Showing posts with label আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী. Show all posts
Showing posts with label আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী. Show all posts

Friday, August 17, 2018

আল্লামা মওদুদী (রহঃ) সম্পর্কে পাকিস্তান তবলীগের মুরব্বী #আল্লামা তারীক জামীল (হাফিঃ)


আল্লামা মওদুদী রহ. আলাদা কোন ফিরকা বানান নাই। পৃ‌থিবীতে মওদুদী আকিদা বল‌তে কিছুই নেই।
পাকিস্তান তাবলীগের শীর্ষ মুরুব্বি ও বিশ্ব বিখ্যাত দ্বীনের দাঈী মাওলানা তারিক জামিল আল্লামা মওদুদী রহ. এর ভূয়সি প্রশংসা করেছেন। তি‌নি ব‌লেন : আল্লামা মওদুদী রহ. আলাদা কোন ফিরকা বানান নাই। তিনি অনেক বড় হানাফী আলেম ছিলেন। তিনি আলাদা কোন ফিকাহ লিখেন নাই। তিনি সেকুলারিজমের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার লিখনি চালিয়েছেন ও এভাবে মিল্লাতকে অনেক খেদমত করেছেন।

তিনি বলেন উপমহাদেশের দেওবন্দি আকাবীরদের কিতাব গুলি কঠিন এলমী পরিভাষায় ভরপুর ছিলো। কঠিন মানের উর্দু ছিল ওনাদের লেখাতে। সাধারন মানুষের বোধগম্যের বাইরে ছিল ওনাদের লেখা। তাই দ্বীনি বি‌ভিন্ন গুরত্বপূর্ণ বিষয় সহজ সাবলীল ভাষায় সর্ব সাধারনের বুঝার মত কিতাব লিখে খেদমত করেছেন আল্লামা মওদুদী রহ.।

তিনি হাদীস অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে অনেক দামী খেদমত করেছেন। তাদের কথাসমূহ দলীল দিয়ে খন্ডন করেছেন। তিনি সোশেলিজম ও কমিউনিজম এর বিরুদ্ধে শক্ত হাতে কলম ধরেন যা ইতোপূর্বে তেমন জোড়ালো দেখা যায় নি!

- দেওবন্দী মানহাজের আলেম #আল্লামা_তারীক_জামীল_হাফিঃ
পাকিস্তান দাওয়াত ও তাবলিগের মুরব্বী।।।।।
তাঁর উর্দু বক্তব্য শুনতে নীচে ক্লিক করুন: 

Wednesday, April 25, 2018

তুরস্কে মাওলানা মওদুদী ও তাফহীমুল কুরআনের প্রভাব



লিখেছেনঃ এরবাকান



সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ )বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ যার ক্ষুর ধার লেখনী ও বিশাল সাহিত্য ভাণ্ডার তাঁকে আজও আমাদের মাঝে জীবন্ত রেখছে। তুরস্ক আজ যে ইসলাম পন্থী একটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে এটা তৈরিতে মাওলানার সাহিত্যের ভূমিকা অপরিসীম।


ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকনের উপর মাওলানা মওদুদীর প্রভাব-
ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান হলেন তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের মহান সিপাহ সালার। তিনি তার বক্তব্যে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ভরে মাওলানা মওদূদীর (রহঃ)নাম নিতেন। তিনি মাওলানাকে ইমাম বলে অবহিত করতেন এবং তার সাহিত্য পড়ার জন্য তার জনশক্তিকে উৎসাহ যোগাতেন। তার মৃত্যুর আগে এরজুরুম শহরের একটি সমাবেশে বলেছিলেন আমি দেখতে পাচ্ছি নিকট ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে জিহাদ নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি তৈরি হবে তাই আপনারা মাওলানা মওদূদীর (রহঃ) 'আল জিহাদু ফিল ইসলাম' বইটি পড়ে নিবেন। তিনি হয়তবা আজকের আইএস এর কথাই বলেছিলেন।
তার প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলন 'মিল্লি গুরুশে' এর সিলেবাসে মাওলানা মউদূদীর (রহঃ) অনেক বই রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হল-

১।তাফহীমূল কোরআন

২। ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী

৩।ইসলামি রেনেসাঁ আন্দোলন

৪।কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা

৫। আ্ল কুরআনের মর্ম কথা।

৬। সমস্যা ও সমধান

৭।আসুন মুসলিম হই।

৮। আসুন দুনিয়াকে পরিবর্তন করি।

৯। খিলাফাত ও রাজতন্ত্র

১০। ইসলাম পরিচিতি।

তুরস্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের উদ্যোগে নিয়মিত তাফহীম পাঠ করা হয়ে থাকে। কিছু কিছু রয়েছে যারা এক যুগের ও বেশী সময় ধরে নিয়মিত ভাবে তাফহীম পাঠ করে আসছেন। প্রতি বছর বিভিন্ন সংগঠের উদ্যোগে তাফহীমুল কোরআন পাঠ প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে।

তুরস্কে ২ টি প্রকাশনা থেকে তাফহীম প্রকাশিত হয়ে থাকে। একটি ৭০ এর দশকে প্রকাশিত হয়েছে অপরটি হয়েছে ২০০০ সালের পর। বর্তমান সময়ে চিন্তার দ্বন্দে মাওলানা মওদূদীর (রহঃ) সাহিত্যের যেন কোন জুড়ি নেই। যিনি শত বছরের সকল জঞ্জাল কে মুছে ফেলে আমাদের সামনে এক নিরেট ইসলাম পেশ করার লক্ষে আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন। বাংলাদেশ জামায়াতেে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের শাহাদাত এবং এই দলটিকে ঘিরে ইয়াহুদি ও সাম্রাজ্য বাদীদের মাথা বাথা যেন তুরস্কে মাওলানা মউদূদীর (রহঃ) সাহিত্যের প্রভাবে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে

Source: Facebook page

তুরস্কের শীর্ষ আলেম , তুরস্ক সরকারের ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং তুরস্কের গ্র্যান্ড মুফতি শায়েখ ড. আলি আরবাশ হাফিঃ বলেন -
" তাফহিমুল কোরআন হলো তুরস্কের যুবকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী গ্রহণযোগ্য তাফসীর। আমরা তুরস্কের যুবকদেরকে এই তাফসীর পড়তে উৎসাহিত করি "।

Thursday, September 21, 2017

মাওলানা মওদূদী সম্পর্কে আরব নেতাদের ধারন ও উনার মর্যাদাঃ মৌলানা কামালুদ্দীন জাফরী

