Showing posts with label আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জামায়াত. Show all posts
Showing posts with label আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জামায়াত. Show all posts

Thursday, June 21, 2018

তুরস্কে ইসলামী শক্তির বিজয়, ড: নাজমুদ্দীন আরবাকান এবং জামায়াত ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

তুরস্কের ইসলামী সংগঠ ড: নাজমুদ্দীন আরবাকান পরিচালিত ইসলামিক ওয়েলফেয়ার পার্টি নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় অদিষ্ঠিত হয়েছিল গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে। পরে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সেনাবাহিনীর দ্বারা অন্যায়ভাবে ক্ষমতাচ্যুত হন। এই ইসলামিক ওয়েলফেয়ার পার্টির ক্ষমতায় থাকাকালে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ড: নাজমুদ্দীন আরবাকান ১৯৯৬ সালের আগষ্ট মাসে পাকিস্তান সফরে এসে পাকিস্তানের দুজন নেতার সাথে বিশেষভাবে সাক্ষাৎ করেন। একজন হলেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভূট্রো এবং অপরজন জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের আমীর কাজী হোসাইন আহমদ। এই সংবাদ পরিবেশন করে তখন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম থেকে জামায়াতে ইসলামীর সাথে ইসলামিক ওয়েলফেয়ার পার্টির ঐতিহ্যবাহী সম্পর্কের কথা প্রচার করা হয়। উক্ত পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে তুরস্কের একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম বিশেষ অতিথি হিসাবে যোগদান করেছিলেন। সে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন ড: নাজমুদ্দীন আরবাকান। 
যে স্মৃতি প্রেরণা যোগায়ঃ তুরষ্কের ইসলামী আন্দোলনের অগ্রদূত নাজিমুদ্দিন এরবাকানের সাথে জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম স্যারের একটি ছবি। আল্লাহ তাঁদের উভয়কে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুক।


নাজমুদ্দিন আরবাকান ও শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (রঃ)
ঐতিহাসিক একটি ছবি...ছবিটি দেখলেই প্রশান্তিতে মন ভরে যায়। বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী উস্তাদ প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন আরবাকানের সাথে শহীদ আলী আহসান মো: মুজাহিদ। ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে আয়োজিত ESAM সম্মেলনে এই দুই নেতার দেখা হয়। ড. আরবাকানের আমন্ত্রনেই শহীদ আলী আহসান মো: মুজাহিদ এই সম্মেলনে যোগ দান করেন। উস্তাদ আরবাকান এই সময় শহীদ মুজাহিদের হাতে সম্মেলনের ক্রেস্টও তুলে দেন। আল্লাহ তাঁর এই দুই প্রিয় বান্দাকে কবুল করে নিন। আমিন।

২৭শে ফেব্রুয়ারী ২০১১-এ নাজমুদ্দীন আরবাকান এন্তেকাল করেন। এই মহান নেতাকে আল্লাহ জান্নাতুল ফিরেদৌসের উচ্চ মাকাম দান করুন, আমীন 
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান নামাজে জানাজায় নাজমুদ্দীন আরবাকানের কফিনটি বহন করছেন


ড: নাজমুদ্দীন আরবাকান  সম্পর্কে জানার জন্য এই লিংকটি ব্রাউজ করুন প্লীজ: নাজমুদ্দিন এরবাকান | এক ঘুমভাঙ্গা সিংহের উপাখ্যান


তুরস্ক সম্পর্কিত এই ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোষ্টগুলো দেখুন: 1) তুরস্কে মাওলানা মওদুদী ও তাফহীমুল কুরআনের প্রভাব 2) জানেন - ফাঁসিরকাষ্ঠে ঝুলন্ত কে এই মহানব্যক্তি ? তিনি হচ্ছেন আদনান মেন্ডারিস, তুরস্ক

একে পার্টির হেড কোযার্টারে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সাথে শিবির নেতা হাফিজুর রহমান

তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ানের সাথে শহীদ আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ।
সময়কাল :২০০৩ সাল।


Tuesday, June 12, 2018

ইরানে ইসলামী বিপ্লব ও জামায়াতে ইসলামীর অবদান



- শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

            ১৯৭৯ সালে সংঘটিত ইরানের ইসলামী বিপ্লব সম্পর্কে সবাই অবগত। এই ইরানের ইসলামী বিপ্লবের অন্যতম প্রধান আদর্শিক প্রেরণা ছিল জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক প্রচারিত বিপ্লবী ইসলামী সাহিত্য। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সময় সখানকার মানুষের হাতে হাতে ছিল সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী, সাইয়েদ কুতুব শহীদ ও আল্লামা  ইকবালের বই। এর মধ্যে আল্লামা মওদূদী রহ: এর বই ই ছিল সবচেয়ে বেশী। তাইতো ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতৃবৃ্ন্দ স্বীকার করেছেন যে, ইরানের ইসলামী বিপ্লবের জন্য শহীদ হাসানুল  বান্না, শহীদ কুতুব, ইকবালের কাছে যেমন তারা ঋণী, মাওলানা মওদূদী রহ এর কাছেও তারা ঋণী। কারণ তার সাহিত্য তাদেরকে ইসলামী বিপ্লব সাধনে প্রেরণা যুগিয়েছে" ( ইসলামী পূণর্জাগরণ ও মাওলানা আবুল আলা মওদূদী, অধ্যাপক মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা, ৫০ বছর পূর্তি সংখ্যা ১৯৯১ ইং) ইতিহাসবেত্তা ফিলিপ জেনকিন্স বলেন, Mawdudi even had a major impact on Shia Iran, where Ayatollah Ruhollah Khomeini is reputed to have met Mawdudi as early as 1963 and later translated his works into Farsi. “To the present day, Iran’s revolutionary rhetoric of ten draws on his themes. (tnr. com The New Republic “The Roots of Jihad in India” by Philip JENKINS, December 24, 2008) অর্থাৎ ‍‌‌‌‌‌‌''এমনকি শিয়া অধ্যুষিত ইরানেও মওদুদীর বড় ধরণের প্রভাব আছে।  ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনী ১৯৬৩ সালে মাওলানা মওদুদীর সাথে সাক্ষাত করেন, পরবর্তীতে ইমাম খোমেনী মওদুদীর বইগুলো ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেন।  এখনো পর্যন্ত প্রায়শঃই ইরানের ইসলামী সরকার মাওলানা মওদুদীর কর্মপন্থা অনুসরন করে থাকে।'' উস্তাজ সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহ.)-এর ছেলে ড. আহমাদ ফারুক মওদূদীর একটি উক্তি এখানে উল্লেখ করা হলো: ১৯৭৯ সালে পাকিস্তানের লাহোর থেকে প্রকাশিত Roz Naame নামক একটি পত্রিকায় ড. আহমাদ ফারুক মওদূদীর লেখা 'Two brothers- Maududi and Khomeini' বইয়ের ১২৯ পৃষ্ঠার কিয়দংশ প্রকাশিত হয়। সেখানে ড. আহমাদ লিখেছিলেন- Allama Khomeini had a very old and close relationship with Abba Jaan (father). Aayaatullah Khomeini translated his (fathers) books in Farsi and included it as a subject in Qum. অর্থাৎ ‍‌‌‌‌‌‌“আব্বাজানের সঙ্গে আল্লামা খোমেনীর খুবই অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। জনাব খোমেনী আব্বার বইপত্র ফার্সিতে অনুবাদ করেছিলেন এবং কোম (Qom)-এ সেগুলো পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন”। এখানে উল্লেখ্য যে, মাওলানা মওদূদী ও সাইয়েদ কুতুবের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ রচনাবলির ফার্সি অনুবাদক হাদী খোরাসানীর সঙ্গে ১৯৬৮ সালে হজ্বব্রত পালনকালে পাকিস্তান জামায়াতের নায়েবে আমির মৌলানা খলিল আহমাদ হামিদী সাক্ষাত করেছিলেন। “মাওলানা মওদূদী রহঃ ও তাত্ত্বিক আলোচনা” নামের ফেইসবুক গ্রুপে নূরুল হুদা হাবীব “ইরানের ইসলামী বিপ্লব, মাওলানা মওদূদী ও তৎকালীন পাকিস্তান জামায়াত” শীর্ষক এক নিবন্ধে লিখেন: “১৯৭৯ সালের মধ্য জানুয়ারিতে বিপ্লব সংঘটিত হলে ২২ শে ফেব্রুয়ারি মাওলানা মওদূদীর বিশেষ বার্তা সহ দলীয় আরেক শীর্ষ নেতা মিয়া তুফাইল মুহাম্মদ পাকিস্তান থেকে তেহরানের উদ্দেশ্যে উড়াল দেন। জামায়াত সহ মুসলিম বিশ্বের সমমনা সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দের এক মিলনমেলায় পরিণত হয় তেহরান। বলার অপেক্ষা রাখেনা, মুসলিম ব্রাদারহুড এ মিলনমেলার আয়োজনে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। ইরানের তৎকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইবরাহীম ইয়াজদি (মৃ. ২০১৭) ব্যক্তিগতভাবে তার নিজ বাসায় মিয়া তুফাইলের মেহমানদারী করেছিলেন। গভীর রাত পর্যন্ত তারা সদ্যঘটিত বিপ্লব এবং বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলন প্রসঙ্গে আলাপ করেন৷ সে রাতের আলাপচারিতার ব্যাপারে পরবর্তীতে জনাব তুফাইল মন্তব্য করেছিলেন- "Conversation not of tougues, but of hearts" ............. পাকিস্তান জামায়াতের অন্যতম বর্ষীয়ান নেতা জনাব লিয়াকত বেলুচ বিপ্লবের আগে-পরে খোমেনীর সঙ্গে তিন তিনবার সাক্ষাত করেছিলেন। ২০১৯ সালে লাহোরে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ৪০ তম বার্ষিকী উদযাপনের এক আলোচনা সভায় তিনি এ বিপ্লবের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। পাশ্চাত্যের অনুকরণের বাইরে গিয়ে ইরান ভিন্নধর্মী একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন।” বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলনের কর্ণধার আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদুদী ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইন্তেকালের পর তাঁর নামাজে জানাযায় আয়াতুল্লাহ খোমেনীর বিশেষ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া এখানে উল্লেখ্য যে, আল্লামা সাঈদী ইরানে ইসলামী বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকীর আমন্ত্রিত মেহমান ছিলেন।  ১৯৮৩ সালে আয়াতুল্লাহ খোমিনীর আমন্ত্রনে ইরানের বিভিন্ন এলাকা সফর করে তিনি বিভিন্ন মাহফিলে কোরআনের তাফসীর পেশ করেন এবং বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে প্রধান অতিথি হিসাবে অংশগ্রহণ করেন।

