Showing posts with label Bangladesh. Show all posts
Showing posts with label Bangladesh. Show all posts

Monday, August 12, 2019

আল্লাহর ৯৯ নামের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য কুমিল্লার মুরাদনগরে

মহান আল্লাহ তায়ালার গুণবাচক ৯৯ নাম খচিত দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য 'আল্লাহু চত্ত্বর' এর উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ডের পূর্বপাশের তিন রাস্তার মোড়ে অবস্থিত। যার প্রশংসা রয়েছে এলাকাবাসী, পথচারী ও দর্শনার্থীদের মুখে মুখে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রিয় কমিটির সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক এবং এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এফসিএ’র উদ্যোগে এ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে।
চত্বরটির মাঝখানে সু-বিশাল একটি পিলারে চারপাশে খোদাই করে লেখা হয়েছে আল্লাহর ৯৯টি নাম এবং চূড়ায় বড় করে লেখা হয়েছে 'আল্লাহু'।
বাসস্ট্যান্ডের পাশে চত্ত্বরটি গড়ে উঠায় উপজেলা সদর এখন আরও জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। যার প্রশংসা রয়েছে এলাকাবাসী, পথচারী ও দর্শনার্থীদের মুখে মুখে। পুরো কুমিল্লা জেলায় আল্লাহর নামে স্থাপিত এই চত্ত্বরটি সবচেয়ে সেরা চত্ত্বর এবং চত্ত্বরটি স্থানীয় সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের উত্তম কাজের একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে বলেও বিশ্বাস স্থানীয় এলাকাবাসীর।
See this video report:

Thursday, July 18, 2019

পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বেলাভূমি কুয়াকাটা


এইচ,এম,হুমায়ুন কবির কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে  ঈদুল আযহার ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় এখনই মুখরিত হয়ে উঠেছে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের বেলাভূমি সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা।
যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য চোখে পড়বে দিগন্ত জোড়া আকাশ আর সমুদ্রের রাশি রাশি নীল জল আর সমুদ্রের নীল জলের তরঙ্গায়িত ঢেউ কাঁচভাঙ্গা ঝন ঝন শব্দের মত আছরে পড়ছে কিনারায় ও উড়ে যাচ্ছে সাদা গাংচিলের দল এদিক ওদিক-মাছ শিকারের জন্য লড়াকু জেলেরা ট্রলারে ও নৌকায় ছুটে যাচ্ছে গভীর সমুদ্রে তা উপভোগ করা যায়।
 বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও ঈদুল আযহার আনন্দ উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী পরিবার পরিজন নিয়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে এসেছেন। কলাপাড়া-কুয়াকাটা নদীতে বর্তমানে তিনটি ব্রিজ হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ ভাল থাকায় এ বছর সবার্ধিক পর্যটকের আগমনে কুয়াকাটা উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। 
দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের উন্মাদনায় পুরো সৈকতে এখন আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করছে। নানা বয়সি পর্যটকদের আগমনে রাখাইন মার্কেট, ঝিনুকের দোকান, খাবারঘর, চটপটির দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেনাকাটার ধুম পরেছে। সোমবার বিকেল থেকে হোটেল মোটেলগুলোতে পর্যটকরা উঠতে শুরু করেছে। সৈকতের কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নাই। কখনো মেঘ, কখনো বৃষ্টি। এরই মাঝে সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখা, লাল কাকড়ার অবিরাম ছোটাছুটি, বালুকা বেলায় প্রিয়জনের সাথে হাঁটাহাঁটি, আর সমুদ্রের মোহনীয় গর্জন শুনতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে কুয়াকাটায় ছুটে এসেছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নানা বয়সের হাজারো মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সৈকত লাগোয়া নারিকেল বাগান, ইকোপার্ক, ইলিশপার্ক, জাতীয় উদ্যান, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, সীমা বৌদ্ধ বিহার, সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চলখ্যাত ফাতরার বনাঞ্চল, ফকির হাট, গঙ্গামতি, কাউয়ার চর, আড়াই শতবর্ষী নৌকা, লেম্বুর চর, শুঁটকিপল্লী ও কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টে শিশু-কিশোর যুবক যুবতীসহ নানা বয়সী পর্যটকদের পদচারণায় এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে। সৈকতে বেড়াতে আসা নানা বয়সী পর্যটকরা স্মার্ট ফোনে সেলফি ও ভিডিও ক্লিপস সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এদিকে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর ব্যাপক টহল অব্যাহত রয়েছে। 
ঈদের ছুটিতে যশোর থেকে ভ্রমণে আসা ব্যবসায়ী কালাম ও নুবাইবা দম্পতি জানান, সৈকতের অপরূপ দৃশ্য দেখে অসাধারণ লেগেছে। দর্শনীয় স্পটে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘুরে দেখেছি। শিক্ষার্থী  রাইকা, নওসিন ও মিশু জানান, প্রথমবারের মত কুয়াকাটায় এসেছি। খুব ভাল লেগেছে। সুযোগ পেলে প্রকৃতির টানে বার বার ছুটে আসব এখানে। অপর এক শিক্ষার্থী উম্মে কবির হাবিবা বলেন,সমুদ্রে উন্মাদনার সাথে গোছল করার ছবি তুলে এফবিতে পোস্ট করেছি। যোগাযোগ, অপরূপ সৈকতের সৌন্দার্য্য এছাড়াও একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের লোভনীয় দৃশ্য অবলোকন করা যায়। তাই বন্ধুদেরকে এফবির মাধ্যমে আহ্বান করেছি বলে ওই শিক্ষার্থী জানিয়েছেন।
রুচিসম্মত খাবার পরিবেশনার নিশ্চিয়তা নিয়ে খাবার হোটেল মালিকরা জানান, ঈদ উল আযহার ছুটিতে পর্যটকদের ব্যাপক চাপ রয়েছে। আমরাও চেষ্টা করছি পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী খাবার পরিবেশনে। 
কুয়াকাটা সমুদ্র রিসোর্ট হোটেল ব্যবস্থাপনা পরিচালক. বাংলা ভিসনের সাংবাদিক মো. মিরন জানান, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ঈদের পরদিন থেকে কুয়াকাটায় আগাম বুকিং অনুযায়ী পর্যটক রয়েছে। চলতি মাসের ১৬ তারিখ পর্যস্ত এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি ধারণা করছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের মো.খলিলুর রহমান  জানান, ঈদ উপলক্ষে পর্যটকদের ব্যাপক চাপ রয়েছে। নিরাপত্তা দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ থানা পুলিশ দর্শনীয় স্থানে টহল রয়েছে।
এ দিকে কলাপাড়া রাবনা বাঁধ নদীর মোহনায় দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রায় ঈদের দিন বিকেল থেকে দর্শনার্থীদের পদভারে গোটা বন্দর এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। প্রতিদিন শত শত লোক পায়রা সমুদ্র বন্দরে  পরিবারÑপরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন। এটিও এখন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। রাবনাবাঁধ নদীর মোহনায় দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রায় ঈদের দিনে ঘুরতে আসা বাকেরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী মোসা. নাজরাতুন নাইম রুজি বলেন, দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রা বন্দর কলাপাড়ায় হওয়ায় দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ হিসেবে আমরা গর্বিত। এখানে ঈদের ছুটিতে ঘুরতে এসে খুবই ভালোই লেগেছে। ভবিষ্যতে এখানে পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় স্থান হয়ে দাঁড়াবে।    
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজম্যান্ট কমিটির সভাপতি মো. মুনিবুর রহমান বলেন, কুয়াকাটায় আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য আইনশৃঙ্গলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 
See this video:

