মুক্তিযুদ্ধোত্তর শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার এক পর্যায়ে জাতীয় সংহতি ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠার শক্তিশালী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা উপলক্ষে ‘বাঙালীরা ক্ষমা করতে জানে’-কথা দিয়েই তার এই উদ্যোগের যাত্রা শুরু।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, সেটা মানব ইতিহাসের চলমান সংস্কৃতির একটা অংশ। আজকের আধুনিক বিশ্ব যাকে বলা হয়, সেখানেও রয়েছে এর উজ্জ্বল অনেক দৃষ্টান্ত। ভিয়েতনামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক অন্যায় যুদ্ধে হাজার হাজার ভিয়েতনামীকেই শুধু হত্যা করা হয়নি, বর্বর বোমা বর্ষণে হাজারো জনপদ, ফসলের মাঠ, বিলিয়ন বিলিয়ন টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে তাদের গলাগলি ধরার ক্ষেত্রে ক্ষমা চাওয়ার দাবী বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সবচেয়ে বড় আত্মঘাতি ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর দক্ষিণের মধ্যে এই গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়, অন্য অর্থে বলা যায় এই গৃহযুদ্ধ হয় ঐক্যপন্থী ও বিভেদ পন্থীদের মধ্যে। এই যুদ্ধে ৬ লাখ ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। আহত হওয়ার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৬ হাজার। এই যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐক্যপন্থীরা বিজয়ী হয়, পরাজিত হয় দক্ষিণের বিচ্ছিন্নতাবাদিরা। যুদ্ধকালে যত রক্তই ঝরুক, দক্ষিণের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যে দিন যুদ্ধ শেষ হয়, তারপর আর এক ফোটাও রক্ত ঝরেনি। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে, বিচার তো দূরে, ফাঁসি তো আরও দূরে, কেউ অভিযুক্তই হয়নি। যুদ্ধ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ঘোষণা করেন, “To get the deluded men of the rebel armies disarmed and back to their homes ......... Let them once surrender and reach their homes, they wan’t take arms again.... Let them all go, officers and all, I want submission, and no more bloodshed.... I want no one punished, treat them liberally all around” যার সারকথা হলো: বিদ্রোহী সৈনিক যারা অস্ত্র ত্যাগ করবে, আত্মসমর্পণ করবে এবং বাড়িতে ফিরে যাবে, আর অস্ত্র হাতে নেবে না, তাদের অফিসারসহ সকলকে ছেড়ে দাও। আমি আনুগত্য চাই, আর কোনো রক্তপাত চাই না। চাই না কেউ শাস্তি পাক। সর্বত্র সকলকে উদারভাবে দেখতে হবে।’ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের এ ঘোষণা অক্ষরে প্রতিপালিত হয়েছে। ঐক্যপন্থী বিভেদপন্থী সকলেই যুদ্ধের পর একে অপরের গলা জড়িয়ে ধরেছে। আজও গলা জড়িয়ে ধরেই রয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশে তা হয়নি। স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান বাহিনীর যুদ্ধ অপরাধীদের ছেড়ে দিলেও, যাদের যুদ্ধ অপরাধী কিংবা মানবতা বিরোধী অপরাধীর তালিকায় নাম ছিল না, তাদের জন্যে নতুন আইন করে, নতুন ট্রাইবুন্যাল করে, বিচারের কাঠ গড়ায় তুলে ফাঁসি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৫ দশক পর। কেউ কেউ অবশ্য বলেন এই বিচারে বাইরের হাত রয়েছে। সেই ‘বাহির’টা যদি ভারত হয়, তাহলে ব্যাপারটা বিস্ময়কর হয়ে দাড়ায়। কারণ ভারতের কারণেই বা ভারত চেয়েছিল বলেই ১৯২ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী সৈন্যের বিচার বাংলাদেশ করতে পারেনি বিচারের জন্যে আইন তৈরি ও ট্রাইবুন্যাল গঠন করা সত্ত্বেও। ভারত তার স্বার্থেই তখন ওটা করেছিল। কারণ ভারত চায়নি যে, পাকিস্তানী সৈন্যের ১৯২ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হোক। এর পিছনে