Showing posts with label আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জামায়াত. Show all posts
Showing posts with label আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জামায়াত. Show all posts

Friday, January 27, 2017

শিবির সভাপতি ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদের বিশ্বব্যাপী মানবসেবায় নেতৃত্ব প্রদান

ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদ চট্টগাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদের কৃতি সন্তান।   তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।   তিনি দীর্ঘ বহু বছর যাবৎ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইসলামী সেবা সংস্থায় কর্মরত আছেন।   তিনি যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক ত্রাণ ও উন্নয়ন সংস্থা মুসলিম এইডের বহু দায়িত্ব সাফল্যের সাথে পালন করেন । ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই সংস্থার বৈদেশিক কর্মসূচির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  তিনি ফেইথ রিজেনের কমিউনিটি ও আন্তর্জাতিক কর্মসূচির প্রধান হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি চার বছর  মুসলিম এইডের সহকারী প্রধান নির্বাহী ছিলেন। সাহায্য সংস্থা ও কমিউনিটি উন্নয়ন কর্মসূচিতে তার ১০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি মুসলিম এইডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) হিসেবে নিয়োগ পান।  তার প্রতিক্রিয়ায় হামিদ হোসাইন আজাদ বলেছিলেন:  ‘এই চ্যালেঞ্জিং কাজের দায়িত্ব নিতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ। আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় ও সাহায্য কামনা করছি। আমি মুসলিম এইডকে ভালোবাসি এবং এর ল্ক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আমি সবসময়ই উৎসাহী। এই মহান সংগঠনের উন্নয়নে এবং মানবতার সেবায় আমি নিরলসভাবে কাজ করে যাবো ইনশাল্লাহ।’

উল্লেখ্য, দুর্যোগ-আক্রান্ত দেশ ও দরিদ্র মানুষের সেবার জন্য ১৯৮৫ সালে যুক্তরাজ্যে মুসলিম এইড প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে সংস্থাটি বিশ্বের ৭০টি দেশে তার সেবার পরিধি বিস্তৃত করেছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকেই সাহায্য করে থাকে মুসলিম এইড। এর ওয়েবসাইট এড্রেস: www.muslimaid.org 

মুসলিম দীর্ঘদিন দায়িত্বপালন শেষে ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদ যোগদান করেছেন যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংস্থা “মুনতাদা এইড” এ। আর নিয়োগ পান এর প্রধান নির্বাহী (CEO) হিসেবে। উল্লেখ্য যে “মুনতাদা এইড” দুনিয়াব্যাপী ১৮টি দেশে ২৪ টি সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে তাদের স্বেচ্ছাসেবী মূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দূর্গত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা, স্বাস্থ্যখাত, বিশুদ্ধ পানি ও শিক্ষাখাতসহ আর্তমানবতার সেবায় সাহায্যের বাড়িয়ে দেয়াসহ আরো বিভিন্ন সহযোগিতামূলক  কাজ  এ সংস্থাটি  করে থাকে। এর ওয়েবসাইট এড্রেস: www.muntadaaid.org । 
Facebook address: www.facebook.com/hamidh.azad

See these video: 

Friday, January 20, 2017

ও, আই, সি, গঠন ও জামায়াতে ইসলামীর অবদান


ও. আই. সি. গঠনের ক্ষেত্রে ও জামায়াতে ইসলামী তথা জামায়াত নেতাদের অবদান রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠাতা যুগশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহ:) মক্কা মুকার্রামায় ১৯৬২ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইসলামী সম্মেলনে যোগদান করেন এবং ইসলামী বিশ্বের সাথে সংযোগ সম্পর্ক স্থাপনকারী রাবেতায়ে আলমে ইসলামী নামক সংস্থার প্রতিষ্ঠায় আল্লামা মওদূদীর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি একান্ত ভাবে কামনা করতেন যে, বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ইসলামের ভিত্তিতে একটি কমনওয়েলথ গঠিত হোক। এ ম্পর্কে তিনি বার বার সওদী আরবের বাদশাহ শাহ  ফয়সালকে অনুরোধ জানান। অবশেষে ষাটের দশকের শেষাংশে মরক্কোতে অনুষ্ঠিত মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর শীর্ষ সম্মেলনে ইসলামী সেক্রেটারীয়েট সংস্থা গঠন করা হয়।  ১৯৬৯ সালে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে সকল সরকারী প্রতিনিধিদলের মধ্যে ব্যতিক্রম একমাত্র বেসরকারী ব্যক্তিত্ব হিসাবে আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ) উপস্থিত ছিলেন। কারণ তারই নিরবিচ্ছিন্ন সাধানার ফলশ্রুতিতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর এই ঐক্য সংস্থা বাস্তবরূপ লাভ করে। তিনি ওআইসির সামনে কতগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব রাখেন। তার মধ্যে অন্যতম মুসলমানদের একটি নিজস্ব সংবাদ সরবরাহ সংস্থা এবং একটি সম্মিলিত অস্ত্র নির্মাণ কারখানা প্রতিষ্ঠা। আল্লামা মওদূদীর ক্রমাগত অসুস্থাতার কারণে এসব বিষয়ে তিনি চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি এবং বিশেষ করে শাহ ফয়সালের শাহাদাতের পর ঐ সব প্রস্থাব ও পরামর্শগুলো কার্যকর করতে পারেননি। আল্লামা মওদূদী এবং বাদশাহ ফায়সালের মত ব্যক্তিত্বের অভাবে ওআইসির সত্যিকার রূপ প্রকট হয়নি। তথাপি এই ওআইসি মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী ঐক্যচেতনাকে জাগ্রত রেখেছে এবং কিছু না কিছু পরিমাণে কাজ ও হচ্ছে। ওআইসি গঠনে জামায়াতে ইসলামীর অবদান অবশ্যই আবিস্মরণীয় ঘটনা। 

Thursday, January 19, 2017

ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও আন্তর্জাতিকভাবে এর বিস্তার এবং জামায়াতে ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল   

সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহ:) সহ আরো কয়েকজন ইসলামী চিন্তাবিদদের চিন্তাধারা সমন্বয়ে গঠিত ইসলামী ব্যাংকের পরিকল্পনা ওআইসিতে গৃহীত হয়। ১৯৭৪ সালে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ওআইসি সদস্যভুক্ত মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে মুসলিম রাষ্ট্র সমূহের সক্রিয় সহযোগিতায় ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক নামের একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৭৫ সালের জেদ্দাকে কেন্দ্র করে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে সর্বপ্রথম ইসলমী উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর পূর্বেই সোশ্যাল ব্যাংক নামে মিশরে একটি শক্তিশালী ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর মুসলিম বিশ্বে ব্যাপকভাবে ইসলামী ব্যাাংক প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দুবাই, কুয়েত, সৌদী আরব প্রভৃতি দেশে বেশ কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশও ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার জন্য এগিয়ে আসে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। 
                                                        See this video:
(একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন)

ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীর অবদান
বাংলাদেশের আর্থিক খাতে একটি বড় পরিবর্তন আসে ১৯৮৩ সালে, যখন ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক প্রথম ব্যাংক - ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে সুদমুক্ত, অংশীদারিত্বভিত্তিক একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালুর পথ প্রশস্ত হয়। ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার এই উদ্যোগের পেছনে জামায়াতে ইসলামীর অবদান ছিল অনস্বীকার্য, যা আদর্শিক চিন্তা, সংগঠনিক প্রচেষ্টা, নেতৃত্ব ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়।

আদর্শিক প্রেক্ষাপট
জামায়াতে ইসলামীর মূল রাজনৈতিক ও আদর্শিক লক্ষ্য ইসলামী জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, যার অন্যতম স্তম্ভ সুদবিহীন অর্থনীতি। সুদভিত্তিক ব্যাংকিং ইসলামী বিধানের পরিপন্থী। এই আদর্শ থেকেই তারা ইসলামী ব্যাংকিং চালুর জন্য সচেতনতা সৃষ্টি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

নেতৃত্ব ও প্রতিষ্ঠান গঠনে ভূমিকা
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর প্রতিষ্ঠায় সরাসরি অংশ নেন জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা মীর কাসেম আলী, যিনি ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বিদেশি বিনিয়োগ সংগ্রহ, ব্যাংকের নীতিমালা প্রণয়ন এবং পরিচালনা পর্ষদ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়া জামায়াত-ঘনিষ্ঠ আরও অনেক অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী ব্যাংকের সাথে যুক্ত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক সংযোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা
জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন। বিশেষ করে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার ও অন্যান্য মুসলিম দেশের ইসলামী অর্থনীতিবিদ ও বিনিয়োগকারীদের সমর্থন আদায়ে তারা সক্রিয় ছিলেন। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও আল রাজি ব্যাংক-এর মতো প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এ বিনিয়োগ করে।

মানবসম্পদ ও আদর্শিক কর্মী
ব্যাংকটি পরিচালনার ক্ষেত্রে জামায়াতের আদর্শিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ দলের অন্যান্য সহযোগী সংগঠন থেকে আসা সদস্যরা ব্যাংকে নিয়োজিত হয়ে এর প্রসারে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। ফলে ব্যাংকটি শুধু একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি আদর্শিক মিশন হিসেবে পরিচালিত হতো।

সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
জামায়াতে ইসলামী ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে শুধু অর্থনৈতিক মুক্তির পথ হিসেবে নয়, বরং সমাজে ন্যায়ভিত্তিক একটি অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যম হিসেবেও উপস্থাপন করেছিল। তাদের এই প্রচেষ্টার ফলেই বাংলাদেশের আর্থিক খাতে ইসলামী ব্যাংকিং একটি গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় ধারায় পরিণত হয়েছে।

উপসংহার
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর প্রতিষ্ঠা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, যার মাধ্যমে দেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং চালু হয়। এই উদ্যোগের পেছনে জামায়াতে ইসলামীর আদর্শিক প্রভাব, সংগঠনিক দক্ষতা এবং নেতৃত্বের অবদান ছিল সুস্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ। আজ বাংলাদেশে যে ইসলামী ব্যাংকিং একটি শক্তিশালী খাত হিসেবে বিকাশ লাভ করেছে, তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
 
বি. দ্র. : ২০১৫ সালে নানা অভিযোগ তুলে আওয়ামী সরকার জামায়াত ইসলামীর কাছ থেকে ব্যাংকটির মালিকানা ছিনিয়ে নেয়। এরপর ব্যাংকটির পরিচালনায় পরিবর্তন আনা হয় এবং জামায়াতে ইসলামীর প্রভাব হ্রাস পায়। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান ও বিপ্লবে আওয়ামী অবৈধ দখলদার সরকার বিদায় হওয়ার পর পুনরায় ব্যাংকটিতে জামায়াতে ইসলামীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর কিছু পরে (ডিসেম্বর ২০২৪) বিএনপির এক নেতার সমালোচনার জবাবে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ইসলামী ব্যাংক দখল করেনি জামায়াতে ইসলামী, ডাকাতের বেশে নতুন ডাকাতরা ৫ আগস্টের পর ব্যাংক দখল করতে গিয়েছিল। তারা পালিয়ে এসেছে। জামায়াতে ইসলামী ব্যাংক দখল করেনি, বরং এই ব্যাংক তার মায়ের কোলে ফিরে এসেছে।

