Showing posts with label তুরস্ক. Show all posts
Showing posts with label তুরস্ক. Show all posts

Wednesday, December 18, 2019

বর্তমানে তুরস্কের বিজয়ী ইসলামী শক্তির সাথে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কের নানা খন্ডচিত্র এবং অন্যান্য।

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল 

                    তুর্কী ওসমানী খেলাফত ১৪শ থেকে প্রারম্ভিক ২০শ শতাব্দীর শুরু প্রায় ৬ শত বছর পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ’র নেতৃত্ব প্রদান করে এবং তারা  সম্স্ত দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ দখল  করে। তারা দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার বেশিরভাগ অঞ্চল প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ করত। ১৯২৪ সালে তুর্কী খেলাফতের পতনের পর কামালের চরম সেকুলার শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মুসলিম উম্মাহ ইসলামী নেতৃত্বশূণ্য হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ইখওয়ান-জামায়াতের প্রেরণা ও সহযোগিতায় তুরস্কে ইসলামকে পূনরায় বিজয় করার সংগ্রাম গড়ে উঠে এবং বিস্তার লাভ করে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাথেও তাদের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে। তুরস্কে ইখওয়ান-জামায়াতের সামগ্রিক তৎপরতা অত্যন্ত ব্যাপক। এখানে তুরস্কের প্রাধান্যশীল ইসলামী আন্দোলনের সাথে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্কের কিছু খন্ডচিত্র ও এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য কিছু বিষয় নীচে দেওয়া হলো: 

১) তুরস্কে ইসলামী শক্তির বিজয়, ড: নাজমুদ্দীন আরবাকান এবং জামায়াত ইসলামী

২) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে তুরস্কের প্রখ্যাত আলেম নুরুদ্দিন ইলদিজের লেখা একটি চিঠি।

৩) তুরস্কে মাওলানা মওদুদী ও তাফহীমুল কুরআনের প্রভাব










             মুসলিম উম্মাহ’র নেতৃত্বদানকারী এবং বর্তমান বিশ্বে একটি প্রাধান্যশীল দেশ তুরস্কে ইখওয়ান-জামায়াত সম্পর্কিত শক্তির ব্যাপক সাফল্য অত্যন্ত উৎসাহব্যাঞ্জক। তবে কাজ এখনো অনেক বাকী। আমরা কায়মনোবাক্যে দোয়া করি- মহান আল্লাহ উক্ত ইসলামী আন্দোলনকে তুরস্কে আরো এগিয়ে যাওয়ার এবং চুড়ান্ত মঞ্জিলে-মকসুদে পৌঁছার তৌফিক দান করুন, আমিন। তবে আল্লাহ না করুন, দেশী-বিদেশী শক্তির চক্রান্তে যদি সাময়িক কোন বিপর্যর আসে হতাশ হওয়া যাবে না। বার বার চেষ্টা করেও যখন এ শক্তিকে দমিয়ে দেয়া যায়নি, বরং অধিকতর শক্তি সঞ্চয় করে পূণরুত্থান ঘটেছে তখন আগামীতেও এ শক্তি আরো এগিয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ। 

রিসেপ তাইয়্যেব এরদোগান, খেলাফতের পূণরুদ্ধার নিয়ে এক বিশেষ ভিডিও দেখুন প্লীজ


Wednesday, January 9, 2019

মাওলানা নিজামী ও কাদের মোল্লার নামে তুরুস্কের রাজধানীতে দু’টি রাস্তার নামকরণ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রধান এবং সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অন্যায় ভাবে ফাসির বিরুদ্ধে তুরস্কের যুব ফাউন্ডেশন (TUGVA) এর পক্ষ থেকে  তুরস্কে বাংলাদেশ এম্বাসীর সামনে এক বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ এর আয়োজন করা হয়। তুরস্ক যুব ফাউন্ডেশন এর আঙ্কারা প্রধান আব্দুল কাদির কোজাত্তেপের প্রতিনিধিত্বে যুব প্ল্যাটফর্মের সমর্থন নিয়ে জাতীয় তুর্কি ছাত্র ইউনিয়নের ঐক্য ফাউন্ডেশন এই প্রতিবাদ সমাবেশ এর আয়োজন করেন। এসময় তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় অবস্থিত বাংলাদেশ এম্বাসীর রোড নং ৩৯১ এর স্থলে “শহীদ রাহমান নিজামী” সড়ক এবং তার অপর পাশে রোড নং ৪০১ স্থলে “শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা” সড়ক নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়।
এসময় তুরস্ক যুব ফাউন্ডেশন এর আঙ্কারা প্রধান বলেন “বাংলাদেশের জালিম আওয়ামী সরকারের পক্ষ থেকে মাওলানা নিজামী সাহেব কে অন্যায় ভাবে দেয়া ফাঁসির বিরুদ্ধে আমরা বরাবরের মত জোড় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি এবং আজ থেকে এই ৩৯১ নং রোড আমাদের এই শহীদের নামে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি”।তিনি আরো বলেন “বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া এই রাজনৈতিক বিচার যা আমরা সব সময় প্রত্যাখান করে এসেছি এবং আমাদের এই যুবকদের প্রতিবাদ আরো একবার বাংলাদেশ এর মুসলমানদের সাথে কন্ঠ দিয়ে জালিম সরকার কে জানিয়ে দিচ্ছে জালিম কোনদিন ই স্থায়ী হয় না। অর্থ আর রাজনৈতিক কারনে এই হত্যার কারনে আমরা আবার এ বলছি ধ্বংস হোক সব জালিম।“
বাংলাদেশ এম্বাসীর সড়ক এখন থেকে মাওলানা নিজামী সড়ক হিসেবে পরচিত। “যে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর এই জগন্য হত্যাকান্ড যা সারা বিশ্ব দেখে শুধু নিরব দর্শক এর ভূমিকা পালন করেছেন। সেই নিজামী শুধু একজন আলেম ই ছিলেন না, তিনি একটি “জ্ঞানের পৃথিবী” ছিলেন।
অবশ্যই এইসব জালিমগন আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি পাবেন। তবে মুসলিম বিশ্বের নিজেদের মাঝে সামান্য বিষয়ের কারনে ঘটিত বিতর্ক বন্ধ করতে পারলে এই সব জালিমগন অতি দ্রুত নিঃশেষ হবেন।পাকিস্থান,বাংলাদেশ এবং ভারতের মুসলমানদের পক্ষ থেকে করা সাহায্য বিশেষ করে আল্লামা ইকবাল এর থেকে পাওয়া সাহায্য তুরস্ক কোনদিন ভূলবে না। আর সেই সাহায্যের প্রতিদান হিসেবে আমরা সব সময় এসব মুসলমানদের সাথে ছিলাম ও আছি। বাংলাদেশের মুসলমানগন, অন্যায় আইনে বিচার চলা আরো যে সব নেতারা রয়েছেন তারা, বাংলাদেশের মজলুম জাময়াতে ইসলামী যে একা নয় সেটা আরো একবার মনে করিয়ে দিচ্ছি”। বলে প্রতিবাদ সমাবেশ বক্তাগন বক্তব্য রাখেন।
যুব ফাউন্ডেশন এর প্রধান খোজাত্তেপে এসময় বলেন”আমরা আজ যে আমরা “শহীদ রহমান নিজামী” এবং “শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা” সড়ক এর ফলক দিয়েছি সেটা অতি দ্রুত আনুষ্ঠানিক ভাবে স্থাপন করার জন্য আঙ্কারা জেলা প্রশাসক এর কাছে আবেদন জানিয়েছি এবং সেটা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে আমরা আশা রাখি।উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশে তুরস্কের যুব ফাউন্ডেশন এর বিভিন্ন জেলার নেতারা এবং অন্যান্য বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন।

Friday, September 21, 2018

শহীদ মাওলানা নিজামী (রহঃ) সম্পর্কে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের কিছু কথা