আল্লামা মওদুদী রঃ এর প্রশংসায় আরব বিশ্বের বড় বড় উলামায়ে কেরামদের লিখিত কিতাব সমূহ
লিখেছেনঃ জিয়াউর রহমান

১. আবুল আলা মওদুদীর জীবনী ও তার সুগভীর ইসলামী চিন্তাধারা । লেখক: ড. হামদ বিন সাদিক জামাল।

২. ইসলামী জাগরণে আবুল আলা মওদুদীর অবদান। লেখক: ড. মুহাম্মদ আম্মারা রহঃ।

৩. আবুল আলা মওদুদীর ইসলামী চিন্তা চেতনায় আমার দৃষ্টিভঙ্গি। লেখক: ড. ইউসুফ আল কারজাভী। ৪. আবুল আলা মওদুদীর দাওয়াতি চিন্তা। ড. সামির আব্দুল হামীদ ইব্রাহিম রহঃ।
৫. আবুল আলা মওদুদীর জীবনী ও দাওয়াতি মিশন। লেখক: ড. আলিফুদ্দীন তুরাবী।
৬. দাওয়াত ও আধুনিক ইসলামী আন্দোলনের বড় বড় আলেমদের অন্যতম আবুল আলা মওদুদী। লেখক: ড. আব্দুল্লাহ আকিল।
৭. আমার স্মৃতিপটে ইমাম মওদুদী। লেখক: ড. মুস্তফা তহান।
৮. আবুল আলা মওদুদীর ইসলামী সংস্করণ পদ্ধতি। লেখক: ড. সুহাইলা আলা আযিমী।

Tuesday, September 19, 2017

সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ) কি রাছুলুল্লাহ (সাঃ)-এর বংশধর?


বংশ পরিচয়- সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ):

() সাইয়্যেদিনা হযরত আলী বিন আবি তালিব (রাঃ)
() ইমাম হোসাইন (রাঃ)
() ইমাম জাইনূল আবেদীন (রহঃ)
() ইমাম মোহাম্মাদ আলবাফ (রহঃ)
() ইমাম জাফর সাদিক (রাঃ)
() ইমাম মুসা আলকাযেমী (রহঃ)
() ইমাম মোহাম্মাদ তাকী (রহঃ)
() ইমাম মোহাম্মাদ নাকী (রহঃ)
() ইমাম আব্দুল্লাহ আলী আকবার (রহঃ)
() সাইয়েদুস সাদাত হুসাইন (রহঃ)
() সাইয়েদুস সাদাত মুহাম্মাদ (রহঃ)
() সাইয়েদুস সাদাত ইব্রাহীমি (রহঃ)
() মুহাম্মাদ শায়মান চিশতী (রহঃ)
() খাজা নাসিরুদ্দীন আবু ইউসূফ চিশতী (রহঃ)
() খাজায়ে খাজেগান কুতুবুদ্দিন মওদূদ চিশতী (রহঃ)
() খাজা আবু আহমাদ মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() খাজা রুকুনুদ্দিন মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() খাজা নিজামুদ্দীন মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() খাজা কুতুবুদ্দিন মুহাম্মাদ মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() খাজা আলী আবু আহমদ সানী মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() খাজা মুহাম্মাদ যাহেদ মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() খাজা কুতুবুদ্দিন মওদূদ সানী চিশতী (রহঃ)
() খাজা নিজামুদ্দীন আলী মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() খাজা মুহাম্মাদ মুহীউদ্দিন শাহ খাজগী মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() শাহ আবুল আলা মওদূদী চিশতী (রহঃ)
() শাহ আব্দুল আলী মওদূদী (রহঃ)
() খাজা আব্দুল গনি মওদূদী (রহঃ)
() খাজা আব্দুস সামাদ মওদূদী (রহঃ)
() খাজা আব্দুশ শাকুর মওদূদী (রহঃ)
() খাজা আব্দুল্লাহ মওদূদী (রহঃ)
() খাজা আব্দুল বারী মওদূদী (রহঃ)
() খাজা আব্দুল ওয়ালী মওদূদী (রহঃ)
() শাহ ওয়ারেছ আলী মওদূদী (রহঃ)
() সাইয়্যেদ হাসান মওদূদী (রহঃ)
() সাইয়্যেদ আহমাদ হাসান মওদূদী (রহঃ)
() সাইয়্যেদ মাওলানা আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ)

Thursday, September 7, 2017

বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম আল্লামা মওদুদী (রাহঃ)


