Thursday, January 5, 2017

নামাজ নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাদীন ও আছার


বসনিয়া-হার্জেগোভিনার স্বাধীনতা অর্জন, এর মর্মন্তুদ ইতিহাস ও প্রভাব-প্রতিক্রিয়া এবং জামায়াত ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা: এই দেশ একটি ফেডারেশন। মোট আয়তনের এক বড় অংশ জুড়ে বসনিয় সার্ব দের স্বায়ত্বশাষিত প্রজাতন্ত্র "স্প্রস্কা"। বাকি অংশে ক্রোয়েশিয় ও মুসলিম অধ্যুষিত। বর্তমানে জনসংখ্যার অন্তত ৫১% বসনিয়ান মুসলিম।

পূর্ব ইউরোপ থেকে কম্যুনিস্ট শাসন অবসানের পর যুগোশ্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে বসনিয়া-হার্জেগোভিনা।   এর প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপে কসোভা নামের আরেকটি রাষ্ট্র স্বাধীনতা অর্জন করে। বসনিয়া-হারর্জেগোভিনা রাস্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, প্রথম প্রেসিডেন্ট ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক আন্দোলনের নেতা আলী ইজ্জত বেগভিটস ইখওয়ানুল মুসলেমিন প্রভাবিত আল আজহার থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত প্রখ্যাত আলেম ও মোহাদ্দিস মোহাম্মদ খানজীর ছাত্র। ৯ টি উপদলের সমন্বয়ে গঠিত মুসলিম মুজাহিদ ফ্রন্টের অধিনায়ক ছিলেন সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহ:) এর পরিকল্পনা ও তত্ত্ববধানে প্রতিষ্ঠিত মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা প্রাপ্ত মাহমুদ কারজিতস। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের সাবেক নায়েবে আমীর মরহুম খলিল আহম্মদ হামেদী (রহ:) বলেন, ‌‌‌‌“বসনিয়া মুসলিম তরুনদের মাঝে ইসলামী জিহাদের উদগ্র বাসনার ফলশ্রুতিতে সেখানে শুরু হয় সার্ব বিরোধী সশস্র সংগ্রাম।   এ জিহাদে সেই যুবকরাই   অগ্রণী ভূূমিকা পালন করেন যারা আরব বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে অধ্যায়নরত ছিলেন। তারা মাওলানা মওদূদী (রহ:), শহীদ হাসান আল বান্না (রহ:) ও শহীদ সাইয়েদ কুতুব (রহ:) - এ সকল মহান সাধক পুরুষদের জিহাদী মন্ত্রে উজ্জীবিত হন (ইসলামী আন্দোলনের অতীত বর্তমান, পৃষ্ঠা ২৭)।

পূর্ব ইউরোপ থেকে কম্যুনিস্ট শাসন অবসানের পর যুগোশ্লাভিয়ার প্রদেশগুলো যেমন শ্লোভানিয়া, সার্বিয়া, ক্রোশিয়া, মন্টেনিগ্রো, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা এবং মেসিডোনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে। বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ১৯৯২ সালের ১লা মার্চ যুগোশ্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। স্বাধীনতার সপক্ষে অনুষ্ঠিত গণভোট সংখ্যালঘু সার্বরা ব্যতীত অধিকাংশ লোক তথা সংখ্যাগরিষ্ঠ সবনিয়া বসনিয়া মুসলমান ও সংখ্যালঘু খৃষ্টান ক্রোয়েমিয়ানরা ভোট প্রদান করে। ১৯৯২ সালে ইউরোপীয় জোট ও যুক্তরাষ্ট্র সবনিয়া-হার্জেগোভিনাকে স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯৯২ সালের মে মাসে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এর পূর্বে ১৯৯০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিম্নরূপ: ১) ইসলামী ডেমোক্রেটিক আন্দোলন ৮৬ আসন, ২) সার্ব ডেমোক্র্যটিক পার্টি ৭০ আসন, ৩) ক্রোয়েশিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফেডারেশন ৪৫ আসন, ৪) অন্যান্য সম্প্রদায়ের ও দল পেয়েছে ৩৯ আসন। ইসলামী ডেমোক্র্যাটিক আন্দোলনের প্রেসিডেন্ট আলী ইজ্জত বেগভিটসকে দেশের প্রেসিডেন্ট, সালাম সাবিতসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ক্রোশিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফেডারেশনের নেতা জিওরলিভিয়ানকে প্রধানমন্ত্রী, আরো ৪ জন ক্রোশিয়ান মন্ত্রী এবং দুইজন সার্বমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। পার্লামেন্টের স্পীকার হয় সার্ব সম্প্রদায়ের লোক।