ভিডিওটি দেখুন, প্রচার করুন। টার্কিশ ভাষাকে মনে হবে বাংলা শুনছেন!
এরদোগান নিজামী শাহাদাতের সময় প্রোগ্রামে শহীদ নিজামীর কথা বলছেন। আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামে যেমন বলেছেন তেমনি বলেছেন একদম নিজেদের ঘরোয়া সমাবেশে। এটি তাদের একান্তই নিজেদের একটি সমাবেশ। সেখানে তিনি বলেন-
"বাংলাদেশের ঘটনা শুনেছেন..? মতিউর রহমান নিজামী, যাকে ৪৫ বছর আগের কাহিনীর কারনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ওখানে আমাদের ঈঐচ (ধর্মনিরপে- প্রধান বিরোধী দল) এর মত এক রাজনৈতিক দল আছে। যার প্রধান এক মহিলা মতিউর রহমান নিজামীর ফাসিঁ দিয়েছে।
যার বয়স ৭৩, যাকে ৪৫ বছর আগের কাহিনীর কারনে ফাসিঁ দেওয়া হয়েছে। যিনি একজন বিজ্ঞ মানুষ, আলেম ও সাবেক মন্ত্রী....
কী বলতে চাই জানেন..? বেশী কিছু বলতে চাইনা..! শুধু এতটুকুই বলব, জালিমদের জায়গা জাহান্নাম।
কিন্তু এই অন্যায়ের কেউ কী প্রতিবাদ করেছে..? না, করেনী..। গণতন্ত্রকামীরা কী আওয়াজ করেছে..? না, করেনী..। কিন্তু অন্য ধর্মের হলে পশ্চিমাতে এটা নিয়ে কেয়ামত ঘটে যেত। উনি শুধু মুসলমান ও মুসলিম নেতা হওয়ার কারনেই সবাই চুপ.... "
সর্বশেষ বলেছেন.... সকল জুলুমেরই একটা শেষ আছে, সকল খারাপের পরই একটা বসন্ত আসে.... এবং সেই দিন আসবেই ইনশাআল্লাহ....
উনি সর্বশেষ তুরস্কের কিছু কথা বলে একটি হাদীস উল্লেখ করেন, "মান সাবারা..... জাফারা" যে ধৈর্য্য ধরে সে বিজয়ী হয়।

শহীদ মাওলানা নিজামী (রহঃ) সম্পর্কে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের কিছু কথা,
প্রেসিডেন্ট এরদোগান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান

Thursday, September 20, 2018

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে স্বরণীয় একটি বিকেল! - শিবির নেতা হাফিজুর রহমান


এরদোয়ান : দ্যা চেঞ্জ মেকার লিখতে গিয়ে বেশ কয়েকবারই একে পার্টির হেড কোযার্টারে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে কিংবা প্রয়োজন হয়েছে। নয় তলা বিশিষ্ট এই কার্যালয়ের নবম তলায় দলীয় চেয়ারম্যানের অফিস। নিচ থেকে উপরে উঠতে চারটি লিফট রয়েছে, যেগুলো আটতলা পর্যন্ত যায়। স্বভাবতই নয় তলায় উঠতে আলাদা সিড়ি/লিফট ব্যবহার করতে হয় এবং দরকার হয় স্পেশাল এপয়েন্টমেন্টের। বই লিখতে গিয়ে আটতলা পর্যন্তই উঠেছি। আটতলায় দলের সাংগঠনিক সভাপতি এবং সেক্রেটারী জেনারেলের অফিস। সাংগঠনিক সভাপতির সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম গত বইতে। সবমিলে নয়তলা নিয়ে রহস্যের কোন শেষ ছিলনা!!
সেদিন ছিল প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রধান উপদেষ্টার সাথে এপয়েন্টমেন্ট, উনাকে বই উপহার দেওয়ার জন্য। প্রধান উপদেষ্টার অফিসটি দলীয় চেয়ারম্যানের রুমের পাশেই। উনি আবার একজন একাডেমিশিয়ান এবং ইসলামী আন্দোলনগুলো উনার গবেষণার অন্যতম বিষয়। তাই উনার সাথে একাডেমিক কিছু আলোচনাও জমে ছিল। আমরা উনার সাথে দেখা করে বই তুলে দেওয়ার পর গল্প করছি এবং তুর্কি চায়ে চুমুক দিচ্ছি।
হঠাৎ প্রেসিডেন্ট উনাকে ডাকলেন। উনি দেখা করে ফিরে আসার পর আবারো আড্ডা শুরু হলো। বিদায় নিতে যাবো এমন সময় আবারো প্রেসিডেন্ট উনাকে ডাকলেন। এবার আমরা একটু সুযোগ নিতে চাইলাম। যদিও প্রথমে বলতে কিছুটা ইত:স্তত বোধ করছিলাম তারপরও বলেই ফেললাম, আমরা কি একটু সালাম দেওয়ার সুযোগ পাবো?
বলার পর নিজের কাছে আরো লজ্জিত হলাম। কারণ কোন প্রস্তুতি এমনকি চিন্তাও ছিলনা। ড্রেসআপও অফিসিয়াল না। উনি বললেন: "দেখি, উনাকে বলবো তোমাদের কথা। যদিও সিডিউল খুব ব্যস্ত।"
উনি গিয়ে আর ফিরছেন না। আমাদের আরেকটি এপয়েন্টমেন্ট ছিল, তাই উনার পিএসকে (প্রধান উপদেষ্টার) বলে বের হয়ে গেলাম। ষষ্ট তলায় আসার পর পিএস ফোন দিলো, আপনাদের ডাকছে। দৌড়িয়ে গেলাম, প্রধান উপদেষ্টা প্রেসিডেন্টের দরজায় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
উনি আমাদের নিয়ে উনার রুমে নিয়ে গেলেন। প্রেসিডেন্ট দরজার কাছে এসে আমাদের স্বাগতম জানালেন। তুরস্কের সংস্কৃতিতে স্বাগতম জানানো ও বিদায় দিতে দরজা পর্যন্ত আসার এই বিষয়টি আমাকে খুব অবাক করে। আপনি যেই হোন না কেন, আপনার পজিশন যাই হোক না কেন... তাদের মেহমান হিসেবে গেলে তারা আপনাকে দরজায় এসে স্বাগতম জানাবে এবং বিদায় দিবে।
আমরা সালাম দিলাম, প্রেসিডেন্টের হাতে চুমু খেতে গেলাম। উল্লেখ্য, তুরস্কে বয়োজেষ্ট ও সম্মানিত ব্যক্তিদের হাতে চুমু খাওয়া হয়। উনি হাত সরিয়ে নিলেন এবং আমাদেরকে বুকে জড়িয়ে কপালে চুমু খেলেন।
আমি পরিচয় দিলাম; হাফিজুর রহমান, বাংলাদেশী, গাজী ইউনির্ভিসিটিতে পিএইচডি করছি আর আপনার জীবনী গ্রন্থের লেখক।
উনি হেসে বললেন: Yes, I Know (আমার মনে পড়েছে/ আমি জানি)।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সাধারণত ইংরেজী খুবই কমই বলেন। উনার মুখ থেকে ইংরেজী শুনে বেশ অবাকই হলাম।
এরপর আমাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলেন। পরিবারে কে কে আছে, কোথায় থাকি, ওয়াইফ কি করে, বাচ্চা কয়জন, কতবড় হইছে, একাডেমিক কি অবস্থা ইত্যাদি ইত্যাদি। বাচ্চা একটা শুনেই বললেন; "নো নো, হবে না। কমপক্ষে পাঁচটা নিতে হতে হবে।" আমি হেসে ইনশাআল্লাহ বললাম। উনি খুব সিরিয়াসভাবে বললেন: "শুধু ইনশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ বললেই হবে না। পদক্ষেপ নিতে হবে"। এভাবে সবাইকে জিজ্ঞাসা করলেন। উল্লেখ্য, আমাদের সাথে আরো কয়েকটি দেশের আন্তর্জাতিক ছাত্ররা ছিল। অবশেষে কিছুক্ষণ খোসগল্প করে বিদায় নেওয়ার পালা। উনি সবাইকে আবারো বুকে জড়িয়ে আদর করে বিদায় দিলেন।
সত্যিই স্বরণীয় মুহুর্তু। অনেকটা মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি!! মাশাআল্লাহ। উনার মুখ থেকে বইয়ের ব্যাপারে "Yes I know" বাক্যটি আমার চিরকাল মনে থাকবে এবং আজীবন লেখালেখীর উৎসাহ হবে।
শেষ করছি লেখালেখি নিয়ে দুটি ঘোষণার মাধ্যমে;
১. আলহামদুলিল্লাহ, আমার দ্বিতীয় বই "আমার দেখা তুরস্ক (বিশ্ব ব্যবস্থার নতুন শক্তি তুর্কি জাতির ভেতর-বাহির)" বইমেলাতে আসছে ইনশাআল্লাহ। (পরবর্তী পোস্টে বইয়ের আলোচ্যসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত লিখবো)।
২. এরদোয়ান : দ্যা চেঞ্জ মেকার বইয়ের পঞ্চম সংস্করণ বই মেলায় আসবে। লেখার পর প্রথমবারের মতো বর্ধিতরুপে আসছে এই সংস্করণটি। যাতে ২০১৮ সালের নির্বাচনসহ সমসাময়িক তুরস্কের আলোচিত কয়েকটি ঘটনা যোগ হবে।