লিখেছেনঃ তানজিল ইসলাম


হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,

"‏إِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ لِهَذِهِ الأُمَّةِ عَلَى رَأْسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَةٍ مَنْ يُجَدِّدُ لَهَا دِينَهَا"‏.‏
"নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা শতবর্ষের মাথায় এ উম্মতের জন্য এমন লোক প্রেরণ করবেন যিনি/যারা এ উম্মতের জন্য তাদের দ্বীন (তাজদীদ) সংস্কার করবে।" (আবূ দাউদ হাঃ ৪২৯১; মুস্তাদরাকে হাকীম ৪/৫৬৭; মিশকাত হাঃ ২৪৭)
তাজদীদ অর্থ Renew, সংস্কার, নবায়ন। মুসলিম সমাজের সকল শিরক, বিদয়াত, কুসংস্কার, ইসলাম বিরোধী ধ্যান-ধারণা, কুফুরী মতবাদ, জাহেলিয়্যাত ইত্যাদি অপসরণ করে রাসূলুল্লাহ (সা) এর যুগের, তাঁর প্রদর্শিত বিশুদ্ধ ইসলামী ঈমান-আকিদ, আমল, শরীয়ত ভিত্তিক সমাজ সংস্করণ এবং পূর্ণাঙ্গ দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার যাবতীয় কার্যক্রমকে তাজদীদ বলে।
.
আরবী ভাষায় অজ্ঞতার কারণে অনেকে মনে করেন যে, আল্লাহ এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন যিনি দ্বীনের তাজদীদ করবেন। আরবী ভাষায় যাদের সামান্য জ্ঞান আছে তারাও জানেন যে, من শব্দের অর্থ কে বা কাহারা, যিনি বা যাহারা, ইংরেজি Who এর মত। এজন্য কুরআনে অগণিত স্থানে من এর সর্বনাম বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ.
আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’, অথচ তারা মুমিন নয়। (সূরা বাকারাঃ২/৮)
এখানে এ উদ্দেশ্য নয় যে, মানুষের মধ্যে মাত্র একজনই মুনাফিক রয়েছে। বরং এর উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে অনেক মানুষ আছে মুনাফিক। যারা ঈমানের দাবী করে কিন্তু ঈমান বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে।
.
ইমাম যাহাবী বলেন, "একই শতাব্দীতে মুজাদ্দিদ একজন হবেন মনে না করে একাধিক হবেন বলে মনে করাই বেশি জোরালো মত।" (সিয়ারু আ'লামীন নবালা ১৪/২০৩)
আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, "শতাব্দীর মাথায়, শুরুতে বা শেষে যত মানুষকে মুসলিম সমাজের কুসংস্কার, বিদয়াত, অনাচার জাহেলিয়্যাত ইত্যাদি অপসরণ করে রাসূলুল্লাহ (সা) ও সাহাবাগণ (রা) এর যুগের পরিপূর্ণ ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য ঈমান-আকিদা, ইবাদত, ইলম, রাষ্ট্র, বিচার, শাসনব্যবস্থা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সংস্কার ও নবায়নের চেষ্টায় রত পাওয়া যাবে সকলকেই মুজাদ্দিদ বলে গণ্য করতে হবে।" (ফাতহুল বারী ১৩/২৯৫)
.
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস মোল্লা আলী ক্বারী বলেন, "সঠিক কথা হলো من যেহেতু একবচন ও বহুবচনের সমষ্টি, কাজেই এ হাদীসের অর্থ করা উচিত বহুবচনের। সকল আলেম, মুহাদ্দিস, মুফাচ্ছির, ফকীহ, ধর্মীয়নেতা, রাষ্ট্রীয় নেতা যে ব্যক্তিই দ্বীনের (তাজদীদ) সংরক্ষণ ও সংস্কারে অবদান রাখবেন তাদের সকলেই সেই যামানার মুজাদ্দিদ বলে গণ্য করতে হবে।" (আল-মিরকাত ১/৫০৭)
.
উপরোক্ত আলোচনায় এ কথা প্রমাণিত যে, একই শতাব্দীতে একাধিক মুজাদ্দিদ হতে পারেন। আর বিংশশতাব্দীতে যারা দ্বীনের তাজদীদ করেছেন তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি হচ্ছেন শাইখুল ইসলাম আল্লামা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী রাহঃ।
বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অগ্রপথিক, বিশ্ব বিশ্রুত প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তিত্ব, শায়খুল ইসলাম, আল্লামা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ সমাজ সংস্করণ ও দ্বীন প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিংশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হিসেব গণ্য করা হয় এবং তিনি বাদশাহ ফায়সাল কর্তৃক পুরস্কার প্রাপ্তদের প্রথম ব্যক্তি।
.
শাইখ আলবানী আল্লামা মওদূদী রহঃ কে ইমাম হিসেবে শ্রদ্ধা করতেন। তিনি অসংখ্য জায়গায় আল্লামা মওদূদী রাহঃ এর কিতাব
থেকে রেফারেন্স নিয়েছেন। বিশেষ করে তাঁর লিখা "কুরআন সুন্নার আলোকে মহিলাদের পর্দার বিধান" গ্রন্থে আল্লামা মওদূদী রহঃ এর লিখা "পর্দা" গ্রন্থ থেকে অসংখ্য উদ্ধৃত গ্রহণ করেছেন। (দেখুন, পৃঃ ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৮, ৮১, ৮৮, ১১৩, ১২৬, ২২৩, ২২৪, ২১৮, ২৩২)
শাইখ আলবানী অধিকাংশ জায়গায় আল্লামা মওদূদী রহঃ কে "আল উস্তাদ" বলে সম্ভোধন করেছেন। কোনো জায়গায়, "শাইখ" কোনো জায়গায় "আল্লামা" শব্দ ব্যবহার করেছেন।
শাইখ বিন বাজও এরূপ শব্দ প্রয়োগ করেছেন। (দেখুন, মাজমুউ ফতওয়া ইবনে
বাজ , পৃঃ ৩/১৯৯, ৬/১৭, ১৮/১৪০, ২৩/২২১) এক জায়গায় তিনি বলেন, "আমাদের ভাই আল্লামা আবুল আলা মওদূদী রহঃও "আল জিহাদ" গ্রন্থে লিখেছেন …। (পৃঃ ১৮/১৪০)
.
অাল্লামা ইউসুফ আল কারদাভী বলেন,
كان امام المودودي رحمه الله مرشد العالم الاسلامي- ما كان امام المودودي مفكرا مجردا- بل كان مفكرا ومصلحا ومجددا كاملا- كان مفكرا حركيا المفكرون الفو الكتب فقط- ولكن الامام مودودي رحمه الله الف الكتب والرجال-
"ইমাম মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন বিশ্বের পথপ্রদর্শক। ইমাম মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ শুধুমাত্র একজন চিন্তাবিদই ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন চিন্তাবিদ, সংস্কারক ও মুজাদ্দিদ। তিনি ছিলেন ইসলামী পুনর্জাগরণ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। সাধারাণত চিন্তাবিদগণ গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে তাদের চিন্তাধারা প্রকাশ করে গেছেন। কিন্তু ইমাম মওদুদী রাহিমাহুল্লাহ গ্রন্থাবলী রচনা করে চিন্তারাজ্যে বিপ্লব সৃষ্টির সাথে সাথে লোকও তৈরি করে গেছেন।" (ইসলামী পুনর্জাগরণ আন্দোলন ও মওলানা মওদুদী, পৃঃ ২৩-২৪)
.
হোসাইন আহমদ মাদানীর সুযোগ্য ছাত্র উপমহাদেশের অন্যতম বিচক্ষণ আলিম, শায়খুল হাদীস আল্লামা ইদ্রীস আহমদ (প্রাক্তন প্রিন্সিপাল, গাছবাড়ী জামিউল উলুম কামিল মাদ্রাসা, সিলেট) বলেন,
"হাদীসে বর্ণিত আছে প্রতি শত বৎসর পরপর এক একজন মুজাদ্দিদের আবির্ভাব হবে, তিনি সত্যিকারের ইসলামী বিপ্লবকে পুনর্জীবিত করবেন। ইতিহাস প্রমাণ করে যে, বিগত তেরশত বৎসর হতে বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন যুগে, বিভিন্ন আকারে অনেক মুজাদ্দিদের আবির্ভাব হয়েছে। তাঁদের বিপ্লবের ফলে ইসলামের মূলনীতিসমূহ তার মূল আকুতিতে আজও বিদ্যমান রয়েছে। প্রথম মুজাদ্দিদ হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহঃ এর তাজদীদ ছিল রাজ্য শাসনের মাধ্যমে। এ জন্য তাঁর ঐ তাজদীদ ছিল সর্বাঙ্গীণ তাজদীদ।
বিংশ শতাব্দীতে বাতিল মতবাদ সমূহের মোকাবিলাককারী মনীষীদের মধ্যে মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী রাহঃ এর নাম অগ্রগণ্য। তিনি তাঁর ক্ষুরধার লিখনীর মাধ্যমে বাতিল মতবাদ সমূহের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছেন। বিশেষ করে কাদিয়ানীদেরকে কাফির সাব্যস্ত করতে গিয়ে তিনি যে ফাঁসিকাষ্ঠের সম্মুখীন হয়েছিলেন তা ইতিহাসে স্বর্ণক্ষরে লেখা থাকবে। আমি তাঁর লেখনীসমূহ যথাসম্ভব অধ্যয়ন করেছি।
মাওলানা মওদুদী রাহঃ এর চিন্তাধারা অনুযায়ী বাতিল মতবাদ সমূহের মোকাবিলা শুধুমাত্র লেখনীর দ্বারা যথেষ্ট নহে। তাই তিনি প্রথম মুজাদ্দিদ হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রাহঃ এর পন্থানুসারে রাজ্য শাসনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন কায়েম করার লক্ষ্যে একটি রাজনৈতিক জামায়াত প্রতিষ্ঠা করেন। এ জামায়াতের মূলনীতিসমূহ পরিপূর্ণভাবে কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে তৈরি করা হয়।" (সত্যের আলো, পৃঃ x)
.
আল্লামা আব্দুর রব কাসেমী ফােযলে দেওবন্দ (প্রাক্তন প্রিন্সিপাল, কানাইঘাট মনসুরিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, সিলেট) বলেন,
"হযরত মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী রাহঃ নিঃসন্দেহে একজন মুজাদ্দিদ ছিলেন। কারণ ইকামতে দ্বীন হলো ইসলামের মূল। রাসূলুল্লাহ (সা) এর দশ বৎসরের মাদানী জীবনে বিরামহীন জিহাদের ফলশ্রুতিতে ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। কিন্তু এর সাথে ইকামতে দ্বীনের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাইনি বরং কিয়ামত পর্যন্তু রাসূল (সা) এর যত উম্মত দুনিয়াতে আসবেন প্রত্যেকের উপরই দ্বীন কায়েম আন্দোলনে শরীক হওয়া ফরয (সূরাশুরাঃ৪২/১৩)। কিন্তু খিলাফতে রাশেদার পর দুর্ভাগ্যক্রমে মুসলিম সমাজে রাজতন্ত্র কায়েম হয়ে যাওয়ার পর থেকেই ইকামতে দ্বীনের আন্দোলন ভাটা পড়তে শুরু করে। এমনি আমাদের এ উপমহাদেশের উপর ইংরেজদের প্রাধান্য বিস্তারের পরক্ষণেই এ এলাকার মুসলমানদের অন্তর থেকে ইকামতে দ্বীনের অনুভূতি দ্রুত সরতে আরম্ভ করে। বিংশ শতাব্দীতে পৌঁছে তারা ইসলাম কে কয়েকটি আনুষ্ঠানিক ইবাদত- যেমন, নামায, রোযা, হজ্জ, ইত্যাদিতে সীমিত করে ফেলে। ইসলামী অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি তথা কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক রাষ্ট্রকে তারা অকেজো মনে করতে আরম্ভ করে (নাউযুবিল্লাহ)।
এহেন অন্ধকার পরিবেশে আল্লাহ তা'আলা হযরত আবুল আ'লা মওদুদী রাহঃ কে ইকামতে দ্বীনের জীহাদের জন্য কবুল করেন। তিনি তাঁর বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে ইসলামকে একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে প্রমাণ করেন এবং 'জামায়াতে ইসলামী' নামে একটি দল গঠন করে বাস্তব ক্ষেত্রে ইকামতে দ্বীনের আন্দোলন শুরু করেন- যে আন্দোলন বর্তমান বিশ্বে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্ট করেছে। সুতরাং আমি নির্দ্বিধায় বলতে চাই যে, তিনি হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ছিলেন।" (সত্যের আলো, পৃঃ xi)

