যন্ত আলো বিচ্ছুরিত হবে। [মুসতাদারেক হাকিমঃ২/৩৯৯, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯, ফয়জুল ক্বাদীরঃ৬/১৯৮]
হযরত ইবনে উমর(রা) থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি শুক্রবার দিন সূরা কাহফ পাঠ করবে তার পা থেকে আকাশের উচ্চতা পর্যন্ত নূর হয়ে যাবে, যা কেয়ামতের দিন আলো দিবে এবং বিগত জুমআ থেকে এ জুমআ পর্যন্ত তার সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। [আত তারগীব ওয়া তারহীবঃ ১/২৯৮]
আবু দারদা রাঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যেব্যক্তি সুরায়ে কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফেৎনা হতে রক্ষা পাবে। [সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ১৩৪২, মুসনাদু আহমদ,হাদিসঃ২০৭২০, আবু দাউদ,হাদিস- ৩৭৬৫]
হযরত ইয়াযীদ ইবনে আবি মারয়াম(র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন পায়ে হেঁটে জুম’আর জন্য যাচ্ছিলাম। এমন সময় আমার সাথে আবায়া ইবনে রিফায়া (র) এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর! তোমার এই পদচারণা আল্লাহর পথেই।আমি আবু আবস (রা) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তির পদদ্বয় আল্লাহর পথে ধূলিময় হলো, তার পদদ্বয় জাহান্নামের জন্য হারাম করা হলো। [জামে তিরমিযি,হাদিস নং-১৬৩৮, সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৯০৭]
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, জুম’আতে তিন ধরনের লোক আসে। (ক) যে ব্যক্তি অনর্থক আসে, সে তাই পায় (খ) যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনার জন্য আসে। আল্লাহ চাইলে তাকে দেন, অথবা না দেন (গ) যে ব্যক্তি নীরবে আসে এবং কারু ঘাড় মটকায় না ও কষ্ট দেয় না, তার জন্য এই জুম’আ তার পরবর্তী জুম’আ এমনকি তার পরের তিনদিনের (সগীরা) গোনাহ সমূহের কাফফারা হয়ে থাকে। এ কারণেই আল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি একটি নেকীর কাজ করে, তার জন্য দশগুণ প্রতিদান রয়েছে (আন’আম ৬/১৬০)। আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৩৯৬, অনুচ্ছেদ-৪৪।

Friday, January 6, 2017

হাশরের ময়দানে ৫টি প্রশ্নের উত্তর


ইসলামী আন্দোলন: সাফল্য ও বিভ্রান্তি - অধ্যাপক গোলাম আজম


ইসলামী আন্দোলনে সাফল্য সম্পর্কে সম্যক অবগতি এবং এসম্পর্কিত বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য অধ্যাপক গোলাম আজমের “ইসলামী আন্দোলন-সাফল্য ও বিভ্রান্তি” -এই বইটি উত্তমরূপে অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। এর ইবুক ডাউনলোডের লিংকটা এখানে দেয়া হলো: “ইসলামী আন্দোলন-সাফল্য ও বিভ্রান্তি” 



Thursday, January 5, 2017

নামাজ নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাদীন ও আছার


বসনিয়া-হার্জেগোভিনার স্বাধীনতা অর্জন, এর মর্মন্তুদ ইতিহাস ও প্রভাব-প্রতিক্রিয়া এবং জামায়াত ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা: এই দেশ একটি ফেডারেশন। মোট আয়তনের এক বড় অংশ জুড়ে বসনিয় সার্ব দের স্বায়ত্বশাষিত প্রজাতন্ত্র "স্প্রস্কা"। বাকি অংশে ক্রোয়েশিয় ও মুসলিম অধ্যুষিত। বর্তমানে জনসংখ্যার অন্তত ৫১% বসনিয়ান মুসলিম।

পূর্ব ইউরোপ থেকে কম্যুনিস্ট শাসন অবসানের পর যুগোশ্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে বসনিয়া-হার্জেগোভিনা।   এর প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপে কসোভা নামের আরেকটি রাষ্ট্র স্বাধীনতা অর্জন করে। বসনিয়া-হারর্জেগোভিনা রাস্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, প্রথম প্রেসিডেন্ট ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক আন্দোলনের নেতা আলী ইজ্জত বেগভিটস ইখওয়ানুল মুসলেমিন প্রভাবিত আল আজহার থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত প্রখ্যাত আলেম ও মোহাদ্দিস মোহাম্মদ খানজীর ছাত্র। ৯ টি উপদলের সমন্বয়ে গঠিত মুসলিম মুজাহিদ ফ্রন্টের অধিনায়ক ছিলেন সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহ:) এর পরিকল্পনা ও তত্ত্ববধানে প্রতিষ্ঠিত মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা প্রাপ্ত মাহমুদ কারজিতস। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের সাবেক নায়েবে আমীর মরহুম খলিল আহম্মদ হামেদী (রহ:) বলেন, ‌‌‌‌“বসনিয়া মুসলিম তরুনদের মাঝে ইসলামী জিহাদের উদগ্র বাসনার ফলশ্রুতিতে সেখানে শুরু হয় সার্ব বিরোধী সশস্র সংগ্রাম।   এ জিহাদে সেই যুবকরাই   অগ্রণী ভূূমিকা পালন করেন যারা আরব বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে অধ্যায়নরত ছিলেন। তারা মাওলানা মওদূদী (রহ:), শহীদ হাসান আল বান্না (রহ:) ও শহীদ সাইয়েদ কুতুব (রহ:) - এ সকল মহান সাধক পুরুষদের জিহাদী মন্ত্রে উজ্জীবিত হন (ইসলামী আন্দোলনের অতীত বর্তমান, পৃষ্ঠা ২৭)।