Saturday, July 6, 2019

বাংলাদেশ পীর আওলিয়ার দেশ


এইচ এম আব্দুর রহিম : বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশস্ত রাজপথ নিমার্ণে ইসলামের প্রভাব যে প্রকটভাবে কাজ করেছে তা সবারই জানা। ৫৯৫ খিস্টাব্দে কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজা শশাংক সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েই এ দেশের অধিবাসী বৌদ্ধদের যে কঠোর অত্যাচার চালান, বহু বৌদ্ধ ধর্মালন্বীদের নির্মমভাবে হত্যা করে নিজের ব্রাহ্মণ্যবাদী চরিত্রের মুখোশ যে খুলে দেন,তাও ইতিহাসে লেখা আছে। এমনকি এই রাজা শশাংক নিজের গাত্রদাহ মিটানোর জন্য অহিংসবাদী বৌদ্ধদের পূত বৃক্ষ বুদ্ধ গয়ার বোধি দ্রুম শেকড়শুদ্ধ উৎপাটন করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে ও কুষ্ঠাবোধ করেননি। হিন্দু রাজার এই অকথ্য অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য অনেক বৌদ্ধ পরিবার পাহাড়-জঙ্গলে দেশান্তরে পালিয়ে যান। জানা যায়, মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মর্দে মুজাহিদদের চেতনায় সমৃদ্ধ মাহাথির মুহাম্মদের পূর্ব পুরুষ এই বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে মালয়েশিয়ায় চলে যান।
 বাংলাদেশ এক সময় মাৎস্যন্যায় অবস্থায় দিন অতিবাহিত করেছে, তারপর এখানকার জনগণের মিলিত চেষ্টায় গোপাল নামে এক রাজা শাসন ক্ষমতায় এসেছেন। এখানে কিছুকাল বৌদ্ধ রাজত্বকাল প্রবহমান হলে ও আবার তা কট্টর ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজত্বে পরিণত হয় সেন রাজ বংশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। আর এই সেন রাজ বংশের অবসান ঘটে মুসলিমবীর সিপাসালার ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর দ্বারা। এখানে ইসলামের পতাকা বিজয় পতাকা উড্ডীনের মাধ্যমে। মুসলিম শাসন কায়েমের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতার ঔজ্জ্বল্যে আলোকিত হওয়ার দিশা খোঁজে পেল। সত্যিকার অর্থে পরাধীনতার নির্যাতনের নিগড় থেকে মুক্ত হলো, সে রাজাদের জারি করা বর্ণবাদ ও কৌলন্য প্রথার জাঁতাকল থেকে রেহাই পেল। যে পুরোহিতদের দ্বারা ব্যাক্যাত যে শ্রেণি বিভাজন তাতে বলা হয়ে ছিল : ব্রাহ্মণ মস্তক হচ্ছে ব্রাহ্মণ, বাহু হল ক্ষত্রিয়, ঊরু হচ্ছে বৈশ্য আর পা হচ্ছে শুদ্র। এছাড়া আর ও অনুন্নত নি¤œশ্রেণির মহিন্দু ছিল। যারা হচ্ছে হাড়ি, ডোম, চান্ডাল বা চাঁড়াল। এসব নি¤œশ্রেণির হিন্দুকে ঘৃণার চোখে দেখা হতো ও মানবতার অপমানে গুমরে মরছিল, মূল্যবোধ নানাভাবে নিগৃহিত হচ্ছিল। স্বাধীনতার চিন্তাটা উধাও হয়ে গিয়েছিল, স্বাধীনতা বলতে কোথাও কিছু ছিল না, ইসলাম এখানে মানবতার বিজয় বার্তা ঘোষণা করল। এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ইসলাম আগমনের সূচনা হয় ৬২৮ খৃস্টাব্দে সম্পাদিত হুদায়বিয়ার সন্ধির পর থেকেই, তবে আরব বণিকদের দ্বারা এ অঞ্চলে ইসলামের খবর এসে যায় । সেসব বণিকের বাণিজ্যে নৌজাহাজ সুদূর চীন-সুমাত্রা অঞ্চল পর্যন্ত যাতায়াত করতো বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ছুয়ে সেসব জাহাজ চীন-সুমাত্রা পর্যন্ত যাতায়াত করতো বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর সেসব জাহাজ দূরপ্রাচ্যে ইসলাম প্রচার করতে যেসব সাহাবে কেরাম যেতেন তাদের কেউ কেউ বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর এলাকায় সফর বিরতি দিয়ে এখানকার মানুষের সামনে ইসলামের বাণী এবং এর সৌন্দর্য তুলে ধরতেন। তারা বোধকরি বাংলাদেশের উপকূলীয় বন্দর ছাড়া ভেতরে প্রবেশের মওকা পাননি সময়ের অভাবে। কারণ তাদের গন্তব্যস্থল ছিল দূরপ্রাচ্য। তখন চীন দেশের শিক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের গন্তব্য স্থল ছিল দূরপ্রাচ্য। তখন চীন দেশের শিক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের জন্য জগৎ জোড়া খ্যাতি ছিল। সেসব সাহাবায়ে কেরামের মাযার শরীফ আজও চীনের ক্যান্টন নগরীর ম্যাসেঞ্জার মসজিদ প্রাঙ্গণে যতেœর সাথে সংরক্ষিত আছে। বাংলার স্বাধীন সুলতান গ্যাস উদ্দীন আযম শাহের ইন্তিকালের পরে সুলতানের অমাত্য দিনাজপুরের ভাতুড়ির জমিদার বংশনারায়ণ গনেশ বাঙলার মসনদ দখল করলে পীরে কামিল হযরত নুর কুতবুল আলম রহমাতুল্লাহি আলায়হি এই অত্যাচারী গনেশকে উৎখাত করার জন্য জৌনপুরের শাসনকর্তা ইব্রাহিম শরকীকে লেখেন : প্রায় তিনশ’ বছর হয়েছে বাঙ্গালার ইসলামের শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি এখানে ঈমানকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, সত্য-সুন্দরের কালো থাবা এ দেশটাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। দেশ জুড়ে আঁধার নেমে এসেছে। মুসলিমদের জানমাল, ইজ্জত আব্রুর উপর আঘাত এসেছে। ইসলামের আলোক প্রতীক এখানকার মানুষের যেভাবে সত্য পথের দিশা দিয়ে আসছিল আজ তা হুমকির মুখে। এই মহা দুর্দিনে আপনি কেমন করে নিবিঘেœ মসনদে আসিন থাকতে পারেন? আপনি আপনার সুখের মসনদ থেকে উঠে আসুন। দ্বীনকে সংরক্ষণের জন্য অতিসত্বর এগিয়ে আসুন। আপনার তরবারী কোষবদ্ধ না রেখে কুফরের প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখা নির্বাপণে আপনি জোর কদমে অগ্রসর হন। আপনি তো জানেন বাঙ্গালা হচ্ছে পৃথিবীতে বেহেশত। কিন্তু সেই বেহেশতে দুনিয়ার কালো ছায়ায় ঢেকে ফেলেছে। এখানে অত্যাচার-জুলুম-নিপীড়ন আর হত্যাকা-ের যে কারখানা চলছে তা দমন করতে আপনি আসুন আরামের মসনদে আর এক পলক ও বসে থাকবেন না। সেই দীর্ঘ ও জ্বালাময়ী পত্র পেয়ে ইবরাহিম শরীকী কোনরূপ কালক্ষেপন না করে বিরাট বাহিনী নিয়ে বাঙ্গালার বিপন্ন স্বাধীনতািেক বিপন্ন অবস্থা থেকে উদ্ধার করার জন্য এগিয়ে এলেন। এখবর শুনে সমুহ বিপদের আশঙ্কা করে জানে মরার ভয়ে কংশনারায়ন গনেশ হযরত নুরকুতবুর আলম (রা:) এর দরবারে এসে ক্ষমা চাইল এবং তার পুত্র যদুকে মুসলিম করার জন্য অনুরোধ করল। হযরত নুর কুরতুব আলম যদুকে ইসলামের রায়’আত করলেন এবং তার নাম রাখরেন জালালুদ্দিন মুহাম্মদ শাহ। এ খবর পেয়ে ইবরাহিম শাহ জৌনপুরে ফিরে গেলেন বাঙ্গালার ৫৫৬ বছরের মুসলিম সুশাসনের মাঝখানে মাত্র ৩-৪ বছর বর্ণ হিন্দু শাসন একটি দু:স্বপ্নের মত কিংবা একটি ছন্দ বদ্ধ সুন্দর দীর্ঘ কবিতার একটি মাত্র পংক্তিতে একটি মাত্রার হেরফের হওয়ার মতো সামান্য ছন্দপতনের মত। ইতিহাসে রাজা গনেশ ঘৃনিত ব্যক্তি চি‎ি‎‎হ্নত ব্যক্তি হিসেবে রয়েছে ।স্বাধীন বাংলার দিকে নজর পড়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির । তারা হিন্দু কয়েকজন প্রভাবশালী অমাত্য ও জগৎশেঠদের সাথে আতাত করে এবং মসনদের লোভ দেখিয়ে মীর জাফর কে দলে ভিড়িয়ে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুন পলাশির প্রান্তরে এক মহা প্রহসন মুলক যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজুদৌল্লার কাছ থেকে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য হরন করে নেয়। স্বাধীন বাঙ্গালা,শাহে বাঙ্গালা,সুলতানে বাঙ্গালা পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ হয়। নানা প্রকার দমন নীতি প্রয়োগ করে মুসলিমদের উপর নির্যাতন চালাতে থাকে । কিন্তু মুসলমানদের তারা দমাতে পারেনি। ইসলামী শিক্ষায় উজ্জীবিত মীর কাসিম,সুফী দরবেশ কফীর মজনুশাহ বিজ্ঞ আলিম হাজী শরীয়তউল্লাহ মর্দে মুজাহিদ সৈয়দ সিনার আলী তিতুমীরের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। জিহাদের ডাক দিয়েছেন,স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ নির্মাণ করতে অগ্রসার হয়েছেন। ১৮৫৭ খিস্টাব্দে সিপাহী জনতার মহা বিপ্লবের নেতৃত্বে সুফী দরবেশ আলেম ওলামা থাকার কথা সর্বজন বিদিত। পীর মহসিন উদ্দীন দুদু মিয়া বন্ধী হয়েছেন। তার পরের ইতিহাস নতুন কৌশল সংগ্রামের ইতিহাস। হাজী শরিয়ত উল্লাহ এ দেশ কে হাজী হারুল হরব ঘোষণা করে জিহাদের যে ডাক দিয়ে ছিলেন । এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতার লড়াইয়ে পড়ার স্পৃহা জাগিয়ে ছিল ঠিক একই মাত্রায় কৌশল ভিন্নতা এনে মাওলানা কেরামত আরী (রহ:)এ দেশকে হারুল আমান বা নিরাপদ ভুমি ঘোষণা করে মুসলিমদের স্বার্থ উদ্ধারের পথ ঘোষণা করে দিলেন। নবাব আব্দুল লতিফ তার দোয়া গ্রহন করে যে শিক্ষা আন্দোলনের সুচনা করলেন তাই পথ পরিক্রমে ১৯০৬ খিস্টাব্দের ডিসেন্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে মুসলিমদের প্রথম রাজনৈতিক দল গঠিত হল। এই সম্মেলনের আহবায়ক ছিলেন নবাব সলিমুল্লাহ বাহাদুর ভারতের বিভিন্ন এলাকার এজেন্ডার ভঙ্গভঙ্গ বিষয় রাখার প্রস্তাব দিয়ে পত্র পাঠালেন যাতে বললেন, মুসলিমদের কোন রাজনৈতিক সংগঠন না থাকায় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে অক্টোবর মাসে যে বঙ্গভঙ্গ হয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল পুর্ববাংলা প্রদেশ গঠিত হয়েছে । ঢাকা তার রাজধানী হয়েছে ।তার বিরুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক দল কংগ্রেস আন্দোলন করেছে। কিন্ত আমাদের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না।মাওলানা মুহাম্মদ আলী জওহর এজেন্ডায় এ বিষয়টি লিখে পত্র দিলেন। আমরা লক্ষ্য করি সব আন্দোলনে ইসলামের প্রভাব সক্রীয় ছিল।মাওলানা ভাসানি ১৯৫৭ খ্রীস্টাব্দে ৭ই ফেব্রƒয়ারি কাকমারী সম্মেলনে পাকিস্থান কে বিদায় জানিয়ে আচ্ছালামু আলাইকুম বলা ১৯৭১ সালের শেখ মুজিবের ভাষনে ইনসাল্লাহ বলা,৯ইমার্চ পল্টন ময়দানে ভাষানীর লাকুম দিনুকুম ওলিয়াদীন বলা,মেজর জিয়ার সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা ’৭১এর মহান মুক্তি যুদ্ধকালে প্রবাস থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন ইশতেহার ও নিদের্শাবলীতে আল্লাহ আমাদের সহায়,নাসরুম মিনাল্লাহী ফাতহুন কারীব প্রভৃতি লিপিবদ্ধ করণের মাধ্যমে ইসলামের বৈপ্লবিক চেতনার বিকাশ ঘটতে দেখা যায়।১৯৭১ সালের ১৪ই এপ্রিল প্রকাশিত বাংলাদেশ সরকারের এব নির্দেশনামুলক ইশতিহারের শীর্ষে লেখা ছিল আল্লাহ আকবার এবং শেষ করা হয়ে ছিল আল্লাহর সাহায্য বিজয় নিকটবর্তী। এসব প্রেক্ষিতে বলা যায় চার লাখ মসজিদের এই দেশ, শত শত আল্লাহর ওলির স্মৃতি ধন্য এই দেশ তার স্বাধীন সত্তা মুখ্যত লাভ করেছে ইসলামের প্রভাবে । মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বেতারে গাওয়া হত :ওলি আল্লাহর বাংলাদেশ শহীদ গাজীর বাংলাদেশ, রহম করো রহম করো আল্লাহ, রহম করো আল্লাহ ।
লেখক :সাংবাদিক ।

Thursday, May 30, 2019

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী গম্বুজ এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনার বিশিষ্ট সুন্দর মসজিদ হচ্ছে টাঙ্গাইলে


২০১ গম্বুজ মসজিদ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী গম্বুজ এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনার বিশিষ্ট মসজিদ। এই মসজিদের নকশা করা হয়েছে ২০১টি গম্বুজ ও ৯টি মিনার দিয়ে সজ্জিত একটি পূর্নাঙ্গ মসজিদ কমপ্লেক্স হিসেবে। মসজিদটি এখনো নির্মাণাধীন। ২০১ গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত।


২০১৩ সালের জানুয়ারি এই মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মসজিদটি মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে। এ কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের মা রিজিয়া খাতুন। মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হবে আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্মাণ কাজ এখনো চলছে। নির্মাণ শেষ হলে কাবার ইমাম এসে নামাযের ইমামতি করে মসজিদটি উদ্বোধন করবেন।
পৃথিবীর ইতিহাসে কখনো এত সংখ্যক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ তৈরী হয়নি।অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের ছাদে ৮১ ফুট উচ্চতার একটি গম্বুজ রয়েছে। এই বড় গম্বুজের চারপাশে ছোট ছোট গম্বুজ আছে ২০০টি। এদের প্রত্যেকের উচ্চতা ১৭ ফুট। মূল মসজিদের চার কোণায় রয়েছে ৪টি মিনার। এদের প্রত্যেকের উচ্চতা ১০১ ফুট। পাশাপশি আরও চারটি মিনার আছে ৮১ ফুট উচ্চতার। সবচেয়ে উঁচু মিনারটি মসজিদের পাশেই অবস্থিত। এর উচ্চতা ৪৫১ ফুট। ১৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪৪ ফুট প্রস্থের দ্বিতল এই মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।
মসজিদের দেয়ালের টাইলসে অংকিত রয়েছে পূর্ণ পবিত্র কোরআন শরিফ। যে কেউ বসে বা দাঁড়িয়ে মসজিদের দেয়ালে অংকিত কোরআন শরিফ পড়তে পারবেন। মসজিদের প্রধান দরজা নির্মাণে ব্যবহার করা হবে ৫০ মণ পিতল। আজান দেওয়ার জন্য মসজিদের সবচেয়ে উঁচু মিনারে বানানো হবে। মসজিদটি সম্পুর্ন শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও এতে সহস্রাধিক বৈদ্যুতিক পাখা যুক্ত করা হবে।
See this video:

Tuesday, May 28, 2019

দেশের প্রথম কুরআন ভাস্কর্য:দূর-দূরান্ত থেকে আগত কুরআন প্রেমিকদের ঢল

 বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা পৌরসভায় দেশের প্রথম কুরআন ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভাস্কর্যটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
ভাস্কর্যটি তৈরি করেছেন ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্র ভাস্কর কামরুল হাসান শিপন।কসবা পৌরসভার মেয়র এমরানুদ্দীন জুয়েলের তত্ত্বাবধানে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছে। সৌদি আরবের জেদ্দা বিমানবন্দর থেকে নেমে পবিত্র নগরী মক্কার প্রবেশদ্বারে কুরআনের আদলে তৈরি যে বিশাল তোরণ রয়েছে। সে তোরণের ডিজাইনের আলোকেই কসবা উপজেলা সদরের ব্যস্ততম কদমতলা মোড়ে তৈরি করা হয়েছে এ ভাস্কর্যটি। ভাস্কর্যের উচ্চতা ১৬ ফিট এবং প্রস্থ ৮ ফিট। ভাস্কর্য নির্মাণকারী ঠিকাদার রতন সরকার জানান, এটি তৈরিতে ২ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রথম কুরআনের ভাস্কর্যটি দেখতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড় করছে স্থানীয় ও দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আগত কুরআন প্রেমিক জনতা। কুরআনের আদলে তৈরি এ ভাস্কর্যটি যেন কুরআন প্রেমিক জনতার হৃদয়ের তাজমহল। ব্যতিক্রমধর্মী এ অসামান্য ভাস্কর্য নির্মাণের সাথে জড়িতরা জেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। দেশের আলেম সমাজও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। পাশাপাশি কুরআনের এ ভাস্কর্যের প্রতি যেন অবমাননা না হয় সেদিকেও নজর রাখার বিশেষ আহ্বান জানিয়েছে আলেম সমাজ।
See this video:

