- শাহাদাতুর রহমান সোহেল
সুদানের এক দুঃসময়ে বিগ্রেডিয়ার ওমর হাসান আল বশীরের নেতৃত্বে সামরিক বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামী সরকার ক্ষমতা দখল করে। পূর্ববর্তী সাদেক আল মাহদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বজনপ্রীতি, দূর্নীতি ও অযোগ্যতার ফলে সুদান ক্রমশ: দারিদ্রপীড়িত পরনির্ভরশীল রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। দক্ষিনের খৃষ্টান বিদ্রোহের কারণে রাষ্ট্রের অখন্ডতার চরম হুমকির সম্মুখীন হয়। জর্জ গারাঙ এর নেতৃত্বে দক্ষিনের খৃষ্টান বিদ্রোহ খৃষ্টীয় বিশ্বের সার্বিক সহায়তায় সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। এ অবস্থায় ১৯৮৯ সালের ৩০শে জুন বিগ্রেডিয়ার ওমর হাসান আল বশীর এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। তিনি ইখওয়ানুল মুসলেমীনের চিন্তাধারার অনুসারী ছিলেন। কাজেই ওমর হাসান আল বশীর সহযোগিতা চাইলে ইখওয়ান নেতা ড: হাসান তুরাবীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ইসলামিক ফ্রন্ট সহযোগিতা দানের সিদ্ধান্ত নেয় এবং বিপ্লবী সরকারের অংশগ্রহণ করে।
সুদানের এক দুঃসময়ে বিগ্রেডিয়ার ওমর হাসান আল বশীরের নেতৃত্বে সামরিক বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামী সরকার ক্ষমতা দখল করে। পূর্ববর্তী সাদেক আল মাহদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বজনপ্রীতি, দূর্নীতি ও অযোগ্যতার ফলে সুদান ক্রমশ: দারিদ্রপীড়িত পরনির্ভরশীল রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। দক্ষিনের খৃষ্টান বিদ্রোহের কারণে রাষ্ট্রের অখন্ডতার চরম হুমকির সম্মুখীন হয়। জর্জ গারাঙ এর নেতৃত্বে দক্ষিনের খৃষ্টান বিদ্রোহ খৃষ্টীয় বিশ্বের সার্বিক সহায়তায় সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। এ অবস্থায় ১৯৮৯ সালের ৩০শে জুন বিগ্রেডিয়ার ওমর হাসান আল বশীর এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। তিনি ইখওয়ানুল মুসলেমীনের চিন্তাধারার অনুসারী ছিলেন। কাজেই ওমর হাসান আল বশীর সহযোগিতা চাইলে ইখওয়ান নেতা ড: হাসান তুরাবীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ইসলামিক ফ্রন্ট সহযোগিতা দানের সিদ্ধান্ত নেয় এবং বিপ্লবী সরকারের অংশগ্রহণ করে।
এ সরকারের মাধ্যমে প্রথমেই রাষ্ট্রীয় অখন্ডতার সমস্যার সমাধান করা হয়। গঠন করা হয় ইসলামী জিহাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ সুদানী জনগণের বাহিনী "পিপলস ডিফেন্স"। তারা সুদানী সেনাবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে। তাদের সাথে যোগ দেয় আফগান মুজাহিদরা। ফলে দক্ষিনের খৃষ্টান বিদ্রোহ পরাজয় বরণ করে এবং জেনারেল জর্জ গরাঙ সাঙ্গ পাঙ্গ সহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রে পলায়ন করে। রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা সমস্যা সমাধানের পর সুদান সরকার খাদ্যসমস্যা ও অর্থনৈতিক সমস্যার ও অসাধারণ সমাধান করে। ১৯৫৬ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সুদান ৮০ ভাগ খাদ্য (গম, ঘি ও চিনি) আমেরিকা থেকে লাভ করত। সুদানের বিরট উর্বর ভূমি থাকলেও যুগ যুগ ধরে অনাবাদী পড়ে ছিল। সেখানে জরুরী ভিত্তিতে ব্যাপক কৃষি কার্যক্রম গ্রহন করে মরুভূমির বুকে নীল নদের উভয় তীরে সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামলা নতুন শষ্য ভান্ডার গড়ে তোলা হয়। খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনের পর বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন এত বৃদ্ধি পায় যে, সুদান খাদ্যদ্রব্য রফতানী করতে শুরু করে। এছাড়া বস্ত্রসহ নিত্য প্রয়োজনীয় বহু সামগ্রীও রফতানী করতে শুরু করে। ইসলামী ব্যাংক সমূহের মাধ্যমে পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যবস্থা করে বেকারত্ব সমস্যার সামাধান করে। শিক্ষা সমস্যার সামাধেনও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তিনকোটি জনবসতির সুদানের নয়টি প্রদেশে তেইশটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয় এবং দেশজুড়ে শিক্ষার জাল বিস্তার করা হয়। সার্বিকভাবে ইসলামায়নের ক্ষেত্র ও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে সুদানের বিপ্লবী ইসলামী সরকার।
সুদানের ইসলামী সরকারের ব্যাপক সাফল্যে পাশ্চাত্য শক্তি ভীত হয়ে পড়ে। সুদানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আখ্যা দিয়ে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্র সুদানের উপর ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালায়। পাশ্চাত্যের সেবাদাস মিশর সহ অন্য রাষ্ট্রগুলো দিয়ে আগ্রাসনের হুমকি সৃষ্টি করে। সুদানের ইসলামী সরকারের অভ্যন্তরে বিভেদ সৃষ্টির সর্বাত্মক ষড়যন্ত্রে নিয়োজিত হয়।
ডঃ হাসান তুরাবীর নেতৃত্বাধীন ইখওয়ানুল মুসলেমীন নিয়ন্ত্রিত সুদানের সফল ইসলামী সরকারের সাথে জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় রুকন সম্মেলনে ইখওয়ানুল মুসলেমীনের একজন শীর্ষনেতা এবং সুদান সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি হাসান উসমান এমপি উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি ড: হাসান তুরাবীর বাণী নিয়ে এসেছিলেন।
সুদানের ইসলামী সরকারের সাফল্য সারাবিশ্বের ইসলামী আন্দোলনকে যখন আশান্বিত করছে তখন ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে খবর আসে যে, প্রেসিডেন্ট ওমর হাসান আল বশির ড: হাসান তুরাবীর সাথে বিরোধের প্রেক্ষিতে পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়েছেন এবং ড: হাসান তুরাবীকে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল কংগ্রেসের সেক্রেটারী জেনারেল পদ থেকেও অপসারণ করা হয়েছে। বাইরে থেকে কিছু করতে ব্যর্থ হয়ে ভিতর থেকে বিরোধ ভাঙ্গন সৃষ্টি করে সাফল্য অর্জন করা পাশ্চাত্য শক্তির ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্রের একটি পলিসি। আভ্যন্তরীন কিছু দূর্বলতার কারনেও বিরোধী পক্ষ সুযোগ গ্রহণ করে থাকে। তবে নানা উত্থান পতনের ভিতর দিয়ে শিক্ষা লাভ করে ইসলামী আন্দোলন এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ইউরোপের উত্থানকালে ত্রিশ বছরব্যাপী, শত বছরব্যাপী ইত্যাদি যুদ্ধ-বিপর্যয় ইউরোপে হয়েছে। এরপর ও তারা বিশ্বব্যাপী বিপুল প্রাধান্য বিস্তার করেছে। কাজেই আশা করা যায় যে, সকল বিপর্যয় ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে ইসলামী শক্তি আগামী দিনে সারাবিশ্বে প্রধান্য বিস্তার করবে। বর্তমানে ইসলামী শক্তিসমূহকেও ঐক্যগঠন, ঐক্যকে জোরদারকরণ এবং অনৈক্য সৃষ্টির ব্যাহ্যিক আভ্যন্তরীন যে কোন প্রয়াসকে নস্যাৎ করার বিষয়ে সর্বদা সজাগ সচেষ্ট থাকতে হবে।
No comments:
Post a Comment