Thursday, September 21, 2017

মাওলানা মওদূদী সম্পর্কে আরব নেতাদের ধারন ও উনার মর্যাদাঃ মৌলানা কামালুদ্দীন জাফরী

আল্লামা মওদুদী রঃ এর প্রশংসায় আরব বিশ্বের বড় বড় উলামায়ে কেরামদের লিখিত কিতাব সমূহ
লিখেছেনঃ জিয়াউর রহমান

১. আবুল আলা মওদুদীর জীবনী ও তার সুগভীর ইসলামী চিন্তাধারা । লেখক: ড. হামদ বিন সাদিক জামাল।

২. ইসলামী জাগরণে আবুল আলা মওদুদীর অবদান। লেখক: ড. মুহাম্মদ আম্মারা রহঃ।

৩. আবুল আলা মওদুদীর ইসলামী চিন্তা চেতনায় আমার দৃষ্টিভঙ্গি। লেখক: ড. ইউসুফ আল কারজাভী। ৪. আবুল আলা মওদুদীর দাওয়াতি চিন্তা। ড. সামির আব্দুল হামীদ ইব্রাহিম রহঃ।
৫. আবুল আলা মওদুদীর জীবনী ও দাওয়াতি মিশন। লেখক: ড. আলিফুদ্দীন তুরাবী।
৬. দাওয়াত ও আধুনিক ইসলামী আন্দোলনের বড় বড় আলেমদের অন্যতম আবুল আলা মওদুদী। লেখক: ড. আব্দুল্লাহ আকিল।
৭. আমার স্মৃতিপটে ইমাম মওদুদী। লেখক: ড. মুস্তফা তহান।
৮. আবুল আলা মওদুদীর ইসলামী সংস্করণ পদ্ধতি। লেখক: ড. সুহাইলা আলা আযিমী।

Tuesday, September 19, 2017

সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ) কি রাছুলুল্লাহ (সাঃ)-এর বংশধর?


বংশ পরিচয়- সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ):

() সাইয়্যেদিনা হযরত আলী বিন আবি তালিব (রাঃ)
() ইমাম হোসাইন (রাঃ)
() ইমাম জাইনূল আবেদীন (রহঃ)
() ইমাম মোহাম্মাদ আলবাফ (রহঃ)
() ইমাম জাফর সাদিক (রাঃ)
() ইমাম মুসা আলকাযেমী (রহঃ)
() ইমাম মোহাম্মাদ তাকী (রহঃ)
() ইমাম মোহাম্মাদ নাকী (রহঃ)
() ইমাম আব্দুল্লাহ আলী আকবার (রহঃ)
() সাইয়েদুস সাদাত হুসাইন (রহঃ)
() সাইয়েদুস সাদাত মুহাম্মাদ (রহঃ)
() সাইয়েদুস সাদাত ইব্রাহীমি (রহঃ)
() মুহাম্মাদ শায়মান চিশতী (রহঃ)
() খাজা নাসিরুদ্দীন আবু ইউসূফ চিশতী (রহঃ)
() খাজায়ে খাজেগান কুতুবুদ্দিন মওদূদ চিশতী (রহঃ)
() খাজা আবু আহমাদ মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() খাজা রুকুনুদ্দিন মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() খাজা নিজামুদ্দীন মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() খাজা কুতুবুদ্দিন মুহাম্মাদ মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() খাজা আলী আবু আহমদ সানী মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() খাজা মুহাম্মাদ যাহেদ মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() খাজা কুতুবুদ্দিন মওদূদ সানী চিশতী (রহঃ)
() খাজা নিজামুদ্দীন আলী মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() খাজা মুহাম্মাদ মুহীউদ্দিন শাহ খাজগী মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() শাহ আবুল আলা মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() শাহ আব্দুল আলী মওদূদী (রহঃ)
() খাজা আব্দুল গনি মওদূদী (রহঃ)
() খাজা আব্দুস সামাদ মওদূদী (রহঃ)
() খাজা আব্দুশ শাকুর মওদূদী (রহঃ)
() খাজা আব্দুল্লাহ মওদূদী (রহঃ)
() খাজা আব্দুল বারী মওদূদী (রহঃ)
() খাজা আব্দুল ওয়ালী মওদূদী (রহঃ)
() শাহ ওয়ারেছ আলী মওদূদী (রহঃ)
() সাইয়্যেদ হাসান মওদূদী (রহঃ)
() সাইয়্যেদ আহমাদ হাসান মওদূদী (রহঃ)
() সাইয়্যেদ মাওলানা আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ)

Thursday, September 7, 2017

বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম আল্লামা মওদুদী (রাহঃ)