Monday, March 4, 2019

মুক্তিযুদ্ধোত্তর জাতীয় সংহতির চেষ্টা ও বিভেদের প্রয়াস - আবুল আসাদ

    

        মুক্তিযুদ্ধোত্তর শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার এক পর্যায়ে জাতীয় সংহতি ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠার শক্তিশালী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা উপলক্ষে ‘বাঙালীরা ক্ষমা করতে জানে’-কথা দিয়েই তার এই উদ্যোগের যাত্রা শুরু।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, সেটা মানব ইতিহাসের চলমান সংস্কৃতির একটা অংশ। আজকের আধুনিক বিশ্ব যাকে বলা হয়, সেখানেও রয়েছে এর উজ্জ্বল অনেক দৃষ্টান্ত। ভিয়েতনামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক অন্যায় যুদ্ধে হাজার হাজার ভিয়েতনামীকেই শুধু হত্যা করা হয়নি, বর্বর বোমা বর্ষণে হাজারো জনপদ, ফসলের মাঠ, বিলিয়ন বিলিয়ন টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে তাদের গলাগলি ধরার ক্ষেত্রে ক্ষমা চাওয়ার দাবী বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সবচেয়ে বড় আত্মঘাতি ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর দক্ষিণের মধ্যে এই গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়, অন্য অর্থে বলা যায় এই গৃহযুদ্ধ হয় ঐক্যপন্থী ও বিভেদ পন্থীদের মধ্যে। এই যুদ্ধে ৬ লাখ ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। আহত হওয়ার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৬ হাজার। এই যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐক্যপন্থীরা বিজয়ী হয়, পরাজিত হয় দক্ষিণের বিচ্ছিন্নতাবাদিরা। যুদ্ধকালে যত রক্তই ঝরুক, দক্ষিণের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যে দিন যুদ্ধ শেষ হয়, তারপর আর এক ফোটাও রক্ত ঝরেনি। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে, বিচার তো দূরে, ফাঁসি তো আরও দূরে, কেউ অভিযুক্তই হয়নি। যুদ্ধ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ঘোষণা করেন, “To get the deluded men of the rebel armies disarmed and back to their homes ......... Let them once surrender and reach their homes, they wan’t take arms again.... Let them all go, officers and all, I want submission, and no more bloodshed.... I want no one punished, treat them liberally all around” যার সারকথা হলো: বিদ্রোহী সৈনিক যারা অস্ত্র ত্যাগ করবে, আত্মসমর্পণ করবে এবং বাড়িতে ফিরে যাবে, আর অস্ত্র হাতে নেবে না, তাদের অফিসারসহ সকলকে ছেড়ে দাও। আমি আনুগত্য চাই, আর কোনো রক্তপাত চাই না। চাই না কেউ শাস্তি পাক। সর্বত্র সকলকে উদারভাবে দেখতে হবে।’ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের এ ঘোষণা অক্ষরে প্রতিপালিত হয়েছে। ঐক্যপন্থী বিভেদপন্থী সকলেই যুদ্ধের পর একে অপরের গলা জড়িয়ে ধরেছে। আজও গলা জড়িয়ে ধরেই রয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশে তা হয়নি। স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান বাহিনীর যুদ্ধ অপরাধীদের ছেড়ে দিলেও, যাদের যুদ্ধ অপরাধী কিংবা মানবতা বিরোধী অপরাধীর তালিকায় নাম ছিল না, তাদের জন্যে নতুন আইন করে, নতুন ট্রাইবুন্যাল করে, বিচারের কাঠ গড়ায় তুলে ফাঁসি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৫ দশক পর। কেউ কেউ অবশ্য বলেন এই বিচারে বাইরের হাত রয়েছে। সেই ‘বাহির’টা যদি ভারত হয়, তাহলে ব্যাপারটা বিস্ময়কর হয়ে দাড়ায়। কারণ ভারতের কারণেই বা ভারত চেয়েছিল বলেই ১৯২ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী সৈন্যের বিচার বাংলাদেশ করতে পারেনি বিচারের জন্যে আইন তৈরি ও ট্রাইবুন্যাল গঠন করা সত্ত্বেও। ভারত তার স্বার্থেই তখন ওটা করেছিল। কারণ ভারত চায়নি যে, পাকিস্তানী সৈন্যের ১৯২ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হোক। এর পিছনে রহস্য ছিল, সিমলা চুক্তি (২ জুলাই ১৯৭২) এবং দিল্লী এগ্রিমেন্ট (২৮ আগস্ট ১৯৭৩) অনুসারে ভারত ও পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তার মধ্যে বাংলাদেশে ধৃত পরে ভারতে আশ্রয়ে যাওয়া পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীরাও শামিল ছিল। এর বড় প্রমাণ হলো, দিল্লী এগ্রিমেন্ট ধারা-৩ এর ৩ ও ৫ উপধারায় যেখানে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে আটকে পড়া মানুষ বিনিময়ের কথা আছে। সেখানে যুদ্ধবন্দীর উল্লেখ নেই। পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের উল্লেখ আছে ধারা-৩ এর উপধারা ১ এবং ২-এ, কিন্তু এই বিনিময় সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ভূমিকার কোন উল্লেখ নেই। অন্যদিকে উপধারা ৬-এ ভারত-প্রতিশ্রুত পাকিস্তানী বন্দী বিনিময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীর বিচার না করার বাংলাদেশের সম্মতির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এ সম্মতি বাংলাদেশ কখন দিল সে কথার কোন উল্লেখ নেই। উল্লেখ্য, দিল্লী এগ্রিমেন্টটি সিমলা চুক্তির মতই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর পরিষ্কার অর্থ হলো, বাংলাদেশের মতামতের তোয়াক্কা না করেই ভারত পাকিস্তানের সাথে পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের চুক্তি করেছিল। যুদ্ধাপরাধীদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে এইভাবে ভারতের ইচ্ছাটি প্রধান নিয়ামক হিসাবে কাজ করেছে।
শেখ মুজিব সরকার ভারতীয় চাপে ১৯৫ জন পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীসহ ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দীকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হবার পর স্বাভাবিকভাবেই দেশীয় কলাবরেটরদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন। অবশ্য স্বাধীনতা উত্তর শেখ মুজিবের সরকার কিন্তু হঠাৎ করেই কলাবরেটরদের ক্ষমা ঘোষণা করেননি। কেউ কেউ মনে করেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী ও যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানী সৈন্যদেরই যখন অবস্থার কারণে বা অবস্থার প্রয়োজনে নিঃশর্তে ছেড়ে দিতে হলো, তখন ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় দেশের যারা পাকিস্তানী সৈন্যের সহায়তা করেছেন বা তাদের সহযোগী হয়েছেন, তাদের শাস্তি দেয়ার যৌক্তিকতা খুঁজে পাননি বলেই বাংলাদেশের তদানীন্তন সরকার প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান কলাবরেটরদের সাধারণ ক্ষমা করেন। ঘটনা কিন্তু মাত্র এটুকুই নয়। কলাবরেটরদের ক্ষমা ঘোষণা মাত্র এ ধরনের কোন চিন্তা থেকে হয়নি। সাধারণ দাবি ও সাধারণ জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা হয়। ১৯৭২ সালের মার্চ থেকেই আবুল মনসুর আহমদ, আবুল ফজলের মত দেশের শীর্ষ বুদ্ধিজীবীসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের তরফ থেকে কলাবরেটরদের ছেড়ে দেবার আবেদন ও দাবি উত্থিত হতে থাকে। এককালীন আওয়ামী লীগ নেতা এবং সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী একজন সর্বজনমান্য নেতা জনাব আতাউর  রহমান খান এই সময় এক বিবৃতিতে বলেন, “জাতি পুনর্গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সমাধা না করে সরকার সারা দেশে দালাল ও কল্পিত শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় রত আছেন। মনে হচ্ছে, এটাই যেন সরকারের সব চাইতে প্রধান কর্তব্য। যারা ভিন্ন রাজনৈতিক মত পোষণ করতেন, অথচ খুন, অগ্নিসংযোগ, নারী ধর্ষণ, কিংবা লুটপাটের মতো জঘন্য কার্যে প্রবৃত্ত হননি, তাদের উপর গুরুতর শাস্তি আরোপের মাধ্যমে দেশের কোন উপকার হবে না। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের আগে যারা বেপরোয়াভাবে বাংলাদেশ আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন, তাদের অনেকে সরকারের উচ্চপদে আসীন হয়েছেন, অথচ মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সমর্থন থাকা সত্ত্বেও যারা পাক বাহিনীকে সমর্থন দান করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে কিংবা শরণার্থী হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। এই আইন জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে ফেলেছে এবং এই আইনের মাধ্যমে বিচার একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিচার ও সকল বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার সুপারিশ করছি।”
এই ধরনের বিভিন্ন বিবৃতি ও দাবির প্রেক্ষিতে এবং দেশের প্রকৃত পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর শেখ মুজিবের সরকার সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে নিম্নোক্ত ‘প্রেস নোট’ প্রচার করেন :
“সরকার ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশে (১৯৭২) সালের রাষ্ট্রপতির ৮ নং আদেশ মোতাবেক অপরাধের দায়ে দণ্ডিত অথবা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষমা প্রদর্শনের প্রশ্নটি পুনরায় বিবেচনার পর ঘোষণা করিতেছেন :
১. এই আদেশের ২ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত (ক) উক্ত আদেশ মোতাবেক যে কোন অপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের দণ্ড ১৮৮৮ সালের ফৌজদারী দণ্ডবিধির ৪০১ ধারা মোতাবেক মওকুফ করা হইল এবং উক্ত আদেশ ব্যতীত অপর কোন আইন বলে বিচার্য ও শাস্তিযোগ্য কোন অপরাধের সহিত জড়িত থাকার জন্য গ্রেফতারী পরওয়ানা না থাকিলে সেইসব ব্যক্তিকে কারাগার হইতে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হইবে। (খ) উক্ত আদেশ বলে যে সকল ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট অথবা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা বিচারাধীন রহিয়াছে উল্লিখিত ম্যাজিস্ট্রেট অথবা ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে সে সব প্রত্যাহার করিতে হইবে এবং এই আদেশ ব্যতীত অপর কোন আইনে বিচার্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধের হুলিয়া না থাকিলে তাদেরকে সরকারি হেফাজত হইতে মুক্তি প্রদান করিতে হইবে। (গ) এই আদেশ বলে বিচার্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধের দায়ে যে সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হইয়াছে অথবা তদন্ত চলিতেছে সেই সব মামলা ও তদন্ত কার্য বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং সব গ্রেফতারী পরওয়ানা অথবা আদালতের হাজির হওয়ার নির্দেশ এবং এই আদেশ বলে কোন ব্যক্তির ব্যাপারে তাহার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ থাকিলে ইহা বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং অপর কোন আইনে বিচার্য ও শাস্তিযোগ্য না হইলে তাহাদেরকে সরকারি হেফাজত হইতে মুক্তি প্রদান করিতে হইবে; তবে কোন ব্যক্তি অনুপস্থিতিতে দণ্ডিত হইয়া থাকিলে অথবা কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরওয়ানা থাকিলে তাদের ক্ষেত্রে উপযুক্ত আদালতে হাজির হইয়া ক্ষমা ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা পর্যন্ত এই আদেশ কার্যকর থাকিবে।
২. এই আদেশ বলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (হত্যা), ৩০৪ ধারা (হত্যার চেষ্টা কিন্তু হত্যার শামিল নয়), ৩৬৭ ধারা (ধর্ষণ), ৪৩৫ ধারা (অগ্নিসংযোগ অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য দ্বারা অপকর্ম সাধন), ৪৩৬ ধারা (ঘরবাড়ি ধ্বংসের অভিপ্রায়ে অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য দ্বারা অপকর্ম সাধন) এবং ৪৩৮ ধারা (জাহাজে অগ্নিসংযোগ অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য দ্বারা অপকর্ম সাধন) মোতাবেক অভিযুক্ত ও দ-িত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ১ নং অনুচ্ছেদ মোতাবেক ক্ষমা প্রদর্শন প্রযোজ্য হইবে না।
মুজিব সরকারের এই ক্ষমা ঘোষণা সর্বমহল থেকে অভিনন্দিত হয়। মুজিব সরকারের প্রবল বিরোধী এবং বাম আন্দোলনের গুরু বলে পরিচিত, ভাসানী ন্যাপের সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তার এবং দলের সম্পাদক মণ্ডলীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ন্যাপ বহু আগে থেকেই নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তি দাবি করে আসছে।’ বিবৃতিতে বাংলাদেশ দালাল আইন সংক্রান্ত আইনের ৮ নং ও ৫০ নং ধারা বাতিল করার দাবি জানান। তিনি ১৫ ডিসেম্বর আরেক বিবৃতিতে বলেন, ‘ক্ষমা চাই, সমানাধিকার চাই। রাষ্ট্রপতি আদেশের ৫০ ও ৮ ধারা বাতিল চাই।’ বাংলাদেশ  জাতীয় লীগের সভাপতি জনাব আতাউর রহমান খান তার বিবৃতিতে বলেন, ‘আরো আগেই দেশের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল। এর ফলে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে এবং মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ দেশ গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করে বিশ্বস্ততার প্রমাণ দেবেন।’ দেশের প্রবীণ রাজনীতিক ও চিন্তাবিদ জনাব আবুল হাশিম প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারকে অভিনন্দিত করে বলেন, ‘জনগণের ভাগ্যকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্যে সরকার সঠিক পন্থাই বেছে নিয়েছেন। গণতন্ত্রের এ উদ্যম বজায় থাকলে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা রয়েছে।’ সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা এবং স্বনামধন্য কলামিস্ট ও লেখক আবুল মনসুর আহমদ (স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের পিতা) বলেন, ‘আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায় সরকার যখন একবার অনুকম্পার দরজা খুলিয়াছেন, ষোল হাজারের মতো বন্দীকে মাফ করিয়া দিয়েছেন, তখন বাকী সবার ক্ষেত্রেও তেমনি উদারতা প্রদর্শন করুন। অন্যথায় দুই বছর পরে আজ  যেমন চারশ লোককে প্রমাণের অভাবে মুক্তি দিতে হলো, বার বছর পর (৩৭ হাজার দালালদের বিচারে ১২ বছর লাগবে) মানে গ্রেফতারের সময় হতে ১৪ বছর পর আরো অনেক লোককে তেমনি মুক্তি দিতে হইতে পারে।’ (ইত্তেফাক, ২ নভেম্বর, ১৯৭৩)। তদানীন্তন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শেখ মুজিব সরকারের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার সিদ্ধান্তকে অভিনন্দিত করে বিবৃতি দেয়।
