- Home
- All links
- Books
- Syllabus of Jamaat
- Ebook of Syllabus
- Ebook of Allama Syed Abul Ala Maududi
- Ebbok of Maolana Matiur Rahman Nizami
- Ebbok of AKM Nazir Ahmed
- Ebook of Muhammad Kamaruzzaman
- Ebook of Allama Yusuf Al Qarawi
- Ebook of Sayyid Qutb Shaheed
- Ebook of Allama Delwar Hossain Sayedee
- Ebook of Professor Ghulam Azam
- Ebook of Abbas Ali Khan
- Ebook of Maulana Muhammad Abdur Rahim
- Ebook of Haron Yahya Turkish
- Book of Anti-Atheism
- Subjects
- Jamaat-e-Islami
- Islami Chhatrashibir
- Prominent's opinion
- Success of Jamaat
- About us
Thursday, January 24, 2019
Monday, January 21, 2019
পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য আগ্রাসন : আমাদের করণীয়
খুরশীদ আলম বাবু : বাংলাদেশের সাহিত্যের বাজার এখন সত্যিই দুঃসময়ের মুখোমুখি। পশ্চিমবঙ্গের বাজারী লেখকদের বাজার দখলের প্রাণান্তর প্রচেষ্টার সাথে এ দেশীয় এক শ্রেণির প্রকাশকদের সহযোগিতা রীতিমত ভয়ংকর শংকার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য এর জন্য কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের ঢালাও ভাবে দোষারোপ করাটা মোটেও ঠিক হবে না। প্রথমতঃ পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের গল্প উপন্যাস এদেশের সাধারণ পাঠক পড়তে আগ্রহী। আমার অনেকের সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে, যারা এদেশের গল্প-ঔপন্যাসিকদের খুব একটা গুরুত্ব দেবার পক্ষপাতি নন; এমনকি হিসেবের মধ্যেও আনেন না। আবার এও সত্যিকার ভাবে লক্ষ্য করে দেখেছি তাঁদের প্রিয় লেখকদের মধ্যে অনেক ভালো ঔপন্যাসিক রয়েছে। এটাও আবার স্বীকার্য যে, আমাদের সাহিত্যের মানটাও আশানুরূপ ভালো না। দ্বিতীয়তঃ এখানে ভালো ও সৎ প্রকাশকের অভাব সব সময় ছিলো, উপরন্তু আমাদের সাহিত্য এখনও শিবিরে বিভক্ত। রাজনীতি এসে সর্বনাশ অনেক আগেই ঘটিয়েছিল; এখন সেটাই চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছে। এখন লেখকের পরিচয় নির্ধারিত হয় উনি বামপন্থী আর উনি মৌলবাদী। সেই সাথে রয়েছে আমাদের দূর্বল রাষ্ট্রনীতি। কারণ আমাদের দেশে সত্যিকার ভাবে এখন অবধি খাঁটি দেশপ্রেমিক সরকার আসেনি। আসলে হয়তো এই নিবন্ধ লেখার প্রয়োজন হতো না। ভারত বিশাল শক্তিধর দেশ, তার সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে গিয়ে আমাদের রাজনীতিবীদরা নিজেদের মর্যাদা হারাতেও দ্বিধাবোধ করেন না। ফলশ্রুতিতে বাণিজ্যে যে অসমতা দেখা দিয়েছে তার রীতিমত প্রভাবও আমাদের সাহিত্য বাজারে পড়তে শুরু করেছে। কিন্তু তথাকথিত উদারবাদী বুদ্ধিজীবীরা এখনো প্রকাশ্যে বলেই বসেন- বইয়ের বিষয়ে-কোন রকম বাধা প্রদান করাটা ঠিক হবে না। কেন করেন? তাঁদের বদ উদ্দেশ্যের হাঁড়ির খবর আমাদের অজানা নেই। ভারতীয় পত্র-পত্রিকায় সামান্যতম একটি লেখা প্রকাশের সুযোগের কেল্লাফতে দান মারার কারণে নিজের দেশ প্রেমিকতাবোধ বিসর্জন দিতে দ্বিধাবোধ করেন না। তাদের দেশপ্রীতির নজির আমাদের জানা আছে। আমাদের দেশে এই রকম বুদ্ধিজীবী কারা, নাম না বললেও খুব একটা বুঝে নিতে অসুবিধা হবে না। মনে রাখতে হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও বই এখনো গুরুত্বপূর্ণ বস্তু। পশ্চিমবঙ্গের সাথে আমাদের বই আমদানী-রফতানী বাণিজ্যিক ঘাটতি এখনো অত্যন্ত বেশি। আত্মবিস্মৃতি জাতি হিসেবে আমরা আবার খ্যাতি উপার্জন করেছি, সেটা বারবার প্রমাণিত হয়। কবি জসিম উদদীন বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পরই আমাদের সর্ব প্রথম স্মরণ করিয়ে দেন, এই সমস্যাটির কথা। কারণ তিনি ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের প্রকাশকদের চরিত্র সম্পর্কে জানতেন। আমাদের সচেতন করার জন্য লিখেছিলেন-
“পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমরা প্রতি বছর ৬০/৭০ লাখ টাকার বই-পুস্তক আনাইয়া থাকি। কিন্তু আমাদের লিখিত বই পশ্চিমবঙ্গে যাইতে পারে না। আমাদের এখানে কত টাকার বই আনিব তাহার অংক নির্দিষ্ট করা আছে, কিন্তু আমাদের বিশ্বাস পশ্চিমবঙ্গে তেমনটি নাই। প্রতিদান না হইলে সখ্য বেশি দিন টেকে না। একমুখী পথে যাওয়া আসা চলে তা না, ওদেশের ভালোবাসার যাহারা অন্তরঙ্গ করিতে চান তাহারা যেন এই কথাটি ভালো করে ভাবিয়া দেখেন।”
আমার দেশের প্রচলিত আইনকে লংঘন করে তারা এই সমস্ত গল্প-উপন্যাস ক্রমাগত ছাপিয়ে চলেছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে কবি জসীম উদদীন যখন এই নিবন্ধটি সৃজন করেন তখন সবে মাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে, আর সেই সমস্যা আজকে বিশাল থেকে বিশালাকার ধারণ করেছে। আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেই, পশ্চিমবঙ্গের গল্প-উপন্যাসের পাঠক আমাদের দেশে অনেক রয়েছে। অনেকে বলেন পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বেশি আছে। কারণ পশ্চিমবঙ্গে বাংলা চর্চা করার লোকজনেরই অভাব ক্রমশ পরিলক্ষিত হচ্ছে, তারই আভাসই পাওয়া যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের সদ্য প্রয়াত প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী প্রাবন্ধিক আশোক মিত্রের ভাষ্যে। আমি তার কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি। -
“কে জানে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক চৌহদ্দির মধ্যে হয়তো বাংলা
ভাষা তথা সাহিত্য আর তেমন বেশীদিন টিকবে না, কতিপয় পূর্ব লক্ষণ দেখে অন্তত : সেই রকম সন্দেহ হয়।”
আবার পরবর্তী পর্যায়ে বাংলাদেশের কথা স্মরণে রেখেই বলেছেন,
“তাছাড়া একটু সংকোচ এর সাথে বলতেই হচ্ছে, রাজনৈতিক সীমান্তের ওপারে রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত; এই প্রান্তে যারা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে আলোচনায় ব্রত হবেন, তাদের কাছে এই সংকলনের(চতুরঙ্গ থেকে-১ম খণ্ড) মূল্য অপরিসীম।” (সম্পাদকীয় নিবেদন, চতুরঙ্গ থেকে-১ম খণ্ড)
অবশ্য এই মন্তব্যের মধ্যে কতখানি সত্যতা রয়েছে সেই সম্পর্কে আমার ঘোরতর সন্দেহ বিদ্যমান, কারণ আজকাল প্রায়শ; বাংলাদেশের পাঠককে তোষামোদ করার জন্য এই রকম কথাবার্তা প্রয়াত কবি ও কথাশিল্পী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও বলে থাকতেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। তার ঐতিহাসিক স্বাতন্ত্রিক ঐতিহ্য রয়েছে। আর এই কারণে তার সাহিত্যও সৃজিত হবে আলাদা ভাবধারায় এবং আলাদা আংগীকে। আমাদের দেশে সুনীল-শীর্ষেন্দুরা এলে যে মনোহর সংবর্ধনা পান; তার এক কণাও বাংলাদেশের কবিরা ও দেশে পান না। এটা পরীক্ষিত সত্য যে, আমাদের সাহিত্য তাঁদের কাছে অপাংতেয় অষ্পৃশ্য। অবশ্য একশ্রেণির সমালোচকরা সেটা স্বীকার করতে নারাজ। কারণ তারা পশ্চিমবঙ্গীয় ভাবধারার সাথে বরাবরই আমাদের সাহিত্যকে মেলাতে চান। আর সেখানেই বেধেছে যত মুশকিল। ইদানীং ভিসিডি ও চ্যানেলে হিন্দি ছবির মত পশ্চিমবঙ্গীয় কবি সাহিত্যিকদের লেখা গল্প উপন্যাস বাংলাদেশের বাজারে জোয়ারের মত ভাসতে শুরু করেছে। আর এর সাথে যোগ হয়েছে আমাদের দেশের একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী সুলভ পাঠকদের উদাসীনতা। ফলশ্রুতিতে আমাদের দেশের লেখকদের বই প্রায়শ অবিক্রিত অবস্থায় থাকছে। এই শ্রেণির পাঠকরা পশ্চিমবঙ্গীয় লেখকদের নামে মূর্ছা যাবার উপক্রম হন। আমাদের অধিকাংশ তরুণ লেখকরা তাদের প্রভাবের দ্বারা প্রভাবান্বিত।
