Showing posts with label হাদীস শরীফ. Show all posts
Showing posts with label হাদীস শরীফ. Show all posts

Saturday, July 13, 2019

যে হাদিসটি সবসময় ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রেরণা জোগায় - তারা বিজয়ের গৌরবকে প্রত্যক্ষ করবে



       রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর সাহাবাদের বলেন- “শেষ বিচারের দিনে এমন কিছু মানুষকে আনা হবে, যাদের বুক ও ডান হাতে জ্বলজ্বল করতে থাকবে নূর, তাদেরকে বলা হবে, আজকে তোমাদের জন্য সুসংবাদ, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমাদের কল্যাণ হোক, তোমরা চিরদিনের জন্য প্রবেশ করো জান্নাতে।’ তাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার এই ভালবাসা দেখে নবী-রাসূলগণ পর্যন্ত ঈর্ষান্বিত হবেন।”

          একথা শুনে সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ, এরা কারা?"

       উত্তরে হযরত মুহাম্মাদ (সা) বললেন, “এরা আমাদের (নবীদের) মধ্য হতেও না, এরা তোমাদের (সাহাবীদের) মধ্য হতেও না। তোমরা আমার সঙ্গী, কিন্তু তারা আমার বন্ধু। তারা তোমাদের অনেক পরে আসবে। তারা কোরআনকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাবে এবং সুন্নাহ(আমার আদর্শ)কে মৃত অবস্থায় পাবে। তারা শক্তভাবে কুরআন ও সুন্নাহ(আমার আদর্শ)কে আঁকড়ে ধরবে এবং পুনরুজ্জীবিত করবে। তারা এগুলো অধ্যয়ন করবে এবং মানুষকে শেখাবে। কিন্তু একাজ করতে গিয়ে তারা তোমাদের চেয়েও ভয়াবহ ও কঠিন নির্যাতনের শিকার হবে। প্রকৃতপক্ষে তাদের একজনের ঈমান হবে তোমাদের চল্লিশজনের ঈমানের সমান। তাদের একজন শহীদ হবে, তোমাদের চল্লিশজন শহীদের সমান। কেননা তোমরা সত্যের পথে একজন সাহায্যকারী (আল্লাহর রাসূল) পেয়েছ, কিন্তু তারা কোন সাহায্যকারী পাবেনা। প্রত্যেক জায়গায় তারা অত্যাচারী শাসক দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকবে এবং তাদের অবস্থান হবে বায়তুল মাকদিস এর চারপাশে। তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নুসরাহ (সাহায্য) আসবে এবং তারা এই বিজয়ের গৌরবকে প্রত্যক্ষ করবে।”

            তারপর তিনি রাসূল (সা) দু’আ করলেন-
           “হে আল্লাহ, তুমি তাদেরকে নুসরাহ (সাহায্য) দান কর। জান্নাতে তুমি তাদেরকে আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ কর।”
            [ মুসনাদে ইমাম আহমাদ ]