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মত ১৯৭৬ সালে কলাবরেটর আইনের বাতিলও ছিল অবস্থার একটা স্বাভাবিক পরিণতি। ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছিল ১ লাখ লোককে এবং ৩৭৪৭১ জন দালালকে অভিযুক্ত করা হয়। তাদের বিচারের জন্য ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এই ৭৩টি ট্রাইব্যুনালে ২২ মাসে ২৮৪৮টি মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হয়। এদের মধ্যে দণ্ডিত হয় মাত্র ৭৫২ জন, তাও প্রায় সব ক্ষেত্রেই ছোট খাটো অপরাধের জন্য। অবশিষ্ট ২০৬ জন খালাস পেয়ে যান। এই পটভূমিতে ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর সাধারণ ক্ষমা ঘোষিত হয়। সাধারণ ক্ষমার অধীনে ১৯৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছাড়া পেয়ে যায় ৩০ হাজার বন্দী। এখানে উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের বিভিন্ন অপরাধ ও অভিয়োগে স্বাধীনতা উত্তরকালের যাদের বন্দী রাখা হয়, বিচার করা হয়, শাস্তি দেয়া হয়, তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী নাম করার মতো কেউ ছিলনা। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা অভিয়োগ দায়ের করা ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ দশকের মাথায় জামায়াত নেতৃবৃন্দের অপরাধ খুঁজে পাওয়া কোনো যুক্তিতেই আসে না।
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলেও হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ এই চার অপরাধের  বিচার, গ্রেফতার ও শাস্তি বিধানের আইনী বিধান বহাল রাখা হয়। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার ১৯৭৬ সালের দালাল আইন বাতিল হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ দুই বছর এক মাস সময়ে উক্ত চার অপরাধের অভিযোগে একটিও মামলা দায়ের হয়নি। এই অবস্থার পটভূমিতেই ১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে দালাল আইন বাতিল হয়ে যায়।
এখানে একটা বড় প্রশ্ন হলো ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর হতে ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে কোন মামলা দায়ের হলো না কেন? এর একটি জবাব হলো ঐ চারটি অপরাধের ক্ষেত্রে দায়েরযোগ্য কারও কোনো অভিযোগ ছিল না। এই জবাবটি অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তব নয়। কারণ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সংঘাতে দায়েরযোগ্য ঐ ধরনের কোন অপরাধ একেবারেই ছিল না তা হতে পারে না। অন্য আরেকটি জবাব এই হতে পারে যে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিও ছিল, অপরাধও ছিল কিন্তু সংশ্লিষ্ট সংক্ষুব্ধরা অভিযোগ বা মামলা দায়েরে আগ্রহী হয়নি। এটাই অনেক ক্ষেত্রের বাস্তবতা বলে ধরে নেয়া যায়। কেন আগ্রহী হয়নি? কেন সংক্ষুব্ধ মানুষ অপরাধীর শাস্তি বিধানের জন্য মামলা দায়েরে এগিয়ে যায়নি? খুব বড় একটা প্রশ্ন এটা। এক কথায় এর কোন জবাব মিলবে না। এই প্রশ্নের জবাব প্রকৃতপক্ষে সন্ধান করতে হবে বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো এবং বাংলাদেশের মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সমন্বয় চিন্তার মধ্যে। এই ক্ষেত্রে এই সময়ের সুন্দর একটা সমাজ বিশ্লেষণ দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ অধ্যাপক ড. তারেক মুহাম্মদ তওফীকুর রহমান তার “বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলেম সমাজ : ভূমিকা ও প্রভাব (১৯৭২-২০০১)” শীর্ষক গ্রন্থে। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার পর অবস্থার উত্তাপ ঠাণ্ডা হয়ে আসার সাথে সাথে দালাল আইনে ধৃত এবং বিচারের সম্মুখীন ব্যক্তিদের বিচার সংক্রান্ত বিষয়টি সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও জটিলতার সৃষ্টি করে চলছিল অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে-এই সামাজিক চিত্রটি এক কথায় সামনে আনার পর তিনি লিখেছেন :
“আপাত: পরস্পর বিচ্ছিন্ন ও শত্রুতার নেপথ্যে বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজ হলো ‘কমপ্যাক্ট সোসাইটি।’ আবহমান কাল থেকে শাশ্বত গ্রাম্য সালিশ বিচার ব্যবস্থার প্রচলনে গ্রামীণ সমাজে যে ভারসাম্য বর্তমান ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় তা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তা নতুন আঙ্গিকে ও নেতৃত্বে স্থিতিশীল হয়ে আসতে শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধের উত্তেজনা কেটে যেতে থাকে এবং মুক্তিযোদ্ধাগণও সমাজের রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হতে থাকেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তীতে উত্তেজনা প্রশমনে রক্তের বন্ধন, আত্মীয় সূত্রতা এবং সমাজ গোষ্ঠীর বন্ধনে অপরাধকারী দালালদের আশ্রয় দেবার ব্যাপক প্রবণতা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে। ‘ক্ষমাই মহত্বের লক্ষণ’ এই মহানুভবতার চিরন্তনী আবহে লালিত বাংলার মানস গঠন শাস্তি বিধানের  পরিবর্তে সামাজিক সালিশ ও সমঝোতার পথেই অগ্রসর হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় একই পরিবারের পিতা শান্তি কমিটির সদস্য হয়েছে, অপরদিকে পুত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। পিতা ও পুত্রের এই বিপরীত অবস্থান দীর্ঘদিন আক্রোশ মনোভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধা পুত্র দালাল পিতাকে বাঁচানোর জন্য তদবির শুরু করতে কুণ্ঠিত হয়নি। অনেক দালাল এমনও ছিল যে, তারা গোপনে মুক্তিবাহিনীকে আশ্রয় দিয়েছে, খাদ্য দিয়েছে এবং প্রয়োজনমত নিরাপত্তা দিয়েছে। দালালীর অভিযোগে অভিযুক্ত ঐ ব্যক্তিটি পরবর্তীকালে ঐসব মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় প্রার্থনা করেছে এবং আশ্রয় পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত অবস্থায় বা ভিন্নভাবে যাই হোক না কেন, মুক্তিযোদ্ধাগণ প্রায় দুই হাতে ধৃত ও অভিযুক্ত দালালদের ছেড়ে দেবার সুপারিশ করতে থাকে। যা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর দপ্তরকে পর্যন্ত প্রভাবিত করে তোলে। গ্রাম্য সালিশ, দেনদরবার, তদবির হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান ইত্যকার কারণে পরবর্তীকালে কিছু ব্যতিক্রম ব্যতীত বাদীপক্ষগণ মামলা চালাতে উদ্যোগ গ্রহণ হতে পিছিয়ে আসে, এমনকি মামলার ন্যূনতম সাক্ষ্য জোগাড় করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।”
এটাই ঘটনা। সামাজিক রাজনৈতিকসহ নানা ধরনের সম্পর্ক ও আত্মীয়তার বাঁধন স্বাধীনতা যুদ্ধোত্তর পক্ষ-বিপক্ষকে সমন্বয় ও সমঝোতার দিকে নিয়ে যায়। সৈয়দ আবুল মকসুদ ‘প্রথম আলো’তে তার ‘সহজিয়া কড়চায়’ এই কথাই লিখেছেন এইভাবে, “কোন যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দালালদের বিচার না হওয়ার মূল কারণ, অনেক মন্ত্রী, সাংসদ নেতা ও বীর উত্তম মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানীদের সহযোগী ছিল। তাদের বাঁচাতে গিয়ে সকলকেই বাঁচিয়ে দেয়া হয়। (প্রথম আলো, ১৩ নভেম্বর, ২০০৭)। শুধু বাঁচিয়ে দেয়া নয়, দীর্ঘ দুই বছর এক মাস সময় পর্যন্ত দালাল আইন বহাল তবিয়তে থাকলেও খুন, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এই চার অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের না হবার এটাও একটা কারণ।  আরেকটা কারণ হলো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান ছিল কিংবা পাকিস্তান বাহিনীর সহায়ক হিসেবে রাজাকার এর মত যে সব বাহিনী কাজ করেছে, যুদ্ধাপরাধী বা অপরাধী শুধুমাত্র তাদের মধ্যেই ছিল না অন্যান্য দল ও গ্রুপের মধ্যেও যুদ্ধাপরাধী বা অপরাধী ছিল। এ বিষয়ে সৈয়দ আবুল মকসুদ লিখেছেন : ‘এখনকার পত্রিকা পড়লে মনে হয় শুধু মুসলিম লীগ, জামায়াত বা নেজামে ইসলামীর লোকেরাই পাকিস্তানীদের দালাল ছিল। বস্তুত সবশ্রেণী ও গোষ্ঠীর মধ্যেই পাকিস্তানীদের সহযোগী ছিল। আব্দুল হক তার কম্যুনিস্ট পার্টির নামের সাথে বাংলাদেশ হবার পরও ‘পূর্ব পাকিস্তান’ রেখে দেন। অত্যন্ত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ পাকিস্তানীদের সহযোগিতা করছেন। (প্রথম আলো, ১৩ নভেম্বর, ২০০৭)। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন গ্রুপের পরস্পরের মধ্যেও যুদ্ধাপরাধ বা অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। বিভিন্ন বইয়ের বিভিন্ন বিবরণীতে এক দৃষ্টান্ত আছে। সম্প্রতি এটিএন-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে মেজর জেনারেল (অব.) মইনুল হোসেন চৌধুরী এক দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধী বলতে আমরা জানি একটা ইসলামী দলকে বোঝানো হচ্ছে যারা ডানপন্থী। আমি বলবো যুদ্ধাপরাধীতো সরকারী কর্মচারীও ছিল। আমি আপনাকে প্রমাণ দিতে পারি। কারণ আমি প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। একজন বাঙালী ক্যাপ্টেন মারা যায় সরাইলে। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে হত্যা করে। কিন্তু ঐ ক্যাপ্টেনকে পরে শহীদ উল্লেখ করা হয়। সুতরাং যখন যুদ্ধাপরাধী বলবেন তখন সবাইকে বলতে হবে।’
সবাইকে যুদ্ধাপরাধী বলতে হচ্ছে বলেই স্বাধীনতা উত্তরকালে অবশেষে বিষয়টাকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে এগিয়ে যায়নি কেউ। দু’বছর সময়কালে দালাল আইনে মামলা দায়ের না হবার এটাও একটা বড় কারণ। বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতাসহ উপরোক্ত সব কারণ সম্মিলিতভাবে ১৯৭৬ সালে দালাল আইন বাতিল করার পটভূমি রচনা করে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কাছে বিষয়টা এইভাবে প্রতিভাত হবার সময়ের দাবী পূরণের অংশ হিসেবেই তিনি দালাল আইন বাতিল করেন। আওয়ামী লীগসহ যারা এ জন্য জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করেন, তারা নিছকই রাজনীতি করেন, বাংলাদেশের সমাজ ও জনগণের কথা, এমনটি তাদের মন কি বলে সেটাও বিবেচনা করেন না।
আসলে একশ্রেণীর সুবিধাবাদীরা এবং আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ইসলামপন্থী দল বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধাচারণকে তাদের যে রাজনীতি, সে রাজনীতির খোরাক হিসাবেই ব্যবহার করছে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও স্বাধীনতা বিরোধী শ্লোগানকে। এই মনোভাব এই শ্লোগান স্বাভাবিক নয়, সঙ্গতও নয়।
স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে যুদ্ধাপরাধ চ্যাপ্টার ক্লোজ করেছেন এবং সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে নিছক ‘কলাবরেটর’ হওয়াকে শাস্তিযোগ্য করার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত শেখ মুজিবুর রহমানের এসব সিদ্ধান্তকে আমরা যেন এখন অন্যায় অবাঞ্ছিত মনে করছি। এটা যদি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার রাজনীতি হয়, তাহলে আমাদের জানা দরকার জনগণের ইচ্ছার প্রতিধ্বনি করে স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবই এই রাজনীতিকে অচল করে দিয়ে গেছেন। জনগণও এই সাথে একে সমাধিস্থ করেছে। এই কারণেই দালাল খান-এ-সবুর তিন আসন থেকে নির্বাচিত হন, শাহ আজিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, বিচারপতি নূরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের মনোনীত এমপি প্রার্থী হতে পেরেছিলেন, মাওলানা নূরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের ধর্মপ্রতিমন্ত্রী হবার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী হয়েছেন। হাজার বলেও যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতা বিরোধী বলে জামায়াতে ইসলামীকে খাটো করা যাবে না। স্বাধীনতা উত্তরকালে তদন্ত করে তৈরি যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় জামায়াতে ইসলামীর কারও নাম ছিল না এবং দালাল আইনে যে ৭৫২ জনের শাস্তি কনফার্ম করা হয়েছিল, এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল, তাদের মধ্যেও ছিল না জামায়াতে ইসলামীর কোনো লোক। 
জাতিকে ভাগ করার বিভেদাত্মক এই অভিযান শুধু স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ও ইচ্ছার ব্যতিক্রম নয়, পৃথিবীর চলমান সংস্কৃতিরও ভায়োলেশন।  আন্তঃজাতি যেমন, তেমনি দেশ জাতির অভ্যন্তরেও সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়।  তেমনি আবার খুব স্বাভাবিক হলো তাদের সমঝোতা প্রতিষ্ঠা ও সমন্বয়ের ঘটনা।  জাতির স্বার্থেই এটা প্রয়োজন। 
বিভেদের রাজনীতি, হিংসার রাজনীতি আমাদের দেশে তীব্র হোক, এটা বাইরের অনেকেই চায়, যারা চায় আমাদের ভাগ করে শাসন করতে এবং শোষণ করতে। আমরা তাদের  এ চাওয়ার শিকার হতে পারিনা।

