Tuesday, January 31, 2017

ইফসু(IFSO) এবং আন্তর্জাতিকক্ষেত্রে শিবিরনেতা ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহেরের তৎপরতা


-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল

বিশ্বব্যাপী পরিচালিত ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমূহকে সমন্বয় সাধনের মহান লক্ষ্যে International Islamic Federation of Student Organizations(IFSO) অর্থাৎ ইসলামী ছাত্র সংগঠন সমূহের আন্তুর্জাতিক জোট প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যে কয়জন মাহমনীষির চিন্তা-চেতনা কাজ করছিল তারা হচ্ছেন মাওলানা মওদূদী রহ: ইলাল ফার্সী রহ? ও ড: মুহাম্মদ নাসের।

১৯৬৬ সালের প্রথম দিকে নাইজেরিয়ার ইসলামী ছাত্র সংগঠন- Muslim Student Society of Nigeria- এর উদ্যোগে ইফসু প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়ে নানা পার্যায় অতিক্রম করে ১৯৬৯ সালে ১৭ই জুন পশ্চিম জার্মানিতে এক সপ্তাহব্যাপী প্রথম প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে এক ঘোষণায় আনুষ্ঠানিকভাবে IFSO আত্মপ্রকাশ করে। ঘোষণাপত্রে বিভিন্ন দেশের সাতটি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দ সাক্ষর করেন। ১৯৭১ সালে পশ্চিম জার্মানীতে দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নয়টি ছাত্র সংগঠন এতে অংশগ্রহণ করে এবং বিভিন্ন দেশের আরো নয়টি সংগঠন উহার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। তুরষ্কের প্রাচীন নগরী ইস্তাম্বুল ১৯৭৫ ও ১৯৭৭ সালে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চতুর্থ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ আরো অনেক দেশের ছাত্র প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। এই সম্মেলনে ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়। সেগুলোর মধ্যে চৌদ্দটি ভাষায় ইসলামী সাহিত্য অনুবাদ ও প্রকাশের ব্যবস্থা ছিল। এভাবে IFSO এ পর্যন্ত ১১৫টি পুস্তক প্রকাশ করে। মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ইসলামী ব্যক্তিত্ববৃন্দ ও সম্মেলনে আলোচনা করেন। বাংলাদেশের অধ্যাপক গোলাম আজম ও এতে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। এরপর পঞ্চম সম্মেলন ১৯৮০ সালে মালয়েশিয়ায় এবং ষষ্ঠ সম্মেলন সুদানের রাজধানী খার্তুমে ১৯৮৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এ সবগুলোতেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রতি বছরেই IFSO এর আঞ্চলিক সম্মেলন ও লীডারশীড ট্রেনিং ক্যাম্প বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকা, এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল এবং আফ্রিকার প্রায় ৫৫টি ইসলামী ছাত্র সংগঠন IFSO এর অন্তর্ভূক্ত হিসাবে কাজ করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্র শিবির ২৫তম সদস্য।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রক্তন সভাপতি ডা: আব্দুল্রাহ মোহাম্মদ তাহের IFSO এর সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে ১৯৯৩-৯৬ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তার দায়িত্ব পালনকালে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, সিম্পোজিয়াম ও সেমিনার উপলক্ষ্যে আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার ৮৪ টি দেশে একশত বারের ও বেশী সফর করেন এবং ভাষণ দেন। সফরকালে তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড: মাহাথির মোহাম্মদ, পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডোন্ট জিয়াউল হক, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড: নাসের, সুদানের প্রসিডেন্ট জেনারেল ওমর হাসান আল বশীর, প্রাক্তন পেসিডেন্ট সুয়াির আদ্দাহাব, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাফর আল নিমেরী, কুয়েতের বর্তমান আমীর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ ও শেখ শাদ, আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রফেসর বোরহান উদ্দীন রব্বানী, তুরস্কের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাজমুদ্দীন আরবাকান প্রমুখ রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া আফগান মুজাহিদ নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার, কাশ্মীঅর মুজাহিদনেতা হেকীম গোলাম নবী, আনব্দুর রশিদ এবং আমান উল্লাহ খান, ফিলিপাইনের মিন্দানাও এম,এন, এল, এফ এবং এমআইএল এফ নেতা নূর মিসৌরী, থাইল্যান্ডের মুসলিম মুজাহিদ নেতা ড: শুকরি, মিশরের ইখওয়ানুল মুসলেমীনের মুর্শিদে আম ড: নাসের, সুদানের ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান ড: হাসান তুরাবী, সাউথ আফ্রিকার নেতা আহম্মের দিদাদ ইউকে এর প্রখ্যাত সঙ্গিতজ্ঞ নওমুসলিম ইউসুফ ইসলাম, আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভী, জামান কাদাউই প্রমূখ বিশ্ব ইসলামী নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করের। একটি সাক্ষাতকারে ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ইফসুর সেক্রেটারী জেনারেল থাকার সময়ের উল্লেখযোগ্য দুএকটা ঘটনা উল্লেখ করতে যেয়ে বলেন :