            হাদীসে বর্ণিত উচ্চ মর্যাদাশীল জামায়াতটির বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করুন: ১) তারা কুরআন ও সুন্নাহ অধ্যয়ন করবে এবং মানুষকে শেখাবে। কিন্তু একাজ করতে গিয়ে তারা তোমাদের চেয়েও ভয়াবহ ও কঠিন নির্যাতনের শিকার হবে। ২) প্রত্যেক জায়গায় তারা অত্যাচারী শাসক দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকবে, ৩) তাদের অবস্থান হবে বায়তুল মাকদিসের চারপাশে। যেকোন নিরপেক্ষ ব্যক্তিই স্বীকার করবে যে, এসমস্ত বৈশিষ্ট্যই জামায়াতে ইসলামী ও ইখওয়ানুল মুসলেমিনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বায়তুল মাকদিসের কাছে সংগ্রামরত হামাস ইখওয়ানুল মুসলেমিন ও জামায়াতে ইসলামী ধারার সংগঠন। বিশ্বব্যাপী জামায়াতে ইসলামী ফিলিস্তিনি মুসলমানদের সহযোগিতায় অগ্রবর্তী রয়েছে।  বিশ্বব্যাপী ইহুদীবাদী শক্তিগুলো জামায়াতে ইসলামীর শত্রুতায় নিয়োজিত রয়েছে।  অত্যাচারীদের ভয়াবহ ও কঠিন নির্যাতনের মধ্যে তারা আল্লাহ’র নুসরাহ (সাহায্য) প্রত্যক্ষ করে। এর ফলে তারা টিকে থাকে এবং এগিয়ে যায়।  তারা ইসলামের বিজয়ের গৌরবকে প্রত্যক্ষ করার অবিচল আকাঙ্খায় নিয়োজিত রয়েছে। কিছু পীর, মৌলবী ও শায়খ ইসলামের বিজয়ের গৌরবকে প্রত্যক্ষ করার অবিচল আকাঙ্খাকে ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ ‘তারা এইজন্যই তো মার খায়’ ইত্যাদিসহ আরো নানা কিছু বলে নিন্দা করে। তারা আসলে প্রকাশ্য মোনাফেকীতে লিপ্ত: রাছুল(সাঃ)-এর যুগে মোনাফেকরা গোপনে ইসলামের বিজয়ের বিরোধিতা করতো - এরা করে প্রকাশ্যে। হাদীসের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে ‘তারা এই বিজয়ের গৌরবকে প্রত্যক্ষ করবে’। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য করুন - তারা (জামায়াতে ইসলামী ও ইখওয়ানুল মুসলেমিন ধারার সংগঠনসমূহ নানা উত্থান-পতন সত্ত্বেও ইসলামের বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।  এখন আল্লাহ’র রাছুল (সাঃ) যে দোয়া করেছেন তার সাথে আমরাও আমীন বলি- আমীন, আমীন ছুম্মা আমীন। মুসনাদে আহমাদের এই হাদীসে এদের ব্যাপক মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে তা আবার পড়ুন প্লীজ।  এর সাথে এই কাফেলায় শরীক হওয়ার ঐকান্তিক আহ্বান রইল।  

Please browse this link: 

Tuesday, July 17, 2018

আত্মীয়-স্বজনের সাথে গড়ে উঠুক জান্নাতী সম্পর্ক -ড. মো: আকতার হোসেন

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের রিজিক প্রশস্ত হওয়া এবং নিজের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পাওয়া পছন্দ করে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। (বুখারি ও মুসলিম)
রাবি পরিচিতি :