            আধুনিক যুগে ইরানের ইসলামী বিপ্লব এক অনন্য ঘটনা। ইসলামী বিপ্লবের উষালগ্নে পরিকল্পিত বোমা বিস্ফারনের মাধ্যমে ৭২ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে হত্যা, ইরাক কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অবরোধ ইত্যাদিকে স্বার্থকভাবে মোকাবেলা করে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের টিকে থাকা এর শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন। সারা পৃথিবীর কোন দেশে যখন ইসলামী সরকার ছিল না তখন ইরানের এই ইসলামী বিপ্লবের সফলতা সারা বিশ্বের ইসলামী আন্দোলনকে বিপুল প্রেরণা দান করেছে। ইরানের ইসলামী শক্তি শুধু নিজ দেশে ইসলামী বিপ্লব সাধন করেই ক্ষান্ত হয়নি । দেশে দেশে চলমান ইসলামী আন্দোলন গুলোকেও ইরান দৃঢ় সমর্থন, শক্তি এবং অর্থ যোগানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্থিনের ইন্তিফাদা, আলজেরিয়ার ইসলামী পূণর্জাগরণ, তিউনিশিয়া, মিশর এবং জর্দানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অধিকংশ দেশে ইসলামী আন্দোলনের প্রতি ইরান সমর্থন ও শক্তি যুগিয়ে চলেছে। যেমন- আলজেরিয়ার জনসমর্থনপুষ্ট ইসলামী আন্দোলনের প্রতি ইরান দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করে এবং এর উপর আলজেরিয়ার স্বৈরাচারী সরকারের জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদ জানায়। ইরানপন্থী লেবানানী হিজবুল্লাহদের সাফল্যও এখানে উল্লেখ্য । হিজবুল্লাহদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ইসরাইলী বাহিনী দক্ষিণ লেবানান থেকে বিতাড়িত হয়। ইসরাইল ১৯৭৮ সালে দক্ষিন লেবানানে প্রবেশ করে এবং ইসরাইলের উত্তর সীমান্তকে সুরক্ষিত রাখার জন্য দক্ষিন লেবানানে স্থানীয় এক মিলিশিয়া বাহিনী গড়ে তোলে। জাতি সংঘ নিরাপত্তা পরিষদ দক্ষিন লেবানন থেকে সকল ইসরাইলী সৈন্য প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে ৪২৫ নম্বর প্রস্তাব অনুমোদন করে। তবে ইসরাইল একে তোয়াক্কা করেনি। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে ইসরাইলী বাহিনী লেবানানে নৃশংস আগ্রাসন চালায় এবং তারা তিনমাস ধরে রাজধানী বৈরুতে অবরোধ করে রাখে। ইসরাইলী বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের লক্ষ্যে ইলামপন্থীরা গড়ে তোলে সুদক্ষ যোদ্ধাদল হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহদের সাথে ইসরাইলী বাহিনীর অগণিত লড়াই সংঘটিত হয়েছে। প্রাণহানী ঘটেছে উভয় পক্ষে ব্যাপক ভাবে। হিজবুল্লাহর অনমনীয় মনোভাব লেবানানের মুসলমানদের মধ্যে আশার সঞ্চার করে। দখলদারীর প্রথম কয়েক বছরেই ইসরাইল দক্ষিণ লেবানান থেকে ফিলিস্তিনী যোদ্ধাদের হটিয়ে দিতে সমর্থ হয়। এরপর পরই হিজবুল্লাহর অভ্যুদয় ইসলাইলীদের হিসাব গরমিল করে দেয়। হিজবুল্লাহদের সশস্ত্র জিহাদের এক পর্যায়ে ইসরাইলের নিজের এলাকাতেই হিজবুল্লাহদের হাতে তিনশত নৌসেনা ও ফরাসী সৈন্য নিহত হয়। এরপর পরই আমেরিকানরা তাদের বাহিনী পূণরায় নিযোগ করে। মার্কিন ডেষ্ট্রয়ার থেকে লেবানানের গ্রাম ও হিজবুল্লাহ অবস্থানের উপর ব্যাপক বোমা বর্ষণ করা হয়। তবে এতেও মার্কিনীরা হিজবুল্লাহকে দমাতে পারেনি। ১৯৮৫ সালের ইসরাইল নিতানী নদীর উত্তর দিক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এ সফলতার পর ১৫ বছর ধরে হিজবুল্লাহ ইসরাইলী বাহিনীর উপর তাদের আক্রমন অব্যাহত রাখে। দক্ষিণ লেবানানে দখলদার বাহিনীর সাথে তাদের প্রতিরোধ সংগ্রাম চলে প্রতিদিনই। হিজবুল্লাহ বাহিনীকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য ইসরাইল সব ধরণের কৌশলই অবলম্বন করে। তাদের সব অপকৌশল ব্যর্থ হয়েছে। এ অবস্থায় মে ২০০০ ইং তারিখে ইসরাইল দক্ষিণ লেবানান থেকে তার সম্পূর্ণ বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আরব রাষ্ট্র গুলোর সাথে সকল যুদ্ধে ইসরাইলী বিজয় অর্জন করে এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর ভূখন্ড একের পর এক দখল করে। এবারই প্রথম হিজবুল্লাহ বাহিনীর সাথে সশস্ত্র যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ইসরাইল কোন আরব ভূখন্ড থেকে বিতাড়িত হয়। এরপর ২০০৬ সালে ইসরাইলের ২য় লেবানান যুদ্ধে ইসরাইল হিজবুল্লাহর কাছে ২য়বার পরাজয় বরণ করে। ইরানের ইসলামী বিপ্লাব সম্পর্কে আলোচনা প্রসংগে কিছুটা দীর্ঘ হলেও হিজবুল্লাহদের সাফল্য সম্পর্কে আলোচিত হল। এ হিজবুল্লাহদের এ সাফল্যের পিছনে আদর্শিক প্রেরণা, সমর্থন এবং শক্তির প্রধান উৎস ছিল ইরানের ইসলামী সরকারে। আফগানিস্তান জিহাদেও ইরানের ইসলামী সরকারের অবদান রয়েছে। আফগানিস্তান জিহাদ চলাকালে প্রায় ১৫ লক্ষ আফগান উদ্বাস্তুকে ইরান আশ্রয় দিয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদে বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। এভাবে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী সরকার বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিরাট শক্তি সৃষ্টি করে চলেছে। 