Thursday, August 17, 2017

ইকবাল ছিলেন আমার আধ্যাত্মিক সহায়' - সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ)


লিখেছেনঃ সুজন হাফিজ (বাশার ইবনে হাদীস)
[পাকিস্তানের একটি খ্যতনামা বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাহিত্যিক মাসিক পত্রিকা “সাইয়ারা” ১৯৬৩ সালের মে মাসে ইকবাল সংখ্যা প্রকাশ করে। জনাব গোলাম হোসাইন আজহার মাওলানা মওদূদী (রহঃ) সাহেবের আলোচ্য সাক্ষাতকারটি উক্ত বিশেষ সংখ্যার জন্য গ্রহণ করেন। এ সাক্ষাতকার কয়েকবার দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।]
“ইকবাল আমার আধ্যাত্নিক সহায় ছিলেন…………”

কয়েক বছর আগে মাসিক তরজমানুল কুরআনের পাতা উল্টাতে গিয়ে উপরোক্ত বাক্যটি আমার চোখে পড়ে। আমার মনে হল, বাক্যটিতে প্রবল আবেগ অনুভূতির ছোঁয়া রয়েছে। এ বাক্যটির মূলে কোন্‌ মনস্তাত্ত্বিক রহস্য রয়েছে, জানা দরকার ছিল। বহুবার হয়েছে মাওলানার সাথে এ বিষয়ে কথা বলি। কিন্তু প্রতিবারই মাওলানার ব্যস্ততার কথা মনে পরতেই সে ইচ্ছা চাপা পড়ে যায়। এবার যখন সাইয়ারার ইকবাল সংখ্যার প্রয়োজন পড়েছে, আমি সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বহু দিনের অপূর্ণ ইচ্ছাটা মাওলানাকে জানালাম। মাওলানা আমাকে কোন একদিন বিকেলে তার কাছে যেতে বললেন। আমি ১৪ ই এপ্রিল বিকেলে উপস্থিত হলাম। নিম্নে মাওলানার সাথে আমার কথোপকথন এর সারসংক্ষেপ তুলে ধরছি-