রহস্য ছিল, সিমলা চুক্তি (২ জুলাই ১৯৭২) এবং দিল্লী এগ্রিমেন্ট (২৮ আগস্ট ১৯৭৩) অনুসারে ভারত ও পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তার মধ্যে বাংলাদেশে ধৃত পরে ভারতে আশ্রয়ে যাওয়া পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীরাও শামিল ছিল। এর বড় প্রমাণ হলো, দিল্লী এগ্রিমেন্ট ধারা-৩ এর ৩ ও ৫ উপধারায় যেখানে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে আটকে পড়া মানুষ বিনিময়ের কথা আছে। সেখানে যুদ্ধবন্দীর উল্লেখ নেই। পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের উল্লেখ আছে ধারা-৩ এর উপধারা ১ এবং ২-এ, কিন্তু এই বিনিময় সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ভূমিকার কোন উল্লেখ নেই। অন্যদিকে উপধারা ৬-এ ভারত-প্রতিশ্রুত পাকিস্তানী বন্দী বিনিময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীর বিচার না করার বাংলাদেশের সম্মতির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এ সম্মতি বাংলাদেশ কখন দিল সে কথার কোন উল্লেখ নেই। উল্লেখ্য, দিল্লী এগ্রিমেন্টটি সিমলা চুক্তির মতই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর পরিষ্কার অর্থ হলো, বাংলাদেশের মতামতের তোয়াক্কা না করেই ভারত পাকিস্তানের সাথে পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের চুক্তি করেছিল। যুদ্ধাপরাধীদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে এইভাবে ভারতের ইচ্ছাটি প্রধান নিয়ামক হিসাবে কাজ করেছে।
শেখ মুজিব সরকার ভারতীয় চাপে ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীসহ ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দীকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হবার পর স্বাভাবিকভাবেই দেশীয় কলাবরেটরদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন। অবশ্য স্বাধীনতা উত্তর শেখ মুজিবের সরকার কিন্তু হঠাৎ করেই কলাবরেটরদের ক্ষমা ঘোষণা করেননি। কেউ কেউ মনে করেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী ও যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানী সৈন্যদেরই যখন অবস্থার কারণে বা অবস্থার প্রয়োজনে নিঃশর্তে ছেড়ে দিতে হলো, তখন ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় দেশের যারা পাকিস্তানী সৈন্যের সহায়তা করেছেন বা তাদের সহযোগী হয়েছেন, তাদের শাস্তি দেয়ার যৌক্তিকতা খুঁজে পাননি বলেই বাংলাদেশের তদানীন্তন সরকার প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান কলাবরেটরদের সাধারণ ক্ষমা করেন। ঘটনা কিন্তু মাত্র এটুকুই নয়। কলাবরেটরদের ক্ষমা ঘোষণা মাত্র এ ধরনের কোন চিন্তা থেকে হয়নি। সাধারণ দাবি ও সাধারণ জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা হয়। ১৯৭২ সালের মার্চ থেকেই আবুল মনসুর আহমদ, আবুল ফজলের মত দেশের শীর্ষ বুদ্ধিজীবীসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের তরফ থেকে কলাবরেটরদের ছেড়ে দেবার আবেদন ও দাবি উত্থিত হতে থাকে। এককালীন আওয়ামী লীগ নেতা এবং সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী একজন সর্বজনমান্য নেতা জনাব আতাউর রহমান খান এই সময় এক বিবৃতিতে বলেন, “জাতি পুনর্গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সমাধা না করে সরকার সারা দেশে দালাল ও কল্পিত শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় রত আছেন। মনে হচ্ছে, এটাই যেন সরকারের সব চাইতে প্রধান কর্তব্য। যারা ভিন্ন রাজনৈতিক মত পোষণ করতেন, অথচ খুন, অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণ, কিংবা লুটপাটের মতো জঘন্য কার্যে প্রবৃত্ত হননি, তাদের উপর গুরুতর শাস্তি আরোপের মাধ্যমে দেশের কোন উপকার হবে না। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের আগে যারা বেপরোয়াভাবে বাংলাদেশ আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন, তাদের অনেকে সরকারের উচ্চপদে আসীন হয়েছেন, অথচ মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সমর্থন থাকা সত্ত্বেও যারা পাক বাহিনীকে সমর্থন দান করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে কিংবা শরণার্থী হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। এই আইন জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে ফেলেছে এবং এই আইনের মাধ্যমে বিচার একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিচার ও সকল বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার সুপারিশ করছি।”
এই ধরনের বিভিন্ন বিবৃতি ও দাবির প্রেক্ষিতে এবং দেশের প্রকৃত পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর শেখ মুজিবের সরকার সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে নিম্নোক্ত ‘প্রেস নোট’ প্রচার করেন :
“সরকার ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশে (১৯৭২) সালের রাষ্ট্রপতির ৮ নং আদেশ মোতাবেক অপরাধের দায়ে দণ্ডিত অথবা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষমা প্রদর্শনের প্রশ্নটি পুনরায় বিবেচনার পর ঘোষণা করিতেছেন :
১. এই আদেশের ২ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত (ক) উক্ত আদেশ মোতাবেক যে কোন অপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের দণ্ড ১৮৮৮ সালের ফৌজদারী দণ্ডবিধির ৪০১ ধারা মোতাবেক মওকুফ করা হইল এবং উক্ত আদেশ ব্যতীত অপর কোন আইন বলে বিচার্য ও শাস্তিযোগ্য কোন অপরাধের সহিত জড়িত থাকার জন্য গ্রেফতারী পরওয়ানা না থাকিলে সেইসব ব্যক্তিকে কারাগার হইতে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হইবে। (খ) উক্ত আদেশ বলে যে সকল ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট অথবা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা বিচারাধীন রহিয়াছে উল্লিখিত ম্যাজিস্ট্রেট অথবা ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে সে সব প্রত্যাহার করিতে হইবে এবং এই আদেশ ব্যতীত অপর কোন আইনে বিচার্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধের হুলিয়া না থাকিলে তাদেরকে সরকারি হেফাজত হইতে মুক্তি প্রদান করিতে হইবে। (গ) এই আদেশ বলে বিচার্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধের দায়ে যে সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হইয়াছে অথবা তদন্ত চলিতেছে সেই সব মামলা ও তদন্ত কার্য বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং সব গ্রেফতারী পরওয়ানা অথবা আদালতের হাজির হওয়ার নির্দেশ এবং এই আদেশ বলে কোন ব্যক্তির ব্যাপারে তাহার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ থাকিলে ইহা বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং অপর কোন আইনে বিচার্য ও শাস্তিযোগ্য না হইলে তাহাদেরকে সরকারি হেফাজত হইতে মুক্তি প্রদান করিতে হইবে; তবে কোন ব্যক্তি অনুপস্থিতিতে দণ্ডিত হইয়া থাকিলে অথবা কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরওয়ানা থাকিলে তাদের ক্ষেত্রে উপযুক্ত আদালতে হাজির হইয়া ক্ষমা ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা পর্যন্ত এই আদেশ কার্যকর থাকিবে।
২. এই আদেশ বলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (হত্যা), ৩০৪ ধারা (হত্যার চেষ্টা কিন্তু হত্যার শামিল নয়), ৩৬৭ ধারা (ধর্ষণ), ৪৩৫ ধারা (অগ্নিসংযোগ অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য দ্বারা অপকর্ম সাধন), ৪৩৬ ধারা (ঘরবাড়ি ধ্বংসের অভিপ্রায়ে অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য দ্বারা অপকর্ম সাধন) এবং ৪৩৮ ধারা (জাহাজে অগ্নিসংযোগ অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য দ্বারা অপকর্ম সাধন) মোতাবেক অভিযুক্ত ও দ-িত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ১ নং অনুচ্ছেদ মোতাবেক ক্ষমা প্রদর্শন প্রযোজ্য হইবে না।