Monday, January 21, 2019

পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য আগ্রাসন : আমাদের করণীয়


খুরশীদ আলম বাবু : বাংলাদেশের সাহিত্যের বাজার এখন সত্যিই দুঃসময়ের মুখোমুখি। পশ্চিমবঙ্গের বাজারী লেখকদের বাজার দখলের প্রাণান্তর প্রচেষ্টার সাথে এ দেশীয় এক শ্রেণির প্রকাশকদের সহযোগিতা রীতিমত ভয়ংকর শংকার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য এর জন্য কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের ঢালাও ভাবে দোষারোপ করাটা মোটেও ঠিক হবে না। প্রথমতঃ পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের গল্প উপন্যাস এদেশের সাধারণ পাঠক পড়তে আগ্রহী। আমার অনেকের সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে, যারা এদেশের গল্প-ঔপন্যাসিকদের খুব একটা গুরুত্ব দেবার পক্ষপাতি নন; এমনকি হিসেবের মধ্যেও আনেন না। আবার এও সত্যিকার ভাবে লক্ষ্য করে দেখেছি তাঁদের প্রিয় লেখকদের মধ্যে অনেক ভালো ঔপন্যাসিক রয়েছে। এটাও আবার স্বীকার্য যে, আমাদের সাহিত্যের মানটাও আশানুরূপ ভালো না। দ্বিতীয়তঃ এখানে ভালো ও সৎ প্রকাশকের অভাব সব সময় ছিলো, উপরন্তু আমাদের সাহিত্য এখনও শিবিরে বিভক্ত। রাজনীতি এসে সর্বনাশ অনেক আগেই ঘটিয়েছিল; এখন সেটাই চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছে। এখন লেখকের পরিচয় নির্ধারিত হয় উনি বামপন্থী আর উনি মৌলবাদী। সেই সাথে রয়েছে আমাদের দূর্বল রাষ্ট্রনীতি। কারণ আমাদের দেশে সত্যিকার ভাবে এখন অবধি খাঁটি দেশপ্রেমিক সরকার আসেনি। আসলে হয়তো এই নিবন্ধ লেখার প্রয়োজন হতো না। ভারত বিশাল শক্তিধর দেশ, তার সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে গিয়ে আমাদের রাজনীতিবীদরা নিজেদের মর্যাদা হারাতেও দ্বিধাবোধ করেন না। ফলশ্রুতিতে বাণিজ্যে যে অসমতা দেখা দিয়েছে তার রীতিমত প্রভাবও আমাদের সাহিত্য বাজারে পড়তে শুরু করেছে। কিন্তু তথাকথিত উদারবাদী বুদ্ধিজীবীরা এখনো প্রকাশ্যে বলেই বসেন- বইয়ের বিষয়ে-কোন রকম বাধা প্রদান করাটা ঠিক হবে না। কেন করেন? তাঁদের বদ উদ্দেশ্যের হাঁড়ির খবর আমাদের অজানা নেই। ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় সামান্যতম একটি লেখা প্রকাশের সুযোগের কেল্লাফতে দান মারার কারণে নিজের দেশ প্রেমিকতাবোধ বিসর্জন দিতে দ্বিধাবোধ করেন না। তাদের দেশপ্রীতির নজির আমাদের জানা আছে। আমাদের দেশে এই রকম বুদ্ধিজীবী কারা, নাম না বললেও খুব একটা বুঝে নিতে অসুবিধা হবে না। মনে রাখতে হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও বই এখনো গুরুত্বপূর্ণ বস্তু। পশ্চিমবঙ্গের সাথে আমাদের বই আমদানী-রফতানী বাণিজ্যিক ঘাটতি এখনো অত্যন্ত বেশি। আত্মবিস্মৃতি জাতি হিসেবে আমরা আবার খ্যাতি উপার্জন করেছি, সেটা বারবার প্রমাণিত হয়। কবি জসিম উদদীন বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পরই আমাদের সর্ব প্রথম স্মরণ করিয়ে দেন, এই সমস্যাটির কথা। কারণ তিনি ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের প্রকাশকদের চরিত্র সম্পর্কে জানতেন। আমাদের সচেতন করার জন্য লিখেছিলেন-
“পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমরা প্রতি বছর ৬০/৭০ লাখ টাকার বই-পুস্তক আনাইয়া থাকি। কিন্তু আমাদের লিখিত বই পশ্চিমবঙ্গে যাইতে পারে না। আমাদের এখানে কত টাকার বই আনিব তাহার অংক নির্দিষ্ট করা আছে, কিন্তু আমাদের বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গে তেমনটি নাই। প্রতিদান না হইলে সখ্য বেশি দিন টেকে না। একমুখী পথে যাওয়া আসা চলে তা না, ওদেশের ভালোবাসার যাহারা অন্তরঙ্গ করিতে চান তাহারা যেন এই কথাটি ভালো করে ভাবিয়া দেখেন।” 
আমার  দেশের প্রচলিত আইনকে লংঘন করে তারা এই সমস্ত গল্প-উপন্যাস ক্রমাগত ছাপিয়ে চলেছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে কবি জসীম উদদীন যখন এই নিবন্ধটি সৃজন করেন তখন সবে মাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে, আর সেই সমস্যা আজকে বিশাল থেকে বিশালাকার ধারণ করেছে। আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেই, পশ্চিমবঙ্গের গল্প-উপন্যাসের পাঠক আমাদের দেশে অনেক রয়েছে। অনেকে বলেন পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বেশি আছে। কারণ পশ্চিমবঙ্গে বাংলা চর্চা করার লোকজনেরই অভাব ক্রমশ পরিলক্ষিত হচ্ছে, তারই আভাসই পাওয়া যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের সদ্য প্রয়াত প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী প্রাবন্ধিক আশোক মিত্রের ভাষ্যে। আমি তার কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি। -
“কে জানে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক চৌহদ্দির মধ্যে হয়তো বাংলা 
ভাষা তথা সাহিত্য আর তেমন বেশীদিন টিকবে না, কতিপয় পূর্ব লক্ষণ দেখে অন্তত : সেই রকম সন্দেহ হয়।”
আবার পরবর্তী পর্যায়ে বাংলাদেশের কথা স্মরণে রেখেই বলেছেন,
“তাছাড়া একটু সংকোচ এর সাথে বলতেই হচ্ছে, রাজনৈতিক সীমান্তের ওপারে রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত; এই প্রান্তে যারা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে আলোচনায় ব্রত হবেন, তাদের কাছে এই সংকলনের(চতুরঙ্গ থেকে-১ম খণ্ড) মূল্য অপরিসীম।” (সম্পাদকীয় নিবেদন, চতুরঙ্গ থেকে-১ম খণ্ড)
অবশ্য এই মন্তব্যের মধ্যে কতখানি সত্যতা রয়েছে সেই সম্পর্কে আমার ঘোরতর সন্দেহ বিদ্যমান, কারণ আজকাল প্রায়শ; বাংলাদেশের পাঠককে তোষামোদ করার জন্য এই রকম কথাবার্তা প্রয়াত কবি ও কথাশিল্পী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও বলে থাকতেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। তার ঐতিহাসিক স্বাতন্ত্রিক ঐতিহ্য রয়েছে। আর এই কারণে তার সাহিত্যও সৃজিত হবে আলাদা ভাবধারায় এবং আলাদা আংগীকে। আমাদের দেশে সুনীল-শীর্ষেন্দুরা এলে যে মনোহর সংবর্ধনা পান; তার এক কণাও বাংলাদেশের কবিরা ও দেশে পান না। এটা পরীক্ষিত সত্য যে, আমাদের সাহিত্য তাঁদের  কাছে অপাংতেয় অষ্পৃশ্য। অবশ্য একশ্রেণির সমালোচকরা সেটা স্বীকার করতে নারাজ। কারণ তারা পশ্চিমবঙ্গীয় ভাবধারার সাথে বরাবরই আমাদের সাহিত্যকে মেলাতে চান। আর সেখানেই বেধেছে যত মুশকিল। ইদানীং ভিসিডি ও চ্যানেলে হিন্দি ছবির মত পশ্চিমবঙ্গীয় কবি সাহিত্যিকদের লেখা গল্প উপন্যাস বাংলাদেশের বাজারে জোয়ারের মত ভাসতে শুরু করেছে। আর এর সাথে যোগ হয়েছে আমাদের দেশের একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী সুলভ পাঠকদের উদাসীনতা। ফলশ্রুতিতে আমাদের দেশের লেখকদের বই প্রায়শ অবিক্রিত অবস্থায় থাকছে। এই শ্রেণির পাঠকরা পশ্চিমবঙ্গীয় লেখকদের নামে মূর্ছা যাবার উপক্রম হন। আমাদের অধিকাংশ তরুণ লেখকরা তাদের প্রভাবের দ্বারা প্রভাবান্বিত। 
আমি অবশ্য তাদের প্রভাবের বিষয়টিকে সমালোচনার নজরে দেখছি না, কারণ এটাই স্বাভাবিক। বাজারী লেখকদের সাফল্য দরুন নতুন লেখকরা প্রভাবিত হবেন। আমি অবশ্য এও মনে করি সুনীল-শীর্ষেন্দু এরা শক্তিমান কথা-সাহিত্যিক। তারা এখানেও পশ্চিমবঙ্গের মতন স্বীকৃত মর্যাদা পাচ্ছেন। তবে আপাতত আমার সমালোচনার জায়গাটি একটু অন্য জায়গায় রাখতে চাই। কারণ আমাদের পাঠকরা অমিয় ভূষণ মজুমদার, দেবেশ রায়ের বই কিংবা নাম কোনটাই শুনতে পারেন না। আসলে বাজারী উপন্যাসের ভিড়ে তাদের নাম হারিয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে। কারণ এই দুইজন লেখক আনন্দবাজার কিংবা যুগান্তর গোষ্ঠীর লেখক নন। ফলশ্রুতিতে আমাদের পাঠক গোষ্ঠীর কাছেও খুব বেশি পরিচিত নন। তাদের লেখা নিরলস কঠোর সাধনার মধ্যে দিয়েই এই সাফল্য উপার্জন করা সম্ভব। স্বীকার করি পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু লেখক এই কাজটি নিপুণতার সাথে করছেন। তার মানে এই নয় যে, তাদের লেখার গতি-প্রকৃতি আমাদের দেশের লেখকদের আদর্শ হতে পারে। তাদের দেশেও এই ধরনের লেখক সত্যিকার ভাবে সমালোচনা যোগ্য। অকাল প্রয়াত প্রখ্যাত কথাশিল্পী দ্বীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের গবেষণা পরিষদের পক্ষ থেকে ১৯৭৫ সালে এক সাক্ষাতকার নেওয়া হয়, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের সম্বন্ধে অসামান্য কৌতুকর মন্তব্য করেছিলেন। সেই সাক্ষাতকারে তিনি বামপন্থী আন্দোলনের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছিলেন, এমনকি শিল্প সাহিত্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের কম্যুনিস্ট পার্টির সমালোচনা করতে দ্বিধা করেননি। আবার পাশাপাশি সমরেশ বসুর বিবর এর প্রশংসাও করেছেন। শুধু তাই নয় বাজারী লেখকদের ‘ইয়েস স্যার’ এ কটাক্ষ করতেও দ্বিধা করেননি। এদের লেখক মানসিকতাকে কটাক্ষ করে তাঁর মূল্যবান মতামত ছিল এই রকম- 
‘সাহিত্যে বাজারটা প্রায় সিনেমা স্টারদের অবস্থায় পরিণত হয়েছে। ফিল্মস্টাররা যেমন তাদের বয়সের ভাবনায় ভাবিত থাকেন তেমনি আমাদের সাহিত্যকূলের একাংশ ভাবিত হলেন কি পরিমাণে উপস্থিতির প্রমাণ দিতে পারছেন। রচনায় মানের উপর নয়।’ দ্বীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য তুলে ধরলাম বলে কেউ যেন মনে না করে আমি এই মন্তব্য পুরোপুরি বিশ্বাস করে বসে আছি। সাহিত্যে উচ্চমানের সাহিত্যিকদের আগ্রাসন এমন নতুন কোন ঘটনা নয়। আরবের সাহিত্যিক আক্রমণ ইরানীরা অত্যন্ত সুকৌশলে রক্ষা করেছিল। বিগত শতাব্দীতে আইরিশ সাহিত্যের নবজাগরণ কিন্তু ইংরেজি সাহিত্যের বিরুদ্ধেই হয়েছিল, নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটসের নেতৃত্বে। কারণ তারতো কোন সময় বার্নাডশোর  সাহিত্যকে আইরিশ সাহিত্য বলে মনে করেনি। অথচ আইরিশদেরও মাতৃভাষা ইংরেজি। আমি এই আন্দোলনের কথা উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, আমাদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মুখে সেই রীতি অবলম্বন করা দরকার। তবে আমরা সৌভাগ্যবান, বয়স ভাবনায় ভাবিত লেখকদের সংখ্যা কম হলেও পাঠকরা তাদের ধরতে পেরেছেন। তবে আমাদের দেশের প্রকাশকরাও কম দায়ী নয়। নতুন লেখকদের উৎসাহ দান করাটা তারা একেবারে ভুলে গিয়েছেন। কবিতার বই বের করতে হলে আল মাহমুদ ও শামসুর রাহমান ছাড়া যেন প্রকাশকদের কোন গত্যন্তর নেই। এই মানসিকতা পরিবর্তন করা দরকার। মনে রাখতে হবে পশ্চিমবঙ্গেও প্রতিযোগীতার মধ্য দিয়ে মতি নন্দী ও অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় এর মত বড় বড় সাহিত্যিকরা বেরিয়ে এসেছিল। আমাদের দেশে প্রকাশকরা এই দায়িত্ব নিতে কি পারবেন? আর প্রকাশকরা এখন অবধি প্রচার বিমুখ পদ্ধতি আঁকড়ে ধরে আছেন। প্রকাশকরা যদি বইয়ের প্রচার না করেন তাহলে সাধারণ পাঠকরা কিভাবে বইয়ের খবর জানবেন। লেখক লিখবেন আর প্রকাশক প্রকাশ করবেন কথাটা যতটায় সরলীকরণ হোকনা কেন-প্রমথ চৌধুরী যেমন মনে করতেন- ভালো বই খোঁজার অর্থই হলো খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজার মত।

