Thursday, December 27, 2018

রাসূলুল্লাহ সা.-এর লোক গঠন পদ্ধতি ও রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জন । মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ


নবী মুহাম্মদ (সা.) ৬১০ সালে নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়ে মক্কা বাসীর নিকট আহবান জানালেন যে, হে আমার কওম! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নেই। 
তিনি মক্কার কুরাইশ নেতৃবৃন্দকে বলেছিলেন, তোমরা আমার একটা কথা মেনে নাও তাহলে তোমরা আরবের বাদশাহ্ হবে এবং অনারবরা তোমাদের অধীনে চলে আসবে। তিনি ২৩ বছর নবুয়তি জীবনে আল্লাহ পাকের সার্বভৌমত্ব (উলুহিয়াত) প্রতিষ্ঠার জন্য দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে যে সকল লোক পেয়েছিলেন তাদেরকে তিনি দেশ জাতি ও সমাজ পরিচালনার যোগ্য করে গড়ে তুলেছিলেন এবং গোটা আরবের ইসলামবিরোধী শক্তির সঙ্গে লড়াই সংগ্রাম করে রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জন করেছিলেন।
রাসূল (সা.) লোক গঠনপদ্ধতি নিম্নরূপ
লোকগঠনের গুরুত্ব সম্পর্কে সূরা নূরের ৫৫ আয়াতে আল কুরআনের বক্তব্য আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে ও সৎ কাজ করবে (মুমিনিন, সালিহিন) তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খেলাফত দান করবেন যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দান করেছিলেন, তাদের জন্য তাদের দ্বীনকে মজবুত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে দিবেন, যাকে আল্লাহ তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের (বর্তমান) ভয় ভীতির অবস্থাকে নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দিবেন। তারা শুধু আমার বন্দেগি করুক এবং আমার সাথে কাউকে শরিক না করে।
মু’মিনিন ও সালেহিনের পরিচয়
সূরা বাকারা, আয়াত : ১৭৭ অর্থ : তোমাদের মুখ পূর্ব দিক বা পশ্চিম দিকে ফিরাবার মধ্যে কোন পুণ্য নেই। বরং সৎ কাজ হচ্ছে এই যে, মানুষ আল্লাহ, কিয়ামতের দিন, ফেরেশতা, আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব ও নবীদেরকে মনে প্রাণে মেনে দিবে এবং আল্লাহর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রাণ প্রিয় ধন-সম্পদ, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন, মুসাফির, সাহায্য প্রার্থী ও কৃতদাসদের মুক্ত করার জন্য ব্যয় করবে। আর নামাজ কায়েম করবে এবং যাকাত প্রদান করবে। যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করবে এবং বিপদে অনটনে ও হক-বাতিলের সংগ্রামে সবর করবে তারাই সৎ ও সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকি। 
সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১৩-১১৪ অর্থ : যারা রাতে আল্লাহর আয়াত তেলাওয়াত করে এবং সিজদারত থাকে তারা ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং তারা ভাল কাজের আদেশ করে মন্দ কাজ থেকে বারণ করে এবং মানব কল্যাণে তৎপর থাকে এরা সালেহিন লোকদের অন্তর্ভুক্ত।
সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪-১৩৫ অর্থ : যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষত্রুটি মাফ করে দেয়। এই ধরনের সৎ লোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালবাসেন। আর যারা কখনো কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা কোন গুনাহের কাজ করে নিজেদের উপরে জুলুম করে বসলে আবার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ কথা স্মরণ হয়ে তাঁর কাছে নিজেদের গুনাহ খাতার জন্য মাফ চায়- কারণ আল্লাহ ছাড়া আর কে গুনাহ মাফ করতে পারেন- এবং জেনে বুঝে নিজেদের কৃতকর্মের ওপর জোর দেয় না।
রাসূল (সা.)-এর মু’মিনিন ও সালেহিন তৈরিতে দুই দফা কর্মসূচি
প্রথম দফা কর্মসূচি : ইসলামের জ্ঞান অর্জন ও চরিত্রগঠন: 
সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৬৪ অর্থ : ঈমানদারদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন নবী পাঠিয়ে আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। সে তাঁর আয়াত তাদেরকে শোনায়, তাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করে এবং তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞান (হিকমা) শিক্ষা দেয়া। অথচ এর আগে এই লোকেরাই সুস্পষ্ট গোমরাহিতে লিপ্ত ছিল। 
উপরোক্ত আয়াতে চার দফা কর্মসূচি পেশ করা হয়েছে: 
এক. আয়াতের তেলাওয়াত অর্থাৎ আয়াতের অধ্যয়ন, অনুধাবন ও অনুসরণ। 
দুই. কিতাবের জ্ঞান অর্থাৎ কিতাবের আইন কানুন, বিধিবিধান সম্পর্কে জ্ঞান। 
তিন. হিকমত শিক্ষা দেয়া অর্থাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের শক্তি, ইজতিহাদ করার শক্তি, দ্বীনের গভীর তত্ত্বজ্ঞান, জীবন সমস্যার ক্ষেত্রে সঠিক মত প্রকাশের যোগ্যতা। 
চার. তাজকিয়া অর্থাৎ জীবন পরিশুদ্ধ করা- কুফর ও শিরক ত্যাগ করে ঈমান আনা, অসৎ আচার-আচরণ ত্যাগ করে সদাচারণ অবলম্বন করা এবং অসৎ কাজ ত্যাগ করে সৎ কাজ করা।
দ্বিতীয় দফা কর্মসূচি : বিপদ আপদের মাধ্যমে পরীক্ষা করা: 
সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৪০-১৪২ অর্থ : এ সময় এ অবস্থা তোমাদের এ জন্য আনা হয়েছে যে, আল্লাহ দেখতে চান তোমাদের মধ্যে সাচ্চা মু’মিন কে আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করতে চান। আর জালিমদের আল্লাহ পছন্দ করেন না এবং আল্লাহ যাতে নির্মাণ করতে পারেন মুমিনদের আর নিপাত করতে পারেন কাফেরদের। তোমরা কি মনে করে রেখেছো, এমনিতেই জান্নাতের প্রবেশ করবে? অথচ এখনও আল্লাহ দেখেনইনি, তোমাদের মধ্যে কে তাঁর পথে প্রাণপণ সংগ্রাম করতে প্রস্তুত এবং কে তার জন্য সবরকারী। 
সূরা হাদিদ, আয়াত : ২২ অর্থ : পৃথিবীতে এবং তাদের নিজেদের উপর যে সব মুসিবত আসে তার একটিও এমন নয় যে, তাকে আমি সৃষ্টি করার পূর্বেই একটি গ্রন্থে লিখে রাখিনি। 
ব্যাখ্যা : আল্লাহ তায়ালা যে বিরাট কাজ আঞ্জাম দিতে চান উক্ত মুসিবতের মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি, এ প্রশিক্ষণ ছাড়াই যদি সফলতার স্বর্ণ দুয়ারে পৌঁছে দেয়া হয় তাহলে মুমিনদের চরিত্রে এমন সব দুর্বলতা থেকে যাবে যার কারণে মু’মিনরা না পারবে মর্যাদা ও ক্ষমতার গুরুপাক খাদ্য হজম করতে না পারবে বাতিলের প্রলয়ঙ্করী তুফানের চরম আঘাত সহ্য করতে। 
বিপদ মুসিবত, সমস্যা ও সংকটের পথ অতিক্রম করে মুমিনদেরকে অর্জন করতে হবে সবর, সহিষ্ণুতা, সততা, সত্যবাদিতা, ত্যাগ, তিতিক্ষা, অত্মোৎসর্গিতা, ঈমানী দৃঢ়তা ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা। এসব গুণাবলি কেবলমাত্র কঠিন বিপদ সংকুল গিরিপবর্তেই লালিত হতে পারে। (তাফহীমূল কুরআন)

নবী মুহাম্মদ (সা.) ৬১০ সালে নবুয়ত লাভের মাধ্যমে লোক তৈরির যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন সে সকল তৈরি লোকদের দ্বারাই ৬৩৬ সালে কাদেসিয়ার যুদ্ধের মাধ্যমে পারস্য সাম্রাজ্যের পতন ও ৬৩৭ সালে জেরুজালেম যুদ্ধের মাধ্যমে রোমান সাম্রাজ্যের পতন সংঘটিত হয়। মাত্র ২৭-২৮ বছরের তৈরি নেতৃত্বের মাধ্যমে মুসলমানগণ যে ইসলামী সভ্যতার সৃষ্টি করেছিল সে সভ্যতা দীর্ঘকাল পর্যন্ত বিশ্বের মানুষদেরকে শোষণমুক্ত ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা উপহার দিতে সক্ষম হয়েছিল।


