- Home
- All links
- Books
- Syllabus of Jamaat
- Ebook of Syllabus
- Ebook of Allama Syed Abul Ala Maududi
- Ebbok of Maolana Matiur Rahman Nizami
- Ebbok of AKM Nazir Ahmed
- Ebook of Muhammad Kamaruzzaman
- Ebook of Allama Yusuf Al Qarawi
- Ebook of Sayyid Qutb Shaheed
- Ebook of Allama Delwar Hossain Sayedee
- Ebook of Professor Ghulam Azam
- Ebook of Abbas Ali Khan
- Ebook of Maulana Muhammad Abdur Rahim
- Ebook of Haron Yahya Turkish
- Book of Anti-Atheism
- Subjects
- Jamaat-e-Islami
- Islami Chhatrashibir
- Prominent's opinion
- Success of Jamaat
- About us
Friday, January 6, 2017
ইসলামী আন্দোলন: সাফল্য ও বিভ্রান্তি - অধ্যাপক গোলাম আজম
Thursday, January 5, 2017
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী
বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে জড়িয়ে আছে জামায়াতে ইসলামীর নাম। দেশের পক্ষে জনগনের পক্ষে ভূমিকা পালনে সব সময় সবার আগে থাকে জামায়াতে ইসলামী। অংশ নিয়েছে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিটি নির্বাচনে। জনগনের পক্ষে কথা বলেছে প্রতিটি জাতীয় সংসদে। তাই এ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দেশ ও জনগণের পক্ষে ভূমিকা পালন করতে গিয়ে নানা জুলুম নিপীড়ণের শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়তই। অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের। পঙ্গুত্ব বরণ করেছে জামায়াতের অগনিত নেতাকর্মী। শত জুলুম নির্যাতনের মধ্যেও গণমানুষের এই আন্দোলন কখনই থেমে থাকবে না। স্বাধীনতা উত্তরকালে হত্যা করা হয় বহুদলীয় গণতন্ত্র। এর আগে থেকেই নিষিদ্ধ ছিল ইসলামের কথা বলে রাজনীতি করার অধিকার।
একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বিলুপ্তি
১৯৭৮ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক ফরমান জারি করে একদলীয় ব্যবস্থার বাতিল করে বহুদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এর আগে ১৯৭৬ সালের ৩রা মে রাষ্ট্রপতির জারিকৃত একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ নম্বর ও অনুচ্ছেদটি বাতিল করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উপর আরোপিত বিধি নিষেধ তুলে নেয়া হয়।
ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ গঠন
১৯৭৭ সালের ৩০ মে গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গৃহিত পদক্ষেপগুলো অনুমোদিত হওয়ায় ইসলামের নামে রাজনৈতিক দল গঠন করার পথে আর কোন বাধা রইলো না।১৯৭৬ সালের ২৪ আগষ্ট ডেমোক্রেটিক পার্টি, নেযামে ইসলাম পার্টি, খেলাফতে রব্বনী পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (IDL) নামে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম গড়ে তোলেন। মাওলানা ছিদ্দিক আহমদকে (নেযামে ইসলাম পার্টি) চেয়ারম্যান, মাওলানা আবদুর রহীম (জামায়াতে ইসলামী), মাওলানা আবদুস সুবহান (জামায়াতে ইসলামী), এডভোকেট সা’দ আহমদকে (জামায়াতে ইসলামী) ভাইস চেয়ারম্যান এবং এডভোকেট শফিকুর রহমানকে (ডেমোক্রেটিক লীগ) সেক্রেটারি জেনারেল করে এর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ দল অংশ গ্রহন করে।
২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ২০৭টি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ৩৯টি এবং মুসলিম লীগ ১৪টি আসনে বিজয়ী হয়। ইসলামিক ডেমোক্রেটি লীগ থেকে মনোনীত জামায়াতে ইসলামীর ৬জন সদস্য জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটাই প্রথম উপস্থিতি।
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ
১৯৭৯ সালের ২৫,২৬ ও ২৭ মে ঢাকাস্থ ইডেন হোটেল প্রাঙ্গনে একটি কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আব্বাস আলী খানের আহ্বানে এই কনভেনশনে উপস্থিত হন সারা বাংলাদেশ থেকে আগত ৪৫০ জন সদস্য। এই সম্মেলনে একটি নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়। সেই গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালের ২৭ মে থেকে চারদফা পূর্নাঙ্গ কর্মসূচি নিয়ে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর কর্মতৎপরতা শুরু করে।
কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা প্রণয়ন
১৯৮০ সালের মাঝামাঝি আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকার সংক্রান্ত একটি রূপরেখা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের অধিবেশনে পেশ করেন। ১৯৮০ সালের ৭ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান রমনা গ্রীনে আহুত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই রূপরেখা প্রকাশ করেন।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যুগপৎ আন্দোলন
আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোট এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট কিছু কিছু যুগপৎ কর্মসূচি দিতে থাকে। ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর ১৫ দলীয় জোট ও ৭ দলীয় জোট সচিবায়ল ঘেরাও কর্মসূচি দেয়। এ কর্মসূচিতে জনগনের তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার তার শাসন আরো দৃঢ় করে। বন্ধ করে দেয় রাজনৈতিক তৎপরতা। এই সময় জামায়াতে ইসলামীর লিয়াজো কমিটি দুই নেত্রীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে অগনতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরন করে গনতন্ত্রে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জামায়াতে ইসলামীর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। এই বক্তব্যের প্রতি তারা ইতিবাচব মনোভঙ্গি ব্যক্ত করেন। তখন থেকে ১৫ দলীয় জোট ও ৭ দলীয় জোটের সাথে জামায়াতে ইসলামীর লিয়াজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে থাকে। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বিচারপতি আহসান উদ্দীন চৌধুরীকে সরিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহন করেন।
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৮৬ সালের ৭ই মে জাতীয় সংসদের তৃতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নিজ নামে জামায়াতে ইসলামীর এটাই ছিলে জাতীয় সংসদে প্রথম নির্বাচনে অংশ গ্রহন। জামায়াতে ইসলামী ৭৬টি আসনে নমিনী দিয়েছিল। এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়। এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৫৮টি, আওয়ামীলীগ ৯৬টি, জামায়াতে ইসলামী ১০টি, জাসদ ৪টি, অন্যান্য দল ১০টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২২টি আসনে বিজয়ী হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটা দ্বিতীয় উপস্থিতি।
সংসদ থেকে পদত্যাগ
১৯৮৭ সালে রাষ্ট্রপতি এরশাদের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন গড়েে ওঠে। ১৯৮৭ সালের ৩ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর ১০জন সংসদ সদস্য স্পিকার শামসুল হুদা চৌধুরীর নিকট গিয়ে পদত্যাগপত্র পেশ করেন। আওয়ামীলীগ সদস্যগণও পদত্যাগ করবেন বলে জানান। কিন্তু তাদের নেত্রী বিদেশে থাকায় তাদের সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হচ্ছিল। ঠিক এই অবস্থায় ৬ ডিসেম্বর এরশাদ জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেন। এতে আওয়ামী লীগহ বেশ বেকায়দায় পড়ে।