শিয়া হিসাবে তাদের কিছু ত্রুটি আছে, কিন্তু তারা ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষে যে বিরাট অবদান রাখছে তার স্বীকৃতিও দেওয়া উচিত।

আল-কোরআন ও হাদীসে পারস্য তথা ইরান সম্পর্কে গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সুরা জুমায় বলা হয়েছে:   

هُوَ الَّذِیۡ بَعَثَ فِی الۡاُمِّیّٖنَ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ ٭ وَ اِنۡ کَانُوۡا مِنۡ قَبۡلُ لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ ۙ(۲) وَّ اٰخَرِیۡنَ مِنۡهُمۡ لَمَّا یَلۡحَقُوۡا بِهِمۡ ؕ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ(۳)

অর্থাৎ ‍‌‌‌‌‌‌তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যিনি তাদের কাছে তেলাওয়াত করেন তার আয়াতসমূহঃ তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত; যদিও ইতোপূর্বে তারা ছিল ঘোর বিভ্ৰান্তিতে; এবং তাদের মধ্য হতে অন্যান্যদের জন্যও যারা এখনো তাদের সাথে  মিলিত হয়নি। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় (সুরা জুমা: ২ ও ৩ আয়াত)।

“অন্যান্যদের জন্যও যারা এখনো তাদের সাথে  মিলিত হয়নি” - এই আয়াতের উদ্দীষ্ট হলো নিঃসন্দেহে কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী বিভিন্ন দেশের মুসলিম। ইকরিমা ও মুজাহিদ থেকে অনুরূপ বৰ্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে পারস্যবাসীরা অর্থাৎ ইরানীরা । সহীহ হাদীস থেকে তা জানা যায়: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৰ্ণনা করেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলাম, এমতাবস্থায় সূরা জুমুআ অবতীর্ণ হয়। তিনি আমাদেরকে তা পাঠ করে শুনান। তিনি (وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ) পাঠ করলে আমরা আরয করলামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ, এরা কারা? তিনি নিরুত্তর রইলেন। দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার প্রশ্ন করার পর তিনি পার্শ্বে উপবিষ্ট সালমান ফারেসী (রা)-এর গায়ে হাত রাখলেন এবং বললেনঃ যদি ঈমান সুরাইয়া নক্ষত্রের সমান উচ্চতায়ও থাকে, তবে তার সম্প্রদায়ের কিছুলোক সেখান থেকেও ঈমানকে নিয়ে আসবে [বুখারী: ৪৮৯৭, ৪৮৯৮, মুসলিম: ২৫৪৬, তিরমিযী: ৩৩১০] অন্য হাদীস নীচে দেয়া হলো:

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত: রাছুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:“দ্বীন যদি সুরাইরা নক্ষত্রের নিকটেও থাকে তাহলেও পারসিয়ানদের কোন একজন অথবা তাদের কোন এক সন্তান তা হাসিল করবে” (মুসলিম হাদীস নং ৪৬১৮, তিরমিযী হাদীস নং ৩১৮৪, ৩২৩২, ৩৮৬৮, মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ৭৭৩৫) অনেকে মনে করেন এই হাদীসসমূহ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) সম্পর্কে বলা হয়েছে। তবে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) তাবেয়ী ছিলেন । কাজেই তখনো দ্বীন সুরাইরা নক্ষত্রের নিকটে যাওয়ার অর্থাৎ দ্বীন পৃথিবী থেকে দূরে যাওয়ার পরিস্থিতি হয় নি । কাজেই এসব হাদীস আধুনিক যুগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মনে হয়। আল্লাহ ভালো জানেন। 


See these video:


Thursday, May 24, 2018

জানেন - ফাঁসিরকাষ্ঠে ঝুলন্ত কে এই মহানব্যক্তি ? তিনি হচ্ছেন আদনান মেন্ডারিস, তুরস্ক

(একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন):+

See this photo:
জানেন - ফাঁসিরকাষ্ঠে ঝুলন্ত কে এই মহানব্যক্তি ?
তিনি হচ্ছেন আদনান মেন্ডারিস, তুরস্কের লাগাতার তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ... ১৯৫০—১৯৬০ সাল পর্যন্ত তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বলতে পারবেন , কোন অপরাধে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল ? তার অপরাধ (?) তিনি তুরস্কে আরবিতে আযান দেওয়া বৈধ বলে ডিক্রি জারি করেছিলেন যা কুলাঙ্গার কামাল আতাতুর্ক কর্তৃক সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ছিল ... এতেই সেদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সেনাবাহিনী সংবিধান লঙ্ঘনের দোহাই দিয়ে এই মহান ব্যক্তিকে এভাবেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ছিল ... তাই বলে কি তুরস্কে ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে গেছে ? দেখেন না , আজ এই তুরস্কই মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিমরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করছে !

এ থেকে আমাদের দেশে ধর্মনিরপেক্ষের ধ্বজাধারীরা যেনো কিছুটা হলেও শিক্ষা নেন ...।


Wednesday, April 25, 2018

তুরস্কে মাওলানা মওদুদী ও তাফহীমুল কুরআনের প্রভাব



লিখেছেনঃ এরবাকান



সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ )বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ যার ক্ষুর ধার লেখনী ও বিশাল সাহিত্য ভাণ্ডার তাঁকে আজও আমাদের মাঝে জীবন্ত রেখছে। তুরস্ক আজ যে ইসলাম পন্থী একটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে এটা তৈরিতে মাওলানার সাহিত্যের ভূমিকা অপরিসীম।


ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকনের উপর মাওলানা মওদুদীর প্রভাব-
ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান হলেন তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের মহান সিপাহ সালার। তিনি তার বক্তব্যে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ভরে মাওলানা মওদূদীর (রহঃ)নাম নিতেন। তিনি মাওলানাকে ইমাম বলে অবহিত করতেন এবং তার সাহিত্য পড়ার জন্য তার জনশক্তিকে উৎসাহ যোগাতেন। তার মৃত্যুর আগে এরজুরুম শহরের একটি সমাবেশে বলেছিলেন আমি দেখতে পাচ্ছি নিকট ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে জিহাদ নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি তৈরি হবে তাই আপনারা মাওলানা মওদূদীর (রহঃ) 'আল জিহাদু ফিল ইসলাম' বইটি পড়ে নিবেন। তিনি হয়তবা আজকের আইএস এর কথাই বলেছিলেন।
তার প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলন 'মিল্লি গুরুশে' এর সিলেবাসে মাওলানা মউদূদীর (রহঃ) অনেক বই রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হল-

১।তাফহীমূল কোরআন

২। ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী

৩।ইসলামি রেনেসাঁ আন্দোলন

৪।কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা

৫। আ্ল কুরআনের মর্ম কথা।

৬। সমস্যা ও সমধান

৭।আসুন মুসলিম হই।

৮। আসুন দুনিয়াকে পরিবর্তন করি।

৯। খিলাফাত ও রাজতন্ত্র

১০। ইসলাম পরিচিতি।

তুরস্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের উদ্যোগে নিয়মিত তাফহীম পাঠ করা হয়ে থাকে। কিছু কিছু রয়েছে যারা এক যুগের ও বেশী সময় ধরে নিয়মিত ভাবে তাফহীম পাঠ করে আসছেন। প্রতি বছর বিভিন্ন সংগঠের উদ্যোগে তাফহীমুল কোরআন পাঠ প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে।

তুরস্কে ২ টি প্রকাশনা থেকে তাফহীম প্রকাশিত হয়ে থাকে। একটি ৭০ এর দশকে প্রকাশিত হয়েছে অপরটি হয়েছে ২০০০ সালের পর। বর্তমান সময়ে চিন্তার দ্বন্দে মাওলানা মওদূদীর (রহঃ) সাহিত্যের যেন কোন জুড়ি নেই। যিনি শত বছরের সকল জঞ্জাল কে মুছে ফেলে আমাদের সামনে এক নিরেট ইসলাম পেশ করার লক্ষে আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন। বাংলাদেশ জামায়াতেে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের শাহাদাত এবং এই দলটিকে ঘিরে ইয়াহুদি ও সাম্রাজ্য বাদীদের মাথা বাথা যেন তুরস্কে মাওলানা মউদূদীর (রহঃ) সাহিত্যের প্রভাবে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে

Source: Facebook page

তুরস্কের শীর্ষ আলেম , তুরস্ক সরকারের ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং তুরস্কের গ্র্যান্ড মুফতি শায়েখ ড. আলি আরবাশ হাফিঃ বলেন -
" তাফহিমুল কোরআন হলো তুরস্কের যুবকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী গ্রহণযোগ্য তাফসীর। আমরা তুরস্কের যুবকদেরকে এই তাফসীর পড়তে উৎসাহিত করি "।