আমি অবশ্য তাদের প্রভাবের বিষয়টিকে সমালোচনার নজরে দেখছি না, কারণ এটাই স্বাভাবিক। বাজারী লেখকদের সাফল্য দরুন নতুন লেখকরা প্রভাবিত হবেন। আমি অবশ্য এও মনে করি সুনীল-শীর্ষেন্দু এরা শক্তিমান কথা-সাহিত্যিক। তারা এখানেও পশ্চিমবঙ্গের মতন স্বীকৃত মর্যাদা পাচ্ছেন। তবে আপাতত আমার সমালোচনার জায়গাটি একটু অন্য জায়গায় রাখতে চাই। কারণ আমাদের পাঠকরা অমিয় ভূষণ মজুমদার, দেবেশ রায়ের বই কিংবা নাম কোনটাই শুনতে পারেন না। আসলে বাজারী উপন্যাসের ভিড়ে তাদের নাম হারিয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে। কারণ এই দুইজন লেখক আনন্দবাজার কিংবা যুগান্তর গোষ্ঠীর লেখক নন। ফলশ্রুতিতে আমাদের পাঠক গোষ্ঠীর কাছেও খুব বেশি পরিচিত নন। তাদের লেখা নিরলস কঠোর সাধনার মধ্যে দিয়েই এই সাফল্য উপার্জন করা সম্ভব। স্বীকার করি পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু লেখক এই কাজটি নিপুণতার সাথে করছেন। তার মানে এই নয় যে, তাদের লেখার গতি-প্রকৃতি আমাদের দেশের লেখকদের আদর্শ হতে পারে। তাদের দেশেও এই ধরনের লেখক সত্যিকার ভাবে সমালোচনা যোগ্য। অকাল প্রয়াত প্রখ্যাত কথাশিল্পী দ্বীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের গবেষণা পরিষদের পক্ষ থেকে ১৯৭৫ সালে এক সাক্ষাতকার নেওয়া হয়, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের সম্বন্ধে অসামান্য কৌতুকর মন্তব্য করেছিলেন। সেই সাক্ষাতকারে তিনি বামপন্থী আন্দোলনের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছিলেন, এমনকি শিল্প সাহিত্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের কম্যুনিস্ট পার্টির সমালোচনা করতে দ্বিধা করেননি। আবার পাশাপাশি সমরেশ বসুর বিবর এর প্রশংসাও করেছেন। শুধু তাই নয় বাজারী লেখকদের ‘ইয়েস স্যার’ এ কটাক্ষ করতেও দ্বিধা করেননি। এদের লেখক মানসিকতাকে কটাক্ষ করে তাঁর মূল্যবান মতামত ছিল এই রকম-
‘সাহিত্যে বাজারটা প্রায় সিনেমা স্টারদের অবস্থায় পরিণত হয়েছে। ফিল্মস্টাররা যেমন তাদের বয়সের ভাবনায় ভাবিত থাকেন তেমনি আমাদের সাহিত্যকূলের একাংশ ভাবিত হলেন কি পরিমাণে উপস্থিতির প্রমাণ দিতে পারছেন। রচনায় মানের উপর নয়।’ দ্বীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য তুলে ধরলাম বলে কেউ যেন মনে না করে আমি এই মন্তব্য পুরোপুরি বিশ্বাস করে বসে আছি। সাহিত্যে উচ্চমানের সাহিত্যিকদের আগ্রাসন এমন নতুন কোন ঘটনা নয়। আরবের সাহিত্যিক আক্রমণ ইরানীরা অত্যন্ত সুকৌশলে রক্ষা করেছিল। বিগত শতাব্দীতে আইরিশ সাহিত্যের নবজাগরণ কিন্তু ইংরেজি সাহিত্যের বিরুদ্ধেই হয়েছিল, নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটসের নেতৃত্বে। কারণ তারতো কোন সময় বার্নাডশোর সাহিত্যকে আইরিশ সাহিত্য বলে মনে করেনি। অথচ আইরিশদেরও মাতৃভাষা ইংরেজি। আমি এই আন্দোলনের কথা উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, আমাদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মুখে সেই রীতি অবলম্বন করা দরকার। তবে আমরা সৌভাগ্যবান, বয়স ভাবনায় ভাবিত লেখকদের সংখ্যা কম হলেও পাঠকরা তাদের ধরতে পেরেছেন। তবে আমাদের দেশের প্রকাশকরাও কম দায়ী নয়। নতুন লেখকদের উৎসাহ দান করাটা তারা একেবারে ভুলে গিয়েছেন। কবিতার বই বের করতে হলে আল মাহমুদ ও শামসুর রাহমান ছাড়া যেন প্রকাশকদের কোন গত্যন্তর নেই। এই মানসিকতা পরিবর্তন করা দরকার। মনে রাখতে হবে পশ্চিমবঙ্গেও প্রতিযোগীতার মধ্য দিয়ে মতি নন্দী ও অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় এর মত বড় বড় সাহিত্যিকরা বেরিয়ে এসেছিল। আমাদের দেশে প্রকাশকরা এই দায়িত্ব নিতে কি পারবেন? আর প্রকাশকরা এখন অবধি প্রচার বিমুখ পদ্ধতি আঁকড়ে ধরে আছেন। প্রকাশকরা যদি বইয়ের প্রচার না করেন তাহলে সাধারণ পাঠকরা কিভাবে বইয়ের খবর জানবেন। লেখক লিখবেন আর প্রকাশক প্রকাশ করবেন কথাটা যতটায় সরলীকরণ হোকনা কেন-প্রমথ চৌধুরী যেমন মনে করতেন- ভালো বই খোঁজার অর্থই হলো খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজার মত।