Thursday, August 9, 2018

তুরস্কের নির্বাচন এরদোগানের জয় ও আগামীর তুরস্ক -হাফিজুর রহমান

গত বছরের রেফারেন্ডামে নতুন সরকারপদ্ধতি গৃহীত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনটি আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের নভেম্বরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেশ কিছু কারণে এগিয়ে আনা হয়। বিশেষ করে সিরিয়া ও ফিলিস্তিনসহ বিশ্বরাজনীতির নানা ইস্যুতে তুরস্কের যখন শক্তিশালী ভূমিকা রাখা দরকার তখন প্রেসিডেন্ট এরদোগান সম্ভবত চেয়েছিলেন দেশে একটি স্থিতিশীল সরকার আগে জরুরি। কারণ এই বড় ইস্যুগুলোর সমাধানে কাজ করার মাঝখানে দেশে নির্বাচন থাকলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। এ জন্যই একে পার্টির জোটে থাকা জাতীয়তাবাদী দল (এমএইচপি) গত ১৭ এপ্রিল আগাম নির্বাচনে যাওয়ার ইঙ্গিত প্রদান করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট এরদোগান সংবাদ সম্মেলনে ২৪ জুন প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা দেন।

নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার পর বিরোধী দলগুলো নির্বাচনকে স্বাগত জানায় এবং কম সময়ের মধ্যেই দেশে নির্বাচনের আমেজ সৃষ্টি হয়। নিম্নে নির্বাচনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক উলেখ করছি:
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জোট ও দলসমূহ:

এবারের নির্বাচনে দীর্ঘদিন পর তুরস্কে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বড় দলগুলো। গত ১৬ বছর টানা এককভাবে ক্ষমতায় থাকা একে পার্টি জাতীয়তাবাদী দল এমএইচপি ও ইসলামী জাতীয়তাবাদী দল বিবিপির সাথে জোট করার ঘোষণা দেয়। অপর দিকে প্রধান বিরোধী দল সেক্যুলার সিএইচপি জাতীয়তাবাদী দল থেকে ভেঙে সৃষ্টি হওয়া ইয়িপার্টি, ইসলামপন্থী দল সাদাত পার্টি ও ডানপন্থী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির সাথে জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। কুর্দীদের দল এইচডিপিসহ আরো ছোট আকারের কয়েকটি দল এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের পরিচিতি:

সরকারি জোটভুক্ত দলগুলো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ও একে পার্টির চেয়ারম্যান রজব তাইয়্যেব এরদোগানকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু বিরোধী জোট একক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়। যার ফলে সিএইচপি থেকে প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান মোহারের মইনজে, ইয়িপার্টি থেকে দলের চেয়ারম্যান মেরেল আকসেনার, সাদাত পার্টি থেকে দলের চেয়ারম্যান তেমেল কারামুলাহওলু প্রার্থী হন। সরকারি ও বিরোধী জোটের বাইরে কুর্দীদের দল থেকে সালাহউদ্দিন দেমিরতাস এবং ভাতান পার্টি থেকে দুয়ুপেরিনজিক প্রার্থী হন। তাতে মোট ছয়জন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন এবারের নির্বাচনে।
নির্বাচনী প্রচারণা ও প্রচারণার সময়কার তুরস্ক

প্রার্থী ঠিক করার পর রাজনৈতিক দলগুলো প্রচারণা শুরু করে। প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও একে পার্টি তাদের ১৬ বছরের সফলতার নানা দিক, বাস্তবায়িত প্রজেক্টগুলো ও আগামীর পরিকল্পনা নিয়েই মূল প্রচারণা চালায়। আর বিরোধী দলগুলো ১৬ বছর ধরে টানা ক্ষমতায় থাকা এরদোগান ও একে পার্টির বিপরীতে ‘পরিবর্তন’ শব্দটিকে নিয়ে মূল প্রচারণা চালায়।
নির্বাচনী প্রচারণায় পশ্চিমা মিডিয়া, লবি এবং দেশীয় নানা গ্রুপের কিছু কার্যক্রম ছিল খুবই ন্যক্কারজনক। বিশেষ করে নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ডলারের দাম বাড়ানো ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের হঠাৎ দামবৃদ্ধি অনেকটা অস্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে। মে মাসে একরাতেই ডলারের দাম বেশ বেড়ে যায়। সরকার যদিও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কারণে কিছুটা প্রশমিত হয় তবুও বেশ অস্থিরতা ছিল।

নির্বাচন:

২৪ জুন তুরস্কের স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। নির্বাচনটি ছিল বেশ উৎসবমুখর এবং ব্যাপক অংশগ্রহণমূলক। ৮৬.২% ভোটারের উপস্থিতি ছিল। নির্বাচনে কারচুপি হয়নি কিংবা কোনো দল কারচুপির অভিযোগ করেনি বরং বিরোধী দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পরাজয় মেনে নিয়ে এরদোগানের বিজয়ে শুভেচ্ছা জানান।
নির্বাচনের ফলাফল:

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন:
১. রজব তাইয়্যেব এরদোগান (সরকারি জোট)-৫২.৬%
২. মোহারের মইনজে (সিএইচপি)-৩০.৬%
৩. সালাহউদ্দিন দেমিরতাস (এইচডিপি)-৮.৪%
৪. মেরেল আকসেনার (ইয়িপার্টি)-৭.৩%
৫. তেমেল কারামুলাহওলু (সাদাত পার্টি)-০.৯%
৬. দুয়ুপেরিনজেক (ভাতান পার্টি)-০.২%

সংসদ নির্বাচন:

১. সরকারি জোট : ৩৪৪টি আসন (৫৩.৭% ভোট)
ক. একে পার্টি : ২৯৫টি আসন (৪২.৬% ভোট)
খ. এমএইচপি: ৪৯টি আসন (১১.১% ভোট)

২. বিরোধী জোট: ১৮৯টি আসন (৩৩.৯% ভোট)

ক. সিএইচপি: ১৪৬টি আসন (২২.৬% ভোট)
খ. ইয়িপার্টি: ৪৩টি আসন (১০% ভোট)
গ. সাদাত পার্টি : ০০টি আসন (১.৩% ভোট)

৩. এইচডিপি: ৬৭টি আসন (১১.৭% ভোট)
নির্বাচনের ফলাফল : কিছু পর্যালোচনা

১. বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পরিবর্তনের আওয়াজ ও আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্রের পরও এরদোগান ও একে পার্টির জয় শুধু তুরস্কে নয় বরং পুরো মুসলিমবিশ্বেই স্বস্তি নিয়ে আসে।
২. এক সময় ইউরোপের রুগ্ণ দেশ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তুরস্কে একে পার্টি বিশাল উন্নয়নযজ্ঞ পরিচালনা করার মাধ্যমে যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত করেছে তাতে জনগণের ধারাবাহিক সমর্থন আছে কিনা তা জানতে নির্বাচনটি একে পার্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নির্বাচনে একে পার্টির স্বস্তির জয় জনগণের ধারাবাহিক সমর্থন তাদের ওপর আছে বলে প্রমাণ করে।
৩. বিশ্বরাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ভূমিকা, সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার পদক্ষেপ এবং আগামীর রাজনীতিতে তিনি যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন তাতে তুরস্কের জনগণের ভরসা আছে কিনা তা এরদোগানের জানা জরুরি ছিল। নির্বাচনে এরদোগান আগের চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় এক্ষেত্রে জনগণের ইতিবাচক সমর্থন আছে বলে বুঝা যায়।
৪. বিরোধীদল কিংবা জোটের দিক থেকে চিন্তা করলে তাদের ফলাফল পুরোপুরি প্রত্যাশিত না হলেও একদম অপ্রত্যাশিত হয়নি। নির্বাচন-পরবর্তী বিরোধী দলগুলোর সংবাদ সম্মেলন পর্যালোচনা করলে তাতে স্পষ্ট হয় যে, তারা ফলাফলে খুশি।

আগামীর তুরস্ক:

এ নির্বাচনের মাধ্যমে তুরস্ক প্রেসিডেনশিয়াল সরকারপদ্ধতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করবে। এই পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্টই এখন নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন তাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দিক থেকে প্রেসিডেন্ট এরদোগান এখন আগের চেয়ে আরো শক্তিশালী হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন। যার ফলে বিশ্বরাজনীতি বিশেষ করে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন ইস্যুসহ নানা বিষয়ে এরদোগান আগের চেয়ে শক্ত অবস্থানে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তুরস্কের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার পাশাপাশি নতুনভাবে আরো বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে। আশা করা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের নেতৃত্বে আগামী পাঁচ বছরে তুরস্ক অনেক এগিয়ে যাবে এবং মুসলিম বিশ্বের জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
লেখক : পিএইচডি গবেষক, তুরস্ক

