Tuesday, January 31, 2017

ইফসু(IFSO) এবং আন্তর্জাতিকক্ষেত্রে শিবিরনেতা ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহেরের তৎপরতা


-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

বিশ্বব্যাপী পরিচালিত ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমূহকে সমন্বয় সাধনের মহান লক্ষ্যে International Islamic Federation of Student Organizations(IFSO) অর্থাৎ ইসলামী ছাত্র সংগঠন সমূহের আন্তুর্জাতিক জোট প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যে কয়জন মাহমনীষির চিন্তা-চেতনা কাজ করছিল তারা হচ্ছেন মাওলানা মওদূদী রহ: ইলাল ফার্সী রহ? ও ড: মুহাম্মদ নাসের।

১৯৬৬ সালের প্রথম দিকে নাইজেরিয়ার ইসলামী ছাত্র সংগঠন- Muslim Student Society of Nigeria- এর উদ্যোগে ইফসু প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়ে নানা পার্যায় অতিক্রম করে ১৯৬৯ সালে ১৭ই জুন পশ্চিম জার্মানিতে এক সপ্তাহব্যাপী প্রথম প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে এক ঘোষণায় আনুষ্ঠানিকভাবে IFSO আত্মপ্রকাশ করে। ঘোষণাপত্রে বিভিন্ন দেশের সাতটি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দ সাক্ষর করেন। ১৯৭১ সালে পশ্চিম জার্মানীতে দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নয়টি ছাত্র সংগঠন এতে অংশগ্রহণ করে এবং বিভিন্ন দেশের আরো নয়টি সংগঠন উহার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। তুরষ্কের প্রাচীন নগরী ইস্তাম্বুল ১৯৭৫ ও ১৯৭৭ সালে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চতুর্থ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ আরো অনেক দেশের ছাত্র প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। এই সম্মেলনে ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়। সেগুলোর মধ্যে চৌদ্দটি ভাষায় ইসলামী সাহিত্য অনুবাদ ও প্রকাশের ব্যবস্থা ছিল। এভাবে IFSO এ পর্যন্ত ১১৫টি পুস্তক প্রকাশ করে। মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ইসলামী ব্যক্তিত্ববৃন্দ ও সম্মেলনে আলোচনা করেন। বাংলাদেশের অধ্যাপক গোলাম আজম ও এতে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। এরপর পঞ্চম সম্মেলন ১৯৮০ সালে মালয়েশিয়ায় এবং ষষ্ঠ সম্মেলন সুদানের রাজধানী খার্তুমে ১৯৮৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এ সবগুলোতেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রতি বছরেই IFSO এর আঞ্চলিক সম্মেলন ও লীডারশীড ট্রেনিং ক্যাম্প বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকা, এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল এবং আফ্রিকার প্রায় ৫৫টি ইসলামী ছাত্র সংগঠন IFSO এর অন্তর্ভূক্ত হিসাবে কাজ করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্র শিবির ২৫তম সদস্য।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রক্তন সভাপতি ডা: আব্দুল্রাহ মোহাম্মদ তাহের IFSO এর সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে ১৯৯৩-৯৬ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তার দায়িত্ব পালনকালে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, সিম্পোজিয়াম ও সেমিনার উপলক্ষ্যে আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার ৮৪ টি দেশে একশত বারের ও বেশী সফর করেন এবং ভাষণ দেন। সফরকালে তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড: মাহাথির মোহাম্মদ, পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডোন্ট জিয়াউল হক, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড: নাসের, সুদানের প্রসিডেন্ট জেনারেল ওমর হাসান আল বশীর, প্রাক্তন পেসিডেন্ট সুয়াির আদ্দাহাব, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাফর আল নিমেরী, কুয়েতের বর্তমান আমীর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ ও শেখ শাদ, আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রফেসর বোরহান উদ্দীন রব্বানী, তুরস্কের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাজমুদ্দীন আরবাকান প্রমুখ রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া আফগান মুজাহিদ নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার, কাশ্মীঅর মুজাহিদনেতা হেকীম গোলাম নবী, আনব্দুর রশিদ এবং আমান উল্লাহ খান, ফিলিপাইনের মিন্দানাও এম,এন, এল, এফ এবং এমআইএল এফ নেতা নূর মিসৌরী, থাইল্যান্ডের মুসলিম মুজাহিদ নেতা ড: শুকরি, মিশরের ইখওয়ানুল মুসলেমীনের মুর্শিদে আম ড: নাসের, সুদানের ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান ড: হাসান তুরাবী, সাউথ আফ্রিকার নেতা আহম্মের দিদাদ ইউকে এর প্রখ্যাত সঙ্গিতজ্ঞ নওমুসলিম ইউসুফ ইসলাম, আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভী, জামান কাদাউই প্রমূখ বিশ্ব ইসলামী নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করের। একটি সাক্ষাতকারে ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ইফসুর সেক্রেটারী জেনারেল থাকার সময়ের উল্লেখযোগ্য দুএকটা ঘটনা উল্লেখ করতে যেয়ে বলেন :