বিপদে-আপদে মনোক্ষুন্ন না হওয়ার আহবান
সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৬ অর্থ : এর আগে এমন অনেক নবী চলে গেছেন, যাদের সাথে মিলে বহু আল্লাহওয়ালা লড়াই করেছেন। আল্লাহর পথে তাদের ওপর যে সব বিপদ এসেছে তাতে তারা মনমরা ও হতাশ হয়নি, তারা দুর্বলতা দেখায়নি এবং তারা বাতিলের সামনে মাথা নত করে দেয়নি। এ ধরনের সবরকারীদের আল্লাহ ভালোবাসেন।
সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৪ অর্থ : তাদেরকে বলো! তোমরা যদি নিজেদের ঘরেও অবস্থান করতে তাহলেও যাদের মৃত্যু অবধারিত ছিল তারা নিজেরাই নিজের বদ্ধভূমির দিকে এগিয়ে আসতো।
সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৩ অর্থ : যা কিছু তোমাদের হাত থেকে বের হয়ে যায় অথবা যে বিপদই তোমাদের ওপর নাযিল হয় সে ব্যাপারে মনোক্ষুন্ন হবে না, আল্লাহ তোমাদের সমস্ত কার্যকলাপ সম্পর্কে জানেন। 
সূরা হাদিদ, আয়াত : ২২-২৩ অর্থ : পৃথিবীতে এবং তোমাদের ওপর যে সব মুসিবত আসে তার একটিও এমন নয় যে তাদের আমি সৃষ্টি করার পূর্বে একটি গ্রন্থে লিখে রাখিনি। এমনটি করা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ কাজ। (এ সবই এ জন্য) যাতে যে ক্ষতিই তোমাদের হয়ে থাকুক তাতে তোমরা মনোক্ষুন্ন না হও।
বিরোধীদের ব্যাপারে আল্লাহ পাকের বক্তব্য
সূরা আহযাব, আয়াত : ৪৮ অর্থ : কখন দমিত হয়ো না কাফের, মুনাফিকদের কাছে, পরোয়া করোনা তাদের পীড়নকে এবং ভরসা করো আল্লাহর প্রতি।
সূরা মুহাম্মদ, আয়াত : ৩৫ অর্থ : তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং সন্ধির জন্য আহবান করো না, তোমরাই বিজয়ী থাকবে, আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন।
সূরা আল কলম, আয়াত : ৪৪-৪৫ অর্থ : তাই হে নবী এই বাণী অস্বীকারকারীদের ব্যাপারটি আমার ওপরে ছেড়ে দাও। আমি ধীরে ধীরে এমনভাবে তাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবো যে তারা বুঝতেই পারবে না। আমি তাদের রশি ঢিলে করে দিচ্ছি আমার কৌশল অত্যন্ত মজবুত।
সূরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত: ১১ অর্থ : এ মিথ্যা আরোপকারী সম্পদশালী লোকদের সাথে বুঝা পড়ার ব্যাপারটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও, আর কিছু কালের জন্য এদেরকে এই অবস্থায় থাকতে দাও।
সফলতার ব্যাপারে আল্লাহ পাকের বক্তব্য
সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৬০ অর্থ : আল্লাহ যদি তোমাদের সাহায্য করেন তাহলে কোন শক্তিই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না। আর তিনিই যদি তোমাদের পরিত্যাগ করেন, তাহলে এর পরে কে আছে তোমাদের সাহায্য করার মতো! কাজেই সাচ্চা মু’মিনদের আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিত।
সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ২০০ অর্থ : হে ঈমানদারগণ, তোমরা ব্যক্তিগত বিপদ-আপদে সবর করো। (ইসলামের) প্রতিপক্ষের মোকাবেলায় সবর করো। (ইসলামের) প্রতিপক্ষের মোকাবেলার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত থাকো। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে করে তোমরা সফলকাম হতে পারো।
সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৯ অর্থ : মন মরা হয়ো না, দুঃখ করো না তোমারই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।
সূরা তুর, আয়াত : ৪৮ অর্থ : হে নবী! তোমার রবের ফায়সালা আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করো। তুমি আমার চোখে চোখে আছে। তুমি যখন উঠবে তখন তোমার রবের প্রশংসায় তাসবিহ পাঠ করো।
নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :
১-৩ নবুয়তি বছর গোপনভাবে ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রমে ৪৬ জন ইসলাম গ্রহণ করেন। 
৪র্থ নবুয়তি বছর প্রকাশ্য ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রমে শুরু হয়। 
৫ম নবুয়তি বছরের শুরুতে কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আবিসিনিয়ায় হিজরত করে প্রথমে ১১ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলাসহ মোট ৮৩ জন পুরুষ ১১ জন মহিলা ও ৭ জন অ-কুরাইশি। এ সময় নবী করীম (সা.) এর সাথে মাত্র ৪০ জন সাহাবী থেকে গিয়েছিল। (তাফহীম সূরা মারিয়ামের ভূমিকা।) 
৬ষ্ঠ নবুয়তি বছরের শেষের দিকে হযরত হামজা (রা.) ও হজরত ওমর (রা.) এর ইসলাম গ্রহণ করেন। 
৭ম থেকে ৯ম নবুয়তি বছর অর্থাৎ তিন বছর শিয়াবে আবু তালিবে অন্তরীণ হয়ে থাকতে হয়।
১০ম নবুয়তি বছরে আবু তালিব ও হজরত খাদিজার মৃত্যুর পরে কুরাইশদের অত্যাচার চরম সীমায় পৌঁছালে তিনি মক্কা ছেড়ে তায়েফে দাওয়াতি কাজে যান। 
১১তম নবুয়তি বছরে হজের সময় মদিনার ৬ জন ইসলাম গ্রহণ করেন। 
১২তম নবুয়তি বছরে হজের সময় মদিনা থেকে ১২ জন এসে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ঐ বছর মেরাজ অনুষ্ঠিত হয়। 
১৩তম নবুয়তি বছরে হজের সময় মদিনার ৭৩ জন নর-নারী ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হিজরত অনুষ্ঠিত হয়। 
** ১ম হিজরি সনে মদিনায় গিয়ে নবী মুহাম্মদ (সা.) ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করেন। উক্ত ইসলামী রাষ্ট্রকে উৎখাত করার জন্য কুরাইশদের নেতৃত্বে আরবের সকল কুফরি শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা চালাতে থাকে। কুফরি শক্তির মোকাবেলায় মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য নবী মুহাম্মদ (সা.) কে বিভিন্ন যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়। 
১ম হিজরি সনে রমজান মাসে সারিয়া সিফ্ফুল বাহার ও জিলকদ মাসে সারিয়া খাররার অনুষ্ঠিত হয়। 
২য় হিজরি সনে বদরের যুদ্ধ ও বনু কায়নুকার সাথে যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। বদর যুদ্ধে ৮৬ জন মুহাজির, ৬১ জন আউস গোত্র ও ১৭০ জন খাজরাজ গোত্রের লোক ছিল।
৩য় হিজরি সনে ওহুদ যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। 
৪র্থ হিজরি সনে রবিউল আউওয়ালে বনু নাজিরের সাথে যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। 
৫ম হিজরি সনে খন্দকের যুদ্ধ ও বুন কুরায়জার সাথে যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। 
৬ষ্ঠ হিজরি সনের বনু মুস্তালিক যুদ্ধ ও হুদায়বিয়ার সন্ধি অনুষ্ঠিত হয়। 
৭ম হিজরি সনে খায়বার যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। 
৮ম হিজরি সনে মূতার যুদ্ধ ও মক্কা বিজয় হয়। 
৯ম হিজরি সনে তাবুকের যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। 
১০ম হিজরি সনে বিদায় হজ অনুষ্ঠিত হয়। 
লক্ষ করার বিষয় ১০টি বছর ধরে একটু নিরাপদ স্থানে যাদের (হিজরতের পূর্বে মুসলমানদের) দাঁড়াবার যায়গা ছিল না পরবর্তী ১০ বৎসরে ১০ লক্ষ সাতাশ হাজার বর্গমাইল বিস্তৃৃত, বাংলাদেশের ১৯গুন বড় বিশাল ভূখণ্ডের তাঁরাই হলেন শাসক দল যাঁরা শোষিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করলেন।
নবী মুহাম্মদ (সা.) ৬১০ সালে নবুয়ত লাভের মাধ্যমে লোক তৈরির যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন সে সকল তৈরি লোকদের দ্বারাই ৬৩৬ সালে কাদেসিয়ার যুদ্ধের মাধ্যমে পারস্য সাম্রাজ্যের পতন ও ৬৩৭ সালে জেরুজালেম যুদ্ধের মাধ্যমে রোমান সাম্রাজ্যের পতন সংঘটিত হয়। মাত্র ২৭-২৮ বছরের তৈরি নেতৃত্বের মাধ্যমে মুসলমানগণ যে ইসলামী সভ্যতার সৃষ্টি করেছিল সে সভ্যতা দীর্ঘকাল পর্যন্ত বিশ্বের মানুষদেরকে শোষণমুক্ত ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা উপহার দিতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তীতে ইসলামী আদর্শের আলোকে পরিপূর্ণভাবে না হলেও মুসলমানগণ ১৭৫৭ সালে বাংলায় মুসলমানদের শাসন পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ শত বৎসরেরও অধিক সময় বিশ্ব সভ্যতার নেতৃত্ব প্রদান করে ছিল।