Wednesday, January 18, 2017

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে তুরস্কের প্রখ্যাত আলেম নুরুদ্দিন ইলদিজের লেখা একটি চিঠি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে তুরস্কের প্রখ্যাত আলেম, বহু গ্রন্থ প্রণেতা নুরুদ্দিন ইলদিজের লেখা একটি চিঠি: 
এই মহাবিশ্বের মালিক, মহা শক্তিধর মহান আল্লাহ তালার সালাম বর্ষিত হোক তোমাদের উপর, হে এশিয়ার বীর সেনানীগণ।তোমাদের অন্তর আজ হযরত (রা) হামযা (রা) , হযরত সুমাইয়া (রা) , হযরত ইয়াসসির (রা) , মিহরাবে শহীদ হওয়া হযরত উমার (রা)এর ঈমানের মত ঈমানে পরিপূর্ণ হয়েছে সালাম তোমাদের সেই প্রশান্ত আত্মার প্রতি।
আজ তোমরা, উহুদের সাহসী সেই যোদ্ধাদের প্রতিনিধি, আজ যারা তোমাদেরকে নির্মূল করতে চায় তারা জানে না যে তোমাদের এই রক্ত তোমাদের উত্তরসূরিদেরকে জাগিয়ে রাখবে যুগের পর যুগ , শতাব্দীর পর শতাব্দী। তারা মৃত্যুবরণ করবে, তাদের নিশানা মুছে যাবে, তাদের নাম মানব ইতিহাসে খুজেও পাওয়া যাবে না কিন্তু পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন এই মানবতা তোমাদেরকে স্মরণ করবে, তোমাদের এই ঢেলে দেওয়া রক্ত দিয়ে লিখব নতুুরিদেরকে, ভাঙ্গা কেল্লায় উঠবে ইসলামের বিজয় পতাকা, তোমাদের দেখে আসবে আর লাখো মুজাহিদ। তোমারা মানুষের অন্তরে, ফেরেশতাদের দলিলে বেঁচে থাকবে অনন্তকাল। ওরা কিয়ামাতের দিন নিকৃষ্ট হয়ে উঠবে আর তোমরা শহীদ হিসাবে বীরের বেশে কিয়ামতের দিন জেগে উঠবে।

হে এই সময়ের হামযাগন;
আব্দুল কাদের মোল্লা
মুহাম্মাদ কামারুযযামান
আলী আহসান মুজাহিদ
গোলাম আযম
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী
মৌলানা মতিউর রহমান নিজামী .................
আপনারা মৃত্যুকে হত্যা করেছেন। এই উম্মত আপনাদেরকে কক্ষনো ভুলে যাবে না। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের শাহাদাতকে কবুল করুন। পরবর্তী বংশধরদের মাঝে আপনাদের মর্যাদা বুলন্দ করুন।
আমরা শারীরিকভাবে হয়ত আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পারিনি, কিন্তু আমরা আপনাদেরকে ভালবাসি, অন্তর থেকে মহব্বত করি, আমরা আপাদেরকে দেখে ঈর্ষান্বিত হই। আমরা আপনাদেরকে আল্লাহ তালার কাছে সঁপে দিলাম। আল্লাহ তালার কাছে দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা আপনাদেরকে যেন হামযা (রা) এর সাথে রাখেন সকল শহীদদেরকে এক সাথে রাখেন।

আল্লাহ আপনাদের পথ খুলে দিন। আল্লাহ আপনাদের মর্যাদাকে আকাশের সমান বুলন্দ করুন। ফেরেশতাদের মত ডানা মেলে ঘুরে বেড়াও আরশে আযীমে। আমাদেরকেও সাথে রাখতে ভুলবেন না, আমাদেরকেও নিয়ে যান আপনাদের কাছে ।
তোমাদের উপর সালাম হে এশিয়ার বীর সেনানীরা।
হে উম্মতের সেনাপতিগণ, অগ্রগামী বীর সেনানীরা সালাম তোমাদের উপর সালাম।

Thursday, January 5, 2017

বসনিয়া-হার্জেগোভিনার স্বাধীনতা অর্জন, এর মর্মন্তুদ ইতিহাস ও প্রভাব-প্রতিক্রিয়া এবং জামায়াত ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা: এই দেশ একটি ফেডারেশন। মোট আয়তনের এক বড় অংশ জুড়ে বসনিয় সার্ব দের স্বায়ত্বশাষিত প্রজাতন্ত্র "স্প্রস্কা"। বাকি অংশে ক্রোয়েশিয় ও মুসলিম অধ্যুষিত। বর্তমানে জনসংখ্যার অন্তত ৫১% বসনিয়ান মুসলিম।

পূর্ব ইউরোপ থেকে কম্যুনিস্ট শাসন অবসানের পর যুগোশ্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে বসনিয়া-হার্জেগোভিনা।   এর প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপে কসোভা নামের আরেকটি রাষ্ট্র স্বাধীনতা অর্জন করে। বসনিয়া-হারর্জেগোভিনা রাস্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, প্রথম প্রেসিডেন্ট ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক আন্দোলনের নেতা আলী ইজ্জত বেগভিটস ইখওয়ানুল মুসলেমিন প্রভাবিত আল আজহার থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত প্রখ্যাত আলেম ও মোহাদ্দিস মোহাম্মদ খানজীর ছাত্র। ৯ টি উপদলের সমন্বয়ে গঠিত মুসলিম মুজাহিদ ফ্রন্টের অধিনায়ক ছিলেন সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহ:) এর পরিকল্পনা ও তত্ত্ববধানে প্রতিষ্ঠিত মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা প্রাপ্ত মাহমুদ কারজিতস। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের সাবেক নায়েবে আমীর মরহুম খলিল আহম্মদ হামেদী (রহ:) বলেন, ‌‌‌‌“বসনিয়া মুসলিম তরুনদের মাঝে ইসলামী জিহাদের উদগ্র বাসনার ফলশ্রুতিতে সেখানে শুরু হয় সার্ব বিরোধী সশস্র সংগ্রাম।   এ জিহাদে সেই যুবকরাই   অগ্রণী ভূূমিকা পালন করেন যারা আরব বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে অধ্যায়নরত ছিলেন। তারা মাওলানা মওদূদী (রহ:), শহীদ হাসান আল বান্না (রহ:) ও শহীদ সাইয়েদ কুতুব (রহ:) - এ সকল মহান সাধক পুরুষদের জিহাদী মন্ত্রে উজ্জীবিত হন (ইসলামী আন্দোলনের অতীত বর্তমান, পৃষ্ঠা ২৭)।

