Showing posts with label আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জামায়াত. Show all posts
Showing posts with label আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জামায়াত. Show all posts

Thursday, November 21, 2019

কাশ্মীরের স্বাধীনতার জিহাদে জামায়াতে ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল  


কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্থান জামায়াতে ইসলামীর সম্মানিত আমীর ড. মাওঃ সিরাজুল হক সাহেবের হুংকার। - নারায়ে তাকবীর,আল্লাহু আকবার। কাশ্মীর আজাদী। কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় মুজাহিদ সংগঠন হেজবুল মুজাহেদীন পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর সাথে সম্পৃক্ত সংগঠন। ভিডিওতে এর নেতা নেতা সৈয়দ সালাউদ্দীনকে দেখা যাচ্ছে: 
(একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন)

১৩টি  মুজাহিদ সংগঠন সমন্বয়ে যে সম্মিলিত জিহাদ কাউন্সিল (United Jihad Council, also known as the Muttahida Jihad Council (MJC)) গঠিত হয়েছে তার নেতৃত্ব দিচ্ছে এই  সৈয়দ সালাউদ্দীন পরিচালিত মুজাহিদ সংগঠন হিজবুল মুজাহেদীন। কারগিল জিহাদে নেতৃত্ব প্রদান করে কাশ্মীর হিজবুল মুজাহেদীন। এ জিহাদে কাশ্মীরি মুজাহিদরা বড় ধরণের সফলতা লাভ করেছিল। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফ পিছন থেকে পাকিস্তানের সহযোগিতা প্রত্যাহার ও মুজাহিদদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা না করলে আরো বিরাট সফলতা লাভের সম্ভাবনা ছিল। কাশ্মীর হিজবুল মুজাহেদীন কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী সর্বদলীয় হুরিয়াত কনফারেন্স (All Parties Hurriyat Conference)-এর নেতৃস্থানীয় সদস্য সংগঠন। সর্বদলীয় হুরিয়াত কনফারেন্সের চেয়ারম্যান ছিলেন সৈয়দ আলী শাহ জিলানী। তিনি দীর্ঘদিন কাশ্মীর জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব পদে অভিষিক্ত ছিলেন। পরে তিনি তেহরিক-ই-হুরিয়াত গঠন করেন।   তারপরও সৈয়দ আলী গিলানীকে জামায়াতের ইসলামী  বিশেষ ক্যাটাগরিতে দলের সদস্য হিসেবে দাবী করে অর্থাৎ জামায়াত ও তেহরিক-ই-হুরিয়াত এই দুই সংগঠনের যুগপৎ সদস্য হিসেবে কাজ করেন সৈয়দ গিলানী।  ২০০৪ সালে তেহরিক-ই-হুরিয়াত ও জামায়াতে ইসলামী এক সমঝোতায় আসে।  সে অনুসারে গিলানীসহ ছয়জন নেতাকে এই দ্বি-দলীয় সদস্য হিসেবে গ্রহণ করে জামায়াতে ইসলামী কাশ্মীর। ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে অসুস্থতার কারণে মৃত্যু বরণ করেন এই নেতা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তাঁর মৃত্যুতে সরকারীভাবে  সমস্ত পাকিস্তানে জাতীয় শোক পালিত হয়।
 জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি দলের নেত্রী মেহবুবা মুফতি ট্যুইট করে বলেন, 'গিলানি সাহেবের মৃত্যুর খবরে মর্মাহত। আমরা হয়ত অধিকাংশ বিষয়ে একমত নই, কিন্তু তাঁর অবিচলতার জন্য এবং তার বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে থাকার জন্য আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। কামনা করি, আল্লাহ যেন তাকে জন্নতে জায়গা দেন এবং তার পরিবার ও শুভাকাঙ্খীদের প্রতি সমবেদনা জানাই।'

পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির সিরাজ উল হক সৈয়দ আলী গিলানি সম্পর্কে তার ভাবনা শেয়ার করছেন:

বিঃ দ্রঃ নবী পাক (সাঃ) -এর মুক্ত করা গোলাম সাওবান (রাঃ) বলেন: নবী (সাঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে দু'টি সৈন্যদল এমন যাদেরকে আল্লাহ আগুন থেকে রক্ষা করেছেন।   একদল তারা যারা হিন্দুস্থানের ওপর হামলা চালাবে এবং অন্যদল ঈসা ইবনে মরিয়মের সাথে থাকবে (নাসায়ী -কিতাবুল জিহাদ, মুসনাদে আহমদ) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হিন্দুস্তানের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন,“অবশ্যই আমাদের একটি দল হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ্ সেই দলের যোদ্ধাদের সফলতা দান করবেন আর তারা রাজাদের শিকল/বেড়ি দিয়ে টেনে আনবে । আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন (এই বরকতময় যুদ্ধের দরুন) এবং সে মুসলিমেরা ফিরে আসবে তারা ঈসা ইবন-ই-মারিয়াম কে সিরিয়ায় (শাম) পাবে” (মুসনাদে আহমদ, ইমাম নিসাই (রঃ) ‘আস সুনান আল মুজতাবা’ ) । হাদীসে বর্ণিত গাযওয়ায়ে হিন্দে হিন্দুস্থানের সাথে মুসলমানদের যে ইসলামী জিহাদের কথা বলা হয়েছে (এই জিহাদে মুসলমানরা শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হবে) তার এক অগ্রবর্তী জিহাদ হচ্ছে কাশ্মীর জিহাদ। এই জিহাদে নেতৃস্থানীয় অবস্থানে আছে জামায়াতে ইসলামী।  আলহামদুল্লিাহ।   মহান আল্লাহ  দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম সাফল্য দান করুন, আমীন।  

Friday, October 25, 2019

বিপ্লবী ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টি: বিশ্বব্যপী ইসলামী পূণর্জাগরণে এর অসাধারণ অবদান