বিজয়ের মাস উপলক্ষ্যে শিবিরের সুন্দর উদ্যোগ।

বিজয়ের মাস উপলক্ষ্যে শিবিরের সুন্দর উদ্যোগ। নাচ-গানের চেয়ে অনেক ভাল ও প্রশংসিত আয়োজন। ধন্যবাদ শিবির: 

Wednesday, December 12, 2018

ছাত্রশিবিরের শক্তির উৎস কোথায় ? জানালেন সাবেক সভাপতি আব্দুল জাব্বার।

কক্সবাজারের রামু সেনা ক্যান্টনমেন্টের গেইটের অসাধারণ দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য

SHIELD GATE of Ramu Cantonment:





Ramu Cantonment Gate:

রামু সেনানিবাস কক্সবাজারের রামু উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবগঠিত একটি সেনানিবাস।এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০মপদাতিক ডিভিশনের সদর দপ্তর।মিয়ানমার এর সাথে সীমান্ত বিরোধ,রোহিঙ্গা সমস্যা,২০০৮ সালের সমুদ্রবিরোধ সহ নানা কারনে কক্সবাজার এবং রামুর নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রামু সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়। রামুতে অবস্থিত সেনানিবাসটির মোট আয়তন ১৭৮৮.৯৮ একর(এক হাজার সাতশত আটাশি দশমিক আটানব্বই একর)।
বর্তমান রোহিঙ্গা সমস্যায় রামু সেনানিবাস কক্সবাজারের নিরাপত্তা রক্ষায় অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করেছে।রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা,ক্রান বিতরন,রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শান্তিশৃঙ্খলা বিধানে রামু সেনানিবাস এবং সেনাবাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। ইয়াবা সমস্যা,চোরাচালান রোধ,মিয়ানমারের স্পাইদের আটক করা সহ নানা ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য।বর্তমানে রামু সেনানিবাসে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর,বোটানিক্যাল গার্ডেন,রামু ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল,ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ,জরুরি অবস্থায় বিমান উঠানামার জন্য ক্যান্টনমেন্ট এর রাস্তাসমূহকে রানওয়ে হিসেবে ব্যবহারের সুবিধা,অফিসার্স মেস,অত্যাধুনিক অগ্নি-নির্বাপন ব্যবস্থা,সামরিক কর্মকর্তাদের জন্য আবাসস্থল,কৃত্রিম বন,হেলিপ্যড,এফ এম-৯০,স্যাম সিস্টেম,এন্টি এয়ারক্রাফট গান,ড্রোন সিস্টেম,আর্টিলারি সিস্টেম,টাইপ ৫৯ বিডি ট্যাংক,এপিসি,নিজস্ব ফাইবার অপটিক এবং স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন ব্যবস্থা,বিদ্যুৎ ব্যবস্থা,ট্রাস্ট ব্যাংক শাখা,এটিএম বুথ এবং ইন্টালিজেন্স উইং।
রামু ক্যান্টনমেন্ট এর একটি অংশের মূল ফটক এ রয়েছে তিনটি করে মোট ছয়টি সোনালি তীরের ভাস্কর্য।এর অপর নাম “Shield Gate”.. যা মুলত সেনাবাহিনীর যুদ্ধের মনোবল নির্দেশ করে।প্রাচীন আমল থেকেই Shield বা তীর আক্রমন এবং রক্ষণশীলতার প্রতীক।অপর ফটকের সামনের অংশে রয়েছে হাতির দু’টি সাদা দাতের স্তম্ভ।এর নামকরণ করা হয়েছে “Southern Gate”..যা মুলত দক্ষিণাচলের নিরাপত্তা রক্ষায় ১০ম পদাতিক ডিভিশনের ফরমেশন,সক্ষমতা এবং মনোবল নির্দেশ করে।হাতি ডাঙায় থাকা সবচাইতে বৃহৎ এবং শক্তিশালী প্রানী,তারা দল বেধে থাকে,দলের কেউ আক্রান্ত হলে হামলা করে।জংগলের কেউ হাতিকে ঘাটানোর সাহস করেনা।হাতির দাত মহামুল্যবান বস্তু এবং তা গৌরবের প্রতীক।অপরিসীম শক্তির অধিকারী এই প্রানীর কাছে বনের সবাই মাথা নত করে।এছাড়া হাতি দ্বারা মেইন ব্যাটেল ট্যাংক এম্বিটি-২০০০ ও নির্দেশ করে।কারন তা সেনাবাহিনীর গর্বের প্রতীক।সে হিসেবে রামুতে কিছু এম্বিটি-২০০০ ও থাকতে পারে।

মিনা ফারাহ্ এর কথায় বুঝা যায়, কামরুজ্জামান স্যার নির্দোষ ছিলেন।




Tuesday, December 4, 2018

সারাদেশে বিজয় দিবসে ছাত্র শিবিরের বর্ণাঢ্য র‌্যালি! ২০১৮ ইং



মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীসহ সারাদেশে বর্ণাঢ্য র‌্যালী, রক্তদান কর্মসূচি, ফ্রি ব্লাড গ্রুপিংসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।


রাজধানীতে র‌্যালী কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শিবির নেতৃবৃন্দ বলেন, বিজয়ের এত বছর পরও দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে যখন ৪৮তম বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে তখন লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত এ দেশকে ক্ষমতা লোভীরা জিম্মি করে রেখেছে।
যে লক্ষ্যে লাখো শহীদ জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন তা আজও পূর্ণাঙ্গ ভাবে অর্জিত হয়নি। বরং ৪৮ বছরে বহুবার গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। যা এখন ভয়াল রুপ ধারণ করেছে। ফলে জাতি এখন দারুন ভাবে হতাশায় নিমোজ্জিত।
মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা বীরোচিত ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকে চরম ভাবে লাঞ্চিত করা হচ্ছে। ড. কামালের মত স্বাধীন দেশের সংবিধান প্রণেতা ও বাংলায় প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রবসহ বহু মুক্তিযোদ্ধার উপর লজ্জাজনক হামলা করায় হয়েছে এই বিজয়ের মাসেই।
শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নানা ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। জাতির জন্য দূর্ভাগ্য ও লজ্জার বিষয় যাদের ত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে তাদের বিশাল অংশ আজ অবহেলিত। তাদের উত্তরসুরিদের অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অথচ রাষ্ট্রীয় শক্তি বিজয়ের চেতনাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে ব্যস্ত। মহান বিজয়ের চেতনা হওয়ার কথা ছিল এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। কিন্তু দু:খজনকভাবে মুক্তিযুদ্ধকে স্বার্থ হাসিলের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জাতির গৌরবের মুক্তিযুদ্ধকে দলীয় ও ব্যক্তিগত হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সেই মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেই জাতিকে বিভক্ত করা হচ্ছে। যারা আজ মুক্তিযুদ্ধের একচ্ছত্র দাবীদার তাদের দ্বারাই মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হচ্ছে বার বার। কিন্তু ছাত্রশিবির তার প্রত্যয় ভূলে যায়নি। বিজয়কে অর্থবহ করতে এবং একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার উদ্দেশ্যে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরীর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।


ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দরা বলেন, একটি মহল স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষের ধোয়া তুলে প্রকৃত পক্ষে দেশকে এক গভীর অনিশ্চিয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ক্ষমতার মসনদকে পাকাপোক্ত করতে বার বার জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য জাতীয় ঐক্য, গণতন্ত্র, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা আজো স্বপ্নই রয়ে গেছে।


দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার কেড়ে নেয় এবং সার্বভৌমত্ত্ব বিলিয়ে দেয়া মুক্তিযুদ্ধের সাথে চরম প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু এ প্রতারণা নতুন প্রজন্ম মেনে নেয়নি এবং নেবেও না। ছাত্রশিবিরের প্রতিটি নেতাকর্মী প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও বিজয়কে অর্থবহ করা এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।


গণতন্ত্র ও অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে কোন ছাড় দেয়া হবেনা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ৪৮তম বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র‌্যালী করে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা। সকাল ৮টায় কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সালাউদ্দিন আইয়ুবির নেতৃত্বে র‌্যালীটি রাজধানীর গেন্ডারিয়া রেলস্টেশন থেকে শুরু হয়ে জুরাইন মোড়ে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।


এসময় শাখা সেক্রেটারী কাজী মাসুম সরকার, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সাদেক বিল্লাহসহ শাখার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ গ্রহণ করে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী পূর্ব শাখা এক বর্ণাঢ্য র‌্যালী ও সমাবেশের আয়োজন করে। সকাল ৮টায় রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় র‌্যালী ও সমাবেশ করে নেতাকর্মীরা। এময় মহানগরী সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন হেলালী, অর্থ সম্পাদক- মুজিবুর রহমান, অফিস সম্পাদক আবুল খায়ের সহ মহানগরী ও থানা নেতৃবৃন্দে উপস্থিত ছিলেন।


ঢাকা মহানগরী উত্তর কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, পাঠাগার সম্পাদক জামিল মাহমুদের নেতৃত্বে, রাজধানীর বাড্ডা বিশ্বরোডে বর্ণাঢ্য র‌্যালী করে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখা। সকাল সাড়ে ৯ টায় র‌্যালীটি বাড্ডা বিশ্বরোড থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদিক্ষণ করে সমাবেশে মিলিত হয়।


এসময় মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম সজীব, মহানগর সেক্রেটারি মুস্তাফিজুর রহমান, অফিস সম্পাদক মাহমুদ মুরাদ, প্রচার সম্পাদক তাসদিদ জামান, মাদ্রাসা সম্পাদক নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


চট্টগ্রাম মহানগরী উত্তর ৪৮তম বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম মহানগরী উত্তর নগরীতে বর্ণ্যাঢ্য র‌্যালী বের করে। কেন্দ্রীয় দাওয়াহ কার্যক্রম সম্পাদক শাহ মুহাম্মদ মাহফুজুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে র‌্যালীটি নগরীর খাতুনগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে নতুন ব্রীজ এলাকায় গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।


মহানগরী সভাপতি আহমেদ সাদমান সালেহ’র সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আ স ম রায়হান’র পরিচালনায় এতে আরো উপস্থিত ছিলেন শিবির নেতা হাসান এলাহী, এম এম আমান প্রমুখ।


ময়মনসিংহ মহানগরী মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালীর আয়োজন করে।


ছাত্রশিবির ময়মনসিংহ মহানগরী শাখা। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত এ র‌্যালীতে অংশ গ্রহণ করেন মহানগরী সেক্রেটারি মাহমুদ মুস্তাকীম, বাকৃবি সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, মোমেনশাহী জেলা উত্তর সভাপতি ইকবাল হাসান, মোমেনশাহী জেলা দক্ষিন সভাপতি দেলোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।


সিলেট মহানগরী ৪৮তম বিজয় দিবস উপলক্ষে নগরীতে বর্ণাঢ্য র‌্যালীর আয়োজন করে ছাত্রশিবির সিলেট মহানগরী শাখা। সকাল ১০টায় শাখা সভাপতির নেতৃত্বে নগরীর আম্বরখান এলাকায় র‌্যালী ও সমাবেশ করে নেতাকর্মীরা। এতে বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ গ্রহণ করে।


রংপুর মহানগরীবিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র‌্যালীর আয়োজন করে ছাত্রশিবির রংপুর মহানগরী শাখা। সকাল ১০টায় মহানগরী সভাপতি সামিউল ইসলামের নেতৃত্বে নগরীতে র‌্যালী ও সমাবেশ করে নেতাকর্মীরা। এসময় শাখা সেক্রেটারি আশিকুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


বরিশাল মহানগরী মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালীর আয়োজন করে বরিশাল মহানগরী। সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত এ র‌্যালীতে নেতৃত্বে দেন কেন্দ্রীয় বিতর্ক সম্পাদক কামরুল হাসান। এময় মহানগরীর সভাপতি মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও মহানগরীর সেক্রেটারি মু. রুকনুজ্জামান সহ মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


খুলনা মহানগরী ৪৮তম বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ও পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করে ছাত্রশিবির খুলনা মহানগরী শাখা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন। এসময় মহানগরী সভাপতি হাবিবুর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


লক্ষীপুর শহর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নগরীতে বিশাল র‌্যালী ও সমাবেশ করে ছাত্রশিবির লক্ষীপুর শহর শাখা। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত এ র‌্যালীতে উপস্থিত ছিলেন শহর সভাপতি- মোঃ আবু জাফর লক্ষীপুর জেলা সভাপতি- ফজলুল করিম, শহর সেক্রেটারী শাহরিয়ার রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের হাজার হাজার নেতাকর্মী।


নরসিংদী শহর নগরীতে বর্ণাঢ্য র‌্যালীর আয়োজন করে ছাত্রশিবির নরসিংদী শহর শাখা। শাখা সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম এর পরিচালনায় ও সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল মানুন এর ব্যবস্থাপনায় র‌্যালীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সমাজসেবা সম্পাদক শাহিন হাসান প্রধান। র‌্যালীটি নরসিংদী শহরের বাজির মোড় থেকে শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিক্ষা চত্তরে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।


মৌলভীবাজার শহর ৪৮ তম বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র‌্যালীর আয়োজন করে ছাত্রশিবির মৌলভীবাজার শহর শাখা। সকাল ৯টায় মৌলভীবাজার শহরের কুসুমবাগ এলাকা থেকে র‌্যালীটি শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পশ্চিমবাজার এলাকায় এসে সমাবেশে মিলিত হয়।র‌্যালী পরবর্তী সমাবেশে শহর শিবিরের সেক্রেটারি মিছবাহুল হাসানের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্রশিবির মৌলভীবাজার শহর শাখার সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন। এসময় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবির মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি আব্দুল মুমিত, জেলা সেক্রেটারি কামরুল ইসলাম।


পটুয়খালী শহর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালীর আয়োজন করে ছাত্রশিবির পটুয়াখালী শহর শাখা। সকাল ৯টায় নগরীতে অনুষ্ঠিত র‌্যালীতে উপস্থিত ছিলেন, পটুয়াখালী শহর সভাপতি কবির হোসাইন, পটুয়াখালী জেলা সভাপতি তালহা বিন আমিন, শহর সেক্রেটারি সাইদ রবি, জেলা সেক্রেটারি- গালিব হোসেন, শহর অর্থ সম্পাদক সোহানুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আকতার হোসেনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।


মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র‌্যালীর আয়োজন করে ছাত্রশিবির কক্সবাজার শহর শাখা। সকাল ৯ টায় কেন্দ্রীয় কলেজ কার্যক্রম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে নগরীতে বিশাল র‌্যালী করে নেতাকর্মীরা। এসময় শাখা সভাপতি রিদুয়ানুল হক জিসান, সাবেক ছাত্রনেতা তৈয়ব উল্লাহসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


বগুড়া শহর ৪৮তম বিজয় দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালীর আয়োজন করে ছাত্রশিবির বগুড়া শহর শাখা। সকাল ১০টায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে নগরীতে বিশাল র্যা লী ও সমাবেশ করে নেতাকর্মীরা। ভোলা শহর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শহরে বর্ণাঢ্য র্যালীর আয়োজন করে ছাত্রশিবির ভোলা শহর শাখা। শাখা সভাপতির নেতৃত্বে সকাল ১০টায় নগরীতে র‌্যালী ও সমাবেশ করে নেতাকর্মীরা।


