Showing posts with label মরক্কো. Show all posts
Showing posts with label মরক্কো. Show all posts

Wednesday, August 23, 2017

মরক্কোর আধুনিক ইসলামী আন্দােলনের ইতিহাস, ইসলামপন্থীদের বিজয় এবং জামায়াতে ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

১৯১২ সালে ফ্রান্সে সম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের মাধ্যমে মরক্কো দখল করে নেয়। তখন ফ্রান্সের উপনিবেশিক শাসন বিরোধী সশস্ত্র লড়াই পরিচালনা করেন শামসির আব্দুল করিম খাত্তাবী, যিনি আব্দুল করিম রফী নামে সমধিক পরিচিত। নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে ১৯৫৬ সালে মরক্কোবাসী স্বাধীনতা লাভ করে। মরক্কোর স্বাধীনতা সংগ্রামে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখেন আলাল আল ফাসী। তিনি জ্ঞান গরিমা, শক্তি-সাহস ও যুদ্ধবিদ্যায়  স্বীয় নেতা আন্দুল করিম রেফীর সুযোগ্য উত্তরসুরী ছিলেন। স্বাধীনতা লাভের পর সুলতান মুহাম্মদ খামীস জনসমর্থন নিয়ে মরক্কোর শাসন-ক্ষমতা লাভ করেন। জনাব আলাল আল ফাসী ইসলামী জীবন-বিধান প্রতিষ্ঠার দাবীতে জিহাদ জারী রেখেছিলেন বিধায় শেষ পর্যন্ত তাকে নির্বাসিত জীবন গ্রহন করতে হয়। তিনি তার এক বন্ধু মক্কী আনসারীর মাধ্যমে পাকিস্তানে মাওলানা মওদূদী রহ: এর সংগে যোগাযোগ স্থাপন করে ইসলামী শাসনতন্ত্র জারী করার বিষয়ে পরামর্শ চান। তিনি মাওলানা মওদূদী (রহ:) লিখিত ইসলামী শাসনতন্ত্র বইটি পড়ে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, এই বইটির ভিত্তিতে তিনি মরক্কোর জাতীয় সংবিধান রচনা করবেন। ১৯৬২ সালে একটি অপারেশন করার সময় তিনি এন্তেকাল করেন, কথিত আছে তাঁর মৃত্্যু আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফল।
দাওয়াতে আল হক নামক একটি সাময়িকী মরক্কোতে ইসলামী পূণর্জাগরণে অতুলনীয় অবদান রাখে। এপত্রিকাটি মরক্কো সরকারের আওকাফ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত হত। তথাপি এর সম্পাদনার ভার ইসলামী আন্দোলনের উপর ছিল। ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এসাময়িকীর মাধ্যমে মাওলানা মওদূদী রহ: এর বিপ্লবী ইসলামী সাহিত্য প্রচারিত হয়।
মরক্কোতে যুবকদের মাঝে ইসলামী আন্দোলন সংগঠিত রূপ লাভ করে ১৯৬৯ সালে আব্দুল করিম মুতির নেতৃত্বে ইয়ং মুসলিম মুভমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এই যুব ইসলামী আন্দোলন জামায়াতে ইসলামী ও ইখওয়ানুল মুসলেমীনের অনুসৃত পন্থায় আন্দোলন করছে। ইয়ং মুসলিম মুভমেন্ট ওয়াইএমএম) বা হারকাতুল শাইবাতুল ইসলামীয়া বিশ্ববিদ্যালয় হতে শিক্ষা সমাপণকারী যুবকদের দ্বারা গঠিত হলেও ছাত্রদের মাঝে এর তৎপরতা ব্যাপক হয়ে উঠে। ফাস এর কারওইন বিশ্ববিদ্যালয়, বারাতের মুহাম্মদ খামস বিশ্ববিদ্যালয় সহ সমগ্র মরক্কোব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে ওয়াইএমএম ছাত্রদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং প্রতিষ্ঠা লাভের ছয় মাসের মধ্যে দেশ-জাতির কাছে উল্লেখযোগ্য মর্যাদা লাভ করে। ওয়াইএমএম এর জনপ্রিয়তা ভীতি হয়ে মরক্কোর কায়েমী শাসকগোষ্ঠী ও সেদেশে অবস্থানরত শক্তিশালী ইহুদী গোষ্ঠীর চক্রান্তের মাধ্যমে এক কমিউনিষ্ট নেতা হত্যার মধ্য দিয়ে ওয়াইএমএম কে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার ফাসির আদেশদেয়। ফলে আব্দুল করিম মূতীসহ কয়েকজন নেতা নির্বাসিত জীবন গ্রহণ করতে বাধ্য হন।
১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে জমিয়াতুল আল ওয়াল ইহসান নামে অপর একটি ইসলামী আন্দোলন আব্দুস সালাম ইয়াসীনের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই আন্দোলনের চিন্তাধারা ও লক্ষ্য তাবৎ বিশ্বের ইসলামী আন্দোলন সমূহের মতই, তবে তারা সনাতন তাসাউফপন্থার উপর বেশী গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। সরকারী নির্যাতনের অব্যাহত মোকাবেলা করে তারা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জারী রেখেছেন।
এভাবে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে স্পেনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার বেসক্যাম্প মরক্কোতে ইসলামী আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। নিঃসন্দেহে মরক্কো ইসলামী বিপ্লব সাধনের ক্ষেত্রে একটি উর্বর ক্ষেত্র।