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

জামায়াতে ইসলামী রচিত বিপুল ইসলামী সাহিত্য ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ, বাস্তব সম্মত, চিরকালীন ও অত্যাধুনিক এবং আধুনিক সকল অন্যান্য মতবাদ ও জীবন ব্যবস্থার মোকাবেলায় শ্রেষ্ঠ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে প্রমান করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের H. Haddad- এর মতে খৃষ্টান চিন্তাবিদ বলেন- thus Islam is posited as the only viable of a better world order., This (Islamic) religious literature is modern in idiom as well content, It takes the twentieth century seriously. Those who denigrate reivalists and relegate them to the Dark ages, the middle Ages or the seventh century are, at best completely, missing the dynamics of the relevance or religion for modern life, or at worst, purposefully ignoring the new developments in the content and meaning of various Islamic doctrins, ( Islamic Awakening in Egypt. Asq, Volume 9 Number 3, Page 255) অর্থাৎ ``এই ভাবে ইসলাম উৎকৃষ্টতর একক এক বিশ্ব ব্যবস্থার আস্থাশীল রূপরেখা হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ইসলামী সাহিত্য ভাষা এবং বিষয় সবদিক থেকেই আধুনিক যা নিশ্চিতভাবেই বিশ শতকের। যারা ইসলামী পূণর্জাগরণবাদীদের গাল দেয় এবং তাদেরকে অন্ধকার যুগীয়, মধ্যযুগীয় এবং সপ্তম শতকের মানুষ বলে অভিহিত করে তারা আধুনিক জীবনে ধর্মের সাজুস্যতা ধরতে সম্পূর্ন ব্যর্থ হন অথবা ইসলামের বিভিন্ন মতবাদের অর্থ ও বিষয়ে যে উৎকর্ষতা এসেছে তা উদ্দেশ্যমূলকভাবে উপেক্ষা করেন।'' এখানে আলোচ্য্ বিষয়টিতে জামায়াতে ইসলামী ও ইখওয়ানুল মুসলেমীনেরই অবদান। এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকাই অগ্রগন্য । ১৯৭৪ লন্ডনে আল্লামা মওদূদী রহ: এর সম্বর্ধনার উদ্দেশ্যে আয়োজিত এক বিরাট সুধী সমাবেশে বিখ্যাত ইখওয়ানী চিন্তাবিদ মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার মুহাম্মদ কুতুব বলেন "সর্বযুগে ও সকল দেশেই ইসলামী চিন্তাবিদ পয়দা হয়। এযুগেও দুনিয়ায় বেশ কিছু সংখ্যক উল্লেখযোগ্য ইসলামী চিন্তাবিদ রয়েছেন। আপনারা জানেন (একটু মুচকি হেসে) আমিও কিছু চিন্তা করে থাকি। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে মাওলানা মওদূদীই শ্রেষ্ঠতম ইসলামী চিন্তাবিদ হিসাবে স্বীকৃত। ইসলামকে এমন সুন্দরভাবে সহজবোধ্য ভাষার সাজিয়ে আর কেউ পরিবেশন করতে সক্ষম হয়নি। এ ব্যপারে তিনি সত্যিই অতুলনীয়।'' জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক বর্তমানেও উৎকৃষ্টতম ইসলামী সাহিত্য রচিত হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব সাহিত্য বিশ্বব্যপী ইসলামী পূণর্জাগরণে ভূমিকা পালন করেছে এবং করছে। 

Tuesday, October 15, 2019

তিউনিসিয়ার গণঅভ্যুত্থানের নেতা শেখ রাসিদ আল-ঘানুচি, ইসলামপন্থী আন-নাহদা পার্টির বিজয় ও জামায়াতে ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

         তিউনিসিয়ায় গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শুরু  আরব বসন্তের। অন্যান্য দেশে আরব রসন্ত আকাঙ্খিত সফলতা না পেলেও তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্র ও ইসলামের পথে অগ্রযাত্রা অব্যহত রয়েছে। এর পিছনে একটি প্রধাণ অবদান ইসলামপন্থী আন-নাহদা নেতা ডঃ রাশিদ আল ঘানুসির। তিনি ইখওয়ানুল মুসলেমীন ও জামায়াতে ইসলামী তথা আল্লামা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (রহঃ), শহীদ অধ্যাপক গোলাম আজম, সাইয়েদ কুতুব শহীদ প্রমুখের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। উগ্রপন্থা পরিহার, নিয়মতান্ত্রিক মধ্যপন্থায় আন্দোলন পরিচালনা, বিভিন্নপন্থী সংগঠনের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়া ইতাদি ক্ষেত্রে তিনি এদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। এসবই তিউনিসিয়ার জন্য কল্যাণকর হয়েছে। বাংলাদেশের জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান, ব্যরিষ্টার আবদুর রাজ্জাক প্রমুখের সাথে উনার যোগাযোগ ছিল। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলের সরকারে জামায়াতে ইসলামীর অংশগ্রহণ নিয়ে তিনি ‘‘অনৈসলামিক সরকারে ইসলামী দলের অংশগ্রহণ” শীর্ষক প্রবন্ধ লিখেন। এই প্রবন্ধের অনুবাদ সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ২০০২ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কেন্দ্রীয় রুকন (সদস্য) সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন। ২০১৯ সালে আন-নাহদা পার্টি নির্বাচনে বিজয় অর্জন করে। তা নিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদনের লিংক নীচে দেওয়া হলো। আন-নাহদা পার্টির সাথে বর্তমানে তুরস্কের ক্ষমতাসীন রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের নেতৃত্বাধীন একে পার্টির সাথে নিবিড় যোগাযোগ আছে।  

           ২০০২ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কেন্দ্রীয় রুকন (সদস্য) সম্মেলনে আমন্ত্রিত মেহমান হিসেবে বক্তব্য রাখছেন তিউনিসিয়ার গণঅভ্যুত্থানের নেতা শেখ রাসিদ আল-ঘানুচি (Rashid Al-Ghanichi delivering speech at Central Member Conference of Bangladesh Jamaat-e-Islami in 2002):
(একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন)

তিউনিসিয়ার ইসলামী আন্দোলনের নেতা ও রাজনীতিক শেখ রাসিদ আল-ঘানুচি সাইয়্যেদ মওদূদী (রহঃ) সম্পর্কে বলেন:
"আমি সাইয়্যেদ মওদূদীর প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে, তার সাহিত্য আমাকে জাহেলিয়াত থেকে মুক্তি দিয়েছে। সাইয়্যেদ মওদূদী, ইমাম হাসান আল বান্না, ইমাম খোমেনী এ শতাব্দীর চিত্র পরিবর্তনে মৌলিক ভূমিকা পালন করেন। মুসলিম উম্মাহর উপর চাপিয়ে দেয়া সেক্যুলারিজমের বিরুদ্ধে তারা সফল সংগ্রাম করেন"।


এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো: ইসলামবিরোধী প্রতিবিপ্লবী কাফের-মুনাফিক শক্তি বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত। এঅবস্থায় তারা ইসলামী শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে - এর পতন ঘটাতে চেষ্টা করবে। ইসলামী শক্তিরও পাল্টা শক্তি সঞ্চয় করে এগিয়ে যেতে হবে। এঅবস্থায় উত্তান ও পতন থাকবে। এঅবস্থায় হতাশা প্রকাশ করা দুর্বল মন ও দুর্বল ঈমানের পরিচয়। সাধারণ অবস্থা থেকে শুরু করে ইসলামী শক্তি বিশ্বব্যাপী জাহেলিয়াতের সিংহাসন কাঁপিয়ে দিচ্ছে - এটাই লক্ষণীয় বিষয়। আগামীতে এরাই আধুনিক জাহেলিয়াতের চুড়ান্ত পতন ঘটাবে ইনশা-আল্লাহ 

 


এই ভিডিও প্রতিবেদনটি দেখুন প্লীজ 

তিউনিসিয়ার নির্বাচনে জয়ী ইসলামপন্থী রাশিদ ঘানুচির দল আন নাহদা



Other link:


Wednesday, June 12, 2019

ফিলিস্তিনি মুক্তি-সংগ্রাম, হামাস এবং ইখওয়ান-জামায়াত

 

- শাহাদাতুর রহমান সোহেল

    পবিত্র আল-আকসা মসজিদের পূন্যভূমি এবং অসংখ্য নবী-রাসূলগণের স্মৃতিবিজড়িত জেরুসালেম ও  ফিলিস্তিনের দখলদারী জায়নবাদী ইসরাইলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া এক চেতনার নাম “হামাস” । প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র ও আগ্রাসনের মুখে নিজেদের আন্দোলনকে সমুন্নত রেখে নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সমগ্র পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এই ইসলামী আন্দোলন। হামাস শব্দটির অর্থ আশা বা উদ্দীপনা। এটি মূলত: হারাকাত আল-মুকাওয়ামাআল-ইসলামিয়া “ইসলামী প্রতিরোধআন্দোলন” এর আদক্ষ্যর।