কক্সবাজার জেলা ৪৮তম বিজয় দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালীর আয়োজন করে ছাত্রশিবির কক্সবাজার জেলা শাখা। এতে নেতৃত্বেদেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক আসাদুল্লাহিল গালিব। এসময় শাখা সভাপতিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ গ্রহণ করে।


ভোলা জেলা ছাত্রদের মাঝে জাতীয় পতাকা বিতরণ ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টের মাধ্যমে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করে ছাত্রশিবির ভোলা জেলা শাখা। এতে জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহণ করেন।


কুমিল্লা জেলা পশ্চিম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করে ছাত্রশিবির কুমিল্লা জেলা পশ্চিম শাখা। খেলা পরিচালনা ও পুরস্কার বিতরণ করেন জেলা সভাপতি গোলাম মাওলা হামিদী, সেক্রেটারি আশিকুর রহমান অফিস সম্পাদক, সানাউল্লাহ গাজী, প্রকাশনা সম্পাদক আনোয়ার হোসাইন। এসময় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মাহফুজুর রহমান সহাকারী প্রচার সম্পাদক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।


প্রেস বিজ্ঞপ্তি



See this video please: 

Monday, December 3, 2018

যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধে ইরান দুর্বল হবে না । জালাল উদ্দিন ওমর


বিভিন্ন ধরনের সামরিক অস্ত্র তৈরীর পাশাপাশি ইরান এখন মহাকাশ প্রযুক্তিতে ও হাত দিয়েছে। ইতিমধ্যেই ইরান তার নিজস্ব প্রযুক্তিতে মহাশুন্যে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে। নিংসন্দেহে এটা একটি বিরাট অর্জন। ইরান তার নিজস্ব প্রযুক্তিতে চালু করেছে হেভি ওয়াটার তৈরীর ইন্ডাষ্ট্রি, যা প্রযুক্তি ক্ষেত্রে তার উন্নতিরই সাক্ষ্য বহন করে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র গত ৫ই নভেম্বর থেকে ইরানের বিরুদ্ধে আবারো অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছে। ইরানের রফতানি আয়ের প্রধান উৎস জ্বালানী তেলের রফতানি শুন্যের কোটায় নামিয়ে আনার মাধ্যমে ইরানের অর্থনীতি দুর্বল করা এবং এর মাধ্যমে ইরানের সরকার পরিবর্তনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য। ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত এই অর্থনৈতিক অবরোধকে ইসরাইল বরাবরের মতই সমর্থন জানিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার জবাবে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি অত্যন্ত দৃঢ় ও দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছে -তারা কিছুতেই এই অবরোধ মানবেনা এবং এই অবরোধকে তারা মোকাবেলা করেই এগিয়ে যাবে। বিশ্বের দুই পরাশক্তি রাশিয়া এবং চীন বরাবরের মতই ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধের নিন্দা জানিয়েছে এবং তারা ইরানের পাশে দাড়িয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও এই অর্থনৈতিক অবরোধের বিরোধিতা করেছে। অপরদিকে ইউরোপিয় ইউনিয়ন ও এই অবরোধের বিরোধিতা করেছে। এভাবে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে বিশ্ব বরাবরের মতই বিভক্ত হয়েছে এবং অনেক শক্তিশালী দেশ ইরানের পাশে দাড়িয়েছে। আর এটা ইরানের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। সুতরাং ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা অবরোধে ইরান দুর্বল হবে না বরং সময়ের প্রেক্ষাপটে শক্তিশালী হবে।
ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত এই নিষেধাজ্ঞার প্রধান কারণ ইরানের পরমাণু কর্মসুচি। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের মতে ইরানের হাতে পরমাণু অস্ত্র থাকা বিশ্বের শান্তির জন্য হুমকি। ইরান যদি ও বারবার বলেছে- তার পরমাণু কর্মসুচী শান্তিপূর্ন এবং এটা তার দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুত চাহিদা মেটানোর জন্য, তবু যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আশংকা ইরান গোপনে পরমাণু বোমা তৈরীর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এজন্যই ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের দীর্ঘ বৈরিতা এবং দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনৈতিক অবরোধ ছিল। ইরানের পরমাণু কর্মসুচী বন্ধ করার জন্য ২০১০ সালের ৯ জুন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইরানের বিরুদ্ধে চতুর্থ দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। ইরানের বিরুদ্ধে এর আগেও তিন বার নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছিল। অবশেষে দীর্ঘ আলোচনা শেষে বিগত ২০১৫ সালের ১৪ ই জুলাই অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইরানের পরমাণুু কর্মসুচি নিয়ে ইরানের সাথে বিশে^র ছয় পরাশক্তির সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির একপক্ষ হচ্ছে ইরান আর অপর পক্ষ হচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতার অধিকারী পাঁচটি পরমাণু শক্তিধর দেশ -যুক্তরাষ্ট্র ,রাশিয়া, চীন, বৃটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি। তবে ইসরাইল বরাবরই এই চুক্তির বিরোধীতা করেছে। চুক্তিটি ওই বছরের ২০ শে জুলাই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদেও সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়। চুক্তিটির সার সংক্ষেপ হচ্ছে – ইরান একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা পর্যন্ত তার পরমাণু কর্মসুচী চালাবে, তবে পরমাণু বোমা বানাবে না। বিনিময়ে ইরানের ওপর আরোপিত অথনৈতিক অবরোধ উঠে যায়। এই চুক্তির মাধ্যমে ইরানের পরমাণু কর্মসুচী নিয়ে ইরানের সাথে পশ্চিমা বিশ্বের দীর্ঘদিনের যে দ্বন্দ্ব, বৈরিতা এবং বাকযুদ্ধ ছিল তা থেকে বিশ্ববাসী আপাতত মুক্তি পায়। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতার অধিষ্ঠিত হবার পর থেকেই ইরানের সাথে সম্পাদিত এই সমঝোতা চুক্তি থেকে সরে আসার কথা বলতে থাকেন এবং অবশেষে ২০১৮ সালের ৮ ই মে আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ ই নভেম্বর থেকে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আবারো অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণা করেন। তবে ইরানের সাথে সম্পাদিত চুক্তির অবশিষ্ট পাঁচটি দেশ – রাশিয়া, চীন, বৃটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি এই চুক্তি মেনে চলার অঙ্গীকার করেন। 
ইরানের পরমাণু কর্মসুচী বন্ধ এবং ইরানকে দুর্বল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের যে অবিরাম প্রচেষ্টা তারই ধারাবাহিকতায় গত ৫ ই নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে আরোপিত এই নিষেধাজ্ঞায় ইরানের পরমাণু কর্মসুচী ধ্বংস হবে না এবং ইরান অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও হবে না। তবে সাময়িক সমস্যায় পড়বে মাত্র, যা কাটিয়ে উঠা ইরানের পক্ষে কঠিন হবে না। ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তো বরাবরই আরোপিত ছিল। এবারের অবরোধ ও অতীতের অবরোধের মতই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। সেই ১৯৭৯ সালে খোমেনীর নেতৃত্বে ইরানে ইসলামপন্থীরা ক্ষমতা দখলের পর থেকেই কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের সাথে ইরানের বৈরিতা চলছে। এই বৈরীতা চলে আসছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে। এসব মোকাবেলা করেই কিন্তু ইরান টিকে আছে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় ইরানের পরমাণু কর্মসুচী বন্ধ হয়ে যাবে এবং ইরান দুর্বল হয়ে যাবে এমনটি ভাবার কারণ নেই। মনে রাখতে হবে ইরান সবদিক দিয়ে শক্তিশালী একটি রাষ্ট্র। আয়তন, জনসংখ্যা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক সবদিক দিয়েই ইরান অনেক শক্তিশালী। তেল, গ্যাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ ইরানের রয়েছে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি। অধিকন্তু ইরানে ক্ষমতায় রয়েছে একটি বিপ্লবী সরকার, যাদের পিছনে রয়েছে শক্তিশালী ও স্বতঃস্ফূত জনসর্মথন, যারা কট্টর ইসলামপন্থী, দেশপ্রেমিক, জাতীয়তাবাদী ও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল বিরোধী। সুতরাং ইরানের মত একটি দেশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে সফলতা অর্জন করা কারো পক্ষে অতটা সহজ নয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলসহ পশ্চিমাদের সাথে ইরানের বিরোধ থাকলেও বিশ্বের অধিকাংশ শক্তিশালী রাষ্ট্রের সাথেই তার রয়েছে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা। বিশ্বের দুই বৃহৎ পরাশক্তি রাশিয়া এবং চীনের সাথে ইরানের রয়েছে দীর্ঘদিনের গভীর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক। দেশ দুটির সাথে ইরানের দীর্ঘদিনের এবং গভীর প্রযুক্তি এবং সামরিক সম্পর্ক ও রয়েছে। অপরদিকে কিউবা, ভেনিজুয়েলা, ব্রাজিলসহ অধিকাংশ ল্যাটিন আমেরিকার দেশের সাথেই ইরানের ভাল রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। একইভাবে উদীয়মান পরাশক্তি ভারতের সাথে ও রয়েছে ইরানের সখ্যতা। পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বের শক্তিশালী দেশ পাকিস্তান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, সিরিয়া, ইরাক এবং সুদানের সাথে ইরানের রয়েছে নিবিড় একটি সম্পর্ক। একইভাবে ইসরাইলের চরম শত্রু ফিলিস্তিনের হামাস এবং লেবাননের হিজবুল্লাহর সাথে ইরানের রয়েছে অন্যরকম সেতুবন্ধন। এতগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রের সাথে যার বন্ধুত্ব, অর্থনৈতিক অবরোধে তাকে দুর্বল করাটা সম্ভব নয়। আর ইরানের ব্যবসা বানিজ্য কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বরাবরই কম। তাছাড়া এবারের অবরোধ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা আরোপিত । তার সাথে ইসরাইল ছাড়া কেউই নাই। পরমাণু সমঝোতা চুক্তি করে আবার সেই সমঝোতা চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়াটা আর্ন্তজাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। অপরদিকে চুক্তি স্বাক্ষরকারী রাশিয়া, চীন, বৃটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি কর্তৃক চুক্তি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে আরো দুর্বল করেছে ।
রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের পাশাপাশি ইরান কিন্তু প্রযুক্তি এবং সামরিক খাতে ও যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছে। ইরান এখন তৈরী করছে বিভিন্ন ধরনের গাড়ী এবং মেশিনারী। ইরান সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে সেনাবাহিনীর জন্য তৈরী করেছে কামান, ট্যাংক, রকেট এবং ভুমি থেকে ভুমিতে নিক্ষেপযোগ্য দুরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র। বিমানবাহিনীর জন্য তৈরী করেছে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এবং আকাশ থেকে নিক্ষেপ যোগ্য ক্ষেপনাস্ত্র। একইভাবে নৌবাহিনীর জন্য তৈরী করেছে অত্যন্ত দ্রুত গতির টর্পেডো আর অত্যাধুনিক ফ্রিগেট। স্বাভাবিকভাবেই সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইরানের সফলতা অনস্বীকার্য। এদিকে বিভিন্ন ধরনের সামরিক অস্ত্র তৈরীর পাশাপাশি ইরান এখন মহাকাশ প্রযুক্তিতে ও হাত দিয়েছে। ইতিমধ্যেই ইরান তার নিজস্ব প্রযুক্তিতে মহাশুন্যে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে। নিংসন্দেহে এটা একটি বিরাট অর্জন। ইরান তার নিজস্ব প্রযুক্তিতে চালু করেছে হেভি ওয়াটার তৈরীর ইন্ডাষ্ট্রি, যা প্রযুক্তি ক্ষেত্রে তার উন্নতিরই সাক্ষ্য বহন করে। ইরান ঘোষণা করেছে সে উচ্চ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে সক্ষম এবং পরমাণু জ্বালানী সে বিদেশে রপ্তানী করবে। স্বাভাবিকভাবেই একথা নিশ্চিতে বলা যায় ইরান জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় একটি অবস্থান তৈরী করেছে, যার উপর ভিত্তি করে ইরানের অগ্রগতি শুরু হয়েছে। প্রযুক্তি এখন ইরানীদের আয়ত্তে আর এটাকে এখন কেবল বিকশিত করার পালা। এ অবস্থায় ইরানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ ইরানের জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করবে এবং ইরানের বিজ্ঞানীদেরকে নতুন নতুন আবিস্কারের নেশায় উদ্ধুদ্ধ করবে। আর এ নেশা ইরানীদেরকে এনে দেবে প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং নতুন নতুন আবিষ্কারের সফলতা। যে জাতি জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই এতটা সফলতা অর্জন করেছে সেই জাতি নিশ্চয়ই অবরোধের কাছে হার মানবে না। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধে ইরান দুর্বল হবে না বরং স্বনির্ভরতা অর্জন করবে।
লেখক : প্রকৌশলী এবং উন্নয়ন গবেষক