মুজিব সরকারের এই ক্ষমা ঘোষণা সর্বমহল থেকে অভিনন্দিত হয়। মুজিব সরকারের প্রবল বিরোধী এবং বাম আন্দোলনের গুরু বলে পরিচিত, ভাসানী ন্যাপের সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তার এবং দলের সম্পাদক মণ্ডলীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ন্যাপ বহু আগে থেকেই নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তি দাবি করে আসছে।’ বিবৃতিতে বাংলাদেশ দালাল আইন সংক্রান্ত আইনের ৮ নং ও ৫০ নং ধারা বাতিল করার দাবি জানান। তিনি ১৫ ডিসেম্বর আরেক বিবৃতিতে বলেন, ‘ক্ষমা চাই, সমানাধিকার চাই। রাষ্ট্রপতি আদেশের ৫০ ও ৮ ধারা বাতিল চাই।’ বাংলাদেশ জাতীয় লীগের সভাপতি জনাব আতাউর রহমান খান তার বিবৃতিতে বলেন, ‘আরো আগেই দেশের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল। এর ফলে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে এবং মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ দেশ গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করে বিশ্বস্ততার প্রমাণ দেবেন।’ দেশের প্রবীণ রাজনীতিক ও চিন্তাবিদ জনাব আবুল হাশিম প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারকে অভিনন্দিত করে বলেন, ‘জনগণের ভাগ্যকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্যে সরকার সঠিক পন্থাই বেছে নিয়েছেন। গণতন্ত্রের এ উদ্যম বজায় থাকলে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা রয়েছে।’ সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা এবং স্বনামধন্য কলামিস্ট ও লেখক আবুল মনসুর আহমদ (স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের পিতা) বলেন, ‘আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায় সরকার যখন একবার অনুকম্পার দরজা খুলিয়াছেন, ষোল হাজারের মতো বন্দীকে মাফ করিয়া দিয়েছেন, তখন বাকী সবার ক্ষেত্রেও তেমনি উদারতা প্রদর্শন করুন। অন্যথায় দুই বছর পরে আজ যেমন চারশ লোককে প্রমাণের অভাবে মুক্তি দিতে হলো, বার বছর পর (৩৭ হাজার দালালদের বিচারে ১২ বছর লাগবে) মানে গ্রেফতারের সময় হতে ১৪ বছর পর আরো অনেক লোককে তেমনি মুক্তি দিতে হইতে পারে।’ (ইত্তেফাক, ২ নভেম্বর, ১৯৭৩)। তদানীন্তন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শেখ মুজিব সরকারের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার সিদ্ধান্তকে অভিনন্দিত করে বিবৃতি দেয়।
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মত ১৯৭৬ সালে কলাবরেটর আইনের বাতিলও ছিল অবস্থার একটা স্বাভাবিক পরিণতি। ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছিল ১ লাখ লোককে এবং ৩৭৪৭১ জন দালালকে অভিযুক্ত করা হয়। তাদের বিচারের জন্য ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এই ৭৩টি ট্রাইব্যুনালে ২২ মাসে ২৮৪৮টি মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হয়। এদের মধ্যে দণ্ডিত হয় মাত্র ৭৫২ জন, তাও প্রায় সব ক্ষেত্রেই ছোট খাটো অপরাধের জন্য। অবশিষ্ট ২০৬ জন খালাস পেয়ে যান। এই পটভূমিতে ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষিত হয়। সাধারণ ক্ষমার অধীনে ১৯৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছাড়া পেয়ে যায় ৩০ হাজার বন্দী। এখানে উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের বিভিন্ন অপরাধ ও অভিয়োগে স্বাধীনতা উত্তরকালের যাদের বন্দী রাখা হয়, বিচার করা হয়, শাস্তি দেয়া হয়, তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী নাম করার মতো কেউ ছিলনা। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা অভিয়োগ দায়ের করা ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ দশকের মাথায় জামায়াত নেতৃবৃন্দের অপরাধ খুঁজে পাওয়া কোনো যুক্তিতেই আসে না।