১৯৯২ সালে সবনিয়া হারর্জেগোভিনা যুগোশ্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার পর যুগশ্লাভিয়ার সার্ব  সম্প্রদায় একে অস্বীকার করে এবং যুদ্ধ ঘোষনা করে। সার্ব শাসিত যুগোশ্লাভিয়ার বৃহৎ প্রদেশ সার্বিয়া বসনিয়া-হারর্জেগোভিনার অভ্যন্তরে দেড় লাখ সদস্যবিশিস্ট সার্ব মিলিশিয়া তৈরী করে। সংখ্যালঘু সার্ব সম্প্রদায় বসনিয়া-হারর্জেগোভিনার ভেতর সার্ব প্রজাতন্ত্র কায়েম করে তাকে সার্বিয়ার সাথে যুক্ত করতে চায়। বসনিয়ার  সার্ব নেতার নাম হচ্ছে রাদুভান কারাজিতস। অপরদিকে সার্ব শাসিত যুগোশ্লাভিয়া বৃহত্তর সার্বিয়া কায়েমের উদ্দেশ্যে বসনিয়া-হারর্জেগোভিনা দখল করতে চায়। এলক্ষ্যে সার্বরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সামষ্টিক উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে এবং ভয়াবহতম গণহত্যা, নারী-ধর্ষণ ও নির্যাতন চাপিয়ে দেয়। আর যুদ্ধের শুরুতেই জাতিসংঘ বসনিয়া-হারর্জেগোভিনার উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বসে। এ দিকে মুসলমানদের হাতে অস্ত্র আসার পথ বন্ধ, অন্যদিকে বসনিয়া হারর্জেগোভিনায় সার্বরা সাবেক যোগোশ্লাভিয়ার বৃহৎ প্রদেশ সার্বিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র লাভ করতে থাকে। এ অবস্থায় বসনিয়া মুসলমানদের নিরাপদ অঞ্চলের প্রতিরক্ষার জন্য পাকিস্তান তিন হাজার সৈন্য পাঠাতে চেয়েছিল, কিন্তু EC অর্থাৎ ইউরোপের গোষ্ঠী তা প্রত্যাখ্যান করে বসে। বৃটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জন মেজর ঘোষণা দেয় ইউরোপের বুকে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রের অস্তিত্ব সহ্য করা হবে না। রাশিয়ান পার্লামেন্ট সার্বিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ থেকে জাতিসংঘকে বিরত রাখার জন্য প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েৎসিনের প্রতি আহ্বান জানায়। কৃ্ষ্ঞ সাগর ও দানিয়ুব নদী দিয়ে রাশিয়ািন জাহাজগুলো সার্বিয়ায় সমরাস্ত্র ও খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেয়। অথচ ন্যাটো জাহাজগুলো এড্রিয়াটিক সাগরে পাহারা বসায়। কেননা এ পথে মুসলমানদের জন্য অস্ত্র আসতে পারে। এভাবে সম্মিলিত খৃস্ট শক্তি একটিি ক্ষুদ্র মুসলিম জাতিসত্বার বিরুদ্ধে ধ্বংশ অভিযান পরিচালনা করলেও পাশ্চাত্যের সেবাদাস মুসলিম সরকারসমূহ কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। বসনিয়া-হারর্জেগোভিনার মুসলমানদের উপর ভয়াবহতম গণহত্যা, নির্যাতন ও ধ্বংশ অভিযান চরমে পৌঁছলে এবং অপর দিকে নিতান্ত অসহায় অবস্থার মধ্যে মুসলমানদের সাহসী প্রতিরোধ সংগ্রামের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বব্যাপী মুসলামানদের মধ্যে বিক্ষোভ ও ঘৃণা জেগে উঠে। এ বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী সহ বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলনসমূহ। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতসহ  বিশ্বের অনেক স্থান থেকে বিপুল পরিমান অর্থ সংগ্রহ করে বসনিয়া মুসলমানদের সাহায্যার্থে প্রেরণ করে। এ অবস্থায় তুরস্কসহ কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্রের উদ্যোগে ওআইসি জাতিসংঘ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার ঘোষণা দেয়। বসনিয়ার নিপীড়িত মুসলিমদের পাশে দাড়ানোর সাহস যখন কেউ পাচ্ছিলো না তখন তুরস্কের প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান বিরোধীদলে থেকেও সব রকমের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। বসনিয়ার বিখ্যাত নেতা আলীয়া ইজ্জেত বেগভিচ যখন তার কাছে সাহায্যের জন্য আসেন এক মাসের মধ্যে ৩৬ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সেসময়ে বসনিয়ার একটি স্ট্র্যাটিজিক  পজিশনে অবস্থিত মার্সিডিজ ফ্যাক্টরীকে অস্ত্র ফ্যাক্টরীতে রূপান্তর করেন, তাও মাত্র ১১ মাসের মাথায়, তার উপর বিরোধীদলে থেকে। বসনিয়ার স্বাধীনতায় প্রফেসর এরবাকানের অবদান অনেকটা উহ্যই থেকে গিয়েছে, কারণ তিনি ডাক-ঢোল পিটানোর চেয়ে কাজে বিশ্বাসী ছিলেন।ক্ষমতায় থেকে হোক আর না থেকেই হোক, আমেরিকা, ইসরাঈল, ন্যাটো কাউকে পরোয়া না করে মুসলিমদের সহায়তায় সর্বদা পাশে দাড়িয়েছেন। বর্তমান সময়ের তার্কির সবচেয়ে বড় দাতব্য সংস্থা(IHH) তিনিই গড়েছিলেন ১৯৯২ সালে বসনিয়ায় সাহায্য প্রেরণের জন্য।  এছাড়া সারা বিশ্বের ইসলামী আন্দোলন সমূহের বহু সংখ্যক জিন্দাদিল মুজাহিদ বসনিয়া মুসলমানদের সাথে প্রত্যক্ষ জিহাদে অংশগ্রহণ করে।  তখনই ইউরোপীয় জোটসমূহ বসনিয়া-হারর্জেগোভিনার সমস্যার কোন প্রকার একটি সমাধানের ব্যবস্থা করে।

এখানে উল্লেখ্য যে, যুদ্ধ তীব্র রূপ নিলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর আওতায় ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশী সৈন্যরা বসনিয়া-হারজোগোভিনাতে প্রেরিত হন। তারা সার্বদের থেকে তুলনামূলক কম যুদ্ধ-উপকরণ দিয়ে সার্বদের বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ করেন। বাংলাদেশের বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ফজলুর রহমান বসনিয়ার বাংলাদেশী কন্টিংজেন্ট কমান্ডার সেলিম আক্তারের সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখতেন। পরে সার্বরা পরাজিত হয়। বসনিয়াবাসীরা এখনো বাংলাদেশেীদের এই অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।  

এখানে আমি (শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল) আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই। সেসময় সারা বাংলাদেশ জুড়ে বসনিয়াবাসীর জন্য ও বাংলাদেশী সৈন্যদের জন্য মসজিদে মসজিদে দোয়া করা হচ্ছিল। তার সাথে সাথে অত্যাচারী সার্বদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হচ্ছিল। সেসময় আমি বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় জামায়াতে ইসলামীর একজন থানা পর্যায়ের দায়িত্বশীল।  ১৯৯৪ সালের শেষ নাগাদ নাইক্ষ্যংছড়ি থানা সদরে আমার সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সভাপতির বক্তব্যে আমি আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ দেই। নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে বিপুল অর্থ কালেকশনে করে পাঠাই বসনিয়াতে পাঠানোর জন্য। এভাবে সারা পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা বসনিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে। 

Please browse these link: 

গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী

বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে জড়িয়ে আছে জামায়াতে ইসলামীর নাম।  দেশের পক্ষে জনগনের পক্ষে ভূমিকা পালনে সব সময় সবার আগে থাকে জামায়াতে ইসলামী।  অংশ নিয়েছে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিটি নির্বাচনে।  জনগনের পক্ষে কথা বলেছে প্রতিটি জাতীয় সংসদে।  তাই এ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দেশ ও জনগণের পক্ষে ভূমিকা পালন করতে গিয়ে নানা জুলুম নিপীড়ণের শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়তই।  অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের।  পঙ্গুত্ব বরণ করেছে জামায়াতের অগনিত নেতাকর্মী।  শত জুলুম নির্যাতনের মধ্যেও গণমানুষের এই আন্দোলন কখনই থেমে থাকবে না।  স্বাধীনতা উত্তরকালে হত্যা করা হয় বহুদলীয় গণতন্ত্র।  এর আগে থেকেই নিষিদ্ধ ছিল ইসলামের কথা বলে রাজনীতি করার অধিকার।
একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বিলুপ্তি
১৯৭৮ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক ফরমান জারি করে একদলীয় ব্যবস্থার বাতিল করে বহুদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।  এর আগে ১৯৭৬ সালের ৩রা মে রাষ্ট্রপতির জারিকৃত একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ নম্বর ও অনুচ্ছেদটি বাতিল করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উপর আরোপিত বিধি নিষেধ তুলে নেয়া হয়।

ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ গঠন
১৯৭৭ সালের ৩০ মে গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গৃহিত পদক্ষেপগুলো অনুমোদিত হওয়ায় ইসলামের নামে রাজনৈতিক দল গঠন করার পথে আর কোন বাধা রইলো না।১৯৭৬ সালের ২৪ আগষ্ট ডেমোক্রেটিক পার্টি, নেযামে ইসলাম পার্টি, খেলাফতে রব্বনী পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (IDL) নামে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম গড়ে তোলেন।  মাওলানা ছিদ্দিক আহমদকে (নেযামে ইসলাম পার্টি) চেয়ারম্যান, মাওলানা আবদুর রহীম (জামায়াতে ইসলামী), মাওলানা আবদুস সুবহান (জামায়াতে ইসলামী), এডভোকেট সা’দ আহমদকে (জামায়াতে ইসলামী) ভাইস চেয়ারম্যান এবং এডভোকেট শফিকুর রহমানকে (ডেমোক্রেটিক লীগ) সেক্রেটারি জেনারেল করে এর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।  ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ দল অংশ গ্রহন করে।

২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচন।  এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ২০৭টি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ৩৯টি এবং মুসলিম লীগ ১৪টি আসনে বিজয়ী হয়।  ইসলামিক ডেমোক্রেটি লীগ থেকে মনোনীত জামায়াতে ইসলামীর ৬জন সদস্য জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।  বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটাই প্রথম উপস্থিতি।

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ
১৯৭৯ সালের ২৫,২৬ ও ২৭ মে ঢাকাস্থ ইডেন হোটেল প্রাঙ্গনে একটি কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আব্বাস আলী খানের আহ্বানে এই কনভেনশনে উপস্থিত হন সারা বাংলাদেশ থেকে আগত ৪৫০ জন সদস্য। এই সম্মেলনে একটি নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়।  সেই গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালের ২৭ মে থেকে চারদফা পূর্নাঙ্গ কর্মসূচি নিয়ে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর কর্মতৎপরতা শুরু করে।

কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা প্রণয়ন
১৯৮০ সালের মাঝামাঝি আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকার সংক্রান্ত একটি রূপরেখা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের অধিবেশনে পেশ করেন।  ১৯৮০ সালের ৭ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান রমনা গ্রীনে আহুত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই রূপরেখা প্রকাশ করেন।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যুগপৎ আন্দোলন
আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোট এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট কিছু কিছু যুগপৎ কর্মসূচি দিতে থাকে।  ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর ১৫ দলীয় জোট ও ৭ দলীয় জোট সচিবায়ল ঘেরাও কর্মসূচি দেয়। এ কর্মসূচিতে জনগনের তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।  স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার তার শাসন আরো দৃঢ় করে।  বন্ধ করে দেয়  রাজনৈতিক তৎপরতা। এই সময় জামায়াতে ইসলামীর লিয়াজো কমিটি দুই নেত্রীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে অগনতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরন করে গনতন্ত্রে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জামায়াতে ইসলামীর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে।  এই বক্তব্যের প্রতি তারা ইতিবাচব মনোভঙ্গি ব্যক্ত করেন। তখন থেকে ১৫ দলীয় জোট ও ৭ দলীয় জোটের সাথে জামায়াতে ইসলামীর লিয়াজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে থাকে।  ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বিচারপতি আহসান উদ্দীন চৌধুরীকে সরিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহন করেন।

তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৮৬ সালের ৭ই মে জাতীয় সংসদের তৃতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  নিজ নামে জামায়াতে ইসলামীর এটাই ছিলে জাতীয় সংসদে প্রথম নির্বাচনে অংশ গ্রহন।  জামায়াতে ইসলামী ৭৬টি আসনে নমিনী দিয়েছিল।  এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়।  এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৫৮টি, আওয়ামীলীগ ৯৬টি, জামায়াতে ইসলামী ১০টি, জাসদ ৪টি, অন্যান্য দল ১০টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২২টি আসনে বিজয়ী হয়।  বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটা দ্বিতীয় উপস্থিতি।

সংসদ থেকে পদত্যাগ
১৯৮৭ সালে রাষ্ট্রপতি এরশাদের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন গড়েে ওঠে।  ১৯৮৭ সালের ৩ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর ১০জন সংসদ সদস্য স্পিকার শামসুল হুদা চৌধুরীর নিকট গিয়ে পদত্যাগপত্র পেশ করেন।  আওয়ামীলীগ সদস্যগণও পদত্যাগ করবেন বলে জানান।  কিন্তু তাদের নেত্রী বিদেশে থাকায় তাদের সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হচ্ছিল।  ঠিক এই অবস্থায় ৬ ডিসেম্বর এরশাদ জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেন।  এতে আওয়ামী লীগহ বেশ বেকায়দায় পড়ে।

৪র্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  আন্দোলনরত দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করে।

যুগপৎ আন্দোলন
১৯৮৯ সালের অক্টোবর মাসে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ৮ দলীয় জোট, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট , বামদের ৫ দলীয় জোট এবং জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের দাবীতে আন্দোলন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।  এর ফলে চাঙ্গা হয়ে উঠে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন।  অনেক বিলম্বে হলেও জামায়াতে ইসলামীর কেয়ারটেকার সরকারের দাবী জাতীয় দাবীতে পরিণত হয়।  ১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বের পৃথক পৃথক সমাবেশ থেকে ৮ দলীয় জােট, ৭ দলীয় জোট, ৫ দলীয় জোট এবং জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা প্রকাশ করে।  ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়।  জারি করা হয় কারফিউ। ছাত্র-জনতা কারফিউ ভেঙ্গে মিছিল করতে থাকে।  আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী এরশাদ পদত্যাগ করেন।  গঠিত হয় প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে দেশের প্রথম কেয়ারটেকার সরকার।

পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামীলীগ ৮৬টি, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৩৫টি, জামায়াতে ইসলামী ১৮টি, অন্যান্যরা ১৯টি আসনে বিজয়ী হয়।  এই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ২২২ জন প্রার্থী দিয়েছিল।  ১৮জন বিজয়ী হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটা তৃতীয় উপস্থিতি।