পূর্ব ইউরোপ থেকে কম্যুনিস্ট শাসন অবসানের পর যুগোশ্লাভিয়ার প্রদেশগুলো যেমন শ্লোভানিয়া, সার্বিয়া, ক্রোশিয়া, মন্টেনিগ্রো, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা এবং মেসিডোনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে। বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ১৯৯২ সালের ১লা মার্চ যুগোশ্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। স্বাধীনতার সপক্ষে অনুষ্ঠিত গণভোট সংখ্যালঘু সার্বরা ব্যতীত অধিকাংশ লোক তথা সংখ্যাগরিষ্ঠ সবনিয়া বসনিয়া মুসলমান ও সংখ্যালঘু খৃষ্টান ক্রোয়েমিয়ানরা ভোট প্রদান করে। ১৯৯২ সালে ইউরোপীয় জোট ও যুক্তরাষ্ট্র সবনিয়া-হার্জেগোভিনাকে স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯৯২ সালের মে মাসে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এর পূর্বে ১৯৯০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিম্নরূপ: ১) ইসলামী ডেমোক্রেটিক আন্দোলন ৮৬ আসন, ২) সার্ব ডেমোক্র্যটিক পার্টি ৭০ আসন, ৩) ক্রোয়েশিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফেডারেশন ৪৫ আসন, ৪) অন্যান্য সম্প্রদায়ের ও দল পেয়েছে ৩৯ আসন। ইসলামী ডেমোক্র্যাটিক আন্দোলনের প্রেসিডেন্ট আলী ইজ্জত বেগভিটসকে দেশের প্রেসিডেন্ট, সালাম সাবিতসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ক্রোশিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফেডারেশনের নেতা জিওরলিভিয়ানকে প্রধানমন্ত্রী, আরো ৪ জন ক্রোশিয়ান মন্ত্রী এবং দুইজন সার্বমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। পার্লামেন্টের স্পীকার হয় সার্ব সম্প্রদায়ের লোক।