Friday, November 30, 2018

পরামর্শভিত্তিক জীবন ও আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা মানবতার মুক্তির চাবিকাঠি । ড. মুহা: রফিকুল ইসলাম


ইসলামপন্থী গণতান্ত্রিক শক্তির পক্ষে দিন দিন জনসমর্থন বাড়ছে । হারুন ইবনে শাহাদাত

বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির ওপর দমন পীড়নের চিত্র দেখে রাজনীতি বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও আসল মিশন ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা। অনুগত বিরোধী দল রেখে বিশ্বের মানবতাবাদী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোকে বুঝাতে চায়- ‘তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় আন্তরিক’। নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের নামে তারা যা চায় তা আসলে একদলীয় শাসন। কিন্তু ইতিহাস বলে এমন দুঃস্বপ্ন এদেশের জনগণ মেনে নেয় না। অতীতে যারাই জনগণের সাথে এমন চালাকি করছেন, তাদের পরিণতি ভালো হয়নি। এ দেশের মানুষ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানিদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক বৈষম্য দূর করার দৃঢ়প্রত্যয়ে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে তারা এই যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে। অথচ স্বৈরাচারী শক্তি চেয়েছিল তাদেরকে ধ্বংস করতে কিন্তু পারেনি। স্বাধীন বাংলাদেশেও অনেক স্বৈরাচারের পতন হয়েছে গণআন্দোলনের মুখে। বর্তমান প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, একই কায়দায় দেশে বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তিকে সরকার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে নির্মূল অভিযান শুরু করেছে। হামলা, মামলা, ফাঁসি, খুন, গুম, অপহরণ, জেল, জুলুম রিমান্ড থেকে শুরু করে দেশছাড়া পর্যন্ত করার হীন ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে অব্যাহতভাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এর ফলে সরকার জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে, অপর দিকে বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার ইসলামপন্থী গণতান্ত্রিক দলগুলোর পক্ষে দিন দিন জনসমর্থন বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে ১৯৬৯ সালের ১৪ আগস্ট আজাদে প্রকাশিত মরহুম আবুল মনসুর আহমদ ‘গণতন্ত্রের হায়াত ফুরাইয়াছে কি?’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘জনগণেরও মৃত্যু নাই, গণতন্ত্রেরও মৃত্যু নাই। তবু মাঝে মাঝে গণতন্ত্রের দম আটকাইয়া যায় আমাদের চোখের সামনেই। তার কারণ ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষী, ক্ষমতালোভী পলিটিক্যাল অ্যাডভ্যাঞ্চারিস্টরা ওর গলা টিপিয়া ধরে।’ উল্লেখ্য প্রবন্ধটি পরে ‘শেরে-বাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থে সঙ্কলিত হয়েছে।