সাম্প্রতিককালে আর একটি প্রচলতার যোগ হয়েছে সেটা হলো, দৈনিক পত্রিকার মালিকদের দ্বারা ঈদসংখ্যা বের করা, আমার জানামতে কেবলমাত্র নয়াদিগন্ত, প্রথম আলো এবং সাপ্তাহিক ২০০০ ছাড়া সমস্ত পত্রপত্রিকার প্রকাশকদের ধারা পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের উপন্যাস-গল্প না হলে ঈদসংখ্যার মর্যাদাই থাকে না। লক্ষ্য করা গেছে যে পত্রিকা একসময় সবচেয়ে বেশি ভারত বিরোধী ভূমিকা নিয়েছিল, তাদের সাপ্তাহিক পত্রিকায় একবার সবচেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের লেখা গল্প-উপন্যাস বেরিয়েছে। আমার জানামতে সেই পত্রিকার কয়েকজন মনোযোগী পাঠক মৃদু অনুযোগও জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু সেই পত্রিকার সম্পাদকের মতিগতির পরিবর্তন হয়েছে বলে আমার জানা নেই। অথচ আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আনন্দবাজার গোষ্ঠীর দেশ পত্রিকার বৃহৎ পাঠক গোষ্ঠীই কিন্তু আমাদের দেশেই অবস্থান করছে। সোজাসাপ্টা উত্তর হলো তাদের পত্রিকার ভূত ভবিষ্যৎ আমাদরে দেশের পাঠকদের উপরেই এখনো নির্ভর করছে। কারণটা স্বাভাবিক। আমরা যতটা সাহিত্য বিমুখ, তারা কিন্তু ততটা নয়। পার্থক্যটা সৃজিত হয়েছে এখানেই। আমাদের মনে রাখতে হবে, পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সাহিত্য উর্দুর পরেই সমগ্র ভারতের মধ্যে সবচাইতে সমৃদ্ধশালী সাহিত্য। আমাদের মত দেশের পক্ষে স্বল্প সময়ের মধ্যে সেই রকম সাহিত্য সৃজন করাটা সম্ভব নয়। কিন্তু তাই বলে তার সামনে নতজানু হওয়াটাও বেমানান। আর একটি বিষয় পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের সাহিত্যিক বাজার বাংলাদেশি পাঠকদের উপরেই নির্ভরশীল, তার প্রামাণিক তথ্য দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত আনন্দ বাগচীর লিখিত নিবন্ধেই সরাসরি পাওয়া যাচ্ছে। ঐ নিবন্ধে বলা হয়েছে,
“বাঙালির উপর চাপ আসছিল নানা ভাবে। ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের(১৯৬৫) পর বাংলা বইয়ের বাজার দ্বি-খণ্ডিত। বাংলা সাহিত্যে আদি পর্বে প্রথম পর্বের  প্রথম বলি হলো ছোটগল্প।” (ছোটগল্পের রূপান্তর) 
পৃথিবীর সব সাহিত্যের জনপ্রিয় বহুলপ্রজ লেখকরা পাঠকদের মনোরঞ্জনের দিকটিই লক্ষ্য করেই সাহিত্যচর্চা করে থাকেন। হিট লেখক ও ফ্লপ লেখক ইত্যাদি দুটি বিশেষণকে সব সময় গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। প্রথমটি অর্জন করতে পারলে যেন ইহকাল ধন্য হবার মত দশা হয়। নোবেল বিজয়ী হাইনরিস বোলের কাছে আর্থিক মর্যাদার রহস্য উপন্যাস লেখক হেডলি চেজ অনেক উচ্চ অবস্থান করেন। আমাদের দেশের অনেক লেখকই রয়েছেন, বিষয় হিসেবে নারী ও প্রেমের বিশেষত কিশোর প্রেম ও যৌনতাকে পুঁজি করে সফল ব্যবসায়ী ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য সাহিত্যচর্চা করে চলেছেন। কোথায় কমিটমেন্ট, কোথায় সামাজিক চেতনা? এসব খুঁজতে গেলে ব্যর্থ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। সমকালের ক্লাসিক লেখকদের সেটাই পরম আরাধ্য। আমাদের দেশে এই রকম লেখক যে নেই সেটা আমার বলার উদ্দেশ্য না। মাহমুদুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের নাম শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারণ করা যায়। ইদানীং আল মাহমুদ বড় বেশি বাণিজ্যিক হয়ে পড়েছে, কি লিখছেন তিনিই নিজেই জানেন না। টি এস এলিয়ট বরাবরই মনে করতেন কেবলমাত্র দশটি উপন্যাস ও কাব্যগ্রন্থ থেকে সমকালীনকে ধরে রাখা সম্ভব। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চৈতালী ঘূর্ণি’ ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যয়ের ‘চিহ্ন’ উপন্যাসদ্বয় পড়লে তৎকালীন সংঘময় পরিবেশকে বুঝতে সহায়তা করে। লেখকও যেমন বই প্রকাশ করতে বাধ্য নয়, তেমনি ভাবে পাঠকও সব বই পড়তে বাধ্য নয়। প্রমথ চৌধুরীর এই মন্তব্যের মত, আমিও মনে করি। পাশাপাশি  আমাদের ভাষারীতিকে ক্রমশ পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য তরুণ সাহিত্যিনুবিসীদের কবিতার উপর দুর্দান্ত আসক্তি পরিত্যাগ করা প্রয়োজন। কবিতার পাশাপাশি লেখাও প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে গদ্য। পশ্চিমবঙ্গের লেখকরা বলছেন : তোমাদের কবিতা সুন্দর। কিন্তু উপন্যাস-গল্প ভালো নয়। অতএব আমাদের গদ্য পড়। তার মানে এই নয় যে, আমাদের দেশে কোন গদ্যশিল্পী নেই। রয়েছে। তবে যে দুঃখটি সর্বাগ্রে স্মরণ করলে আমাদের ব্যথিত হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না সেটি হলো এই যে, উৎকৃষ্ট মানের সাহিত্য পত্রিকার অভাব, যা দুএকটা প্রকাশিত হয় তাও ক্ষণজীবী। পশ্চিমবঙ্গের পাঠকরাও যে মুসলমান লেখক বিদ্বেষী তার উজ্জ্বল উদাহরণ হলো প্রয়াত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর প্রতি দারুণ অবহেলা। এই বিদ্বেষ প্রবণতা কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের নজর এড়িয়ে যায় নি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,
হুমায়ূনের উপন্যাস দেশ শারদীয়াতে কয়েকবছর পর পর ছাপা হয়েছিল। বইও বেরিয়েছিল কলেজ স্ট্রিট থেকে। কিন্তু এই পশ্চিমবঙ্গের পাঠকরা তেমন উৎসাহিত হননি ওর সম্পর্কে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দুঃখিত হয়েছি। এখনও এই বাংলায় উপন্যাসে পাঠকরা মুসলমান না, রীতিনীতি বা ধর্মীয় আচার উপন্যাসে থাকলে রসগ্রহণে অনাসক্ত হয়ে পড়েন। আমার মতে এটাও এক ধরনের মৌলবাদ। (সমরেশ মজুমদার, ছদ্মবেশী সম্রাট, ভারত বিচিত্রা, আগস্ট ২০১২) 
কারণ আমাদের সাহিত্য জগৎ এখন অবধি নানা ভাবে বিভক্ত, যদিও বামধারা আগের মত শক্তিশালী অবস্থানে নেই। তবুও বেশির ভাগ জায়গায় যে পরিত্যাজ্য-করার নীতি কৌশলের বিষ বপন করে গেছেন। তার প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। অতি বামপন্থী মনোভাব সম্পন্ন সাহিত্য সম্পাদক সর্বপ্রথমে যাচাই বাছাই করতে শুরু করেন, কে কোন পন্থী আর কে মৌলবাদী। এছাড়াও কর্পোরেট বাণিজ্যকে আশ্রয় করে নিয়েছেন সাহিত্যিকরা।
আমাদের দেশের সাহিত্যিকরা যে ভাবে এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তার চেঁচামেচি করে থাকেন, পৃথিবীর অন্য কোন জায়গায় এমনটি হয় না। আমাদের পার্শ¦বর্তী পশ্চিমবঙ্গে কট্টর বামবাদী কবি মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায় ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এক অনুষ্ঠানে বসে আলোচনা করতে পারেন, আমাদের এখানে এটা কল্পনা করা যায় না।
ঐতিহ্যপন্থীদের হাতে ভাল সাহিত্য সৃষ্টি হবে না, আমাদের দেশে বামপন্থীরা আগে ভাগেই ভেবে বসে থাকেন। হুমায়ুন কবীর ও বুদ্ধদেব বসু তাদের সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকায় ফররুখ আহমদ ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা গল্প ছেপেছিলেন। কে কোন পন্থী তারা সেটা বিচার-বিবেচনার আওতায় আনেন নি। এসব করলে কি আমাদের হুমায়ুন কবীর ও বুদ্ধদেব বসু স্মৃতি সত্তার মধ্যে থাকতেন? মোটেও না। কাল তাদের সেই ভাবেই চিত্রিত করত। আমাদের সাহিত্য সম্পাদকদের হতে হবে উদার মানসিকতা সম্পন্ন। ভাল লেখা শুধু নয়, লেখক খোঁজার দায়িত্বও রয়েছে তাদের। সেটা ভুলে গেলে চলবে না। তরুণ লেখকদের মধ্যে প্রতিভার পরিচয় পেলে তাকেই বেশি করে আশ্রয় প্রশয় দিতে হবে। কিন্তু আমরা সেটা ভুলে বসে আছি। আর সেই কারণে এখন দরকার রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত তরতাজা, অজস্র সুফলপ্রসু সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশ। আশা করি সেইদিন আর সুদূর পরাহত নয়। 

