- শাহাদাতুর রহমান সোহেল
পবিত্র আল-আকসা মসজিদের পূন্যভূমি এবং অসংখ্য নবী-রাসূলগণের স্মৃতিবিজড়িত জেরুসালেম ও ফিলিস্তিনের দখলদারী জায়নবাদী ইসরাইলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া এক চেতনার নাম “হামাস” । প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র ও আগ্রাসনের মুখে নিজেদের আন্দোলনকে সমুন্নত রেখে নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সমগ্র পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এই ইসলামী আন্দোলন। হামাস শব্দটির অর্থ আশা বা উদ্দীপনা। এটি মূলত: হারাকাত আল-মুকাওয়ামাআল-ইসলামিয়া “ইসলামী প্রতিরোধআন্দোলন” এর আদক্ষ্যর।
গাজা এবং পশ্চিম তীরে ইসলামি এই প্রতিরোধ আন্দোলন এর প্রকাশ্য আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৮৭ সালে, প্রথম ইন্তিফাদা’র মাধ্যমে। হামাস এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন শেখ আহমেদ ইয়াসিন, যিনি মূলত ছিলেন তৎকালীন ইখওয়ানুল মুসলিমীনের ফিলিস্তিন শাখার নেতা। ইয়াসিন ছিলেন পঙ্গু কিন্তু তবুও যুবক বয়স থেকেই তিনি ছিলেন গাজার নেতা। ১৯৭৮ সালে ৪৯ বছর বয়সী শেখ আহমেদ ইয়াসিন ফিলিস্তিনিদের সাহায্যের জন্য আল মুজাম্মা আল ইসলামী নামে একটি ইসলামী সংগঠন গড়ে তুলেন। সেখান থেকে ১৯৮৭ সালে ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার মাধ্যমে হামাসের আবির্ভাব ঘটে। ১৯৮৮ সালে গৃহীত হয় “হামাস চার্টার” যার ল্য হলো অধিকৃত ফিলিস্তিন থেকে দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো। তাদের ঘোষণাপত্রে মুসলিম ব্রাদারহুড সংশ্লিষ্টতার উল্লেখ করে। প্রথম ইন্তিফাদার সময়ে হামাসের প্রাথমিক ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল, ‘ইসরাইলকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করাটাই সংগঠনের মূল লক্ষ্য।’ সেই সঙ্গে ইসলাম ও ইহুদী ধর্মের বিরোধকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করে এটিকে মতাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। ধর্মবাদী চেতনার আলোকে এক সংগঠন গড়ার কথা বলা হয়েছিল ওই ঘোষণাপত্রে। মূলত দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বা আল আকসা ইন্তিফাদার সময়কালে (২০০০-২০০৫) হামাসের রাজনীতিতে এক বিশেষ রূপান্তর ঘটতে শুরু করে। এ সময়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের মতাদর্শিক অবস্থানকে ছাপিয়ে যায় ফিলিস্তিনের জাতীয় মুক্তি আন্দোলন। সেই আন্দোলনের প্রতি নিজেদের অঙ্গীকার জানিয়েই রাজনৈতিকভাবে হামাস ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।
হামাসের প্রতিষ্ঠাতা ফিলিস্তিনি ধর্মীয় নেতা শেখ আহমাদ ইয়াসিন। শেখ আহমেদ ইয়াসিন ছিলেন একজন পঙ্গু মানুষ এবং প্রায় অন্ধ ছিলেন। তিনি চলাফেরা করতেন হুইল চেয়ারে করে। যখন তার বয়স ১২ বছর তখন তিনি একটা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিবন্ধী হন। তিনি মিসরে লেখাপড়ার পর ফিলিস্তিনে ফিরে এসে প্রতিষ্ঠা করেন হামাস। ২০০৪ সালের ২২ মার্চ ভোরে বাসা থেকে ১০০ মিটার দূরের মসজিদে হুইল চেয়ারে করে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। ওই সময় ৬৪ অ্যাপাচি হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে শেখ আহমাদ ইয়াসিনকে হত্যা করে ইসরাইল। এ সময় তার সাথে থাকা বডিগার্ডসহ আরও ৯ জন পথচারী নিহত হন।