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলেও হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ এই চার অপরাধের বিচার, গ্রেফতার ও শাস্তি বিধানের আইনী বিধান বহাল রাখা হয়। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার ১৯৭৬ সালের দালাল আইন বাতিল হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ দুই বছর এক মাস সময়ে উক্ত চার অপরাধের অভিযোগে একটিও মামলা দায়ের হয়নি। এই অবস্থার পটভূমিতেই ১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে দালাল আইন বাতিল হয়ে যায়।
এখানে একটা বড় প্রশ্ন হলো ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর হতে ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে কোন মামলা দায়ের হলো না কেন? এর একটি জবাব হলো ঐ চারটি অপরাধের ক্ষেত্রে দায়েরযোগ্য কারও কোনো অভিযোগ ছিল না। এই জবাবটি অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তব নয়। কারণ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সংঘাতে দায়েরযোগ্য ঐ ধরনের কোন অপরাধ একেবারেই ছিল না তা হতে পারে না। অন্য আরেকটি জবাব এই হতে পারে যে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিও ছিল, অপরাধও ছিল কিন্তু সংশ্লিষ্ট সংক্ষুব্ধরা অভিযোগ বা মামলা দায়েরে আগ্রহী হয়নি। এটাই অনেক ক্ষেত্রের বাস্তবতা বলে ধরে নেয়া যায়। কেন আগ্রহী হয়নি? কেন সংক্ষুব্ধ মানুষ অপরাধীর শাস্তি বিধানের জন্য মামলা দায়েরে এগিয়ে যায়নি? খুব বড় একটা প্রশ্ন এটা। এক কথায় এর কোন জবাব মিলবে না। এই প্রশ্নের জবাব প্রকৃতপক্ষে সন্ধান করতে হবে বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো এবং বাংলাদেশের মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সমন্বয় চিন্তার মধ্যে। এই ক্ষেত্রে এই সময়ের সুন্দর একটা সমাজ বিশ্লেষণ দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ অধ্যাপক ড. তারেক মুহাম্মদ তওফীকুর রহমান তার “বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলেম সমাজ : ভূমিকা ও প্রভাব (১৯৭২-২০০১)” শীর্ষক গ্রন্থে। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার পর অবস্থার উত্তাপ ঠাণ্ডা হয়ে আসার সাথে সাথে দালাল আইনে ধৃত এবং বিচারের সম্মুখীন ব্যক্তিদের বিচার সংক্রান্ত বিষয়টি সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও জটিলতার সৃষ্টি করে চলছিল অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে-এই সামাজিক চিত্রটি এক কথায় সামনে আনার পর তিনি লিখেছেন :
“আপাত: পরস্পর বিচ্ছিন্ন ও শত্রুতার নেপথ্যে বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজ হলো ‘কমপ্যাক্ট সোসাইটি।’ আবহমান কাল থেকে শাশ্বত গ্রাম্য সালিশ বিচার ব্যবস্থার প্রচলনে গ্রামীণ সমাজে যে ভারসাম্য বর্তমান ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় তা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তা নতুন আঙ্গিকে ও নেতৃত্বে স্থিতিশীল হয়ে আসতে শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধের উত্তেজনা কেটে যেতে থাকে এবং মুক্তিযোদ্ধাগণও সমাজের রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হতে থাকেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তীতে উত্তেজনা প্রশমনে রক্তের বন্ধন, আত্মীয় সূত্রতা এবং সমাজ গোষ্ঠীর বন্ধনে অপরাধকারী দালালদের আশ্রয় দেবার ব্যাপক প্রবণতা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে। ‘ক্ষমাই মহত্বের লক্ষণ’ এই মহানুভবতার চিরন্তনী আবহে লালিত