Wednesday, December 12, 2018

কক্সবাজারের রামু সেনা ক্যান্টনমেন্টের গেইটের অসাধারণ দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য

SHIELD GATE of Ramu Cantonment:





Ramu Cantonment Gate:

রামু সেনানিবাস কক্সবাজারের রামু উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবগঠিত একটি সেনানিবাস।এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০মপদাতিক ডিভিশনের সদর দপ্তর।মিয়ানমার এর সাথে সীমান্ত বিরোধ,রোহিঙ্গা সমস্যা,২০০৮ সালের সমুদ্রবিরোধ সহ নানা কারনে কক্সবাজার এবং রামুর নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রামু সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়। রামুতে অবস্থিত সেনানিবাসটির মোট আয়তন ১৭৮৮.৯৮ একর(এক হাজার সাতশত আটাশি দশমিক আটানব্বই একর)।
বর্তমান রোহিঙ্গা সমস্যায় রামু সেনানিবাস কক্সবাজারের নিরাপত্তা রক্ষায় অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করেছে।রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা,ক্রান বিতরন,রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শান্তিশৃঙ্খলা বিধানে রামু সেনানিবাস এবং সেনাবাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। ইয়াবা সমস্যা,চোরাচালান রোধ,মিয়ানমারের স্পাইদের আটক করা সহ নানা ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য।বর্তমানে রামু সেনানিবাসে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর,বোটানিক্যাল গার্ডেন,রামু ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল,ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ,জরুরি অবস্থায় বিমান উঠানামার জন্য ক্যান্টনমেন্ট এর রাস্তাসমূহকে রানওয়ে হিসেবে ব্যবহারের সুবিধা,অফিসার্স মেস,অত্যাধুনিক অগ্নি-নির্বাপন ব্যবস্থা,সামরিক কর্মকর্তাদের জন্য আবাসস্থল,কৃত্রিম বন,হেলিপ্যড,এফ এম-৯০,স্যাম সিস্টেম,এন্টি এয়ারক্রাফট গান,ড্রোন সিস্টেম,আর্টিলারি সিস্টেম,টাইপ ৫৯ বিডি ট্যাংক,এপিসি,নিজস্ব ফাইবার অপটিক এবং স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন ব্যবস্থা,বিদ্যুৎ ব্যবস্থা,ট্রাস্ট ব্যাংক শাখা,এটিএম বুথ এবং ইন্টালিজেন্স উইং।
রামু ক্যান্টনমেন্ট এর একটি অংশের মূল ফটক এ রয়েছে তিনটি করে মোট ছয়টি সোনালি তীরের ভাস্কর্য।এর অপর নাম “Shield Gate”.. যা মুলত সেনাবাহিনীর যুদ্ধের মনোবল নির্দেশ করে।প্রাচীন আমল থেকেই Shield বা তীর আক্রমন এবং রক্ষণশীলতার প্রতীক।অপর ফটকের সামনের অংশে রয়েছে হাতির দু’টি সাদা দাতের স্তম্ভ।এর নামকরণ করা হয়েছে “Southern Gate”..যা মুলত দক্ষিণাচলের নিরাপত্তা রক্ষায় ১০ম পদাতিক ডিভিশনের ফরমেশন,সক্ষমতা এবং মনোবল নির্দেশ করে।হাতি ডাঙায় থাকা সবচাইতে বৃহৎ এবং শক্তিশালী প্রানী,তারা দল বেধে থাকে,দলের কেউ আক্রান্ত হলে হামলা করে।জংগলের কেউ হাতিকে ঘাটানোর সাহস করেনা।হাতির দাত মহামুল্যবান বস্তু এবং তা গৌরবের প্রতীক।অপরিসীম শক্তির অধিকারী এই প্রানীর কাছে বনের সবাই মাথা নত করে।এছাড়া হাতি দ্বারা মেইন ব্যাটেল ট্যাংক এম্বিটি-২০০০ ও নির্দেশ করে।কারন তা সেনাবাহিনীর গর্বের প্রতীক।সে হিসেবে রামুতে কিছু এম্বিটি-২০০০ ও থাকতে পারে।

Tuesday, June 12, 2018

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য মুক্তবাংলা


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্মারক ভাস্কর্য ‘মুক্তবাংলা’।  এটি সর্ব সাধারণের কাছে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে অতি পরিচিত। এই শিক্ষাঙ্গনের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর প্রাণের সঙ্গে মিশে আছে এই চোখ জুড়ানো মুক্তবাংলা। ইসলামের মৌলিক নীতিমালা অক্ষুণ্ণ রেখে এবং আধুনিক স্থাপত্য শিল্পের আঙ্গিকে ১৯৯৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রশাসন ভবনের পূর্ব পাশে স্থাপিত হয় এই ‘মুক্তবাংলা’।  খ্যাতিমান ডিজাইনার রশিদ আহমেদের নক্সার ভিত্তিতে একে অপরূপ সৌন্দর্যে রূপ দেয়া হয়।  মুক্তবাংলার সাতটি স্তম্ভ সম্বলিত গম্বুজের উপর রয়েছে দৃঢ় মুষ্টিবদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার রাইফেল যা সাত সদস্যের মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভার প্রতীক।  প্রতিটি স্তম্ভ বিস্তৃত প্রশারিত হাত ধরাধরি উল্লসিত অবয়বে আধুনিক ইসলামী স্থাপত্যভিত্তিক আর্চ রচিত, চোখে লাল সূর্য উদয়ের প্রত্যাশা, সর্বনিম্নে বড় ইট যা লাগাতার আন্দোলন নির্দেশক।  উপর থেকে চতুর্থ ধাপে রয়েছে লাল সিরামিক ইট আন্দোলন ও যুদ্ধের প্রতীক, দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে কালো পাথর শোক ও দুঃখের প্রতীক, তৃতীয় ধাপে রয়েছে সাদা মোজাইক সন্ধি ও যোগাযোগের প্রতীক এবং বেদির মূল মেঝে রয়েছে সবুজ মোজাইক যা নীল টাইলস ও শান্তির প্রতীক। সমুদয় অবকাঠামোটি সাতটি আর্চ সম্বলিত একটি অর্ধ উদিত (উদীয়মান) সূর্য। মুক্তবাংলার সৌন্দর্য ও বিশেষত্ব উপভোগ করতে শিক্ষার্থী ছাড়াও প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।  প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতে ডানদিকে সবার নজর কাড়ে ব্যতিক্রমী এই রুচিশীল স্থাপত্য কর্মটি।

- ইমাদুল হক প্রিন্স

See this video: 

Thursday, May 10, 2018

চট্টগ্রাম রাঙ্গুনিয়ার অধিবাসী মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির ইবনে মোহাম্মদের পূর্বপুরুষেরা চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়ার অধিবাসী ছিলেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির ইবনে মোহাম্মদ আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার হিসেবে সমাদৃত। গত বুধবার দেশটির ১৪তম সাধারণ নির্বাচনে ফের ক্ষমতার আসনে বসেন এ নেতা। ২২২টি সংসদীয় আসনের ১১৫টি জয় পেয়ে হারিয়েছেন তারই শিষ্য নাজিব তুন রাজাককে। এই মাহাথির মোহাম্মদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন বাংলাদেশের বাসিন্দা।
২০১৪ সালে ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের (ইউআইটিএস) এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মাহাথির বলেন, “চট্টগ্রামের কাপ্তাই রাঙ্গুনিয়ার কোন একটি গ্রামে আমার দাদার বাড়ি ছিলো, পরবর্তীতে মালয়েশিয়াতে বসবাস শুরু করেন দাদা” তার এই কথার সূত্রধরেই খোঁজ নিয়ে যানা যায় চট্টগ্রাম জেলার উত্তরাংশে রাঙ্গুনিয়া উপজেলাধীন চন্দ্রঘোনা ও কাপ্তাইগামী সড়কের সামান্য পূর্বে কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম মরিয়মনগর।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এ গ্রামের এক যুবক ব্রিটিশ শাসিত মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। তিনি ছিলেন জাহাজের নাবিক। মালয়েশিয়ায় এ্যালোর সেটর গিয়ে এক মালয় রমণীর সঙ্গে সম্পর্কে আবদ্ধ হন। তাদের ঘরেই জন্ম নেন মুহম্মদ ইস্কান্দার। আর এই মুহম্মদ ইস্কান্দারের ছেলে সন্তান হিসেবে জন্ম নেন মাহাথির মুহম্মদ। সে হিসেবে চট্টগ্রাম হচ্ছে মাহাথির মুহম্মদ এর পূর্বপুরুষের দেশ এবং সে অনুযায়ী বাংলাদেশী রক্ত তার শরীরে বহমান।
১৯২৫ সালের ১০ জুলাই ব্রিটিশ অধ্যুষিত মালয়ের কেদাহ অঞ্চলের অ্যালোর সেতার নামক স্থানে এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে মাহাথির মুহম্মদ জন্মগ্রহণ করেন। পিতামাতার দশ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন মাহাথির। তার পিতা মুহম্মদ বিন ইস্কান্দার ছিলেন মালয়ের একটি ইংলিশ স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক

সূত্র: ওয়েবসাইট ও উইকিপিডিয়া

Wednesday, April 18, 2018

বাংলাদেশে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ আকর্ষণীয় স্থান কোথায়?



নীলগিরি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্র। এ পর্যটন কেন্দ্রের উচ্চতা প্রায় ৩ হাজার ফুট। এটি বান্দরবান জেলার থানছি উপজেলায় অবস্থিত।
বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে এই পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান। এ পর্বতের পাশেই রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত আদিবাসী সম্প্রদায় ম্রো-পল্লী। যাদের বিচিত্র সংস্কৃতি দেখার মত।
বর্ষা মৌসুমে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র থেকে মেঘ ছোয়ার দূর্লভ সুযোগ রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নীলগিরি থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। বান্দরবানের সবচেয়ে সুন্দর ও আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র এটি। এটি সেনা তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এর পাশেই রয়েছে একটি সেনা ক্যাম্প। নিরিবিলিতে স্বপরিবারে কয়েক দিন কাটাতে এটি একটি আর্দশ জায়গা।
যাতায়াত
পর্যটকদের নীলগিরি যেতে হলে বান্দরবান জেলা সদরের রুমা জীপষ্টেশন থেকে থানছিগামী জীপ অথবা বাসে করে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে যেতে হবে। বান্দরবনা জীপ ষ্টেশন থেকে জীপ, ল্যান্ড রোভার, ল্যান্ড ক্রুজারসহ অন্যান্য হালকা গাড়ী ভাড়ায় পাওয়া যায়। নীলগিরি যাওয়ার পথে সেনা চেকপোষ্টে পর্যটকদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। বান্দরবান জেলা সদর থেকে সাধারণত বিকেল ৫ টার পর নীলগিরির উদ্দেশে কোন গাড়ী যেতে দেয়া হয় না।
ভাড়া
আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্ধারিত ৫সিট বিশিষ্ট ছোট জীপ রয়েছে। এর ভাড়া ২৩০০ টাকা। এছাড়া ৮সিট বিশিষ্ট বড় জীপের ভাড়া ২৮০০ টাকা।
নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র বান্দরবান জেলা সদর থেকে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যায়। এ ছাড়া নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র রাত্রি যাপনের জন্য বান্দরবান সদর সেনা রিজিয়নে বুকিং দেয়া যায়। তাছাড়া নীলগিরি পর্যটনে গিয়ে সরাসরি বুকিং করা যায়। বান্দরবান জেলা সদর থেকে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় অধিকাংশ পর্যটক দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসেন।
কটেজ ভাড়ানীলগিরিতে রয়েছে বেশ কিছু কটেজ। যেমন- 'গিরি মারমেট' (ভাড়া-৭৫০০ টাকা, ধারণক্ষমতা-৮/১০ জন); 'মেঘদূত' (ভাড়া-৬৫০০ টাকা, ধারণক্ষমতা-৮/১০ জন); 'নীলাঙ্গনা' (ভাড়া-৫৫০০ টাকা, ধারণক্ষমতা- ৪/৬ জন)। এছাড়া কাপলরা ২৭৫০ টাকায় ১ রুম ভাড়া পাবেন।

See this video:



Please browse this link: http://nilgiriresort.com


Wednesday, April 12, 2017

বিশ্বের ২২ জন লিভিং ঈগলের একজন বাংলাদেশী: ঈসরাইলের সবচেয়ে বেশী সংখ্যক বিমান ধ্বংশকারী


প্যালেস্টাইনীদের সংগ্রাম নিয়ে পড়তে পড়তে হঠাৎ করেই একজন পরিচিত বাংলাদেশীর নাম পেলাম। ইসরাইলের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক যুদ্ধ বিমানকে ভুপাতিত করার রেকর্ডটা ৪৮ বছর যাবৎ উনার দখলে! ভদ্রলোক চারটি পৃথক দেশের বিমান বাহিনীকে সার্ভিস দিয়েছেন, তিনটি ভিন্ন দেশের হয়ে যুদ্ধ করে শত্রুপক্ষের বিমান ধ্বংশ করেছেন এবং তিনটি দেশ থেকেবীরত্বসূচক খেতাব পেয়েছেন! এটাও একটা বিশ্ব রেকর্ড! যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উনাকে পৃথিবীর জীবিত ২২ জন 'লিভিং ঈগল' হিসেবে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে!