পূর্ব ইউরোপ থেকে কম্যুনিস্ট শাসন অবসানের পর যুগোশ্লাভিয়ার প্রদেশগুলো যেমন শ্লোভানিয়া, সার্বিয়া, ক্রোশিয়া, মন্টেনিগ্রো, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা এবং মেসিডোনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে। বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ১৯৯২ সালের ১লা মার্চ যুগোশ্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। স্বাধীনতার সপক্ষে অনুষ্ঠিত গণভোট সংখ্যালঘু সার্বরা ব্যতীত অধিকাংশ লোক তথা সংখ্যাগরিষ্ঠ সবনিয়া বসনিয়া মুসলমান ও সংখ্যালঘু খৃষ্টান ক্রোয়েমিয়ানরা ভোট প্রদান করে। ১৯৯২ সালে ইউরোপীয় জোট ও যুক্তরাষ্ট্র সবনিয়া-হার্জেগোভিনাকে স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯৯২ সালের মে মাসে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এর পূর্বে ১৯৯০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিম্নরূপ: ১) ইসলামী ডেমোক্রেটিক আন্দোলন ৮৬ আসন, ২) সার্ব ডেমোক্র্যটিক পার্টি ৭০ আসন, ৩) ক্রোয়েশিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফেডারেশন ৪৫ আসন, ৪) অন্যান্য সম্প্রদায়ের ও দল পেয়েছে ৩৯ আসন। ইসলামী ডেমোক্র্যাটিক আন্দোলনের প্রেসিডেন্ট আলী ইজ্জত বেগভিটসকে দেশের প্রেসিডেন্ট, সালাম সাবিতসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ক্রোশিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফেডারেশনের নেতা জিওরলিভিয়ানকে প্রধানমন্ত্রী, আরো ৪ জন ক্রোশিয়ান মন্ত্রী এবং দুইজন সার্বমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। পার্লামেন্টের স্পীকার হয় সার্ব সম্প্রদায়ের লোক।

১৯৯২ সালে সবনিয়া হারর্জেগোভিনা যুগোশ্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার পর যুগশ্লাভিয়ার সার্ব  সম্প্রদায় একে অস্বীকার করে এবং যুদ্ধ ঘোষনা করে। সার্ব শাসিত যুগোশ্লাভিয়ার বৃহৎ প্রদেশ সার্বিয়া বসনিয়া-হারর্জেগোভিনার অভ্যন্তরে দেড় লাখ সদস্যবিশিস্ট সার্ব মিলিশিয়া তৈরী করে। সংখ্যালঘু সার্ব সম্প্রদায় বসনিয়া-হারর্জেগোভিনার ভেতর সার্ব প্রজাতন্ত্র কায়েম করে তাকে সার্বিয়ার সাথে যুক্ত করতে চায়। বসনিয়ার  সার্ব নেতার নাম হচ্ছে রাদুভান কারাজিতস। অপরদিকে সার্ব শাসিত যুগোশ্লাভিয়া বৃহত্তর সার্বিয়া কায়েমের উদ্দেশ্যে বসনিয়া-হারর্জেগোভিনা দখল করতে চায়। এলক্ষ্যে সার্বরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সামষ্টিক উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে এবং ভয়াবহতম গণহত্যা, নারী-ধর্ষণ ও নির্যাতন চাপিয়ে দেয়। আর যুদ্ধের শুরুতেই জাতিসংঘ বসনিয়া-হারর্জেগোভিনার উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বসে। এ দিকে মুসলমানদের হাতে অস্ত্র আসার পথ বন্ধ, অন্যদিকে বসনিয়া হারর্জেগোভিনায় সার্বরা সাবেক যোগোশ্লাভিয়ার বৃহৎ প্রদেশ সার্বিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র লাভ করতে থাকে। এ অবস্থায় বসনিয়া মুসলমানদের নিরাপদ অঞ্চলের প্রতিরক্ষার জন্য পাকিস্তান তিন হাজার সৈন্য পাঠাতে চেয়েছিল, কিন্তু EC অর্থাৎ ইউরোপের গোষ্ঠী তা প্রত্যাখ্যান করে বসে। বৃটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জন মেজর ঘোষণা দেয় ইউরোপের বুকে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রের অস্তিত্ব সহ্য করা হবে না। রাশিয়ান পার্লামেন্ট সার্বিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ থেকে জাতিসংঘকে বিরত রাখার জন্য প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েৎসিনের প্রতি আহ্বান জানায়। কৃ্ষ্ঞ সাগর ও দানিয়ুব নদী দিয়ে রাশিয়ািন জাহাজগুলো সার্বিয়ায় সমরাস্ত্র ও খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেয়। অথচ ন্যাটো জাহাজগুলো এড্রিয়াটিক সাগরে পাহারা বসায়। কেননা এ পথে মুসলমানদের জন্য অস্ত্র আসতে পারে। এভাবে সম্মিলিত খৃস্ট শক্তি একটিি ক্ষুদ্র মুসলিম জাতিসত্বার বিরুদ্ধে ধ্বংশ অভিযান পরিচালনা করলেও পাশ্চাত্যের সেবাদাস মুসলিম সরকারসমূহ কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। বসনিয়া-হারর্জেগোভিনার মুসলমানদের উপর ভয়াবহতম গণহত্যা, নির্যাতন ও ধ্বংশ অভিযান চরমে পৌঁছলে এবং অপর দিকে নিতান্ত অসহায় অবস্থার মধ্যে মুসলমানদের সাহসী প্রতিরোধ সংগ্রামের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বব্যাপী মুসলামানদের মধ্যে বিক্ষোভ ও ঘৃণা জেগে উঠে। এ বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী সহ বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলনসমূহ। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতসহ  বিশ্বের অনেক স্থান থেকে বিপুল পরিমান অর্থ সংগ্রহ করে বসনিয়া মুসলমানদের সাহায্যার্থে প্রেরণ করে। এ অবস্থায় তুরস্কসহ কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্রের উদ্যোগে ওআইসি জাতিসংঘ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার ঘোষণা দেয়। বসনিয়ার নিপীড়িত মুসলিমদের পাশে দাড়ানোর সাহস যখন কেউ পাচ্ছিলো না তখন তুরস্কের প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান বিরোধীদলে থেকেও সব রকমের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। বসনিয়ার বিখ্যাত নেতা আলীয়া ইজ্জেত বেগভিচ যখন তার কাছে সাহায্যের জন্য আসেন এক মাসের মধ্যে ৩৬ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সেসময়ে বসনিয়ার একটি স্ট্র্যাটিজিক  পজিশনে অবস্থিত মার্সিডিজ ফ্যাক্টরীকে অস্ত্র ফ্যাক্টরীতে রূপান্তর করেন, তাও মাত্র ১১ মাসের মাথায়, তার উপর বিরোধীদলে থেকে। বসনিয়ার স্বাধীনতায় প্রফেসর এরবাকানের অবদান অনেকটা উহ্যই থেকে গিয়েছে, কারণ তিনি ডাক-ঢোল পিটানোর চেয়ে কাজে বিশ্বাসী ছিলেন।ক্ষমতায় থেকে হোক আর না থেকেই হোক, আমেরিকা, ইসরাঈল, ন্যাটো কাউকে পরোয়া না করে মুসলিমদের সহায়তায় সর্বদা পাশে দাড়িয়েছেন। বর্তমান সময়ের তার্কির সবচেয়ে বড় দাতব্য সংস্থা(IHH) তিনিই গড়েছিলেন ১৯৯২ সালে বসনিয়ায় সাহায্য প্রেরণের জন্য।  এছাড়া সারা বিশ্বের ইসলামী আন্দোলন সমূহের বহু সংখ্যক জিন্দাদিল মুজাহিদ বসনিয়া মুসলমানদের সাথে প্রত্যক্ষ জিহাদে অংশগ্রহণ করে।  তখনই ইউরোপীয় জোটসমূহ বসনিয়া-হারর্জেগোভিনার সমস্যার কোন প্রকার একটি সমাধানের ব্যবস্থা করে।