৪র্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আন্দোলনরত দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করে।
যুগপৎ আন্দোলন
১৯৮৯ সালের অক্টোবর মাসে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ৮ দলীয় জোট, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট , বামদের ৫ দলীয় জোট এবং জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের দাবীতে আন্দোলন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এর ফলে চাঙ্গা হয়ে উঠে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন। অনেক বিলম্বে হলেও জামায়াতে ইসলামীর কেয়ারটেকার সরকারের দাবী জাতীয় দাবীতে পরিণত হয়। ১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বের পৃথক পৃথক সমাবেশ থেকে ৮ দলীয় জােট, ৭ দলীয় জোট, ৫ দলীয় জোট এবং জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা প্রকাশ করে। ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়। জারি করা হয় কারফিউ। ছাত্র-জনতা কারফিউ ভেঙ্গে মিছিল করতে থাকে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী এরশাদ পদত্যাগ করেন। গঠিত হয় প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে দেশের প্রথম কেয়ারটেকার সরকার।
পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামীলীগ ৮৬টি, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৩৫টি, জামায়াতে ইসলামী ১৮টি, অন্যান্যরা ১৯টি আসনে বিজয়ী হয়। এই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ২২২ জন প্রার্থী দিয়েছিল। ১৮জন বিজয়ী হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটা তৃতীয় উপস্থিতি।
বিএনপিকে সরকার গঠনে সমর্থন
পঞ্চম জাতীয় সংসদ ছিলো একটি ঝুলন্ত সংসদ। সরকার গঠনের জন্য কমপক্ষে ১৫১টি আসন প্রয়োজন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৪০টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হলেও সরকার গঠনের জন্য কমপক্ষে আরো ১১ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন ছিলো। আওয়ামী লীগের ৮৮টি আসনের সাথে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ৩৫টি আসন এবং অন্যান্য ১৯টি আসন মিলে জোটবদ্ধ হলে আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪২টি। তার মানে, আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ছিলো আরো ৯ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন। জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন ছাড়া না বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, না আওয়ামী লীগের পক্ষে সরকার গঠন সম্ভব হচ্ছিলো। এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা আমির হোসেন আমুকে জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম শীর্ষ নেতা জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নিকট প্রেরণ করেন এবং বেশ কয়েকটি মন্ত্রিত্ব নিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে আওয়ামী লীগের সাথে কোয়ালিশন সরকারে যোগ দানের আহ্বান জানান। এই দিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে দলটির তৎকালীন মহাসচিব আবদুস সালাম তালুকদার জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খানের বরাবরে সরকার গঠনে তাঁদের দলকে সমর্থন করার জন্য অনুরোধপত্র পাঠান। ১১ই মার্চ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও অ্যাডভোকেট শেখ আনছার আলী অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের নিকট সমর্থনপত্রটি হস্তান্তর করেন।
২৮ শে মার্চ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৩০টি মহিলা আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ২৮ জন এবং জামায়াতে ইসলামীর ২ জন নমিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। জামায়াতে ইসলামীর দু’জন মহিলা সংসদ সদস্য ছিলেন- হাফিযা আসমা খাতুন ও খন্দকার রাশেদা খাতুন।
সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তনে ভূমিকা পালন
১৯৭২ সনে প্রবর্তিত সরকার পদ্ধতি ছিলো সংসদীয় বা পার্লামেন্টারি। ১৯৭৫ সনের ২৫ শে জানুয়ারি জাতীয় সংসদে গৃহীত সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী অনুযায়ী দেশে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি বা প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতি চালু হয়। ১৯৯১ সন পর্যন্ত দেশে প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতিই চালু ছিলো। ১৯৯১ সনে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাজনৈতিক দলগুলো সরকারপদ্ধতি নিয়ে নতুন করে মতামত ব্যক্ত করা শুরু করে। প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি কোন মন্দ পদ্ধতি নয়। এই পদ্ধতি সফলভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চালু রয়েছে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি স্বৈরাচারী শাসনে রূপান্তরিত হওয়ার বহু নমুনা রয়েছে। এই পদ্ধতিতে একই ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান হন বিধায় স্বৈরশাসনের রূপ নেয়ার ঝুঁকি থাকে। সংসদীয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান হন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি। সংসদীয় পদ্ধতি ব্রিটেনে সফলভাবে প্রচলিত রয়েছে কয়েক শতাব্দী ধরে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গোড়া থেকেই প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতিতে বিশ্বাসী ছিলো। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও একই মতের অনুসারী ছিলেন। আওয়ামী লীগ গোড়াতে সংসদীয় পদ্ধতি প্রবর্তন করে পরে প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতি চালু করে। পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে রাজনৈতিকভাবে দারুণ বেকায়দায় পড়ে। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা ছাড়া দলটির কোন বিকল্প পথ ছিলো না। আর সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তনের দাবি ছাড়া অন্য কোন দাবি নিয়ে মাঠে নেমে কোন ফায়দা হতো না। অতএব আওয়ামী লীগ এই দাবি নিয়েই সোচ্চার হয় এবং সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল জমা দেয়। জামায়াতে ইসলামীর লিয়াজোঁ কমিটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি চালু করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে। এই বিষয়ে মতবিনিময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীরসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাথে বসতে চাইলেন। মিটিংয়ের তারিখ, সময় নির্ধারিত হয়। মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে ছিলেন আবদুস সালাম তালুকদার ও কর্নেল (অব:) মুস্তাফিজুর রহমান। জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খানের সাথে ছিলেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতির পক্ষে যুক্তি পেশ করে। জামায়াতে ইসলামী সংসদীয় পদ্ধতির পক্ষে যুক্তি পেশ করে। এইভাবেই মিটিং শেষ হয়ে যায়। সুখের বিষয়, ঐ রাতেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সংসদীয় সরকার পদ্ধতির পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয় এবং জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল উত্থাপনের আয়োজন সম্পন্ন করে।