Tuesday, April 10, 2018

আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাশিয়া বিরোধী জিহাদ, তা*লে*বান এবং জামায়াতে ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল


আমরা জানি আফগান মুজাহিদ সংগঠনগুলো বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী দীর্ঘ জিহাদের মাধ্যমে সোভিয়েত রাশিয়া পরাশক্তিকে আফগানিস্তানের মাটিতে পরাজিত করেছে। এই পরাজয়ই সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাংগনকে তরান্বিত করেছে। যার ফলে শধ্য এশিয়া ছয়টি মুসলিম রাষ্ট্রের স্বাধীন অভ্যুদয় সম্ভব হয়েছে। আফগানিস্তানের মুজাহিদ সংগঠনগুলোর  মধ্যে সবচেয়ে বড় দু'টি সংগঠন ছিল - (ক) হেজবে ইসলামী এবং (খ) জমিয়তে ইসলামী। এর মধ্যে জমিয়তে ইসলামী গড়ে তুলেছেন প্রফেসর বোরহানুদ্দীন রাব্বানী। তিনি এই সংগঠন গেড় তুলেছেন জামায়াতে ইসলামী রচিত বিপ্লবী ইসলামী সাহিত্য দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে। আর সবচেয়ে বড় মুজাহিদ সংগঠন, আফগান জিহাদের সর্বাধিক ভূমিকা পালনকারী, পশতুনদের সংগঠন এবং গুলবুদ্দীন হেকমতিয়ারের নেতৃত্বাধীন হেজবে ইসলামী জামায়াতে ইসলামীরই তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মুজাহিদ সংগঠন ছিল। পরবর্তীকালে তাদের কোন ভুলত্রুটি থাকলে ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের জিহাদের গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকা অনস্বীকার্য ঐতিহাসিক সত্য। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগান জিহাদে বিজয়ে ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর অবদানই অবশ্যই অগ্রগামী। এখানে সাইয়েদ মুজতাবা হুসাইনের একটি উক্তি উল্লেখ্য: ‍‘‘বর্তমানে আফগানিস্তানে ইসলামী বিপ্লবের জন্য রুশের ন্যায় শক্তির বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম চলছে তা মওলানা মওদূদী রহ: ইসলামী তাবলীগের ফলশ্রুতি” (দৈনিক জাসারাত, সেপ্টেম্বর, ১৯৭৯, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দৃষ্টিতে জামায়াতে ইসলামী ও মাওলানা মওদূদী, সংগ্রহে: সাইয়েদ রাফে সামনান)

               রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগান জিহাদের পরবর্তীকালে উক্ত জিহাদকারী মুজাহিদ সংগঠনগুলোর ব্যর্থতার পটভূমিতে গড়ে উঠা তালেবান আন্দোলনে সাবেক হেজবে ইসলামীর বেশীর ভাগ মুজাহিদ কমান্ডার ও মুজাহিদ সৈনিকরা রয়েছেন। তারা জামায়াতে ইসলামীর তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছেন। তালেবান হচ্ছে পাকিস্তানের জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের দ্বারা প্রভাবিত সংগঠন। এই জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম দীর্ঘ বহু বৎসর যাবৎ জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের সাথে জোটভুক্ত আছে। অনলাইন মুক্ত বিশ্বকোষ wikipedia.org-তে বলা হয়েছে:  আদর্শিক প্রভাবক: তালেবানের ধর্মীয়/রাজনৈতিক দর্শন, বিশেষ করে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তার প্রথম শাসনামলে, প্রধান মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানভি এবং তার কাজ দ্বারা ব্যাপকভাবে উপদেশ ও প্রভাবিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনের পরিচালিত রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নীতিগুলি অবশ্য আবুল আ'লা মওদুদী ও জামায়াত-ই-ইসলামী আন্দোলনের অনুকরণে তৈরি করা হয়েছিল

                তালেবান নেতা আব্দুল হাকিম মুজাহিদ ১৯৯৮ সালে আগষ্ট নয়াদিল্লীর দাওয়াত পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়। ‘‘কিন্তু হেকমাতিয়ারের বিরুদ্ধে জিহাদী পদক্ষেপের দরুন আপনাদের অন্তরে কি কেবল কোমল অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে না? এ প্রশ্নের জবাবে উক্ত তালেবানের নেতা বলেন: ওদের সংগে আমাদের কিসের বিবাদ?........আমরা আফগানিস্তানে শরীয়ত চালু করেছি। রাব্বানী-হেমতিয়ার-মাসুদ আমাদের সহযোগিতা করুন, আমরা ওদেরকে বুকে তুলে নেবো” ( দৈনিক সংগ্রাম, ৩০শে অক্টোবর ১৯৯৮ইং)।

                আফগানিস্তানের তালেবানদের বিরুদ্ধে ইহুদীবাদী আন্তর্জাতিক সংবাদে মাধ্যমগুলো জোরালো অপপ্রচার রয়েছে। এ প্রসঙ্গে কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক হলেও সামগ্রিক প্রয়োজনে উক্ত তালেবান নেতার নারী শিক্ষার বিষয়ে একটি বক্তব্য উল্লেখ্য: ‘‘আমরা নবী করিম সা: এর এই বাণীকে উপেক্ষা  করতে পারি করে যাতে বলা হয়েছে শিক্ষা অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরজ বা আবশ্যক। আমি তো আগোই বলেছি, আফগানিস্তানে এখন মেয়েদের শিক্ষা অর্জন ও চাকরী গ্রহণের অধিকার রয়েছে কিন্তু সীমা ও শর্তের মধ্যে। আমাদের কাছে আসলে কি চাওয়া হচ্ছে? আমর কি হেজা বিরোধিতার সূত্রপাত ঘটাব? এমনটা কেমন করে সম্ভব? (সূত্র পূর্বোক্ত) উক্ত তালেবান নেতার অপর একটি বক্তব্য এখানে উল্লেখ্য যে: ‘‘মক্কা বিজয়ের পর নবী করিম (সা:) কাবাঘরে গমন করেন এবং মকামে ইব্রাহীম এর আসল ভিত্তি ঠিক রেখে মুশরিকদের নির্মিত বাহুল্য ও সীমালংঘিত অংশগুলোকে অপসারনের ব্যাপারে বিবেচনা করেন। অতএব তিনি আপন সিদ্ধান্ত বদলে দেন এবং বাড়ী ফিরে উম্মৎ জননী হযরত আয়েশা (রা:) কে সম্বোধন করে বলেন,  হে হুমাইরাহ! আমি চাই মাকামে ইব্রাহীমকে কায়েম রেখে গোটা কাবাঘর পূণর্নির্মান করতে, কিন্তু আমার আশংকা হচ্ছে, এমন করলে লোকেরা অসন্তোষ ছড়াবে। এঘটনা থেকে আপনি অনুমান করতে পারেন যে, ইসলাম প্রাচীন ঐতিহ্য বা সংস্কারকে শ্রদ্ধা জানায় এবং সে মানব সমাজের ধ্যান-ধারনাকে সামনে রেখে তাদের প্রতি মনোযোগ দেয় (সুত্র: পূর্বোক্ত)। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ছোটখাট ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিয়েও যারা বিবাদ বা বিতর্ক সৃষ্টি করে এমন বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের জন্য উক্ত তালেবান নেতার উদার বক্তব্য অবশ্যই শিক্ষণীয়।

                  এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ২০০১ সালের  নাইন - ইলেভেন-এর পর ন্যাটো জোটের সহায়তায় আফগানিস্তানে আমেরিকার আগ্রাসনের সময় গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার তালেবানকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তার অনুগত হেজবে ইসলামীর মুজাহিদদেরকে তালেবানের সহায়তায় যুদ্ধের আহ্বান জানান। পরে আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের পতন হয়। এরপর তালেবানরা আমেরিকা সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ অব্যাহত রাখে। এদিকে ইসলামপন্থী নেতা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার বেশ কয়েক  মাস ধরে আলোচনা শেষে প্রায় ২০ বছর পর ২০১৭ সালে কাবুলে ফিরেন গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার। এখানে উল্লেখ্য, তালেবানদের মতই গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার একই পশতুন গোষ্ঠীতুক্ত। পশতুনরা আফগানিস্তানের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। 