আনাস ইবনে মালিক (রা) ছিলেন বিখ্যাত সাহাবী, খাদিমে রাসূল, ইমাম, মুফতি, মুয়াল্লিমে কুরআন, মুহাদ্দিস, খ্যাতিমান রাবি, আনসারি, খাযরাজি ও মাদানি। কুনিয়াত আবু সুমামা ও আবু হামযা। উনার উপাধি ‘খাদিমু রাসূলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’। বিখ্যাত খাযরাজ গোত্রের বনু নাজ্জার শাখায় হিজরতের দশ বছর আগে ৬১২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মালিক ইবন নাদর এবং মাতা উম্মু সুলাইম সাহলা বিনতু মিলহান আল-আন সারিয়্যা। উম্মু সুলাইম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহর (সা) খালা হতেন।
হযরত রাসূলে কারীম (সা) যখন মদীনায় আসেন তখন প্রসিদ্ধ মতে আনাসের বয়স দশ বছর। রাসূল (সা) একটু স্থির হওয়ার পর আনাসের মা একদিন তাঁর হাত ধরে রাসূলুল্লাহর (সা) কাছে নিয়ে যান এবং তাঁর খাদিম হিসেবে পেশ করেন। হযরত আনাস (রা) সর্বদা রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামের সান্নিধ্যে থাকতেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রায় দশ বছর অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে তাঁর খিদমতের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামের সাথে প্রায় সকল অভিযান যেমনÑ বদর, উহুদ, খন্দক, কুরায়জা, মুসতালিক, খাইবার, হুনাইন ও তায়িফ ইত্যাদি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
হযরত আনাসের মৃত্যুসন ও মৃত্যুর সময় বয়স সম্পর্কে প্রচুর মতভেদ আছে। সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মতে হিজরি ৯৩ সনে মৃত্যুবরণ করেন এবং তখন তাঁর বয়স হয়েছিল একশো বছরের ঊর্ধ্বে। কুতন ইবন মুদরিক আল-কিলাবী জানাযার নামায পড়ান। বসরার উপকণ্ঠে ‘তিফ্ নামক স্থানে তাঁর বাসস্থানের পাশেই কবর দেয়া হয়। হযরত আনাস ছিলেন দুনিয়া থেকে বিদায়গ্রহণকারী বসরার শেষ সাহাবী। সম্ভবত একমাত্র আবুত তুফাইল (রা) ছাড়া তখন পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো সাহাবী জীবিত ছিলেন না। মৃত্যুকালে হযরত আনাস মোট ৮২ জন ছেলেমেয়ে রেখে যান। তাদের মধ্যে ৮০ জন ছেলে এবং হাফসা ও উম্মু আমর নামে দুই মেয়ে। তা ছাড়া নাতি-নাতনীর সংখ্যা ছিল আরও অনেক।
তাঁর বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা মোট ২২৮৬। মুত্তাফাক আলাইহি ১৮০, বুখারি এককভাবে ৮০ এবং মুসলিম এককভাবে ৭০টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর ছেলে এবং নাতীদের থেকেও বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম আলোচ্য হাদীসে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। কেননা মানুষের মাঝে ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা, দয়া ও সহযোগিতার মূলভিত্তি হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক। এ সম্পর্ক নষ্ট হলে সমাজ উচ্ছন্নে যাবে। বর্তমান সময়ের পত্রিকার পাতায়, অনলাইন ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়াসহ সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায় সমাজের অনেক মুসলমানই পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য ও আত্মীয়স্বজনের অধিকার সম্পর্কে একেবারেই অসচেতন। আত্মীয়স্বজনের সাথে মিলনের সেতুবন্ধকে ছিন্ন করে চলেছেন। আপন পিতা-মাতাকে পাঠাচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমে। আবার অনেক পিতা-মাতা ছেলেমেয়ে বেঁচে থাকার পরও জীবিকা নির্বাহের জন্য ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছেন।

আত্মীয় কারা:

ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক বলতে বুঝায় মা ও বাবার দিক থেকে রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়দেরকে। সুতরাং পিতা-মাতা, ভাই-বোন, চাচা, ফুফু, মামা, খালা এবং তাদের ঊর্ধ্বতন ও নিম্নতম ব্যক্তিবর্গ ও সন্তানগণ। এরা সবাই আরহাম রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়ের অন্তর্ভুক্ত। এদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম কারণ বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
“এবং তারা (রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়) আলাহর বিধান মতে তারা পরস্পর বেশি হকদার।” (সূরা আহজাব, আয়াত : ৬)
কারো মতে আত্মার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে আত্মীয় বলা হয়। সাধারণত রক্ত, বংশ কিংবা বৈবাহিক সূত্র থেকে আত্মীয়তার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। শরয়ী বিধান অনুযায়ী আত্মীয়স্বজনের আলাদা আলাদা হক বা অধিকার আছে। তাদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা ওয়াজিব। শরয়ী কারণ ছাড়া সম্পর্ক ছিন্ন করা সম্পূর্ণ হারাম। আলাহর বাণী,
“আর তোমরা আলাহকে ভয় কর, যার নামে একে অন্যের নিকট হতে অধিকার চেয়ে থাক এবং আত্মীয়তা ও নিকট সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাক। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ আলাহ তোমাদের ওপর কড়া নজর রেখেছেন।” (সূরা নিসা-১)