২০০৪ সালের ১৭ এপ্রিল হামাসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আবদেল আজিজ আল-রানতিসি ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হলে দায়িত্বে আসেন খালেদ মেশাল। একই বছর ১১ নভেম্বর ফিলিস্তিন কর্তৃপরে প্রেসিডেন্ট ফাতাহ নেতা ইয়াসির আরাফাতের জীবনাবসানের পর প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন (পিএলও) জনভিত্তি হারাতে থাকে। মূলত, ১৯৯৩ সালের ‘অসলো চুক্তি’র বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়লে ফিলিস্তিনে ফাতাহ ও পিএলওর জনসমর্থন কমে আসতে থাকে। আরাফাত পরবর্তী যুগে পিএলও যখন রাজনৈতিকভাবে ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়, ঠিক সেই সময়ে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ও প্রতিরোধ আন্দোলনের আস্থা অর্জনে সমর্থ হয় হামাস। ফিলিস্তিনে ২০০৬ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় তারা। তবে সরকার গঠনের পরপরই ইসরায়েল তাদের মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। আরাফাত-পরবর্তী মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহও হামাসের সরকারে যোগদান থেকে বিরত থাকে। ফাতাহ হামাসের ঐক্যবদ্ধ সরকার গঠনের আহবান প্রত্যাখ্যান করার পর রাজনৈতিক বিভেদ সহিংসতায় রূপ নেয়। পশ্চিম তীরে ফাতাহ তাদের পৃথক সরকার ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখে। অপরদিকে, অবরুদ্ধ গাজা থাকে হামাসের নিয়ন্ত্রণে। এরপর হামাস ও ফাতাহ বহুবার জাতীয় ঐক্যের সরকার প্রতিষ্ঠায় সম্মত হলেও তা বাস্তব হয়নি।
হামাসের নতুন রাজনৈতিক দলিলে স্পষ্ট করে বলা হয়, হামাসের লড়াই জায়নবাদের বিরুদ্ধে। তা ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে নয়। সেখানে বলা হয়, ‘যে জায়নবাদী ইসরায়েলি নাগরিকরা ফিলিস্তিনি ভূখন্ড দখল করে রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধেই লড়াই করছি আমরা।’ খালেদ মেশাল ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্নে হামাসের অবস্থান সম্পর্কে বলেন, ‘নতুন নীতিতে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনও সুযোগ রাখা হয়নি। তবে আমরা ১৯৬৭ সালের ৪ জুন যে সীমান্ত নির্দেশ করা হয়েছিল, তার ভিত্তিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে আগ্রহী। যার রাজধানী হবে জেরুজালেম, আর সব শরণার্থী ফিরে পাবে তাদের নিজ নিজ ঘর ফিরে পাবে।’
হামাস একটি স্বতন্ত্র সংগঠনে রূপান্তর হলেও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইখওয়ানুল মুসলিমীন, জামায়াতে ইসলামী এবং ্উক্ত ধারার সকল সংগঠনের সাথে সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মৌলানা মতিউর রহমান নিজামীর সাথে খালেদ মেশাল সাক্ষাৎ করেন। ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট রজব তায়িপ এরদোগানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন হামাসের নেতা খালেদ মিশাল। ২০১০ সালে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে এরদোগান হামাসকে নিজেদের ভূখন্ড রক্ষার জন্য সংগ্রামরত প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দল’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। ২০২০ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান আয়া সোফিয়াকে আবারো মসজিদে পরিণত করার পর ইসরাইলের কাছ থেকে "আল-আকসা মসজিদকে মুক্ত করার" প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন।
মিসরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসি সরকারের সামরিক অভ্যুত্থানে পতনের অন্যতম কারণ হামাসের সাথে সম্পর্ক। মুরসির শাসনকাল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মৃত্যু যেন অনিবার্য ছিল তার। তিনি ফিলিস্তিন বিশেষ করে গাজাবাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। হামাসের সাথে ছিল সখ্য, মার্কিন-ইসরাইল-সৌদি জোটের কাছে যা অমার্জনীয় অপরাধ। হামাসের সাথে আঁতাত করে মিসরে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অভিযোগে বিচার চলাকালেই মুরসি আদালতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল কেউ মিসরের মতায় থাকতে পারবেন না। কারণ, মিসরের ভৌগোলিক অবস্থান ইসরাইলের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিসরকে বাগে রাখতে পারলে গাজা পুরোটাই ইসরাইল দখল করতে পারে। অন্তত হামাসকে দুর্বল করে দেয়া যাবে, গাজার ওপর অবরোধ অব্যাহত রাখা যাবে। কেননা মিসর সীমান্ত বন্ধ না করলে ইসরাইলের গাজা অবরোধ ব্যর্থ হয়। অথচ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই মুরসি মিসরের সাথে গাজার রাফাহ সীমান্ত খুলে দেন। এ ছাড়া মিসরে ইসরাইলী দূতাবাসে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা করে। এটি ইসরাইল কোনোভাবে মেনে নিতে পারেনি। এসব ঘটনা মুরসির ক্ষমতাচ্যুতি ও মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে। ১৯৭৯ সালে মিসর-ইসরাইল শান্তিচুক্তি অনুসারে মিসর গাজার রাফাহ সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। ওই চুক্তিতে মিসর ও ইসরাইলের সম্পর্কে শান্তি স্থাপিত হলেও গাজাবাসীর জীবনে নেমে আসে চরম অশান্তি। রাফাহ সীমান্ত উন্মুক্ত হলে গাজাবাসী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মিসর থেকে সহজেই আমদানি করতে পারে। অন্যথায় গাজা-ইসরাইল সীমান্তের কেরেম সাহলম সীমান্ত দিয়ে আমদানি করতে হয়। কার্যত এ সীমান্ত ইসরাইল বন্ধই রাখে। ইসরাইলের লক্ষ্য, অবরোধ আরোপ করে গাজাবাসীকে নিঃশেষ করে দেয়া। রাফাহ সীমান্ত বন্ধ করে দিলে ইসরাইলের খায়েসের ষোলকলা পূর্ণ হয়। কয়েক দশক ধরে ইসরাইলের সাথে হাত মিলিয়ে মিসরের শাসকেরা কাজটি করছিলেন। কিন্তু মুরসি ক্ষমতায় এসে রাফাহ সীমান্ত বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নেন। মার্কিন-ইসরাইলের পক্ষ্ থেকে ১৯৭৯ সালের চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও মুরসি তা আমলে নেননি। ১৯৭২ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর থেকে মার্কিন-ইসরাইলের পুতুল সরকারই মিসরের শাসন ক্ষমতায় ছিল। বিপরীত স্রোত থেকে মুরসি আসায় তাকে হটাতে মার্কিন-ইসরাইল জোট সক্রিয় হয়। এদের সাথে যোগ দেয় সৌদি আরব। প্রকৃতপক্ষে ড. মোহাম্মদ মুরসি প্রকৃতপক্ষে ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামের একজন শহীদ।