    গাজা এবং পশ্চিম তীরে ইসলামি এই প্রতিরোধ আন্দোলন এর প্রকাশ্য আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৮৭ সালে, প্রথম ইন্তিফাদা’র মাধ্যমে। হামাস এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন শেখ আহমেদ ইয়াসিন, যিনি মূলত ছিলেন তৎকালীন ইখওয়ানুল মুসলিমীনের ফিলিস্তিন শাখার নেতা। ইয়াসিন ছিলেন পঙ্গু কিন্তু তবুও যুবক বয়স থেকেই তিনি ছিলেন গাজার নেতা। ১৯৭৮ সালে ৪৯ বছর বয়সী শেখ আহমেদ ইয়াসিন ফিলিস্তিনিদের সাহায্যের জন্য আল মুজাম্মা আল ইসলামী নামে একটি ইসলামী সংগঠন গড়ে তুলেন। সেখান থেকে ১৯৮৭ সালে ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার মাধ্যমে হামাসের আবির্ভাব ঘটে। ১৯৮৮ সালে গৃহীত হয় “হামাস চার্টার” যার ল্য হলো অধিকৃত ফিলিস্তিন থেকে দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো। তাদের ঘোষণাপত্রে মুসলিম ব্রাদারহুড সংশ্লিষ্টতার উল্লেখ করে।  প্রথম ইন্তিফাদার সময়ে হামাসের প্রাথমিক ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল, ‘ইসরাইলকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করাটাই সংগঠনের মূল লক্ষ্য।’ সেই সঙ্গে ইসলাম ও ইহুদী ধর্মের বিরোধকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করে এটিকে মতাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। ধর্মবাদী চেতনার আলোকে এক সংগঠন গড়ার কথা বলা হয়েছিল ওই ঘোষণাপত্রে। মূলত দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বা আল আকসা ইন্তিফাদার সময়কালে (২০০০-২০০৫) হামাসের রাজনীতিতে এক বিশেষ রূপান্তর ঘটতে শুরু করে। এ সময়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের মতাদর্শিক অবস্থানকে ছাপিয়ে যায় ফিলিস্তিনের জাতীয় মুক্তি আন্দোলন। সেই আন্দোলনের প্রতি নিজেদের অঙ্গীকার জানিয়েই রাজনৈতিকভাবে হামাস ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। 

    হামাসের প্রতিষ্ঠাতা ফিলিস্তিনি ধর্মীয় নেতা শেখ আহমাদ ইয়াসিন। শেখ আহমেদ ইয়াসিন ছিলেন একজন পঙ্গু মানুষ এবং প্রায় অন্ধ ছিলেন। তিনি চলাফেরা করতেন হুইল চেয়ারে করে। যখন তার বয়স ১২ বছর তখন তিনি একটা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিবন্ধী হন। তিনি মিসরে লেখাপড়ার পর ফিলিস্তিনে ফিরে এসে প্রতিষ্ঠা করেন হামাস। ২০০৪ সালের ২২ মার্চ ভোরে বাসা থেকে ১০০ মিটার দূরের মসজিদে হুইল চেয়ারে করে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। ওই সময় ৬৪ অ্যাপাচি হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে শেখ আহমাদ ইয়াসিনকে হত্যা করে ইসরাইল। এ সময় তার সাথে থাকা বডিগার্ডসহ আরও ৯ জন পথচারী নিহত হন।

    ২০০৪ সালের ১৭ এপ্রিল হামাসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আবদেল আজিজ আল-রানতিসি ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হলে দায়িত্বে আসেন খালেদ মেশাল। একই বছর ১১ নভেম্বর ফিলিস্তিন কর্তৃপরে প্রেসিডেন্ট ফাতাহ নেতা ইয়াসির আরাফাতের জীবনাবসানের পর প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও) জনভিত্তি হারাতে থাকে। মূলত, ১৯৯৩ সালের ‘অসলো চুক্তি’র বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়লে ফিলিস্তিনে ফাতাহ ও পিএলওর জনসমর্থন কমে আসতে থাকে। আরাফাত পরবর্তী যুগে পিএলও যখন রাজনৈতিকভাবে ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়, ঠিক সেই সময়ে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ও প্রতিরোধ আন্দোলনের আস্থা অর্জনে সমর্থ হয় হামাস। ফিলিস্তিনে ২০০৬ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় তারা। তবে সরকার গঠনের পরপরই ইসরায়েল তাদের মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। আরাফাত-পরবর্তী মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহও হামাসের সরকারে যোগদান থেকে বিরত থাকে। ফাতাহ হামাসের ঐক্যবদ্ধ সরকার গঠনের আহবান প্রত্যাখ্যান করার পর রাজনৈতিক বিভেদ সহিংসতায় রূপ নেয়। পশ্চিম তীরে ফাতাহ তাদের পৃথক সরকার ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখে। অপরদিকে, অবরুদ্ধ গাজা থাকে হামাসের নিয়ন্ত্রণে। এরপর হামাস ও ফাতাহ বহুবার জাতীয় ঐক্যের সরকার প্রতিষ্ঠায় সম্মত হলেও তা বাস্তব হয়নি।

    হামাসের নতুন রাজনৈতিক দলিলে স্পষ্ট করে বলা হয়, হামাসের লড়াই জায়নবাদের বিরুদ্ধে। তা ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে নয়। সেখানে বলা হয়, ‘যে জায়নবাদী ইসরায়েলি নাগরিকরা ফিলিস্তিনি ভূখন্ড দখল করে রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধেই লড়াই করছি আমরা।’   খালেদ মেশাল ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্নে হামাসের অবস্থান সম্পর্কে বলেন, ‘নতুন নীতিতে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনও সুযোগ রাখা হয়নি। তবে আমরা ১৯৬৭ সালের ৪ জুন যে সীমান্ত নির্দেশ করা হয়েছিল, তার ভিত্তিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে আগ্রহী। যার রাজধানী হবে জেরুজালেম, আর সব শরণার্থী ফিরে পাবে তাদের নিজ নিজ ঘর ফিরে পাবে।’ 

    হামাস একটি স্বতন্ত্র সংগঠনে রূপান্তর হলেও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইখওয়ানুল মুসলিমীন, জামায়াতে ইসলামী এবং ্উক্ত ধারার সকল সংগঠনের সাথে সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মৌলানা মতিউর রহমান নিজামীর সাথে খালেদ মেশাল সাক্ষাৎ করেন। ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট রজব তায়িপ এরদোগানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন হামাসের নেতা খালেদ মিশাল। ২০১০ সালে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে এরদোগান হামাসকে নিজেদের ভূখন্ড রক্ষার জন্য সংগ্রামরত প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দল’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। ২০২০ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান আয়া সোফিয়াকে আবারো মসজিদে পরিণত করার পর ইসরাইলের কাছ থেকে "আল-আকসা মসজিদকে মুক্ত করার" প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন। 


    মিসরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসি সরকারের সামরিক অভ্যুত্থানে পতনের অন্যতম কারণ হামাসের সাথে সম্পর্ক। মুরসির শাসনকাল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মৃত্যু যেন অনিবার্য ছিল তার। তিনি ফিলিস্তিন বিশেষ করে গাজাবাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। হামাসের সাথে ছিল সখ্য, মার্কিন-ইসরাইল-সৌদি জোটের কাছে যা অমার্জনীয় অপরাধ। হামাসের সাথে আঁতাত করে মিসরে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অভিযোগে বিচার চলাকালেই মুরসি আদালতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল কেউ মিসরের মতায় থাকতে পারবেন না। কারণ, মিসরের ভৌগোলিক অবস্থান ইসরাইলের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিসরকে বাগে রাখতে পারলে গাজা পুরোটাই ইসরাইল দখল করতে পারে। অন্তত হামাসকে দুর্বল করে দেয়া যাবে, গাজার ওপর অবরোধ অব্যাহত রাখা যাবে। কেননা মিসর সীমান্ত বন্ধ না করলে ইসরাইলের গাজা অবরোধ ব্যর্থ হয়। অথচ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই মুরসি মিসরের সাথে গাজার রাফাহ সীমান্ত খুলে দেন। এ ছাড়া মিসরে ইসরাইলী দূতাবাসে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা করে। এটি ইসরাইল কোনোভাবে মেনে নিতে পারেনি। এসব ঘটনা মুরসির ক্ষমতাচ্যুতি ও মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে। ১৯৭৯ সালে মিসর-ইসরাইল শান্তিচুক্তি অনুসারে মিসর গাজার রাফাহ সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। ওই চুক্তিতে মিসর ও ইসরাইলের সম্পর্কে শান্তি স্থাপিত হলেও গাজাবাসীর জীবনে নেমে আসে চরম অশান্তি। রাফাহ সীমান্ত উন্মুক্ত হলে গাজাবাসী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মিসর থেকে সহজেই আমদানি করতে পারে। অন্যথায় গাজা-ইসরাইল সীমান্তের কেরেম সাহলম সীমান্ত দিয়ে আমদানি করতে হয়। কার্যত এ সীমান্ত ইসরাইল বন্ধই রাখে। ইসরাইলের লক্ষ্য, অবরোধ আরোপ করে গাজাবাসীকে নিঃশেষ করে দেয়া। রাফাহ সীমান্ত বন্ধ করে দিলে ইসরাইলের খায়েসের ষোলকলা পূর্ণ হয়। কয়েক দশক ধরে ইসরাইলের সাথে হাত মিলিয়ে মিসরের শাসকেরা কাজটি করছিলেন। কিন্তু মুরসি ক্ষমতায় এসে রাফাহ সীমান্ত বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নেন। মার্কিন-ইসরাইলের পক্ষ্ থেকে ১৯৭৯ সালের চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও মুরসি তা আমলে নেননি। ১৯৭২ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর থেকে মার্কিন-ইসরাইলের পুতুল সরকারই মিসরের শাসন ক্ষমতায় ছিল। বিপরীত স্রোত থেকে মুরসি আসায় তাকে হটাতে মার্কিন-ইসরাইল জোট সক্রিয় হয়। এদের সাথে যোগ দেয় সৌদি আরব। প্রকৃতপক্ষে  ড. মোহাম্মদ মুরসি প্রকৃতপক্ষে ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামের একজন শহীদ।  

    ১৯৪৮ সালের মে মাসে ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষনা দিয়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনীকে বিতারিত করা হয় নিজ আবাস ভূমি থেকে। শতকরা ৯২ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমেরিকা ও বৃটেনের বর্বরতার চরম নিদর্শন। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইখওয়ানুল মুসলেমীন  ফিলিস্তিন যুদ্ধে মুজাহিদ বাহিনী প্রেরণ করে। এ যুদ্ধের বিবরণ তুলে ধরেছেন ইখওয়ানের অন্যতম নেতা ওস্তাদ কামেল শরীফ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ইখওয়ানুল মিসলেমীন ফি হরবে ফিলিস্তিন অর্থাৎ ফিলিস্তিন যুদ্ধে ইখওয়ানুল মুসলেমীন গ্রন্থে। মুসলমানরা যখন ইসরাইলের সাথে একের পর এক পরাজয় বরণ করছিল তখন ইখওয়ানের মুজাহিদ বাহিনী অসাধারণ সফলতা অর্জন করে। ইখওয়ানের তীব্র আক্রমনের মুখে ইসরাইলের অবৈধ অস্তিত্ব মুছে যাওয়ার উপক্রম হয়। কখন ইহুদীদের মদদগার বৃটেন-রাশিয়া-আমরিকার চাপে তৎকালীন পুতুল রাজতান্ত্রিক সরকার ইখওয়ানের বিপ্লবী মুজাহিদ বাহিনীকে ফিলিস্তিন থেকে ফিরিয়ে আনে। পরে ইখওয়ানুল মুসলেমীনকে মিশরে বেআইনী ঘোষণা করে এবং কঠোর অত্যাচার-নির্যাতন চাপিয়ে দেয়। ১৯৪৯ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারী ইমাম হাসান-আল-বান্নাকে প্রকাশ্যে গুলি করে শহীদ করা হয়। অতএব ইমাম হাসান-আল-বান্না হলেন ফিলিস্তিনি মুক্তি সংগ্রামে মিশরীয় শহীদদের নেতা।  এখানে উল্লেখ্য যে. শহীদ বান্নার মৃত্যুর দুইদিন পর রুডস চুক্তি সম্পন্ন হয় এবং মিশর ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতি প্রদান করে। এর দশ দিন পর জর্দান এবং তার তার এক মাস পর সিরিয়া ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদান করে।

    ইখওয়ান-জামায়াত এবং এই ধারার সকল সংগঠন হামাসের সাথে সহযোগিতায় বিশ্বব্যাপী অগ্রবর্তী রয়েছে, শুধু তাই নয় এসব সংগঠন সামগ্রিকভাবেই ফিলিস্তিনিদের সহযোগিতায় নিয়োজিত। এজন্য ইহুদীবাদী শক্তি ও তার দোসররা ইখওয়ান-জামায়াতের সাথে দুশমনিতে লিপ্ত। হাদীসে ইহুদী রাষ্ট্রের আবির্ভাব ও তাদের সাথে মুসলমানদের লড়াইয়ের ভবিষ্যদ্বানী আছে। এদের সম্পর্কে হাদীসে উচ্চ মর্যাদা বর্ণিত আছে। এখানে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হাদীস উল্লেখ করছি: “রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর সাহাবাদের বলেন- “শেষ বিচারের দিনে এমন কিছু মানুষকে আনা হবে, যাদের বুক ও ডান হাতে জ্বলজ্বল করতে থাকবে নূর, তাদেরকে বলা হবে, ‘আজকে তোমাদের জন্য সুসংবাদ, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমাদের কল্যাণ হোক, তোমরা চিরদিনের জন্য প্রবেশ করো জান্নাতে।’ তাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার এই ভালবাসা দেখে নবী-রাসূলগণ পর্যন্ত ঈর্ষান্বিত হবেন। একথা শুনে সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ, এরা কারা?" উত্তরে মুহাম্মাদ (সা) বললেন, “এরা আমাদের (নবীদের) মধ্য হতেও না, এরা তোমাদের (সাহাবীদের) মধ্য হতেও না। তোমরা আমার সঙ্গী, কিন্তু তারা আমার বন্ধু। তারা তোমাদের অনেক পরে আসবে। তারা কোরআনকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাবে এবং সুন্নাহ(রাছুলের আদর্শ)কে মৃত অবস্থায় পাবে। তারা শক্তভাবে কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরবে এবং পুনরুজ্জীবিত করবে। তারা এগুলো অধ্যয়ন করবে এবং মানুষকে শেখাবে। কিন্তু একাজ করতে গিয়ে তারা তোমাদের চেয়েও ভয়াবহ ও কঠিন নির্যাতনের শিকার হবে। প্রকৃতপক্ষে তাদের একজনের ঈমান হবে তোমাদের চল্লিশজনের ঈমানের সমান। তাদের একজন শহীদ হবে, তোমাদের চল্লিশজন শহীদের সমান। কেননা তোমরা সত্যের পথে একজন সাহায্যকারী (আল্লাহর রাসূল) পেয়েছ, কিন্তু তারা কোন সাহায্যকারী পাবেনা। প্রত্যেক জায়গায় তারা অত্যাচারী শাসক দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকবে এবং তাদের অবস্থান হবে বায়তুল মাকদিসের চারপাশে। তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নুসরাহ (সাহায্য) আসবে এবং তারা এই বিজয়ের গৌরবকে প্রত্যক্ষ করবে। তারপর তিনি (রাসূল সা) দু’আ করলেন- “হে আল্লাহ, তুমি তাদেরকে নুসরাহ দান কর। জান্নাতে তুমি তাদেরকে আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ কর” [ মুসনাদে ইমাম আহমাদ ] । এ হাদীসটি নিয়ে পরবর্তী একটি নিবন্ধে আলোচনা করবো ইনশা-আল্লাহ।  

হামাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আলী আহমাদ মাবরুর লিখিত গার্ডিয়ান পাবলিকেশনস প্রকাশিত  “হামাস : ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলনের ভেতর-বাহির” এই বইটি পড়তে পারেন।www.rokomari.com, www.boibazar.comসহ বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইটে এই বইটি পাওয়া যায়। 

.........................................................................................................

কোন কিছুই দমাতে পারে নাই আমাদের এই বীর ফিলিস্তিনী ভাইটিকে... মাশা'আল্লাহ! (লক্ষ করুন তার পায়ের দিকে) তাঁর পরিবারকে রক্ষার তাগিদে, তাঁর অধিকার, তাঁর জন্মভূমিকে ফিরে পাওয়ার স্বপ্নে, তাঁর মাকে, বোনকে রক্ষা করার স্পৃহায়, তাঁর উম্মাহকে নিরাপদ রাখার অঙ্গিকারে বাধ সাধতে পারেনাই তার শারীরিক অক্ষমতা
তাঁর পা নেই (হয়তো তাও তিনি হারিয়েছেন বর্বরদের আঘাতে) কিন্তু তার সেই সাহস আর হৃদয় দিয়েই তিনি তার মা-বোন-ভাই-উম্মাহকে রক্ষার জন্য আজ তিনি নরপশুদের হামলার জবাবে ক্রাচে ভর করে দাঁড়িয়েছেন বীরদর্পে... আল্লাহ এই ভাই-বোনগুলোকে বিজয় দান করুন, আমীন


টহলরত ইসলামী প্রতিরোধ যোদ্ধা ভাইদের জন্য গাজাবাসী সানন্দে- স্বেচ্ছায় খাদ্য বিলাচ্ছে, আপ্যায়ন করাচ্ছে, অন্যরকম এক রুহানী দৃশ্য

হামাসের প্রতিষ্ঠাতা ফিলিস্তিনি ধর্মীয় নেতা শেখ আহমাদ ইয়াসিনকে ইসরাঈল হত্যা করার পর আমি শাহাদাতুর রহমান সোহেল নীচের কবিতা লিখি, এটা একটি দীর্ঘ কবিতার অংশবিশেষঃ

“কবিরা দেখ কি দারুণ মিথ্যুক হয়-
‘হাজার বছর পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে’
হাজার বছর কি কেউ পথ হাঁটতে পারে?
মৃদু হেসে বললাম-এটা তো মানস ভ্রমন।
হাজার বছর পথ হাঁটার কথা বলতেই
মনে পড়ে গেলো-
আমি তখন কলেজগামী,
ইন্তিফাদার উত্তাল তরঙ্গ মালায়
ইসরাঈল প্রকম্পিত,
সাক্ষাৎকার শুনলাম রেডিওতে
শেখ আহমেদ ইয়াসিনের-
ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার প্রাণপুরুষ,
বললেন-হাজার বছরের পথ চলা
শুরু হয় একটি কদম থেকে;
দীর্ঘ সংগ্রামের অমোঘ মানস প্রস্তুতি;
আমাদের নেতাকে ওরা হত্যা করলো,
রচিত হলো হাজার বছরের এক সেরা কাব্য,
আমাদের পথ সংক্ষিপ্ত হলো;
আমাদের গন্তব্য এখন নিকটে -
শাহাদাত, শাহাদাত, শাহাদাত -
শাহাদতের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে
আমরা শীঘ্রই পৌঁছে যাব
আমাদের গন্তব্যে-
নাছরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারীব।”

Tuesday, March 26, 2019

বিশ্বখ্যাত আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী : বাংলাদেশসহ পৃথিবীব্যাপী তাঁর অভিযাত্রা

সংকলনে: শাহাদাতুর রহমান সোহেল


আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (হাফেজাহুল্লাহ) বাংলাদেশে অত্যন্ত পরিচিত ব্যক্তি, বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনে সুপ্রসিদ্ধ ইসলামী ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের জন্য তার ব্যাপক তৎপরতার আলোচনা এই স্বল্প পরিসরে দেওয়া দুঃসাধ্য।  আল্লামা সাঈদী সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে একটি খন্ডচিত্র সমাহার এখানে দেওয়া হলো:

১) আল্লামা সাঈদী’র সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তিনি প্রায় ৫০ বছর মহাগ্রন্থ আল কুরআনের তাফসীর পেশকারী। তিনি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশ-বিদেশে অসংখ্য স্থানে তিনি তাফসীরুল কোরআন মাহফিল করেছেন। সেসব সিডি-ডিভিডি'র মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে । দল-মত নির্বিশেষে সারা পৃথিবীর বাংলাভাষীদের মধ্যে তা ইসলামী জাগরণ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সেসব থেকে কিছু কিছু অংশ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদও হয়েছে।

২) সৌদি আরবের মহামান্য বাদশাহ কর্তৃক ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল আল্লামা সাঈদীকেও উক্ত কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। আর তিনি যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালান।  

৩) আল্লামা সাঈদী ইরাক- কুয়েত যুদ্ধের মীমাংসা বৈঠক আমন্ত্রিত মেহমান।

৪) আল্লামা সাঈদী ইরানে ইসলামী বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকীর আমন্ত্রিত মেহমান।  ১৯৮৩ সালে আয়াতুল্লাহ খোমিনীর আমন্ত্রনে ইরানের বিভিন্ন এলাকা সফর করে তিনি বিভিন্ন মাহফিলে কোরআনের তাফসীর পেশ করেন এবং বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথি হিসাবে অংশগ্রহণ করেন।

৫) আল্লামা সাঈদী ১৯৮৩ সালে তিনি মিশরের আল-আজহার ইউনিভাসির্টিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। হার্ভার্ড, অক্সফোর্ডসহ আন্ত্রর্জাতিক বিভিন্ন সেমিনারে তিনি আমন্ত্রিত অতিথি। ওকলাহামা, ইউস্টন, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়াসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি  বক্তব্য রাখেন। দণি গোলার্ধের অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণ ইউনিভার্সিটিতে, উত্তর গোলার্ধের কানাডার টরেন্টো ও মন্ট্রিয়েল ইউনিভার্সিটিসহ পৃথিবীর পাঁচটি মহাদেশে তিনি মাহফিল করেছেন।

৬) পৃথিবীর প্রায় পঞ্চাশটি দেশে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার আহবানে ইসলামের দাওয়াতী কাজে ভ্রমন করেছেন।

৭) আগষ্ট’৯১-এ ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা কর্তৃক আল্লামা সাঈদীর আল্লামা খেতাব ও জুলাই ৯৩-এ নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত আমেরিকান মুসলিম ডে প্যারেড সম্মেলন 'গ্র্যান্ড মার্শাল' পদক প্রাপ্তি উল্লেখযোগ্য।