লিখেছেনঃ তানজিল ইসলাম


হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,

"‏إِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ لِهَذِهِ الأُمَّةِ عَلَى رَأْسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَةٍ مَنْ يُجَدِّدُ لَهَا دِينَهَا"‏.‏
"নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা শতবর্ষের মাথায় এ উম্মতের জন্য এমন লোক প্রেরণ করবেন যিনি/যারা এ উম্মতের জন্য তাদের দ্বীন (তাজদীদ) সংস্কার করবে।" (আবূ দাউদ হাঃ ৪২৯১; মুস্তাদরাকে হাকীম ৪/৫৬৭; মিশকাত হাঃ ২৪৭)
তাজদীদ অর্থ Renew, সংস্কার, নবায়ন। মুসলিম সমাজের সকল শিরক, বিদয়াত, কুসংস্কার, ইসলাম বিরোধী ধ্যান-ধারণা, কুফুরী মতবাদ, জাহেলিয়্যাত ইত্যাদি অপসরণ করে রাসূলুল্লাহ (সা) এর যুগের, তাঁর প্রদর্শিত বিশুদ্ধ ইসলামী ঈমান-আকিদ, আমল, শরীয়ত ভিত্তিক সমাজ সংস্করণ এবং পূর্ণাঙ্গ দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার যাবতীয় কার্যক্রমকে তাজদীদ বলে।
.
আরবী ভাষায় অজ্ঞতার কারণে অনেকে মনে করেন যে, আল্লাহ এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন যিনি দ্বীনের তাজদীদ করবেন। আরবী ভাষায় যাদের সামান্য জ্ঞান আছে তারাও জানেন যে, من শব্দের অর্থ কে বা কাহারা, যিনি বা যাহারা, ইংরেজি Who এর মত। এজন্য কুরআনে অগণিত স্থানে من এর সর্বনাম বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ.
আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’, অথচ তারা মুমিন নয়। (সূরা বাকারাঃ২/৮)
এখানে এ উদ্দেশ্য নয় যে, মানুষের মধ্যে মাত্র একজনই মুনাফিক রয়েছে। বরং এর উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে অনেক মানুষ আছে মুনাফিক। যারা ঈমানের দাবী করে কিন্তু ঈমান বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে।
.
ইমাম যাহাবী বলেন, "একই শতাব্দীতে মুজাদ্দিদ একজন হবেন মনে না করে একাধিক হবেন বলে মনে করাই বেশি জোরালো মত।" (সিয়ারু আ'লামীন নবালা ১৪/২০৩)
আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, "শতাব্দীর মাথায়, শুরুতে বা শেষে যত মানুষকে মুসলিম সমাজের কুসংস্কার, বিদয়াত, অনাচার জাহেলিয়্যাত ইত্যাদি অপসরণ করে রাসূলুল্লাহ (সা) ও সাহাবাগণ (রা) এর যুগের পরিপূর্ণ ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ঈমান-আকিদা, ইবাদত, ইলম, রাষ্ট্র, বিচার, শাসনব্যবস্থা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সংস্কার ও নবায়নের চেষ্টায় রত পাওয়া যাবে সকলকেই মুজাদ্দিদ বলে গণ্য করতে হবে।" (ফাতহুল বারী ১৩/২৯৫)
.
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস মোল্লা আলী ক্বারী বলেন, "সঠিক কথা হলো من যেহেতু একবচন ও বহুবচনের সমষ্টি, কাজেই এ হাদীসের অর্থ করা উচিত বহুবচনের। সকল আলেম, মুহাদ্দিস, মুফাচ্ছির, ফকীহ, ধর্মীয়নেতা, রাষ্ট্রীয় নেতা যে ব্যক্তিই দ্বীনের (তাজদীদ) সংরক্ষণ ও সংস্কারে অবদান রাখবেন তাদের সকলেই সেই যামানার মুজাদ্দিদ বলে গণ্য করতে হবে।" (আল-মিরকাত ১/৫০৭)
.
উপরোক্ত আলোচনায় এ কথা প্রমাণিত যে, একই শতাব্দীতে একাধিক মুজাদ্দিদ হতে পারেন। আর বিংশশতাব্দীতে যারা দ্বীনের তাজদীদ করেছেন তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি হচ্ছেন শাইখুল ইসলাম আল্লামা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী রাহঃ।
বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অগ্রপথিক, বিশ্ব বিশ্রুত প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তিত্ব, শায়খুল ইসলাম, আল্লামা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ সমাজ সংস্করণ ও দ্বীন প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিংশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হিসেব গণ্য করা হয় এবং তিনি বাদশাহ ফায়সাল কর্তৃক পুরস্কার প্রাপ্তদের প্রথম ব্যক্তি।
.
শাইখ আলবানী আল্লামা মওদূদী রহঃ কে ইমাম হিসেবে শ্রদ্ধা করতেন। তিনি অসংখ্য জায়গায় আল্লামা মওদূদী রাহঃ এর কিতাব
থেকে রেফারেন্স নিয়েছেন। বিশেষ করে তাঁর লিখা "কুরআন সুন্নার আলোকে মহিলাদের পর্দার বিধান" গ্রন্থে আল্লামা মওদূদী রহঃ এর লিখা "পর্দা" গ্রন্থ থেকে অসংখ্য উদ্ধৃত গ্রহণ করেছেন। (দেখুন, পৃঃ ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৮, ৮১, ৮৮, ১১৩, ১২৬, ২২৩, ২২৪, ২১৮, ২৩২)
শাইখ আলবানী অধিকাংশ জায়গায় আল্লামা মওদূদী রহঃ কে "আল উস্তাদ" বলে সম্ভোধন করেছেন। কোনো জায়গায়, "শাইখ" কোনো জায়গায় "আল্লামা" শব্দ ব্যবহার করেছেন।
শাইখ বিন বাজও এরূপ শব্দ প্রয়োগ করেছেন। (দেখুন, মাজমুউ ফতওয়া ইবনে
বাজ , পৃঃ ৩/১৯৯, ৬/১৭, ১৮/১৪০, ২৩/২২১) এক জায়গায় তিনি বলেন, "আমাদের ভাই আল্লামা আবুল আলা মওদূদী রহঃও "আল জিহাদ" গ্রন্থে লিখেছেন …। (পৃঃ ১৮/১৪০)
.
অাল্লামা ইউসুফ আল কারদাভী বলেন,
كان امام المودودي رحمه الله مرشد العالم الاسلامي- ما كان امام المودودي مفكرا مجردا- بل كان مفكرا ومصلحا ومجددا كاملا- كان مفكرا حركيا المفكرون الفو الكتب فقط- ولكن الامام مودودي رحمه الله الف الكتب والرجال-
"ইমাম মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন বিশ্বের পথপ্রদর্শক। ইমাম মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ শুধুমাত্র একজন চিন্তাবিদই ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন চিন্তাবিদ, সংস্কারক ও মুজাদ্দিদ। তিনি ছিলেন ইসলামী পুনর্জাগরণ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। সাধারাণত চিন্তাবিদগণ গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে তাদের চিন্তাধারা প্রকাশ করে গেছেন। কিন্তু ইমাম মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ গ্রন্থাবলী রচনা করে চিন্তারাজ্যে বিপ্লব সৃষ্টির সাথে সাথে লোকও তৈরি করে গেছেন।" (ইসলামী পুনর্জাগরণ আন্দোলন ও মওলানা মওদুদী, পৃঃ ২৩-২৪)
.
হোসাইন আহমদ মাদানীর সুযোগ্য ছাত্র উপমহাদেশের অন্যতম বিচক্ষণ আলিম, শায়খুল হাদীস আল্লামা ইদ্রীস আহমদ (প্রাক্তন প্রিন্সিপাল, গাছবাড়ী জামিউল উলুম কামিল মাদ্রাসা, সিলেট) বলেন,
"হাদীসে বর্ণিত আছে প্রতি শত বৎসর পরপর এক একজন মুজাদ্দিদের আবির্ভাব হবে, তিনি সত্যিকারের ইসলামী বিপ্লবকে পুনর্জীবিত করবেন। ইতিহাস প্রমাণ করে যে, বিগত তেরশত বৎসর হতে বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন যুগে, বিভিন্ন আকারে অনেক মুজাদ্দিদের আবির্ভাব হয়েছে। তাঁদের বিপ্লবের ফলে ইসলামের মূলনীতিসমূহ তার মূল আকুতিতে আজও বিদ্যমান রয়েছে। প্রথম মুজাদ্দিদ হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহঃ এর তাজদীদ ছিল রাজ্য শাসনের মাধ্যমে। এ জন্য তাঁর ঐ তাজদীদ ছিল সর্বাঙ্গীণ তাজদীদ।
বিংশ শতাব্দীতে বাতিল মতবাদ সমূহের মোকাবিলাককারী মনীষীদের মধ্যে মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী রাহঃ এর নাম অগ্রগণ্য। তিনি তাঁর ক্ষুরধার লিখনীর মাধ্যমে বাতিল মতবাদ সমূহের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছেন। বিশেষ করে কাদিয়ানীদেরকে কাফির সাব্যস্ত করতে গিয়ে তিনি যে ফাঁসিকাষ্ঠের সম্মুখীন হয়েছিলেন তা ইতিহাসে স্বর্ণক্ষরে লেখা থাকবে। আমি তাঁর লেখনীসমূহ যথাসম্ভব অধ্যয়ন করেছি।
মাওলানা মওদুদী রাহঃ এর চিন্তাধারা অনুযায়ী বাতিল মতবাদ সমূহের মোকাবিলা শুধুমাত্র লেখনীর দ্বারা যথেষ্ট নহে। তাই তিনি প্রথম মুজাদ্দিদ হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রাহঃ এর পন্থানুসারে রাজ্য শাসনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন কায়েম করার লক্ষ্যে একটি রাজনৈতিক জামায়াত প্রতিষ্ঠা করেন। এ জামায়াতের মূলনীতিসমূহ পরিপূর্ণভাবে কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে তৈরি করা হয়।" (সত্যের আলো, পৃঃ x)
.
আল্লামা আব্দুর রব কাসেমী ফােযলে দেওবন্দ (প্রাক্তন প্রিন্সিপাল, কানাইঘাট মনসুরিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, সিলেট) বলেন,
"হযরত মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী রাহঃ নিঃসন্দেহে একজন মুজাদ্দিদ ছিলেন। কারণ ইকামতে দ্বীন হলো ইসলামের মূল। রাসূলুল্লাহ (সা) এর দশ বৎসরের মাদানী জীবনে বিরামহীন জিহাদের ফলশ্রুতিতে ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। কিন্তু এর সাথে ইকামতে দ্বীনের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাইনি বরং কিয়ামত পর্যন্তু রাসূল (সা) এর যত উম্মত দুনিয়াতে আসবেন প্রত্যেকের উপরই দ্বীন কায়েম আন্দোলনে শরীক হওয়া ফরয (সূরাশুরাঃ৪২/১৩)। কিন্তু খিলাফতে রাশেদার পর দুর্ভাগ্যক্রমে মুসলিম সমাজে রাজতন্ত্র কায়েম হয়ে যাওয়ার পর থেকেই ইকামতে দ্বীনের আন্দোলন ভাটা পড়তে শুরু করে। এমনি আমাদের এ উপমহাদেশের উপর ইংরেজদের প্রাধান্য বিস্তারের পরক্ষণেই এ এলাকার মুসলমানদের অন্তর থেকে ইকামতে দ্বীনের অনুভূতি দ্রুত সরতে আরম্ভ করে। বিংশ শতাব্দীতে পৌঁছে তারা ইসলাম কে কয়েকটি আনুষ্ঠানিক ইবাদত- যেমন, নামায, রোযা, হজ্জ, ইত্যাদিতে সীমিত করে ফেলে। ইসলামী অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি তথা কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক রাষ্ট্রকে তারা অকেজো মনে করতে আরম্ভ করে (নাউযুবিল্লাহ)।
এহেন অন্ধকার পরিবেশে আল্লাহ তা'আলা হযরত আবুল আ'লা মওদুদী রাহঃ কে ইকামতে দ্বীনের জীহাদের জন্য কবুল করেন। তিনি তাঁর বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে ইসলামকে একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে প্রমাণ করেন এবং 'জামায়াতে ইসলামী' নামে একটি দল গঠন করে বাস্তব ক্ষেত্রে ইকামতে দ্বীনের আন্দোলন শুরু করেন- যে আন্দোলন বর্তমান বিশ্বে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্ট করেছে। সুতরাং আমি নির্দ্বিধায় বলতে চাই যে, তিনি হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ছিলেন।" (সত্যের আলো, পৃঃ xi)

Monday, September 4, 2017

ইসলামী ছাত্রশিবির’র প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রীয় সভাপতি মীর কাসেম আলী‘র প্রথম শাহাদাৎ বার্ষিকীর দোয়া মাহফিল



ইসলামী ছাত্রশিবির’র প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী‘র প্রথম শাহাদাৎ বার্ষিকীর আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিলে মোনাজাত পরিচালনা করছেন প্রধান অতিথি জামায়াত দলীয় সাবেক সাংসদ জননেতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী: 
(একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন)



Wednesday, August 23, 2017

মরক্কোর আধুনিক ইসলামী আন্দােলনের ইতিহাস, ইসলামপন্থীদের বিজয় এবং জামায়াতে ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