Tuesday, August 7, 2018

তুরস্কে সাদাত পার্টির ভোট কি আসলেই কমেছে? -রহমত উল্লাহ

তুরস্কের নির্বাচনের ফলাফলে সাদাত পার্টির আসন না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশি গবেষকদের কাছ থেকে। এ নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে নিরপেক্ষ একটি বিশ্লেষণের অনুরোধ করেছেন অনেকেই। সে কারণেই এ লেখা।
সাদাত পার্টির ভোট বেড়েছে দ্বিগুণ

২০১৫ সালের ১ নভেম্বরের নির্বাচনের তুলনায় ২৪ জুনের নির্বাচনে সাদাত পার্টির ভোট সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ২০১৫ সালের ১ নভেম্বরে সংসদ নির্বাচনে সাদাত পার্টি ০.৭% ভোট পেয়েছিল। ভোট সংখ্যা ছিল : ৩ লাখ ২৬ হাজার ৫০টি। গত ২৪ জুনের নির্বাচনে সাদাত পার্টি পেয়েছে ১.৩ শতাংশ ভোট। প্রাপ্তভোট ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭৩১টি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সাদাত পার্টি ভোট বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। (দেখুন : ইয়েনি শাফাক পত্রিকার নির্বাচনী তথ্যসমগ্র)।

সাদাত পার্টি কেন আসন পেল না?

তুরস্কের সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু সমীকরণ রয়েছে। এ সমীকরণ না জানলে সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর অর্জনের মূল্যায়ন করা কঠিন।
১. তুরস্কের সংসদ নির্বাচনে কোনো দল মোট ভোটের সর্বনিম্ন ১০% না পেলে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। এ কারণে ২০০২ সাল থেকে সংসদে সাদাত পার্টির অংশগ্রহণ নেই।
২. ২৪ জুন জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করা দলগুলোর জন্য সর্বনিম্ন ১০% ভোটের শর্ত ছিল না। ফলে সাদাত পার্টি থেকে কয়েকজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু জোটবদ্ধ হলেও রাজনৈতিক দলগুলো পৃথক পৃথক প্রার্থী দেয়ায় সমীকরণ বদলে যায়।
৩. ২৪ জুনের নির্বাচনে ৫টি দল সর্বনিম্ন ১০% ভোটের কোটা পূরণ করায় সব প্রদেশেই এ ৫টি দলের প্রার্থীরা ভোট বণ্টনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়েছেন। সংসদ সদস্যদের জয়ের ক্ষেত্রে দেশব্যাপী মোট ভোটে এগিয়ে থাকা দলের প্রার্থী, এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত দলের প্রার্থী……. এভাবে নিচের দিকে নামা হয়। তা ছাড়া জোটের হিসেবের ক্ষেত্রে প্রথমে জোটের প্রাপ্তভোট অনুযায়ী প্রদেশগুলোতে বিজয়ীদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। এরপর প্রদেশগুলোতে জোটবদ্ধ দলগুলোর প্রাপ্ত ভোট অনুয়ায়ী বিজয়ী প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়।
ফলে দেখা গেছে, সাদাত পার্টি কোনো প্রদেশেই সংসদ সদস্যদের জয়ী করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট না পাওয়ায় সংসদ সদস্য পায়নি।

সাদাত পার্টির কেউ কি সংসদে যেতে পারছে না?

দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থীকে জয়ী করাতে না পারলেও সাদাত পার্টির পক্ষ থেকে সিএইচপির ব্যানারে ৩ জন সদস্য জয় পেয়েছেন। এ তিন সংসদ সদস্য দলীয় ব্যানার ব্যবহার করতে পারবেন কি-না তা বলা মুশকিল।
সাদাত পার্টি কেন এ কে পার্টির সঙ্গে জোট করলো না সে সম্পর্কে বিশ্লেষকদের বিভিন্ন মন্তব্য রয়েছে। তবে তুরস্কে ইসলামী রাজনীতির প্রবর্তক নাজিমুদ্দিন এরবাকানের দল ভেঙে বেরিয়ে আসা রজব তাইয়্যেব এরদোগান ও আবদুল্লাহ গুলের নেতৃত্বে গঠিত এ কে পার্টির সঙ্গে প্রথম থেকেই দূরত্ব বজায় রেখে আসছে সাদাত পার্টি।
লেখক : তুরস্ক প্রবাসী পিএইচডি শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক

Thursday, June 21, 2018

তুরস্কে ইসলামী শক্তির বিজয়, ড: নাজমুদ্দীন আরবাকান এবং জামায়াত ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

তুরস্কের ইসলামী সংগঠ ড: নাজমুদ্দীন আরবাকান পরিচালিত ইসলামিক ওয়েলফেয়ার পার্টি নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় অদিষ্ঠিত হয়েছিল গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে। পরে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সেনাবাহিনীর দ্বারা অন্যায়ভাবে ক্ষমতাচ্যুত হন। এই ইসলামিক ওয়েলফেয়ার পার্টির ক্ষমতায় থাকাকালে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ড: নাজমুদ্দীন আরবাকান ১৯৯৬ সালের আগষ্ট মাসে পাকিস্তান সফরে এসে পাকিস্তানের দুজন নেতার সাথে বিশেষভাবে সাক্ষাৎ করেন। একজন হলেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভূট্রো এবং অপরজন জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের আমীর কাজী হোসাইন আহমদ। এই সংবাদ পরিবেশন করে তখন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম থেকে জামায়াতে ইসলামীর সাথে ইসলামিক ওয়েলফেয়ার পার্টির ঐতিহ্যবাহী সম্পর্কের কথা প্রচার করা হয়। উক্ত পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে তুরস্কের একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম বিশেষ অতিথি হিসাবে যোগদান করেছিলেন। সে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন ড: নাজমুদ্দীন আরবাকান। 
যে স্মৃতি প্রেরণা যোগায়ঃ তুরষ্কের ইসলামী আন্দোলনের অগ্রদূত নাজিমুদ্দিন এরবাকানের সাথে জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম স্যারের একটি ছবি। আল্লাহ তাঁদের উভয়কে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুক।


নাজমুদ্দিন আরবাকান ও শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (রঃ)
ঐতিহাসিক একটি ছবি...ছবিটি দেখলেই প্রশান্তিতে মন ভরে যায়। বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী উস্তাদ প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন আরবাকানের সাথে শহীদ আলী আহসান মো: মুজাহিদ। ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে আয়োজিত ESAM সম্মেলনে এই দুই নেতার দেখা হয়। ড. আরবাকানের আমন্ত্রনেই শহীদ আলী আহসান মো: মুজাহিদ এই সম্মেলনে যোগ দান করেন। উস্তাদ আরবাকান এই সময় শহীদ মুজাহিদের হাতে সম্মেলনের ক্রেস্টও তুলে দেন। আল্লাহ তাঁর এই দুই প্রিয় বান্দাকে কবুল করে নিন। আমিন।

২৭শে ফেব্রুয়ারী ২০১১-এ নাজমুদ্দীন আরবাকান এন্তেকাল করেন। এই মহান নেতাকে আল্লাহ জান্নাতুল ফিরেদৌসের উচ্চ মাকাম দান করুন, আমীন 
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান নামাজে জানাজায় নাজমুদ্দীন আরবাকানের কফিনটি বহন করছেন


ড: নাজমুদ্দীন আরবাকান  সম্পর্কে জানার জন্য এই লিংকটি ব্রাউজ করুন প্লীজ: নাজমুদ্দিন এরবাকান | এক ঘুমভাঙ্গা সিংহের উপাখ্যান


তুরস্ক সম্পর্কিত এই ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোষ্টগুলো দেখুন: 1) তুরস্কে মাওলানা মওদুদী ও তাফহীমুল কুরআনের প্রভাব 2) জানেন - ফাঁসিরকাষ্ঠে ঝুলন্ত কে এই মহানব্যক্তি ? তিনি হচ্ছেন আদনান মেন্ডারিস, তুরস্ক

একে পার্টির হেড কোযার্টারে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সাথে শিবির নেতা হাফিজুর রহমান

তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ানের সাথে শহীদ আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ।
সময়কাল :২০০৩ সাল।


Thursday, May 24, 2018

জানেন - ফাঁসিরকাষ্ঠে ঝুলন্ত কে এই মহানব্যক্তি ? তিনি হচ্ছেন আদনান মেন্ডারিস, তুরস্ক

(একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন):+

See this photo:
জানেন - ফাঁসিরকাষ্ঠে ঝুলন্ত কে এই মহানব্যক্তি ?
তিনি হচ্ছেন আদনান মেন্ডারিস, তুরস্কের লাগাতার তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ... ১৯৫০—১৯৬০ সাল পর্যন্ত তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বলতে পারবেন , কোন অপরাধে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল ? তার অপরাধ (?) তিনি তুরস্কে আরবিতে আযান দেওয়া বৈধ বলে ডিক্রি জারি করেছিলেন যা কুলাঙ্গার কামাল আতাতুর্ক কর্তৃক সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ছিল ... এতেই সেদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সেনাবাহিনী সংবিধান লঙ্ঘনের দোহাই দিয়ে এই মহান ব্যক্তিকে এভাবেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ছিল ... তাই বলে কি তুরস্কে ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে গেছে ? দেখেন না , আজ এই তুরস্কই মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিমরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করছে !