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতে ইসলামীর যুগপৎ আন্দোলনের ফলেই ‣স্বরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন ঘটে। প্রতিষ্ঠিত হয় বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের পরিচালনাধীন কেয়ারটেকার সরকার। এই কেয়ারটেকার সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে সক্ষম হয়। জামায়াতে ইসলামীর ১৮ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সরকার গঠন করে। নবগঠিত সরকারের উচিত ছিলো অবিলম্বে সংবিধানে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি সংযোজিত করা। রহস্যজনক কারণে সরকার কেয়ারটেকার পদ্ধতি সংবিধানে সংযোজন করার ব্যাপারে অনীহা প্রদর্শন করতে থাকে। জামায়াতে ইসলামী, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি সংসদে উত্থাপনের জন্য কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতি বিল জমা দেয়। কিন্তু সরকারি দলের সিদ্ধান্ত ছাড়া এই বিষয়ে আলোচনা শুরু হতে পারছিলো না। সরকারের অপ্রত্যাশিত মনোভঙ্গি ও ভূমিকার কারণে রাজনৈতিক অঙ্গন আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ফলে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতি সংবিধানে সংযোজনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হয়। জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠনে যেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে সহযোগিতা করলো, সেই দলের সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলনে নামতে বাধ্য হলো। এক পর্যায়ে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। সরকারের পক্ষে মেয়াদ পূর্ণ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতেই সরকার ১৯৯৬ সনের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী এই নির্বাচন বর্জন করে। এই অস্বাভাবিক নির্বাচনের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সরকার গঠন করে। এই সরকার দুই সপ্তাহের মধ্যে সংবিধানে কেয়ারটেকার পদ্ধতি সংযোজন করে পদত্যাগ করে।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৯৬ সনের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ। কেয়ারটেকার সরকারপ্রধান ছিলেন বিচারপতি মুহাম্মাদ হাবিবুর রহমান। নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা মাক্কায় গিয়ে উমরা পালন করেন। দেশে ফিরে ইহরামের পট্টিবাঁধা অবস্থায় তাসবিহ হাতে নিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচার অভিযানে নামেন। গোটা নির্বাচনী অভিযানে তিনি দুই হাত জোড় করে জনগণের নিকট দলের অতীত ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং দলটিকে আরেকবার ক্ষমতাসীন করার জন্য বিনীতভাবে ভোটারদের প্রতি আবেদন জানান। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১১৬টি আসন, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৩২টি আসন এবং জামায়াতে ইসলামী ৩টি আসন লাভ করে। জামায়াতে ইসলামী থেকে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত তিনজন সদস্য হচ্ছেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (পিরোজপুর), কাজী শামসুর রহমান (সাতক্ষীরা) এবং মিজানুর রহমান চৌধুরী (নীলফামারী) বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটি চতুর্থ উপস্থিতি। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন।
চারদলীয় জোট গঠন
১৯৯৯ সনের ৩০শে নভেম্বর ২৯ মিন্টো রোডে অনুষ্ঠিত বৈঠক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আওয়ামী দুঃশাসন থেকে দেশকে উদ্ধার করার সংকল্প নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করেন এবং একটি ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ
২০০১ সনের ১লা অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকালে রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ। কেয়ারটেকার সরকার প্রধান ছিলেন বিচারপতি লতিফুর রহমান। শেখ হাসিনা ক্ষমতা ত্যাগ করার পূর্বে প্রশাসন, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনে তাঁর পছন্দের ব্যক্তিদেরকেই বসিয়ে যান। ২০০১ সনের ১লা অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আকস্মিকভাবে চারদলীয় জোট ত্যাগ করেন। তবে নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ চারদলীয় জোটে থেকে যায়। রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ এবং কেয়ারটেকার সরকার প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এমন এক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন যা পূর্ববর্তী দু’টি কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের চেয়েও
অধিকতর সুষ্ঠু হয়েছিলো। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৯৩টি আসন, আওয়ামী লীগ ৬২টি আসন এবং জামায়াতে ইসলামী ১৭টি আসন লাভ করে। সংসদের মহিলা আসনগুলো থেকে জামায়াতে ইসলামী ৪টি আসন লাভ করে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটি পঞ্চম উপস্থিতি।
প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে কৃষিমন্ত্রী এবং সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। এই নির্বাচনে পরাজিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা বেসামাল হয়ে পড়েন। সচেতন ভোটারগণ তার সাজানো বাগান তছনছ করে দেওয়ায় তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। তিনি নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি, কেয়ারটেকার সরকারপ্রধান, নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।
জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাস ও ভায়োলেন্স বিরোধী গণতান্ত্রিক দল
জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাস ও ভায়োলেন্স বিরোধী একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে জামায়াত কখনই সন্ত্রাস করেনি, সন্ত্রাসকে সমর্থন করেনি। এখন হরতাল করলেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা বুলেট বোমার মুখে সুশৃংখলভাবে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামীলীগ। এসেই দেশ ও জাতি বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। দেশে গনতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্র ধীরে ধীরে সংকোচিত হতে থাকে। বিরোধীদলের সভাসমাবেশে বাধা দেয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর সভা সমাবেশ অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। ধীরে ধীরে ঘরোয়া বৈঠক বন্ধ করে দেয়া হয়। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বানোয়াট অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তারপরও নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালনে কোন ধরনের সন্ত্রাস বা ভায়োলেন্সের পথ বেছে নেয়নি। ২০১১ সালে জামায়াতকে মাঠেই নামতে দেয়নি সরকার। ২০১১ সালের শেষ দিকে রাজধানীতে মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী। পুলিশের প্রচন্ড বাধাঁ গোলাগুলির পর জামায়াতে ইসলামী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছে। আজ পর্যন্ত কোথায়ও অস্ত্র কিংবা বেআইনী কোন জিনিস তারা হাতে তুলে নেয়নি। ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামী। সে সমাবেশে পুলিশ বাধা দেয়নি বলে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশ হলেও কোন ধরনের ভায়োয়েন্সের ঘটনা ঘটেনি। বরং সে সমাবেশে জামায়াতের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করার ঘটনাও প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ববাসী। এতে প্রমাণিত হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বিশ্বাস করে না।