পূর্ববর্তী তালেবান সরকারের প্রতি 
বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন
            বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর, মোমতাজুল মোহাদ্দেসীন মাওলানা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ পূর্ববর্তী তালেবান শাসনাধীন আফগানিস্তান সফরের  বর্ণনা দিতে যেয়ে বলেন: “আমরা প্রবেশ পথ দিয়ে আফগানিস্তানের উপজাতীয় এলাকায় প্রবেশ করে আফগানিস্তানস্থ সীমান্তের কাস্টমস অফিস থেকে যাবতীয় অনুস্ঠানাদি সেরে সোজা আফগানিস্তানের দ্বিতীয় রাজধানী জালালাবাদের দিকে রওয়ানা হই। রাত আটটা নাগাদ জালালাবাদ উপস্থিত হয়ে প্রটোকল অফিসারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদেরকে সরকারী গেস্ট হাউসে পৌছিয়ে দেন। এখানেই আমাদের থাকার ও খানাপিনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমরা এশার নামায আদায় করে রাতের খানা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আমি জালালাবাদ পৌঁছেই প্রটোকল অফিসারের কাছে কাবুল যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করি। তিনি বললেন, জালালাবাদ হতে সপ্তাহে মাত্র ১ দিন বিমান সার্ভিস চালু আছে। সুতরাং ৫/৬ দিনের আগে আপনি কোন বিমান পাচ্ছেন না। একথা শুনে আমি কাবুল সফরের পরিকল্পনা বাদ দেই এবং জালালাবাদের গভর্ণেরর সাথে আমার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার জন্য তাকে অনুরোধ করি। ডেপুটি গভর্ণরের সাক্ষাৎ: পরের দিন ভোরে নামায, পায়চারী ও গোসল শেষ করে নাস্তা করে নেই। নাস্তার সময় প্রটোকল অফিসরা খবর দেন যে, আজই অর্থাৎ ২রা নভেম্বর বেলা ১১টায় গভর্ণর হাউসে ডেপুটি গভর্ণর জনাব মোল্লা সাদরে আমল আমাকে সাক্ষাতের সময় দিয়েছেন। কেননা গভর্ণর ঐদিন জালালাবাদে ছিলেন না। আমি আমার সাথী সীমান্ত প্রদেশের আমীর এডভোকেট ইব্রাহীম সাহেবকে নিয়ে ১১টা বাজার সামান্য পূর্বে গভর্ণর হাউজে হাজির হই। ওয়েটিং রুমে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পরেই ডেপুটি গভর্ণর আমাদেরকে সাক্ষাৎকার দেন। পারস্পরিক সালাম, মোসাফাহা, কোলাকুলি ও কুশল বিনিময়ের পরে ডেপুটি গভর্নরের সাথে আমার আলোচনা শুরু হয়। আমি আমীরে জামায়াতে জনাব গোলাম আযম সাহেব ও জামায়াত নেতৃবৃন্দের সালাম তাকে পৌঁছাই এবং অনুরোধ করি তিনি যেন আমার এবং আমীরে জামায়াতের সালাম আফগানিস্তানের আমীরুল মোমেনীন মোল্লা মোহাম্মদ ওমর আল মুজাহিদকে পৌঁছান। আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর এ পরিচয় তার কাছে থাকলেও ১৯৬২ সনের পাক পার্লামেন্টে আমি ও সীমান্ত প্রদেশের মুফতি মাহমুদ এক সঙ্গে সদস্য ছিলাম একথা তাকে অবহিত করি। আফগানিস্তানে মুফতি মাহমুদ এক সর্বজন পরিচিত ব্যক্তিত্ব। তিনি এক সময় সীমান্ত প্রদেশের চীফ মিনিস্টারও ছিলেন। ১৯৮৯ সনে আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ার বের হয়ে যাওয়ার পর মুজহেদীনদের পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধে আমরা যে খুবই মর্মাহত ছিলাম একথা তাকে বলি। অত:পর বর্তমান তালেবান সরকার কাবুলসহ দেশের প্রায় ৯৫% ভাগ ভূ-ভাগ দখল করে দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা বহাল করায় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ তালেবান সরকারের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন দান করেছে সে কথাও তাকে অবহিত করি। আমি আরবী ভাষায় তার সাথে কথা বলছিলাম এবং তিনি আমার কথা বুঝতে ছিলেন।  অত:পর তিনি কথা শুরু করেন। তিনি প্রথমেই বলেন যে, অবশ্যই জামায়াতে ইসলাামী আফগান জিহাদে দেশকে রুশ কবল মুক্ত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে আমাদের বিশ্বাস জামায়াতের এই ভূমিকা কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠির জন্য ছিল না। ছিল নীতি ও আদর্শের জন্য ।  তালেবান সরকার গৃহযুদ্ধের অবসান করে ঐ নীতি ও আদর্শ অর্থাৎ শরিয়তের আইন সারাদেশে চালু করেছে যার জন্য জামায়াতে ইসলামীসহ দুনিয়ার ইসলামী আন্দোলনসমূহ আফগান জিহাদে সাহায্য ও সমর্থন দিয়েছিল(`আফগানিস্তানে যা দেখেছিগ্রন্থ)

                   ইতিপূর্বে উল্লেখিত তালেবানদের সাথে আলোচনার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে আমেরিকার সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সমঝোতাকারী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন তুর্কি প্রতিনিধিদল। আর বর্তমান তুরস্ক সম্পর্কে অন্যত্র বলা হয়েছে।  আর তালেবানদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের কেন্দ্র কাতার।  কাতার হলো বর্তমানে জামায়াত-ইখওয়ানীদের সমাবেশস্থল। এখানে একটি কথা উল্লেখ্য যে, প্রথম তালেবান নেতা মোল্লা ওমর আল্লামা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদীকে উস্তাদ সম্মোধন করতেন। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য যে, জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির বিরুদ্ধে আফগান ও পাকিস্তান তালেবান তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। 

Edited time: july-2020


আফগানিস্তানে তালিবান বিজয়ের পর নীচের অংশটুকু এড করলাম:

আমি ২০২১ সালের ১৬ই আগষ্ট এই পোস্টটি ফেইসবুকের অনেক ইসলামী গ্রুপে শেয়ার করি। এরপর বিভিন্নজনে বিভিন্ন মন্তব্য করে, সেসবের জবাবও দিয়েছি । সেসব পরে দিচ্ছি। এখন পাকিস্তান জামায়াতের আমির মৌলানা সিরাজুল হক--এর প্রতিক্রিয়া এখানে দিচ্ছি। 

পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর আমীর সিরাজুল হক বলেছেন: 
Jamaat-e-Islami Ameer Sirajul Haq has said the "peaceful taking over" of Kabul by Taliban insurgents was actually a defeat of the US and a victory of Afghan people and the Islamic world.
It is hoped that after the humiliating defeat, the US would not invade any more countries, he was quoted as saying by The News International while addressing the central training workshop for the JI leaders and workers at Mansoorah here.
He lauded the Taliban for declaring peace, non-retaliation against opponents, protection of diplomats and foreigners, and amnesty for rivals which, he said, was unprecedented in the modern civilized world.
Siraj was quoted as saying by the newspaper that the defeat of the Western colonist powers for the third time in history by Afghanistan has further strengthened the dream of the liberation of Kashmir and Palestine, hoping that the day was not far when the sun of freedom would rise there.
অর্থাৎ: জামায়াতে ইসলামীর আমীর সিরাজুল হক বলেছেন, তালেবান বিদ্রোহীদের দ্বারা কাবুলের "শান্তিপূর্ণ দখল" আসলে আমেরিকার পরাজয় আর আফগান জনগণ এবং ইসলামী বিশ্বের জয়। আশা করা যায় যে, লজ্জাজনক পরাজয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো দেশে আক্রমণ করবে না। তিনি এখানে মনসুরায় জেআই নেতা ও কর্মীদের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভাষণ দেওয়ার সময় বলেছিলেন।
তিনি শান্তি ঘোষণা, বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ না নেওয়া, কূটনীতিক এবং বিদেশীদের সুরক্ষা এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার জন্য তালেবানের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এটা আধুনিক সভ্য বিশ্বে নজিরবিহীন।
আমীর সিরাজুল হক সংবাদপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে, আফগানিস্তানের কাছে ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো পশ্চিমা উপনিবেশিক শক্তির পরাজয় কাশ্মীর ও ফিলিস্তিনের মুক্তির স্বপ্নকে আরও শক্তিশালী করেছে, আশা করে যে সেদিন বেশি দূরে নয় যখন স্বাধীনতার সূর্য উঠবে সেখানে। 
Source: www.indiablooms.com