৮) ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইসলামী প্রতিষ্ঠান হলো লন্ডন মুসলিম সেন্টার (এল এম সি)। ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ বিশাল মসজিদ ও কমপ্লেক্সের অর্থ সংগ্রহে তিনি প্রত্য অবদান রাখেন। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম শায়েখ আব্দুর রহমান আস-সুদাইসির সাথে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও সেখানে আমন্ত্রিত হন।

৯) ১৯৯০ সলে মাওলানা সাঈদী প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ব্যাংকিং সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

১০) সৌদি বাদশাহর মেহমান হিসাবে হজ্জ্ব পালনকারী ব্যক্তি। আল্লামা সাঈদী সর্বপ্রথম হজ্জ্ব পালন করেন ১৯৭৩ সালে । এরপর তিনি ১৯৮৩ ও ১৯৮৫ সালে সৌদি বাদশাহ ফাহদ বিন আবদুর আজিজের রাজকীয় মেহমান হিসাবে হজ্জ্ব পালন করেন। রাবেতা আলম আল ইসলামীর মেহমান হিসাবে তিনি পাঁচবার হজ্জ্ব পালন করেছেন।

১১) সৌদি বাদশার আমন্ত্রনে নব্বই দশক থেকে বহু বছর কাবা শরীফে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফকারী।

১২) ১৯৯৩ সালে মাওলানা সাঈদী সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রধানমন্ত্রী ও দুবাই শাসকের আমন্ত্রণে দুবাই সফর করেন। প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত ‘‘দুবাই ইন্টারন্যাশনাল হলি কুরআন এওয়ার্ড’’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ৫০ হাজারেরও বেশি শ্রোতার সামনে তিনি বক্তৃতা করেন যা দুবাই টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে। বিগত অক্টোবর ২০০৮ সালে দুবাইয়ের ন্যাশনাল ঈদ গ্রাউন্ডে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল হোলি কোরআন এ্যাওয়ার্ড কমিটি কর্তৃক আয়োজনে আল্লামা সাঈদীর বিশাল মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এই মাহফিলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন আরব আমিরাতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শায়খ মোহাম্মাদ বিন রাশেদ আল মাকতুম। মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এটি ছিলো উল্লেখযোগ্য গণজমায়েত। উপস্থিত অর্ধলাধিক দর্শক- শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্যের বিষয় ছিলো 'পবিত্র কোরআনের বিজ্ঞানময় মু'জিজা'। দুবাই সরকার তাঁর দুই ঘন্টার উক্ত বক্তব্য সিডি, ভিসিডি করে বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করেছে। অনুরূপ মাহফিল হলো সাউদী আরবের রাজধানী রিয়াদে। জেদ্দা, তায়েফ, দাম্মাম এবং পবিত্র মক্কা- মদীনায়।

একই ধরনের মাহফিল হলো গ্রীসের রাজধানী এথেন্স, নগরীর আলেকজান্দ্রা ষ্টেডিয়ামে, ইটালীর রাজধানী রোমে, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে, স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে, পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে, জার্মানীর রাজধানী ফ্রাঙ্কফুটে, জাপানের রাজধানী টোকিওতে, কোরিয়ার রাজধানী সিউলে, অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়, মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে, সিঙ্গাপুরে, ইরানের রাজধানী তেহরানে এবং কুুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সবগুলো দেশে।

আল্লামা সাঈদীর মাহফিলে অগণিত জনতার উপস্থিতির দৃশ্য সেসব দেশের টিভি চ্যানেলগুলোয় সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে। একই ধরনের মাহফিল হয়েছিলো আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের সামনে ৪২ নং সড়কে এবং আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটনসহ উক্ত দেশের ২২টি অঙ্গরাজ্যে। ইউরোপের ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনসহ গ্রেটবৃটেনের অনেক শহরে তিনি বহু বছর ধরে মাহফিল করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১১টি দেশে তিনি সফর করেছেন।

১৩) আল্লামা সাঈদী বহু গ্রন্থ প্রনেতা। আল্লামা সাঈদী ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে ৬৮টি গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে কিছু গ্রন্থ ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় ইংরেজীতে প্রকাশিত হয়েছে।

১৪) আল্লামা সাঈদী ইসলামের সৌন্দর্য দিয়ে দুইহাজারের অধিক অমুসলিমকে মুসলিম বানানো এক মহা পুরুষ।

১৫) মওলানা সাঈদী ১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারী পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মওলানা ইউসুফ সাঈদী দণিাঞ্চলের একজন শৈল্পিক বক্তা ও পীর। তিনি নিজ গ্রামে পিতার নির্মিত মাদ্রাসা হতে প্রাথমিক শিা গ্রহণ করেন এরপর তিনি শরসিনা আলিয়া ও খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেন। ১৯৬২ সালে শর্সিনা আলিয়া মাদ্রাসা হতে কামিল ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ও তত্বের উপর অধ্যয়ন করেন। তিনি ভাষা, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, মনোবিজ্ঞানের মত বিষয়গুলো প্রায় পাঁচ বছর অধ্যয়ন করেন।

১৬) আল্লামা সাঈদী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। তার এলাকার অনেক মুক্তিযোদ্ধা তার ইমামতিতে ঈদের নামাজ আদায় করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের জন্য তিনি দোয়া করেন। ২০১০ সালে মওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন পিরোজপুরের সাবেক সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিবসহ বৃহত্তর বরিশালের ৫১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের গ্যারান্টিড এক্সপ্রেস পোস্টের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে। 

স্মারকলিপিতে স্বারকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার গাজী নুরুজ্জামান বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব শামছুল আলম তালুকদার, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী শেখ বাদশা, পৌরসভা কাউন্সিলর আবদুস সালাম বাতেন, সাবেক কমিশনার আবদুর রাজ্জাক মুনান, খসুল আলম, খন্দকার রেজাউল আলম শানু, অ্যাডভোকেট শেখ আবদুর রহমান, হাবিবুর রহমান বাহাদুর, আবদুস সালাম হাওলাদার, মোশাররফ হোসেন, আবু তালেব সেপাই, ডা. আলতাফ উদ্দিন আহমেদ, আবুল হোসেন তালুকদার, মোকাররম হোসেন কবীর, প্রকৌশলী মতিউর রহমান, অধ্যাপক ফরহাদ মুন্সি প্রমুখ।

মহান মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব:) জিয়াউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সাঈদী স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, আল বদর, আল শাম্স, শান্তি কমিটির সদস্য বা যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। এসবের তালিকায় কোথাও তার নাম নেই।’

মহান মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টরের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম তালুকদার বলেন, ‘আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত যুদ্ধাপরাধ তত্ত্ব-উপাত্ত ও সাী সবই মিথ্যার ওপরে প্রতিষ্ঠিত। কারণ আমরা নবম সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে পিরোজপুরে হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি ও পিরোজপুরকে শত্রুমুক্ত করি। তিনি স্বাধীনতাবিরোধী কোন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। মুক্তিযুদ্ধে তার মানবতাবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী কোনো ভূমিকা থাকলে তা আমাদের আগে বা আমাদের চেয়ে বেশি অন্য কারো জানার কথা নয়। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণেই তাকে যুদ্ধাপরাধী বলা হচ্ছে।’