১৯৪৮ সালের মে মাসে ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষনা দিয়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনীকে বিতারিত করা হয় নিজ আবাস ভূমি থেকে। শতকরা ৯২ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমেরিকা ও বৃটেনের বর্বরতার চরম নিদর্শন। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইখওয়ানুল মুসলেমীন ফিলিস্তিন যুদ্ধে মুজাহিদ বাহিনী প্রেরণ করে। এ যুদ্ধের বিবরণ তুলে ধরেছেন ইখওয়ানের অন্যতম নেতা ওস্তাদ কামেল শরীফ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ইখওয়ানুল মিসলেমীন ফি হরবে ফিলিস্তিন অর্থাৎ ফিলিস্তিন যুদ্ধে ইখওয়ানুল মুসলেমীন গ্রন্থে। মুসলমানরা যখন ইসরাইলের সাথে একের পর এক পরাজয় বরণ করছিল তখন ইখওয়ানের মুজাহিদ বাহিনী অসাধারণ সফলতা অর্জন করে। ইখওয়ানের তীব্র আক্রমনের মুখে ইসরাইলের অবৈধ অস্তিত্ব মুছে যাওয়ার উপক্রম হয়। কখন ইহুদীদের মদদগার বৃটেন-রাশিয়া-আমরিকার চাপে তৎকালীন পুতুল রাজতান্ত্রিক সরকার ইখওয়ানের বিপ্লবী মুজাহিদ বাহিনীকে ফিলিস্তিন থেকে ফিরিয়ে আনে। পরে ইখওয়ানুল মুসলেমীনকে মিশরে বেআইনী ঘোষণা করে এবং কঠোর অত্যাচার-নির্যাতন চাপিয়ে দেয়। ১৯৪৯ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারী ইমাম হাসান-আল-বান্নাকে প্রকাশ্যে গুলি করে শহীদ করা হয়। অতএব ইমাম হাসান-আল-বান্না হলেন ফিলিস্তিনি মুক্তি সংগ্রামে মিশরীয় শহীদদের নেতা। এখানে উল্লেখ্য যে. শহীদ বান্নার মৃত্যুর দুইদিন পর রুডস চুক্তি সম্পন্ন হয় এবং মিশর ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতি প্রদান করে। এর দশ দিন পর জর্দান এবং তার তার এক মাস পর সিরিয়া ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
ইখওয়ান-জামায়াত এবং এই ধারার সকল সংগঠন হামাসের সাথে সহযোগিতায় বিশ্বব্যাপী অগ্রবর্তী রয়েছে, শুধু তাই নয় এসব সংগঠন সামগ্রিকভাবেই ফিলিস্তিনিদের সহযোগিতায় নিয়োজিত। এজন্য ইহুদীবাদী শক্তি ও তার দোসররা ইখওয়ান-জামায়াতের সাথে দুশমনিতে লিপ্ত। হাদীসে ইহুদী রাষ্ট্রের আবির্ভাব ও তাদের সাথে মুসলমানদের লড়াইয়ের ভবিষ্যদ্বানী আছে। এদের সম্পর্কে হাদীসে উচ্চ মর্যাদা বর্ণিত আছে। এখানে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হাদীস উল্লেখ করছি: “রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর সাহাবাদের বলেন- “শেষ বিচারের দিনে এমন কিছু মানুষকে আনা হবে, যাদের বুক ও ডান হাতে জ্বলজ্বল করতে থাকবে নূর, তাদেরকে বলা হবে, ‘আজকে তোমাদের জন্য সুসংবাদ, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমাদের কল্যাণ হোক, তোমরা চিরদিনের জন্য প্রবেশ করো জান্নাতে।’ তাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার এই ভালবাসা দেখে নবী-রাসূলগণ পর্যন্ত ঈর্ষান্বিত হবেন। একথা শুনে সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ, এরা কারা?" উত্তরে মুহাম্মাদ (সা) বললেন, “এরা আমাদের (নবীদের) মধ্য হতেও না, এরা তোমাদের (সাহাবীদের) মধ্য হতেও না। তোমরা আমার সঙ্গী, কিন্তু তারা আমার বন্ধু। তারা তোমাদের অনেক পরে আসবে। তারা কোরআনকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাবে এবং সুন্নাহ(রাছুলের আদর্শ)কে মৃত অবস্থায় পাবে। তারা শক্তভাবে কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরবে এবং পুনরুজ্জীবিত