১৯১২ সালে ফ্রান্সে সম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের মাধ্যমে মরক্কো দখল করে নেয়। তখন ফ্রান্সের উপনিবেশিক শাসন বিরোধী সশস্ত্র লড়াই পরিচালনা করেন শামসির আব্দুল করিম খাত্তাবী, যিনি আব্দুল করিম রফী নামে সমধিক পরিচিত। নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে ১৯৫৬ সালে মরক্কোবাসী স্বাধীনতা লাভ করে। মরক্কোর স্বাধীনতা সংগ্রামে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখেন আলাল আল ফাসী। তিনি জ্ঞান গরিমা, শক্তি-সাহস ও যুদ্ধবিদ্যায়  স্বীয় নেতা আন্দুল করিম রেফীর সুযোগ্য উত্তরসুরী ছিলেন। স্বাধীনতা লাভের পর সুলতান মুহাম্মদ খামীস জনসমর্থন নিয়ে মরক্কোর শাসন-ক্ষমতা লাভ করেন। জনাব আলাল আল ফাসী ইসলামী জীবন-বিধান প্রতিষ্ঠার দাবীতে জিহাদ জারী রেখেছিলেন বিধায় শেষ পর্যন্ত তাকে নির্বাসিত জীবন গ্রহন করতে হয়। তিনি তার এক বন্ধু মক্কী আনসারীর মাধ্যমে পাকিস্তানে মাওলানা মওদূদী রহ: এর সংগে যোগাযোগ স্থাপন করে ইসলামী শাসনতন্ত্র জারী করার বিষয়ে পরামর্শ চান। তিনি মাওলানা মওদূদী (রহ:) লিখিত ইসলামী শাসনতন্ত্র বইটি পড়ে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, এই বইটির ভিত্তিতে তিনি মরক্কোর জাতীয় সংবিধান রচনা করবেন। ১৯৬২ সালে একটি অপারেশন করার সময় তিনি এন্তেকাল করেন, কথিত আছে তাঁর মৃত্্যু আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফল।
দাওয়াতে আল হক নামক একটি সাময়িকী মরক্কোতে ইসলামী পূণর্জাগরণে অতুলনীয় অবদান রাখে। এপত্রিকাটি মরক্কো সরকারের আওকাফ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত হত। তথাপি এর সম্পাদনার ভার ইসলামী আন্দোলনের উপর ছিল। ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এসাময়িকীর মাধ্যমে মাওলানা মওদূদী রহ: এর বিপ্লবী ইসলামী সাহিত্য প্রচারিত হয়।
মরক্কোতে যুবকদের মাঝে ইসলামী আন্দোলন সংগঠিত রূপ লাভ করে ১৯৬৯ সালে আব্দুল করিম মুতির নেতৃত্বে ইয়ং মুসলিম মুভমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এই যুব ইসলামী আন্দোলন জামায়াতে ইসলামী ও ইখওয়ানুল মুসলেমীনের অনুসৃত পন্থায় আন্দোলন করছে। ইয়ং মুসলিম মুভমেন্ট ওয়াইএমএম) বা হারকাতুল শাইবাতুল ইসলামীয়া বিশ্ববিদ্যালয় হতে শিক্ষা সমাপণকারী যুবকদের দ্বারা গঠিত হলেও ছাত্রদের মাঝে এর তৎপরতা ব্যাপক হয়ে উঠে। ফাস এর কারওইন বিশ্ববিদ্যালয়, বারাতের মুহাম্মদ খামস বিশ্ববিদ্যালয় সহ সমগ্র মরক্কোব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে ওয়াইএমএম ছাত্রদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং প্রতিষ্ঠা লাভের ছয় মাসের মধ্যে দেশ-জাতির কাছে উল্লেখযোগ্য মর্যাদা লাভ করে। ওয়াইএমএম এর জনপ্রিয়তা ভীতি হয়ে মরক্কোর কায়েমী শাসকগোষ্ঠী ও সেদেশে অবস্থানরত শক্তিশালী ইহুদী গোষ্ঠীর চক্রান্তের মাধ্যমে এক কমিউনিষ্ট নেতা হত্যার মধ্য দিয়ে ওয়াইএমএম কে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার ফাসির আদেশদেয়। ফলে আব্দুল করিম মূতীসহ কয়েকজন নেতা নির্বাসিত জীবন গ্রহণ করতে বাধ্য হন।
১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে জমিয়াতুল আল ওয়াল ইহসান নামে অপর একটি ইসলামী আন্দোলন আব্দুস সালাম ইয়াসীনের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই আন্দোলনের চিন্তাধারা ও লক্ষ্য তাবৎ বিশ্বের ইসলামী আন্দোলন সমূহের মতই, তবে তারা সনাতন তাসাউফপন্থার উপর বেশী গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। সরকারী নির্যাতনের অব্যাহত মোকাবেলা করে তারা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জারী রেখেছেন।
এভাবে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে স্পেনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার বেসক্যাম্প মরক্কোতে ইসলামী আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। নিঃসন্দেহে মরক্কো ইসলামী বিপ্লব সাধনের ক্ষেত্রে একটি উর্বর ক্ষেত্র।

দীর্ঘ  ইসলামী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আরব বসন্তের পর মরক্কোতে ইসলামী দল ২০১১ সালে প্রথমবার এবং ২০১৬ সালে ২য়বার বিজয় অর্জন করে। এসম্পর্কে জানার জন্য নীচের পোষ্টগুলো পড়ুন:


1) মরক্কোয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের বিপুল বিজয়




Thursday, August 17, 2017

ইকবাল ছিলেন আমার আধ্যাত্মিক সহায়' - সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ)


লিখেছেনঃ সুজন হাফিজ (বাশার ইবনে হাদীস)
[পাকিস্তানের একটি খ্যতনামা বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাহিত্যিক মাসিক পত্রিকা “সাইয়ারা” ১৯৬৩ সালের মে মাসে ইকবাল সংখ্যা প্রকাশ করে। জনাব গোলাম হোসাইন আজহার মাওলানা মওদূদী (রহঃ) সাহেবের আলোচ্য সাক্ষাতকারটি উক্ত বিশেষ সংখ্যার জন্য গ্রহণ করেন। এ সাক্ষাতকার কয়েকবার দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।]
“ইকবাল আমার আধ্যাত্নিক সহায় ছিলেন…………”

কয়েক বছর আগে মাসিক তরজমানুল কুরআনের পাতা উল্টাতে গিয়ে উপরোক্ত বাক্যটি আমার চোখে পড়ে। আমার মনে হল, বাক্যটিতে প্রবল আবেগ অনুভূতির ছোঁয়া রয়েছে। এ বাক্যটির মূলে কোন্‌ মনস্তাত্ত্বিক রহস্য রয়েছে, জানা দরকার ছিল। বহুবার হয়েছে মাওলানার সাথে এ বিষয়ে কথা বলি। কিন্তু প্রতিবারই মাওলানার ব্যস্ততার কথা মনে পরতেই সে ইচ্ছা চাপা পড়ে যায়। এবার যখন সাইয়ারার ইকবাল সংখ্যার প্রয়োজন পড়েছে, আমি সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বহু দিনের অপূর্ণ ইচ্ছাটা মাওলানাকে জানালাম। মাওলানা আমাকে কোন একদিন বিকেলে তার কাছে যেতে বললেন। আমি ১৪ ই এপ্রিল বিকেলে উপস্থিত হলাম। নিম্নে মাওলানার সাথে আমার কথোপকথন এর সারসংক্ষেপ তুলে ধরছি-