এখানে উল্লেখ্য যে, যুদ্ধ তীব্র রূপ নিলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর আওতায় ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশী সৈন্যরা বসনিয়া-হারজোগোভিনাতে প্রেরিত হন। তারা সার্বদের থেকে তুলনামূলক কম যুদ্ধ-উপকরণ দিয়ে সার্বদের বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ করেন। বাংলাদেশের বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ফজলুর রহমান বসনিয়ার বাংলাদেশী কন্টিংজেন্ট কমান্ডার সেলিম আক্তারের সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখতেন। পরে সার্বরা পরাজিত হয়। বসনিয়াবাসীরা এখনো বাংলাদেশেীদের এই অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।  

এখানে আমি (শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল) আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই। সেসময় সারা বাংলাদেশ জুড়ে বসনিয়াবাসীর জন্য ও বাংলাদেশী সৈন্যদের জন্য মসজিদে মসজিদে দোয়া করা হচ্ছিল। তার সাথে সাথে অত্যাচারী সার্বদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হচ্ছিল। সেসময় আমি বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় জামায়াতে ইসলামীর একজন থানা পর্যায়ের দায়িত্বশীল।  ১৯৯৪ সালের শেষ নাগাদ নাইক্ষ্যংছড়ি থানা সদরে আমার সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সভাপতির বক্তব্যে আমি আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ দেই। নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে বিপুল অর্থ কালেকশনে করে পাঠাই বসনিয়াতে পাঠানোর জন্য। এভাবে সারা পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা বসনিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে। 

Please browse these link: 