নেতাতন্ত্র ইসলামে নেই
উপরে উল্লিখিত মরহুম আবুল মনসুর আহমদের উদ্ধৃতি বিশ্লেষণ করলে এই প্রশ্ন জাগতেই পারে- ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশের গণতন্ত্র কি ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষী, ক্ষমতালোভী পলিটিক্যাল অ্যাডভ্যাঞ্চারিস্টদের কবলে পড়েছে? কোনো কোনো রাজনীতি বিশ্লেষক অবশ্য আরো এক ধাপ এগিয়ে বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নয়, তারও আগে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের রক্তভেজা পল্টন হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিপদ ডেকে এনেছে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও সমাজতন্ত্রীরাই। তাদের ‘ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষী, ক্ষমতালোভী পলিটিক্যাল অ্যাডভ্যাঞ্চারিস্ট’ নগ্ন আচরণের কারণে রাজনৈতিক ২০০৭ সালের ১/১১, অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি থেকেই গণতন্ত্র দম আটকানো অবস্থায় আছে। এর আগেও এদেশে গণতন্ত্রের দম অনেকবার আটকেছে। ১৯৭৩-এর নির্বাচনে ১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফেরার পূর্ব পর্যন্ত এবং ১৯৮২ থেকে ১৯৯০-এর ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনকাল। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এরশাদের পতনের পর ক্ষমতা গ্রহণ করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মরহুম আমির অধ্যাপক গোলাম আযম প্রবর্তিত কেয়ারটেকার সরকার বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর গণতন্ত্র একটু দম নেয়ার সুযোগ পায়। অবশ্য রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে অনেক সংকীর্ণমনা জ্ঞানপাপী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অধ্যাপক গোলাম আযমের এই চিরস্মরণীয় অবদান স্বীকার করতে চান না। অথচ যে সমাজতন্ত্রীরা বন্দুকের নলকে ক্ষমতার উৎস মনে করেন, তাদের গণতন্ত্রের মিত্র বলে গলা ফাটালেও তারা ইসলামকে গণতন্ত্রের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দাঁড় করান। তারা অপপ্রচার চালান ইসলাম নেতাতন্ত্রে পরিচালিত। তাদের এই চিন্তা যে ভুল, তা আবুল মনসুর আহমদ অনেক আগেই বলে গেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, যে সামাজিক গণতন্ত্র রাজনৈতিক গণতন্ত্রের বুনিয়াদ, সেটা মুসলমান সমাজে যত বেশি আছে আর কোনো সমাজে ততটা নেই। মানুষে-মানুষে ভ্রাতৃত্ব ও সমান অধিকার, সকলের নজরে সকলের সমান মানবিক মর্যাদা মুসলমানের ধর্মীয় ঈমানের অঙ্গ। কাজেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতে, মুসলমান সমাজই রাজনৈতিক গণতন্ত্রের সবচেয়ে উপযুক্ত ক্ষেত্র।’ নেতাতন্ত্রের জায়গা যে ইসলামে নেই উল্লিখিত প্রবন্ধে তাও পরিষ্কার করেছেন আবুল মনসুর আহমদ। বলেছেন, ‘নেতাকে নির্ভুল ও বিচার-সমালোচনার ঊর্ধ্বে জ্ঞান করা নেতাতন্ত্রের মূল কথা। কিন্তু মুসলমানরা কোনোকালেই নেতাকে বিচার-সমালোচনার অতীত মনে করে নাই। তাদের পয়গাম্বর হজরত মুহাম্মদ জীবন-মৃত্যুর সাধারণ মানুষ, এটা তাদের ধর্মগ্রন্থ কুরআনের শিক্ষা।’ জনগণকে বোকা বানিয়ে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ পূরণ করতে রাজনীতির মাঠ থেকে ইসলামপন্থীদের তাড়াতেই অপপ্রচার, জেল-জুলুম, মামলা-হামলা, ষড়যন্ত্র, খুন-গুম, হত্যা-নির্যাতনের বাক্স খুলেছে আধিপত্যবাদী শাসক ও তাদের দোসররা।
উন্নয়নের বুলিতে গণতন্ত্রবিমুখ হবে না জনগণ
১৯৬৯ সালের ১৪ আগস্ট দৈনিক আজাদে মরহুম আবুল মনসুর আহমদের ‘গণতন্ত্রের হায়াত ফুরাইয়াছে কি?’ নিবন্ধটি যখন প্রকাশিত হয়, সেই সময় ‘উন্নয়ন’ শব্দটি ছিল বহুল প্রচলিত। আইয়ুব খানের জাদুর স্পর্শে উন্নয়ন শব্দটি তখন অভিধান থেকে বের হয়ে মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। গণতন্ত্রের বিপরীতে ‘উন্নয়ন’ শব্দটির অবস্থান তখন উচ্চমার্গে। ‘উন্নয়ন’র ঠেলায় মানুষের বাকস্বাধীনতাসহ সকল স্বাধীনতাই উর্দিওয়ালাদের বুটের তলায় নিষ্পেষিত। সেই সময় বিবেকের তাড়নায় বাধ্য হয়েই আবুল মনসুর আহমদ লিখেছিলেন, ‘গণতন্ত্রের হায়াত ফুরাইয়াছে কি?’ এই নিবন্ধের মাধ্যমে তিনি জাতির বিবেক জাগাতে চেয়েছিলেন। যেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘গণতন্ত্রী সরকার সুস্পষ্ট কারণেই একটু মন্থরগতি। গণতন্ত্রী দেশে আইন আছে, আইন পরিষদ আছে, ডিবেট আছে, খবরের কাগজের সমালোচনা আছে, জনমতের বাদ-প্রতিবাদ আছে। সে দেশে বাজেট করিয়া খরচ করিতে হয়, খরচ করিয়া হিসাব দিতে হয়; অপরপক্ষে ডিক্টেটরের দেশে এসব হাঙ্গামা নাই। আইন নাই, আইনসভা নাই, খবরের কাগজের সমালোচনা নাই, সভার প্রতিবাদ নাই। বাজেটও নাই, খরচের হিসাব-নিকাশও নাই। গৌরী সেনের টাকা খরচ করেন এক ব্যক্তি তার মর্জি-মোতাবেক।’

প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, লেখক সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ এখন আমাদের মাঝে নেই। তাঁর উত্তরসূরি সুযোগ্য সন্তান ডেইলি স্টারের সম্পাদক জনাব মাহফুজ আনাম আছেন। তার অনেক ভক্ত অনুরক্তও আছেন। তারাও নিশ্চয়ই আবুল মনসুর আহমদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে স্বীকার করবেন, ‘গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই।’
আবুল মনসুর আহমদ তার সময়ের স্বৈরশাসকের যে চিত্র তুলে ধরেছেন একুশ শতকে তার কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। এখন স্বৈরতন্ত্রের সংজ্ঞাও দেশে দেশে বদল হয়েছে। স্বৈরশাসকরা নির্বাচন নির্বাচন নাটক মঞ্চস্থ করেন। তাদের জাতীয় সংসদ আছে। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো আইন তৈরি করেন। সংবিধান পরিবর্তন করেন। বাজেট ঘোষণা ও পাস করেন। শত শত সংবাদপত্র প্রকাশের অনুমতি দেন। কিন্তু ডিবেট নেই, খবরের কাগজের সমালোচনা নেই, আছে শুধু ‘স্তব’ আর ‘স্তুতি’। সমালোচনার বদলে চালু হয়েছে ‘ভালোচনা’ তথা ‘স্তব’। আসলে ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের সংজ্ঞাই শাসকরা পাল্টে ফেলেন। তারা নিজের শাসনকাল ছাড়া আরো শাসনকালকে গণতান্ত্রিক বলে মনে করেন না। নিজের দল ছাড়া অন্য কোনো দলকেও গণতান্ত্রিক বলে মনে করতে চান না। বিপত্তির সূচনা হয় এখান থেকেই। এই মানসিকতার কারণেই গণতন্ত্রের জন্য জানপ্রাণ, আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীন রাজনৈতিক দলও ক্ষমতার লড়াইয়ে নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ বেমালুম ভুলে যায়। এ প্রসঙ্গে সৈয়দ আবুল মাকসুদ বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল প্রশ্নে প্রতিদিন নেতারা কথা বলছেন। তাতে জনগণের লাভটা কী? ওসব তো ক্ষমতায় যাওয়া না-যাওয়ার বিষয়। বর্তমান অবস্থায় পাতানো নির্বাচন নয়, একটি অতি সুষ্ঠু নির্বাচনও বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। কিন্তু নির্বাচন ছাড়াও সমস্যার সমাধান হবে না। একটি নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তে আরেকটি নির্বাচিত সরকার গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারবে না। তা যদি পারত, তাহলে ১৯৯১ সালের পর ’৯৬-এর নির্বাচনেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সুইজারল্যান্ডে পরিণত হতো। তা না হওয়ার কারণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজটি নেতারা করেননি গত ৪১ বছরে। গণতন্ত্র বলতে তারা বুঝেছেন ভোটাভুটি করে কোনো রকমে ক্ষমতায় যাওয়া। গণতন্ত্র অন্য জিনিস। দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা বিষয়টি উপলব্ধি করেছিলেন। তাঁর সংগ্রাম ক্ষমতায় যাওয়ার সংগ্রাম ছিল না। একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্রকে তিনি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করেন। সে জন্যই তিনি শ্রদ্ধেয়। শুধু তাঁর নিজের দেশে নয়, বিশ্বব্যাপী। ক্ষমতায় থাকতে চাইলে তিনি এখনো দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট থাকতেন। ২৭ বছর জেল খাটার জন্য তিনি শ্রদ্ধেয় নন, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনে তাঁর ভূমিকার জন্য তিনি চিরকাল স্মরণীয় ও শ্রদ্ধেয় হয়ে থাকবেন।’ (সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো : ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪)