দীর্ঘ  ইসলামী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আরব বসন্তের পর মরক্কোতে ইসলামী দল ২০১১ সালে প্রথমবার এবং ২০১৬ সালে ২য়বার বিজয় অর্জন করে। এসম্পর্কে জানার জন্য নীচের পোষ্টগুলো পড়ুন:


1) মরক্কোয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের বিপুল বিজয়




Tuesday, June 20, 2017

মরক্কোয় জাতীয় নির্বাচনে ইসলামী দলের দ্বিতীয়বার বিজয়,বাংলাদেশে কবে?

লিখেছেন লিখেছেন আরাফাত হোসাইন 
২২ অক্টোবর, ২০১৬




মরোক্কোর নির্বাচনী ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, পিজেডি ২০১১ সালের তুলনায় বেশি আসনে বিজয়ী হয়েছে। ১০৭ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ আসন। অপর দিকে পিজেডির প্রধান প্রতিপক্ষ সেকুলারদের জোট পিএএম ১০২ আসন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। মরোক্কোর নির্বাচনব্যবস্থা বেশ জটিল। ৩৯৫ সদস্যের পার্লামেন্টে ৯২টি নির্বাচনী এলাকা থেকে ৩০৫ জন সদস্য নির্বাচিত হন। সংরক্ষিত আছে ৯০টি আসন। ৬০টি নারীদের জন্য বাকি ৩০টি ৪০ বছরের কম বয়স এমন তরুণদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। সংসদে আসন পেতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যূনতম ৬ শতাংশ ভোট পাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দলগুলোর ভোটের ভিত্তিতে আসন পাওয়ায় এককভাবে কোনো দল সরকার গঠন করতে পারে না। অন্য দলের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে হয়।

সর্বাধিক আসন পাওয়া দলকে বাদশাহ সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। ২০১১ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পিজেডি রক্ষণশীল ও রাজপ্রাসাদের সাথে ঘনিষ্ঠ ইসতিকলাল পার্টির সাথে জোট গঠন করে সরকার গঠন করে। ২০১৩ সালে ইসতিকলাল পার্টি সরকার থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু বিরোধী দলের রাজনৈতিক সমর্থন থাকায় সরকার তার মেয়াদ পূরণ করে।

এবারো পিজেডিকে তৃতীয় দল ৪৬ আসন পাওয়া ইশতিকলাল, ৩৭ আসনে বিজয়ী আর এন আই, ২৭ আসন পাওয়া পপুলার মুভমেন্ট ও ২০ আসন পাওয়া ইউএসএফপির সাথে সমঝোতার মাধ্যমে সরকার গঠন করতে হবে। বাদশাহীর এই দেশে অবাধ রাজনীতির সূচনার পর এক দশকও হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যথেষ্ট সংহত হচ্ছে। বর্তমান ইসলামপন্থী প্রধানমন্ত্রীর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে মনে করা হয়। পেশায় শিক্ষক থেকে তিনি রাজনীতিতে এসেছেন।

প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ বেনকারিন দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। জনকল্যাণকর কিছু কর্মসূচি ও অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। নির্বাচনে বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী বেনকারিন বলেছেন জনগণের সেবার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল তা অব্যাহত থাকবে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পিজেডির সেক্রটারি ও প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ বেনকারানির সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নেয়া। ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নি¤œগতির দিকে যাচ্ছে। যদিও জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে। এখন বিপুলসংখ্যক তরুণের কর্মসংস্থানের দিকে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। যদিও রাষ্ট্র পরিচালনায় সাংবিধানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বাদশাহ বেশি ক্ষমতাবান।