★মাওলানা! আপনি একবার লিখেছিলেন যে, ইকবাল আপনার আধ্যাত্মিক সহায় ছিলেন। এর পটভূমিকা কি?
ডক্টর ইকবাল আমাকে পাঠান কোট যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। তিনি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, যে তুমি যদি এখানে এসে বস, তাহলে আমিও বছরে ৬ মাস এখানে এসে কাটাবো। এ আহ্বানে এমন একটা আকর্ষণ ছিল যে, আমি তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত প্রস্তাব গ্রহণ করে নেই এবং হায়দারাবাদ থেকে পাঠানকোট চলে আসি। কিন্তু এ ঘটনার বেদনাদায়ক দিক এই যে, আমি মার্চ মাসে পাঠানকোটে স্থানান্তরিত হলাম। আর এপ্রিলে ডক্টর সাহেবের ইন্তিকাল হয়ে গেল। সে সময় এ ঘটনায় আমি নিদারুণভাবে মর্মাহত হই। তখনকার সেই অনুভূতি আমাকে এই বাক্যটি লিখতে উদ্বুদ্ধ করে।
★মাওলানা! আপনার মধ্যে ও মরহুম আল্লামা ইকবাল এর মধ্যে এ ব্যপারে যে আলাপ আলোচনা বা চিঠির আদান-প্রদান হয়, তা বিশদভাবে জানালে ভালো হয়।
সেই চিঠিপত্রগুলো তো আমার কাছে নেই। তবে অন্যান্য বিবরণ দিচ্ছি। মাওলানা স্বীয় স্বভাবসুলভ ধীর আওয়াজে বলতে শুরু করলেন-
চৌধুরী নিয়াজ আলী সাহেব ইসলামের সেবার উদ্দেশ্যে একটি প্রতিষ্ঠান কায়েম করার লক্ষ্যে জমি ওয়াকফ করেন এবং দালান কোঠা বানাতে আরম্ভ করেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কি ধরনের হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে তার কোন সুনির্দিষ্ট ধারণা ছিল না, তিনি আমার কাছে পরামর্শ চান যে, কি ধরনের প্রতিষ্ঠান কায়েম করা উচিত। আমি একটা পরিকল্পনা লিখে দেই। এটি পরবর্তীকালে আমার দারুল ইসলামের পরিকল্পনাটিরই অনুরূপ ছিল।
ইতিমধ্যে তিনি আল্লামা ইকবালের কাছেও পরামর্শ চেয়ে চিঠি লিখেন। এ চিঠি লেখালেখির পুরো বৃত্তান্ত আমার জানা নেই। তবে চৌধুরী নিয়ায আলী সাহেবের কাছ থেকেই আমি জেনেছি যে, আমার পরিকল্পনাটি তিনি আল্লামা ইকবাল মরহুমকে দেখিয়েছিলেন এবং আল্লামা ইকবাল তা পছন্দ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, এ ধরনের কাজই বর্তমান সময়ের দাবী। এ সংক্রান্ত যাবতীয় চিঠিপত্র চৌধুরী নিয়াজ আলী সাহেবের নিকট সংরক্ষিত হয়েছে এবং তার কাছ থেকে তা সংগ্রহও করা যেতে পারে। বরঞ্চ আমার যতদূর মনে পড়ে, তিনি একবার তা প্রকাশও করেছেন।
সম্ভবতঃ ১৯৩৬ সালেরই কথা। আল্লামা ইকবাল এ বছর সর্বপ্রথম নজীর নিয়াজী অথবা মিয়া শফী সাহেবকে দিয়ে আমাকে হায়দারাবাদ ত্যাগ করে পাঞ্জাবে স্থানান্তরিত হবার অনুরোধ করে চিঠি লেখান। কিন্তু তখন আমি সেই অনুরোধ রক্ষায় অক্ষমতা প্রকাশ করি। কেননা তখন আমি হায়দ্রাবাদেই থাকার চিন্তা-ভাবনা করেছিলাম। আর যে ধরনের প্রতিষ্ঠান কায়েম করার প্রস্তাব তিনি দিয়েছিলেন, সে ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান কায়েম করার লক্ষ্যে হায়দারাবাদে আমি জমিও খরিদ করেছিলাম।
★আল্লামা ইকবাল আপনাকে পাঞ্জাব চলে আসার জন্য অন্য কোনো বিশেষ কারণও লিখেছিলেন নাকি?
শুধু এ বাসনা ব্যক্ত করেছিলেন যে, আমি যেন পাঞ্জাবে চলে আসি। এর চেয়ে কিছু লেখেননি। তখন তো আমি বুঝতে পারিনি এর পেছনে কি কল্যাণ চিন্তা সক্রিয় ছিল। তবে ১৯৩৭ সালের মাঝামাঝি নাগাদ আমি স্বতস্ফুর্তভাবে অনুভব করতে থাকি যে, ভারতের দক্ষিণ অঞ্চল ত্যাগ করে আমার উত্তর ভারতে চলে যাওয়া উচিত। সেই সময় চৌধুরী নিয়াজ আলী সাহেব আমাকে পাঞ্জাব সফর করার জন্য পীড়াপীড়ি করেন এবং একটি ইসলামী প্রতিষ্ঠান কায়েম করার জন্য যে জায়গাটি তিনি ওয়াকফ করেছিলেন, অন্তত সেই জায়গাটি দেখার জন্য আমাকে জোর অনুরোধ করেন। আমি নিজেও ভাবছিলাম, উত্তর ভারত সফর করে এমন একটি জায়গা আমার বাছাই করা উচিত যেখানে আমার আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুসারে কাজ করার সুযোগ পাব। এ চিন্তা- ভাবনার ফলেই ১৯৩৭ সালে সম্ভবতঃ আগস্ট মাসের শেষের সিকে পাঞ্জাব সফর করি এবং জলন্ধর ও লাহোর হয়ে পাঠানকোট উপনীত হই। এ সফরে মরহুম আল্লামা ইকবালের সাথে আমার বিস্তারিত আলোচনা হয়। তিনি আমাকে অনুরোধ করেন যে, চৌধুরী নিয়াজ আলী সাহেব যে জায়গা ওয়াকফ করেছেন, সেটাই যেন আমি বেছে নেই এবং চৌধুরী সাহেবের কাছে যে পরিকল্পনা আমি পাঠিয়েছিলাম, সে অনুসারে একটি প্রতিষ্ঠান যেন তৈরি করি।
★উত্তর ভারতকে কেন্দ্র করে কাজ শুরু করার ইচ্ছা আপনার কেন হল?
আমি উপলব্ধি করলাম যে, দক্ষিণ ভারতে কাজ করার সুযোগ দিন দিন কমে যাচ্ছে। আর মুসলমানদের ভবিষ্যতের ফয়সালা অনেকাংশে উত্তর ভারতেই হবে।
★আপনার ও আল্লামা ইকবালের মধ্যে যে বিস্তারিত আলোচনা হয় তার কোন কোন বিষয়ে হয়েছিল?
সে সময় যে কথাবার্তা হয়েছিল, তার বিষয়বস্তু ছিল এটাই যে, বর্তমানে মুসলমানদের জন্য কি ধরনের গঠন মূলক কাজের প্রয়োজন। এ ব্যপারে আমার ও মহুম আল্লামা ইকবালের চিন্তাধারা প্রায় একই রকম ছিল।এ কাজের জন্য আমি যে রূপরেখা দিয়াছিলাম, সেটাই তার মনোপুত ছিল। ঐ রূপরেখাই কিভাবে বাস্তবায়িত করা যায়, সেটাই আমার চিন্তা-ভাবনা করছিলাম। তবে বিস্তারিত আমার মনে নেই।
★ভারতে একটা ইসলামী আন্দোলন চালানো কি তখন আপনাদের লক্ষ্য ছিল?
সে সময় আন্দোলন আমাদের লক্ষ্য ছিল না। সে সময় আমাদের লক্ষ্য ছিল দু’টো। প্রথমতঃ যে তাত্ত্বিক ও জ্ঞানগত শূন্যতার কারণে বর্তমান যুগের মানুষের চোখে ইসলামী জীবনব্যবস্থা অসম্পূর্ণ ও অকার্যোপযোগী বলে মনে হয়, সেই শূন্যতা পূরণ করা। দ্বিতীয়তঃ এমন কিছু লোক তৈরি করা, যারা মুসলমানদের তাত্ত্বিক ও বাস্তব ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে। একটা নির্ভেজাল ও সর্বাত্মক ইসলামী আন্দোলনের ধারণা তখন আমাদের সামনে ছিল না।
★আল্লামা ইকবাল তখন তাত্ত্বিক ক্ষেত্রে কোন কোন কাজের উপর অধিক গুরুত্ব দিতেন?
বেশি বিস্তারিত ভাবে মনে নেই। ইসলামী আইন ও দর্শনের পুনঃ সংকলন তার কাম্য ছিল। সে সময় এটিই ছিল আলোচ্য বিষয়।
★মাওলানা! শুনেছি, আল্লামা ইকবাল তরজুমানুল কোরআন বিশেষভাবে অধ্যায়ন করতেন?
এটা আমি পরে নাযীর নিয়াজী সাহেব ও মিয়া শফী সাহেবের কাছ থেকে জেনেছি যে, আল্লামা মরহুম অত্যন্ত মনোযোগের সাথে তরজুমানুল কোরআন' পড়তেন। তাছাড়া আল জিহাদ ফিল ইসলাম পরিয়ে শুনেছিলেন এবং খুবই পছন্দ করেছিলেন।
★মাওলানা! ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ইকবালের শ্রেষ্ঠত্বের মূল কারণটি কি?
সেই সময় আসলে এমন একজন মানুষের প্রয়োজন ছিল; যিনি পাশ্চাত্য শিক্ষায় গর্বিত সাধারণ লোকদের চেয়েও বেশি শিক্ষিত এবং পাশ্চাত্য বিদ্যায় তাদের চেয়েও দক্ষ ও পারদর্শী হবেন, আর তারপরও এত জোরদার ভাষায় ইসলামী জীবন পদ্ধতিকে সমর্থন করবেন, যে পাশ্চাত্য পূজারীরা তার সামনে কথা বলারই সাহস পাবে না। সেই দুর্লভ ব্যক্তিত্ব ছিল ইকবালের। সেকালে পাশ্চাত্য জ্ঞান- বিজ্ঞানের প্রবল প্রতাপ ছিল এবং এরূপ সাধারণ ধারণা প্রচলিত ছিল যে, পাশ্চাত্য সভ্যতার সাথে আপোষ (compromise) করা এবং পাশ্চাত্য মতবাদগুলোর সাথে ইসলামী দর্শনের সমন্বয় সাধন করা অপরিহার্য। আল্লামা ইকবাল এ ধারণা খন্ডন করেছিলেন। এটিই ইকবালের আসল অবদান। এ দিক থেকে দেখতে গেলে আল্লামা ইকবালের ব্যক্তিত্ব ইসলামী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সহায় ছিল। সামগ্রিকভাবে তিনি যে অবদান রাখেন, তা অত্যন্তঃ গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। -( সাইয়ারা, মে, ১৯৬৩ এর সৌজন্যে)