মিশরে ইখওয়ানুল মুসলেমীন, বিশ্বব্যাপী এর বিস্তার এবং জামায়াতে ইসলামী


১৯২৮ সালের মার্চ মাসে মিশরের ইমাম হাসান-আল-বান্না শহীদ রহ: এর নেতৃত্বে ইখওয়ানুল মুসলেমীন (মুসলিম ব্রাদারহুড) যাত্রা শুরু করে। তাঁর নেতৃত্বে ইখওয়ানুল মুসলেমীন পঞ্চাশের দশকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে। টাইমস অব লন্ডন পত্রিকার মতে- ১৯৪৮ সালে অর্থাৎ প্রতিষ্ঠা লাভের মাত্র ২০ বৎসর সময়ের মধ্যে ইখওয়ানের সক্রিয় সদস্যের সংখ্যা দাড়ায় নুন্যতম পাঁচ লক্ষ। 
১৯৪৮ সালের মে মাসে ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষনা দিয়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনীকে বিতারিত করা হয় নিজ আবাস ভূমি থেকে। শতকরা ৯২ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমেরিকা ও বৃটেনের বর্বরতার চরম নিদর্শন। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেনি ইখওয়ানুল মুসলেমীন। তারা ফিলিস্তিন যুদ্ধে মুজাহিদ বাহিনী প্রেরণ করে। এ যুদ্ধের বিবরণ ভুলে ধরেছেন ইখওয়ানের অন্যতম নেতা ওস্তাদ কামেল শরীফ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ইখওয়ানুল মিসলেমীন ফি হরবে ফিলিস্তিন অর্থাৎ ফিলিস্তিন যুদ্ধে ইখওয়ানুল মুসলেমীন গ্রন্থে। মুসলমানরা যখন ইসরাইলের সাথে একের পর এক পরাজয় বরণ করছিল তখন ইখওয়ানের মুজাহিদ বাহিনী অসাধারণ সফলতা অর্জন করে। ইখওয়ানের তীব্র আক্রমনের মুখে ইসরাইলের অবৈধ অস্তিত্ব মুছে যাওয়ার উপক্রম হয়। কখন ইহুদীদের মদদগার বৃটেন-রাশিয়া-আমরিকার চাপে তৎকালীন পুতুল রাজতান্ত্রিক সরকার ইখওয়ানের বিপ্লবী মুজাহিদ বাহিনীকে ফিলিস্তিন থেকে ফিরিয়ে আনে। পরে ইখওয়ানুল মুসলেমীনকে মিশরে বেআইনী ঘোষণা করে এবং কঠোর অত্যাচার নির্যাতন চাপিয়ে দেয়। ১৯৪৯ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারী ইমাম হাসান-আল-বান্নাকে প্রকাশ্যে গুলি করে শহীদ করা হয়। এরপর দীর্ঘ নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ক্ষমতালিপ্সু সামরিক চক্র বিদেশী শক্তির সহযোগিতায় মিশরে ইসলামী আন্দোলনের সাফল্য তখনকার মত তছনছ করে দেয়। নেতৃবৃন্দের শাহাদাত বরণ, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা-কর্মীর কারাবরণ ও দেশত্যাগে বাধ্যকরণ এবং নির্যাতনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সম্ভাবনাময় এ ইসলামী আন্দোলন স্তিমিত করে দেয় সম্রাজ্যবাদী-ইহুদীবাদী শক্তির দোসররা। ১৯৭১ সালের পর বর্বর নির্যাতন প্রশমিত হলেও ভয়-ভীতি, হুমকি-ধামকি দিয়ে সর্বদা বিচলিত রাখা হয়েছে। এরপরও সে আন্দোলন জীবন্ত ও গতিশীল। এরপর পার্লামেন্ট নির্বাচনে ইখওয়ানুল মুসলেমীন নিজ নামে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে। এজন্য তারা হিজবুল আহরাব ও হিজবুল আমলে ইশতারাফী নামক দুটি দলের সাথে জোটবদ্ধ হন। এ জোটের টিকেটে তারা ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে অংশ নেন এবং ৪২টি আসল লাভ করেন। বিজয়ী সংসদ সদস্যদের মধ্যে অন্যতম হলেন ইখওয়ানুল মুসলেমীনের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম হাসান-আল-বান্না শহীদের সুযোগ্য পুত্র এডভোকেট সাইফুল ইসলাম এবং ইখওয়ানুল মুসলেমীনের মুরশীদ আম হাসান আল হুদাইবীর সুযোগ্য পুত্র এডভোকেট মামুন আল হুদাইবী। উপরোক্ত দুইজন সংসদ সদস্যই মিশরের রাজধানী কায়রোর নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত। এছাড়া মিশরের বৃহৎ ও প্রভাবশালী পেশাজীবি সংগঠন সমূহে ইখওয়ান সদস্যরা অত্যন্ত সক্রিয় থাকেন । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা নেতৃত্ব দেন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইউনিয়ন, মেডিকেল ইউনিয়ন, ফার্মাসিষ্ট ইউনিয়ন, ল'ইয়ার্স ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠনে ইখওয়ান সদস্যরা নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে। এ সাফল্য ইখওয়ান স্বাভাবিক পরিস্থিতেতে অর্জন করেনি। বরং সকল প্রকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এ সাফল্য এসেছে। এরপর ২০০৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে ইখওয়ানের প্রার্থীরা মিসরের পার্লামেন্টের এক পঞ্চমাংশ আসন লাভ করেন। ২০১০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোটে ইখওয়ানের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে তারা অংশ নেয়নি। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি প্রবল গণ-অভ্যুত্থানের মুখে মিসরের স্বৈরশাসক হোসনী মুবারক পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ইখওয়াননুল মুসলিমিন আবার রাজনীতিতে প্রকাশ্যে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং নিজেদের রাজনৈতিক শাখার নাম দেয় ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি। ২০১২ সালের ৩০ জুন দেশটির প্রথম অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ মুসলিম ব্রাদারহুড  ৫১.৭৩ শতাংশ ভোট পায় এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ব্রাদার হুড নেতা মোহাম্মদ মুরসি। এই প্রথম দেশটিতে অবাধ ও  সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথম বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে মুহাম্মদ মুরসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এরপর বছর খানেকের মধ্যে ইহুদী ও খৃষ্টান ইসলাম বিদ্বেষী গোষ্ঠীর নীরব সম্মতিতে এবং সৌদি আরবসহ আরবের রাজতান্ত্রিক গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি ২০১৩ সালের জুলাই এ মিসরের অবাধ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসিকে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে। ক্ষমতা গ্রহণ করেন জেনারেল সিসি। এরপর মুরসীকে বন্ধী করা হয় এবং ইখওয়ানুল মুসলিমিনের উপর পূণরায় বর্বর নির্যাতন চাপিয়ে দেয়া হয়। একে ধ্বংশ করতে আগেও ব্যর্থ হয়েছিল এবং এবারও ব্যর্থ হবে ইনশাল্লাহ। 

বিস্তারিত জানার জন্য এই লিংকগুলো ব্রাউজ করুন :    
1) ইখওয়ানুল মুসলিমীন এক জীবন্ত ইতিহাস! 2) প্রেসিডেন্ট ড. মুরসির হত্যাকাণ্ড ও একটি বিভ্রান্তি 3) গণমানুষের মহান নেতা শহিদ মুরসি বিশ্ববাসীর প্রেরণা-১ 2) গণমানুষের মহান নেতা শহিদ মুরসি বিশ্ববাসীর প্রেরণা-২

ইখওয়ানুল মুসলেমীন ও জামায়াতে ইসলামী একই দেহে দুটি চোখ বা একই বৃক্ষে দুটি শাখার মত সংগঠন। এদুটি সংগঠন নানাভেবে একে অপরের দ্বারা শক্তিশালী হয়। সামান্য সামান্য বিপর্যয়ে যারা নানাভাবে নিরুৎসাহ বা হতাশবোধ করেন তাদের উচিত মিশরে ইখওয়ানের উপর আরোপিত নানা প্রতিকূলতা ও অত্যাচার-নির্যাতন থেকে শিক্ষা গ্রহন করা। 