এ থেকে আমাদের দেশে ধর্মনিরপেক্ষের ধ্বজাধারীরা যেনো কিছুটা হলেও শিক্ষা নেন ...।


Tuesday, January 23, 2018

ইস্তাম্বুলের বিজয় এবং কিছু কথা -প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন আরবাকান, অনুবাদ : বুরহান উদ্দিন


আজ নতুন একটি যুগের এবং নতুন একটি বিজয়ের প্রয়োজন। যার জন্য সমগ্র মানবতা আজ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। নতুন একটি শান্তিময় দুনিয়া গঠন করার জন্য আমাদের এই মুসলিম জাতি পুনরায় নেতৃত্ব দেবে। সম্মানিত একটি জাতির এবং সম্মানিত একটি ইতিহাসের উত্তরাধিকারীগণ এই বিজয়ের পতাকাবাহী হিসেবে কাজ করবে।

ইস্তাম্বুল বিজয়ের খুব বেশি আগে নয় মাত্র ৫০ বছর পূর্বে ১৪০০ সালের শুরুর দিকে তইমুর লং যখন আনাতলিয়াতে আক্রমণ করছিল তখন সবাই ভেবেছিল যে সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে। মুসলিমবিশ্ব সবচেয়ে বড় দুর্দশায় নিপতিত হয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে আমাদের এই জাতি সব কিছুকে সাজিয়ে গুছিয়ে, ইস্তাম্বুলের বিজয়ের মধ্য দিয়ে একটি যুগের অবসান ঘটিয়ে নতুন এক সোনালি যুগের সূচনা করেছিল। তেমনিভাবে আজও একটি নতুন যুগের নতুন একটি বিজয়ের প্রয়োজন। কিন্তু এর জন্য ইস্তাম্বুলের বিজয়কে খুব ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
আমাদের প্রিয়নবী মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মদ সা: এই হাদিসের মাধ্যমে আমাদেরকে ইস্তাম্বুুল বিজয়ের সুসংবাদ দান করেছিলেন।
অর্থাৎ অবশ্য অবশ্যই ইস্তাম্বুল বিজিত হবে। সেই বিজয়ের সেনাপতি কতই না উত্তম সেনাপতি আর সেই বিজয়ের সৈনিকগণ কতই না উত্তম। (মুসনাদে আহমাদ)
এই হাদিস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। কী বলা হয়েছে এই হাদিসে? ‘লাতুফতাহান্নাল কন্সতান্তিনিয়্যাতা’ এই কথা বলা হয়েছে। এখানে লামে তাকিদ এবং নুনে সাকিলা এর দ্বারা বক্তব্যকে জোরালো করা হয়েছে। অর্থাৎ ইস্তাম্বুল অবশ্য অবশ্যই বিজিত হবে। বিজয়ের জন্য মৌলিক শর্ত হলো এমন দৃঢ়বিশ্বাস। অর্থাৎ যদি বিজয় করতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে। দৃঢ়ভাবে এবং সন্দেহাতীতভাবে আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে। মুহাম্মদ সা: “অবশ্যই অবশ্যই বিজয় হবে”- এই কথা বলার কারণে মুসলমানগণ এই সম্মানের অংশীদার হওয়ার জন্য বহুবার বিজয়াভিযান পরিচালনা করেছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের মধ্য থেকে এই মহান সম্মান, সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহকে নসিব করেছেন।
সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ তার বাল্যকাল থেকেই ইস্তাম্বুল বিজয়ের স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন। এই হাদিস শরিফে বর্ণিত এই বিরল সম্মানের অংশীদার হওয়ার জন্য তিনি রাতদিন কঠোর সাধনা করেছিলেন। বলতে গেলে, ইস্তাম্বুুল বিজয়ের জন্য সুলতান ফাতিহ পাগলপারা হয়ে গিয়েছিলেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও তাঁকে এই মহান সম্মানের ভাগীদার করেছিলেন।
সুতরাং আমরা যে দাওয়াত এবং আন্দোলনকে বিশ্বাস করি সেই আন্দোলনকে তার লক্ষ্যপানে পৌঁছানোর জন্য আমাদেরকেও সেই আন্দোলনের জন্য পাগলপারা হতে হবে।
সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ সিংহাসনে সমাসীন হওয়ার সাথে সাথেই দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করে ইস্তাম্বুুলের বিজয়ের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর শহর ইস্তাম্বুলের বিজয়ের জন্য তিনি সকল কিছুকে সুসংহত করেছিলেন। ২ লাখ সৈন্যের অংশগ্রহণে এক বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেন। এর পাশাপাশি তিনি প্রচুর পরিমাণে আগুনের গোলা তৈরি করেন। এগুলো ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি। “ঈমান খাসি ছাগল থেকেও দুধ করতে পারে।” এই কথার ওপর আস্থা রেখে পাহাড়ের ওপর দিয়ে জাহাজ চালিয়েছিলেন।
যদি একটি বিজয় চাই তাহলে ঈমান, আত্মবিশ্বাস, আগ্রহের পাশাপাশি সেই সময়ের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী হতে হবে এবং সবচেয়ে উন্নত পন্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৪৫৪ সালের ৬ এপ্রিল বাইজান্টাইন সম্রাটকে আত্মসমর্পণের আহবান জানান। এটা হলো মুসলমানদের মূলনীতি। রক্তপাত যাতে না হয় এই জন্য তিনি এই আহবান জানিয়েছিলেন। কিন্তু বাইজান্টাইনগণ এটাকে গ্রহণ না করে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সুলতান ফাতিহও আক্রমণের নির্দেশ দান করেন। এর আগে তিনি তার সকল সেনাবাহিনীকে নিয়ে নামাজ আদায় করেন এবং বিজয়ের জন্য মহামহিম সম্রাট আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে দোয়া করেন। দোয়া করার সময় অসহায় এক বান্দার মতো আকুতি মিনতি করে দোয়া করেন।