Tuesday, August 15, 2017

মদিনা ইউনিভার্সিটি ও মাওলানা মওদূদী (রঃ)

লিখেছেনঃ জীবন রহমান হৃদয়

সৌদি বাদশাহ এর আমন্ত্রণে ১৯৬১ সালের ডিসেম্বর মাসে রিয়াদে পৌঁছেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ)। আলোচনার এক পর্যায়ে বাদশাহ আশাবাদ ব্যক্ত করেন মদিনায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। আর এ জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দিতে অনুরোধ করেন মাওলানা মওদূদী(রঃ) কে।

১৯৬১ সালের ২১ ডিসেম্বর একটি পরিকল্পনা খসড়া রচনা করেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ)। সাথে চৌধুরী গোলাম মুহাম্মাদ ও খলিল আহমাদ হামিদী কে নিয়ে বাদশাহর প্রাসাদে গিয়ে তা পেশ করেন।


পরিকল্পনা খসড়ার(পরবর্তীতে এটাই সংবিধান) শুরুতে তিনি উল্লেখ করেন-
"এটি এমন এক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হবে,যেখান থেকে তৈরী আলেমরা সারা বিশ্বের সকল সমস্যার সমাধানে সক্ষম হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩ টি স্তরে ৯ বছরের শিক্ষা কার্যক্রম থাকবে। ১ম স্তরঃ ৪ বছরের।এখানে শিক্ষার্থীরা কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, ইসলামের ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান অধ্যয়ন করবে। ২য় স্তর ৩ বছরের। এখানে থাকবে ৫টি ফ্যাকাল্টি। ৩য় স্তর ২ বছরের। এই স্তরে কোন স্কলার পূর্বের দুই স্তরের যেকোনো বিষয়ে গবেষণা করতে পারবে।"