সরকার শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধী মত দলনের অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নির্মূল করার জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবু্যুনালের আইন, এর গঠন ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে দেশে বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। এর প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম বন্ধ করতে জাতিসংঘ থেকে শুরু করেছে আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংগঠন, বিশেষজ্ঞগণ, ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি।
এ বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মোফাসিস্রে কুরআন, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ফাঁসির দন্ড ঘোষণা করে বিতর্কিত আদালত-আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায় ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সারাদেশে আল্লামা সাঈদীর ভক্ত-অনুরাগীরা বিক্ষোভে ফেটে পরে, তারা রাস্তায় নেমে আসে। কিন্তু সরকারের আইন-শৃংখলা বাহিনী সারাদেশেই সাঈদী ভক্তদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। একদিনেই শাহাদাত বরণ করে শতাধিক নারী পুরুষ। কয়েকদিনের বিক্ষোভে আড়াইশত মানুষ শাহাদাত বরণ করেছে। আহত হয়েছে হাজার-হাজার মানুষ। যারা শাহাদাত বরণ করেছেন, তাদের অধিকাংশই কোন রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না, শুধুমাত্র আল্লামা সাঈদীর প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার কারনেই প্রতিবাদ জানাতে রাজপথে নেমেছিল।
গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার আন্দোলন
আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দি করে। দেশকে একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যেতে দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল ‘কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করে। সমগ্র জাতি এ ব্যবস্থার পক্ষে মত দিলেও সরকার তা বাতিল করে সংবিধানের সংশোধনী আনে। চিরকাল ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলকে বাইরে রেখে পেশীশক্তির জোরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি “ভোটারবিহীন’ একতরফা নির্বাচন করে নিজ দলীয় ১৫৩জন প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করে। দেশে-বিদেশে কোথাও এ নির্বাচনের কোন গ্রহনযোগ্যতা পায়নি। এর মধ্য দিয়ে দেশে কায়েম করে অঘোষিত বাকশালী শাসন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। সরকারী দলের বাইরে অন্যান্য দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড ধীরে ধীরে সংকোচিত করে আনে। এক পর্যায়ে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অফিস সীলগালা করে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উপর অঘোষিতভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
বিএনপি, জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট চলতি মাসের ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করতে চাইলে সরকার নিজেই ঢাকামুখি সকল যানচালাচল বন্ধ করে দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে তার গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরদিন থেকে শুরু হয় ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি। অচল হয়ে পড়ে গোটা বাংলাদেশ। সরকার এ আন্দোলন স্তব্ধ করে দিতে দেশব্যাপি শুরু করে রাষ্ট্রীয় আইন শৃংখলা বাহিনী দিয়ে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের হত্যা করার মিশন। কথিত বন্দুক যুদ্ধের নামে বাড়ী থেকে ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের। গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে তাদের। আন্দোলনকে সহিংস রূপ দিতে সরকারের এজেন্টরা গাড়ি পুড়িয়ে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যেই সরকার যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং এজেন্টদের দিয়ে সাধারণ জনগণের ওপরে পেট্টোল বোমা মেরে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। পেট্টোল বোমা সহ সরকার দলীয় ক্যাডাররা বিভিন্ন জায়গায় গ্রেফতারের ঘটনাও দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মিডিয়ায় ছবিসহ প্রকাশিত হয়েছে। এই লিংকটি ব্রাউজ করুন প্লীজ: হরতাল অবরোধে আগুন দিতে গিয়ে কারা হাতেনাতে ধরা খায় ? পেট্রোল বোম ইত্যাদি দিয়ে নৃশ্রংস হামলাগুলো কার? গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে জঙ্গী এবং নাশকতার রূপ দিতে সরকার এই অপকৌশল হাতে নিয়েছে।
গণতান্ত্রিক আন্দোলন কখনই গায়ের জোরে পেশীশক্তি দিয়ে দমন করা যায় না। অতীতে যেমন তা সম্ভব হয়নি, ভবিষ্যতেও তা হবে না। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের দলীয় ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা করে আসছে । তেমনি দেশ পরিচালনায় গণতন্ত্রের প্রতি জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাসী বলে প্রতিটি সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে একটি বড় অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। দেশ পরিচালনায় জামায়াতে ইসলামী আইনের শাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে। বিগত দিনে সরকার পরিচালনায় জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ৩টি মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে দেশের উন্নয়ন, সততা ও জবাবদিহিতার যে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে।
বিঃ দ্রঃ বাংলাদেশের মানুষ এর ইতিহাসে বিরাট একটা সময় গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করেছে। অতীতে এদেশে স্বৈরাচারী শক্তি ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক সংগ্রামে বিশ্বে দৃষ্টান্ত হয়েছে । এর পিছনে একটি বড় ভূমিকা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জাময়োতে ইসলামীর উজ্জ্বল, আপোষহীন ও দিকনির্দেশক অবদান। এই লিংকটি ব্রাউজ করুন প্লীজ: কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ এবং জামায়াতে ইসলামী