★মাওলানা! আপনি একবার লিখেছিলেন যে, ইকবাল আপনার আধ্যাত্মিক সহায় ছিলেন। এর পটভূমিকা কি?
ডক্টর ইকবাল আমাকে পাঠান কোট যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। তিনি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, যে তুমি যদি এখানে এসে বস, তাহলে আমিও বছরে ৬ মাস এখানে এসে কাটাবো। এ আহ্বানে এমন একটা আকর্ষণ ছিল যে, আমি তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত প্রস্তাব গ্রহণ করে নেই এবং হায়দারাবাদ থেকে পাঠানকোট চলে আসি। কিন্তু এ ঘটনার বেদনাদায়ক দিক এই যে, আমি মার্চ মাসে পাঠানকোটে স্থানান্তরিত হলাম। আর এপ্রিলে ডক্টর সাহেবের ইন্তিকাল হয়ে গেল। সে সময় এ ঘটনায় আমি নিদারুণভাবে মর্মাহত হই। তখনকার সেই অনুভূতি আমাকে এই বাক্যটি লিখতে উদ্বুদ্ধ করে।
★মাওলানা! আপনার মধ্যে ও মরহুম আল্লামা ইকবাল এর মধ্যে এ ব্যপারে যে আলাপ আলোচনা বা চিঠির আদান-প্রদান হয়, তা বিশদভাবে জানালে ভালো হয়।
সেই চিঠিপত্রগুলো তো আমার কাছে নেই। তবে অন্যান্য বিবরণ দিচ্ছি। মাওলানা স্বীয় স্বভাবসুলভ ধীর আওয়াজে বলতে শুরু করলেন-
চৌধুরী নিয়াজ আলী সাহেব ইসলামের সেবার উদ্দেশ্যে একটি প্রতিষ্ঠান কায়েম করার লক্ষ্যে জমি ওয়াকফ করেন এবং দালান কোঠা বানাতে আরম্ভ করেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কি ধরনের হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে তার কোন সুনির্দিষ্ট ধারণা ছিল না, তিনি আমার কাছে পরামর্শ চান যে, কি ধরনের প্রতিষ্ঠান কায়েম করা উচিত। আমি একটা পরিকল্পনা লিখে দেই। এটি পরবর্তীকালে আমার দারুল ইসলামের পরিকল্পনাটিরই অনুরূপ ছিল।
ইতিমধ্যে তিনি আল্লামা ইকবালের কাছেও পরামর্শ চেয়ে চিঠি লিখেন। এ চিঠি লেখালেখির পুরো বৃত্তান্ত আমার জানা নেই। তবে চৌধুরী নিয়ায আলী সাহেবের কাছ থেকেই আমি জেনেছি যে, আমার পরিকল্পনাটি তিনি আল্লামা ইকবাল মরহুমকে দেখিয়েছিলেন এবং আল্লামা ইকবাল তা পছন্দ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, এ ধরনের কাজই বর্তমান সময়ের দাবী। এ সংক্রান্ত যাবতীয় চিঠিপত্র চৌধুরী নিয়াজ আলী সাহেবের নিকট সংরক্ষিত হয়েছে এবং তার কাছ থেকে তা সংগ্রহও করা যেতে পারে। বরঞ্চ আমার যতদূর মনে পড়ে, তিনি একবার তা প্রকাশও করেছেন।
সম্ভবতঃ ১৯৩৬ সালেরই কথা। আল্লামা ইকবাল এ বছর সর্বপ্রথম নজীর নিয়াজী অথবা মিয়া শফী সাহেবকে দিয়ে আমাকে হায়দারাবাদ ত্যাগ করে পাঞ্জাবে স্থানান্তরিত হবার অনুরোধ করে চিঠি লেখান। কিন্তু তখন আমি সেই অনুরোধ রক্ষায় অক্ষমতা প্রকাশ করি। কেননা তখন আমি হায়দ্রাবাদেই থাকার চিন্তা-ভাবনা করেছিলাম। আর যে ধরনের প্রতিষ্ঠান কায়েম করার প্রস্তাব তিনি দিয়েছিলেন, সে ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান কায়েম করার লক্ষ্যে হায়দারাবাদে আমি জমিও খরিদ করেছিলাম।
★আল্লামা ইকবাল আপনাকে পাঞ্জাব চলে আসার জন্য অন্য কোনো বিশেষ কারণও লিখেছিলেন নাকি?
শুধু এ বাসনা ব্যক্ত করেছিলেন যে, আমি যেন পাঞ্জাবে চলে আসি। এর চেয়ে কিছু লেখেননি। তখন তো আমি বুঝতে পারিনি এর পেছনে কি কল্যাণ চিন্তা সক্রিয় ছিল। তবে ১৯৩৭ সালের মাঝামাঝি নাগাদ আমি স্বতস্ফুর্তভাবে অনুভব করতে থাকি যে, ভারতের দক্ষিণ অঞ্চল ত্যাগ করে আমার উত্তর ভারতে চলে যাওয়া উচিত। সেই সময় চৌধুরী নিয়াজ আলী সাহেব আমাকে পাঞ্জাব সফর করার জন্য পীড়াপীড়ি করেন এবং একটি ইসলামী প্রতিষ্ঠান কায়েম করার জন্য যে জায়গাটি তিনি ওয়াকফ করেছিলেন, অন্তত সেই জায়গাটি দেখার জন্য আমাকে জোর অনুরোধ করেন। আমি নিজেও ভাবছিলাম, উত্তর ভারত সফর করে এমন একটি জায়গা আমার বাছাই করা উচিত যেখানে আমার আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুসারে কাজ করার সুযোগ পাব। এ চিন্তা- ভাবনার ফলেই ১৯৩৭ সালে সম্ভবতঃ আগস্ট মাসের শেষের সিকে পাঞ্জাব সফর করি এবং জলন্ধর ও লাহোর হয়ে পাঠানকোট উপনীত হই। এ সফরে মরহুম আল্লামা ইকবালের সাথে আমার বিস্তারিত আলোচনা হয়। তিনি আমাকে অনুরোধ করেন যে, চৌধুরী নিয়াজ আলী সাহেব যে জায়গা ওয়াকফ করেছেন, সেটাই যেন আমি বেছে নেই এবং চৌধুরী সাহেবের কাছে যে পরিকল্পনা আমি পাঠিয়েছিলাম, সে অনুসারে একটি প্রতিষ্ঠান যেন তৈরি করি।
★উত্তর ভারতকে কেন্দ্র করে কাজ শুরু করার ইচ্ছা আপনার কেন হল?
আমি উপলব্ধি করলাম যে, দক্ষিণ ভারতে কাজ করার সুযোগ দিন দিন কমে যাচ্ছে। আর মুসলমানদের ভবিষ্যতের ফয়সালা অনেকাংশে উত্তর ভারতেই হবে।
★আপনার ও আল্লামা ইকবালের মধ্যে যে বিস্তারিত আলোচনা হয় তার কোন কোন বিষয়ে হয়েছিল?
সে সময় যে কথাবার্তা হয়েছিল, তার বিষয়বস্তু ছিল এটাই যে, বর্তমানে মুসলমানদের জন্য কি ধরনের গঠন মূলক কাজের প্রয়োজন। এ ব্যপারে আমার ও মহুম আল্লামা ইকবালের চিন্তাধারা প্রায় একই রকম ছিল।এ কাজের জন্য আমি যে রূপরেখা দিয়াছিলাম, সেটাই তার মনোপুত ছিল। ঐ রূপরেখাই কিভাবে বাস্তবায়িত করা যায়, সেটাই আমার চিন্তা-ভাবনা করছিলাম। তবে বিস্তারিত আমার মনে নেই।
★ভারতে একটা ইসলামী আন্দোলন চালানো কি তখন আপনাদের লক্ষ্য ছিল?
সে সময় আন্দোলন আমাদের লক্ষ্য ছিল না। সে সময় আমাদের লক্ষ্য ছিল দু’টো। প্রথমতঃ যে তাত্ত্বিক ও জ্ঞানগত শূন্যতার কারণে বর্তমান যুগের মানুষের চোখে ইসলামী জীবনব্যবস্থা অসম্পূর্ণ ও অকার্যোপযোগী বলে মনে হয়, সেই শূন্যতা পূরণ করা। দ্বিতীয়তঃ এমন কিছু লোক তৈরি করা, যারা মুসলমানদের তাত্ত্বিক ও বাস্তব ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে। একটা নির্ভেজাল ও সর্বাত্মক ইসলামী আন্দোলনের ধারণা তখন আমাদের সামনে ছিল না।
★আল্লামা ইকবাল তখন তাত্ত্বিক ক্ষেত্রে কোন কোন কাজের উপর অধিক গুরুত্ব দিতেন?
বেশি বিস্তারিত ভাবে মনে নেই। ইসলামী আইন ও দর্শনের পুনঃ সংকলন তার কাম্য ছিল। সে সময় এটিই ছিল আলোচ্য বিষয়।
★মাওলানা! শুনেছি, আল্লামা ইকবাল তরজুমানুল কোরআন বিশেষভাবে অধ্যায়ন করতেন?
এটা আমি পরে নাযীর নিয়াজী সাহেব ও মিয়া শফী সাহেবের কাছ থেকে জেনেছি যে, আল্লামা মরহুম অত্যন্ত মনোযোগের সাথে তরজুমানুল কোরআন' পড়তেন। তাছাড়া আল জিহাদ ফিল ইসলাম পরিয়ে শুনেছিলেন এবং খুবই পছন্দ করেছিলেন।
★মাওলানা! ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ইকবালের শ্রেষ্ঠত্বের মূল কারণটি কি?
সেই সময় আসলে এমন একজন মানুষের প্রয়োজন ছিল; যিনি পাশ্চাত্য শিক্ষায় গর্বিত সাধারণ লোকদের চেয়েও বেশি শিক্ষিত এবং পাশ্চাত্য বিদ্যায় তাদের চেয়েও দক্ষ ও পারদর্শী হবেন, আর তারপরও এত জোরদার ভাষায় ইসলামী জীবন পদ্ধতিকে সমর্থন করবেন, যে পাশ্চাত্য পূজারীরা তার সামনে কথা বলারই সাহস পাবে না। সেই দুর্লভ ব্যক্তিত্ব ছিল ইকবালের। সেকালে পাশ্চাত্য জ্ঞান- বিজ্ঞানের প্রবল প্রতাপ ছিল এবং এরূপ সাধারণ ধারণা প্রচলিত ছিল যে, পাশ্চাত্য সভ্যতার সাথে আপোষ (compromise) করা এবং পাশ্চাত্য মতবাদগুলোর সাথে ইসলামী দর্শনের সমন্বয় সাধন করা অপরিহার্য। আল্লামা ইকবাল এ ধারণা খন্ডন করেছিলেন। এটিই ইকবালের আসল অবদান। এ দিক থেকে দেখতে গেলে আল্লামা ইকবালের ব্যক্তিত্ব ইসলামী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সহায় ছিল। সামগ্রিকভাবে তিনি যে অবদান রাখেন, তা অত্যন্তঃ গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। -( সাইয়ারা, মে, ১৯৬৩ এর সৌজন্যে)

Wednesday, August 16, 2017

রাছুলুল্লাহ (সাঃ)-এর বহু বিবাহের সমালোচনার জবাবে প্রখ্যাত বৃটিশ নারী অধিকার কর্মী

অনেক অবিবেচক নাস্তিক আজকাল বুঝে কিংবা না বুঝেই রাসূল স. এর বিবাহ নিয়ে কটাক্ষ বা অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে দেখা যায়। যা সত্যিই দু:খজনক। তাদের খুবই সুন্দর জবাব দিয়েছেন Annie Besant . . .