মুসলিম ব্রাদারহুড বা ইখওয়ানুল মুসলেমীন বাহরাইন, ইরান, তুরস্ক, ইরাক, ইসরাইল, ফিলিস্তিন, জর্দান, কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব, সিরিয়া, আরব আমিরাত, ইয়েমেন, আলজেরিয়া, লিবিয়া, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, সোমালিয়া, সুদান, তিউনিসিয়া, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় সক্রিয়। ইউরোপের জার্মানি, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে ব্রাদারহুড ইসলাম ও রাজনীতির ওপর প্রকাশ্যে মত প্রকাশ এবং বিভিন্ন প্রকাশনা করে থাকে। মুসলিম ব্রাদারহুডের বহুল প্রচলিত স্লোগান হলো: ‘ইসলামই সমাধান’ এবং ‘বিশ্বাসীরা ভাই ভাই’। মিশরে ইখওয়ানুল মুসলেমীন আত্মপ্রকাশ করে সেখানে নির্যাতনের কারণে তারা সহজে নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যারা ইখওয়ানুল মুসলেমীনকে ধ্বংশ করতে চেয়েছিলো তাদের সে প্রচেষ্টা তাদের জন্য বুমেরাং হয়েছে।      

Tuesday, January 3, 2017

সুদানে ইখওয়ানুল মুসলেমিনের সাফল্য এবং জামায়াতে ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

সুদানের এক দুঃসময়ে বিগ্রেডিয়ার ওমর হাসান আল বশীরের নেতৃত্বে সামরিক বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামী সরকার ক্ষমতা দখল করে। পূর্ববর্তী সাদেক আল মাহদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বজনপ্রীতি, দূর্নীতি ও অযোগ্যতার ফলে সুদান ক্রমশ: দারিদ্রপীড়িত পরনির্ভরশীল রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। দক্ষিনের খৃষ্টান বিদ্রোহের কারণে রাষ্ট্রের অখন্ডতার চরম হুমকির সম্মুখীন হয়। জর্জ গারাঙ এর নেতৃত্বে দক্ষিনের খৃষ্টান বিদ্রোহ খৃষ্টীয় বিশ্বের সার্বিক সহায়তায় সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। এ অবস্থায় ১৯৮৯ সালের ৩০শে জুন বিগ্রেডিয়ার ওমর হাসান আল বশীর এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। তিনি ইখওয়ানুল মুসলেমীনের চিন্তাধারার অনুসারী ছিলেন। কাজেই ওমর হাসান আল বশীর সহযোগিতা চাইলে ইখওয়ান নেতা ড: হাসান তুরাবীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ইসলামিক ফ্রন্ট সহযোগিতা দানের সিদ্ধান্ত নেয় এবং বিপ্লবী সরকারের অংশগ্রহণ করে।
এ সরকারের মাধ্যমে প্রথমেই রাষ্ট্রীয় অখন্ডতার সমস্যার সমাধান করা হয়। গঠন করা হয় ইসলামী জিহাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ সুদানী জনগণের বাহিনী "পিপলস ডিফেন্স"। তারা সুদানী সেনাবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে। তাদের সাথে যোগ দেয় আফগান মুজাহিদরা। ফলে দক্ষিনের খৃষ্টান বিদ্রোহ পরাজয় বরণ করে এবং জেনারেল জর্জ গরাঙ সাঙ্গ পাঙ্গ সহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রে পলায়ন করে। রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা সমস্যা সমাধানের পর সুদান সরকার খাদ্যসমস্যা ও অর্থনৈতিক সমস্যার ও অসাধারণ সমাধান করে। ১৯৫৬ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সুদান ৮০ ভাগ খাদ্য (গম, ঘি ও চিনি) আমেরিকা থেকে লাভ করত। সুদানের বিরট উর্বর ভূমি থাকলেও যুগ যুগ ধরে অনাবাদী পড়ে ছিল। সেখানে জরুরী ভিত্তিতে ব্যাপক কৃষি কার্যক্রম গ্রহন করে মরুভূমির বুকে নীল নদের উভয় তীরে সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামলা নতুন শষ্য ভান্ডার গড়ে তোলা হয়। খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনের পর বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন এত বৃদ্ধি পায় যে, সুদান খাদ্যদ্রব্য রফতানী করতে শুরু করে। এছাড়া বস্ত্রসহ নিত্য প্রয়োজনীয় বহু সামগ্রীও রফতানী করতে শুরু করে। ইসলামী ব্যাংক সমূহের মাধ্যমে পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যবস্থা করে বেকারত্ব সমস্যার সামাধান করে। শিক্ষা সমস্যার সামাধেনও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তিনকোটি জনবসতির সুদানের নয়টি প্রদেশে তেইশটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয় এবং দেশজুড়ে শিক্ষার জাল বিস্তার করা হয়। সার্বিকভাবে ইসলামায়নের ক্ষেত্র ও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে সুদানের বিপ্লবী ইসলামী সরকার।

সুদানের ইসলামী সরকারের ব্যাপক সাফল্যে পাশ্চাত্য শক্তি ভীত হয়ে পড়ে। সুদানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আখ্যা দিয়ে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্র সুদানের উপর ক্ষেপনাস্ত্র হামলা 
চালায়। পাশ্চাত্যের সেবাদাস মিশর সহ অন্য রাষ্ট্রগুলো দিয়ে আগ্রাসনের হুমকি সৃষ্টি করে। সুদানের ইসলামী সরকারের অভ্যন্তরে বিভেদ সৃষ্টির সর্বাত্মক ষড়যন্ত্রে নিয়োজিত হয়।

ডঃ হাসান তুরাবীর নেতৃত্বাধীন ইখওয়ানুল মুসলেমীন নিয়ন্ত্রিত সুদানের সফল ইসলামী সরকারের সাথে জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় রুকন সম্মেলনে ইখওয়ানুল মুসলেমীনের একজন শীর্ষনেতা এবং সুদান সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি হাসান উসমান এমপি উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি ড: হাসান তুরাবীর বাণী নিয়ে এসেছিলেন।