বিএনপিকে সরকার গঠনে সমর্থন
পঞ্চম জাতীয় সংসদ ছিলো একটি ঝুলন্ত সংসদ। সরকার গঠনের জন্য কমপক্ষে ১৫১টি আসন প্রয়োজন।  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৪০টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হলেও সরকার গঠনের জন্য কমপক্ষে আরো ১১ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন ছিলো।  আওয়ামী লীগের ৮৮টি আসনের সাথে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ৩৫টি আসন এবং অন্যান্য ১৯টি আসন মিলে জোটবদ্ধ হলে আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪২টি। তার মানে, আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ছিলো আরো ৯ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন।  জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন ছাড়া না বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, না আওয়ামী লীগের পক্ষে সরকার গঠন সম্ভব হচ্ছিলো।  এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা আমির হোসেন আমুকে জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম শীর্ষ নেতা জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নিকট প্রেরণ করেন এবং বেশ কয়েকটি মন্ত্রিত্ব নিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে আওয়ামী লীগের সাথে কোয়ালিশন সরকারে যোগ দানের আহ্বান জানান।  এই দিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে দলটির তৎকালীন মহাসচিব আবদুস সালাম তালুকদার জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খানের বরাবরে সরকার গঠনে তাঁদের দলকে সমর্থন করার জন্য অনুরোধপত্র পাঠান।  ১১ই মার্চ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও অ্যাডভোকেট শেখ আনছার আলী অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের নিকট সমর্থনপত্রটি হস্তান্তর করেন।
২৮ শে মার্চ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৩০টি মহিলা আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ২৮ জন এবং জামায়াতে ইসলামীর ২ জন নমিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।  জামায়াতে ইসলামীর দু’জন মহিলা সংসদ সদস্য ছিলেন- হাফিযা আসমা খাতুন ও খন্দকার রাশেদা খাতুন।

সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তনে ভূমিকা পালন
১৯৭২ সনে প্রবর্তিত সরকার পদ্ধতি ছিলো সংসদীয় বা পার্লামেন্টারি।  ১৯৭৫ সনের ২৫ শে জানুয়ারি জাতীয় সংসদে গৃহীত সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী অনুযায়ী দেশে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি বা প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতি চালু হয়।  ১৯৯১ সন পর্যন্ত দেশে প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতিই চালু ছিলো। ১৯৯১ সনে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর  রাজনৈতিক দলগুলো সরকারপদ্ধতি নিয়ে নতুন করে মতামত ব্যক্ত করা শুরু করে।  প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি কোন মন্দ পদ্ধতি নয়। এই পদ্ধতি সফলভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চালু রয়েছে।  তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি  স্বৈরাচারী শাসনে রূপান্তরিত হওয়ার বহু নমুনা রয়েছে।  এই পদ্ধতিতে একই ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান হন বিধায়  স্বৈরশাসনের রূপ নেয়ার ঝুঁকি থাকে।  সংসদীয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান হন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি।  সংসদীয় পদ্ধতি ব্রিটেনে সফলভাবে প্রচলিত রয়েছে কয়েক শতাব্দী ধরে।  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গোড়া থেকেই প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতিতে বিশ্বাসী ছিলো।  প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও একই মতের অনুসারী ছিলেন।  আওয়ামী লীগ গোড়াতে সংসদীয় পদ্ধতি প্রবর্তন করে পরে প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতি চালু করে।  পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে  রাজনৈতিকভাবে দারুণ বেকায়দায় পড়ে।  সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা ছাড়া দলটির কোন বিকল্প পথ ছিলো না।  আর সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তনের দাবি ছাড়া অন্য কোন দাবি নিয়ে মাঠে নেমে কোন ফায়দা হতো না।  অতএব আওয়ামী লীগ এই দাবি নিয়েই সোচ্চার হয় এবং সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল জমা দেয়।  জামায়াতে ইসলামীর লিয়াজোঁ কমিটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি চালু করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে।  এই বিষয়ে মতবিনিময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীরসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাথে বসতে চাইলেন।  মিটিংয়ের তারিখ, সময় নির্ধারিত হয়।  মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে ছিলেন আবদুস সালাম তালুকদার ও কর্নেল (অব:) মুস্তাফিজুর রহমান।  জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খানের সাথে ছিলেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান।  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতির পক্ষে যুক্তি পেশ করে।  জামায়াতে ইসলামী সংসদীয় পদ্ধতির পক্ষে যুক্তি পেশ করে।  এইভাবেই মিটিং শেষ হয়ে যায়।  সুখের বিষয়, ঐ রাতেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সংসদীয় সরকার পদ্ধতির পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয় এবং জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল উত্থাপনের আয়োজন সম্পন্ন করে।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতে ইসলামীর যুগপৎ আন্দোলনের ফলেই ‣স্বরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন ঘটে।  প্রতিষ্ঠিত হয় বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের পরিচালনাধীন কেয়ারটেকার সরকার।  এই কেয়ারটেকার সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে সক্ষম হয়। জামায়াতে ইসলামীর ১৮ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সরকার গঠন করে। নবগঠিত সরকারের উচিত ছিলো অবিলম্বে সংবিধানে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি সংযোজিত করা।  রহস্যজনক কারণে সরকার কেয়ারটেকার পদ্ধতি সংবিধানে সংযোজন করার ব্যাপারে অনীহা প্রদর্শন করতে থাকে।  জামায়াতে ইসলামী, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি সংসদে উত্থাপনের জন্য কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতি বিল জমা দেয়।  কিন্তু সরকারি দলের সিদ্ধান্ত ছাড়া এই বিষয়ে আলোচনা শুরু হতে পারছিলো না।  সরকারের অপ্রত্যাশিত মনোভঙ্গি ও ভূমিকার কারণে  রাজনৈতিক অঙ্গন আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।  ফলে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতি সংবিধানে সংযোজনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হয়। জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠনে যেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে সহযোগিতা করলো, সেই দলের সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলনে নামতে বাধ্য হলো।  এক পর্যায়ে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে।  সরকারের পক্ষে মেয়াদ পূর্ণ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতেই সরকার ১৯৯৬ সনের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে।  আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী এই নির্বাচন বর্জন করে।  এই অস্বাভাবিক নির্বাচনের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সরকার গঠন করে।  এই সরকার দুই সপ্তাহের মধ্যে সংবিধানে কেয়ারটেকার পদ্ধতি সংযোজন করে পদত্যাগ করে।