প্রখ্যাত বৃটিশ নারী অধিকার কর্মী, সমাজতত্ত্ববিদ ও লেখিকা Annie Besant বলেন,
"কিন্তু তুমি কি আমাকে বুঝাতে চাইছ ভরা যৌবনের উচ্ছাসে পরিপূর্ণ সেই টগবগে যুবক সম্পর্কে, যে যুবক ২৪ বছর বয়সে তার চেয়ে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন এবং ২৬ বছর যাবৎ তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য ছিলেন, তিনি ৫০ বছর বয়সের পড়তি যৌবনে এসে বিয়ে করেছিলেন কেবল যৌনাকাংখা ও যৌন তাড়না মেটাতে? না, মানুষের জীবনকে এভাবে বিচার করতে হয় না। অধিকন্তু, যদি তুমি ঐসব মহিলাদের দিকে লক্ষ্য কর যাদেরকে তিনি বিয়ে করেছিলেন, তাদের প্রত্যেকের সাথেই হয় মৈত্রীচুক্তির ব্যাপার ছিল, অথবা তাঁর ছাহাবীদের জন্য কিছু প্রাপ্তিযোগের বিষয় ছিল কিংবা মহিলাটির জন্য আশ্রয় ও নিরাপত্তার খুব প্রয়োজন ছিল।"
"Annie Besant ( http://en.wikipedia.org/wiki/Annie_Besant), The Life and Teachings of Muhammad (1932), p. 4)

ইউরোপীয় বিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে নামাজের অসাধারণ উপকারিতা



সিজদাকে মানবদেহের ক্ষতিকর ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক তরঙ্গ নিষ্ক্রিয় করার উৎকৃ্ষ্ট উপায় বর্ণনা করেছেন এক ইউরোপীয় বিজ্ঞানী।

তিনি বলেছেন ,'মানুষের শরীর প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক তরঙ্গ গ্রহণ করে।আপনার প্রাত্যাহিক ব্যবহৃত এমন সব যন্ত্র থেকেই এই তরঙ্গগুলো আপনাকে গ্রহণ করতে হচ্ছে।যেমন,গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ,ক্যাল্কুলেটর,মোবাইল,রিমোট কন্ট্রোল,টিভি ইত্যাদি।রাতে যে আলো পাচ্ছেন ,সেই বাতি থেকেও এই তরঙ্গগুলো আমাদের দেহে প্রবেশ করছে।অথচ এই গুলো এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ আমাদের নেই।একভাবে বলাযায়,এই বৈ্দ্যুতিক তরঙ্গ গুলো হজম করার উল্লেখযোগ্য সোর্স আমরা।এর ফলে কী হচ্ছে? মাথাব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছি,অস্বস্তি অনুভব করছি,আলস্য ঘিরে ধরছে আমাদের এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ব্যথার সৃষ্টি করছে। এমনকি শেষ পর্যন্ত ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি দ্বারা আমরা আক্রান্ত হচ্ছি।
এর সমাধান কী?ইউরোপের ওই অমুসলিম বিজ্ঞানী এ নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করে দেহের ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক চার্জ অপসারণের যে সর্বোৎকৃ্ষ্ট উপায় বের করেছেন তা হলো,যদি কপালকে একাধিকবার মাটিতে রাখা হয়,এতে ক্ষতিকর পজিটিভ ইলেকট্রো-ম্যাগনেটক চার্জ অপসারিত হয়।বজ্রপাতের মতো পজিটিভ ইলেকট্রনিকের সিগন্যালগুলো যেমন গ্রাউন্ডের মাধ্যমেই নিষ্ক্রিয় হয়,বিষয়টি ঠিক সে রকম। তিনি সবাইকে কপালকে মাটির সাথে লাগিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ইলেক্ট্র-ম্যাগনেটিক সিগন্যাল গুলো নিষ্ক্রিইয় করার জন্য।কপালকে বালুর সাথে লাগিয়ে রাখার জন্য উৎকৃষ্ট বলে গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলের দিকেই মাথা রেখে কপালকে গ্রাউন্ডের সাথে ঠেকিয়ে রাখাকে এ লক্ষ্য অর্জনের উপায় হিসেবে বলেছেন।তিনি জানান, এতে ক্ষতিকর চার্জ গুলো অপসারণ সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে ইন্টারনেটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে,এখানে আশ্চর্য জনকভাবে সত্য যে,মক্কাই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল এবং পবিত্র কাবাই পৃথিবীর একেবারে কেন্দ্রবিন্দু। এতে যে বিষয়টি পরিষ্কার তা হলো,দেহ থেকে ক্ষতিকর ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক সিগন্যালগুলো অপসারণের সর্বোত্তম উপায় হলো সিজদা করা, যা মুসলমানরা পাঁচ বেলা নামাযে করে থাকে।এমন একটি সৃষ্টশীল উপায়ে যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, সেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের আদর্শ পথও এটি।
যে মন্তব্যের মাধ্যমে ওই নিবন্ধের সমাপ্তি ঘতে,তা হলো, মানুষের বিশ্বাস করা ও জানা উচিত,তারা স্রষ্ঠার নির্দেশ পালন করতে গিয়ে যা করবে, তা নেহাত নিজের প্রয়োজনেই করবে।



নামাযের আগে কিছুক্ষণ নামাযের মোরাকাবা [নামায সম্পর্কে চিন্তা] করা উচিত। প্রতীক্ষা ছাড়া যে নামায হয় তা হয় প্রাণহীন, হালকা নামায। সুতরাং নামাযের আগে নামায সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত।

-----তবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মৌলানা ইলিয়াস [রহ]

Tuesday, August 15, 2017

মদিনা ইউনিভার্সিটি ও মাওলানা মওদূদী (রঃ)

লিখেছেনঃ জীবন রহমান হৃদয়

সৌদি বাদশাহ এর আমন্ত্রণে ১৯৬১ সালের ডিসেম্বর মাসে রিয়াদে পৌঁছেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ)। আলোচনার এক পর্যায়ে বাদশাহ আশাবাদ ব্যক্ত করেন মদিনায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। আর এ জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দিতে অনুরোধ করেন মাওলানা মওদূদী(রঃ) কে।

১৯৬১ সালের ২১ ডিসেম্বর একটি পরিকল্পনা খসড়া রচনা করেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ)। সাথে চৌধুরী গোলাম মুহাম্মাদ ও খলিল আহমাদ হামিদী কে নিয়ে বাদশাহর প্রাসাদে গিয়ে তা পেশ করেন।


পরিকল্পনা খসড়ার(পরবর্তীতে এটাই সংবিধান) শুরুতে তিনি উল্লেখ করেন-
"এটি এমন এক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হবে,যেখান থেকে তৈরী আলেমরা সারা বিশ্বের সকল সমস্যার সমাধানে সক্ষম হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩ টি স্তরে ৯ বছরের শিক্ষা কার্যক্রম থাকবে। ১ম স্তরঃ ৪ বছরের।এখানে শিক্ষার্থীরা কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, ইসলামের ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান অধ্যয়ন করবে। ২য় স্তর ৩ বছরের। এখানে থাকবে ৫টি ফ্যাকাল্টি। ৩য় স্তর ২ বছরের। এই স্তরে কোন স্কলার পূর্বের দুই স্তরের যেকোনো বিষয়ে গবেষণা করতে পারবে।"

পরিকল্পনা খসড়াটি বাদশার এতটাই পছন্দ হয় যে সঙ্গে সঙ্গে খসড়া বাস্তবায়নে সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ) এর সাথে শায়েখ মোহাম্মদ আকবর, শায়েখ আব্দুল লতিফ, শায়েখ মোহাম্মদ আলী আল্ হারাকান কে নির্দেশ দেন। শুরু হয়ে যায় পুরোদমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম।
১৯৬২ সালের জানুয়ারী মাসে মাওলানা দেশে ফিরে আসেন! কিন্তু মদিনা ইউনিভার্সিটির এক জরুরী প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকবার জন্য মাওলানা কে আবারও আমন্ত্রণ জানান সৌদি বাদশাহ। ফলে ১৯৬২ সালের মে মাসে আবারও মদিনা মনোয়ারায় উপস্থিত হন মুজাদ্দেদ সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ)।

স্থাপনের প্রথমে মদিনা ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত করা হয় শায়েখ মোহাম্মদ আলী আল্ হারাকান কে। পরবর্তীতে ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল পরিকল্পনাকারী ও সংবিধান প্রণয়নকারী সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ)। তিনি মৃত্যু অবধি উক্ত সম্মানিত পদে বহাল ছিলেন!
১৯৬২ সালের মে মাসেই প্রতিষ্ঠা হয় বিশ্বখ্যাত সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান 'রাবেতা আলমে আল ইসলামী'।
৩ নাম্বার ছবিতে সেই প্রতিষ্ঠা কমিটির দস্তখত সম্বলিত নথি। সবার মাঝে সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী রহমাতুল্লাহি আলাইহির দস্তখত।

Friday, July 21, 2017

মাওলানা মওদূদী (রহঃ) কি আলিম ছিলেন? কোন কোন ইসলামপন্থীর সমােলাচনার নায্য জবাব

লিখেছেনঃ সিরাজুল ইসলাম

মাওলানা মওদূদী (রহঃ) ও তার, চিন্তাধারা, তাঁকে যাঁরা চিনতেন এবং তাঁর সাথে কাজ করতেন তাঁরা জানতেন তিনি একজন ‘আলিম; এমনকি যাঁরা পরে তাঁর সংশ্রব থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন তাঁরাও তাঁর আলিম হওয়াকে অস্বীকার করতেন না। তাঁরা তাঁর সাথে অন্য বিষয়ে মতভেদ করতেন সেজন্য দূরে সরে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু লোক যারা নিজেরা মূলত আলিম নয়, তারাই তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটায় এবং বলে যে তিনি আলিম ছিলেন না।