১৯৯২ সালে সবনিয়া হারর্জেগোভিনা যুগোশ্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার পর যুগশ্লাভিয়ার সার্ব  সম্প্রদায় একে অস্বীকার করে এবং যুদ্ধ ঘোষনা করে। সার্ব শাসিত যুগোশ্লাভিয়ার বৃহৎ প্রদেশ সার্বিয়া বসনিয়া-হারর্জেগোভিনার অভ্যন্তরে দেড় লাখ সদস্যবিশিস্ট সার্ব মিলিশিয়া তৈরী করে। সংখ্যালঘু সার্ব সম্প্রদায় বসনিয়া-হারর্জেগোভিনার ভেতর সার্ব প্রজাতন্ত্র কায়েম করে তাকে সার্বিয়ার সাথে যুক্ত করতে চায়। বসনিয়ার  সার্ব নেতার নাম হচ্ছে রাদুভান কারাজিতস। অপরদিকে সার্ব শাসিত যুগোশ্লাভিয়া বৃহত্তর সার্বিয়া কায়েমের উদ্দেশ্যে বসনিয়া-হারর্জেগোভিনা দখল করতে চায়। এলক্ষ্যে সার্বরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সামষ্টিক উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে এবং ভয়াবহতম গণহত্যা, নারী-ধর্ষণ ও নির্যাতন চাপিয়ে দেয়। আর যুদ্ধের শুরুতেই জাতিসংঘ বসনিয়া-হারর্জেগোভিনার উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বসে। এ দিকে মুসলমানদের হাতে অস্ত্র আসার পথ বন্ধ, অন্যদিকে বসনিয়া হারর্জেগোভিনায় সার্বরা সাবেক যোগোশ্লাভিয়ার বৃহৎ প্রদেশ সার্বিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র লাভ করতে থাকে। এ অবস্থায় বসনিয়া মুসলমানদের নিরাপদ অঞ্চলের প্রতিরক্ষার জন্য পাকিস্তান তিন হাজার সৈন্য পাঠাতে চেয়েছিল, কিন্তু EC অর্থাৎ ইউরোপের গোষ্ঠী তা প্রত্যাখ্যান করে বসে। বৃটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জন মেজর ঘোষণা দেয় ইউরোপের বুকে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রের অস্তিত্ব সহ্য করা হবে না। রাশিয়ান পার্লামেন্ট সার্বিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ থেকে জাতিসংঘকে বিরত রাখার জন্য প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েৎসিনের প্রতি আহ্বান জানায়। কৃ্ষ্ঞ সাগর ও দানিয়ুব নদী দিয়ে রাশিয়ািন জাহাজগুলো সার্বিয়ায় সমরাস্ত্র ও খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেয়। অথচ ন্যাটো জাহাজগুলো এড্রিয়াটিক সাগরে পাহারা বসায়। কেননা এ পথে মুসলমানদের জন্য অস্ত্র আসতে পারে। এভাবে সম্মিলিত খৃস্ট শক্তি একটিি ক্ষুদ্র মুসলিম জাতিসত্বার বিরুদ্ধে ধ্বংশ অভিযান পরিচালনা করলেও পাশ্চাত্যের সেবাদাস মুসলিম সরকারসমূহ কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। বসনিয়া-হারর্জেগোভিনার মুসলমানদের উপর ভয়াবহতম গণহত্যা, নির্যাতন ও ধ্বংশ অভিযান চরমে পৌঁছলে এবং অপর দিকে নিতান্ত অসহায় অবস্থার মধ্যে মুসলমানদের সাহসী প্রতিরোধ সংগ্রামের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বব্যাপী মুসলামানদের মধ্যে বিক্ষোভ ও ঘৃণা জেগে উঠে। এ বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী সহ বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলনসমূহ। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতসহ  বিশ্বের অনেক স্থান থেকে বিপুল পরিমান অর্থ সংগ্রহ করে বসনিয়া মুসলমানদের সাহায্যার্থে প্রেরণ করে। এ অবস্থায় তুরস্কসহ কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্রের উদ্যোগে ওআইসি জাতিসংঘ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার ঘোষণা দেয়। বসনিয়ার নিপীড়িত মুসলিমদের পাশে দাড়ানোর সাহস যখন কেউ পাচ্ছিলো না তখন তুরস্কের প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান বিরোধীদলে থেকেও সব রকমের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। বসনিয়ার বিখ্যাত নেতা আলীয়া ইজ্জেত বেগভিচ যখন তার কাছে সাহায্যের জন্য আসেন এক মাসের মধ্যে ৩৬ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সেসময়ে বসনিয়ার একটি স্ট্র্যাটিজিক  পজিশনে অবস্থিত মার্সিডিজ ফ্যাক্টরীকে অস্ত্র ফ্যাক্টরীতে রূপান্তর করেন, তাও মাত্র ১১ মাসের মাথায়, তার উপর বিরোধীদলে থেকে। বসনিয়ার স্বাধীনতায় প্রফেসর এরবাকানের অবদান অনেকটা উহ্যই থেকে গিয়েছে, কারণ তিনি ডাক-ঢোল পিটানোর চেয়ে কাজে বিশ্বাসী ছিলেন।ক্ষমতায় থেকে হোক আর না থেকেই হোক, আমেরিকা, ইসরাঈল, ন্যাটো কাউকে পরোয়া না করে মুসলিমদের সহায়তায় সর্বদা পাশে দাড়িয়েছেন। বর্তমান সময়ের তার্কির সবচেয়ে বড় দাতব্য সংস্থা(IHH) তিনিই গড়েছিলেন ১৯৯২ সালে বসনিয়ায় সাহায্য প্রেরণের জন্য।  এছাড়া সারা বিশ্বের ইসলামী আন্দোলন সমূহের বহু সংখ্যক জিন্দাদিল মুজাহিদ বসনিয়া মুসলমানদের সাথে প্রত্যক্ষ জিহাদে অংশগ্রহণ করে।  তখনই ইউরোপীয় জোটসমূহ বসনিয়া-হারর্জেগোভিনার সমস্যার কোন প্রকার একটি সমাধানের ব্যবস্থা করে।

এখানে উল্লেখ্য যে, যুদ্ধ তীব্র রূপ নিলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর আওতায় ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশী সৈন্যরা বসনিয়া-হারজোগোভিনাতে প্রেরিত হন। তারা সার্বদের থেকে তুলনামূলক কম যুদ্ধ-উপকরণ দিয়ে সার্বদের বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ করেন। বাংলাদেশের বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ফজলুর রহমান বসনিয়ার বাংলাদেশী কন্টিংজেন্ট কমান্ডার সেলিম আক্তারের সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখতেন। পরে সার্বরা পরাজিত হয়। বসনিয়াবাসীরা এখনো বাংলাদেশেীদের এই অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।  