করবে। তারা এগুলো অধ্যয়ন করবে এবং মানুষকে শেখাবে। কিন্তু একাজ করতে গিয়ে তারা তোমাদের চেয়েও ভয়াবহ ও কঠিন নির্যাতনের শিকার হবে। প্রকৃতপক্ষে তাদের একজনের ঈমান হবে তোমাদের চল্লিশজনের ঈমানের সমান। তাদের একজন শহীদ হবে, তোমাদের চল্লিশজন শহীদের সমান। কেননা তোমরা সত্যের পথে একজন সাহায্যকারী (আল্লাহর রাসূল) পেয়েছ, কিন্তু তারা কোন সাহায্যকারী পাবেনা। প্রত্যেক জায়গায় তারা অত্যাচারী শাসক দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকবে এবং তাদের অবস্থান হবে বায়তুল মাকদিসের চারপাশে। তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নুসরাহ (সাহায্য) আসবে এবং তারা এই বিজয়ের গৌরবকে প্রত্যক্ষ করবে। তারপর তিনি (রাসূল সা) দু’আ করলেন- “হে আল্লাহ, তুমি তাদেরকে নুসরাহ দান কর। জান্নাতে তুমি তাদেরকে আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ কর” [ মুসনাদে ইমাম আহমাদ ] । এ হাদীসটি নিয়ে পরবর্তী একটি নিবন্ধে আলোচনা করবো ইনশা-আল্লাহ।
হামাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আলী আহমাদ মাবরুর লিখিত গার্ডিয়ান পাবলিকেশনস প্রকাশিত “হামাস : ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলনের ভেতর-বাহির” এই বইটি পড়তে পারেন।www.rokomari.com,
www.boibazar.comসহ বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইটে এই বইটি পাওয়া যায়।
.........................................................................................................
কোন কিছুই দমাতে পারে নাই আমাদের এই বীর ফিলিস্তিনী ভাইটিকে... মাশা'আল্লাহ! (লক্ষ করুন তার পায়ের দিকে)। তাঁর পরিবারকে রক্ষার তাগিদে, তাঁর অধিকার, তাঁর জন্মভূমিকে ফিরে পাওয়ার স্বপ্নে, তাঁর মাকে, বোনকে রক্ষা করার স্পৃহায়, তাঁর উম্মাহকে নিরাপদ রাখার অঙ্গিকারে বাধ সাধতে পারেনাই তার শারীরিক অক্ষমতা।
তাঁর পা নেই (হয়তো তাও তিনি হারিয়েছেন বর্বরদের আঘাতে) কিন্তু তার সেই সাহস আর হৃদয় দিয়েই তিনি তার মা-বোন-ভাই-উম্মাহকে রক্ষার জন্য আজ তিনি নরপশুদের হামলার জবাবে ক্রাচে ভর করে দাঁড়িয়েছেন বীরদর্পে... আল্লাহ এই ভাই-বোনগুলোকে বিজয় দান করুন, আমীন
টহলরত ইসলামী প্রতিরোধ যোদ্ধা ভাইদের জন্য গাজাবাসী সানন্দে- স্বেচ্ছায় খাদ্য বিলাচ্ছে, আপ্যায়ন করাচ্ছে, অন্যরকম এক রুহানী দৃশ্য
হামাসের প্রতিষ্ঠাতা ফিলিস্তিনি ধর্মীয় নেতা শেখ আহমাদ ইয়াসিনকে ইসরাঈল হত্যা করার পর আমি শাহাদাতুর রহমান সোহেল নীচের কবিতা লিখি, এটা একটি দীর্ঘ কবিতার অংশবিশেষঃ
“কবিরা দেখ কি দারুণ মিথ্যুক হয়-
‘হাজার বছর পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে’
হাজার বছর কি কেউ পথ হাঁটতে পারে?
মৃদু হেসে বললাম-এটা তো মানস ভ্রমন।
হাজার বছর পথ হাঁটার কথা বলতেই
ইন্তিফাদার উত্তাল তরঙ্গ মালায়
সাক্ষাৎকার শুনলাম রেডিওতে
ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার প্রাণপুরুষ,
দীর্ঘ সংগ্রামের অমোঘ মানস প্রস্তুতি;
আমাদের নেতাকে ওরা হত্যা করলো,
রচিত হলো হাজার বছরের এক সেরা কাব্য,
আমাদের গন্তব্য এখন নিকটে -
শাহাদাত, শাহাদাত, শাহাদাত -
শাহাদতের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে
নাছরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারীব।”