ইসলামে আলিম হবার নিয়ম কী? আলিম হবার নিয়ম হচ্ছে আপনি একজন আলিমের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট বিষয় অধ্যয়ন করবেন। এরপর আপনার উস্তায যখন নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনি পারঙ্গম হয়েছেন বলে নিশ্চিত হবেন তখন তিনি আপনাকে ইজাযাহ [সনদ] দান করবেন। এভাবে আপনি ঐ বিষয়ে আলিম হবেন। ইসলামে আলিম হবার এটাই হচ্ছে ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতেই আলিম হয়েছেন আমাদের আগের দিনের উলামারা, আয়িম্মা আল-মুজতাহিদীন, মুহাদ্দিসীনগণ সবাই। এখনকার মাদ্রাসা বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি,এইচ-ডি নেয়াটা মূলত ঐ ইজাযাহ সিস্টেম থেকে আসা পথ। উস্তায সায়্যিদ আবুল আলা মওদূদী (রহঃ) মূলত সেই ট্র্যাডিশনাল ইসলামিক ইজাযাহ পদ্ধতিতে গড়ে উঠা আলিম। তিনি ইসলামের মৌলিক সবগুলো বিষয়ে তৎকালীন ভারতের প্রসিদ্ধ আলিমদের থেকে ইজাযাহ প্রাপ্ত। তাই তাঁকে যাঁরা চিনতেন তেমন বিরোধীরাও তাঁর আলিম হওয়া নিয়ে কথা বলত না। তাঁর পরিবারের কাছে তাঁর ইজাযাহগুলো এখনও সংরক্ষিত। মুশকিল হচ্ছে তাঁর জীবনীকাররা তাঁর ইজাযাহগুলো সম্পর্কে লিখেন নাই। এমনকি জামায়াতে ইসলামী থেকেও তাঁর যে সমস্ত জীবনী বের করা হয়েছে – যেমন আব্বাস আলী খানের লিখা মাস্টারপিস 'মাওলানা মওদূদী, একটি জীবন, একটি আন্দোলন, একটি ইতিহাস'– সেগুলোতেও এগুলোর উল্লেখ নাই। এর কারণ সম্ভবত উস্তায মওদূদীর (রহঃ)প্রচার বিমুখতা। যাই হোক আমি নিজে তাঁর সম্পর্কে পড়তে গিয়ে অল্প কয়েকটা বিষয়ে জানতে পারলাম। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ফকীহ এবং সালাফী আলিম ডঃ সায়্যিদ আব্দুল হালিম মুহাম্মদ হুসাইন [হাফিজাহুল্লাহ] এর লিখা 'নাযারাত ফী ফিকরি আবীল-আলা আল-মওদূদী' –ﻧﻈﺎﺭﺍﺕ ﻓﻲ ﻓﻜﺮ ﺃﺑﻲ ﺍﻷﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻮﺩﻭ কিতাবে মাওলানা মওদূদীর শিক্ষাগত যোগ্যতার যে বিবরণ তিনি দিয়েছেন তা থেকে আমি পাঠকদের জন্য উল্লেখ করছি-
১। আরবী ভাষা, নাহু, সরফ, আল-মা’ক্বুলাত ওয়াল-বালাগাহ ওয়াল মা’আনীঃ

এগুলোতে তিনি ইজাজাহ লাভ করেছেন দিল্লীর দারুল

উলুমে ভারতের প্রখ্যাত আলিম মাওলানা শায়খ আব্দুস-সালাম নিয়াজীর [রহিমাহুল্লাহ] কাছ থেকে।
২। হাদীস ও উলুম আল-হাদীসঃ

শায়খ ইশফাক্বুদ্দীন কান্দাহলাবীর [রহিমাহুল্লাহ] কাছ থেকে এ বিষয়ে ইজাযাহ লাভ করেন তিনি।

৩। ফিক্বহ, তাফসীর বায়দাওয়ী এবং আল-মাতূল ফী ‘ইলম আল-মা’আনী ওয়াল-বালাগাহঃ

এ বিষয়গুলোতে তিনি ইজাযাহ লাভ করেন শায়খ শরীফুল্লাহর [রহিমাহুল্লাহ] কাছ থেকে।

৪। ইংরেজী ভাষাঃ

মৌলভী মুহাম্মদ ফাদিল এর হাতে মাত্র চার মাসে তিনি ইংরেজী ভাষা শিক্ষায় বুৎপত্তি লাভ করেন।

ডঃ শায়খ আব্দুস-সালাম আযাদী নীচে মন্তব্যে উস্তায মওদূদীর (রহঃ) শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আরো লিখেছেনঃ

উস্তায নাদীমুল্লাহ হাসনাইন ও শায়খ নিয়ায ফাতেহ পুরির কাছ থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। মুহাম্মাদ ফাদিল এর কাছে শুধু ইংরেজি ভাষা না, ইতিহাস, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান ও বিভিন্ন ধর্মের তুলনামূলক আলোচনা পড়েছেন। তিনি মাওলানা ইশফাকুর রহমান কান্ধল্ভীর কাছ থেকে হাদীস ফিকহ ও আরবী সাহিত্য পাঠদানের ইজাযাহ নেন ১৯২৭ সালে এবং তিরমিযি ও মুওয়াত্তা ইমাম মালিক শিক্ষা দানের ইজাযাত গ্রহন করেন ১৯২৮ সনে। এই দু বছর তিনি সম্পূর্ণ সময় ব্যয় করেছেন লেখা পড়ার পেছনে। দেওবন্দে তিনি তাদের পত্রিকা আল জামইয়্যাতের সম্পাদক তখনই হতে পেরেছেন যখন সেখানকার আলিমরা তাঁকে সার্টিফাই করেছেন। কিছু মুর্খ লোক বলে "তিনি আলিম ছিলেন না"। তারা জানেন না মাওলানার অনেক বই বুঝতে হলে ছোট খাট আলেমদের পক্ষেও সম্ভব হবে না। ইসলামে যখন কাউকে আলিম বলা হয় তখন মাদ্রাসা পাশ কাউকে বুঝায় না। আলিম একটা বিরাট ব্যাপার। সায়্যিদ মওদূদী (রহঃ) মূলত আলিম শব্দটার যথার্থ অর্থেই আলিম। এটা কারো ভুল ভাঙ্গানোর জন্য না, বরং যারা অন্যায় অভিযোগের কোন সন্তোষজনক জবাব জানতেন না তাদের জন্য।

আমাদের ঘোষনা, আমাদের চ্যালেঞ্জ:
আল্লামা মওদুদী (রহ.) শুধু আলেমই নন, 
বরং বিশ্বব্যাপী অসংখ্য আলেমের উস্তাদ।
Please brwose this label link and see all post: 

আমাদের দোয়া: 
হে আল্লাহ! হে সমস্ত ক্ষমতার মালিক! আল্লাহ’র দ্বীনের এই একনিষ্ঠ মুজাহিদকে যারা অপবাদ দেয়, অপমান করতে চায় তাদের হয় হেদায়াত দান করো, না হয় দুনিয়া ও আখেরাতে উচিত শিক্ষাদান করো, আমিন 

Thursday, July 20, 2017

প্রফেসার গোলাম আজম কি শহীদ? একটি পর্যালোচনা।


প্রফেসার গোলাম আজম কি শহীদ? একটি পর্যালোচনা।
-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল
আমি ফেইসবুকে একটা ভিডিও পোষ্ট দিয়েছিলাম। সেখানে কমেন্টে প্রফেসার গোলাম আজমের শাহাদাত সংক্রান্ত একটা পর্যালোচনা হয়েছে ।   আলোচনাটি আকর্ষনীয় হওয়ায় এখানে পোষ্ট আকারে সাজিয়ে দিলাম:

Shahadatur Rahman Sohel:
শহীদ প্রফেসর গোলাম আযম সাহেবের শেষ ইন্টারভিউ. তার গ্রেফতার প্রসঙ্গেঃ 'জীবনে বহুবার গ্রেফতার হয়েছি আর মুমিনতো মৃত্যুকে পরোয়া করেনা, আর যদি অন্যায় ভাবে মৃত্যু দেয়া হয় তাহলে শহীদ হওয়ার গৌরব পাওয়া যায় সে হিসেবে ইসলামী আন্দোলনের কর্মি হিসেবে শাহাদাত কামনা করি। সেজন্য ভয় কিসের? আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় করা তো জায়েজই না, আল্লাহ কে ছাড়া কাউকে ভয় করার অনুমতি নাই'

S.m. Hasan:

শহীদ প্রফেসর গোলাম আযম ?? শহীদ ?? how, why?

#ShahadaturRahmanSohel answer me please

Shahadatur Rahman Sohel:
আমরা হাদীস থেকে জানি- যারা সত্যিকার শাহাদাত কামনা করবে তারা বিছানায় শুয়ে মৃত্যুবরণ করলেও শহীদ হবে। প্রফেসর গোলাম আযম সাহেবের সমস্ত জীবন সাক্ষী দেয় তার শাহাদাত কামনা সত্যিকারের ছিল। তাছাড়া জালিমের কারাগারের হয়রানী সহ্য করে মৃত্যুবরণ করেও তিনি শহীদ হিসাবে গণ্য হবেন না -এটা তো আমার কাছে আশ্চর্যজনক মনে হয়। আমি মনে করি- অবশ্যই তিনি শহীদ। কেউ ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন। হে আল্লাহ! প্রফেসর গোলাম আযমকে উচ্চপর্যায়ের শাহাদাত দান কর এবং জান্নাতুল ফিরদৌস নসীব কর, আমীন।