দোয়া করার পর সেনাবাহিনীকে আক্রমণের নির্দেশ দিয়ে, তিনি তার ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করার সময় পাহাড়সমূহকে কাঁপিয়ে দিচ্ছেন এমন এক নরশার্দূলের ন্যায় তাঁকে দেখা যাচ্ছিল।
ইয়া আল্লাহ! কত বিশাল এক যুদ্ধ, কত বড় উদ্যম, কত মহান এক প্রয়াস। ২৯ মে ফজরের সময় প্রাচীরগুলোকে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। ইস্তাম্বুুলের বিজয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। বাইজান্টাইনের প্রাচীরে সর্বপ্রথম ইসলামের পতাকা উত্তোলন করার ভাগ্য উলুবাতলি হাসানের হয়েছিল। সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহর সেনাবাহিনী ভেঙে ফেলা প্রাচীরের ভেতর দিয়ে তীব্রতার সাথে স্রোতের মত ইস্তাম্বুলে প্রবেশ করেছিল। এইভাবে একটি যুগের পতন হয়ে অন্য যুগের সূচনা হয়েছিল। ইস্তাম্বুল বিজয় হওয়ার পর বিজয়ী সেনাপতি সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ আল্লাহ তালার শুকরিয়া আদায় করার জন্য আয়াসুফিয়াকে (ঐধমরধঝঁভরুধ) মসজিদে রূপান্তরিত করেন এবং ২ রাকাত শুকরানা নামাজ আদায় করেন। এর পর তিনি হজরত আইয়ুব আল আনসারির কবর জিয়ারত করতে যান। এইভাবে সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ এত বড় বিজয়ের পর অত্যন্ত বিনয়ী হয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া জ্ঞাপনের এক অনুপম দৃষ্টান্ত পেশ করেন।
আজ আমরা মুসলিম হিসেবে, প্রাচীরের সামনে অবস্থানকারী সেনাবাহিনীর মত। আমরা আজ নতুন এক বিজয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছি। আগামী দিনের বিজয়ের জন্য নতুন উদ্দামে লড়ে যাচ্ছি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি তিনি আমাদেরকে এমন মর্যাদাসম্পন্ন একটি জাতির উত্তরাধিকারী করেছেন। ইস্তাম্বুলের বিজয় থেকে আমরা যে সকল শিক্ষা নিতে পারি এর মধ্যে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো হজরত আইয়ুব আল আনসারি রা:।
জিহাদের ঘোষণা শুনার সাথে সাথে হজরত আইয়ুব আল আনসারি রা:, কুরআনে কারিম বন্ধ করে সাথে সাথে উঠে দাঁড়ান। তার সন্তানগণ তাঁকে এই বলে বাধা দেন, “বাবা তুমি বস, বসে বসে কুরআন পড়, নিজেকে বিপদের মুখে ঠেলে দিও না।” উত্তরে তিনি তাদেরকে বলেছিলেন, “হে আমার প্রিয় সন্তানরা, তোমরা আমাকে বলছ তুমি বস বসে কুরআন পড়। কিন্তু আমি যখন কুরআন পড়ি, কুরআন তখন আমাকে বলে উঠে দাঁড়াও জিহাদ কর।
এই মহান সাহাবী ৯০ বছর বয়সে ইস্তাম্বুলের প্রাচীরের কাছে আসেন। তার বয়সের কারণে তার নিরাপত্তার জন্য সৈন্যগণ তাঁকে তাদের পেছনে রাখতে চেয়েছে কিন্তু তারা তাঁকে তা করতে পারেনি। যুদ্ধের সেই কঠিন মুহূর্তে আগুন এবং তীরের নিচে দাঁড়িয়ে তিনি সৈন্যদেরকে “দুনিয়াবি কাজে মশগুল হয়ে জিহাদ থেকে দূরে থেকে নিজেদেরকে হুমকির মুখে ঠেলে দিও না” এই আয়াতটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন এবং তরুণ সৈন্যদেরকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিয়েছিলেন। এত ত্যাগ তিতিক্ষার পর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর বাইজান্টাইনের প্রাচীরের পাদদেশে তাঁকে শাহাদাত নসিব করেন।
“ইসলাম কেমন একটি দ্বীন?” এই বিষয়ে যদি কেহ উৎসাহ বোধ করেন সে যেন ৯০ বছর বয়সে ইস্তাম্বুল বিজয়ের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করতে আসা হযরত আইয়ুব আল আনসারি রা:-এর দিকে তাকায়। ইসলামের মূল রূপ হলো এটা। দ্বীন ইসলাম হলো, জিহাদের দ্বীন। এই জন্য আপনারা শুধুমাত্র নামাজ পড়বেন, তাসবিহ তাহলিল পাঠ করবেন এই কথা বলা হলো মূর্খতা। যদি তাই হতো এই মহান সাহাবী, রাসূল সা: মদিনায় হিযরত করার পর যার ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তিনি মদিনা থেকে পৃথক না হয়ে সেখানে সবচেয়ে সুন্দর পদ্ধতিতে নামাজ পড়তেন এবং তাসবিহ তাহলিলে মশগুল থাকতেন।
ইস্তাম্বুুলের বিজয়ের জন্য হযরত আকশেমসেদ্দিনের ভূমিকাও অনেক বিশাল। তাকেও আমাদেরকে আমাদের আদর্শ হিসেবে স্মরণ করতে হবে। তিনি ছিলেন একজন বড় আলেম। ইস্তাম্বুুলের বিজয়াভিযানে তিনি আমাদের জন্য এক অনুপম দৃষ্টান্ত। ফাতিহর একজন উস্তাদ হিসেবে, প্রতিটি গুহায় গিয়ে গিয়ে তিনি সৈন্যদেরকে উৎসাহ উদ্দীপনা জুগিয়েছিলেন।
সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ যখন ইস্তাম্বুল বিজয় করেছিলেন তখন তিনি ছিলেন ২১ বছরের একজন টগবগে যুবক। ইস্তাম্বুলের বিজয় যেমন অনেক বড় এবং মহান একটি ব্যাপার ঠিক তেমনিভাবে যারা ২১ বছর বয়সে এই বিজয়ের জন্য ঈমানের বলে বলীয়ান কাজ করেছেন তারাও তেমন মহান এবং মর্যাদাবান। একটি দেশের আসল শক্তি ট্যাংক, ক্ষেপণাস্ত্র এবং অর্থবিত্ত নয়। বরং একটি দেশের আসল শক্তি হলো ঈমানের বলে বলীয়ান যুবসমাজ।