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৯৬ সনের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ।  কেয়ারটেকার সরকারপ্রধান ছিলেন বিচারপতি মুহাম্মাদ হাবিবুর রহমান।  নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা মাক্কায় গিয়ে উমরা পালন করেন।  দেশে ফিরে ইহরামের পট্টিবাঁধা অবস্থায় তাসবিহ হাতে নিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচার অভিযানে নামেন।  গোটা নির্বাচনী অভিযানে তিনি দুই হাত জোড় করে জনগণের নিকট দলের অতীত ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং দলটিকে আরেকবার ক্ষমতাসীন করার জন্য বিনীতভাবে ভোটারদের প্রতি আবেদন জানান। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১১৬টি আসন, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৩২টি আসন এবং জামায়াতে ইসলামী ৩টি আসন লাভ করে। জামায়াতে ইসলামী থেকে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত তিনজন সদস্য হচ্ছেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (পিরোজপুর), কাজী শামসুর রহমান (সাতক্ষীরা) এবং মিজানুর রহমান চৌধুরী (নীলফামারী) বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটি চতুর্থ উপস্থিতি।  জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন।

চারদলীয় জোট গঠন
১৯৯৯ সনের ৩০শে নভেম্বর ২৯ মিন্টো রোডে অনুষ্ঠিত বৈঠক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আওয়ামী দুঃশাসন থেকে দেশকে উদ্ধার করার সংকল্প নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করেন এবং একটি ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ
২০০১ সনের ১লা অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকালে রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ। কেয়ারটেকার সরকার প্রধান ছিলেন বিচারপতি লতিফুর রহমান।  শেখ হাসিনা ক্ষমতা ত্যাগ করার পূর্বে প্রশাসন, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনে তাঁর পছন্দের ব্যক্তিদেরকেই বসিয়ে যান।  ২০০১ সনের ১লা অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আকস্মিকভাবে চারদলীয় জোট ত্যাগ করেন।  তবে নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ চারদলীয় জোটে থেকে যায়।  রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ এবং কেয়ারটেকার সরকার প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এমন এক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন যা পূর্ববর্তী দু’টি কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের চেয়েও
অধিকতর সুষ্ঠু হয়েছিলো। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৯৩টি আসন, আওয়ামী লীগ ৬২টি আসন এবং জামায়াতে ইসলামী ১৭টি আসন লাভ করে।  সংসদের মহিলা আসনগুলো থেকে জামায়াতে ইসলামী ৪টি আসন লাভ করে।  বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটি পঞ্চম উপস্থিতি।
প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে কৃষিমন্ত্রী এবং সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। এই নির্বাচনে পরাজিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা বেসামাল হয়ে পড়েন।  সচেতন ভোটারগণ তার সাজানো বাগান তছনছ করে দেওয়ায় তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। তিনি নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেন।  তিনি রাষ্ট্রপতি, কেয়ারটেকার সরকারপ্রধান, নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।

জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাস ও ভায়োলেন্স বিরোধী গণতান্ত্রিক দল
জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাস ও ভায়োলেন্স বিরোধী একটি গণতান্ত্রিক  রাজনৈতিক দল।  প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে জামায়াত কখনই সন্ত্রাস করেনি, সন্ত্রাসকে সমর্থন করেনি। এখন হরতাল করলেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা বুলেট বোমার মুখে সুশৃংখলভাবে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামীলীগ। এসেই দেশ ও জাতি বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।  দেশে গনতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্র ধীরে ধীরে সংকোচিত হতে থাকে।  বিরোধীদলের সভাসমাবেশে বাধা দেয়া শুরু হয়।  এক পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর সভা সমাবেশ অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।  ধীরে ধীরে ঘরোয়া বৈঠক বন্ধ করে দেয়া হয়।  জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বানোয়াট অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।  তারপরও নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালনে কোন ধরনের সন্ত্রাস বা ভায়োলেন্সের পথ বেছে নেয়নি।  ২০১১ সালে জামায়াতকে মাঠেই নামতে দেয়নি সরকার।  ২০১১ সালের শেষ দিকে রাজধানীতে মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী। পুলিশের প্রচন্ড বাধাঁ গোলাগুলির পর জামায়াতে ইসলামী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছে।  আজ পর্যন্ত কোথায়ও অস্ত্র কিংবা বেআইনী কোন জিনিস তারা হাতে তুলে নেয়নি। ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামী।  সে সমাবেশে পুলিশ বাধা দেয়নি বলে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশ হলেও কোন ধরনের ভায়োয়েন্সের ঘটনা ঘটেনি।  বরং সে সমাবেশে জামায়াতের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করার ঘটনাও প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ববাসী।  এতে প্রমাণিত হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বিশ্বাস করে না।
সরকার শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধী মত দলনের অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নির্মূল করার জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে।  যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবু্যুনালের আইন, এর গঠন ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে দেশে বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।  এর প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম বন্ধ করতে জাতিসংঘ থেকে শুরু করেছে আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংগঠন, বিশেষজ্ঞগণ, ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।  কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি।
এ বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মোফাসিস্রে কুরআন, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ফাঁসির দন্ড ঘোষণা করে বিতর্কিত আদালত-আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায় ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সারাদেশে আল্লামা সাঈদীর ভক্ত-অনুরাগীরা বিক্ষোভে ফেটে পরে, তারা রাস্তায় নেমে আসে।  কিন্তু সরকারের আইন-শৃংখলা বাহিনী সারাদেশেই সাঈদী ভক্তদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়।  একদিনেই শাহাদাত বরণ করে শতাধিক নারী পুরুষ। কয়েকদিনের বিক্ষোভে আড়াইশত মানুষ শাহাদাত বরণ করেছে।  আহত হয়েছে হাজার-হাজার মানুষ।  যারা শাহাদাত বরণ করেছেন, তাদের অধিকাংশই কোন রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না, শুধুমাত্র আল্লামা সাঈদীর প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার কারনেই প্রতিবাদ জানাতে রাজপথে নেমেছিল।

গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার আন্দোলন
আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দি করে।  দেশকে একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যেতে দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল ‘কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করে। সমগ্র জাতি এ ব্যবস্থার পক্ষে মত দিলেও সরকার তা বাতিল করে সংবিধানের সংশোধনী আনে। চিরকাল ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলকে বাইরে রেখে পেশীশক্তির জোরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি “ভোটারবিহীন’ একতরফা নির্বাচন করে নিজ দলীয় ১৫৩জন প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করে।  দেশে-বিদেশে কোথাও এ নির্বাচনের কোন গ্রহনযোগ্যতা পায়নি।  এর মধ্য দিয়ে দেশে কায়েম করে অঘোষিত বাকশালী শাসন।  মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়।  সরকারী দলের বাইরে অন্যান্য দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড ধীরে ধীরে সংকোচিত করে আনে।  এক পর্যায়ে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অফিস সীলগালা করে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উপর অঘোষিতভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
বিএনপি, জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট চলতি মাসের ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করতে চাইলে সরকার নিজেই ঢাকামুখি সকল যানচালাচল বন্ধ করে দেয়।  সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে।  পরদিন থেকে শুরু হয় ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি। অচল হয়ে পড়ে গোটা বাংলাদেশ।  সরকার এ আন্দোলন স্তব্ধ করে দিতে দেশব্যাপি শুরু করে রাষ্ট্রীয় আইন শৃংখলা বাহিনী দিয়ে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের হত্যা করার মিশন।  কথিত বন্দুক যুদ্ধের নামে বাড়ী থেকে ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের।  গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে তাদের।  আন্দোলনকে সহিংস রূপ দিতে সরকারের এজেন্টরা গাড়ি পুড়িয়ে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছে।  ২০ দলীয় জোটের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যেই সরকার যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং এজেন্টদের দিয়ে সাধারণ জনগণের ওপরে পেট্টোল বোমা মেরে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।  পেট্টোল বোমা সহ সরকার দলীয় ক্যাডাররা বিভিন্ন জায়গায় গ্রেফতারের ঘটনাও দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মিডিয়ায় ছবিসহ প্রকাশিত হয়েছে।  এই লিংকটি ব্রাউজ করুন প্লীজ:  হরতাল অবরোধে আগুন দিতে গিয়ে কারা হাতেনাতে ধরা খায় ? পেট্রোল বোম ইত্যাদি দিয়ে নৃশ্রংস হামলাগুলো কার? গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে জঙ্গী এবং নাশকতার রূপ দিতে সরকার এই অপকৌশল হাতে নিয়েছে।
গণতান্ত্রিক আন্দোলন কখনই গায়ের জোরে পেশীশক্তি দিয়ে দমন করা যায় না।  অতীতে যেমন তা সম্ভব হয়নি, ভবিষ্যতেও তা হবে না।  প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের দলীয় ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা করে আসছে ।  তেমনি দেশ পরিচালনায় গণতন্ত্রের প্রতি জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাসী বলে প্রতিটি সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে একটি বড় অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে।  দেশ পরিচালনায় জামায়াতে ইসলামী আইনের শাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে।  বিগত দিনে সরকার পরিচালনায় জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ৩টি মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে দেশের উন্নয়ন, সততা ও জবাবদিহিতার যে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে।

বিঃ দ্রঃ বাংলাদেশের মানুষ এর ইতিহাসে বিরাট একটা সময় গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করেছে।  অতীতে এদেশে  স্বৈরাচারী শক্তি ব্যর্থ হয়েছে।  বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক সংগ্রামে বিশ্বে দৃষ্টান্ত হয়েছে ।   এর পিছনে একটি বড় ভূমিকা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জাময়োতে ইসলামীর উজ্জ্বল, আপোষহীন ও দিকনির্দেশক অবদান।   এই লিংকটি ব্রাউজ করুন প্লীজ: কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ এবং জামায়াতে ইসলামী