Abu Sayeed:
"যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান এনেছে তারাই তাদের রবের কাছে ‘সিদ্দীক’ ও ‘শহীদ’ বলে গণ্য৷ তাদের জন্য তাদের পুরস্কার ও ‘নূর’ রয়েছে" (সুরা হাদীদ: ১৯ নং আঃ)৷ হাদীসে হযরত বারা ইবনে আযেব বর্ণনা করেছে যে, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একথা বলতে শুনেছেন যে, "আমার উম্মতের মু'মিনগণই শহীদ। " তারপর নবী (সা) সূরা হাদীদের এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন (ইবনে জারীর)৷ ইবনে মারদুইয়া হযরত আবুদ দারদা থেকে এই একই অর্থের একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি তার প্রাণ ও দীন বিপন্ন হবে ও কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে এ আশংকায় কোন দেশ বা ভূ-খণ্ড ছেড়ে চলে যায় তাকে আল্লাহর কাছে 'সিদ্দীক'বলে লেখা হয়। আর সে যখন মারা যায় তখণ আল্লাহ শহীদ হিসেবে তার রূহ কবজ করেন। একথা বলার পর নবী (সা) এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন৷
অধ্যাপক গোলাম আযমের চতুর্থ ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী তাঁর পিতাকে আল্লাহ যাতে শহীদ হিসাবে কবুল করেন এজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। একজন মুসলমান নামাজ পড়ে না্মাজ কবুলের জন্য দোয়া করে। তেমনি একজন শহীদ ব্যক্তিরই শাহাদাত কবুলের জন্য দোয়া করা হয়। মহান আল্লাহ অধ্যাপক গোলাম আযমকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের শহীদ হিসাবে কবুল করুন, আমীন
একদিন লেখিকা মাসুদা সুলতানা রুমী আপার বাসায় গেলে তার লেখা একটি পান্ডুলিপি চোখে পড়ে। নাম দিয়েছেন ''মরনের আগে ও পরে প্রিয়জনদের করনীয় । "
পান্ডুলিপি পড়তে পড়তে এক যায়গায় আটকে গেলাম। সেখানে অধ্যাপক গোলাম আযম স্যারের সাথে লেখিকার কথোপকথনের কিছু অংশ তুলে দেওয়া হয়েছে। লেখাটি এত পছন্দ হয়ে যায় যে, কমরেড মাহমুদ বইটির প্রকাশক হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ আছে লেখিকা গোলাম আযম সাহেবকে জিজ্ঞেস করেন-
"জামাই, সরকার যেভাবে কথাবার্তা বলছে তাতে আপনাকে ছাড়বে বলে মনে হয়না....!!! "
উত্তরে আযম সাহেব বলেন-
এদেশের জনগনের গড় আয়ু ৫০-৬০ বছর। সেখানে আল্লাহ্‌ আমাকে ৮৫ বছর বয়সেও বাঁচিয়ে রেখেছেন। ইসলামী আন্দোলন করতে এসে সব সময় মনে শাহাদতের কামনা লালন করেছি। এই বয়সে এসে মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা যদি আমাকে ভালবেসে আমাকে রহম করে শাহাদতের মর্যাদা দেয় এতে তোমরা পেরেশান হচ্ছো কেন? তোমাদের দোয়া করা উচিত মহান আল্লাহ্‌ আমাকে যেন এই মর্যাদা থেকে বঞ্চিত না করেন...!!"
আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন তার প্রিয় বান্দাকে এভাবেই মর্যাদাশীল করবেন কে বুঝতে পেরেছিল...!! সারা বিশ্বব্যাপী আজ শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে এই মহান নেতাকে হারিয়ে।। আল্লাহতালা নিজেই ঘোষনা করেছেন তিনি তার প্রিয় বান্দাদের মর্যাদা দান করেন। আল্লাহ উনাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের মেহমান হিসাবে কবুল কিরে নিন। আমীন...
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'সর্বোত্তম জিহাদ হলো অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলা।' (মুসনাদ আহমদ : ৩/১৯) তিনি আরও বলেন, সর্বোত্তম শহীদ হলেন হামযা(রাঃ), অতপর ওই ব্যক্তি যে জালেম শাসকের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আর সে তাকে সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে। ফলে তাকে(ঐ ব্যাক্তিকে) সে(জালেম শাসক) হত্যা করে। (হাকেম, মুস্তাদরাক: ৩/১৯০; জাসসাস, আহকামুল কুরআন : ১/৭০)

Shahadatur Rahman Sohel: 
অধ্যাপক গোলাম আজম মারা যাওয়ার পর সারা বিশ্বব্যাপী নানা দেশে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাতারের দোহাতে অবস্থিত সাইয়্যেদা আয়েশা মসজিদে শুক্রবার জুমুয়া নামাজের পর অধ্যাপক গোলাম আজমের গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে । জানাজায় ইমামতি করেন বর্তমান বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ইসলামিক স্কলার হিসেবে পরিচিত আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী। সারা তুরস্ক জুড়ে ৮৮টি গায়েবানা জানাজা হয়েছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে গোলাম আযমের গায়েবানা জানাজা পড়েন সে দেশের ইসলামপ্রিয় জনগণ। করাচিতে গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করেন পাকিস্তান জামায়াতের সাবেক আমির সৈয়দ মোনাওয়ার হোসেন। লাহোরে গোলাম আযমের গায়েবানা জানাজা পড়ান পাকিস্তান জামায়াতের আমির ডঃ মৌলানা সিরাজুল হক। তিনি অধ্যাপক গোলাম আজমকে শহীদ হিসাবে আখ্যায়িত করেন। জানাজার সময় সিরাজুল হক বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের শাহাদাতে আমরা গর্ববোধ করি।    

(একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন)


এই লিংকটি ব্রাউজ করে প্রবন্ধটি পাঠ করুন প্লীজ: শাহাদাতের মর্যাদা 


জামায়াত লক্ষ্যপানে কতদূর অগ্রসর হয়েছে? অধ্যাপক গোলাম আজমের সাক্ষাৎকার


জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিসংখ্যা (১৯৯১সাল) সোনার বাংলা পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে আমীর জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আজমকে প্রশ্ন করা হয়: 
জামায়াত তার আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করেছে। পথহারা মুসলিম জাতিকে ইসলামের সুমহান লক্ষ্যপানে ধাবিত করাই জামায়াতে ইসলামীর বুনিয়াদি লক্ষ্য। খোলাফায়ে রাশেদার আদর্শের আলোকে খেলাফত আলা মিনহাজিন্নাবুয়াত এই (নবীর তরীকা মোতাবেক খেলাফত) জামায়াত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। জামায়াত সেই লক্ষ্যপানে কতদূর অগ্রসর হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

এর উত্তরে তিনি বলেন: আসল কথা হলো ইসলাম যে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এর দ্বারা রাজনীতি, অর্থনীতি তথা জীবনের সব সমস্যার সমাধান হতে পারে এ কনসেপ্ট মুসলিম সমাজ থেকে উবে গিয়েছিল।

বালাকোটের ময়দানে ইসলামী আন্দোলন ১৮৩১ সালে পরাজিত হবার পর সে আন্দোলন আর দানা বাধতে পারেনি। সাইয়েদ আহমদ শহীদের নেতৃত্বে সে আন্দোলন উপমহাদেশের উত্তর সীমান্ত প্রদেশ ও পাঞ্জাবের কিছু এলাকা নিয়ে একটি ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করে। কিন্তু শিখ ও ইংরেজদের মিলিত ষড়যন্তের ফলে বালাকোটের ময়দানে পরাজয় ঘটে ইসলামের। এর ১০০ বছর পর প্রতিষ্ঠা লাভ করে জামায়াতে ইসলামী। এই পঞ্চাশ বছরে জামায়াতে ইসলামীর সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে যে দলটির আন্দোলন ও সংগ্রামের ফলে ইসলাম একটি পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান এই কনসেপ্টটি মুসলিম সামজে আবার প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। কয়েকশ বছর পর্যন্ত মুসলমানদের দিল-দেমাগ থেকে ইসলামের ধারণাই সরিয়ে ফেলা হয়েছিল, কিন্তু আলেম সমাজ ও মাদ্রাসাসমূহের ইহা এক বিরাট আবদান তারা কুরআন হাদীসকে সমাজের মাঝে জাগরূক রেখেছে। তাদের এ অবদান স্বীকার করতেই হবে।

কিন্তু কোরআন-হাদীরের জ্ঞান থাকার পরও আলেম সমাজ ইসলামকে একটি দ্বীন তথা জীবনাদর্শ হিসাবে তুলে ধরতে পারেনি। আমি বলব তাদের সামর্থ ছিল না। তাই তারা মুসলিমলীগ ও কংগ্রেস এ দুই ভাগে বিভক্ত ছিলেন। দেওবন্দী হবার পরও মাওলানা শাব্বির আহমদ ওসমানীর নেতৃত্বে ১০৪৩ সালে আলেমগন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম গঠন করেন যা পরবর্তীতে পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন দান করে।

মাওলানা মওদূদী এটা এক বিশেষ অবদান এমতো পরিস্থিতিতেও তিনি এমন এক আন্দোলন গড়ে তুলেন যা আজ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। ইউরোপ, আমেরিকা থেকে জাপান যেখানেই উপমহাদেশের মুসলমান রয়েছে সেখানেই এ আন্দোলন বিস্তার রয়েছে।

আজ আধুনিক শিক্ষিতদের মধ্যে একটি বড় দল তৈরী হয়ে গেছে যারা নিজেদের মুসলিম বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে। অথচ আজ থেকে ৫০ বছর আগে এ অবস্থা ছিল না। এ আন্দোলন ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে লাখ লাখ নওজোয়ান নারী-পুরুষ-বৃদ্ধকে। মাদ্রাসার পাঠ চুকিয়ে যারা মনে করতেন দ্বীনের দায়িত্ব আঞ্জাম হয়ে গেছে বা যাবে এ আন্দোলন তাদের ধারনা পাল্টে দিয়েছে। ইকামাতের দ্বীনের কুরআনী জযবায় আলোড়িত করে তুলেছে ওলামা সমাজকে।

