Monday, January 2, 2017

কাদিয়ানী সমস্যা : খতমে নবুও্যত আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর স্মরণীয় সাফল্য

খতমে নবুও্যত অর্থাৎ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-ই শেষ নবী, এরপর কোন প্রকার নবী আসবে না। কেউ নবী দাবী করলে সে হবে মিথ্যাবাদী। সে কাফের এবং তাকে মান্যকারীরাও কাফের - এটা ইসলামের অলংঘনীয় আকীদা। ব্রিটিশ আমলে কাফের খৃস্টানদের সহায়তায় আবির্ভূত কাদিয়ানীরা ঐ খতমে নবুও্যত আকিদা অস্বীকার করে। বর্তমানেও ইহুদী-খৃষ্টানদের সহায়তায় তাদের কার্যক্রম চালু রেখেছে। এদের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী পৃথিবীব্যাপী অবিস্মরণীয় সংগ্রাম পরিচালনা করে এবং বিরাট সাফল্যও অর্জন করে। 

পাকিস্তানের প্রথম দিকের কথা। পাঞ্জাবের মুসলিম লীগ নেতা লিয়াকত আলী খানের মৃত্যুর পর ১৯৫১ সালে প্রধানমন্ত্রী হন বাঙ্গালী খাজা নাজিম উদ্দিনতিনি ১৯৫৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেনসে সময় পাকিস্তানে আহমদিয়া বা কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ব্যাপক বিস্তার হয় এবং একইসাথে তারা পাকিস্তানের সংবিধানে ভূমিকা রাখতে শুরু করেপাকিস্তানের কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তা এই মতবাদের অনুসারী ছিলেনকাদিয়ানীদের বিভ্রান্ত মতবাদ পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে প্রভাব রাখার আশংকা শুরু হয় মুসলিমদের মধ্যে। তখনকার ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মূল নেতা আল্লামা মওদূদী সাহেব বিষয়টাকে গুরুত্বের সাথে দেখেনতিনি সংবিধান কমিটি থেকে চিহ্নিত কাদিয়ানীদের বাদ দেওয়া, কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কাদিয়ানী ও অমুসলিমদের অংশগ্রহণ না করানোর দাবি তুলেন

রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি আল্লামা সাইয়্যেদ মওদুদী বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনও চালিয়ে যান। তিনি 'কাদিয়ানী মাসয়ালা' নামে একটি বই লিখে কাদিয়ানী বা আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম প্রমাণ করেন এবং তাদের ভ্রান্ত আকিদার স্বরূপ উন্মোচন করেন। এই বইটি কাদিয়ানী বিরোধী আন্দোলনে গতি এনে দেয়। এই আন্দোলন বড় ধরনের নাড়া দেয় পাকিস্তানকে। অধিকাংশ মুসলিম এই আন্দোলনে অংশগ্রহন করেন। এ সময় অনেকগুলো সংগঠন একযোগে কাদিয়ানীদেরকে সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষনার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তারা সর্বদলীয় কনভেনশনে ১৯৫৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে 'ডাইরেক্ট অ্যাকশন কমিটি' গঠন করে। জামায়াত এই কমিটির বিরোধিতা করে অহিংস আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়।

এদিকে পাঞ্জাবে কাদিয়ানী সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকার ও জনগণের মধ্যকার দাঙ্গা ভয়াবহরূপ ধারণ করে। এরূপ পরিস্থিতিতে সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ ১৯৫৩ সালের আটাশে মার্চ মাওলানা মওদূদীসহ জামায়াতের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে। এটা ছিল মূলত সামরিক কর্তৃপক্ষের ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতার নগ্ন বহিপ্রকাশ। তারা দাঙ্গা সৃষ্টির অভিযোগে গ্রেপ্তার করলেও মূলত মওদূদী ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী মাওলানাকে গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে “কাদিয়ানী মাসয়ালা” বইয়ের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এ অভিযোগেই ৮ই মে তারিখে সামরিক আদালত মাওলানাকে ফাঁসীর আদেশ প্রদান করে। অথচ মাওলানা সামরিক মানুষ ছিলেন না। মূলত এটা ছিল একটা অজুহাত। আল্লামা মওদূদীকে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে দূরে রাখাই ছিলো এর বেসিক উদ্দেশ্য। এর পেছনে মুসলিম লীগের ইন্ধন ছিল। মাওলানার ফাঁসীর ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আরেক বাঙালি নেতা মোহাম্মদ আলী বগুড়া। বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর তীব্র বিরোধিতা ও ক্ষোভের মুখে মুসলিম লীগ ও সেনাবাহিনী তাঁর মৃত্যু দণ্ডাদেশ মওকুফ করে তারা মাওলানাকে যাবজ্জীবনের কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করে। আবার এর বিশ মাস কারাবাসের পর মাওলানা বিনা শর্তে মুক্তি দেয় সরকার।