১৯৭৮ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক ফরমান জারি করে একদলীয় ব্যবস্থার বাতিল করে বহুদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এর আগে ১৯৭৬ সালের ৩রা মে রাষ্ট্রপতির জারিকৃত একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ নম্বর ও অনুচ্ছেদটি বাতিল করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উপর আরোপিত বিধি নিষেধ তুলে নেয়া হয়।
১৯৭৭ সালের ৩০ মে গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গৃহিত পদক্ষেপগুলো অনুমোদিত হওয়ায় ইসলামের নামে রাজনৈতিক দল গঠন করার পথে আর কোন বাধা রইলো না।১৯৭৬ সালের ২৪ আগষ্ট ডেমোক্রেটিক পার্টি, নেযামে ইসলাম পার্টি, খেলাফতে রব্বনী পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (IDL) নামে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম গড়ে তোলেন। মাওলানা ছিদ্দিক আহমদকে (নেযামে ইসলাম পার্টি) চেয়ারম্যান, মাওলানা আবদুর রহীম (জামায়াতে ইসলামী), মাওলানা আবদুস সুবহান (জামায়াতে ইসলামী), এডভোকেট সা’দ আহমদকে (জামায়াতে ইসলামী) ভাইস চেয়ারম্যান এবং এডভোকেট শফিকুর রহমানকে (ডেমোক্রেটিক লীগ) সেক্রেটারি জেনারেল করে এর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ দল অংশ গ্রহন করে।
২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ২০৭টি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ৩৯টি এবং মুসলিম লীগ ১৪টি আসনে বিজয়ী হয়। ইসলামিক ডেমোক্রেটি লীগ থেকে মনোনীত জামায়াতে ইসলামীর ৬জন সদস্য জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটাই প্রথম উপস্থিতি।
১৯৭৯ সালের ২৫,২৬ ও ২৭ মে ঢাকাস্থ ইডেন হোটেল প্রাঙ্গনে একটি কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আব্বাস আলী খানের আহ্বানে এই কনভেনশনে উপস্থিত হন সারা বাংলাদেশ থেকে আগত ৪৫০ জন সদস্য। এই সম্মেলনে একটি নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়। সেই গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালের ২৭ মে থেকে চারদফা পূর্নাঙ্গ কর্মসূচি নিয়ে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর কর্মতৎপরতা শুরু করে।
কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা প্রণয়ন
১৯৮০ সালের মাঝামাঝি আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকার সংক্রান্ত একটি রূপরেখা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের অধিবেশনে পেশ করেন। ১৯৮০ সালের ৭ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান রমনা গ্রীনে আহুত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই রূপরেখা প্রকাশ করেন।
আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোট এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট কিছু কিছু যুগপৎ কর্মসূচি দিতে থাকে। ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর ১৫ দলীয় জোট ও ৭ দলীয় জোট সচিবায়ল ঘেরাও কর্মসূচি দেয়। এ কর্মসূচিতে জনগনের তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার তার শাসন আরো দৃঢ় করে। বন্ধ করে দেয় রাজনৈতিক তৎপরতা। এই সময় জামায়াতে ইসলামীর লিয়াজো কমিটি দুই নেত্রীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে অগনতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরন করে গনতন্ত্রে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জামায়াতে ইসলামীর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। এই বক্তব্যের প্রতি তারা ইতিবাচব মনোভঙ্গি ব্যক্ত করেন। তখন থেকে ১৫ দলীয় জোট ও ৭ দলীয় জোটের সাথে জামায়াতে ইসলামীর লিয়াজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে থাকে। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বিচারপতি আহসান উদ্দীন চৌধুরীকে সরিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহন করেন।
১৯৮৬ সালের ৭ই মে জাতীয় সংসদের তৃতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নিজ নামে জামায়াতে ইসলামীর এটাই ছিলে জাতীয় সংসদে প্রথম নির্বাচনে অংশ গ্রহন। জামায়াতে ইসলামী ৭৬টি আসনে নমিনী দিয়েছিল। এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়। এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৫৮টি, আওয়ামীলীগ ৯৬টি, জামায়াতে ইসলামী ১০টি, জাসদ ৪টি, অন্যান্য দল ১০টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২২টি আসনে বিজয়ী হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটা দ্বিতীয় উপস্থিতি।
১৯৮৭ সালে রাষ্ট্রপতি এরশাদের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন গড়েে ওঠে। ১৯৮৭ সালের ৩ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর ১০জন সংসদ সদস্য স্পিকার শামসুল হুদা চৌধুরীর নিকট গিয়ে পদত্যাগপত্র পেশ করেন। আওয়ামীলীগ সদস্যগণও পদত্যাগ করবেন বলে জানান। কিন্তু তাদের নেত্রী বিদেশে থাকায় তাদের সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হচ্ছিল। ঠিক এই অবস্থায় ৬ ডিসেম্বর এরশাদ জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেন। এতে আওয়ামী লীগহ বেশ বেকায়দায় পড়ে।
৪র্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আন্দোলনরত দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করে।
১৯৮৯ সালের অক্টোবর মাসে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ৮ দলীয় জোট, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট , বামদের ৫ দলীয় জোট এবং জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের দাবীতে আন্দোলন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এর ফলে চাঙ্গা হয়ে উঠে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন। অনেক বিলম্বে হলেও জামায়াতে ইসলামীর কেয়ারটেকার সরকারের দাবী জাতীয় দাবীতে পরিণত হয়। ১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বের পৃথক পৃথক সমাবেশ থেকে ৮ দলীয় জােট, ৭ দলীয় জোট, ৫ দলীয় জোট এবং জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা প্রকাশ করে। ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়। জারি করা হয় কারফিউ। ছাত্র-জনতা কারফিউ ভেঙ্গে মিছিল করতে থাকে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী এরশাদ পদত্যাগ করেন। গঠিত হয় প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে দেশের প্রথম কেয়ারটেকার সরকার।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামীলীগ ৮৬টি, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৩৫টি, জামায়াতে ইসলামী ১৮টি, অন্যান্যরা ১৯টি আসনে বিজয়ী হয়। এই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ২২২ জন প্রার্থী দিয়েছিল। ১৮জন বিজয়ী হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটা তৃতীয় উপস্থিতি।