এই পোস্টটি ফেইসবুকের অনেক ইসলামী গ্রুপে শেয়ার করার পর একটি গ্রুপে একজন কমেন্ট করে বলেন: সোভিয়েত হঠাও এর পরবর্তী ইতিহাসে জমিয়তে ইসলামী খারাপ পথ বেছে নিয়েছিল। এর পরিণতিতে আহমাদ শাহ মাসুদ এবং রব্বানী দুইজনকেই জীবন দিতে হয়েছে। এর জবাবে আমি জানাই: “গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের হেজবে ইসলামীর সাথেই জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক । সে সম্পর্কে এই পোস্টে লেখা হয়েছে।” নামের সাদৃশ্যের বা অন্য কোন কারণে অনেকের এই বিষয়ে ভুল ধারনা আছে। জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্কযুক্ত গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের হেজবে ইসলামী আমেরিকাবিরোধী জিহাদে তালেবানের পক্ষে ছিল। আরো উল্লেখ্য যে, গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার বর্তমান বিজয়ী তালেবান সরকারে অন্যতম মুখ্য সমন্বয়ক হিসাবে অংশ নিয়েছেন।
গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ারের ইমামতিতে নামাজরত তালেবান নেতৃবৃন্দ

গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির সিরাজল হকের সাথে সাক্ষাতের ভিডিও:

আরেকজন পোস্টের শেষে আমার এই বক্তব্যের রেফারেন্স চেয়েছেন - "জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির বিরুদ্ধে আফগান ও পাকিস্তান তালেবান তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল।" আমি একটা লিংক দিয়েছি। তারা আসলে মৌখিক তীব্র প্রতিবাদের চেয়ে বেশী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। যে কেউ Bangladesh mission under Taliban threat - এই লংটেইল কীওয়ার্ড দিয়ে গুগুলে সার্চ করে দেখতে পারেন। ২০১৩ সালের অনেকগুলো লিংকে এসম্পর্কে জানতে পারবেন। আমি আরো জানাই - আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ হলে পাকিস্তান পার্লামেন্টসহ বিশ্বের বহু দেশের বহু ইসলামী সংগঠনই প্রতিবাদ জানিয়েছিল। এর মধ্যে সর্বাধিক শক্ত প্রতিবাদ যারা জানিয়েছিল তাদের মধ্যে বর্তমান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অন্যতম। আমি এই লিংকটা শেয়ার করেছি: Resolution passed: Abdul Quader Molla was innocent, Imran Khan claims

বিশ্বখ্যাত ইসলামিক স্কলার, শায়খ আল্লামা ডঃ ইউসুফ আল কারযাভী (হাফিঃ) -এর সাথে কাতারে তালেবান নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ।

নীচে একজন তালেবান নেতার বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে সাক্ষাৎকার দেয়া হয়েছে। এটা তালেবান বিজয়ের আগের। তিনি সাতক্ষীয়া জেলায় জামায়াতের উপরে ভয়ংকর নির্যাতনের কথাও উল্লেখ করেন। 
(একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন)

বিঃদ্রঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনুসারে দাওয়াত, সংগঠন ও ইসলামের আলোকে গঠন এবং মানবসেবার মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম (জিহাদ) অব্যাহত রেখেছে। মূলতঃ আফগান, ইরান, তুরান কেউই ইসলামের মডেল নয়, কোরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে নিজ দেশের অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে।

Please browse these links:




সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ’র। মহান আল্লাহ অধিকতর সাফল্য অর্জনের তৌফিক দান করুন, আমিন

Wednesday, August 23, 2017

মরক্কোর আধুনিক ইসলামী আন্দােলনের ইতিহাস, ইসলামপন্থীদের বিজয় এবং জামায়াতে ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

১৯১২ সালে ফ্রান্সে সম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের মাধ্যমে মরক্কো দখল করে নেয়। তখন ফ্রান্সের উপনিবেশিক শাসন বিরোধী সশস্ত্র লড়াই পরিচালনা করেন শামসির আব্দুল করিম খাত্তাবী, যিনি আব্দুল করিম রফী নামে সমধিক পরিচিত। নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে ১৯৫৬ সালে মরক্কোবাসী স্বাধীনতা লাভ করে। মরক্কোর স্বাধীনতা সংগ্রামে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখেন আলাল আল ফাসী। তিনি জ্ঞান গরিমা, শক্তি-সাহস ও যুদ্ধবিদ্যায়  স্বীয় নেতা আন্দুল করিম রেফীর সুযোগ্য উত্তরসুরী ছিলেন। স্বাধীনতা লাভের পর সুলতান মুহাম্মদ খামীস জনসমর্থন নিয়ে মরক্কোর শাসন-ক্ষমতা লাভ করেন। জনাব আলাল আল ফাসী ইসলামী জীবন-বিধান প্রতিষ্ঠার দাবীতে জিহাদ জারী রেখেছিলেন বিধায় শেষ পর্যন্ত তাকে নির্বাসিত জীবন গ্রহন করতে হয়। তিনি তার এক বন্ধু মক্কী আনসারীর মাধ্যমে পাকিস্তানে মাওলানা মওদূদী রহ: এর সংগে যোগাযোগ স্থাপন করে ইসলামী শাসনতন্ত্র জারী করার বিষয়ে পরামর্শ চান। তিনি মাওলানা মওদূদী (রহ:) লিখিত ইসলামী শাসনতন্ত্র বইটি পড়ে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, এই বইটির ভিত্তিতে তিনি মরক্কোর জাতীয় সংবিধান রচনা করবেন। ১৯৬২ সালে একটি অপারেশন করার সময় তিনি এন্তেকাল করেন, কথিত আছে তাঁর মৃত্্যু আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফল।
দাওয়াতে আল হক নামক একটি সাময়িকী মরক্কোতে ইসলামী পূণর্জাগরণে অতুলনীয় অবদান রাখে। এপত্রিকাটি মরক্কো সরকারের আওকাফ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত হত। তথাপি এর সম্পাদনার ভার ইসলামী আন্দোলনের উপর ছিল। ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এসাময়িকীর মাধ্যমে মাওলানা মওদূদী রহ: এর বিপ্লবী ইসলামী সাহিত্য প্রচারিত হয়।
মরক্কোতে যুবকদের মাঝে ইসলামী আন্দোলন সংগঠিত রূপ লাভ করে ১৯৬৯ সালে আব্দুল করিম মুতির নেতৃত্বে ইয়ং মুসলিম মুভমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এই যুব ইসলামী আন্দোলন জামায়াতে ইসলামী ও ইখওয়ানুল মুসলেমীনের অনুসৃত পন্থায় আন্দোলন করছে। ইয়ং মুসলিম মুভমেন্ট ওয়াইএমএম) বা হারকাতুল শাইবাতুল ইসলামীয়া বিশ্ববিদ্যালয় হতে শিক্ষা সমাপণকারী যুবকদের দ্বারা গঠিত হলেও ছাত্রদের মাঝে এর তৎপরতা ব্যাপক হয়ে উঠে। ফাস এর কারওইন বিশ্ববিদ্যালয়, বারাতের মুহাম্মদ খামস বিশ্ববিদ্যালয় সহ সমগ্র মরক্কোব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে ওয়াইএমএম ছাত্রদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং প্রতিষ্ঠা লাভের ছয় মাসের মধ্যে দেশ-জাতির কাছে উল্লেখযোগ্য মর্যাদা লাভ করে। ওয়াইএমএম এর জনপ্রিয়তা ভীতি হয়ে মরক্কোর কায়েমী শাসকগোষ্ঠী ও সেদেশে অবস্থানরত শক্তিশালী ইহুদী গোষ্ঠীর চক্রান্তের মাধ্যমে এক কমিউনিষ্ট নেতা হত্যার মধ্য দিয়ে ওয়াইএমএম কে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার ফাসির আদেশদেয়। ফলে আব্দুল করিম মূতীসহ কয়েকজন নেতা নির্বাসিত জীবন গ্রহণ করতে বাধ্য হন।
১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে জমিয়াতুল আল ওয়াল ইহসান নামে অপর একটি ইসলামী আন্দোলন আব্দুস সালাম ইয়াসীনের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই আন্দোলনের চিন্তাধারা ও লক্ষ্য তাবৎ বিশ্বের ইসলামী আন্দোলন সমূহের মতই, তবে তারা সনাতন তাসাউফপন্থার উপর বেশী গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। সরকারী নির্যাতনের অব্যাহত মোকাবেলা করে তারা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জারী রেখেছেন।
এভাবে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে স্পেনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার বেসক্যাম্প মরক্কোতে ইসলামী আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। নিঃসন্দেহে মরক্কো ইসলামী বিপ্লব সাধনের ক্ষেত্রে একটি উর্বর ক্ষেত্র।

দীর্ঘ  ইসলামী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আরব বসন্তের পর মরক্কোতে ইসলামী দল ২০১১ সালে প্রথমবার এবং ২০১৬ সালে ২য়বার বিজয় অর্জন করে। এসম্পর্কে জানার জন্য নীচের পোষ্টগুলো পড়ুন:


1) মরক্কোয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের বিপুল বিজয়




Wednesday, June 14, 2017

তুরস্কে অনুষ্ঠিত হওয়া ESAM কনফারেন্সে শহীদ মাওলানা নিজামীকে নিয়ে প্রেজেন্টেশন...