‌‌‌“ক) IFSO জাতিসংঘের Olserver member, সে সুবাদে জাতিসংঘের অধীনে জেনেভাস্থ Human Rights Commission এরও সদস্য। ১৯৯৪ সালে Human Rights Commission এর International Conference অনুষ্ঠিত হয়েছিল জেনেভায়। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা সেই Conference এ যোগ দিয়েছিলেন। IFSO সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে আমিও সেই সম্মেলনে যোগ দেই। প্রথম দিনেই কনফারেন্স হলের লবীতে সাক্ষাৎ পাই Kashmir America concil এর সভাপতি মুজাহিদ নেতা ড: গোলাম নবী ফাই এর সাথে। তিনি আমেরিকা থেকে এসেছেন কাশ্মীর এ মানবাধীকার  লংঘন সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরার জন্য। কিন্তু তিনি কোনভাবেই কনফারেন্স হলে ঢুকার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি তাকে আমার টীম এর সদস্য করে একটি এক্সেস কার্ড ইস্যু করি। আমার কার্ড নিয়ে কনফারেন্স এর চেয়রম্যান এর কাছে গেলে তাকে গ্রহন করা হয়। ড: গোলাম নবী ফাই কনফারেন্স এ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে কাশ্মীঅর এর উপর অত্যন্ত বলিষ্ঠ বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবাধিকার সংস্থার আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কাশ্মীরের উপর বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দিতে পেরে IFSO এর সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে আমার খুব আনন্দ অনুভব হয়েছিল।

খ) ১৯৯৬সালে IFSO-এর  ইন্টর্নেশনাল কনফারেন্স এর জন্য হোস্ট হওয়ার অনুরোধ জানানোর্ জন্য তুরস্কের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড: নাজমুদ্দিন আরবাকানের সালে ইস্তাম্বুলে তার অফিসে সাক্ষাতের সুযোগ পাই। IFSO সম্বন্ধে আগে থেকেই তিনি ওয়াকেফহাল ছিলেন। তুরস্কে আমরা সম্মেলন করতে চাই শুনে উনি খুশি হলেন এবং তাৎক্ষনিকভাবে অনুমতি দিলেন এবং ইস্তাম্বুলের বসফরাস নদীর তীরে ফাইভ স্টার হোটেলেটি পুরো এক সপ্তাহের জন্য কনফারেন্স ডেলিগেটদের জন্য ভাড়া দেন।
প্রসঙ্গ ক্রমে তিনি তার উদ্যোগে জি-সেভেন এর এগেইনস্টে ডি-৭ গঠনের কথা বললেন। এত বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আমি বিনয়ের সাথে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানালে তিনি বিবেচনার আশ্বাস দেন। পরে ডি-৭, ডি-৮ হয় এবং বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভূক্ত হয়”  (ছাত্র সংবাদ, মার্চ-এপ্রিল ২০০০)। এখানে উল্লেখ্য যে, আটটি মুসলিম উন্নয়নশীল  দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের নিয়ে ডি-৮ সম্মেলন ১ম হাসিনা সরকারের আমলে মার্চ ১-২ , ১৯৯৯ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেটা ছিল ডি-এইট -এর ২য় সম্মেলন।  এ সম্পর্কে জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন: উন্নয়নশীল ৮টি দেশ। 


No comments:

Post a Comment

Popular Posts