‌‌‌“ক) IFSO জাতিসংঘের Olserver member, সে সুবাদে জাতিসংঘের অধীনে জেনেভাস্থ Human Rights Commission এরও সদস্য। ১৯৯৪ সালে Human Rights Commission এর International Conference অনুষ্ঠিত হয়েছিল জেনেভায়। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা সেই Conference এ যোগ দিয়েছিলেন। IFSO সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে আমিও সেই সম্মেলনে যোগ দেই। প্রথম দিনেই কনফারেন্স হলের লবীতে সাক্ষাৎ পাই Kashmir America concil এর সভাপতি মুজাহিদ নেতা ড: গোলাম নবী ফাই এর সাথে। তিনি আমেরিকা থেকে এসেছেন কাশ্মীর এ মানবাধীকার  লংঘন সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরার জন্য। কিন্তু তিনি কোনভাবেই কনফারেন্স হলে ঢুকার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি তাকে আমার টীম এর সদস্য করে একটি এক্সেস কার্ড ইস্যু করি। আমার কার্ড নিয়ে কনফারেন্স এর চেয়রম্যান এর কাছে গেলে তাকে গ্রহন করা হয়। ড: গোলাম নবী ফাই কনফারেন্স এ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে কাশ্মীঅর এর উপর অত্যন্ত বলিষ্ঠ বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবাধিকার সংস্থার আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কাশ্মীরের উপর বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দিতে পেরে IFSO এর সেক্রেটারী জেনারেল হিসাবে আমার খুব আনন্দ অনুভব হয়েছিল।

খ) ১৯৯৬সালে IFSO-এর  ইন্টর্নেশনাল কনফারেন্স এর জন্য হোস্ট হওয়ার অনুরোধ জানানোর্ জন্য তুরস্কের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড: নাজমুদ্দিন আরবাকানের সালে ইস্তাম্বুলে তার অফিসে সাক্ষাতের সুযোগ পাই। IFSO সম্বন্ধে আগে থেকেই তিনি ওয়াকেফহাল ছিলেন। তুরস্কে আমরা সম্মেলন করতে চাই শুনে উনি খুশি হলেন এবং তাৎক্ষনিকভাবে অনুমতি দিলেন এবং ইস্তাম্বুলের বসফরাস নদীর তীরে ফাইভ স্টার হোটেলেটি পুরো এক সপ্তাহের জন্য কনফারেন্স ডেলিগেটদের জন্য ভাড়া দেন।
প্রসঙ্গ ক্রমে তিনি তার উদ্যোগে জি-সেভেন এর এগেইনস্টে ডি-৭ গঠনের কথা বললেন। এত বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আমি বিনয়ের সাথে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানালে তিনি বিবেচনার আশ্বাস দেন। পরে ডি-৭, ডি-৮ হয় এবং বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভূক্ত হয়”  (ছাত্র সংবাদ, মার্চ-এপ্রিল ২০০০)। এখানে উল্লেখ্য যে, আটটি মুসলিম উন্নয়নশীল  দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানদের নিয়ে ডি-৮ সম্মেলন ১ম হাসিনা সরকারের আমলে মার্চ ১-২ , ১৯৯৯ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেটা ছিল ডি-এইট -এর ২য় সম্মেলন।  এ সম্পর্কে জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন: উন্নয়নশীল ৮টি দেশ। 


Monday, January 30, 2017

অত্যন্ত কঠিন সতর্কবার্তার হাদিসগুলোর একটি - গোপন পাপ বিষয়ে

অত্যন্ত কঠিন  সতর্কবার্তার হাদিসগুলোর একটি নিচে দেয়া হলো।  মনোযোগ দিয়ে পড়ুন:

রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'আমার উম্মতের অনেকের কথা আমি জানি, যারা কিয়ামাতের দিন তিহামা অঞ্চলের সাদা পর্বতমালা পরিমাণ নেকি নিয়ে উপস্থিত হবে, কিন্তু আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেবেন।
এই কথা শুনে সাওবান (রা.) বললেন, "হে রাসূলাল্লাহ! তাদের পরিচয় দিন, আমরা যেন নিজেদের অজান্তে তাদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে যাই।"

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তারা তোমাদেরই ভাই, তোমাদের সাথেই থাকে। তোমরা যেমন রাত জেগে ইবাদাত করো, তারাও করে।
কিন্তু যখন একাকী হয় তখন আল্লাহর নিষিদ্ধকৃত হারামে লিপ্ত হয়।'
[ইবনে মাজাহ ৪২৪৫; হাদিসটি সহিহ]  

আমরা যারা সুযোগ পেলেই দৃষ্টির খেয়ানত করি, লজ্জাস্থানের খেয়ানত করি, মানুষের অধিকার নষ্ট করি ও নির্জনে বিভিন্ন হারামে লিপ্ত হই - এই হাদিস আমাদের জন্য মহাসতর্কবার্তা। হে আল্লাহ আমাদেরকে গোপন গুনাহ থেকে রক্ষা করুন। আমিন৷

ফেইসবুক পোস্ট থেকে: 

গোপন গুনাহ কতটা ভয়াবহ |  POWERFUL REMINDER:


Friday, January 27, 2017

শিবির সভাপতি ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদের বিশ্বব্যাপী মানবসেবায় নেতৃত্ব প্রদান

ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদ চট্টগাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদের কৃতি সন্তান।   তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।   তিনি দীর্ঘ বহু বছর যাবৎ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইসলামী সেবা সংস্থায় কর্মরত আছেন।   তিনি যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক ত্রাণ ও উন্নয়ন সংস্থা মুসলিম এইডের বহু দায়িত্ব সাফল্যের সাথে পালন করেন । ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই সংস্থার বৈদেশিক কর্মসূচির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  তিনি ফেইথ রিজেনের কমিউনিটি ও আন্তর্জাতিক কর্মসূচির প্রধান হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি চার বছর  মুসলিম এইডের সহকারী প্রধান নির্বাহী ছিলেন। সাহায্য সংস্থা ও কমিউনিটি উন্নয়ন কর্মসূচিতে তার ১০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি মুসলিম এইডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) হিসেবে নিয়োগ পান।  তার প্রতিক্রিয়ায় হামিদ হোসাইন আজাদ বলেছিলেন:  ‘এই চ্যালেঞ্জিং কাজের দায়িত্ব নিতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ। আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় ও সাহায্য কামনা করছি। আমি মুসলিম এইডকে ভালোবাসি এবং এর ল্ক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আমি সবসময়ই উৎসাহী। এই মহান সংগঠনের উন্নয়নে এবং মানবতার সেবায় আমি নিরলসভাবে কাজ করে যাবো ইনশাল্লাহ।’

উল্লেখ্য, দুর্যোগ-আক্রান্ত দেশ ও দরিদ্র মানুষের সেবার জন্য ১৯৮৫ সালে যুক্তরাজ্যে মুসলিম এইড প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে সংস্থাটি বিশ্বের ৭০টি দেশে তার সেবার পরিধি বিস্তৃত করেছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকেই সাহায্য করে থাকে মুসলিম এইড। এর ওয়েবসাইট এড্রেস: www.muslimaid.org 

মুসলিম দীর্ঘদিন দায়িত্বপালন শেষে ব্যারিষ্টার হামিদ হোসাইন আজাদ যোগদান করেছেন যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংস্থা “মুনতাদা এইড” এ। আর নিয়োগ পান এর প্রধান নির্বাহী (CEO) হিসেবে। উল্লেখ্য যে “মুনতাদা এইড” দুনিয়াব্যাপী ১৮টি দেশে ২৪ টি সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে তাদের স্বেচ্ছাসেবী মূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দূর্গত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা, স্বাস্থ্যখাত, বিশুদ্ধ পানি ও শিক্ষাখাতসহ আর্তমানবতার সেবায় সাহায্যের বাড়িয়ে দেয়াসহ আরো বিভিন্ন সহযোগিতামূলক  কাজ  এ সংস্থাটি  করে থাকে। এর ওয়েবসাইট এড্রেস: www.muntadaaid.org । 
Facebook address: www.facebook.com/hamidh.azad