বাংলার মানস গঠন শাস্তি বিধানের পরিবর্তে সামাজিক সালিশ ও সমঝোতার পথেই অগ্রসর হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় একই পরিবারের পিতা শান্তি কমিটির সদস্য হয়েছে, অপরদিকে পুত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। পিতা ও পুত্রের এই বিপরীত অবস্থান দীর্ঘদিন আক্রোশ মনোভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধা পুত্র দালাল পিতাকে বাঁচানোর জন্য তদবির শুরু করতে কুণ্ঠিত হয়নি। অনেক দালাল এমনও ছিল যে, তারা গোপনে মুক্তিবাহিনীকে আশ্রয় দিয়েছে, খাদ্য দিয়েছে এবং প্রয়োজনমত নিরাপত্তা দিয়েছে। দালালীর অভিযোগে অভিযুক্ত ঐ ব্যক্তিটি পরবর্তীকালে ঐসব মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় প্রার্থনা করেছে এবং আশ্রয় পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত অবস্থায় বা ভিন্নভাবে যাই হোক না কেন, মুক্তিযোদ্ধাগণ প্রায় দুই হাতে ধৃত ও অভিযুক্ত দালালদের ছেড়ে দেবার সুপারিশ করতে থাকে। যা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর দপ্তরকে পর্যন্ত প্রভাবিত করে তোলে। গ্রাম্য সালিশ, দেনদরবার, তদবির হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান ইত্যকার কারণে পরবর্তীকালে কিছু ব্যতিক্রম ব্যতীত বাদীপক্ষগণ মামলা চালাতে উদ্যোগ গ্রহণ হতে পিছিয়ে আসে, এমনকি মামলার ন্যূনতম সাক্ষ্য জোগাড় করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।”
এটাই ঘটনা। সামাজিক রাজনৈতিকসহ নানা ধরনের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বাঁধন স্বাধীনতা যুদ্ধোত্তর পক্ষ-বিপক্ষকে সমন্বয় ও সমঝোতার দিকে নিয়ে যায়। সৈয়দ আবুল মকসুদ ‘প্রথম আলো’তে তার ‘সহজিয়া কড়চায়’ এই কথাই লিখেছেন এইভাবে, “কোন যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দালালদের বিচার না হওয়ার মূল কারণ, অনেক মন্ত্রী, সাংসদ নেতা ও বীর উত্তম মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানীদের সহযোগী ছিল। তাদের বাঁচাতে গিয়ে সকলকেই বাঁচিয়ে দেয়া হয়। (প্রথম আলো, ১৩ নভেম্বর, ২০০৭)। শুধু বাঁচিয়ে দেয়া নয়, দীর্ঘ দুই বছর এক মাস সময় পর্যন্ত দালাল আইন বহাল তবিয়তে থাকলেও খুন, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এই চার অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের না হবার এটাও একটা কারণ। আরেকটা কারণ হলো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান ছিল কিংবা পাকিস্তান বাহিনীর সহায়ক হিসেবে রাজাকার এর মত যে সব বাহিনী কাজ করেছে, যুদ্ধাপরাধী বা অপরাধী শুধুমাত্র তাদের মধ্যেই ছিল না অন্যান্য দল ও গ্রুপের মধ্যেও যুদ্ধাপরাধী বা অপরাধী ছিল। এ বিষয়ে সৈয়দ আবুল মকসুদ লিখেছেন : ‘এখনকার পত্রিকা পড়লে মনে হয় শুধু মুসলিম লীগ, জামায়াত বা নেজামে ইসলামীর লোকেরাই পাকিস্তানীদের দালাল ছিল। বস্তুত সবশ্রেণী ও গোষ্ঠীর মধ্যেই পাকিস্তানীদের সহযোগী ছিল। আব্দুল হক তার কম্যুনিস্ট পার্টির নামের সাথে বাংলাদেশ হবার পরও ‘পূর্ব পাকিস্তান’ রেখে দেন। অত্যন্ত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ পাকিস্তানীদের সহযোগিতা করছেন। (প্রথম আলো, ১৩ নভেম্বর, ২০০৭)। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন গ্রুপের পরস্পরের মধ্যেও যুদ্ধাপরাধ বা অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। বিভিন্ন বইয়ের বিভিন্ন বিবরণীতে এক দৃষ্টান্ত আছে। সম্প্রতি এটিএন-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে মেজর জেনারেল (অব.) মইনুল হোসেন চৌধুরী এক দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধী বলতে আমরা জানি একটা ইসলামী দলকে বোঝানো হচ্ছে যারা ডানপন্থী। আমি বলবো যুদ্ধাপরাধীতো সরকারী কর্মচারীও ছিল। আমি আপনাকে প্রমাণ দিতে পারি। কারণ আমি প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। একজন বাঙালী ক্যাপ্টেন মারা যায় সরাইলে। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে হত্যা করে। কিন্তু ঐ ক্যাপ্টেনকে পরে শহীদ উল্লেখ করা হয়। সুতরাং যখন যুদ্ধাপরাধী বলবেন তখন সবাইকে বলতে হবে।’