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব:

কুরআন ও হাদীসে আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। আলাহতা’আলা বলেন, তোমরা এক আল্লাহ তায়ালার এবাদাত করো, কোনো কিছুকেই তাঁর সাথে অংশীদার বানিয়ো না এবং পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করো, যারা ( তোমাদের) ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, এতীম, মেসকীন, আত্মীয় প্রতিবেশী, কাছের প্রতিবেশী, পাশের লোক, পথচারী ও তোমার অধিকারভুক্ত (দাস দাসী, তাদের সাথেও ভালো ব্যবহার করো), অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা এমন মানুষকে কখনো পছন্দ করেন না, যে অহংকারী ও দাম্ভিক। ( সূরা আন নেসা-৩৬)
হাদীসের আলোকে জানা যায়, কেউ আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করলে আলাহ তার সাথে নিজ সম্পর্ক ছিন্ন করেন। আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন, আলাহ বলেন, “আমি রহমান, আমি রাহেমকে (আত্মীয়তার বন্ধন) সৃষ্টি করেছি। রাহেম নামটিকে আমি নিজের নাম থেকে নির্গত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে, আমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখব। আর যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে আমিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব। (বুখারি, আহমাদ ও তিরমিজি)
নবী করিম সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না বলে ঘোষণা করেছেন। যেমনÑ জুবাইর ইবনে মুতঈম (রা) থেকে বর্ণিত আলাহর রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ইরশাদ করেছেন,
“আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (বুখারি ও মুসলিম)
আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর আমল আলাহতা’আলা কবুল করেন না। রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন, “আদম সন্তানের আমলসমূহ প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত জুমার রাতে (আলাহর নিকট) উপস্থাপন করা হয়। তখন আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর আমল গ্রহণ করা হয় না। (আহমাদ) এ কারণেই রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেছেন “যে ব্যক্তি আলাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে চলে।” (বুখারি)
হজরত আয়িশা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ইরশাদ করেন, রাহেম (আত্মীয়তার সম্পর্ক) আরশের সাথে ঝুলানো রয়েছে। সে বলে, যে আমাকে জুড়ে দেবে, আলাহ তাকে জুড়ে দেবেন। যে আমাকে ছিন্ন করবে আলাহ তাকে ছিন্ন করবেন। (বুখারি ও মুসলিম)
আমাদের প্রিয়নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম ছিলেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার মূর্তপ্রতীক। আবু সুফিয়ান (রা:) ইসলাম গ্রহণের আগে বাণিজ্য সফরে শাম দেশে গেলে বাদশা হিরাক্লিয়াস তার কাছে রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম সম্পর্কে বিবরণ জানতে চান। তিনি বিবরণ তুলে ধরেন এভাবে যে, “তিনি আমাদের আলাহর ইবাদত, সালাত, সত্যবাদিতা, চারিত্রিক শুভ্রতা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার আদেশ করেন।”
হযরত আবদুলাহ ইবনে আনাস (রা:) বলেন, “যখন রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম মদিনায় আগমন করেন, তখন আমি তার নিকটবর্তী হলাম। যখন আমি তার চেহারা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম, বুঝতে পারলাম যে, নিঃসন্দেহে এটি কোনো মিথ্যাবাদীর চেহারা হতে পারে না। তিনি প্রথমে যে কথা বলেছিলেন তাহলো, “হে লোকসকল, ইসলামের প্রচার কর, গরিবদের অন্ন দান কর, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা কর, রাতের বেলায় নামায আদায় কর, তাহলে তোমরা সহজে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিজি)
আমর ইবনে আস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালামকে প্রকাশ্যে বলতে শুনেছি, অমুকের বংশধররা আমার বন্ধু বা পৃষ্ঠপোষক নয়। আমার বন্ধু বা পৃষ্ঠপোষক হলো আলাহ এবং নেককার মুমিনগণ। তবে তাদের সাথে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। আমি তা সজীব রাখার চেষ্টা করব। (বুখারি ও মুসলিম)