যাই হোক, সামরিক কর্তৃপক্ষ যে “কাদিয়ানী মাসয়ালা” পুস্তিকা প্রণয়নের অজুহাতে মাওলানাকে মৃত্যু দণ্ডাদেশ প্রদান করে সে পুস্তিকাটির কিন্তু তারা বাজেয়াপ্ত করেনি। লাহোরের সামরিক আদালতে তার বিচার চলাকালেই লাহোর শহরেই বইটির বেস্ট সেল চলছিল। শুধু লাহোর নয় সারা পাকিস্তানেই বইটির বিক্রি চলছিল দেদারছে। মূলত বইটির কোথাও কোন উস্কানিমূলক কথা ছিল না। বরং তাতে তিনি 'ডাইরেক্ট অ্যাকশন কমিটি'র বিরোধিতা করেছেন। তাই সরকারও চেয়েছিলো বইটি মানুষ পড়ুক।

কাদিয়ানীরা যে মুসলমান নয়, অকাট্য যুক্তি প্রমাণ দিয়ে এ বইটিতে তা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। কাদিয়ানীদেরকে আইনগতভাবে অমুসলিম ঘোষণা করাই ছিল আল্লামা মওদূদীর দাবি। এ দাবির স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় তত্ত্ব ও তথ্য এ বইটিতে সরবরাহ করা হয়েছে। এ দাবী আদায়ের লক্ষ্যে মাওলানা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলবার আহ্বান জানান। অবশেষে ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়। কাদিয়ানীরা যে অমুসলিম এ ব্যাপারে উম্মতের গোটা আলেম সমাজ একমত। জামায়াতে ইসলামীর তৎপরতায় রাবেতায়ে আলমে ইসলামীর মাধ্যমে সারা পৃথিবীর ইসলামী স্কলারদের মাধ্যমে সমবেতভাবে কাদীয়ানীরা কাফের ঘোষিত হয়। ১৯৮৪ সালে পাকিস্তানে কাদিয়ানীদের কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়। 

সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (রহঃ)-এর “কাদিয়ানী সমস্যা” এই  পাওয়ার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: কাদিয়ানী সমস্যা - এরপর উপরের ডানপাশের কোনায়  তীর চিহ্ন ক্লিক করে ডাউনলোড করে নিন। 

বহু ইসলামী দল ও গোষ্ঠী কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে এদের প্রতিষ্ঠাকালের পর থেকে নানাভাবে সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। এখানে একটা ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে আলেমগণ তাদের বিরুদ্ধে নানা তৎপরতার পাশাপাশি মুবাহালার জন্য ডেকেছিল। কাদিয়ানীর প্রতিষ্ঠাতা মীর্যা গোলাম কাদিয়ানী (লাঃ) এতে সাড়া প্রদান করে। সেই মুবাহালা বা পরস্পর আল্লাহ’র গজবকে আহ্বান করে মিথ্যাবাদীর উপর তার পতন কামনা করাই তার জন্য কাল হয়েছিল। কারণ কাজী সানাউল্লাহ অমৃতসরী সাহেবের সাথে মুবাহালায় সে বলেছিল, আমাদের মধ্যে যে মিথ্যুক আল্লাহ যেন তাকে অপরের জীবদ্দশায় নিকৃষ্ট অবস্থায় মৃত্যু দেন। আর তিনি বলেছিলেন আমীন (কবুল করুন)।  অতঃপর কাজী সাহেবের মৃত্যুর পূর্বেই মীর্যা গোলাম কাদিয়ানী (লাঃ) একদিন পায়খানায় প্রবেশ করে সেখানেই পড়ে মারা যায়। আর এভাবেই আল্লাহ মিথ্যাবাদীদের সাজা দিয়ে থাকেন। 


No comments:

Post a Comment

Popular Posts