সাম্প্রতিককালে আর একটি প্রচলতার যোগ হয়েছে সেটা হলো, দৈনিক পত্রিকার মালিকদের দ্বারা ঈদসংখ্যা বের করা, আমার জানামতে কেবলমাত্র নয়াদিগন্ত, প্রথম আলো এবং সাপ্তাহিক ২০০০ ছাড়া সমস্ত পত্রপত্রিকার প্রকাশকদের ধারা পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের উপন্যাস-গল্প না হলে ঈদসংখ্যার মর্যাদাই থাকে না। লক্ষ্য করা গেছে যে পত্রিকা একসময় সবচেয়ে বেশি ভারত বিরোধী ভূমিকা নিয়েছিল, তাদের সাপ্তাহিক পত্রিকায় একবার সবচেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের লেখা গল্প-উপন্যাস বেরিয়েছে। আমার জানামতে সেই পত্রিকার কয়েকজন মনোযোগী পাঠক মৃদু অনুযোগও জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু সেই পত্রিকার সম্পাদকের মতিগতির পরিবর্তন হয়েছে বলে আমার জানা নেই। অথচ আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আনন্দবাজার গোষ্ঠীর দেশ পত্রিকার বৃহৎ পাঠক গোষ্ঠীই কিন্তু আমাদের দেশেই অবস্থান করছে। সোজাসাপ্টা উত্তর হলো তাদের পত্রিকার ভূত ভবিষ্যৎ আমাদরে দেশের পাঠকদের উপরেই এখনো নির্ভর করছে। কারণটা স্বাভাবিক। আমরা যতটা সাহিত্য বিমুখ, তারা কিন্তু ততটা নয়। পার্থক্যটা সৃজিত হয়েছে এখানেই। আমাদের মনে রাখতে হবে, পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সাহিত্য উর্দুর পরেই সমগ্র ভারতের মধ্যে সবচাইতে সমৃদ্ধশালী সাহিত্য। আমাদের মত দেশের পক্ষে স্বল্প সময়ের মধ্যে সেই রকম সাহিত্য সৃজন করাটা সম্ভব নয়। কিন্তু তাই বলে তার সামনে নতজানু হওয়াটাও বেমানান। আর একটি বিষয় পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের সাহিত্যিক বাজার বাংলাদেশি পাঠকদের উপরেই নির্ভরশীল, তার প্রামাণিক তথ্য দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত আনন্দ বাগচীর লিখিত নিবন্ধেই সরাসরি পাওয়া যাচ্ছে। ঐ নিবন্ধে বলা হয়েছে,
“বাঙালির উপর চাপ আসছিল নানা ভাবে। ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের(১৯৬৫) পর বাংলা বইয়ের বাজার দ্বি-খণ্ডিত। বাংলা সাহিত্যে আদি পর্বে প্রথম পর্বের প্রথম বলি হলো ছোটগল্প।” (ছোটগল্পের রূপান্তর)
পৃথিবীর সব সাহিত্যের জনপ্রিয় বহুলপ্রজ লেখকরা পাঠকদের মনোরঞ্জনের দিকটিই লক্ষ্য করেই সাহিত্যচর্চা করে থাকেন। হিট লেখক ও ফ্লপ লেখক ইত্যাদি দুটি বিশেষণকে সব সময় গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। প্রথমটি অর্জন করতে পারলে যেন ইহকাল ধন্য হবার মত দশা হয়। নোবেল বিজয়ী হাইনরিস বোলের কাছে আর্থিক মর্যাদার রহস্য উপন্যাস লেখক হেডলি চেজ অনেক উচ্চ অবস্থান করেন। আমাদের দেশের অনেক লেখকই রয়েছেন, বিষয় হিসেবে নারী ও প্রেমের বিশেষত কিশোর প্রেম ও যৌনতাকে পুঁজি করে সফল ব্যবসায়ী ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য সাহিত্যচর্চা করে চলেছেন। কোথায় কমিটমেন্ট, কোথায় সামাজিক চেতনা? এসব খুঁজতে গেলে ব্যর্থ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। সমকালের ক্লাসিক লেখকদের সেটাই পরম আরাধ্য। আমাদের দেশে এই রকম লেখক যে নেই সেটা আমার বলার উদ্দেশ্য না। মাহমুদুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের নাম শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারণ করা যায়। ইদানীং আল মাহমুদ বড় বেশি বাণিজ্যিক হয়ে পড়েছে, কি লিখছেন তিনিই নিজেই জানেন না। টি এস এলিয়ট বরাবরই মনে করতেন কেবলমাত্র দশটি উপন্যাস ও কাব্যগ্রন্থ থেকে সমকালীনকে ধরে রাখা সম্ভব। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চৈতালী ঘূর্ণি’ ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যয়ের ‘চিহ্ন’ উপন্যাসদ্বয় পড়লে তৎকালীন সংঘময় পরিবেশকে বুঝতে সহায়তা করে। লেখকও যেমন বই প্রকাশ করতে বাধ্য নয়, তেমনি ভাবে পাঠকও সব বই পড়তে বাধ্য নয়। প্রমথ চৌধুরীর এই মন্তব্যের মত, আমিও মনে করি। পাশাপাশি আমাদের ভাষারীতিকে ক্রমশ পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য তরুণ সাহিত্যিনুবিসীদের কবিতার উপর দুর্দান্ত আসক্তি পরিত্যাগ করা প্রয়োজন। কবিতার পাশাপাশি লেখাও প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে গদ্য। পশ্চিমবঙ্গের লেখকরা বলছেন : তোমাদের কবিতা সুন্দর। কিন্তু উপন্যাস-গল্প ভালো নয়। অতএব আমাদের গদ্য পড়। তার মানে এই নয় যে, আমাদের দেশে কোন গদ্যশিল্পী নেই। রয়েছে। তবে যে দুঃখটি সর্বাগ্রে স্মরণ করলে আমাদের ব্যথিত হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না সেটি হলো এই যে, উৎকৃষ্ট মানের সাহিত্য পত্রিকার অভাব, যা দুএকটা প্রকাশিত হয় তাও ক্ষণজীবী। পশ্চিমবঙ্গের পাঠকরাও যে মুসলমান লেখক বিদ্বেষী তার উজ্জ্বল উদাহরণ হলো প্রয়াত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর প্রতি দারুণ অবহেলা। এই বিদ্বেষ প্রবণতা কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের নজর এড়িয়ে যায় নি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,
হুমায়ূনের উপন্যাস দেশ শারদীয়াতে কয়েকবছর পর পর ছাপা হয়েছিল। বইও বেরিয়েছিল কলেজ স্ট্রিট থেকে। কিন্তু এই পশ্চিমবঙ্গের পাঠকরা তেমন উৎসাহিত হননি ওর সম্পর্কে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দুঃখিত হয়েছি। এখনও এই বাংলায় উপন্যাসে পাঠকরা মুসলমান না, রীতিনীতি বা ধর্মীয় আচার উপন্যাসে থাকলে রসগ্রহণে অনাসক্ত হয়ে পড়েন। আমার মতে এটাও এক ধরনের মৌলবাদ। (সমরেশ মজুমদার, ছদ্মবেশী সম্রাট, ভারত বিচিত্রা, আগস্ট ২০১২)
কারণ আমাদের সাহিত্য জগৎ এখন অবধি নানা ভাবে বিভক্ত, যদিও বামধারা আগের মত শক্তিশালী অবস্থানে নেই। তবুও বেশির ভাগ জায়গায় যে পরিত্যাজ্য-করার নীতি কৌশলের বিষ বপন করে গেছেন। তার প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। অতি বামপন্থী মনোভাব সম্পন্ন সাহিত্য সম্পাদক সর্বপ্রথমে যাচাই বাছাই করতে শুরু করেন, কে কোন পন্থী আর কে মৌলবাদী। এছাড়াও কর্পোরেট বাণিজ্যকে আশ্রয় করে নিয়েছেন সাহিত্যিকরা।
আমাদের দেশের সাহিত্যিকরা যে ভাবে এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তার চেঁচামেচি করে থাকেন, পৃথিবীর অন্য কোন জায়গায় এমনটি হয় না। আমাদের পার্শ¦বর্তী পশ্চিমবঙ্গে কট্টর বামবাদী কবি মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায় ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এক অনুষ্ঠানে বসে আলোচনা করতে পারেন, আমাদের এখানে এটা কল্পনা করা যায় না।
ঐতিহ্যপন্থীদের হাতে ভাল সাহিত্য সৃষ্টি হবে না, আমাদের দেশে বামপন্থীরা আগে ভাগেই ভেবে বসে থাকেন। হুমায়ুন কবীর ও বুদ্ধদেব বসু তাদের সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকায় ফররুখ আহমদ ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা গল্প ছেপেছিলেন। কে কোন পন্থী তারা সেটা বিচার-বিবেচনার আওতায় আনেন নি। এসব করলে কি আমাদের হুমায়ুন কবীর ও বুদ্ধদেব বসু স্মৃতি সত্তার মধ্যে থাকতেন? মোটেও না। কাল তাদের সেই ভাবেই চিত্রিত করত। আমাদের সাহিত্য সম্পাদকদের হতে হবে উদার মানসিকতা সম্পন্ন। ভাল লেখা শুধু নয়, লেখক খোঁজার দায়িত্বও রয়েছে তাদের। সেটা ভুলে গেলে চলবে না। তরুণ লেখকদের মধ্যে প্রতিভার পরিচয় পেলে তাকেই বেশি করে আশ্রয় প্রশয় দিতে হবে। কিন্তু আমরা সেটা ভুলে বসে আছি। আর সেই কারণে এখন দরকার রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত তরতাজা, অজস্র সুফলপ্রসু সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশ। আশা করি সেইদিন আর সুদূর পরাহত নয়।
