Sunday, June 24, 2018

মালয়েশিয়ার ইসলামী আন্দোলন, আনোয়ার ইব্রাহীম এবং জামায়াতে ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

            মালয়েশিয়ার ইসলামী আন্দোলনের নেতা আনোয়ার ইব্রাহীম জামায়াতে ইসলামী ও ইখওয়ানুল মুসলেমীনের সাহিত্য ও আন্দোলন দ্বারা উজ্জ্বীবিত হয়েই মালয়েশিয়ার যুব আন্দোলন আবিম(Angkatan Belia Islam Malaysia (ABIM): www.abim.org.my ) গঠন করেন এবং এক সময় যুব সম্প্রদায়ের একচ্ছত্র নেতায় পরিনত হন। দীর্ঘ ঘাত প্রতিঘাতের পর দাতুক সেরি মাহাথির মোহাম্মদের সাথে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। মন্ত্রী থেকে ক্রমান্বয়ে উপ-প্রধানমন্ত্রী পদ পর্যন্ত ক্ষমতা লাভ করেন। বিভিন্ন সরকারী কাজ পরিচালনায় ব্যাপক দক্ষতা ও সাফল্যের জন্য বিশ্বব্যাপি খ্যাতি অর্জন করেন। বিশ্বসম্রাজ্যবাদী ও ইহুদীবাদী শক্তির কৌশলী চক্রান্তের ফলে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সাথে বিবাদের সম্মুখিন হয়ে ক্ষমতাচ্যুত ও কারারুদ্ধ হন। আনোয়ার ইব্রাহীম ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর একটি জাতীয় নির্বাচনে মালয়েশিয়ার অপর ইসলামী আন্দোলন পাসসহ গঠিত এক ইসলামী জোট পূর্ব থেকেও অধিকতর ভালো ফলাফল লাভ করে। মালয়েশিয়ার কালানতান ও তেরেংগুনা দুটি প্রদেশে পাস এর সরকার প্রথিষ্ঠিত হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, আনোয়ার ইব্রাহীম ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সাথী সম্মেলনে অতিথি হিসাবে যোগদান করেছিলেন। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রাক্তন সিনিয়র নায়েবে আমির মরহুম আব্বাস আলী খান (রহ:) মালয়েশিয়ার আবিম ও পাস উভয় ইসলামী আন্দোলনের কার্যক্রমই পরিদর্শন করেন। মালয়েশিয়ার কুয়াল তেরেংগুনায় অনুষ্ঠিত জুন ২০০০ ইং তারিখে পার্টি ইসলাম মালয়েশিয়া- পাসের ৪৬ তম সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী যোগদান করেন। তার সফরসঙ্গী ছিলেন অন্যতম সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ কামরুজ্জামান। এভাবে মালয়েশিয়ার ইসলামী আন্দোলনের সাথে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের যোগাযোগ রয়েছে।


           প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মদ আনোয়ারকে উপ -প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করলে, আনোয়ার ও তার সমর্থকরা "সংস্কার আন্দোলন"(ইংরেজিrefomasi movement) শুরু করে। এ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা বারিসন ন্যাশনাল সরকারের নীতি বহির্ভূত কর্মকান্ড বিলোপ করা। সংস্কার আন্দোলনের নেতা কর্মীদের নিয়ে ১৯৯৯ সালে আনোয়ার ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি গঠন করে। এবং ৯৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্যে parti Islam se Malaysia, ডেমোক্রেটিক এ্যাকশন পার্টি ও নব গঠিত ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি নিয়ে "বারিসন অল্টারনেটিভ" নামে বিরোধী জোট গঠন করেন। ২০০৩ সালের আগস্টে আনোয়ারের পরামর্শে তার স্ত্রী ওয়ান আজিজাহ ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি ও মালয়েশিয়ান পিপলস্ পার্টি একীভূত করে পিপলস্ জাস্টিস পার্টি গঠন করে। ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে PKRPAS এবং DAP মিলে পাকাতান রাকাত নামে জোট গঠন করেন। যা ২০০৮ সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং ৩১টি আসন জয়লাভ করে বিরোধী দলে পরিণত হয়। এর মধ্যে মাহাথির মোহাম্মদ ২০০৩ সালের ওআইসি সম্মেলনের সফল সমাপ্তির পর ৩০শে অক্টোবর তিনি তার শিষ্যদের হাতে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।  মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে মাহাথির মোহাম্মদ তার একসময়ের শিষ্য নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে আবার রাজনীতিতে আগমণ করেন।  শত্রুতে পরিণত হওয়া একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র আনোয়ার ইব্রাহিমের সাথে রাজনৈতিক জোট গঠন করে নির্বাচনে বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন পাকাতান হারাপান জোট ২২২ আসনের পার্লামেন্টে ১১২ আসনে বিজয়ী হয়। এর মধ্যে আনোয়ারের পিকেআর পায় ৪৮ আসন। 

               আজকে মালয়েশিয়াতে ইসলামের যে  কিছু কালচার বিদ্যমান: অলি গলিতে ইসলামী স্কুল, নামকরা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটি IIU (www.iium.edu.my), ইসলামী ব্যাংক, হজ্ব ফাউন্ডেশন, ইয়ং জেনারেশনকে ইসলামের পথে নিয়ে আসতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে আনোয়ার ইব্রাহীমের আবিম ও  ইখওয়ানুল মুসলেমিন প্রভাবিত ওলামায়ে আল-আজহার এবং পাস ইসলামিক পার্টি। সেখানে ঐক্যবদ্ধভাবে ওলামায়ে দেওবন্দও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মালয়েশিয়ার ইসলামের দিকে অগ্রযাত্রা অব্যহত রাখুন, আমীন। এখানে উল্লেখ্য, আনোয়ার ইব্রাহিম ব্যক্তিগতভাবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পাকাতান ক্ষমতায় আসার পর থেকে সৌদি-আমিরাত বলয়ের চেয়েও তুরস্ক-ইরানের সাথে মালয়েশিয়ার সম্পর্ক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়। দেশটি এর মধ্যে সৌদি নেতৃত্বাধীন প্রতিরক্ষা জোট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আর তুরস্ক, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ইরানের সাথে মিলে ওআইসি দেশগুলোর মধ্যে একটি শক্তিমান বলয় তৈরির লক্ষ্যে মাহাথির সম্প্রতি কুয়ালালামপুরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করেন।  


         ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সাথী সম্মেলনে অতিথি হিসাবে যোগদান করেছিলেন আনোয়ার ইব্রাহীম। সেই সম্মেলনে তিনি বাংলা শব্দে বলেছিলেন "আমি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরকে ভালবাসি"


        ২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের চলমান বিচারকে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ' আখ্যায়িত করে বিচার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন  আনোয়ার ইব্রাহিম। এক বিবৃতিতে তিনি জামায়াতের সাত নেতার সংবিধানস্বীকৃত অধিকার রক্ষার আহ্বানও জানান। মালয়েশিয়া ক্রনিকল পত্রিকায় ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তারিখে তাঁর বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়। এর শিরোনাম ছিল 'ট্রায়াল অব জামায়াতে ইসলামী লিডারস ইন বাংলাদেশ : স্টপ দ্য পার্সিকিউশন' (বাংলাদেশে জামায়াত নেতাদের বিচার : নিগ্রহ বন্ধ করুন)।
Post edited in Feb, 2020

নীচের ভিডিওটি যোগ করা হলো এই পোস্টে ২৬/১১/২২ তারিখে:  

No comments:

Post a Comment

Popular Posts