২০১১ সালে আরব বসন্তের ধাক্কা মরোক্কোতেও লেগেছিল। রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছিল। পরিস্থিতি যাতে অন্য আরব দেশের মতো না হয় সে জন্য বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ দ্রুত কিছু সংস্কার কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এর মধ্যে পার্লামেন্টে আরো বেশি ক্ষমতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সংবিধানে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন। যদিও বাদশাহর হাতে রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা। বাদশাহ বিচারক, নিরাপত্তা পরিষদ এবং মন্ত্রিপরিষদের প্রধান। পার্লামেন্টে যেকোনো আইন তার অনুমোদনের জন্য পেশ করতে হবে। কোনো দল রাজতন্ত্রের বিরোধী নয়।

মরোক্কোর নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের দ্বিতীয়বারের মতো ফিরে আসার যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। জর্ডানের বাদশাহর মতো মরোক্কোর বাদশাহ ইসলামপন্থী দলকে নির্বাচন থেকে দূরে ঠেলে দেননি। বরং নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো গণতান্ত্রিক রাজনীতির সূচনায় ইসলামপন্থী দলগুলোর উত্থান ঘটেছিল। প্রথম সাফল্য এসেছিল তিউনিশিয়ায় পরে মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। কিন্তু সেনাবাহিনী ও সেকুলারদের দ্বন্দ্বের কারণে ক্ষমতা স্থায়ী হয়নি। তিউনিসিয়ার ইসলামপন্থী দল আননাহদা স্বেচ্ছায় ক্ষমতা থেকে সরে জাতীয় স্বার্থে সহাবস্থানের রাজনীতিতে নতুন মডেল হিসেবে হাজির হয়েছে। অপর দিকে, মিসরের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সেনাতন্ত্র জেঁকে বসেছে। মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড সরকার সরিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল এ অঞ্চলে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।

মরোক্কোয় পিজেডির বিজয় ও আবারো সরকার গঠন আরব ও উত্তর আফ্রিকায় ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক শক্তি ফিরে আসার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। আরব বিশে^ মধ্যপন্থী দল হিসেবে মুসলিম ব্রাদারহুডের সহযোগী রাজনৈতিক দলের বিকল্প যেমন কোনো রাজনৈতিক দল নেই, তেমনি এই দলগুলো যথেষ্ট জনপ্রিয়। সীমিত আকারে হলেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করতে মরোক্কোর পথ অন্য বাদশাহ শাসিত দেশগুলো ধীরে ধীরে গ্রহণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে শাসকেরা ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে একধরনের সমঝোতার পথেও এগোতে পারেন।