See these video: 

Friday, January 20, 2017

ও, আই, সি, গঠন ও জামায়াতে ইসলামীর অবদান


ও. আই. সি. গঠনের ক্ষেত্রে ও জামায়াতে ইসলামী তথা জামায়াত নেতাদের অবদান রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠাতা যুগশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহ:) মক্কা মুকার্রামায় ১৯৬২ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইসলামী সম্মেলনে যোগদান করেন এবং ইসলামী বিশ্বের সাথে সংযোগ সম্পর্ক স্থাপনকারী রাবেতায়ে আলমে ইসলামী নামক সংস্থার প্রতিষ্ঠায় আল্লামা মওদূদীর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি একান্ত ভাবে কামনা করতেন যে, বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ইসলামের ভিত্তিতে একটি কমনওয়েলথ গঠিত হোক। এ ম্পর্কে তিনি বার বার সওদী আরবের বাদশাহ শাহ  ফয়সালকে অনুরোধ জানান। অবশেষে ষাটের দশকের শেষাংশে মরক্কোতে অনুষ্ঠিত মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর শীর্ষ সম্মেলনে ইসলামী সেক্রেটারীয়েট সংস্থা গঠন করা হয়।  ১৯৬৯ সালে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে সকল সরকারী প্রতিনিধিদলের মধ্যে ব্যতিক্রম একমাত্র বেসরকারী ব্যক্তিত্ব হিসাবে আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ) উপস্থিত ছিলেন। কারণ তারই নিরবিচ্ছিন্ন সাধানার ফলশ্রুতিতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর এই ঐক্য সংস্থা বাস্তবরূপ লাভ করে। তিনি ওআইসির সামনে কতগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব রাখেন। তার মধ্যে অন্যতম মুসলমানদের একটি নিজস্ব সংবাদ সরবরাহ সংস্থা এবং একটি সম্মিলিত অস্ত্র নির্মাণ কারখানা প্রতিষ্ঠা। আল্লামা মওদূদীর ক্রমাগত অসুস্থাতার কারণে এসব বিষয়ে তিনি চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি এবং বিশেষ করে শাহ ফয়সালের শাহাদাতের পর ঐ সব প্রস্থাব ও পরামর্শগুলো কার্যকর করতে পারেননি। আল্লামা মওদূদী এবং বাদশাহ ফায়সালের মত ব্যক্তিত্বের অভাবে ওআইসির সত্যিকার রূপ প্রকট হয়নি। তথাপি এই ওআইসি মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী ঐক্যচেতনাকে জাগ্রত রেখেছে এবং কিছু না কিছু পরিমাণে কাজ ও হচ্ছে। ওআইসি গঠনে জামায়াতে ইসলামীর অবদান অবশ্যই আবিস্মরণীয় ঘটনা। 

Thursday, January 19, 2017

ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও আন্তর্জাতিকভাবে এর বিস্তার এবং জামায়াতে ইসলামী

-  শাহাদাতুর   রহমান   সোহেল   

সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহ:) সহ আরো কয়েকজন ইসলামী চিন্তাবিদদের চিন্তাধারা সমন্বয়ে গঠিত ইসলামী ব্যাংকের পরিকল্পনা ওআইসিতে গৃহীত হয়। ১৯৭৪ সালে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ওআইসি সদস্যভুক্ত মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে মুসলিম রাষ্ট্র সমূহের সক্রিয় সহযোগিতায় ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক নামের একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৭৫ সালের জেদ্দাকে কেন্দ্র করে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে সর্বপ্রথম ইসলমী উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর পূর্বেই সোশ্যাল ব্যাংক নামে মিশরে একটি শক্তিশালী ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর মুসলিম বিশ্বে ব্যাপকভাবে ইসলামী ব্যাাংক প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দুবাই, কুয়েত, সৌদী আরব প্রভৃতি দেশে বেশ কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশও ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার জন্য এগিয়ে আসে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। 
                                                        See this video:
(একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন)

ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীর অবদান
বাংলাদেশের আর্থিক খাতে একটি বড় পরিবর্তন আসে ১৯৮৩ সালে, যখন ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক প্রথম ব্যাংক - ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে সুদমুক্ত, অংশীদারিত্বভিত্তিক একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালুর পথ প্রশস্ত হয়। ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার এই উদ্যোগের পেছনে জামায়াতে ইসলামীর অবদান ছিল অনস্বীকার্য, যা আদর্শিক চিন্তা, সংগঠনিক প্রচেষ্টা, নেতৃত্ব ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়।

আদর্শিক প্রেক্ষাপট
জামায়াতে ইসলামীর মূল রাজনৈতিক ও আদর্শিক লক্ষ্য ইসলামী জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, যার অন্যতম স্তম্ভ সুদবিহীন অর্থনীতি। সুদভিত্তিক ব্যাংকিং ইসলামী বিধানের পরিপন্থী। এই আদর্শ থেকেই তারা ইসলামী ব্যাংকিং চালুর জন্য সচেতনতা সৃষ্টি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

নেতৃত্ব ও প্রতিষ্ঠান গঠনে ভূমিকা
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর প্রতিষ্ঠায় সরাসরি অংশ নেন জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা মীর কাসেম আলী, যিনি ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বিদেশি বিনিয়োগ সংগ্রহ, ব্যাংকের নীতিমালা প্রণয়ন এবং পরিচালনা পর্ষদ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়া জামায়াত-ঘনিষ্ঠ আরও অনেক অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী ব্যাংকের সাথে যুক্ত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক সংযোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা
জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন। বিশেষ করে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার ও অন্যান্য মুসলিম দেশের ইসলামী অর্থনীতিবিদ ও বিনিয়োগকারীদের সমর্থন আদায়ে তারা সক্রিয় ছিলেন। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও আল রাজি ব্যাংক-এর মতো প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এ বিনিয়োগ করে।

মানবসম্পদ ও আদর্শিক কর্মী
ব্যাংকটি পরিচালনার ক্ষেত্রে জামায়াতের আদর্শিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ দলের অন্যান্য সহযোগী সংগঠন থেকে আসা সদস্যরা ব্যাংকে নিয়োজিত হয়ে এর প্রসারে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। ফলে ব্যাংকটি শুধু একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি আদর্শিক মিশন হিসেবে পরিচালিত হতো।

সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
জামায়াতে ইসলামী ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে শুধু অর্থনৈতিক মুক্তির পথ হিসেবে নয়, বরং সমাজে ন্যায়ভিত্তিক একটি অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যম হিসেবেও উপস্থাপন করেছিল। তাদের এই প্রচেষ্টার ফলেই বাংলাদেশের আর্থিক খাতে ইসলামী ব্যাংকিং একটি গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় ধারায় পরিণত হয়েছে।

উপসংহার
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর প্রতিষ্ঠা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, যার মাধ্যমে দেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং চালু হয়। এই উদ্যোগের পেছনে জামায়াতে ইসলামীর আদর্শিক প্রভাব, সংগঠনিক দক্ষতা এবং নেতৃত্বের অবদান ছিল সুস্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ। আজ বাংলাদেশে যে ইসলামী ব্যাংকিং একটি শক্তিশালী খাত হিসেবে বিকাশ লাভ করেছে, তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
 
বি. দ্র. : ২০১৫ সালে নানা অভিযোগ তুলে আওয়ামী সরকার জামায়াত ইসলামীর কাছ থেকে ব্যাংকটির মালিকানা ছিনিয়ে নেয়। এরপর ব্যাংকটির পরিচালনায় পরিবর্তন আনা হয় এবং জামায়াতে ইসলামীর প্রভাব হ্রাস পায়। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান ও বিপ্লবে আওয়ামী অবৈধ দখলদার সরকার বিদায় হওয়ার পর পুনরায় ব্যাংকটিতে জামায়াতে ইসলামীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর কিছু পরে (ডিসেম্বর ২০২৪) বিএনপির এক নেতার সমালোচনার জবাবে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ইসলামী ব্যাংক দখল করেনি জামায়াতে ইসলামী, ডাকাতের বেশে নতুন ডাকাতরা ৫ আগস্টের পর ব্যাংক দখল করতে গিয়েছিল। তারা পালিয়ে এসেছে। জামায়াতে ইসলামী ব্যাংক দখল করেনি, বরং এই ব্যাংক তার মায়ের কোলে ফিরে এসেছে।

Popular Posts