ইসলামপন্থীদের পক্ষে জনসমর্থন বাড়ছে

শত অত্যাচার নির্যাতনের পরও দেশে ইসলামপন্থীদের পক্ষে জনসমর্থন বাড়ছে। বিশেষ করে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে বিগত দুই বছরে জনসমর্থন দ্বিগুণ বেড়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বিগত পর্যবেক্ষণ এবং ২০১৫ সালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) পরিচালিত জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। জরিপটি পরিচালনা করেছে নিয়েলসন-বাংলাদেশ। গত ২০১৫ সালে মে ও জুন মাসে আড়াই হাজার প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের ওপর চালানো এই মতামত জরিপের একটি প্রশ্ন ছিল আপনি কি জামায়াতে ইসলামীকে পছন্দ করেন, এই প্রশ্নের উত্তরে শতকরা ২৫ জন ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন। অর্থাৎ তারা জামায়াতে ইসলামীকে পছন্দ করেন। অথচ মোট প্রাপ্ত ভোটের হিসাব বিবেচনা করে গত ২০১৩ পর্যন্ত রাজনীতি বিশ্লেষকদের প্রতিটি প্রতিবেদনেই তারা বলেছেন, জামায়াতের জনসমর্থন শতকরা ১২-১৩। এই হিসেবে দলটির জনসমর্থন দ্বিগুণ হয়েছে। অথচ ২৮ অক্টোবর ২০০৬ সাল থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় এই ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ওপর অকথ্য নির্মম নির্যাতন অব্যাহত আছে। বিরামহীন অপপ্রচার, ভিত্তিহীন অভিযোগ, হয়রানি, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, রিমান্ড, নির্যাতন, ফাঁসি, গুম, খুনসহ হেন কৌশল অপকৌশল নেই যা জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে না। তারপরও দলটির এগিয়ে যাওয়া এর বিরোধী শক্তির মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও সরকারের অত্যাচার নির্যাতনের ফলে দলটির প্রতি জনগণের সমর্থন বাড়ছে। অত্যাচার নির্যাতন করে সরকার ভুল করছে এতে সমর্থন আরো বাড়বে- এমন ইঙ্গিত ২০১৩ সালেই দিয়েছিলেন ইরানের এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক পীর মুহাম্মদ মোল্লাযেহি। ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর রেডিও তেহরান সূত্রে প্রকাশ, পীর মুহাম্মদ মোল্লাযেহি বলেন, ‘বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে দেশটির সরকার।
এ লড়াইয়ের শেষ বিজয়ে
গণতন্ত্র স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনকারীদের জীবন সুখের হয় না। উপরে উল্লিখিত দক্ষিণ আফ্রিকার নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে ২৭ বছর জেলখানায় কাটাতে হয়েছে। এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনেরও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জেলখানায় কেটেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে অতীতে যারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছেন এবং বর্তমানেও যারা করছেন, কারো পথ ফুলবিছানো নয়। তবে বর্তমানের মুখোশপরা স্বৈরাচারদের সাথে আন্দোলন সংগ্রাম আগের চেয়ে অনেক কঠিন, এতে সন্দেহ নেই। কারণ কারো অজানা নয়। মুখোশের আড়ালে লুকানো মুখ যে বেশি ভয়ঙ্কর, তা-ও সবার জানা। কিন্তু তারপরও থেমে নেই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষের সাহসী সৈনিকরা। খুন, গুম, মামলা-হামলাসহ নানান অপপ্রচারের জাল ছিন্ন করে তারা জীবনবাজির শপথ নিয়ে এগিয়ে চলছে। ইতিহাস সাক্ষী এই পথচলার শেষ মঞ্জিল বিজয়ের স্বর্ণদুয়ার।

আবুল মনসুর আহমদের ভাষায়, ‘গণতন্ত্র ধ্বংসের এদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হইবে। এরা নিজেরাই ধ্বংস হইবে। গণতন্ত্র ধ্বংস হইবে না। গণতন্ত্রের হায়াত ফুরায় নাই।… গণতন্ত্রের দেশ মার্কিন মুল্লুক যে মুদ্দতে চাঁদে মানুষ নামাইতে পারিল, ডিক্টেটরের দেশ রাশিয়া সে মুদ্দতে তা পারে নাই।’ উন্নয়নের যুক্তিতেই হিটলার, মুসোলিনি, আইয়ুব; জার্মান, ইতালি আর পাকিস্তানে ‘নেতাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাদের পরিণতি কারো অজানা নয়। রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ সেই ভুল পথে হাঁটবে না। গণতন্ত্রহীনতার দেশ থেকে মুক্তি দিতে আগামী নির্বাচনকে অবশ্যই বড় চান্স হিসেবে নিবে। নির্বাচনের মাধ্যমে গণরায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখালে একটি রাজনৈতিক দলের কোনো কিছু হারানোর ভয় থাকার কথা নয়। একটি গণতান্ত্রিক দলের সবচেয়ে বড় শক্তি গণভিত্তি। স্বৈরশাসনের মধ্য দিয়ে সেই ভিত্তির মৃত্যু ঘটে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম বলেন, ‘সরকার জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করে গোটা দেশটাকেই এক বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গ্রেফতার, রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে সরকার দেশকে রাজনীতিশূন্য করে একদলীয় শাসন কায়েম করার ষড়যন্ত্র করছে।’ এ টি এম মাসুম মনে করেন, সরকার ষড়যন্ত্রের পথ ছেড়ে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসবে। তা না হলে জনগণই তাদের ফিরতে বাধ্য করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যা হয়েছেÑ এমন কোনো নির্বাচন আর হবে না। আওয়ামী লীগ যদি ভাবে, বিএনপি নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে বন্দী রেখে তারা অতি আনন্দে আরেকটি ৫ জানুয়ারি বাস্তবায়ন করবে, তবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে মানুষ।’
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘এ সরকার একদিকে গুম, খুন, হত্যা, মামলা দিয়ে জুলুমের রাজত্ব কায়েম করেছে; অন্যদিকে অবাস্তব, কাল্পনিক বাজেট দিয়ে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ব্যাংকগুলো লুট করে এখন জনগণের টাকায় ভর্তুকি দিচ্ছে। দেশে লাখ লাখ যুবক বেকার, কর্মসংস্থান নেই। অথচ মেগা প্রজেক্টের বাজেট দিয়ে মেগা দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই। তবে তা হতে হবে নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে। আমাদের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, সব দলের জন্য সমান সুযোগ রাখতে হবে।’
রাজনীতি বিশ্লেষকরা এ ব্যাপারে একমত, অত্যাচার-নির্যাতন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা আখেরে সুফল বয়ে আনে না। ইতিহাস সাক্ষী নীরব নিরীহ জনগণ ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মতো জেগে উঠলে তাকে সামাল দেয়ার ক্ষমতা কোনো স্বৈরশাসকের থাকে না। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টন হত্যাকাণ্ডের পর দেশে আরো অনেক খুন, গুম, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এখনো ঘটছে কাঙ্ক্ষিত না হলেও হয়তো আরো ঘটবে। তার মানে এই নয়, জনগণের মৃত্যু ঘটবে, গণতন্ত্রের দাফন-কাফন হবে। চূড়ান্ত সত্য হলো জনগণকে হত্যা করে নিঃশেষ করা যায় না। গণতন্ত্রেরও মৃত্যু নেই। অবশেষে জনগণেরই বিজয় হয়।

লেখক : কথাসাহিত্যিক, সিনিয়র সাংবাদিক

Popular Posts