তিনি এখনো জীবিত আছেন, বাংলাদেশেই আছেন। আমরা ক'জন তাঁকে চিনি? আমরা মুছা ইব্রাহিমের মিথ্যা এভারেস্ট জয়ের কাহিনী শিশুপাঠ্য করি, যাতে করে আগামী প্রজন্ম প্রতারক হতে পারে। কিন্তু সাইফুল আজমদের উপেক্ষা করি, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ কখনো বীর হবার উৎসাহ না পায়। Akm Wahiduzzaman পোস্টটির পড়ার পর বাকিটা কৌতূহল নিয়ে খুঁজে বের করলাম এই জীবন্ত কিংবদন্তীকে... এই জীবন্ত কিংবদন্তী হচ্ছেন  "স্যার সাইফুল আজম"...

সাইফুল আজম ১৯৪১ সালে পাবনা জেলার খগড়বাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পর ১৯৫৬ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান যান। ১৯৬০ সালে তিনি জিডি পাইলট ব্রাঞ্চের একজন পাইলট হন।

জুন ৬ , ১৯৬৭। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ চলছে। তৎকালীন পাকিস্তান এয়ারফোর্স থেকে ডেপুটেশনে আসা গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম পশ্চিম ইরাকের এক বিমান ঘাটিতে অবস্থান করছে। অনেকটা ভোজবাজির মতোই আকাশে চারটা ইজ্রায়েলি বিমানের ( যাদের কে এস্কোর্ট করছিলো দুইটা ইস্রায়েলি মিরেজ ফাইটার ) উদয় হয়। আকস্মিক আক্রমণে ইরাকি এয়ারফোর্স
বিপর্জস্ত ।ইসারায়েলি ক্যাপ্টেন ড্রোর একের পর এক ইরাকি বিমানের ভবলীলা সাংগ করে চলেছে। তার সাথে সঙ্গী হিসাবে আছে আরেক ইজ্রায়েলি ক্যাপ্টেন গোলান। এই অবস্থায় আকাশে উড়াল দেয় সাইফুল আজম। উড়াল দেবার কিছুক্ষণের মাঝেই তার উইংম্যান কেও ফেলে দেয় ইজ্রায়েলি ক্যাপ্টেন ড্রোর। কিন্তু সাইফুল আজম অন্য ধাতুতে গড়া। একে একে গোলান, ড্রোর সবার প্লেন ফেলে দেয় সে। মোটামুটি একা লড়াই করে ইজ্রায়েলি বিমান গুলোকে ইরাকের আকাশ ছাড়তে বাধ্য করে সে। ক্যাপ্টেন ড্রোর এবং গোলান কে পরে যুদ্ধবন্দী হিসাবে আটক রাখা হয়।

এখন পর্যন্ত আধুনিক যুদ্ধের ইতিহাসে ইসরায়েলের সর্বোচ্চ সংখ্যক বিমান ঘায়েল করার রেকর্ড ক্যাপ্টেন সাইফুল আজমের।

এছাড়া প্রথম বিশবযুদ্ধ থেকে শুরু করে এপর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক শত্রুপক্ষের বিমান ঘায়েল করার রেকর্ড এর তালিকায় ও তিনি উপরের দিকে আছেন। আরব-ইস্রায়েল যুদ্ধে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ জর্দান-ইরাক-পাকিস্তান তাকে বীরত্ব সূচক পদকে ভূষিত করে। তিনটি দেশের সম্মান সূচক সামরিক পদক অর্জনের ঘটনা সামরিক ইতিহাসে বিরল। একই সাথে তিনটি দেশের হয়ে যুদ্ধ করা এবং একই ব্যাক্তির দ্বারা একের অধিক শ্ত্রু রাষ্ট্রের (ভারত এবং ইসরায়েল) বিমান ভূপাতিত করার বিরল রেকর্ডের অধিকারীও এই একই ব্যাক্তি।

১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তাকে সাময়িক ভাবে সারাগোধাতে অবস্থিত ১৭ স্কোয়াড্রন এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আযম এ সময় এফ-৮৬ স্যাবর জেট বিমান এর পাইলট হিসেবে প্রধানত পদাতিক সহায়ক মিশন পরিচালনা করতেন। ১৯৬৫ সালের ১৯ এ সেপ্টেম্বর বিখ্যাত চাবিন্দা ট্যাংক যুদ্ধে অংশ নেন তিনি এবং বিমান থেকে রকেট ও গোলা বর্ষন করে একাধিক ভারতিয় ট্যাংককে ধ্বংস ও অকার্যকর করেন। এসময় চারটি ভারতিয় ”Gnat”জঙ্গি বিমান তাদের উপর আক্রমন করে। সাধারন ভাবে বিমান থেকে ভুমিতে যুদ্ধের উপযোগি অস্ত্র সজ্জিত থাকায় এসময় পাকিস্তানি বিমানগুলির পালিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ফ্লাইট লেফটেনান্ট সাইফুল আযম রুখে দাড়ান এবং বিমান যুদ্ধ বা ডগ ফাইটে একটি ভারতিয় ”Gnat” জঙ্গি বিমান ভুপাতিত করেন। এই কৃতিত্বের জন্য তাকে পাকিস্তানে ”সিতারা-ইজুরায়ত” (বাংলাদেশের বীরবিক্রম এর সমতুল্য, পাকিস্তানের তৃতীয় সামরিক বীরত্বের খেতাব) পদকে ভুষিত করা হয়। 

১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি চারটি F-86 Sabre এর ফরমেশনে অংশ নিয়ে ভারতের ভূমীতে আক্রমণের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করেন। হঠাৎ দুইটি ভারতীয় Folland Gnat (Folland Gnat, F-86 এর চেয়ে Superior) তাদের পথ রোধ করে। ঘটনার জেরে সৃষ্ট ডগফাইটে সাইফুল আজম একটি Folland Gnat গোলাবর্ষণ করে ভূপাতিত করেন (পাইলট,ফ্লাইং অফিসার ভি মায়াদেব নিরাপদে Ejectকরে বেরিয়ে আসলে তাকে যুদ্ধবন্দি করা হয়). অন্য Folland Gnat টি রনেভঙ্গ দিয়েছে বুঝতে পারার পর সেটিকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়।

১৯৬৬ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম এবং অপর আরেক জন পাকিস্তানী বিমান বাহিনীর অফিসার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সারওয়ার সাদকে রাজকীয় জর্ডান বিমান বাহিনীতে প্রেষণে প্রেরণ করা হয়। সেখানে তারা রাজকীয় জর্ডান বিমান বাহিনীর Hawker Hunter অপারেট করতেন। তারা সেখানে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। ৫জুন ১৯৬৭ সালে আল মাফরাক থেকে উড্ডয়নের পর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম একটি Mystere IV কে তার দ্বিতীয়শিকারে পরিণত করেন। এই ঘটনার মাত্র দুই দিন পর, ৭ জুন ১৯৬৭ ইরাকী বিমান বাহিনীতে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে পশ্চিম ইরাকী এয়ার ফিল্ড H-3 এ তিনি অবস্থান করাকালে, ইসরাইলী জঙ্গি জেট এয়ার ফিল্ড H-3 আক্রমণ করে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম ইরাকী Hawker
Hunter বিমান নিয়ে উড্ডয়ন করে একটি Mirage III এবং একটি Vautour Bomber ভূপাতিত করেন (Vautour Bomber টির ছোট্ট কিছু ভগ্নাবশেষ সাইফুল আজমের Hunter এ গেঁথে থাকতে দেখা যায়, যা থেকে তার সহকর্মীরা বুঝতে পারেন তিনি বিমানটিকে আকাশেই গুড়িয়ে দিয়েছেন)। উল্লেখ্য Mirage III সাইফুল আজমের Hawker Hunter এর তুলনায় বহুগুণে Superior। এছাড়া Mystere IV ও এয়ার টু এয়ার কমব্যাটের ক্ষেত্রে Hawker Hunter এর চেয়ে Superior। Mirage III, Mystere IV সাইফুল আজমের Skill, Tactics ও সাহসের কাছে পরাস্ত হয়েছে। কিন্তু সাইফুল আযম ও তার স্কোয়াড্রন সাফল্য লাভ করলেও অন্যান্য জর্দানি বিমানগুলি ব্যার্থ হয় এবং ইসরাইলি বোমা বর্ষনে বেশিরভাগ জর্দানি বিমান ভুমিতেই ধ্বংস হয়ে যায় ও রানওয়েগুলি ক্ষতি গ্রস্ত হয়। 
সাইফুল আযম তার সাফল্যের জন্য জর্দানিদের প্রসংশা ও শ্রদ্ধা পান। বাদশাহ হুসাইন তার নিজের গাড়িতে করে সাইফুল আযমকে তার মেস এরৎ পেীছিয়ে দেন। জর্দান থেকে আর উড্ড্য়ন সম্ভব না হওয়ায় জর্দানি বিমান বাহিনীর পাইলটরা প্রতিবেশি ইরাকি বিমান বাহিনীতে সহায়তার সিদ্ধান্ত নেয়।

সাইফুল আযম আবারও পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে ইরাকি বিমান বাহিনীর হয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। এবারও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে ইরাকি বিমান বাহিনীর হকার হান্টার বিমান নিয়ে তিনি তৎকালিন সর্বাধুনিক ফ্রান্সের "মিরেজ-৩সি" বিমান ভুপাতিত করেন। তিনি একটি ”ভেটর”বোমারু বিমানও ভুপাতিত করেন। তার অসাধারণ কৌশল ও সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে জর্দান সরকার ”ওয়াসমা ই ইস্তেকলাল” বা স্বাধিনতা পদক এবং ইরাক কর্তক ”নওয়াত-ই সুজ্জাত” পদকে ভুষিত করে। জর্ডান ও ইরাক উভয় দেশই তাকে বীর পদক প্রদান করে।

১৯৭১ সালে বাঙ্গালী হওয়ায় তাকে পাকিস্তান বিমান বাহিনী Grounded করে। পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশের জন্ম হলে তিনি নতুন গঠিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর Director of Flight Safety এবং পরবর্তীতে Director of Operation হিসেবে নিয়োগ পান।
১৯৭৭ সালে তিনি উইং কমান্ডার পদে পদোন্নতি পান এবং ঢাকা বিমান বাহিনী ঘাটির বেস কমান্ডার হন। ১৯৮০ সালে সাইফুল আজম বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণ করার পর তিনি দুই টার্মে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি Film Development Corporation এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকও ছিলেন।

তিনি ১৯৯১-৯৬ সালে পাবনা-৩ আসন থেকে (চাটমোহর উপজেলা, ফরিদপুর উপজেলা ও ভাঙ্গুরা উপজেলা) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (BNP) পক্ষে পঞ্চম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে নাতাশা ট্রেডিং এজেন্সি, লিঃ (এয়ার ক্রাফট ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি একটি ট্রাভেল এজেন্সিও পরিচালনা করেন। স্ত্রী নাতাশা, তিন সন্তানের জনক তিনি।


২০০১ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনী বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। তিনি বাইশ জন “Living Eagles”এর একজন। - রসিক হাকিম

See this video:

Popular Posts