সুদানের ইসলামী সরকারের সাফল্য সারাবিশ্বের ইসলামী আন্দোলনকে যখন আশান্বিত করছে তখন ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে খবর আসে যে,  প্রেসিডেন্ট ওমর হাসান আল বশির ড: হাসান তুরাবীর সাথে বিরোধের প্রেক্ষিতে পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়েছেন এবং ড: হাসান তুরাবীকে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল কংগ্রেসের সেক্রেটারী জেনারেল পদ থেকেও অপসারণ করা হয়েছে। বাইরে থেকে কিছু করতে ব্যর্থ হয়ে ভিতর থেকে বিরোধ ভাঙ্গন সৃষ্টি করে সাফল্য অর্জন করা পাশ্চাত্য শক্তির ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্রের একটি পলিসি। আভ্যন্তরীন কিছু দূর্বলতার কারনেও বিরোধী পক্ষ সুযোগ গ্রহণ করে থাকে। তবে নানা উত্থান পতনের ভিতর দিয়ে শিক্ষা লাভ করে ইসলামী আন্দোলন এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ইউরোপের উত্থানকালে ত্রিশ বছরব্যাপী, শত বছরব্যাপী ইত্যাদি যুদ্ধ-বিপর্যয় ইউরোপে হয়েছে। এরপর ও তারা বিশ্বব্যাপী বিপুল প্রাধান্য বিস্তার করেছে। কাজেই আশা করা যায় যে, সকল বিপর্যয় ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে ইসলামী শক্তি আগামী দিনে সারাবিশ্বে প্রধান্য বিস্তার করবে। বর্তমানে ইসলামী শক্তিসমূহকেও ঐক্যগঠন, ঐক্যকে জোরদারকরণ এবং অনৈক্য সৃষ্টির ব্যাহ্যিক আভ্যন্তরীন যে কোন প্রয়াসকে নস্যাৎ করার বিষয়ে সর্বদা সজাগ সচেষ্ট থাকতে হবে। 

Saturday, December 31, 2016

অধ্যাপক গোলাম আযমের ফর্মুলায় নোবেল বিজয় - মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত

মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত, ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রাক্তন সভাপতি,  প্রাক্তন নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক ছাত্রসংবাদ।   তার ওয়েবসাইট: https://yasinarafath.com। ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন - (www.facebook.com/ira.rdv/ ) পেইজে ১৪ই অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে উক্ত শিরোনামে তার একটি প্রবন্ধ পোষ্ট করা হয়। এই পোষ্টটি নীচে দেয়া হলো:
        এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ায় গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়তাকারী নাগরিক সমাজের চারটি সংগঠন। ২০১১ সালে তিউনিসিয়ার স্বৈরশাসন বিরোধী গণবিপ্লবের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার জন্য এই চার সংগঠনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। শান্তির মুকুটজয়ী নাগরিক সমাজের এ সংগঠনগুলো একত্রে ‘ন্যাশনাল ডায়ালগ কোয়ার্টেট’ নামে পরিচিত। পুরস্কৃত সংগঠন চারটি হচ্ছে তিউনিসিয়ান জেনারেল লেবার ইউনিয়ন(ইউজিটিটি), তিউনিসিয়ান এমপ্লয়ার্স ইউনিয়ন(ইউটিআইসিএ), তিউনিসিয়ান হিউম্যান রাইটস লিগ (এলটিডিএইচ) ও তিউনিসিয়ান অর্ডার অব লইয়ার্স। তিউনিসিয়ায় নাজুক ঐ পরিস্থিতিতে দেশটিকে সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধের হাত থেকে বাঁচাতে অধ্যাপক গোলাম আযমের ফর্মুলা “কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি" প্রতিষ্ঠা করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে এই চারটি সংগঠন বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করে।
       পুলিশি হয়রানি ও বেকারত্বের প্রতিবাদে একতরুণের শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতির ঘটনার জের ধরে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে তিউনিসিয়ায় অস্থিরতা দেখা দেয়। শুরু হয় একনায়ক জাইন আল আবেদিন বেন আলীর বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ। গণতন্ত্রকামী মানুষের টানা আন্দোলনের ফলে ওই বছরই পদত্যাগে বাধ্যহন ১৯৮৭ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা বেন আলী।
        বেন আলীর পতনের পর গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার জন্য উন্মুখ তিউনিসিয়ায় বড় ধাক্কা আসে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে। তখন বিরোধীদলীয় এক নেতা অস্ত্রধারীদের গুলিতেনিহত হন। ছয় মাসের মধ্যে সেটি ছিল তিউনিসিয়ায় দ্বিতীয় রাজনৈতিক হত্যা। এতে ২০১১-এর অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী দল এন্নাহদার নেতৃত্বাধীন জোটের পদত্যাগ দাবি করে বিরোধীরা।
           এরপর শুরু হয় ব্যাপক সহিংসতা ও বিক্ষোভ। এমন পরিস্থিতিতে বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা গড়ায় নেতৃত্ব দেয় নাগরিক নেতাদের ওই চার সংগঠন। সকল রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপের মাধ্যমে আলাপ আলোচনা করে প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। নতুন নির্বাচনের আগ পর্যন্ত নির্বাচিত পার্লামেন্টকে কাজ করে যেতে দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয় সকল রাজনৈতিক দল। নতুন সংবিধান রচনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৪-এর জানুয়ারিতে পদত্যাগ করে এন্নাহদা সরকার।এরপর সে বছরই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ নির্বাচন। তত্বাবধায়ক সরকার ব্যাবস্থার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচন তিউনিসিয়ার গণতন্ত্রে উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে ভুমিকা রাখে।
      উল্লেখ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার এ চমৎকার পদ্ধতি ৮০’র দশকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম। তিনি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে জামায়াত আয়োজিত এক জনসভায় এ ফর্মুলা পেশ করেন।
(দ্রষ্টব্য: অধ্যাপক গোলাম আজমের পক্ষ থেকে আব্বাস আলী খান বাইতুল মোকাররমের ঐ জনসভায় কেয়ারটেকার সরকারের ফর্মুলা উপস্থাপন করেন।)

See this video: 



Popular Posts