হজরত আবু বকর (রা:) খালাতো ভাইকে অর্থনৈতিক সাহায্য করতেন। ইফকের ঘটনায় এ ভাই সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছিলেন। এতে তিনি অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন। তিনি ঠিক করলেন এ ভাইকে সাহায্য করবেন না। কিšু— মহান আলাহ এটা পছন্দ করলেন না। (সূরা নূর : ২২) ফলে আবু বকর (রা) তার সিদ্ধান্ত বদলালেন।
আত্মীয়স্বজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হকদার হলেন পিতা-মাতা। কুরআন ও হাদীসের আলোকে পিতা-মাতার আনুগত্য ও সেবা অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফরজ আইন ইবাদত। কুরআনে আলাহ বারবার তার নিজের ইবাদতের করার পরই পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। আলাহ বলেন,
“তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। পিতা-মাতা উভয়ে বা তাদের একজন যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাহলে তাদেরকে ‘উফ’ বলবে না। তাদেরকে ধমক দেবে না এবং তাদের সাথে সম্মানজনক বিনম্র কথা বলবে। মমতাবশে তাদের জন্য নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত করে রাখবে এবং বলবে, হে আমার প্রতিপালক, আপনি তাদেরকে দয়া করুন যেমনভাবে তারা শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছেন।” (সূরা বনি ইসরাইল : ২৩-২৪)
শিরকের পরে ভয়ঙ্করতম কবিরা গুনাহ হলো পিতা-মাতার অবাধ্যতা। রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন, কঠিনতম কবিরা গুনাহ আলাহর সাথে শিরক করা, এরপর পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। (বুখারি)
পিতা-মাতার খিদমতকে নামাযের পরেই সর্বোত্তম আমল বলে ঘোষণা করে প্রিয়নবী সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন, “সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমল হলো সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা এবং পিতা-মাতার খিদমত করা। (বুখারি ও মুসলিম)
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম আরো বলেন, “পিতা-মাতার সন্তুষ্টির মধ্যেই আলাহর সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আলাহর অসন্তুষ্টি। (তিরমিজি)
রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেছেন,
“তার ধ্বংস হোক, তার ধ্বংস হোক, তার ধ্বংস হোক!! বলা হলো, কার কথা বলছেন ইয়া রাসূলালাহ! তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার কোনো একজনকে বা উভয়কে বার্ধক্যে পেয়েছে, অথচ জান্নাতে যেতে পারল না।” (মুসলিম)
অন্য হাদিসে এসেছে, তিন ধরনের ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না; তারা হলো- পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি; দাইয়ুস অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি যার স্ত্রী ব্যভিচারিণী অথচ সে তাতে বাধাদান করেনি বা তার প্রতিকার করেনি এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী। (নাসাঈ)
হাদিসের সূত্র মতে মাতা-পিতার মৃত্যুর পরেও সন্তানের জন্য ৪টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে যায় । সেগুলো হলো, ১) মাতা-পিতার জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করা, ২) তাঁদের কৃত ওয়াদা এবং বৈধ অসিয়তসমূহ পালন করা, ৩) তাঁদের বন্ধুদের সাথে সুন্দর আচরণ করা এবং ৪) তাঁদের আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় এবং সুন্দর আচরণ করা। (আল আদাবুল মুফরাদ)
এভাবে পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনদের হকের ব্যাপারে অসংখ্য আয়াত ও হাদিস রয়েছে যা স্বল্প পরিসরে উলেখ করা সম্ভব নয়।

শেষ কথা :

আধুনিক সভ্যতায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক জীবনে পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনদের প্রতি অবহেলা সীমাহীন। ফলে আমাদের মাঝ থেকে শ্রদ্ধা, স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা ইত্যাদি লোপ পাচ্ছে এবং পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন নষ্ট হচ্ছে। অথচ পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজন হক আদায় করা একজন মুমিনের জান্নাত লাভের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে এ ব্যাপারটি অনুধাবন করা সকলের জন্য একান্ত জরুরি।
লেখক : অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

Thursday, February 23, 2017

আপনি কি পূর্ণ এক রাত্রি ইবাদত করার সওয়াব পেতে চান?