পঞ্চম জাতীয় সংসদ ছিলো একটি ঝুলন্ত সংসদ। সরকার গঠনের জন্য কমপক্ষে ১৫১টি আসন প্রয়োজন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৪০টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হলেও সরকার গঠনের জন্য কমপক্ষে আরো ১১ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন ছিলো। আওয়ামী লীগের ৮৮টি আসনের সাথে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ৩৫টি আসন এবং অন্যান্য ১৯টি আসন মিলে জোটবদ্ধ হলে আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪২টি। তার মানে, আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ছিলো আরো ৯ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন। জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন ছাড়া না বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, না আওয়ামী লীগের পক্ষে সরকার গঠন সম্ভব হচ্ছিলো। এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা আমির হোসেন আমুকে জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম শীর্ষ নেতা জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নিকট প্রেরণ করেন এবং বেশ কয়েকটি মন্ত্রিত্ব নিয়ে জামায়াতে ইসলামীকে আওয়ামী লীগের সাথে কোয়ালিশন সরকারে যোগ দানের আহ্বান জানান। এই দিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে দলটির তৎকালীন মহাসচিব আবদুস সালাম তালুকদার জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খানের বরাবরে সরকার গঠনে তাঁদের দলকে সমর্থন করার জন্য অনুরোধপত্র পাঠান। ১১ই মার্চ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও অ্যাডভোকেট শেখ আনছার আলী অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের নিকট সমর্থনপত্রটি হস্তান্তর করেন।
২৮ শে মার্চ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৩০টি মহিলা আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ২৮ জন এবং জামায়াতে ইসলামীর ২ জন নমিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। জামায়াতে ইসলামীর দু’জন মহিলা সংসদ সদস্য ছিলেন- হাফিযা আসমা খাতুন ও খন্দকার রাশেদা খাতুন।
১৯৭২ সনে প্রবর্তিত সরকার পদ্ধতি ছিলো সংসদীয় বা পার্লামেন্টারি। ১৯৭৫ সনের ২৫ শে জানুয়ারি জাতীয় সংসদে গৃহীত সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী অনুযায়ী দেশে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি বা প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতি চালু হয়। ১৯৯১ সন পর্যন্ত দেশে প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতিই চালু ছিলো। ১৯৯১ সনে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাজনৈতিক দলগুলো সরকারপদ্ধতি নিয়ে নতুন করে মতামত ব্যক্ত করা শুরু করে। প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি কোন মন্দ পদ্ধতি নয়। এই পদ্ধতি সফলভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চালু রয়েছে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি স্বৈরাচারী শাসনে রূপান্তরিত হওয়ার বহু নমুনা রয়েছে। এই পদ্ধতিতে একই ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান হন বিধায় স্বৈরশাসনের রূপ নেয়ার ঝুঁকি থাকে। সংসদীয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান হন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি। সংসদীয় পদ্ধতি ব্রিটেনে সফলভাবে প্রচলিত রয়েছে কয়েক শতাব্দী ধরে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গোড়া থেকেই প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতিতে বিশ্বাসী ছিলো। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও একই মতের অনুসারী ছিলেন। আওয়ামী লীগ গোড়াতে সংসদীয় পদ্ধতি প্রবর্তন করে পরে প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতি চালু করে। পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে রাজনৈতিকভাবে দারুণ বেকায়দায় পড়ে। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা ছাড়া দলটির কোন বিকল্প পথ ছিলো না। আর সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তনের দাবি ছাড়া অন্য কোন দাবি নিয়ে মাঠে নেমে কোন ফায়দা হতো না। অতএব আওয়ামী লীগ এই দাবি নিয়েই সোচ্চার হয় এবং সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল জমা দেয়। জামায়াতে ইসলামীর লিয়াজোঁ কমিটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি চালু করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে। এই বিষয়ে মতবিনিময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীরসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাথে বসতে চাইলেন। মিটিংয়ের তারিখ, সময় নির্ধারিত হয়। মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে ছিলেন আবদুস সালাম তালুকদার ও কর্নেল (অব:) মুস্তাফিজুর রহমান। জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খানের সাথে ছিলেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতির পক্ষে যুক্তি পেশ করে। জামায়াতে ইসলামী সংসদীয় পদ্ধতির পক্ষে যুক্তি পেশ করে। এইভাবেই মিটিং শেষ হয়ে যায়। সুখের বিষয়, ঐ রাতেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সংসদীয় সরকার পদ্ধতির পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয় এবং জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল উত্থাপনের আয়োজন সম্পন্ন করে।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতে ইসলামীর যুগপৎ আন্দোলনের ফলেই ‣স্বরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন ঘটে। প্রতিষ্ঠিত হয় বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদের পরিচালনাধীন কেয়ারটেকার সরকার। এই কেয়ারটেকার সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে সক্ষম হয়। জামায়াতে ইসলামীর ১৮ জন সংসদ সদস্যের সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সরকার গঠন করে। নবগঠিত সরকারের উচিত ছিলো অবিলম্বে সংবিধানে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি সংযোজিত করা। রহস্যজনক কারণে সরকার কেয়ারটেকার পদ্ধতি সংবিধানে সংযোজন করার ব্যাপারে অনীহা প্রদর্শন করতে থাকে। জামায়াতে ইসলামী, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি সংসদে উত্থাপনের জন্য কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতি বিল জমা দেয়। কিন্তু সরকারি দলের সিদ্ধান্ত ছাড়া এই বিষয়ে আলোচনা শুরু হতে পারছিলো না। সরকারের অপ্রত্যাশিত মনোভঙ্গি ও ভূমিকার কারণে রাজনৈতিক অঙ্গন আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ফলে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতি সংবিধানে সংযোজনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হয়। জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠনে যেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে সহযোগিতা করলো, সেই দলের সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলনে নামতে বাধ্য হলো। এক পর্যায়ে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। সরকারের পক্ষে মেয়াদ পূর্ণ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতেই সরকার ১৯৯৬ সনের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী এই নির্বাচন বর্জন করে। এই অস্বাভাবিক নির্বাচনের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সরকার গঠন করে। এই সরকার দুই সপ্তাহের মধ্যে সংবিধানে কেয়ারটেকার পদ্ধতি সংযোজন করে পদত্যাগ করে।