মুক্তিযোদ্ধা মোর্কারম হোসেন কবির, পিতা: এ,এম হাসান, গ্রাম-শংকরপাশা, থানা-জিয়ানগর, জেলা-পিরোজপুর সহ আরো অনেকে সাক্ষ্য দেন আল্লামা সাঈদী মুক্তিযোদ্ধের পক্ষে ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা মোর্কারম হোসেন কবির “আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী: যুদ্ধাপরাধ নয়, জনপ্রিয়তাই যার অপরাধ” নামে একটি বইও লিখেছেন। এই বইটি ইংরেজীতেও অনুদিত হয়েছে। এই বইটি মাসুদ সাঈদীর তত্বাবধানে তৈরী এপ্লিকেশন - Allama Sayedee at a glance -এও দেওয়া হয়েছে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মাত্র দুই মাস সাত দিন পর ১৯৭২ সালের ২২  ফেব্রুয়ারী মাওলানা সাঈদী তাঁর নিজের জেলা পিরোজপুর শহরে সীরাত মাহফিলে ওয়াজ করেন। এরপর থেকে সমগ্র দেশব্যাপী ও বিদেশে একটির পর একটি মাহফিলে আমন্ত্রিত হতে থাকেন। স্বাধীনতার পর কট্টর সেকুলার ও বামপন্থীদের ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তিনি মরণপণ প্রতিবাদ শুরু করেন। এতে এদেশের ইসলামপ্রিয় জনতার মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ নাগাদ পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ ময়দানে মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজনে মাহফিলে কোরআনের তাফসীর করেন। এই মাহফিলে তাকে লক্ষ্য করে বামপন্থীরা কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেন। গুলিবর্ষণকালে এক মুহূর্তের জন্যও তার কথা বন্ধ হয়নি। এই বিপদসংকুল সময়ে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন এবং ১৯৭৩ সালে জামায়াতের রোকন হন। জামায়াতে ইসলামীর এক চরম ক্রান্তিকালে আল্লামা সাঈদী জামায়াতে যোগ দেন এবং এর রোকনিয়াত গ্রহণ করেন। কাজেই যারা হুমকি ও প্রলোভন দিয়ে এই ইসলামী আন্দোলন থেকে তাঁকে বিচ্যুত করতে চায় চরম বোকা ছাড়া আর কিছু নয়। মহান আল্লাহ আল্লামা সাঈদীকে সবরে জামিল এক্তিয়ার করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

১৭) আল্লামা সাঈদী একজন জননন্দিত নেতা। ১৯৯৬ সালে তিনি পিরোজপুর সদর উপজেলা হতে জাতীয় সংসদের সদস্য নিবাচিত হন। তিনি ১৯৯৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচিত তিন জন সদস্যর সংসদীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বলিষ্ঠ বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি তৎকালীন সরকারের সকল দুষ্কর্মের সমুচিত জবাব দেন। ২০০১ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নিবাচিত হন।

১৮) তিনি সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন সমাজসেবা, শিামূলক ইত্যাদি নানা কাজের সাথে যুক্ত। তিনি রাবেতা আলম আল ইসলাম এর উপদেষ্টা, ইসলমী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ-এর শরীয়াহ কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ড চট্রগ্রাম-এর উপদেষ্টা, জামিয়া দ্বীনিয়া টঙ্গী, জামিয়া কাসেমিয়া নরসিংদী, দারুল কুরআন সিদ্দিকিয়া আলিয়া মাদ্রাসা খুলনা দারুল হামান শিশু সদন, এস বি মদীনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসা পিরোজপুর এর চেয়ারম্যান। এছাড়াও তিনি দেশী ও বিদেশী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংগঠনের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের আজীবন সদস্য।

১৯) আল্লামা বিভিন্ন েেত্র দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে আল্লামা সাঈদী বিশ্ববিস্তৃত ইসলামী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০) ২০০৬ এর ৭ই অগাস্ট, লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা পত্রিকার ৪৭ পৃষ্ঠায় আল্লামা সাঈদী সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তাতে লেখা হয়েছে, 'পৃথিবীর প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মানুষ বাংলাভাষায় কথা বলে। বাংলাভাষায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দণি এশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে যিনি গত ৪০ বছর ধরে বিরতিহীনভাবে কুরআনের দাওয়াত পৌঁছানোর কাজ করে যাচ্ছেন তিনি হচ্ছেন আমাদের কালের একজন বড় মাপের কুরআনের পন্ডিত আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। শুধু বাংলাভাষা বা বাংলাদেশের কথাই বা বলি কেনো, আমাদের ইতিহাসে খুব কম মানব সন্তানই সুদীর্ঘ ৪ দশক ধরে এই অবিস্মরণীয় জনপ্রিয়তার শীর্ষদেশে অবস্থান করার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছেন। এদিক থেকে গোটা বিশ্ব পরিমন্ডলে আল্ল্ামা সাঈদী একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছেন। মাঠে ময়দানে, পত্র পত্রিকায়, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে, রেডিও টেলিভিশনে এক সুদীর্ঘকাল ধরে সুললিত কণ্ঠে পবিত্র কুরআনের তাফসীর পেশ করার েেত্রও আল্লামা সাঈদীর বিকল্প কোনো ব্যক্তি আজকের মুসলিম বিশ্বে আছে কিনা সন্দেহ।' লন্ডনের সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত এ লেখাটি আরো দীর্ঘ।

২১) সাঈদী বাংলাদেশের ইতিহাসে বিস্ময়কর জনপ্রিয় ব্যক্তি।  ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারীর কালো দিনে  যখন সাঈদীর ফাঁসির রায় দেওয়া হয় তখন এর প্রতিবাদে বিােভে দুই দিনে বাংলাদেশের ২৩৪ জন নারী-পুরুষ-শিশু শাহাদাৎ বরণ করেছিল ।  আর অসংখ্য ব্যক্তি আহত হয়েছিল। মাত্র ২দিনের বিােভে এই বিশাল সংখ্যক শাহাদাত বাংলাদেশের ইতিহাসে নাই। মাত্র এক ব্যক্তির জন্য এত ব্যাপক প্রতিক্রিয়া বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। তার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের এই ভালোবাসা অতুলনীয় । সাঈদীর পূত্র মাসুদ সাঈদীর একটি ইমেজ পোষ্ট এখানে দেওয়া  হলো:

তোমরা কার উপর অবিচার-জুলুম করেছ? কাকে বলছ ধর্ষক, খুনি রাজাকার?   আল্লাহ অবশ্যই আছেন - অবশ্যই আল্লাহর কাঠগড়ায় তোমাদের দাঁড়াতে হবেই ইনশা-আল্লাহ। এর মধ্যে তোমাদের অনেকে কবরে চলে গেছে। এরপরও কি তোমরা তওবা করবে না? হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিজয় অতি নিকটবর্তী। যদি তওবা না কর তোমরা নিকটবর্তী আগামী দিনের পৃথিবীর মানুষের কাছে তোমরা ঘৃণার পাত্র হয়ে থাকবে ইনশা-আল্লাহ।

সম্ভবমত সকল ব্যক্তি ও শক্তির সহায়তা নিয়ে আল্লামা সাঈদীর মুক্তির সংগ্রাম জোরদার করুন। আর সবাই দোয়া করি: হে আল্লাহ! হে রাহমানির রাহিম! হে কুন-ফায়াকুনের মালিক! হে সকল কল্যাণ-অকল্যানের মালিক! আল্লামা সাঈদীর মুক্তিদান করুন আর আল্লামা সাঈদীর মুক্তিকে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের ইসলামী আন্দোলনের জন্য কল্যাণকর করে দিন, আমীন।