Source: www.dailysangram.com
জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ইসলামী দলঃ একটি তুলনামূলক র্পযালোচনা
পবিত্র কোরআনের র্নিদেশ হচ্ছে: তোমার সংঘবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জু (অর্থাৎ ইসলাম বা কোরআন) আকড়ে ধর এবং পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হইও না।(সুরা আল-ইমরান-১০৩আ) আর হাদীসে আছে, হযরত হোযায়ফা (রা) বর্ণনা করেন, লোকেরা সাধারণতঃ ভবিষ্যতের নানা কল্যাণকর বিষয়ে প্রিয় নবীজির নিকট প্রশ্ন করতেন। আমি প্রশ্ন করতাম যেসবে অকল্যানের আশংকা রয়েছে সেই সব বিষয়। একদা আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাছুলুল্লাহ। আমরা জাহেলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলাম। আল্লাহপাক আমাদেরকে ইসলামের আলোতে
উদ্ভাসিত করে সে অন্ধকারের অভিশাপ থেকে মুক্ত করেছেন। এ কল্যাণকর অবস্থার পর কি
কোন খারাপ দিন আবার আসবে? জবাব দিলেন, অবশ্যই আসবে। আমি আরজ করলাম, সে মন্দ দিনের পরও কি কোন কল্যাণকর সময়ের
সাক্ষাত আমরা লাভ করতে পারব? বললেন, হ্যা, কল্যাণকর
দিন আসবে, তবে সেটা নির্ভেজাল কল্যাণ হবে না, কিছু
অকল্যাণের মিশ্রণ ও তাতে থাকবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম: সে কল্যাণের স্বরূপ কি হবে? বললেন, এমন লোকের
আবির্ভাব ঘটবে যারা (শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে) আমার তরিকা ত্যাগ করে অন্যদের
তরিকা অনুসরণ করে চলবে। আমার প্রদর্শিত পথ ত্যাগ করে
অন্য পথে লোকদের পরিচালিত করতে সচেষ্ট হবে। এরা ভাল কাজ করবে, তেমনি মন্দ
কাজেও অভ্যস্ত হতে থাকবে। আবারও জিজ্ঞেস করলাম, এই মিশ্র
কল্যাণকর অবস্থার পর আবারও কি কোন অকল্যাণ আসবে? এরশাদ করলেন, একশ্রণীর
লোক জাহান্নামের দ্বারদেশে দাঁড়িয়ে লোকদেরকে তাতে প্রবেশ করার আহবান জানাতে থাকবে
অর্থাৎ এমন সব ক্রিয়া কর্মের প্রতি লোকদেরকে প্ররোচিত
করতে থাকবে যার পরিণতি হবে অনিবার্য জাহান্নামে বাস। যারা ঐ সব লোকদের দাওয়াতে
সাড়া দেবে ওরা নিশ্চিতভাবেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আমি আরজ
করলাম, ইয়া
রাছুলুল্লাহ, এ সম্পর্কে
আমাদেরকে আরো কিছু বলুন। এরশাদ করলেন, এরা আমার
উম্মতের পরিচয়ে পরিচিত হবে এবং আমাদের ভাষাতেই কথা বলবে। আমি আরজ করলাম, যদি আমার
জীবদ্দশাতেই সেই দুর্দিন এসে যায় তবে আমরা কি করবো? এরশাদ করলেন, ইসলামী
জামায়াত এবং তাদের আমীরের নেতৃত্বকে আকড়ে
থাকবে। আরজ করলাম, যদি মুসলমানদের
সুসংঘবদ্ধ কোন জামায়াত ও সঠিক নেতৃত্ব দানকারী আমীর না থাকে, তবে আমাদের
করণীয় কি হবে? এরশাদ করলেন: তখন ঐ সমস্ত
নতুন মত-পথ থেকে
নিজেকে পৃথক করে প্রয়োজনে
জনপদের বাইরে কোন বৃক্ষমূল কামড়ে হলেও ঈমান রক্ষার চেষ্টা করবে অর্থাৎ গাছের পাতা ও মূল কামড়ে থেকেই তোমার ঈমান
রক্ষার প্রয়াস পাবে" (বুখারী-মুসলিম শরীফ)। অপর একটি
হাদীসে রযেছে: হযরত
হারেসুল আশআরী(রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, হযরত নবী
করিম সা: ইরশাদ
করেছেন: আমি
তোমাদিগকে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ করছি, তা এই - জামায়াতবদ্ধ জীবন, আদেশ শ্রবণে
প্রস্তুত থাকা ও নিয়ম-কানুন মেনে
চলা, হিজরত করা ও
আল্লাহর পথে জিহাদ করা (মুসনাদে
আহমাদ, তিরমিযি)। উক্ত কোরআন-হাদীসের নির্দেশনার আলোকে বর্তমান জাহেলিয়াতের