সবাইকে যুদ্ধাপরাধী বলতে হচ্ছে বলেই স্বাধীনতা উত্তরকালে অবশেষে বিষয়টাকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে এগিয়ে যায়নি কেউ। দু’বছর সময়কালে দালাল আইনে মামলা দায়ের না হবার এটাও একটা বড় কারণ। বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতাসহ উপরোক্ত সব কারণ সম্মিলিতভাবে ১৯৭৬ সালে দালাল আইন বাতিল করার পটভূমি রচনা করে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কাছে বিষয়টা এইভাবে প্রতিভাত হবার সময়ের দাবী পূরণের অংশ হিসেবেই তিনি দালাল আইন বাতিল করেন। আওয়ামী লীগসহ যারা এ জন্য জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করেন, তারা নিছকই রাজনীতি করেন, বাংলাদেশের সমাজ ও জনগণের কথা, এমনটি তাদের মন কি বলে সেটাও বিবেচনা করেন না।
আসলে একশ্রেণীর সুবিধাবাদীরা এবং আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ইসলামপন্থী দল বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধাচারণকে তাদের যে রাজনীতি, সে রাজনীতির খোরাক হিসাবেই ব্যবহার করছে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও স্বাধীনতা বিরোধী শ্লোগানকে। এই মনোভাব এই শ্লোগান স্বাভাবিক নয়, সঙ্গতও নয়।
স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে যুদ্ধাপরাধ চ্যাপ্টার ক্লোজ করেছেন এবং সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে নিছক ‘কলাবরেটর’ হওয়াকে শাস্তিযোগ্য করার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত শেখ মুজিবুর রহমানের এসব সিদ্ধান্তকে আমরা যেন এখন অন্যায় অবাঞ্ছিত মনে করছি। এটা যদি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার রাজনীতি হয়, তাহলে আমাদের জানা দরকার জনগণের ইচ্ছার প্রতিধ্বনি করে স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবই এই রাজনীতিকে অচল করে দিয়ে গেছেন। জনগণও এই সাথে একে সমাধিস্থ করেছে। এই কারণেই দালাল খান-এ-সবুর তিন আসন থেকে নির্বাচিত হন, শাহ আজিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, বিচারপতি নূরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের মনোনীত এমপি প্রার্থী হতে পেরেছিলেন, মাওলানা নূরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের ধর্মপ্রতিমন্ত্রী হবার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী হয়েছেন। হাজার বলেও যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতা বিরোধী বলে জামায়াতে ইসলামীকে খাটো করা যাবে না। স্বাধীনতা উত্তরকালে তদন্ত করে তৈরি যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় জামায়াতে ইসলামীর কারও নাম ছিল না এবং দালাল আইনে যে ৭৫২ জনের শাস্তি কনফার্ম করা হয়েছিল, এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল, তাদের মধ্যেও ছিল না জামায়াতে ইসলামীর কোনো লোক।
জাতিকে ভাগ করার বিভেদাত্মক এই অভিযান শুধু স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ও ইচ্ছার ব্যতিক্রম নয়, পৃথিবীর চলমান সংস্কৃতিরও ভায়োলেশন। আন্তঃজাতি যেমন, তেমনি দেশ জাতির অভ্যন্তরেও সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। তেমনি আবার খুব স্বাভাবিক হলো তাদের সমঝোতা প্রতিষ্ঠা ও সমন্বয়ের ঘটনা। জাতির স্বার্থেই এটা প্রয়োজন।
বিভেদের রাজনীতি, হিংসার রাজনীতি আমাদের দেশে তীব্র হোক, এটা বাইরের অনেকেই চায়, যারা চায় আমাদের ভাগ করে শাসন করতে এবং শোষণ করতে। আমরা তাদের এ চাওয়ার শিকার হতে পারিনা।