তুরস্কে অনুষ্ঠিত হওয়া ESAM কনফারেন্সে সমগ্র পৃথিবীর ইসলামিক সংগঠন ও ইসলামিক স্কলারগণ একত্রিত হন। সেখানে অংশগ্রহন করেন শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিষ্টার নাজেব মোমেন। তিনি তার বাবা শহীদ নিজামীর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন, সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের।

Sunday, March 5, 2017

কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ এবং জামায়াতে ইসলামী


-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল
                   
 কেয়ারটেকার (নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা এক সময় বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকাশের অন্যতম প্রধান উপাদান হিবাবে গৃহীত হয়েছিল। সারা পৃথিবীর মধ্যে সর্বপ্রথম বাংলাদেশেই এর প্রয়োগ হয়। এই ব্যবস্থার আবিষ্কারক অধ্যাপক গোলাম আজম। দ্য নিউ এজের সম্পাদক সাংবাদিক নুরুল কবির বলেন:  ‍‍‌‌‌‌‌‌“গোলাম আজমের রুপরেখা বাস্তবায়ন হল বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, তিউনিশিয়ার পর তুরস্কেও।”‍‍‌‌‌‌‌‌  তিনি বলেন:  ১৯৮০’র দশকে এবং ১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে বিএনপি’র বিরুদ্ধে আন্দোলনে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ যুগপৎ আন্দোলন করেছিল । একটি সুষ্ঠু পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য যখন কোন ফর্মুলাই কাজে আসছিল না । তখন গোলাম আজম কেয়ারটেকার পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন । কিছুটা বিরোধীতা থাকলেও একটা পর্যায় সকলেই বলতে বাধ্য হন এর থেকে ভাল দ্বিতীয় কোন পথ নেই । দেশে-বিদেশে উচ্ছসিত প্রশংসা  পায় । যারা একটা সময় এক সাথে আন্দোলন করে কেয়ারটোকার পদ্ধতি চালু করলেন আবার সেই তারাই তাদের স্বার্থে সেটার বিলুপ্তি করে দেন । যার খেসারত আজো দিচ্ছে বাংলাদেশ । যে গণতন্ত্র উত্তরণে ৯০-এ তার কেযারটেকার পদ্ধতি জাতিকে দিয়েছিল মুক্তির দিশা । কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পথিকৃৎ মনে করা হয় বাংলাদেশকে। এ ব্যবস্থা চালু করে বাংলাদেশ এক সময় বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছিল। আওয়ামী লীগ এ ব্যবস্থার জন্য কৃতিত্ব দাবি করলেও এই দলটিই আবার ব্যবস্থাটি বাতিল করে দিয়েছে, যার জের ধরে বাংলাদেশ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান পরিবর্তন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দিলেও নেপাল, পাকিস্তান, তিউনিশিয়া সহ বহু দেশই এখন এ ব্যবস্থাকে গ্রহণ করেছে। সর্বশেষ এই তালিকায় যোগ হচ্ছে তুরস্কের না ”‍‍‌‌‌‌‌‌   
                কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে বৃটেনের হাউজ অব কমন্সের সাবেক স্পীকার মি: লর্ড ওয়েদারিল (Lord Weatherill) বার্তা সংস্থা ইউএনপির সাথে ২রা সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি এই ধারনাকে (কেয়ারটেকার সরকার) সমর্থন করি। ইহা চালু করতে পারলে বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী একটি মডেল হবে। বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপেরই নয়, অন্যত্র বহু নতুন গণতান্ত্রিক দেশ রয়েছে যাদের বেলায় এটি খুবই উপযুক্ত বিজ্ঞ ধারণা হতে পারে। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশের এর প্রয়োগের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে এর প্রয়োগ হয়। ১৯৯৩ সালে পাকিস্তানে মঈন কোরেশীর নেতৃত্ব কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান সংবিধানের ৪৮(৫) অনুচ্ছেদে নির্বাচনের সময় প্রেসিডেন্ট কর্তৃক সংসদ ভেংগে দেয়ার পর কেয়ারটেকার কেবিনেট গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। একই বছরে কম্বোডিয়ার গৃহযুদ্ধরত বিভিন্ন পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ১৯৯৪ সালে একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় এবং নির্বাচন হওয়ার পর ইহা স্থায়ী আইনে পরিণত হয়। ১৯৯৫ সালের আফ্রিকার মোজাম্বিক ও আমেরিকার হাইতিতে তত্তাবধায়ক করকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। গ্রীসেও নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা গৃহীত হয়। আফগানিস্তানে একসময় তৎকালীন সর্ববৃহৎ দল হেজবে ইসলামীর প্রধান নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার এক বিদেশী পত্রিকার সাথে সাক্ষাৎকারে আফগান গৃহযুদ্ধ সমস্যার সামাধানের জন্য বাংলাদেশের মত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা উচিত বলে অভিমত প্রকাশ করেছিলেন। এভাবে দেখা যায়, বাংলাদেশে কেয়ারটেকার সরকার গঠনের দৃষ্টান্তটি বহু আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে সাফল্যজনক ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়।  
                 উক্ত কেয়ারটেকার সরকারের ধারণা বাংলাদেশে সর্বপ্রথম প্রদান করেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির অধ্যাপক গোলাম আজম। তিনি এই কেয়ারটেকার সরকারের ফর্মুলা জামায়াতে ইসলামীর সর্বোচ্চ ফোরাম কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদে ১৯৭৯ সালে পেশ করেন। সেখানে বিস্তারিত আলোচনাক্রমে উক্ত ফর্মুলা গৃতীত হয়। তারপর ১৯৮০ সালের ৭ই ডিসেম্বর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান ঢাকার রমনা রেস্তোরায় আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে নতুন রাজনৈতিক পদ্ধতি হিসাবে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি উপস্থাপন করেন। ১৯৮০ সালের ৮ই ডিসেম্বর দৈনিক সংবাদে সংক্ষিপ্তাকারে উক্ত সংবাদ পরিবেশন করে বলা হয়- এই দাবীকে নতুন রাজনৈতিক পদ্ধতি হিসাবে জামায়াত আখ্যায়িত করে । ঐ তারিখে দৈনিক সংগ্রামে খবরটি বিস্তারিত প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৮৩ সালের ২০শে ডিসেম্বর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজিত এক গণজমায়েতে আব্বাস আলী খান কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবী জানান। ১৯৮৪ সালের এপ্রিল মাসে জেনারেল এরশাদের সাথে যে সংলাপ চলে সেখানেও জামায়াতে ইসলামী উক্ত ফর্মুলা পেশ করে। তখন প্রধান প্রধান দলগুলো উক্ত দাবীর সাথে একমত হয়নি। পরে ১৯৯০ সালে যখন অন্যান্য বিরোধীদল নিজস্ব পরিভাষাসহ জামায়াতে ইসলামীর উক্ত দাবীর সাথে একমত হয়ে আন্দোলন পরিচালনা করে তখন এক গন-অভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। ফলে ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য হন। প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ পরিচালিত নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়। ১৯৯১ সালের ৫ই এপ্রিল ৫ম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। ৬ই আগষ্ট সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী বিল ২০৭-০ ভোটে পাস হয়। দ্বাদশ সংশোধনীর সময় সংবিধানে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি সংযোজনের জন্য জামায়ত প্রস্তাব পেশ করে। কিন্তু তৎকালীন সরকারী ও বিরোধী দল কোনটিই সেই প্রস্তাব সমর্থন করে নাই। পরে সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ২৯শে জানু., ১৯৯১ সালে জামায়তে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারী জেনারেল ও জামায়াতের সংসদীয় দলের নেতা মওলানা মতিউর রহমান নিজামী কেয়ারটেকার সরকার বিল সংসদে উত্থাপন করেন। পরে দীর্ঘ প্রায় দুই বছর আন্দোলনের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বিএনপি সরকারের মাধ্যমে সংসদে পাশ হয়ে বাংলাদেশের সংবিধানসম্মত ব্যবস্খা হিসাবে গৃহীত হয়। অতএব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে গৃহীত ও বহুবিধ রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে সফল নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার উদ্ভাবক ও অগ্রবর্তী বাস্তবায়নকারী হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর অবদান অনস্বীকার্য।