পরিকল্পনা খসড়াটি বাদশার এতটাই পছন্দ হয় যে সঙ্গে সঙ্গে খসড়া বাস্তবায়নে সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ) এর সাথে শায়েখ মোহাম্মদ আকবর, শায়েখ আব্দুল লতিফ, শায়েখ মোহাম্মদ আলী আল্ হারাকান কে নির্দেশ দেন। শুরু হয়ে যায় পুরোদমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম।
১৯৬২ সালের জানুয়ারী মাসে মাওলানা দেশে ফিরে আসেন! কিন্তু মদিনা ইউনিভার্সিটির এক জরুরী প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকবার জন্য মাওলানা কে আবারও আমন্ত্রণ জানান সৌদি বাদশাহ। ফলে ১৯৬২ সালের মে মাসে আবারও মদিনা মনোয়ারায় উপস্থিত হন মুজাদ্দেদ সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ)।

স্থাপনের প্রথমে মদিনা ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত করা হয় শায়েখ মোহাম্মদ আলী আল্ হারাকান কে। পরবর্তীতে ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল পরিকল্পনাকারী ও সংবিধান প্রণয়নকারী সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ)। তিনি মৃত্যু অবধি উক্ত সম্মানিত পদে বহাল ছিলেন!
১৯৬২ সালের মে মাসেই প্রতিষ্ঠা হয় বিশ্বখ্যাত সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান 'রাবেতা আলমে আল ইসলামী'।
৩ নাম্বার ছবিতে সেই প্রতিষ্ঠা কমিটির দস্তখত সম্বলিত নথি। সবার মাঝে সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী রহমাতুল্লাহি আলাইহির দস্তখত।

Friday, July 21, 2017

মাওলানা মওদূদী (রহঃ) কি আলিম ছিলেন? কোন কোন ইসলামপন্থীর সমােলাচনার নায্য জবাব

লিখেছেনঃ সিরাজুল ইসলাম

মাওলানা মওদূদী (রহঃ) ও তার, চিন্তাধারা, তাঁকে যাঁরা চিনতেন এবং তাঁর সাথে কাজ করতেন তাঁরা জানতেন তিনি একজন ‘আলিম; এমনকি যাঁরা পরে তাঁর সংশ্রব থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন তাঁরাও তাঁর আলিম হওয়াকে অস্বীকার করতেন না। তাঁরা তাঁর সাথে অন্য বিষয়ে মতভেদ করতেন সেজন্য দূরে সরে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু লোক যারা নিজেরা মূলত আলিম নয়, তারাই তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটায় এবং বলে যে তিনি আলিম ছিলেন না।


ইসলামে আলিম হবার নিয়ম কী? আলিম হবার নিয়ম হচ্ছে আপনি একজন আলিমের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট বিষয় অধ্যয়ন করবেন। এরপর আপনার উস্তায যখন নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনি পারঙ্গম হয়েছেন বলে নিশ্চিত হবেন তখন তিনি আপনাকে ইজাযাহ [সনদ] দান করবেন। এভাবে আপনি ঐ বিষয়ে আলিম হবেন। ইসলামে আলিম হবার এটাই হচ্ছে ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতেই আলিম হয়েছেন আমাদের আগের দিনের উলামারা, আয়িম্মা আল-মুজতাহিদীন, মুহাদ্দিসীনগণ সবাই। এখনকার মাদ্রাসা বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি,এইচ-ডি নেয়াটা মূলত ঐ ইজাযাহ সিস্টেম থেকে আসা পথ। উস্তায সায়্যিদ আবুল আলা মওদূদী (রহঃ) মূলত সেই ট্র্যাডিশনাল ইসলামিক ইজাযাহ পদ্ধতিতে গড়ে উঠা আলিম। তিনি ইসলামের মৌলিক সবগুলো বিষয়ে তৎকালীন ভারতের প্রসিদ্ধ আলিমদের থেকে ইজাযাহ প্রাপ্ত। তাই তাঁকে যাঁরা চিনতেন তেমন বিরোধীরাও তাঁর আলিম হওয়া নিয়ে কথা বলত না। তাঁর পরিবারের কাছে তাঁর ইজাযাহগুলো এখনও সংরক্ষিত। মুশকিল হচ্ছে তাঁর জীবনীকাররা তাঁর ইজাযাহগুলো সম্পর্কে লিখেন নাই। এমনকি জামায়াতে ইসলামী থেকেও তাঁর যে সমস্ত জীবনী বের করা হয়েছে – যেমন আব্বাস আলী খানের লিখা মাস্টারপিস 'মাওলানা মওদূদী, একটি জীবন, একটি আন্দোলন, একটি ইতিহাস'– সেগুলোতেও এগুলোর উল্লেখ নাই। এর কারণ সম্ভবত উস্তায মওদূদীর (রহঃ)প্রচার বিমুখতা। যাই হোক আমি নিজে তাঁর সম্পর্কে পড়তে গিয়ে অল্প কয়েকটা বিষয়ে জানতে পারলাম। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ফকীহ এবং সালাফী আলিম ডঃ সায়্যিদ আব্দুল হালিম মুহাম্মদ হুসাইন [হাফিজাহুল্লাহ] এর লিখা 'নাযারাত ফী ফিকরি আবীল-আলা আল-মওদূদী' –ﻧﻈﺎﺭﺍﺕ ﻓﻲ ﻓﻜﺮ ﺃﺑﻲ ﺍﻷﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻮﺩﻭ কিতাবে মাওলানা মওদূদীর শিক্ষাগত যোগ্যতার যে বিবরণ তিনি দিয়েছেন তা থেকে আমি পাঠকদের জন্য উল্লেখ করছি-
১। আরবী ভাষা, নাহু, সরফ, আল-মা’ক্বুলাত ওয়াল-বালাগাহ ওয়াল মা’আনীঃ

এগুলোতে তিনি ইজাজাহ লাভ করেছেন দিল্লীর দারুল

উলুমে ভারতের প্রখ্যাত আলিম মাওলানা শায়খ আব্দুস-সালাম নিয়াজীর [রহিমাহুল্লাহ] কাছ থেকে।
২। হাদীস ও উলুম আল-হাদীসঃ

শায়খ ইশফাক্বুদ্দীন কান্দাহলাবীর [রহিমাহুল্লাহ] কাছ থেকে এ বিষয়ে ইজাযাহ লাভ করেন তিনি।