এখানে আমি (শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল) আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই। সেসময় সারা বাংলাদেশ জুড়ে বসনিয়াবাসীর জন্য ও বাংলাদেশী সৈন্যদের জন্য মসজিদে মসজিদে দোয়া করা হচ্ছিল। তার সাথে সাথে অত্যাচারী সার্বদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হচ্ছিল। সেসময় আমি বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় জামায়াতে ইসলামীর একজন থানা পর্যায়ের দায়িত্বশীল।  ১৯৯৪ সালের শেষ নাগাদ নাইক্ষ্যংছড়ি থানা সদরে আমার সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সভাপতির বক্তব্যে আমি আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ দেই। নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে বিপুল অর্থ কালেকশনে করে পাঠাই বসনিয়াতে পাঠানোর জন্য। এভাবে সারা পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা বসনিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে। 

Please browse these link: 

গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী

বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে জড়িয়ে আছে জামায়াতে ইসলামীর নাম।  দেশের পক্ষে জনগনের পক্ষে ভূমিকা পালনে সব সময় সবার আগে থাকে জামায়াতে ইসলামী।  অংশ নিয়েছে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিটি নির্বাচনে।  জনগনের পক্ষে কথা বলেছে প্রতিটি জাতীয় সংসদে।  তাই এ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দেশ ও জনগণের পক্ষে ভূমিকা পালন করতে গিয়ে নানা জুলুম নিপীড়ণের শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়তই।  অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের।  পঙ্গুত্ব বরণ করেছে জামায়াতের অগনিত নেতাকর্মী।  শত জুলুম নির্যাতনের মধ্যেও গণমানুষের এই আন্দোলন কখনই থেমে থাকবে না।  স্বাধীনতা উত্তরকালে হত্যা করা হয় বহুদলীয় গণতন্ত্র।  এর আগে থেকেই নিষিদ্ধ ছিল ইসলামের কথা বলে রাজনীতি করার অধিকার।
একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বিলুপ্তি
১৯৭৮ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক ফরমান জারি করে একদলীয় ব্যবস্থার বাতিল করে বহুদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।  এর আগে ১৯৭৬ সালের ৩রা মে রাষ্ট্রপতির জারিকৃত একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ নম্বর ও অনুচ্ছেদটি বাতিল করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উপর আরোপিত বিধি নিষেধ তুলে নেয়া হয়।

ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ গঠন
১৯৭৭ সালের ৩০ মে গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গৃহিত পদক্ষেপগুলো অনুমোদিত হওয়ায় ইসলামের নামে রাজনৈতিক দল গঠন করার পথে আর কোন বাধা রইলো না।১৯৭৬ সালের ২৪ আগষ্ট ডেমোক্রেটিক পার্টি, নেযামে ইসলাম পার্টি, খেলাফতে রব্বনী পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (IDL) নামে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম গড়ে তোলেন।  মাওলানা ছিদ্দিক আহমদকে (নেযামে ইসলাম পার্টি) চেয়ারম্যান, মাওলানা আবদুর রহীম (জামায়াতে ইসলামী), মাওলানা আবদুস সুবহান (জামায়াতে ইসলামী), এডভোকেট সা’দ আহমদকে (জামায়াতে ইসলামী) ভাইস চেয়ারম্যান এবং এডভোকেট শফিকুর রহমানকে (ডেমোক্রেটিক লীগ) সেক্রেটারি জেনারেল করে এর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।  ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ দল অংশ গ্রহন করে।

২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচন।  এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ২০৭টি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ৩৯টি এবং মুসলিম লীগ ১৪টি আসনে বিজয়ী হয়।  ইসলামিক ডেমোক্রেটি লীগ থেকে মনোনীত জামায়াতে ইসলামীর ৬জন সদস্য জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।  বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটাই প্রথম উপস্থিতি।

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ
১৯৭৯ সালের ২৫,২৬ ও ২৭ মে ঢাকাস্থ ইডেন হোটেল প্রাঙ্গনে একটি কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আব্বাস আলী খানের আহ্বানে এই কনভেনশনে উপস্থিত হন সারা বাংলাদেশ থেকে আগত ৪৫০ জন সদস্য। এই সম্মেলনে একটি নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়।  সেই গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালের ২৭ মে থেকে চারদফা পূর্নাঙ্গ কর্মসূচি নিয়ে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর কর্মতৎপরতা শুরু করে।

কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা প্রণয়ন
১৯৮০ সালের মাঝামাঝি আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকার সংক্রান্ত একটি রূপরেখা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের অধিবেশনে পেশ করেন।  ১৯৮০ সালের ৭ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান রমনা গ্রীনে আহুত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই রূপরেখা প্রকাশ করেন।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যুগপৎ আন্দোলন
আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোট এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট কিছু কিছু যুগপৎ কর্মসূচি দিতে থাকে।  ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর ১৫ দলীয় জোট ও ৭ দলীয় জোট সচিবায়ল ঘেরাও কর্মসূচি দেয়। এ কর্মসূচিতে জনগনের তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।  স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার তার শাসন আরো দৃঢ় করে।  বন্ধ করে দেয়  রাজনৈতিক তৎপরতা। এই সময় জামায়াতে ইসলামীর লিয়াজো কমিটি দুই নেত্রীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে অগনতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরন করে গনতন্ত্রে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জামায়াতে ইসলামীর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে।  এই বক্তব্যের প্রতি তারা ইতিবাচব মনোভঙ্গি ব্যক্ত করেন। তখন থেকে ১৫ দলীয় জোট ও ৭ দলীয় জোটের সাথে জামায়াতে ইসলামীর লিয়াজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে থাকে।  ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বিচারপতি আহসান উদ্দীন চৌধুরীকে সরিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহন করেন।

তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৮৬ সালের ৭ই মে জাতীয় সংসদের তৃতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  নিজ নামে জামায়াতে ইসলামীর এটাই ছিলে জাতীয় সংসদে প্রথম নির্বাচনে অংশ গ্রহন।  জামায়াতে ইসলামী ৭৬টি আসনে নমিনী দিয়েছিল।  এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়।  এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৫৮টি, আওয়ামীলীগ ৯৬টি, জামায়াতে ইসলামী ১০টি, জাসদ ৪টি, অন্যান্য দল ১০টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২২টি আসনে বিজয়ী হয়।  বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটা দ্বিতীয় উপস্থিতি।

সংসদ থেকে পদত্যাগ
১৯৮৭ সালে রাষ্ট্রপতি এরশাদের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন গড়েে ওঠে।  ১৯৮৭ সালের ৩ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর ১০জন সংসদ সদস্য স্পিকার শামসুল হুদা চৌধুরীর নিকট গিয়ে পদত্যাগপত্র পেশ করেন।  আওয়ামীলীগ সদস্যগণও পদত্যাগ করবেন বলে জানান।  কিন্তু তাদের নেত্রী বিদেশে থাকায় তাদের সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হচ্ছিল।  ঠিক এই অবস্থায় ৬ ডিসেম্বর এরশাদ জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেন।  এতে আওয়ামী লীগহ বেশ বেকায়দায় পড়ে।

৪র্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  আন্দোলনরত দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করে।

যুগপৎ আন্দোলন
১৯৮৯ সালের অক্টোবর মাসে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ৮ দলীয় জোট, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট , বামদের ৫ দলীয় জোট এবং জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের দাবীতে আন্দোলন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।  এর ফলে চাঙ্গা হয়ে উঠে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন।  অনেক বিলম্বে হলেও জামায়াতে ইসলামীর কেয়ারটেকার সরকারের দাবী জাতীয় দাবীতে পরিণত হয়।  ১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বের পৃথক পৃথক সমাবেশ থেকে ৮ দলীয় জােট, ৭ দলীয় জোট, ৫ দলীয় জোট এবং জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা প্রকাশ করে।  ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়।  জারি করা হয় কারফিউ। ছাত্র-জনতা কারফিউ ভেঙ্গে মিছিল করতে থাকে।  আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী এরশাদ পদত্যাগ করেন।  গঠিত হয় প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে দেশের প্রথম কেয়ারটেকার সরকার।

পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামীলীগ ৮৬টি, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৩৫টি, জামায়াতে ইসলামী ১৮টি, অন্যান্যরা ১৯টি আসনে বিজয়ী হয়।  এই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ২২২ জন প্রার্থী দিয়েছিল।  ১৮জন বিজয়ী হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটা তৃতীয় উপস্থিতি।

বিএনপিকে সরকার গঠনে সমর্থন
পঞ্চম জাতীয় সংসদ ছিলো একটি ঝুলন্ত সংসদ। সরকার গঠনের জন্য কমপক্ষে ১৫১টি আসন প্রয়োজন।  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৪০টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হলেও সরকার গঠনের জন্য কমপক্ষে আরো ১১ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন ছিলো।  আওয়ামী লীগের ৮৮টি আসনের সাথে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ৩৫টি আসন এবং অন্যান্য ১৯টি আসন মিলে জোটবদ্ধ হলে আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪২টি। তার মানে, আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ছিলো আরো ৯ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন।  জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন ছাড়া না বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, না আওয়ামী লীগের পক্ষে সরকার গঠন সম্ভব হচ্ছিলো।  এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা আমির হোসেন আমুকে জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম শীর্ষ নেতা জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নিকট প্রেরণ করেন এবং বেশ কয়েকটি মন্ত্রিত্ব নিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে আওয়ামী লীগের সাথে কোয়ালিশন সরকারে যোগ দানের আহ্বান জানান।  এই দিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে দলটির তৎকালীন মহাসচিব আবদুস সালাম তালুকদার জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খানের বরাবরে সরকার গঠনে তাঁদের দলকে সমর্থন করার জন্য অনুরোধপত্র পাঠান।  ১১ই মার্চ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও অ্যাডভোকেট শেখ আনছার আলী অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের নিকট সমর্থনপত্রটি হস্তান্তর করেন।
২৮ শে মার্চ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৩০টি মহিলা আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ২৮ জন এবং জামায়াতে ইসলামীর ২ জন নমিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।  জামায়াতে ইসলামীর দু’জন মহিলা সংসদ সদস্য ছিলেন- হাফিযা আসমা খাতুন ও খন্দকার রাশেদা খাতুন।

সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তনে ভূমিকা পালন
১৯৭২ সনে প্রবর্তিত সরকার পদ্ধতি ছিলো সংসদীয় বা পার্লামেন্টারি।  ১৯৭৫ সনের ২৫ শে জানুয়ারি জাতীয় সংসদে গৃহীত সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী অনুযায়ী দেশে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি বা প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতি চালু হয়।  ১৯৯১ সন পর্যন্ত দেশে প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতিই চালু ছিলো। ১৯৯১ সনে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর  রাজনৈতিক দলগুলো সরকারপদ্ধতি নিয়ে নতুন করে মতামত ব্যক্ত করা শুরু করে।  প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি কোন মন্দ পদ্ধতি নয়। এই পদ্ধতি সফলভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চালু রয়েছে।  তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি  স্বৈরাচারী শাসনে রূপান্তরিত হওয়ার বহু নমুনা রয়েছে।  এই পদ্ধতিতে একই ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান হন বিধায়  স্বৈরশাসনের রূপ নেয়ার ঝুঁকি থাকে।  সংসদীয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান হন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি।  সংসদীয় পদ্ধতি ব্রিটেনে সফলভাবে প্রচলিত রয়েছে কয়েক শতাব্দী ধরে।  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গোড়া থেকেই প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতিতে বিশ্বাসী ছিলো।  প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও একই মতের অনুসারী ছিলেন।  আওয়ামী লীগ গোড়াতে সংসদীয় পদ্ধতি প্রবর্তন করে পরে প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতি চালু করে।  পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে  রাজনৈতিকভাবে দারুণ বেকায়দায় পড়ে।  সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা ছাড়া দলটির কোন বিকল্প পথ ছিলো না।  আর সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তনের দাবি ছাড়া অন্য কোন দাবি নিয়ে মাঠে নেমে কোন ফায়দা হতো না।  অতএব আওয়ামী লীগ এই দাবি নিয়েই সোচ্চার হয় এবং সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল জমা দেয়।  জামায়াতে ইসলামীর লিয়াজোঁ কমিটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি চালু করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে।  এই বিষয়ে মতবিনিময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীরসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাথে বসতে চাইলেন।  মিটিংয়ের তারিখ, সময় নির্ধারিত হয়।  মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে ছিলেন আবদুস সালাম তালুকদার ও কর্নেল (অব:) মুস্তাফিজুর রহমান।  জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খানের সাথে ছিলেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান।  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতির পক্ষে যুক্তি পেশ করে।  জামায়াতে ইসলামী সংসদীয় পদ্ধতির পক্ষে যুক্তি পেশ করে।  এইভাবেই মিটিং শেষ হয়ে যায়।  সুখের বিষয়, ঐ রাতেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সংসদীয় সরকার পদ্ধতির পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয় এবং জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল উত্থাপনের আয়োজন সম্পন্ন করে।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতে ইসলামীর যুগপৎ আন্দোলনের ফলেই ‣স্বরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন ঘটে।  প্রতিষ্ঠিত হয় বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের পরিচালনাধীন কেয়ারটেকার সরকার।  এই কেয়ারটেকার সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে সক্ষম হয়। জামায়াতে ইসলামীর ১৮ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সরকার গঠন করে। নবগঠিত সরকারের উচিত ছিলো অবিলম্বে সংবিধানে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি সংযোজিত করা।  রহস্যজনক কারণে সরকার কেয়ারটেকার পদ্ধতি সংবিধানে সংযোজন করার ব্যাপারে অনীহা প্রদর্শন করতে থাকে।  জামায়াতে ইসলামী, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি সংসদে উত্থাপনের জন্য কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতি বিল জমা দেয়।  কিন্তু সরকারি দলের সিদ্ধান্ত ছাড়া এই বিষয়ে আলোচনা শুরু হতে পারছিলো না।  সরকারের অপ্রত্যাশিত মনোভঙ্গি ও ভূমিকার কারণে  রাজনৈতিক অঙ্গন আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।  ফলে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতি সংবিধানে সংযোজনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হয়। জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠনে যেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে সহযোগিতা করলো, সেই দলের সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলনে নামতে বাধ্য হলো।  এক পর্যায়ে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে।  সরকারের পক্ষে মেয়াদ পূর্ণ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতেই সরকার ১৯৯৬ সনের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে।  আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী এই নির্বাচন বর্জন করে।  এই অস্বাভাবিক নির্বাচনের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সরকার গঠন করে।  এই সরকার দুই সপ্তাহের মধ্যে সংবিধানে কেয়ারটেকার পদ্ধতি সংযোজন করে পদত্যাগ করে।