Tuesday, January 31, 2017

ইফসু(IFSO) এবং আন্তর্জাতিকক্ষেত্রে শিবিরনেতা ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহেরের তৎপরতা


-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

বিশ্বব্যাপী পরিচালিত ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমূহকে সমন্বয় সাধনের মহান লক্ষ্যে International Islamic Federation of Student Organizations(IFSO) অর্থাৎ ইসলামী ছাত্র সংগঠন সমূহের আন্তুর্জাতিক জোট প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যে কয়জন মাহমনীষির চিন্তা-চেতনা কাজ করছিল তারা হচ্ছেন মাওলানা মওদূদী রহ: ইলাল ফার্সী রহ? ও ড: মুহাম্মদ নাসের।

১৯৬৬ সালের প্রথম দিকে নাইজেরিয়ার ইসলামী ছাত্র সংগঠন- Muslim Student Society of Nigeria- এর উদ্যোগে ইফসু প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়ে নানা পার্যায় অতিক্রম করে ১৯৬৯ সালে ১৭ই জুন পশ্চিম জার্মানিতে এক সপ্তাহব্যাপী প্রথম প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে এক ঘোষণায় আনুষ্ঠানিকভাবে IFSO আত্মপ্রকাশ করে। ঘোষণাপত্রে বিভিন্ন দেশের সাতটি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দ সাক্ষর করেন। ১৯৭১ সালে পশ্চিম জার্মানীতে দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নয়টি ছাত্র সংগঠন এতে অংশগ্রহণ করে এবং বিভিন্ন দেশের আরো নয়টি সংগঠন উহার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। তুরষ্কের প্রাচীন নগরী ইস্তাম্বুল ১৯৭৫ ও ১৯৭৭ সালে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চতুর্থ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ আরো অনেক দেশের ছাত্র প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। এই সম্মেলনে ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়। সেগুলোর মধ্যে চৌদ্দটি ভাষায় ইসলামী সাহিত্য অনুবাদ ও প্রকাশের ব্যবস্থা ছিল। এভাবে IFSO এ পর্যন্ত ১১৫টি পুস্তক প্রকাশ করে। মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ইসলামী ব্যক্তিত্ববৃন্দ ও সম্মেলনে আলোচনা করেন। বাংলাদেশের অধ্যাপক গোলাম আজম ও এতে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। এরপর পঞ্চম সম্মেলন ১৯৮০ সালে মালয়েশিয়ায় এবং ষষ্ঠ সম্মেলন সুদানের রাজধানী খার্তুমে ১৯৮৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এ সবগুলোতেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রতি বছরেই IFSO এর আঞ্চলিক সম্মেলন ও লীডারশীড ট্রেনিং ক্যাম্প বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকা, এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল এবং আফ্রিকার প্রায় ৫৫টি ইসলামী ছাত্র সংগঠন IFSO এর অন্তর্ভূক্ত হিসাবে কাজ করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্র শিবির ২৫তম সদস্য।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রক্তন সভাপতি ডা: আব্দুল্রাহ মোহাম্মদ তাহের IFSO এর সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে ১৯৯৩-৯৬ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তার দায়িত্ব পালনকালে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, সিম্পোজিয়াম ও সেমিনার উপলক্ষ্যে আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার ৮৪ টি দেশে একশত বারের ও বেশী সফর করেন এবং ভাষণ দেন। সফরকালে তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড: মাহাথির মোহাম্মদ, পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডোন্ট জিয়াউল হক, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড: নাসের, সুদানের প্রসিডেন্ট জেনারেল ওমর হাসান আল বশীর, প্রাক্তন পেসিডেন্ট সুয়াির আদ্দাহাব, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাফর আল নিমেরী, কুয়েতের বর্তমান আমীর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ ও শেখ শাদ, আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রফেসর বোরহান উদ্দীন রব্বানী, তুরস্কের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাজমুদ্দীন আরবাকান প্রমুখ রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া আফগান মুজাহিদ নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার, কাশ্মীঅর মুজাহিদনেতা হেকীম গোলাম নবী, আনব্দুর রশিদ এবং আমান উল্লাহ খান, ফিলিপাইনের মিন্দানাও এম,এন, এল, এফ এবং এমআইএল এফ নেতা নূর মিসৌরী, থাইল্যান্ডের মুসলিম মুজাহিদ নেতা ড: শুকরি, মিশরের ইখওয়ানুল মুসলেমীনের মুর্শিদে আম ড: নাসের, সুদানের ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান ড: হাসান তুরাবী, সাউথ আফ্রিকার নেতা আহম্মের দিদাদ ইউকে এর প্রখ্যাত সঙ্গিতজ্ঞ নওমুসলিম ইউসুফ ইসলাম, আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভী, জামান কাদাউই প্রমূখ বিশ্ব ইসলামী নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করের। একটি সাক্ষাতকারে ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ইফসুর সেক্রেটারী জেনারেল থাকার সময়ের উল্লেখযোগ্য দুএকটা ঘটনা উল্লেখ করতে যেয়ে বলেন :

‌‌‌“ক) IFSO জাতিসংঘের Olserver member, সে সুবাদে জাতিসংঘের অধীনে জেনেভাস্থ Human Rights Commission এরও সদস্য। ১৯৯৪ সালে Human Rights Commission এর International Conference অনুষ্ঠিত হয়েছিল জেনেভায়। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা সেই Conference এ যোগ দিয়েছিলেন। IFSO সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে আমিও সেই সম্মেলনে যোগ দেই। প্রথম দিনেই কনফারেন্স হলের লবীতে সাক্ষাৎ পাই Kashmir America concil এর সভাপতি মুজাহিদ নেতা ড: গোলাম নবী ফাই এর সাথে। তিনি আমেরিকা থেকে এসেছেন কাশ্মীর এ মানবাধীকার  লংঘন সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরার জন্য। কিন্তু তিনি কোনভাবেই কনফারেন্স হলে ঢুকার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি তাকে আমার টীম এর সদস্য করে একটি এক্সেস কার্ড ইস্যু করি। আমার কার্ড নিয়ে কনফারেন্স এর চেয়রম্যান এর কাছে গেলে তাকে গ্রহন করা হয়। ড: গোলাম নবী ফাই কনফারেন্স এ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে কাশ্মীঅর এর উপর অত্যন্ত বলিষ্ঠ বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবাধিকার সংস্থার আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কাশ্মীরের উপর বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দিতে পেরে IFSO এর সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে আমার খুব আনন্দ অনুভব হয়েছিল।

খ) ১৯৯৬সালে IFSO-এর  ইন্টর্নেশনাল কনফারেন্স এর জন্য হোস্ট হওয়ার অনুরোধ জানানোর্ জন্য তুরস্কের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড: নাজমুদ্দিন আরবাকানের সালে ইস্তাম্বুলে তার অফিসে সাক্ষাতের সুযোগ পাই। IFSO সম্বন্ধে আগে থেকেই তিনি ওয়াকেফহাল ছিলেন। তুরস্কে আমরা সম্মেলন করতে চাই শুনে উনি খুশি হলেন এবং তাৎক্ষনিকভাবে অনুমতি দিলেন এবং ইস্তাম্বুলের বসফরাস নদীর তীরে ফাইভ স্টার হোটেলেটি পুরো এক সপ্তাহের জন্য কনফারেন্স ডেলিগেটদের জন্য ভাড়া দেন।
প্রসঙ্গ ক্রমে তিনি তার উদ্যোগে জি-সেভেন এর এগেইনস্টে ডি-৭ গঠনের কথা বললেন। এত বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আমি বিনয়ের সাথে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানালে তিনি বিবেচনার আশ্বাস দেন। পরে ডি-৭, ডি-৮ হয় এবং বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভূক্ত হয়”  (ছাত্র সংবাদ, মার্চ-এপ্রিল ২০০০)। এখানে উল্লেখ্য যে, আটটি মুসলিম উন্নয়নশীল  দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের নিয়ে ডি-৮ সম্মেলন ১ম হাসিনা সরকারের আমলে মার্চ ১-২ , ১৯৯৯ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেটা ছিল ডি-এইট -এর ২য় সম্মেলন।  এ সম্পর্কে জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন: উন্নয়নশীল ৮টি দেশ। 


Popular Posts