সামাজে মুসলমানদের উচিত কোন না কোন ইসলামী সংগঠন দ্বারা সংঘবদ্ধ হয়ে দ্বীন ইসলামকে
মজবুতভাবে ধারণ করে ইসলামী জিহাদে (আন্দোলনে) সক্রিয় থাকা। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের মধ্যে
তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণের
মাধ্যমে বাছাই করে ইসলামী সংগঠন গ্রহণ করা উচিত। এখানে জামায়াতে ইসলামীর সাথে বাংলাদেশের
অন্যান্য ইসলামী সংগঠনের তুলনামূলক পার্থক্য তুলে ধরা হচ্ছেঃ
০১. জামায়াতে ইসলামী ও এর
সাথে সংশ্লিষ্ট আরবের ইখওয়ানুল মুসলেমীন বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ইসলাম পূন:প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের আগ্রগামী সংগঠন, কিন্তু অন্যান্য ইসলামী সংগঠন এক্ষেত্রে তার অনুসারী মাত্র। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে:- অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই (সুরা ওয়াকিয়া: ১০ আয়াত)। রাসুলুল্লাহ (সা:) এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিজয় হলে
তখনকার নিরপেক্ষ ইতিহাস এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীকে অগ্রগামী সংগঠন হিসাবে
স্বীকৃতি প্রদান করবে। আর বর্তমান যুগের ইসলামী আন্দোলনের কাফেলায়
পবিত্র কোরআনের ঘোষণা অনুসারে আখেরাতের ময়দানেও জামায়াতে
ইসলামী অগ্রগামী থাকবে ইনশা-আল্লাহ। এসম্পর্কিত এই লিংকটি ব্রাউজ করুন প্লীজ: বিশ্বব্যাপী দ্বীন ইসলামের পূনরুত্থানে জামায়াতে ইসলামীর অবিস্মরণীয় সাফল্য ।
০২. অন্যান্য ইসলামী দল
কোনটি ব্যক্তিভিত্তিক, কোনটি নির্দিষ্ট ধর্মীয়
গোষ্ঠীভিত্তিক, কিন্তু জামায়াতে ইসলামী
তা নয়- ইহা এক সার্বজনীন
ইসলামী আন্দোলন।
০৩. অন্যান্য বহু ইসলামী
দলে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ ও সর্বমূখী তৎপরতা নাই, কিন্তু জামায়াতে ইসলামীতে তা রয়েছে।
০৪. জামায়াতে ইসলামী একই
সাথে এককভাবে ধর্মীয়, শিক্ষা-প্রশিক্ষণমূলক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংগঠন, কিন্তু অন্যান্য ইসলামী দল তদ্রুপ নয়।
০৫. সকল নবী-রাসুলকে প্রেরণ করা হয়েছে সমস্ত বাতিল জীবনবিধানকে উৎখাত করে দ্বীন ইসলাম কায়েম করার লক্ষ্যে (দেখুন- সুরা আশশুরা: ১৩ আয়াত), কিন্তু অন্যান্য ইসলামী সংগঠনে এব্যাপারে অটল দৃঢ়তা (এস্তেকামাত) নাই, কিন্তু জামায়াতে ইসলামী
একামতে দ্বীনের সংগ্রাম প্রত্যক্ষভাবে এবং এস্তেকামাতের সাথে অব্যাহত রাখার
ক্ষেত্রে আপোষহীন।
০৬. দ্বীনে হক কায়েমের
সর্বোচ্চ লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী একনিষ্ঠ আপোষহীনভাবে নিয়োজিত। এজন্য সকল বাতিল শক্তিসমূহ জামায়াতে ইসলামীকে শত্রুই গণ্য করে থাকে, কিন্তু অন্যান্য ইসলামী দল অনেক সময় অসংগত আপোষকামী অথবা
নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। সেজন্য বর্তমানে তাদের সেই পরিমাণ শত্রু গণ্য করে না ।
০৭. জামায়াতে ইসলামীতে
অন্তুর্ভুক্ত হয়ে কোন মুসলিম অন্য কোন বাতিলপন্থী অনৈসলামিক দল বা সংগঠনের সাথে সম্পর্ক
রাখতে পারে না অর্থাৎ অনৈসলামিক দল বা সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে না। । জামায়াতে ইসলামী আল্লাহকে খুশী করার এবং শয়তানকেও নারাজ না
করার ঈমানবিরোধী মোনাফেকী নীতিতে বিশ্বাসী নয়। কিন্তু এমন জামায়াত বা গ্রুপ রয়েছে যাদের কার্যক্রমের সাথে পুরোপুরি থেকেও
অনৈসলামিক দলের আন্দোলনে, সংগ্রামে বা প্রচেষ্টায় পূর্ণরূপে থাকে যায়। এটা সুস্পষ্ট মোনাফেকী । কোরআনের ঘোষণা অনুসারে মোনাফেকের স্থান জাহান্নামের সবচেয়ে নীচে।
০৮. জামায়াতে ইসলামীতে সুসংহত
বিজ্ঞানসম্মত কর্মসূচী রয়েছে, কিন্তু অন্যান্য ইসলামী দলে তদ্রুপ নাই।