(কিঞ্চিত সংযোজিত)
১৬ মার্চ ২০১৫, সোমবার

মিশরে ইখওয়ানুল মুসলেমীন, বিশ্বব্যাপী এর বিস্তার এবং জামায়াতে ইসলামী


১৯২৮ সালের মার্চ মাসে মিশরের ইমাম হাসান-আল-বান্না শহীদ রহ: এর নেতৃত্বে ইখওয়ানুল মুসলেমীন (মুসলিম ব্রাদারহুড) যাত্রা শুরু করে। তাঁর নেতৃত্বে ইখওয়ানুল মুসলেমীন পঞ্চাশের দশকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে। টাইমস অব লন্ডন পত্রিকার মতে- ১৯৪৮ সালে অর্থাৎ প্রতিষ্ঠা লাভের মাত্র ২০ বৎসর সময়ের মধ্যে ইখওয়ানের সক্রিয় সদস্যের সংখ্যা দাড়ায় নুন্যতম পাঁচ লক্ষ। 
১৯৪৮ সালের মে মাসে ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষনা দিয়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনীকে বিতারিত করা হয় নিজ আবাস ভূমি থেকে। শতকরা ৯২ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমেরিকা ও বৃটেনের বর্বরতার চরম নিদর্শন। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেনি ইখওয়ানুল মুসলেমীন। তারা ফিলিস্তিন যুদ্ধে মুজাহিদ বাহিনী প্রেরণ করে। এ যুদ্ধের বিবরণ ভুলে ধরেছেন ইখওয়ানের অন্যতম নেতা ওস্তাদ কামেল শরীফ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ইখওয়ানুল মিসলেমীন ফি হরবে ফিলিস্তিন অর্থাৎ ফিলিস্তিন যুদ্ধে ইখওয়ানুল মুসলেমীন গ্রন্থে। মুসলমানরা যখন ইসরাইলের সাথে একের পর এক পরাজয় বরণ করছিল তখন ইখওয়ানের মুজাহিদ বাহিনী অসাধারণ সফলতা অর্জন করে। ইখওয়ানের তীব্র আক্রমনের মুখে ইসরাইলের অবৈধ অস্তিত্ব মুছে যাওয়ার উপক্রম হয়। কখন ইহুদীদের মদদগার বৃটেন-রাশিয়া-আমরিকার চাপে তৎকালীন পুতুল রাজতান্ত্রিক সরকার ইখওয়ানের বিপ্লবী মুজাহিদ বাহিনীকে ফিলিস্তিন থেকে ফিরিয়ে আনে। পরে ইখওয়ানুল মুসলেমীনকে মিশরে বেআইনী ঘোষণা করে এবং কঠোর অত্যাচার নির্যাতন চাপিয়ে দেয়। ১৯৪৯ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারী ইমাম হাসান-আল-বান্নাকে প্রকাশ্যে গুলি করে শহীদ করা হয়। এরপর দীর্ঘ নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ক্ষমতালিপ্সু সামরিক চক্র বিদেশী শক্তির সহযোগিতায় মিশরে ইসলামী আন্দোলনের সাফল্য তখনকার মত তছনছ করে দেয়। নেতৃবৃন্দের শাহাদাত বরণ, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা-কর্মীর কারাবরণ ও দেশত্যাগে বাধ্যকরণ এবং নির্যাতনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সম্ভাবনাময় এ ইসলামী আন্দোলন স্তিমিত করে দেয় সম্রাজ্যবাদী-ইহুদীবাদী শক্তির দোসররা। ১৯৭১ সালের পর বর্বর নির্যাতন প্রশমিত হলেও ভয়-ভীতি, হুমকি-ধামকি দিয়ে সর্বদা বিচলিত রাখা হয়েছে। এরপরও সে আন্দোলন জীবন্ত ও গতিশীল। এরপর পার্লামেন্ট নির্বাচনে ইখওয়ানুল মুসলেমীন নিজ নামে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে। এজন্য তারা হিজবুল আহরাব ও হিজবুল আমলে ইশতারাফী নামক দুটি দলের সাথে জোটবদ্ধ হন। এ জোটের টিকেটে তারা ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে অংশ নেন এবং ৪২টি আসল লাভ করেন। বিজয়ী সংসদ সদস্যদের মধ্যে অন্যতম হলেন ইখওয়ানুল মুসলেমীনের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম হাসান-আল-বান্না শহীদের সুযোগ্য পুত্র এডভোকেট সাইফুল ইসলাম এবং ইখওয়ানুল মুসলেমীনের মুরশীদ আম হাসান আল হুদাইবীর সুযোগ্য পুত্র এডভোকেট মামুন আল হুদাইবী। উপরোক্ত দুইজন সংসদ সদস্যই মিশরের রাজধানী কায়রোর নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত। এছাড়া মিশরের বৃহৎ ও প্রভাবশালী পেশাজীবি সংগঠন সমূহে ইখওয়ান সদস্যরা অত্যন্ত সক্রিয় থাকেন । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা নেতৃত্ব দেন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইউনিয়ন, মেডিকেল ইউনিয়ন, ফার্মাসিষ্ট ইউনিয়ন, ল'ইয়ার্স ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠনে ইখওয়ান সদস্যরা নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে। এ সাফল্য ইখওয়ান স্বাভাবিক পরিস্থিতেতে অর্জন করেনি। বরং সকল প্রকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এ সাফল্য এসেছে। এরপর ২০০৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে ইখওয়ানের প্রার্থীরা মিসরের পার্লামেন্টের এক পঞ্চমাংশ আসন লাভ করেন। ২০১০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোটে ইখওয়ানের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে তারা অংশ নেয়নি। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি প্রবল গণ-অভ্যুত্থানের মুখে মিসরের স্বৈরশাসক হোসনী মুবারক পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ইখওয়াননুল মুসলিমিন আবার রাজনীতিতে প্রকাশ্যে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং নিজেদের রাজনৈতিক শাখার নাম দেয় ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি। ২০১২ সালের ৩০ জুন দেশটির প্রথম অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ মুসলিম ব্রাদারহুড  ৫১.৭৩ শতাংশ ভোট পায় এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ব্রাদার হুড নেতা মোহাম্মদ মুরসি। এই প্রথম দেশটিতে অবাধ ও  সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথম বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে মুহাম্মদ মুরসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এরপর বছর খানেকের মধ্যে ইহুদী ও খৃষ্টান ইসলাম বিদ্বেষী গোষ্ঠীর নীরব সম্মতিতে এবং সৌদি আরবসহ আরবের রাজতান্ত্রিক গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি ২০১৩ সালের জুলাই এ মিসরের অবাধ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসিকে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে। ক্ষমতা গ্রহণ করেন জেনারেল সিসি। এরপর মুরসীকে বন্ধী করা হয় এবং ইখওয়ানুল মুসলিমিনের উপর পূণরায় বর্বর নির্যাতন চাপিয়ে দেয়া হয়। একে ধ্বংশ করতে আগেও ব্যর্থ হয়েছিল এবং এবারও ব্যর্থ হবে ইনশাল্লাহ। 

বিস্তারিত জানার জন্য এই লিংকগুলো ব্রাউজ করুন :    
1) ইখওয়ানুল মুসলিমীন এক জীবন্ত ইতিহাস! 2) প্রেসিডেন্ট ড. মুরসির হত্যাকাণ্ড ও একটি বিভ্রান্তি 3) গণমানুষের মহান নেতা শহিদ মুরসি বিশ্ববাসীর প্রেরণা-১ 2) গণমানুষের মহান নেতা শহিদ মুরসি বিশ্ববাসীর প্রেরণা-২

ইখওয়ানুল মুসলেমীন ও জামায়াতে ইসলামী একই দেহে দুটি চোখ বা একই বৃক্ষে দুটি শাখার মত সংগঠন। এদুটি সংগঠন নানাভেবে একে অপরের দ্বারা শক্তিশালী হয়। সামান্য সামান্য বিপর্যয়ে যারা নানাভাবে নিরুৎসাহ বা হতাশবোধ করেন তাদের উচিত মিশরে ইখওয়ানের উপর আরোপিত নানা প্রতিকূলতা ও অত্যাচার-নির্যাতন থেকে শিক্ষা গ্রহন করা। 

মুসলিম ব্রাদারহুড বা ইখওয়ানুল মুসলেমীন বাহরাইন, ইরান, তুরস্ক, ইরাক, ইসরাইল, ফিলিস্তিন, জর্দান, কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব, সিরিয়া, আরব আমিরাত, ইয়েমেন, আলজেরিয়া, লিবিয়া, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, সোমালিয়া, সুদান, তিউনিসিয়া, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় সক্রিয়। ইউরোপের জার্মানি, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে ব্রাদারহুড ইসলাম ও রাজনীতির ওপর প্রকাশ্যে মত প্রকাশ এবং বিভিন্ন প্রকাশনা করে থাকে। মুসলিম ব্রাদারহুডের বহুল প্রচলিত স্লোগান হলো: ‘ইসলামই সমাধান’ এবং ‘বিশ্বাসীরা ভাই ভাই’। মিশরে ইখওয়ানুল মুসলেমীন আত্মপ্রকাশ করে সেখানে নির্যাতনের কারণে তারা সহজে নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যারা ইখওয়ানুল মুসলেমীনকে ধ্বংশ করতে চেয়েছিলো তাদের সে প্রচেষ্টা তাদের জন্য বুমেরাং হয়েছে।      

মুসলমানরা কি সন্ত্রাসী ? পোষ্টটি পড়ুন এবং শেয়ার করুন প্লীজ

জার্মানির এক টিভি লাইভ শোতে একজন মুসলিম স্কলারকে যখন জার্মান উপস্থাপক প্রশ্ন করেছিলেন মুসলমানরা কেন সন্ত্রাস করে??
তখন তিনি উক্ত প্রশ্নের জবাব এভাবে উল্টো প্রশ্নের মাধ্যমে দিয়েছিলেনঃ-

১| কারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল...?

২| কারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল...?
৩| কারা অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কারের পর নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য ২০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীকে হত্যা করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল...?
৪| যারা হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল...?
৫| যারা আমেরিকা আবিষ্কারের পর নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য উত্তর আমেরিকাতে ১০০ মিলিয়ন এবং দক্ষিন আমেরিকাতে ৫০ মিলিয়ন রেড- ইন্ডিয়ানকে হত্যা করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল...?
৬| যারা ১৮০ মিলিয়ন আফ্রিকান কালো মানুষকে কৃতদাস বানিয়ে আমেরিকা নিয়ে গিয়েছিল। যাদের ৮৮ ভাগ সমুদ্রেই মারা গিয়েছিল এবং তাদের মৃতদেহকে আটলান্টিক মহাসাগরে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তারা কি মুসলিম...?
৭| কারা কয়েকশত বছর ধরে ধর্মের নামে ক্রুসেড যুদ্ধ করে নিরীহ মানুষদের কষ্ট দিয়েছিল, তারা কি মুসলিম ছিল...?
৮| কারা মিয়ানমানে রোহিংগা হত্যা করেছিল তারা কি মুসলিম ছিল...?
৯| কারা কাস্মিরে গনহত্যা নিরিহ শিশু হত্যা, নারী ধর্ষন সহ তাদের সম্পদ লুটে নিচ্ছে তারা কি মুুসলিম ছিল...?
উত্তর হবে, এসব মহাসন্ত্রাসী ও অমানবিক কার্যকলাপের সাথে মুসলিমরা কখনো জড়িত ছিলনা।
আপনাকে আগে সন্ত্রাসের সংজ্ঞা সঠিকভাবে করতে হবে ও জানতে হবে।
যখন কোন অমুসলিম কোন খারাপ কাজ করে, তখন এটাকে বলা হয় অপরাধ।
আর যখন কোন মুসলিম একই খারাপ কাজ করে, তখন এটাকে বলা হয় ইসলামী জঙ্গীবাদ"!! But why...!
যখন কোন অমুসলিম আমেরিকাতে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করলে সে হয়ে যায় স্যুটার, মানসিক রোগি...!
একই অপরাধ কোন মুসলিম করলে সে হয়ে যায় ইসলামিক জঙ্গী, ধর্মের সাথে তার অপরাধকে জুড়ে দেয়া হয়...!
কেন এই বৈষম্য-?

যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছরে ৭১ শতাংশ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে শ্বেতাঙ্গরা

- মোহাম্মদ আল-মাসুম মোল্লা


সাধারণ মানুষদের ধারণা- অধিকাংশ জঙ্গি হামলার সঙ্গে মুসলমানরা জড়িত। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে- গত ১০ বছরে দেশটিতে শতকরা ৭১ ভাগ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীরা। আর মুসলমানরা জড়িত ২৬ শতাংশ হামলার সঙ্গে।

নিউইয়র্ক-ভিত্তিক সংস্থা অ্যান্টি-ডিফেম্যাশন লিগ কাজ করে ইহুদি-বিরোধী ও বিভিন্ন জাতিগত বিদ্বেষমূলক ঘটনা নিয়ে। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যতোগুলো সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে সেগুলো মধ্যে ৭১ শতাংশ চালিয়েছে শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্যবাদীরা। সেই দেশে মুসলিম চরমপন্থিদের হামলা হয়েছে ২৬ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালের তুলনায় গতবছর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। এদিকে, দ্য ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস অব অস্ট্রেলিয়া নামের স্বনামধন্য গবেষণা সংস্থাটি জানিয়েছে যে “এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলছে।”
সিডনি-ভিত্তিক সংস্থাটির ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাস সূচক ২০১৮’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- “২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে (সারাবিশ্বে) উগ্র-ডানপন্থি দল ও ব্যক্তিরা ১১৩টি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ৬৬ জনের।” প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়- শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই হামলা হয়েছে ৫৯টি। আর সেবছর মারা গিয়েছেন ১৭ জন। ২০১৭ সালে ১২টি হামলা হয়েছে যুক্তরাজ্যে, ছয়টি সুইডেনে এবং গ্রিস ও ফ্রান্সে দুটি করে হামলা চালানো হয়েছে। একই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে হামলা হয়েছে ৩০টি। তাতে নিহত হয়েছেন ১৬ জন। সংস্থাটির হিসাবে সেসব হামলার অধিকাংশই পরিচালিত হয়েছে “মুসলিমবিরোধী ভাবাবেগে আক্রান্ত উগ্র-ডানপন্থি শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা।”
গ্লোবাল টেরোরিজম ডাটাবেজ এর দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সেসব সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে সেগুলো তিনভাগের দুইভাগ চালিয়েছে বর্ণবাদী, মুসলমানবিরোধী, ইহুদিবিরোধী, ফ্যাসিস্ট, সরকারবিরোধী এবং জাতিবিরোধী ভাবাবেগে প্রভাবিত ব্যক্তিরা। ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাস সূচক ২০১৮’ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, চলতি শতাব্দীর শুরুতে উত্তর আমেরিকায় অনেক সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জেহাদি দলগুলোর জড়িত থাকার খবর আসে। কিন্তু, গত দুই বছরে উগ্র-ডানপন্থি রাজনীতির বাড়বাড়ন্ত চোখে পড়ার মতো। এতে আরও বলা হয়, “২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নয়টি সন্ত্রাসী হামলায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। সেসব হামলার জন্যে দায়ী শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা।” প্রতিবেদনটির ভাষ্য মতে, ইসলামপন্থি সন্ত্রাসীদের কথা বেশি শোনা গেলেও বাস্তবতা হচ্ছে, গত ১০ বছরে উগ্র-ডানপন্থিরাই বেশি হামলা চালিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন বলেই উগ্র-ডানপন্থিরা হামলা করতে উৎসাহ পান। তিনি বলেন, “ধর্মীয় সন্ত্রাসের ঘটনাগুলো যেভাবে প্রচারিত হয় উগ্র-ডানপন্থিদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সেভাবে প্রচারিত হয় না। এখন সেদিকটিতে নজর দেওয়া সময় এসেছে। কেননা, সব জায়গাতেই উগ্র-ডানপন্থিদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে।”
উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটি মসজিদে জুমার নামাজ পড়ার সময় শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসীদের হামলায় অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
Source: www.thedailystar.net
মার্চ ১৭, ২০১৯

Popular Posts