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৯৬ সনের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ।  কেয়ারটেকার সরকারপ্রধান ছিলেন বিচারপতি মুহাম্মাদ হাবিবুর রহমান।  নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা মাক্কায় গিয়ে উমরা পালন করেন।  দেশে ফিরে ইহরামের পট্টিবাঁধা অবস্থায় তাসবিহ হাতে নিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচার অভিযানে নামেন।  গোটা নির্বাচনী অভিযানে তিনি দুই হাত জোড় করে জনগণের নিকট দলের অতীত ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং দলটিকে আরেকবার ক্ষমতাসীন করার জন্য বিনীতভাবে ভোটারদের প্রতি আবেদন জানান। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১১৬টি আসন, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৩২টি আসন এবং জামায়াতে ইসলামী ৩টি আসন লাভ করে। জামায়াতে ইসলামী থেকে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত তিনজন সদস্য হচ্ছেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (পিরোজপুর), কাজী শামসুর রহমান (সাতক্ষীরা) এবং মিজানুর রহমান চৌধুরী (নীলফামারী) বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটি চতুর্থ উপস্থিতি।  জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন।

চারদলীয় জোট গঠন
১৯৯৯ সনের ৩০শে নভেম্বর ২৯ মিন্টো রোডে অনুষ্ঠিত বৈঠক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আওয়ামী দুঃশাসন থেকে দেশকে উদ্ধার করার সংকল্প নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করেন এবং একটি ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ
২০০১ সনের ১লা অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকালে রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ। কেয়ারটেকার সরকার প্রধান ছিলেন বিচারপতি লতিফুর রহমান।  শেখ হাসিনা ক্ষমতা ত্যাগ করার পূর্বে প্রশাসন, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনে তাঁর পছন্দের ব্যক্তিদেরকেই বসিয়ে যান।  ২০০১ সনের ১লা অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আকস্মিকভাবে চারদলীয় জোট ত্যাগ করেন।  তবে নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ চারদলীয় জোটে থেকে যায়।  রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ এবং কেয়ারটেকার সরকার প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এমন এক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন যা পূর্ববর্তী দু’টি কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের চেয়েও
অধিকতর সুষ্ঠু হয়েছিলো। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৯৩টি আসন, আওয়ামী লীগ ৬২টি আসন এবং জামায়াতে ইসলামী ১৭টি আসন লাভ করে।  সংসদের মহিলা আসনগুলো থেকে জামায়াতে ইসলামী ৪টি আসন লাভ করে।  বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটি পঞ্চম উপস্থিতি।
প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে কৃষিমন্ত্রী এবং সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। এই নির্বাচনে পরাজিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা বেসামাল হয়ে পড়েন।  সচেতন ভোটারগণ তার সাজানো বাগান তছনছ করে দেওয়ায় তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। তিনি নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেন।  তিনি রাষ্ট্রপতি, কেয়ারটেকার সরকারপ্রধান, নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।

জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাস ও ভায়োলেন্স বিরোধী গণতান্ত্রিক দল
জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাস ও ভায়োলেন্স বিরোধী একটি গণতান্ত্রিক  রাজনৈতিক দল।  প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে জামায়াত কখনই সন্ত্রাস করেনি, সন্ত্রাসকে সমর্থন করেনি। এখন হরতাল করলেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা বুলেট বোমার মুখে সুশৃংখলভাবে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামীলীগ। এসেই দেশ ও জাতি বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।  দেশে গনতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্র ধীরে ধীরে সংকোচিত হতে থাকে।  বিরোধীদলের সভাসমাবেশে বাধা দেয়া শুরু হয়।  এক পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর সভা সমাবেশ অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।  ধীরে ধীরে ঘরোয়া বৈঠক বন্ধ করে দেয়া হয়।  জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বানোয়াট অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।  তারপরও নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালনে কোন ধরনের সন্ত্রাস বা ভায়োলেন্সের পথ বেছে নেয়নি।  ২০১১ সালে জামায়াতকে মাঠেই নামতে দেয়নি সরকার।  ২০১১ সালের শেষ দিকে রাজধানীতে মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী। পুলিশের প্রচন্ড বাধাঁ গোলাগুলির পর জামায়াতে ইসলামী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছে।  আজ পর্যন্ত কোথায়ও অস্ত্র কিংবা বেআইনী কোন জিনিস তারা হাতে তুলে নেয়নি। ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামী।  সে সমাবেশে পুলিশ বাধা দেয়নি বলে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশ হলেও কোন ধরনের ভায়োয়েন্সের ঘটনা ঘটেনি।  বরং সে সমাবেশে জামায়াতের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করার ঘটনাও প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ববাসী।  এতে প্রমাণিত হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বিশ্বাস করে না।
সরকার শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধী মত দলনের অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নির্মূল করার জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে।  যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবু্যুনালের আইন, এর গঠন ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে দেশে বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।  এর প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম বন্ধ করতে জাতিসংঘ থেকে শুরু করেছে আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংগঠন, বিশেষজ্ঞগণ, ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।  কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি।
এ বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মোফাসিস্রে কুরআন, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ফাঁসির দন্ড ঘোষণা করে বিতর্কিত আদালত-আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায় ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সারাদেশে আল্লামা সাঈদীর ভক্ত-অনুরাগীরা বিক্ষোভে ফেটে পরে, তারা রাস্তায় নেমে আসে।  কিন্তু সরকারের আইন-শৃংখলা বাহিনী সারাদেশেই সাঈদী ভক্তদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়।  একদিনেই শাহাদাত বরণ করে শতাধিক নারী পুরুষ। কয়েকদিনের বিক্ষোভে আড়াইশত মানুষ শাহাদাত বরণ করেছে।  আহত হয়েছে হাজার-হাজার মানুষ।  যারা শাহাদাত বরণ করেছেন, তাদের অধিকাংশই কোন রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না, শুধুমাত্র আল্লামা সাঈদীর প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার কারনেই প্রতিবাদ জানাতে রাজপথে নেমেছিল।

গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার আন্দোলন
আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দি করে।  দেশকে একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যেতে দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল ‘কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করে। সমগ্র জাতি এ ব্যবস্থার পক্ষে মত দিলেও সরকার তা বাতিল করে সংবিধানের সংশোধনী আনে। চিরকাল ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলকে বাইরে রেখে পেশীশক্তির জোরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি “ভোটারবিহীন’ একতরফা নির্বাচন করে নিজ দলীয় ১৫৩জন প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করে।  দেশে-বিদেশে কোথাও এ নির্বাচনের কোন গ্রহনযোগ্যতা পায়নি।  এর মধ্য দিয়ে দেশে কায়েম করে অঘোষিত বাকশালী শাসন।  মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়।  সরকারী দলের বাইরে অন্যান্য দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড ধীরে ধীরে সংকোচিত করে আনে।  এক পর্যায়ে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অফিস সীলগালা করে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উপর অঘোষিতভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
বিএনপি, জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট চলতি মাসের ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করতে চাইলে সরকার নিজেই ঢাকামুখি সকল যানচালাচল বন্ধ করে দেয়।  সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে।  পরদিন থেকে শুরু হয় ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি। অচল হয়ে পড়ে গোটা বাংলাদেশ।  সরকার এ আন্দোলন স্তব্ধ করে দিতে দেশব্যাপি শুরু করে রাষ্ট্রীয় আইন শৃংখলা বাহিনী দিয়ে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের হত্যা করার মিশন।  কথিত বন্দুক যুদ্ধের নামে বাড়ী থেকে ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের।  গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে তাদের।  আন্দোলনকে সহিংস রূপ দিতে সরকারের এজেন্টরা গাড়ি পুড়িয়ে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছে।  ২০ দলীয় জোটের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যেই সরকার যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং এজেন্টদের দিয়ে সাধারণ জনগণের ওপরে পেট্টোল বোমা মেরে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।  পেট্টোল বোমা সহ সরকার দলীয় ক্যাডাররা বিভিন্ন জায়গায় গ্রেফতারের ঘটনাও দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মিডিয়ায় ছবিসহ প্রকাশিত হয়েছে।  এই লিংকটি ব্রাউজ করুন প্লীজ:  হরতাল অবরোধে আগুন দিতে গিয়ে কারা হাতেনাতে ধরা খায় ? পেট্রোল বোম ইত্যাদি দিয়ে নৃশ্রংস হামলাগুলো কার? গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে জঙ্গী এবং নাশকতার রূপ দিতে সরকার এই অপকৌশল হাতে নিয়েছে।
গণতান্ত্রিক আন্দোলন কখনই গায়ের জোরে পেশীশক্তি দিয়ে দমন করা যায় না।  অতীতে যেমন তা সম্ভব হয়নি, ভবিষ্যতেও তা হবে না।  প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের দলীয় ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা করে আসছে ।  তেমনি দেশ পরিচালনায় গণতন্ত্রের প্রতি জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাসী বলে প্রতিটি সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে একটি বড় অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে।  দেশ পরিচালনায় জামায়াতে ইসলামী আইনের শাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে।  বিগত দিনে সরকার পরিচালনায় জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ৩টি মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে দেশের উন্নয়ন, সততা ও জবাবদিহিতার যে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে।

বিঃ দ্রঃ বাংলাদেশের মানুষ এর ইতিহাসে বিরাট একটা সময় গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করেছে।  অতীতে এদেশে  স্বৈরাচারী শক্তি ব্যর্থ হয়েছে।  বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক সংগ্রামে বিশ্বে দৃষ্টান্ত হয়েছে ।   এর পিছনে একটি বড় ভূমিকা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জাময়োতে ইসলামীর উজ্জ্বল, আপোষহীন ও দিকনির্দেশক অবদান।   এই লিংকটি ব্রাউজ করুন প্লীজ: কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ এবং জামায়াতে ইসলামী

(কিঞ্চিত সংযোজিত)
১৬ মার্চ ২০১৫, সোমবার

Popular Posts