৩। ফিক্বহ, তাফসীর বায়দাওয়ী এবং আল-মাতূল ফী ‘ইলম আল-মা’আনী ওয়াল-বালাগাহঃ

এ বিষয়গুলোতে তিনি ইজাযাহ লাভ করেন শায়খ শরীফুল্লাহর [রহিমাহুল্লাহ] কাছ থেকে।

৪। ইংরেজী ভাষাঃ

মৌলভী মুহাম্মদ ফাদিল এর হাতে মাত্র চার মাসে তিনি ইংরেজী ভাষা শিক্ষায় বুৎপত্তি লাভ করেন।

ডঃ শায়খ আব্দুস-সালাম আযাদী নীচে মন্তব্যে উস্তায মওদূদীর (রহঃ) শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আরো লিখেছেনঃ

উস্তায নাদীমুল্লাহ হাসনাইন ও শায়খ নিয়ায ফাতেহ পুরির কাছ থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। মুহাম্মাদ ফাদিল এর কাছে শুধু ইংরেজি ভাষা না, ইতিহাস, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান ও বিভিন্ন ধর্মের তুলনামূলক আলোচনা পড়েছেন। তিনি মাওলানা ইশফাকুর রহমান কান্ধল্ভীর কাছ থেকে হাদীস ফিকহ ও আরবী সাহিত্য পাঠদানের ইজাযাহ নেন ১৯২৭ সালে এবং তিরমিযি ও মুওয়াত্তা ইমাম মালিক শিক্ষা দানের ইজাযাত গ্রহন করেন ১৯২৮ সনে। এই দু বছর তিনি সম্পূর্ণ সময় ব্যয় করেছেন লেখা পড়ার পেছনে। দেওবন্দে তিনি তাদের পত্রিকা আল জামইয়্যাতের সম্পাদক তখনই হতে পেরেছেন যখন সেখানকার আলিমরা তাঁকে সার্টিফাই করেছেন। কিছু মুর্খ লোক বলে "তিনি আলিম ছিলেন না"। তারা জানেন না মাওলানার অনেক বই বুঝতে হলে ছোট খাট আলেমদের পক্ষেও সম্ভব হবে না। ইসলামে যখন কাউকে আলিম বলা হয় তখন মাদ্রাসা পাশ কাউকে বুঝায় না। আলিম একটা বিরাট ব্যাপার। সায়্যিদ মওদূদী (রহঃ) মূলত আলিম শব্দটার যথার্থ অর্থেই আলিম। এটা কারো ভুল ভাঙ্গানোর জন্য না, বরং যারা অন্যায় অভিযোগের কোন সন্তোষজনক জবাব জানতেন না তাদের জন্য।

আমাদের ঘোষনা, আমাদের চ্যালেঞ্জ:
আল্লামা মওদুদী (রহ.) শুধু আলেমই নন, 
বরং বিশ্বব্যাপী অসংখ্য আলেমের উস্তাদ।
Please brwose this label link and see all post: 

আমাদের দোয়া: 
হে আল্লাহ! হে সমস্ত ক্ষমতার মালিক! আল্লাহ’র দ্বীনের এই একনিষ্ঠ মুজাহিদকে যারা অপবাদ দেয়, অপমান করতে চায় তাদের হয় হেদায়াত দান করো, না হয় দুনিয়া ও আখেরাতে উচিত শিক্ষাদান করো, আমিন 

Monday, February 20, 2017

ইসলামের বিধান কাদের জন্য? জবাবে আল্লামা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (রহঃ)


“এ বিধান [ইসলাম] ভীরু কাপুরূষের জন্য অবতীর্ণ হয়নি; নফসের দাস ও দুনিয়ার গোলামদের জন্য নাজ়িল হয়নি; বাতাসের বেগে উড়ে চলা খড়-কুটো, পানির স্রোতে ভেসে চলা কীট-পতঙ্গ এবং প্রতি রঙ্গে রঙ্গীন হওয়া রঙ্গীনদের জন্য একে অবতীর্ণ করা হয়নি। এ এমন দুঃসাহসী নর-শার্দুলদের জন্য অবতীর্ণ হয়েছে যারা বাতাসের গতি বদলে দেবার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করে; যারা নদীর তরঙ্গের সাথে লড়তে এবং তার স্রোতধারা ঘুরিয়ে দেবার মতো সৎ-সাহস রাখে। যারা খোদার রঙকে দুনিয়ার সব রঙের চাইতে বেশী ভালবাসে এবং সে রঙ্গেই যারা গোটা দুনিয়াকে রাঙ্গিয়ে তুলবার দৃঢ় আগ্রহ পোষণ করে। যে ব্যক্তি মুসলমান তাকে নদীর স্রোতে ভেসে যাওয়ার জন্য পয়দা করা হয়নি। তার সৃষ্টির উদ্দেশ্যই হলো জীবন নদীকে তার ঈমান ও প্রত্যয় নির্দেশিত সোজা ও সরল পথে চালিত করা। যদি সেই সোজা পথ থেকে নদী তার স্রোত ফিরিয়ে নেয়, আর সেই পরিবর্তিত স্রোতধারায়ই কেউ ভেসে চলতে সম্মত হয়, তো এমন ব্যক্তির ইসলামের দাবী একেবারেই মিথ্যা। বস্তুত যে ব্যক্তি সাচ্চা মুসলমান, সে এই ভ্রান্তমূখী স্রোতের সাথে লড়াই করবে, তার গতি ঘুরিয়ে দেবার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করবে – সাফল্য ও ব্যর্থতার কোন পরোয়াই সে করবেনা। এ লড়াইয়ের যে কোন সম্ভাব্য ক্ষতিই সে বরণ করে নেবে। এমনকি নদীর স্রোতের সাথে লড়াই করতে করতে তার বাহু যদি ভেঙ্গেও যায়, কিংবা শক্তি শিথিল হয়ে পড়ে এবং পানির তরঙ্গাঘাত তাকে আধমরা করে কোন তীরের দিকে ছুঁড়ে ফেলেও দেয়, তবুও তার আত্মা কখনো পরাজয় বরণ করবেনা। তার হৃদয়ে এই বাহ্যিক ব্যর্থতার জন্য এক মুহুর্তের তরেও কোন অনুতাপ জাগবেনা, কিংবা নদীর স্রোতে ভেসে চলা কাফির ও মুনাফিকদের সাফল্যের জন্য ঈর্ষার ভাবধারা প্রশ্রয় পাবেনা।” [সাইয়েদ আবুল ‘আলা আল-মওদূদী, ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব (৫ম সংস্করণ, ১৯৯৩), পৃঃ ২০৩-২০৪, শতদল প্রকাশনী, ঢাকা। 

Popular Posts