Wednesday, January 17, 2018

খিলাফত-পরবর্তী তুরস্কের রাজনৈতিক ইতিহাস -বুরহান উদ্দিন

বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপটে তুরস্ক উদীয়মান শক্তি। জ্বালানির মূল কেন্দ্রস্থল মধ্যপ্রাচ্য হওয়ায় এবং ইহুদিদের পুণ্যভূমি ফিলিস্তিনে হওয়ায় বর্তমান বিশ্বে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। এক কথায় বলতে গেলে মধ্যপ্রাচ্য যার নিয়ন্ত্রণে থাকবে সেই হবে বিশ্বমোড়ল। উসমানী খিলাফতের পতনের পূর্বে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য ছিল খিলাফতের অধীনে। আর ইসলামের ইতিহাসে তিনটি খিলাফত ছিল সবচেয়ে বড়। উমাইয়্যা খিলাফত; আব্বাসী খিলাফত এবং উসমানী খিলাফত। এর মধ্যে উসমানী খিলাফতের ইতিহাস ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধ। তাদের সময়েই ইউরোপের বিশাল একটি অংশ মুসলিম শাসনের অধীনে আসে এবং সমগ্র দুনিয়াতে ইসলাম একটি অপরাজেয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। কিন্তু মুসলিম শাসকদের ইসলামবিমুখতা এবং ইহুদিবাদীদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই উসমানী খিলাফতের পতন ঘটে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লিথুনিয়া থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত ৩০টি পয়েন্টে সমগ্র দুনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে উসমানী সেনাবাহিনী অসম বীরত্ব প্রদর্শনের পরও হেরে যায়। এবং পরবর্তীতে মাত্র ৩ বছরের বাবধানে তুরস্কের আলেমদের নেতৃত্বে বর্তমান তুরস্ক স্বাধীনতা লাভ করে। এর পর ইউরোপিয়ান দেশগুলো খিলাফতের ব্যাপারে আপত্তি করতে থাকে এবং তাদের দাবির মুখে ১লা নভেম্বর ১৯২২ সালে তৎকালীন সুলতান; সুলতান ওয়াহদেদ্দিনকে তুরস্ক থেকে নির্বাসিত করা হয়। অবশেষে লোজান চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপিয়ান দেশগুলোর আপত্তির মুখে ২৯ অক্টোবর প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে এবং ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম মুসলিমগণ নেতৃত্ববিহীন হয়ে পড়ে।
এর অব্যবহিত পরই মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক এবং তার অধীনস্থগণ তুরস্ক থেকে ইসলাম ও ইসলামের নিশানা মুছে দেয়ার লক্ষ্যে মুসলমানদের ওপর চরম জুলুম নির্যাতন শুরু করে। আজানকে তুরকিশ ভাষায় দেয়াতে বাধ্য করে; ইসলামী শিক্ষা নিষিদ্ধ করে; টুপিওয়ালা মানুষ দেখলেই তাদেরকে হেনস্তা করা হতো। সেই সময়ে হাজার হাজার আলেমকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে এবং অতীত ইতিহাসকে সম্পূর্ণ রূপে মুছে ফেলার জন্য আরবি হরফকে তুলে দিয়ে তদস্থলে ল্যাটিন বর্ণমালা চালু করে এক রাতেই গোটা জাতিকে অজ্ঞতার অন্ধকারে ঠেলে দেয়। বিজাতীয় সভ্যতা সংস্কৃতিকে আমদানি করা হয়; মেয়েদেরকে মিনি খোলামেলা পোশাক পরিধান করতে বাধ্য করে এবং হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মুসলিম পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে তদস্থলে ইউরোপিয়ান পারিবারিক আইন প্রবর্তন করা হয়। এক কথায় বলতে গেলে ইউরোপের আদলে দেশকে গড়ে তুলার জন্য ইউরোপের নগ্ন সংস্কৃতিকে আমদানি করা হয়।
১৯৩৮ সালে মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক মৃত্যুবরণ করেন। তার সঙ্গী-সাথীগণ ছিলেন তার যোগ্য উত্তরসূরি, তারা তাকে কোন প্রকার জানাজা ছাড়াই দাফন করেন। কিন্তু তার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই জুলুম নির্যাতনের অবসান হয়নি; তার সতীর্থ ইসমেত ইননু কামাল আতাতুর্কের সময়ের সেই একই জুলুম নির্যাতনকে অব্যাহত রাখেন। তার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া উত্তরসূরিরা জবঢ়ঁনষরপধহ চবড়ঢ়ষব’ং চধৎঃু নামে একটি দল গঠন করে পুনরায় সরকার গঠন করে এবং ১২ বছর পর্যন্ত একই জুলুম নির্যাতন অব্যাহত রাখে। তাদের এই জুলুম নির্যাতন যখন চরম পর্যায়ে তখন মুসলিমগণ আস্তে আস্তে এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের পরামর্শে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করে। ১৯৫০ সালের নির্বাচনে আদনান মেন্দ্রেসের দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বিজয় লাভ করে। তারা ক্ষমতায় এসে ইসলামের ওপর সকল নিষেধাজ্ঞাকে প্রত্যাহার করে; মসজিদগুলোকে নামাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়; আরবিতে আজান দেয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া হয়। আরবিতে আজান শুনে কোটি কোটি মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন; ঐতিহাসিকদের বর্ণনামতে তুরস্কের মুসলিমগণ সেদিন এতটাই আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিলেন যে এর আগে বা পরে তারা আর কোন দিন এতটা আনন্দিত হতে পারেননি।
ইসলামের ওপর সকল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে তিনি মুসলমানদেরকে স্বস্তি দেন এবং আমেরিকার সাথে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। তিনি মোট ১০ বছর ক্ষমতায় আসীন ছিলেন। ১৯৬০ সালে বামপন্থী ও ইসলামবিদ্বষী সেনাবাহিনী এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে।
এই সামরিক সরকার ৫ বছর তুরস্ককে শাসন করে। ১৯৬৪ সালে উবসড়পৎধঃ চধৎঃু অন্যতম সদস্য সোলেয়মান ডেমিরেল আদালেত পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁকে তুরস্কের জনগণ আদনান মেন্দ্রেসের উত্তরসূরি হিসাবে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে এবং তার নেতৃত্বে আদালেত পার্টি অনেকবার সরকার গঠন করে। কিন্তু ৯০-এর দশকে তিনি নিজেকে একজন ম্যাসন (ইয়াহুদিদের দালাল) বলে স্বীকার করে নেন। তিনি তুরস্কে এখন ম্যাসন ডেমিরেল নামে পরিচিত। ১৯৬৫ সালে ডেমিরেল ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তুরস্ক এক নতুন যুগে প্রবেশ করে। তার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডানপন্থী বামপন্থী গ্রুপ সৃষ্টি হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শিখাঙ্গনে একের পর এক ছাত্রহত্যার ঘটনা ঘটতে থাকে, শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হয়। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এই অবস্থা জারি থাকে।
১৯৬৯ সালে তুরস্কের রাজনীতিতে এক নতুন ধারার সূচনা হয়। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান আলেম-উলামাদের পরামর্শে এবং ইসলামী চেতনায় উজ্জীবিত একদল মুসলমানকে নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের সূচনা করেন। তিনি মিল্লি নিজাম নামে একটি নতুন দল গঠন করেন। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য বিপজ্জনক এই অভিযোগে ১ বছর পরই এই দলকে নিষিদ্ধ করা হয়। এই দল নিষিদ্ধ হওয়ার সাথে সাথেই নাজমুদ্দিন এরবাকান মিল্লি সালামেত নামে নতুন একটি দল গঠন করে ১৯৭৩ সালে সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং ৪৮ আসনে বিজয় লাভ করে নিয়ন্ত্রক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে এই ৪৮ আসন ছাড়া কোনো দলই সরকার গঠন করতে পারছিল না। সুলেয়মান ডেমিরেল তখন ডানপন্থী দল হিসেবে তুরস্কে পরিচিত হওয়ায় নাজমুদ্দিন এরবাকান তার সাথে সুস্পষ্ট শর্তের ভিত্তিতে কোয়ালিশন সরকার গঠনের আগ্রহ প্রকাশ করেন কিন্তু তিনি এ সকল শর্তের ভিত্তিতে নাজমুদ্দিন এরবাকানের সাথে সরকার গঠন করতে অস্বীকার করেন কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে বামপন্থী দলের নেতা বুলেন্ত এজেবিদ তার সকল শর্ত মেনে নিয়ে তার সাথে সরকার গঠন করেন। তার এই কোয়ালিশন সরকারের সময় ৬ হাজার মুসলিমকে মুক্ত করে দেয়া, সাইপ্রাসকে গ্রিস থেকে মুক্ত করে তুরকিশ সাইপ্রাস গঠন করা ও মুসলিমদেরকে জুলুমমুক্ত করা, নতুন করে মাদরাসা শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করা; হাজার হাজার কুরআন কোর্স চালু করা; মাদরাসার ছাত্রদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেয়া; সাইদ বদিউজ্জামান নুরসির রিসালায়ই নুরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা; সেনানিবাসসহ সকল সরকারি অফিস আদালতে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা; ইসলামী বইপুস্তক প্রকাশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া; অশ্লীলতা বেহায়াপনা দূর করার লক্ষ্যে আইন করাসহ অনেক কাজ করেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ এই সময়ের মধ্যে তিনি ২৭০টি ভারি শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন যার মধ্যে বিমান তৈরির কারখানা থেকে শুরু করে সকল কিছুই ছিল। তার এই উদ্যম দেখে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি অন্য দলকে তার সাথে কোয়ালিশন ছিন্ন করতে বাধ্য করে এবং সরকার নতুন নির্বাচনের আয়োজন করে।
১৯৭৮ সালে পুনরায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির ফলে মিল্লি সালামেত পার্টির আসন ২৮ এ নেমে আসে কিন্তু এবারও তারা নিয়ামক শক্তিতে পরিণত হয় কিন্তু এবার তারা নিঃস্বার্থ ভাবে অফধষবঃ চধৎঃু কে সমর্থন করে। এই সময়ে ইসলামী আন্দোলন তুরস্কের রাজনীতিতে এক নিয়ামক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৯৮৯ সালের ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পক্ষে সংসদ এবং সংসদের বাইরে মজবুত ভূমিকা পালন করে এবং আমেরিকা ইরাককে দিয়ে ইরানের ওপর হামলার বিপক্ষে মধ্যপ্রাচ্যে জনমত গঠনে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। এইভাবে মুসলিম বিশ্বের ওপর ইঙ্গ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন ভূমিকা পালন করে।

রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে তুরস্ক যখন সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল এটাকে সাম্রাজ্যবাদীরা ভালো চোখে দেখেনি। তারা ১৯৮০ সালে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায়। সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের পর সকল দলকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ নাজমুদ্দিন এরবাকানসহ আরও অনেক রাজনীতিবিদকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং তাদেরকে জেলে প্রেরণ করে। হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে জেলে পুরে এবং শত শত মানুষকে হত্যা করে। সেনাবাহিনী ডানপন্থী ও বামপন্থী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই সামরিক অভ্যুত্থানের প্রভাব এতটাই প্রকট ছিল যে অনেক ঐতিহাসিক এই জন্য বলে থাকেন যে আধুনিক তুরস্কের ২টি ইতিহাস রয়েছেÑ একটি হলো ১৯৮০-এর আগে আরেকটি ১৯৮০ সালের পরের ইতিহাস।
সামরিক শাসন ৩ বছর পর্যন্ত জারি থাকে এবং পরবর্তীতে তারা রাজনীতিতে প্রবেশ করে নতুন দল গঠনের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করে। ১৯৮৩ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে এরবাকনের দল মিল্লি সালামেত পার্টির সংসদ সদস্য তুরগুত অজাল গড়ঃযবৎষধহফ ঢ়ধৎঃু নামে একটি দল গঠন করে ক্ষমতায় আরোহণ করে। এই সময়ে রেফাহ পার্টি; জরমযঃ ধিু চধৎঃু, ঘধঃরড়হধষরংঃ গড়াবসবহঃ ঢ়ধৎঃু নামে আরও কয়েকটি দলের জন্ম হয়। ১৯৮৯ সালের এক রেফারেন্ডামের মাধ্যমে নাজমুদ্দিন এরবাকান; বুলেন্ত এজেবিত পুনরায় রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পান। এরবাকান রেফাহ পার্টির প্রধান নির্বাচিত হন।
এইভাবে ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তুরগুত অজালের নেতৃত্বে গড়ঃযবৎষধহফ চধৎঃু তুরস্ককে শাসন করে। তুরগুত অজাল ১৯৯৩ সালে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে প্রেসিডেন্ট হন এবং ১৯৯৪ সালে তাঁকে বিষপানে হত্যা করা হয়। তুরগুত অজালের মৃত্যুর পর তুরস্কের জাতীয় সংসদ সুলেয়মান ডেমিরেলকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়। এই সময় ১৯৯৪ সালের স্থানীয় নির্বাচনে রেফাহ পার্টি বিপুল বিজয় অর্জন করে। তুরগুত অজালের মৃত্যুর পর তার দলের সদস্যরা ব্যাপকভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় এবং এরবাকান জাতির সামনে এক ভিশন নিয়ে আসায় রাজনীতির দৃশ্যপট দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে রেফাহ পার্টি বিজয় লাভ করে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদীদের দালালরা তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসি শুরু করে এবং পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের জুন মাসে এরবাকানের নেতৃত্বে রেফাহ পার্টি জরমযঃ ডধু চধৎঃু র নেত্রী তানসু চিল্লারের সাথে সরকার গঠন করে। এরবাকান ক্ষমতা গ্রহণ করেই জনগণের ক্ষমতায়ন শুরু করেন। সকল দরিদ্রকে সরকারিভাবে ভাতা দেয়া শুরু করেন। হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। জনগণের মধ্যে ইসলামের প্রচার প্রসারের জন্য ইসলামি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক প্রসার ঘটান ও আলেম ওলামাদেরকে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রধান করেন। উ-৮ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সুদের হারকে কমিয়ে নিয়ে আসেন। মাত্র ১১ মাসের শাসনামলে ৩৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেন। সকলের বেতন তিনি ১০০ ভাগ বৃদ্ধি করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেন। জনগণের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগী হন। শিল্পায়নে গতি ফিরিয়ে এনে ৫ বছরের মধ্যে তুরস্ককে জাপান ও জার্মানির শিল্পায়নকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে কমন মার্কেট চালু করেন। তার এই সকল উত্তরোত্তর সফলতায় ইয়াহুদিরা রেফাহ পার্টিকে বন্ধ করার লক্ষ্যে সকল প্রকার প্রপাগান্ডা চালায় ও তার পার্টি শরিয়ত কায়েম করবে এই অভিযোগে তাকে সরানোর জন্য সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করে। এই অবস্থায় এরবাকান এই শর্তে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেন যে তার কোয়ালিশন পাটির নেত্রী তানসুকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। কিন্তু মাসন ও ইয়াহুদিদের ধারক সোলেয়মান ডেমিরেল বিশ্বাসঘাতকতা করে মেসুদ ইলমাজকে প্রধানমন্ত্রী করে। এইভাবে রেফাহ পার্টিকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি নাজমুদ্দিন এরবাকানকেও রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর তিন মাস পর ১৯৯৭ সালে পুনরায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ইসলামপন্থী গণ রেফাহ পার্টির অন্যতম নেতা রেজায় কুতানের নেতৃত্বে ফাজিলেত পার্টি গঠন করে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ১১৪টি আসন লাভ করে। কিন্তু কিছুদিন পর এই দলটিকেও নিষিদ্ধ করে। এরপর গঠিত হয় সাদেত পার্টি। এবং শুধুমাত্র ফাজিলেত পার্টি ছাড়া অন্য সকল দল মিলে সরকার গঠন করে কিন্তু তাদের দুর্নীতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করে। অর্থনীতিতে মারাত্মক ধস নামে এবং মুদ্রাস্ফীতি সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে পড়ে। অবশেষে ২০০২ সালে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। এই নির্বাচনে রজব তায়্যিব এরদোগানের নেতৃত্বে একে পার্টি ৩৪.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং এরপর ২০০৭ সালে ৩৮.৬ এবং ২০১১ সালের নির্বাচনে ৪৯.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশ পরিচালনা করছে। হ

লেখক :Student, Middle East Technical University, Department of Economics.

Wednesday, June 14, 2017

তুরস্কে অনুষ্ঠিত হওয়া ESAM কনফারেন্সে শহীদ মাওলানা নিজামীকে নিয়ে প্রেজেন্টেশন...

তুরস্কে অনুষ্ঠিত হওয়া ESAM কনফারেন্সে সমগ্র পৃথিবীর ইসলামিক সংগঠন ও ইসলামিক স্কলারগণ একত্রিত হন। সেখানে অংশগ্রহন করেন শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিষ্টার নাজেব মোমেন। তিনি তার বাবা শহীদ নিজামীর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন, সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের।

Wednesday, January 18, 2017

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে তুরস্কের প্রখ্যাত আলেম নুরুদ্দিন ইলদিজের লেখা একটি চিঠি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে তুরস্কের প্রখ্যাত আলেম, বহু গ্রন্থ প্রণেতা নুরুদ্দিন ইলদিজের লেখা একটি চিঠি: 
এই মহাবিশ্বের মালিক, মহা শক্তিধর মহান আল্লাহ তালার সালাম বর্ষিত হোক তোমাদের উপর, হে এশিয়ার বীর সেনানীগণ।তোমাদের অন্তর আজ হযরত (রা) হামযা (রা) , হযরত সুমাইয়া (রা) , হযরত ইয়াসসির (রা) , মিহরাবে শহীদ হওয়া হযরত উমার (রা)এর ঈমানের মত ঈমানে পরিপূর্ণ হয়েছে সালাম তোমাদের সেই প্রশান্ত আত্মার প্রতি।
আজ তোমরা, উহুদের সাহসী সেই যোদ্ধাদের প্রতিনিধি, আজ যারা তোমাদেরকে নির্মূল করতে চায় তারা জানে না যে তোমাদের এই রক্ত তোমাদের উত্তরসূরিদেরকে জাগিয়ে রাখবে যুগের পর যুগ , শতাব্দীর পর শতাব্দী। তারা মৃত্যুবরণ করবে, তাদের নিশানা মুছে যাবে, তাদের নাম মানব ইতিহাসে খুজেও পাওয়া যাবে না কিন্তু পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন এই মানবতা তোমাদেরকে স্মরণ করবে, তোমাদের এই ঢেলে দেওয়া রক্ত দিয়ে লিখব নতুুরিদেরকে, ভাঙ্গা কেল্লায় উঠবে ইসলামের বিজয় পতাকা, তোমাদের দেখে আসবে আর লাখো মুজাহিদ। তোমারা মানুষের অন্তরে, ফেরেশতাদের দলিলে বেঁচে থাকবে অনন্তকাল। ওরা কিয়ামাতের দিন নিকৃষ্ট হয়ে উঠবে আর তোমরা শহীদ হিসাবে বীরের বেশে কিয়ামতের দিন জেগে উঠবে।

হে এই সময়ের হামযাগন;
আব্দুল কাদের মোল্লা
মুহাম্মাদ কামারুযযামান
আলী আহসান মুজাহিদ
গোলাম আযম
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
মৌলানা মতিউর রহমান নিজামী .................
আপনারা মৃত্যুকে হত্যা করেছেন। এই উম্মত আপনাদেরকে কক্ষনো ভুলে যাবে না। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের শাহাদাতকে কবুল করুন। পরবর্তী বংশধরদের মাঝে আপনাদের মর্যাদা বুলন্দ করুন।
আমরা শারীরিকভাবে হয়ত আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পারিনি, কিন্তু আমরা আপনাদেরকে ভালবাসি, অন্তর থেকে মহব্বত করি, আমরা আপাদেরকে দেখে ঈর্ষান্বিত হই। আমরা আপনাদেরকে আল্লাহ তালার কাছে সঁপে দিলাম। আল্লাহ তালার কাছে দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা আপনাদেরকে যেন হামযা (রা) এর সাথে রাখেন সকল শহীদদেরকে এক সাথে রাখেন।

আল্লাহ আপনাদের পথ খুলে দিন। আল্লাহ আপনাদের মর্যাদাকে আকাশের সমান বুলন্দ করুন। ফেরেশতাদের মত ডানা মেলে ঘুরে বেড়াও আরশে আযীমে। আমাদেরকেও সাথে রাখতে ভুলবেন না, আমাদেরকেও নিয়ে যান আপনাদের কাছে ।
তোমাদের উপর সালাম হে এশিয়ার বীর সেনানীরা।
হে উম্মতের সেনাপতিগণ, অগ্রগামী বীর সেনানীরা সালাম তোমাদের উপর সালাম।

Popular Posts