Please browse this link: https://dhsaidy.blogspot.com


Sunday, June 24, 2018

মালয়েশিয়ার ইসলামী আন্দোলন, আনোয়ার ইব্রাহীম এবং জামায়াতে ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

            মালয়েশিয়ার ইসলামী আন্দোলনের নেতা আনোয়ার ইব্রাহীম জামায়াতে ইসলামী ও ইখওয়ানুল মুসলেমীনের সাহিত্য ও আন্দোলন দ্বারা উজ্জ্বীবিত হয়েই মালয়েশিয়ার যুব আন্দোলন আবিম(Angkatan Belia Islam Malaysia (ABIM): www.abim.org.my ) গঠন করেন এবং এক সময় যুব সম্প্রদায়ের একচ্ছত্র নেতায় পরিনত হন। দীর্ঘ ঘাত প্রতিঘাতের পর দাতুক সেরি মাহাথির মোহাম্মদের সাথে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। মন্ত্রী থেকে ক্রমান্বয়ে উপ-প্রধানমন্ত্রী পদ পর্যন্ত ক্ষমতা লাভ করেন। বিভিন্ন সরকারী কাজ পরিচালনায় ব্যাপক দক্ষতা ও সাফল্যের জন্য বিশ্বব্যাপি খ্যাতি অর্জন করেন। বিশ্বসম্রাজ্যবাদী ও ইহুদীবাদী শক্তির কৌশলী চক্রান্তের ফলে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সাথে বিবাদের সম্মুখিন হয়ে ক্ষমতাচ্যুত ও কারারুদ্ধ হন। আনোয়ার ইব্রাহীম ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর একটি জাতীয় নির্বাচনে মালয়েশিয়ার অপর ইসলামী আন্দোলন পাসসহ গঠিত এক ইসলামী জোট পূর্ব থেকেও অধিকতর ভালো ফলাফল লাভ করে। মালয়েশিয়ার কালানতান ও তেরেংগুনা দুটি প্রদেশে পাস এর সরকার প্রথিষ্ঠিত হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, আনোয়ার ইব্রাহীম ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সাথী সম্মেলনে অতিথি হিসাবে যোগদান করেছিলেন। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রাক্তন সিনিয়র নায়েবে আমির মরহুম আব্বাস আলী খান (রহ:) মালয়েশিয়ার আবিম ও পাস উভয় ইসলামী আন্দোলনের কার্যক্রমই পরিদর্শন করেন। মালয়েশিয়ার কুয়াল তেরেংগুনায় অনুষ্ঠিত জুন ২০০০ ইং তারিখে পার্টি ইসলাম মালয়েশিয়া- পাসের ৪৬ তম সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী যোগদান করেন। তার সফরসঙ্গী ছিলেন অন্যতম সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ কামরুজ্জামান। এভাবে মালয়েশিয়ার ইসলামী আন্দোলনের সাথে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের যোগাযোগ রয়েছে।


           প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মদ আনোয়ারকে উপ -প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করলে, আনোয়ার ও তার সমর্থকরা "সংস্কার আন্দোলন"(ইংরেজিrefomasi movement) শুরু করে। এ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা বারিসন ন্যাশনাল সরকারের নীতি বহির্ভূত কর্মকান্ড বিলোপ করা। সংস্কার আন্দোলনের নেতা কর্মীদের নিয়ে ১৯৯৯ সালে আনোয়ার ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি গঠন করে। এবং ৯৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্যে parti Islam se Malaysia, ডেমোক্রেটিক এ্যাকশন পার্টি ও নব গঠিত ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি নিয়ে "বারিসন অল্টারনেটিভ" নামে বিরোধী জোট গঠন করেন। ২০০৩ সালের আগস্টে আনোয়ারের পরামর্শে তার স্ত্রী ওয়ান আজিজাহ ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি ও মালয়েশিয়ান পিপলস্ পার্টি একীভূত করে পিপলস্ জাস্টিস পার্টি গঠন করে। ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে PKRPAS এবং DAP মিলে পাকাতান রাকাত নামে জোট গঠন করেন। যা ২০০৮ সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং ৩১টি আসন জয়লাভ করে বিরোধী দলে পরিণত হয়। এর মধ্যে মাহাথির মোহাম্মদ ২০০৩ সালের ওআইসি সম্মেলনের সফল সমাপ্তির পর ৩০শে অক্টোবর তিনি তার শিষ্যদের হাতে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।  মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে মাহাথির মোহাম্মদ তার একসময়ের শিষ্য নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে আবার রাজনীতিতে আগমণ করেন।  শত্রুতে পরিণত হওয়া একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র আনোয়ার ইব্রাহিমের সাথে রাজনৈতিক জোট গঠন করে নির্বাচনে বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন পাকাতান হারাপান জোট ২২২ আসনের পার্লামেন্টে ১১২ আসনে বিজয়ী হয়। এর মধ্যে আনোয়ারের পিকেআর পায় ৪৮ আসন। 

               আজকে মালয়েশিয়াতে ইসলামের যে  কিছু কালচার বিদ্যমান: অলি গলিতে ইসলামী স্কুল, নামকরা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটি IIU (www.iium.edu.my), ইসলামী ব্যাংক, হজ্ব ফাউন্ডেশন, ইয়ং জেনারেশনকে ইসলামের পথে নিয়ে আসতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে আনোয়ার ইব্রাহীমের আবিম ও  ইখওয়ানুল মুসলেমিন প্রভাবিত ওলামায়ে আল-আজহার এবং পাস ইসলামিক পার্টি। সেখানে ঐক্যবদ্ধভাবে ওলামায়ে দেওবন্দও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মালয়েশিয়ার ইসলামের দিকে অগ্রযাত্রা অব্যহত রাখুন, আমীন। এখানে উল্লেখ্য, আনোয়ার ইব্রাহিম ব্যক্তিগতভাবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পাকাতান ক্ষমতায় আসার পর থেকে সৌদি-আমিরাত বলয়ের চেয়েও তুরস্ক-ইরানের সাথে মালয়েশিয়ার সম্পর্ক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়। দেশটি এর মধ্যে সৌদি নেতৃত্বাধীন প্রতিরক্ষা জোট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আর তুরস্ক, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ইরানের সাথে মিলে ওআইসি দেশগুলোর মধ্যে একটি শক্তিমান বলয় তৈরির লক্ষ্যে মাহাথির সম্প্রতি কুয়ালালামপুরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করেন।  


         ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সাথী সম্মেলনে অতিথি হিসাবে যোগদান করেছিলেন আনোয়ার ইব্রাহীম। সেই সম্মেলনে তিনি বাংলা শব্দে বলেছিলেন "আমি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরকে ভালবাসি"


        ২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের চলমান বিচারকে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ' আখ্যায়িত করে বিচার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন  আনোয়ার ইব্রাহিম। এক বিবৃতিতে তিনি জামায়াতের সাত নেতার সংবিধানস্বীকৃত অধিকার রক্ষার আহ্বানও জানান। মালয়েশিয়া ক্রনিকল পত্রিকায় ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তারিখে তাঁর বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়। এর শিরোনাম ছিল 'ট্রায়াল অব জামায়াতে ইসলামী লিডারস ইন বাংলাদেশ : স্টপ দ্য পার্সিকিউশন' (বাংলাদেশে জামায়াত নেতাদের বিচার : নিগ্রহ বন্ধ করুন)।
Post edited in Feb, 2020

নীচের ভিডিওটি যোগ করা হলো এই পোস্টে ২৬/১১/২২ তারিখে:  

Popular Posts