বর্তমানে অনেক ইসলামী আন্দোলনের কর্মী ফজরের নামাজে জামায়াতে হাজির হন না।   তাদের জন্য এই হাদিসটি প্রচার হওয়া জরুরী।  

Monday, January 30, 2017

অত্যন্ত কঠিন সতর্কবার্তার হাদিসগুলোর একটি - গোপন পাপ বিষয়ে

অত্যন্ত কঠিন  সতর্কবার্তার হাদিসগুলোর একটি নিচে দেয়া হলো।  মনোযোগ দিয়ে পড়ুন:

রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'আমার উম্মতের অনেকের কথা আমি জানি, যারা কিয়ামাতের দিন তিহামা অঞ্চলের সাদা পর্বতমালা পরিমাণ নেকি নিয়ে উপস্থিত হবে, কিন্তু আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেবেন।
এই কথা শুনে সাওবান (রা.) বললেন, "হে রাসূলাল্লাহ! তাদের পরিচয় দিন, আমরা যেন নিজেদের অজান্তে তাদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে যাই।"

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তারা তোমাদেরই ভাই, তোমাদের সাথেই থাকে। তোমরা যেমন রাত জেগে ইবাদাত করো, তারাও করে।
কিন্তু যখন একাকী হয় তখন আল্লাহর নিষিদ্ধকৃত হারামে লিপ্ত হয়।'
[ইবনে মাজাহ ৪২৪৫; হাদিসটি সহিহ]  

আমরা যারা সুযোগ পেলেই দৃষ্টির খেয়ানত করি, লজ্জাস্থানের খেয়ানত করি, মানুষের অধিকার নষ্ট করি ও নির্জনে বিভিন্ন হারামে লিপ্ত হই - এই হাদিস আমাদের জন্য মহাসতর্কবার্তা। হে আল্লাহ আমাদেরকে গোপন গুনাহ থেকে রক্ষা করুন। আমিন৷

ফেইসবুক পোস্ট থেকে: 

গোপন গুনাহ কতটা ভয়াবহ |  POWERFUL REMINDER:


Tuesday, January 10, 2017

জুমার দিনের মর্যাদা নিয়ে কিছু হাদীস


জুম’আর দিন প্রসঙ্গে আরো কিছু সহিহ হাদিস:

রাসুল (সাঃ) বলেনঃ জুম’আর দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, তা-ই তাকে দেওয়া হয়। আর এ সময়টি হল জুম’আর দিন আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত, একটি সময়। [বুখারীঃ ৯৩৫]
হযরত আবু হুরাইরা(রা) হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-” যে গোসল করে জুমু’আর উদ্দেশ্যে আসে এবং যে পরিমাণ নফল নামায পড়ার তাওফীক হয় তা পড়ে, এরপর ইমামের খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকে এবং ইমামের সঙ্গে নামায আদায় করে, আল্লাহ তা’আলা তার দশ দিনের (সগীরা) গুনাহ মাফ করে দেন।” [সহীহ মুসলিমঃ ১/২৮৩]
জুমুয়ার দিন মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত এর জন্য একটি মহান দিন। এ জুম’আর দিনটিকে সম্মান করার জন্য ইহুদী-নাসারাদের উপর ফরজ করা হয়েছিল; কিন্তু তারা মতবিরোধ করে এই দিনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। অতঃপর ইহুদীরা শনিবারকে আর খ্রিষ্টানরা রবিবারকে তাদের ইবাদতের দিন বানিয়েছিল। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতের জন্য শুক্রবারকে মহান দিবস ও ফযীলতের দিন হিসেবে দান করেছেন। আর উম্মতে মুহাম্মদী তা গ্রহন করে নিল। [বুখারী ৮৭৬; মুসলিমঃ ৮৫৫]
আবদুল্লাহ ইবনে আমর [রাযি] থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম প্রত্যেক জুমুআর দিনে নিজের গোঁফ ছোট করেতেন এবং আংগুলের নখ কাটতেন। [আখলাকুন নবী [সা], হাদিস নং-৭৭০]
আবু হুরায়রা [রাযি] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেন, জুমুআর দিন মসজিদের দরজায় ফিরিশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি মোটাতাজা উট কুরবানী করে। এরপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি গাভী কুরবানী করে। এরপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি দুম্বা কুরবানী করে তারপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগী দানকারীর ন্যায়। এরপর আগমনকারী ব্যক্তি ডিম দানকারীর ন্যায়। তারপর ইমাম যখন [খুৎবার প্রদানের জন্য] বের হন তখন ফিরিশিতা তাঁদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহকারে খুৎবা শুনতে থাকেন। [বুখারি শরীফ হাদিস নং-৮৮২]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন সূরা কাহ্ফ পড়বে তার জন্য এক জুম’আ থেকে আরেক জুম’আ পর্যন্ত আলো বিচ্ছুরিত হবে। [মুসতাদারেক হাকিমঃ২/৩৯৯, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯, ফয়জুল ক্বাদীরঃ৬/১৯৮]
হযরত ইবনে উমর(রা) থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি শুক্রবার দিন সূরা কাহফ পাঠ করবে তার পা থেকে আকাশের উচ্চতা পর্যন্ত নূর হয়ে যাবে, যা কেয়ামতের দিন আলো দিবে এবং বিগত জুমআ থেকে এ জুমআ পর্যন্ত তার সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। [আত তারগীব ওয়া তারহীবঃ ১/২৯৮]
আবু দারদা রাঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যেব্যক্তি সুরায়ে কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফেৎনা হতে রক্ষা পাবে। [সহিহ মুসলিম,হাদিসঃ ১৩৪২, মুসনাদু আহমদ,হাদিসঃ২০৭২০, আবু দাউদ,হাদিস- ৩৭৬৫]
হযরত ইয়াযীদ ইবনে আবি মারয়াম(র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন পায়ে হেঁটে জুম’আর জন্য যাচ্ছিলাম। এমন সময় আমার সাথে আবায়া ইবনে রিফায়া (র) এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর! তোমার এই পদচারণা আল্লাহর পথেই।আমি আবু আবস (রা) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তির পদদ্বয় আল্লাহর পথে ধূলিময় হলো, তার পদদ্বয় জাহান্নামের জন্য হারাম করা হলো। [জামে তিরমিযি,হাদিস নং-১৬৩৮, সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৯০৭]
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, জুম’আতে তিন ধরনের লোক আসে। (ক) যে ব্যক্তি অনর্থক আসে, সে তাই পায় (খ) যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনার জন্য আসে। আল্লাহ চাইলে তাকে দেন, অথবা না দেন (গ) যে ব্যক্তি নীরবে আসে এবং কারু ঘাড় মটকায় না ও কষ্ট দেয় না, তার জন্য এই জুম’আ তার পরবর্তী জুম’আ এমনকি তার পরের তিনদিনের (সগীরা) গোনাহ সমূহের কাফফারা হয়ে থাকে। এ কারণেই আল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি একটি নেকীর কাজ করে, তার জন্য দশগুণ প্রতিদান রয়েছে (আন’আম ৬/১৬০)। আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৩৯৬, অনুচ্ছেদ-৪৪।

Popular Posts