১৯৯৬ সনের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ। কেয়ারটেকার সরকারপ্রধান ছিলেন বিচারপতি মুহাম্মাদ হাবিবুর রহমান। নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা মাক্কায় গিয়ে উমরা পালন করেন। দেশে ফিরে ইহরামের পট্টিবাঁধা অবস্থায় তাসবিহ হাতে নিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচার অভিযানে নামেন। গোটা নির্বাচনী অভিযানে তিনি দুই হাত জোড় করে জনগণের নিকট দলের অতীত ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং দলটিকে আরেকবার ক্ষমতাসীন করার জন্য বিনীতভাবে ভোটারদের প্রতি আবেদন জানান। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১১৬টি আসন, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৩২টি আসন এবং জামায়াতে ইসলামী ৩টি আসন লাভ করে। জামায়াতে ইসলামী থেকে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত তিনজন সদস্য হচ্ছেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (পিরোজপুর), কাজী শামসুর রহমান (সাতক্ষীরা) এবং মিজানুর রহমান চৌধুরী (নীলফামারী) বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটি চতুর্থ উপস্থিতি। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন।
১৯৯৯ সনের ৩০শে নভেম্বর ২৯ মিন্টো রোডে অনুষ্ঠিত বৈঠক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আওয়ামী দুঃশাসন থেকে দেশকে উদ্ধার করার সংকল্প নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করেন এবং একটি ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
২০০১ সনের ১লা অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকালে রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ। কেয়ারটেকার সরকার প্রধান ছিলেন বিচারপতি লতিফুর রহমান। শেখ হাসিনা ক্ষমতা ত্যাগ করার পূর্বে প্রশাসন, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনে তাঁর পছন্দের ব্যক্তিদেরকেই বসিয়ে যান। ২০০১ সনের ১লা অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আকস্মিকভাবে চারদলীয় জোট ত্যাগ করেন। তবে নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ চারদলীয় জোটে থেকে যায়। রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ এবং কেয়ারটেকার সরকার প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এমন এক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন যা পূর্ববর্তী দু’টি কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের চেয়েও
অধিকতর সুষ্ঠু হয়েছিলো। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৯৩টি আসন, আওয়ামী লীগ ৬২টি আসন এবং জামায়াতে ইসলামী ১৭টি আসন লাভ করে। সংসদের মহিলা আসনগুলো থেকে জামায়াতে ইসলামী ৪টি আসন লাভ করে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটি পঞ্চম উপস্থিতি।
প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে কৃষিমন্ত্রী এবং সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। এই নির্বাচনে পরাজিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা বেসামাল হয়ে পড়েন। সচেতন ভোটারগণ তার সাজানো বাগান তছনছ করে দেওয়ায় তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। তিনি নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি, কেয়ারটেকার সরকারপ্রধান, নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।
জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাস ও ভায়োলেন্স বিরোধী একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে জামায়াত কখনই সন্ত্রাস করেনি, সন্ত্রাসকে সমর্থন করেনি। এখন হরতাল করলেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা বুলেট বোমার মুখে সুশৃংখলভাবে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামীলীগ। এসেই দেশ ও জাতি বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। দেশে গনতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্র ধীরে ধীরে সংকোচিত হতে থাকে। বিরোধীদলের সভাসমাবেশে বাধা দেয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর সভা সমাবেশ অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। ধীরে ধীরে ঘরোয়া বৈঠক বন্ধ করে দেয়া হয়। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বানোয়াট অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তারপরও নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালনে কোন ধরনের সন্ত্রাস বা ভায়োলেন্সের পথ বেছে নেয়নি। ২০১১ সালে জামায়াতকে মাঠেই নামতে দেয়নি সরকার। ২০১১ সালের শেষ দিকে রাজধানীতে মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী। পুলিশের প্রচন্ড বাধাঁ গোলাগুলির পর জামায়াতে ইসলামী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছে। আজ পর্যন্ত কোথায়ও অস্ত্র কিংবা বেআইনী কোন জিনিস তারা হাতে তুলে নেয়নি। ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশ করে জামায়াতে ইসলামী। সে সমাবেশে পুলিশ বাধা দেয়নি বলে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশ হলেও কোন ধরনের ভায়োয়েন্সের ঘটনা ঘটেনি। বরং সে সমাবেশে জামায়াতের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করার ঘটনাও প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ববাসী। এতে প্রমাণিত হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বিশ্বাস করে না।
আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দকে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দি করে। দেশকে একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যেতে দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল ‘কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করে। সমগ্র জাতি এ ব্যবস্থার পক্ষে মত দিলেও সরকার তা বাতিল করে সংবিধানের সংশোধনী আনে। চিরকাল ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলকে বাইরে রেখে পেশীশক্তির জোরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি “ভোটারবিহীন’ একতরফা নির্বাচন করে নিজ দলীয় ১৫৩জন প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করে। দেশে-বিদেশে কোথাও এ নির্বাচনের কোন গ্রহনযোগ্যতা পায়নি। এর মধ্য দিয়ে দেশে কায়েম করে অঘোষিত বাকশালী শাসন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। সরকারী দলের বাইরে অন্যান্য দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড ধীরে ধীরে সংকোচিত করে আনে। এক পর্যায়ে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অফিস সীলগালা করে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উপর অঘোষিতভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
১৬ মার্চ ২০১৫, সোমবার
Monday, January 2, 2017
কাদিয়ানী সমস্যা : খতমে নবুও্যত আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর স্মরণীয় সাফল্য
খতমে নবুও্যত অর্থাৎ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-ই শেষ নবী, এরপর কোন প্রকার নবী আসবে না। কেউ নবী দাবী করলে সে হবে মিথ্যাবাদী। সে কাফের এবং তাকে মান্যকারীরাও কাফের - এটা ইসলামের অলংঘনীয় আকীদা। ব্রিটিশ আমলে কাফের খৃস্টানদের সহায়তায় আবির্ভূত কাদিয়ানীরা ঐ খতমে নবুও্যত আকিদা অস্বীকার করে। বর্তমানেও ইহুদী-খৃষ্টানদের সহায়তায় তাদের কার্যক্রম চালু রেখেছে। এদের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী পৃথিবীব্যাপী অবিস্মরণীয় সংগ্রাম পরিচালনা করে এবং বিরাট সাফল্যও অর্জন করে।