যে সমস্ত দলের তত্ত্বে ইসলাম নেই, তারাও আজ ইসলামের ঝান্ডা আর আল্লাহু আকবার শ্লোগান দিয়ে নেমে এসেছে। নেজাম মানে বিধান নিয়ম নীতি রীতি। ১৯৫৩ সালে গঠিত হয় নেজামে ইসলাম। তাদের লক্ষ্য ইসলাম প্রতিষ্ঠা। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে খেলাফত আন্দোলন। ৪০ বছর পর্যন্ত রাজনীতিকে দ্বীনের অংশ মনে করতেন না হাফেজী হুজুর। তিনি ইসলাম কায়েমের জন্য ময়দানে নেমে আসেন জীবনের শেষ প্রান্তে। রাজনীতিকে বেছে নেনে পথ হিসাবে, যারা নাকি রাজনীতিকে দ্বীনের কাজই মনে করতেন না তাদেরকে এ আন্দোলনই শিখিয়েছে যে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও দ্বীনের কাজ। আশির দশকে এ অঞ্চলে আরও একটি দল কায়েম হয়েছে ইসলাম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে।

এভাবে আমি বলতে চাই-জামায়াতে ইসলামী এর লক্ষ্যে অনেক অগ্রসর হয়েছে এবং জামায়াতে এখন আল্লাহর রহমতে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে যে কেউ জামায়াতে করুক না নাই করুক এমনকি জামায়াতের বিরোধিতা করলেও কুরআনের আইনের কথা বলতে বাধ্য হচ্ছে।




Wednesday, July 19, 2017

দ্বীন ইসলাম হেফাজতের দায়িত্ব কাদের? পড়ুন ও ভিডিও দেখুন প্লীজ

রাছুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “ইহ্ফাজিল্লাহা ইয়াহ্ফাজুকা” অর্থাৎ “আল্লাহর দ্বীনের হেফাজত কর, আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করবেন” (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত সহীহ হাদীস)। আল্লাহর দ্বীন তথা দ্বীন ইসলামের হেফাজতের দায়িত্ব প্রত্যেক মুসলমানের। এক্ষেত্রে হকপন্থী আলেম-ওলামা ও ইসলামী সংগঠনের অগ্রগামী ও নেতৃত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত। যদি মুসলমান এই দায়িত্ব পালন না করে তাহলে তারা আল্লাহ’র হেফাজত থেকে বঞ্চিত হবে। ফলে মুসলমান সমাজে পাপাচারের বিস্তৃতি, অপরাধী শক্তির প্রাধাণ্য, অন্য জাতির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা - পরাধীনতা, নির্যাতন ইত্যাদি ভয়াবহ আযাব-গযবের আবির্ভাব ঘটবে। 
এবিষয়ে এখানে একটি ভিডিও দেয়া হল - দেখুন ও শেয়ার করুন প্লীজ। মহান আল্লাহ এই ভিডিও-এর টকশোর মোঃ গোলাম মাওলা রণি ও মাহী বি. চৌধুরীসহ আমাদের সবাইকে দ্বীন ইসলামের সহি হেদায়াত দান করুন এবং দ্বীন ইসলামের হেফাজতের ও কায়েমের সংগ্রামে মজবুতভাবে এগিয়ে যাওয়ার তৌফিক করুন, আমীন।


(একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন)


Thursday, June 22, 2017

শিল্পক্ষেত্রে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী’র অবদান Shilpokhetre Nizami

 

শহীদ ওমর আল মোক্তার : লিবিয়ার এক কিংবদন্তির নাম - ইসলামী জিহাদের অসাধারণ প্রেরণা

#Lionofthedesert # লিবিয়ার এক কিংবদন্তির নাম - ওমর আল মোক্তার -যিনি ইসলামী মূল্যবোধ আর চেতনা ধারন করে ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে দাড়িয়েছিলেন । অনেক কিছুই শেখার বা গর্ব করার মত বিষয় আছে এই অসাধারন নেতৃত্বের কাছ থেকে । যারা বিশদ জানতে চান - তারা ‘ Lion of the Desert ‘ ছবিটা দেখতে পারেন । কথা দিচ্ছি - আপনার সময়টা অপচয় হবে না । এখন এই সংক্ষিপ্ত ডকুমেন্টারীটা  দেখুন প্লীজ (একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন)


Tuesday, June 20, 2017

মরক্কোয় জাতীয় নির্বাচনে ইসলামী দলের দ্বিতীয়বার বিজয়,বাংলাদেশে কবে?

লিখেছেন লিখেছেন আরাফাত হোসাইন 
২২ অক্টোবর, ২০১৬




মরোক্কোর নির্বাচনী ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, পিজেডি ২০১১ সালের তুলনায় বেশি আসনে বিজয়ী হয়েছে। ১০৭ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ আসন। অপর দিকে পিজেডির প্রধান প্রতিপক্ষ সেকুলারদের জোট পিএএম ১০২ আসন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। মরোক্কোর নির্বাচনব্যবস্থা বেশ জটিল। ৩৯৫ সদস্যের পার্লামেন্টে ৯২টি নির্বাচনী এলাকা থেকে ৩০৫ জন সদস্য নির্বাচিত হন। সংরক্ষিত আছে ৯০টি আসন। ৬০টি নারীদের জন্য বাকি ৩০টি ৪০ বছরের কম বয়স এমন তরুণদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। সংসদে আসন পেতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যূনতম ৬ শতাংশ ভোট পাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দলগুলোর ভোটের ভিত্তিতে আসন পাওয়ায় এককভাবে কোনো দল সরকার গঠন করতে পারে না। অন্য দলের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে হয়।

সর্বাধিক আসন পাওয়া দলকে বাদশাহ সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। ২০১১ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পিজেডি রক্ষণশীল ও রাজপ্রাসাদের সাথে ঘনিষ্ঠ ইসতিকলাল পার্টির সাথে জোট গঠন করে সরকার গঠন করে। ২০১৩ সালে ইসতিকলাল পার্টি সরকার থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু বিরোধী দলের রাজনৈতিক সমর্থন থাকায় সরকার তার মেয়াদ পূরণ করে।

এবারো পিজেডিকে তৃতীয় দল ৪৬ আসন পাওয়া ইশতিকলাল, ৩৭ আসনে বিজয়ী আর এন আই, ২৭ আসন পাওয়া পপুলার মুভমেন্ট ও ২০ আসন পাওয়া ইউএসএফপির সাথে সমঝোতার মাধ্যমে সরকার গঠন করতে হবে। বাদশাহীর এই দেশে অবাধ রাজনীতির সূচনার পর এক দশকও হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যথেষ্ট সংহত হচ্ছে। বর্তমান ইসলামপন্থী প্রধানমন্ত্রীর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে মনে করা হয়। পেশায় শিক্ষক থেকে তিনি রাজনীতিতে এসেছেন।

প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ বেনকারিন দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। জনকল্যাণকর কিছু কর্মসূচি ও অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। নির্বাচনে বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী বেনকারিন বলেছেন জনগণের সেবার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল তা অব্যাহত থাকবে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পিজেডির সেক্রটারি ও প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ বেনকারানির সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নেয়া। ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নি¤œগতির দিকে যাচ্ছে। যদিও জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে। এখন বিপুলসংখ্যক তরুণের কর্মসংস্থানের দিকে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। যদিও রাষ্ট্র পরিচালনায় সাংবিধানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বাদশাহ বেশি ক্ষমতাবান।

২০১১ সালে আরব বসন্তের ধাক্কা মরোক্কোতেও লেগেছিল। রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছিল। পরিস্থিতি যাতে অন্য আরব দেশের মতো না হয় সে জন্য বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ দ্রুত কিছু সংস্কার কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এর মধ্যে পার্লামেন্টে আরো বেশি ক্ষমতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সংবিধানে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন। যদিও বাদশাহর হাতে রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা। বাদশাহ বিচারক, নিরাপত্তা পরিষদ এবং মন্ত্রিপরিষদের প্রধান। পার্লামেন্টে যেকোনো আইন তার অনুমোদনের জন্য পেশ করতে হবে। কোনো দল রাজতন্ত্রের বিরোধী নয়।

মরোক্কোর নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের দ্বিতীয়বারের মতো ফিরে আসার যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। জর্ডানের বাদশাহর মতো মরোক্কোর বাদশাহ ইসলামপন্থী দলকে নির্বাচন থেকে দূরে ঠেলে দেননি। বরং নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো গণতান্ত্রিক রাজনীতির সূচনায় ইসলামপন্থী দলগুলোর উত্থান ঘটেছিল। প্রথম সাফল্য এসেছিল তিউনিশিয়ায় পরে মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। কিন্তু সেনাবাহিনী ও সেকুলারদের দ্বন্দ্বের কারণে ক্ষমতা স্থায়ী হয়নি। তিউনিসিয়ার ইসলামপন্থী দল আননাহদা স্বেচ্ছায় ক্ষমতা থেকে সরে জাতীয় স্বার্থে সহাবস্থানের রাজনীতিতে নতুন মডেল হিসেবে হাজির হয়েছে। অপর দিকে, মিসরের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সেনাতন্ত্র জেঁকে বসেছে। মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড সরকার সরিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল এ অঞ্চলে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।

মরোক্কোয় পিজেডির বিজয় ও আবারো সরকার গঠন আরব ও উত্তর আফ্রিকায় ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক শক্তি ফিরে আসার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। আরব বিশে^ মধ্যপন্থী দল হিসেবে মুসলিম ব্রাদারহুডের সহযোগী রাজনৈতিক দলের বিকল্প যেমন কোনো রাজনৈতিক দল নেই, তেমনি এই দলগুলো যথেষ্ট জনপ্রিয়। সীমিত আকারে হলেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করতে মরোক্কোর পথ অন্য বাদশাহ শাসিত দেশগুলো ধীরে ধীরে গ্রহণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে শাসকেরা ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে একধরনের সমঝোতার পথেও এগোতে পারেন।

Source: www.newsbybd.net

Popular Posts