Source: www.newsbybd.net

Wednesday, May 24, 2017

মরক্কোয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের বিপুল বিজয়

রাবাত থেকে এএফপি : মরক্কোর মধ্যপন্থী ইসলামী দল গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রথমবারের মত বিপুল বিজয় অর্জন করেছে। গত শনিবারে প্রকাশিত আংশিক নির্বাচনী ফলাফলে আরব বিপ্লবের সূত্র ধরে এই অভাবিতপূর্ব বিজয় লাভ করেছে।  গত এক মাস পূর্বেকার নিউনিশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিপ্লবোত্তর নির্বাচনে ইসলামপন্থী দলের বিজয় এবং মিসরে বিপ্লবের মাতাল হাওয়া বয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে মরক্কোর ইসলামী দলের এ বিপুল বিজয় অর্জিত হলো। মোট ৩৯৫ আসনের মধ্যে ২৮৮টির ফলাফলে শনিবার এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (পিজেডি) এর প্রধান আব্দেল্লাহ বেনকিরানে বলেছেন, গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত করতে অন্য দলগুলোকে নিয়ে জোট সরকার গঠন করা হবে। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ বিজয়ী দলের পক্ষ থেকে একজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করবেন। গতকালের এ নির্বাচনে নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা ছিল এক কোটি ৩৬ লাখ এবং এতে শতকরা ৪৫ ভাগ ভোট পড়েছে। নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন সাত হাজার।
পিজেডি সরকার গঠন করলে এটা হবে উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরুর পর দ্বিতীয় কোনো দেশে ইসলামী দলের শাসন ক্ষমতায় আসার ঘটনা। এর আগে তিউনিশিয়ায় ইসলামী আন-নেহদাহ দলের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছে।
মরক্কোর ইসলামী দল পিজেডি'র বেশিরভাগ সমর্থক তুলনামূলক গরিব শ্রেণীর এবং দলটি ক্ষমতায় গেলে ইসলামী অর্থনীতি এবং সমাজে ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ১৯৫৬ সালে ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভের পর মরক্কোয় এ নিয়ে নয়বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ২০০৭ সালে সর্বশেষ নির্বাচন হয় এবং সেবার শতকরা ৩৭ ভাগ ভোট পড়েছিল।
উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে মরক্কোর রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ তার দেশে সম্ভাব্য আন্দোলন ঠেকানোর কৌশল হিসেবে শাসন ব্যবস্থায় তড়িঘড়ি কিছু সংস্কার আনেন।  তবে, এখনো তিনিই দেশটির অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও ধর্মীয় বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার মালিক।  মরক্কোর বেশ কয়েকটি দল এ সংস্কারকে যথেষ্ট নয় বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং নির্বাচনেও অংশ নেয়নি।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তৈয়ব চেরকাউই নির্বাচনোত্তর আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ইসলামপন্থী জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (পিজেডি) ৮০টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। দলটি ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী আববাস আল ফাসির ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ আসন পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দল জিতেছে ৪৫টি আসনে। এ দলটি গত ২০০৭ সাল থেকে পাঁচ দলীয় জোট সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছে। গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের কথা। পিজেডির সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল্লাহ বেনকিরানে সাংবাদিকদের জানান, আমরা মরক্কোবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, তারাই ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করেছেন। আমরা এতে দারুণ সন্তুষ্ট।
আংশিক ফলাফল ঘোষণার পরপরই প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম সাগর সৈকতবিধৌত রাজধানী শহর রাবাতের রাস্তায় রাস্তায় ব্যাপক আলোকসজ্জা, আতশবাজি, গাড়ির হর্ন বাজিয়ে এবং পার্টির প্রতীক সম্বলিত বর্ণিল ফেস্টুন উড়িয়ে সমর্থকরা আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করতে থাকে।
গত জুলাইয়ে একটি নতুন সংবিধানের দোহাই দিয়ে একতরফাভাবে গণভোট নাটকের মাধ্যমে বাদশাহ ৬ষ্ঠ মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রীর আসন পাকাপোক্ত করেন অধিকাংশ আসন কব্জা করে। গত মার্চে তিনি সংবিধান পরিবর্তনের ঘোষণা দিলে তিউনিশিয়ায় মিসর ও লিবিয়ার মত গণজাগরণের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হন। অবসান ঘটে দীর্ঘদিনের স্বৈরতন্ত্রের। প্রায় সাড়ে তিনশ' বছরের সুপ্রাচীন একনায়কতন্ত্রের সর্বশেষ উত্তরাধিকারী হিসেবে রাজা ৬ষ্ঠ মোহাম্মদের পতন ঘটে। নয়া সংবিধানে তার বিশাল ক্ষমতার অনেকগুলোর ওপর কার্যত নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হয়। পিজেডি প্রধান বলেন, তারা অন্যান্য দলের সাথে জোটবদ্ধ হবার পর দলের সদস্যপদ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
বেনকিরানে দ্য ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোর টিভি চ্যানেলকে বলেন, আমাদের দলীয় কর্মসূচি এবং ভবিষ্যৎ সরকারে যারা আমাদের সাথে জোটবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন করবেন তাদেরকে নিয়ে আমরা গণতন্ত্র এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজের পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে। তিনি বলেন, পিজেডি মরক্কোয় তার স্পেভাটার সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি করে এতদাঞ্চলে দেশটিকে একটি সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল দৃঢ় অবস্থানে উন্নীত করবে। পিজেডি তাদের সামাজিক কর্মসূচির মধ্যে গ্রীষ্মকালীন সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং মদ বিক্রির ওপর আপত্তি উত্থাপন করে। কিন্তু পরবর্তীতে তারা বৃহত্তর জনমতের বিষয় বিবেচনা করে এবং বেকারত্ব ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলে সে অবস্থান থেকে সরে আসে। এবারের নির্বাচনী প্রচারণাকালে সাধারণ ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রুতি দেয় যে, দারিদ্র্যকে অন্তত অর্ধেকে হ্রাস করে এবং চাকরির ক্ষেত্রে বেতন কমপক্ষে শতকরা ৫০ ভাগ বাড়ানো হবে।
প্রকাশিত: সোমবার ২৮ নবেম্বর ২০১১ | প্রিন্ট সংস্করণ

Popular Posts