পাকিস্তানের প্রথম দিকের কথা। পাঞ্জাবের মুসলিম লীগ নেতা লিয়াকত আলী খানের মৃত্যুর পর ১৯৫১ সালে প্রধানমন্ত্রী হন বাঙ্গালী খাজা নাজিম উদ্দিন। তিনি ১৯৫৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। সে সময় পাকিস্তানে আহমদিয়া বা কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ব্যাপক বিস্তার হয় এবং একইসাথে তারা পাকিস্তানের সংবিধানে ভূমিকা রাখতে শুরু করে। পাকিস্তানের কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তা এই মতবাদের অনুসারী ছিলেন। কাদিয়ানীদের বিভ্রান্ত মতবাদ পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে প্রভাব রাখার আশংকা শুরু হয় মুসলিমদের মধ্যে। তখনকার ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মূল নেতা আল্লামা মওদূদী সাহেব বিষয়টাকে গুরুত্বের সাথে দেখেন। তিনি সংবিধান কমিটি থেকে চিহ্নিত কাদিয়ানীদের বাদ দেওয়া, কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কাদিয়ানী ও অমুসলিমদের অংশগ্রহণ না করানোর দাবি তুলেন।
রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি আল্লামা সাইয়্যেদ মওদুদী বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনও চালিয়ে যান। তিনি 'কাদিয়ানী মাসয়ালা' নামে একটি বই লিখে কাদিয়ানী বা আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম প্রমাণ করেন এবং তাদের ভ্রান্ত আকিদার স্বরূপ উন্মোচন করেন। এই বইটি কাদিয়ানী বিরোধী আন্দোলনে গতি এনে দেয়। এই আন্দোলন বড় ধরনের নাড়া দেয় পাকিস্তানকে। অধিকাংশ মুসলিম এই আন্দোলনে অংশগ্রহন করেন। এ সময় অনেকগুলো সংগঠন একযোগে কাদিয়ানীদেরকে সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষনার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তারা সর্বদলীয় কনভেনশনে ১৯৫৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে 'ডাইরেক্ট অ্যাকশন কমিটি' গঠন করে। জামায়াত এই কমিটির বিরোধিতা করে অহিংস আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়।
এদিকে পাঞ্জাবে কাদিয়ানী সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকার ও জনগণের মধ্যকার দাঙ্গা ভয়াবহরূপ ধারণ করে। এরূপ পরিস্থিতিতে সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ ১৯৫৩ সালের আটাশে মার্চ মাওলানা মওদূদীসহ জামায়াতের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে। এটা ছিল মূলত সামরিক কর্তৃপক্ষের ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতার নগ্ন বহিপ্রকাশ। তারা দাঙ্গা সৃষ্টির অভিযোগে গ্রেপ্তার করলেও মূলত মওদূদী ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী মাওলানাকে গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে “কাদিয়ানী মাসয়ালা” বইয়ের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এ অভিযোগেই ৮ই মে তারিখে সামরিক আদালত মাওলানাকে ফাঁসীর আদেশ প্রদান করে। অথচ মাওলানা সামরিক মানুষ ছিলেন না। মূলত এটা ছিল একটা অজুহাত। আল্লামা মওদূদীকে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে দূরে রাখাই ছিলো এর বেসিক উদ্দেশ্য। এর পেছনে মুসলিম লীগের ইন্ধন ছিল। মাওলানার ফাঁসীর ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আরেক বাঙালি নেতা মোহাম্মদ আলী বগুড়া। বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর তীব্র বিরোধিতা ও ক্ষোভের মুখে মুসলিম লীগ ও সেনাবাহিনী তাঁর মৃত্যু দণ্ডাদেশ মওকুফ করে তারা মাওলানাকে যাবজ্জীবনের কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করে। আবার এর বিশ মাস কারাবাসের পর মাওলানা বিনা শর্তে মুক্তি দেয় সরকার।
যাই হোক, সামরিক কর্তৃপক্ষ যে “কাদিয়ানী মাসয়ালা” পুস্তিকা প্রণয়নের অজুহাতে মাওলানাকে মৃত্যু দণ্ডাদেশ প্রদান করে সে পুস্তিকাটির কিন্তু তারা বাজেয়াপ্ত করেনি। লাহোরের সামরিক আদালতে তার বিচার চলাকালেই লাহোর শহরেই বইটির বেস্ট সেল চলছিল। শুধু লাহোর নয় সারা পাকিস্তানেই বইটির বিক্রি চলছিল দেদারছে। মূলত বইটির কোথাও কোন উস্কানিমূলক কথা ছিল না। বরং তাতে তিনি 'ডাইরেক্ট অ্যাকশন কমিটি'র বিরোধিতা করেছেন। তাই সরকারও চেয়েছিলো বইটি মানুষ পড়ুক।
কাদিয়ানীরা যে মুসলমান নয়, অকাট্য যুক্তি প্রমাণ দিয়ে এ বইটিতে তা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। কাদিয়ানীদেরকে আইনগতভাবে অমুসলিম ঘোষণা করাই ছিল আল্লামা মওদূদীর দাবি। এ দাবির স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় তত্ত্ব ও তথ্য এ বইটিতে সরবরাহ করা হয়েছে। এ দাবী আদায়ের লক্ষ্যে মাওলানা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলবার আহ্বান জানান। অবশেষে ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়। কাদিয়ানীরা যে অমুসলিম এ ব্যাপারে উম্মতের গোটা আলেম সমাজ একমত। জামায়াতে ইসলামীর তৎপরতায় রাবেতায়ে আলমে ইসলামীর মাধ্যমে সারা পৃথিবীর ইসলামী স্কলারদের মাধ্যমে সমবেতভাবে কাদীয়ানীরা কাফের ঘোষিত হয়। ১৯৮৪ সালে পাকিস্তানে কাদিয়ানীদের কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়।
সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (রহঃ)-এর “কাদিয়ানী সমস্যা” এই বই পাওয়ার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: কাদিয়ানী সমস্যা - এরপর উপরের ডানপাশের কোনায় তীর চিহ্ন ক্লিক করে ডাউনলোড করে নিন।
বহু ইসলামী দল ও গোষ্ঠী কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে এদের প্রতিষ্ঠাকালের পর থেকে নানাভাবে সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। এখানে একটা ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে আলেমগণ তাদের বিরুদ্ধে নানা তৎপরতার পাশাপাশি মুবাহালার জন্য ডেকেছিল। কাদিয়ানীর প্রতিষ্ঠাতা মীর্যা গোলাম কাদিয়ানী (লাঃ) এতে সাড়া প্রদান করে। সেই মুবাহালা বা পরস্পর আল্লাহ’র গজবকে আহ্বান করে মিথ্যাবাদীর উপর তার পতন কামনা করাই তার জন্য কাল হয়েছিল। কারণ কাজী সানাউল্লাহ অমৃতসরী সাহেবের সাথে মুবাহালায় সে বলেছিল, আমাদের মধ্যে যে মিথ্যুক আল্লাহ যেন তাকে অপরের জীবদ্দশায় নিকৃষ্ট অবস্থায় মৃত্যু দেন। আর তিনি বলেছিলেন আমীন (কবুল করুন)। অতঃপর কাজী সাহেবের মৃত্যুর পূর্বেই মীর্যা গোলাম কাদিয়ানী (লাঃ) একদিন পায়খানায় প্রবেশ করে সেখানেই পড়ে মারা যায়। আর এভাবেই আল্লাহ মিথ্যাবাদীদের সাজা দিয়ে থাকেন।
Popular Posts
-
(জবাবদানকারী একজন ক্বওমী আলেম:) বন্ধুরা, ফেসবুক খুললেই দেখা যায়, মওদুদী ছাহাবা বিদ্বেষী, জামায়াত শিবির সাহাবা বিদ্বেষী, বিশেষ করে লা মা...
-
Official Website: Bangla: https://jamaat-e-islami.org English: https://www.jamaat-e-islami.org/en/ E-book: www.bjilibrary.c...
-
লিখেছেনঃ জীবন রহমান হৃদয় সৌদি বাদশাহ এর আমন্ত্রণে ১৯৬১ সালের ডিসেম্বর মাসে রিয়াদে পৌঁছেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ)। আলোচনার এ...