০৯. জামায়াতে ইসলামী ক্যাডার(মানগত স্তরবিন্যাস)ভিত্তিক সংগঠন, কিন্তু অন্যান্য ইসলামী দল তা নয়। প্রধানত: ক্যাডার(মানগত স্তরবিন্যাস)ভিত্তিক হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীতে যে পরিমাণ ঐক্য ও শৃংখলা রায়েছে অন্যান্য ইসলামী সংগঠনে তা নেই।
০৯. জামায়াতে ইসলামী ক্যাডার(মানগত স্তরবিন্যাস)ভিত্তিক সংগঠন, কিন্তু অন্যান্য ইসলামী দল তা নয়। প্রধানত: ক্যাডার(মানগত স্তরবিন্যাস)ভিত্তিক হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীতে যে পরিমাণ ঐক্য ও শৃংখলা রায়েছে অন্যান্য ইসলামী সংগঠনে তা নেই।
১০. অন্যান্য বহু ইসলামী
সংগঠনে নেতৃত্ব ও আনুগত্যের সুষম শৃংখলা নেই। সহজে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়ে ভাংগন ধরে। ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব, কর্ম-কৌশলগত মতভেদ ইত্যাদিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীতে নেতৃত্ব ও আনুগত্যের যথাযথ নিয়মানুবর্তীতা রয়েছে এবং
এখানে যেকোন দ্বন্দ্বের কারণে সহজে গ্রুপিং সৃষ্টি বা ভাঙ্গন ধরে না।
১১. অন্যান্য বহু ইসলামী সংগঠনেই ইসলামী গণতান্ত্রিক পরিবেশের অভাব রয়েছে, কিন্তু জামায়াতে ইসলামীতে তূলনামূলকভাবে উত্তম ইসলামী গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিদ্যমান। পরামর্শের ভিত্তিতে সংগঠন পরিচালনা, যথানিয়মে সমালোচনা ও সংশোধন, ইসলামী নীতির আওতায় স্বাধীন মতামত প্রদান বা ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচন ইত্যাদি ইসলামী গণতান্ত্রিক উপাদান জামায়াতে ইসলামীতে রয়েছে।
১২. জামায়াতে ইসলামী গণ-মানুষের আধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, কিন্তু অন্যান্য ইসলামী দল অনেক সময় একে বস্তুবাদী আন্দোলন বলে নিন্দা প্রকাশ করে ও তা থেকে বিরত থাকে। রাসুলুল্লাহ(সা:) মাত্র সতের বছর বয়সে গণ-মানুষের অধিকার এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে "হিলফুল ফুযুল" গঠন করেছিলেন। আর তখনই দ্বীপ্ত ঘোষণা প্রদান করেন- তায়াকাদু ওয়াতায়াহাদু বিল্লাহি লায়াকুনান্না মায়াল মাজলুমি হাত্তা ইয়ুয়াদ্দি ইলাইহি হাক্কাহু মায়াবাল্লাহ বাহরা সুফাতিন" অর্থাৎ আল্লাহর কসম: সাগরে লোম ভেজানোর পরিমাণ পানি থাকা পর্যন্ত মজলুমের সাথে থেকে তার অধিকার আদায় করব। হাদীসে বলা হচ্ছে: সাইয়িদুল ক্বাউমি খাদেমুহুম. ফামান সাবাক্বাহুম বিল খিদমাতি লাম ইয়াসবিকুহু বিআমলিন ইল্লাশ শাহাদাত: অর্থাৎ জাতির নেতা তারাই যারা তাদের খেদমত করে। কোন ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ছাড়া হওয়া ছাড়া অন্য কোন আমল দিয়ে জাতির খেদমতে নিয়োজিত ব্যক্তির চেয়েে উচ্চ র্মযাদা লাভ করতে পারবে না " (বায়হাকী, মেশকাত শরীফ)।
১৩. কোরআন-হাদীস বর্ণিত তাযকিয়ায়ে নফস তথা ইসলামী তাসাউফের লক্ষ্যে হলো মানুষকে ইসলামী খেলাফতের যোগ্য মোমেনীন সালেহীন রূপে গড়ে তোলা। জামায়াতে ইসলামীর লোক গঠনের উদ্দেশ্যেও উহাই। কাজেই এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী নীতিগতভাবে সঠিক অবস্থানে রয়েছে। কোন কোন ইসলামী গ্রুপ তাযকিয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্যহীন। আবার কোন কোন ইসলামী দলে লক্ষ্য থাকলেও সঠিক লক্ষ্যে সম্পূর্ণরূপে উপনীত নয়।
১৪. জামায়াতে ইসলামী গায়রে ইসলামী তাসাউফের উচ্ছেদ, নিম ইসলামী তাসাউফের সংশোধন এবং খালেছ ইসলামী তাসাউফের প্রতিষ্ঠাকামী। জামায়াতে ইসলামী হকপন্থী সুফীদেরকে সমর্থন-সহযোগিতা করে, বিশেষ করে হকের পথে সংগ্রামী সুফী-সাধকদেরকে সম্মান-শ্রদ্ধার চোখে দেখে। আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী (রহ: )-এর ইসলামের শক্তির উৎসসহ আরো বিভিন্ন বইয়ে ইসলামের ইতিহাসে সুফীদের অবদানের স্বীকৃতি আছে। এই সুফীদের মধ্যে বহু তরিকা চালু আছে। জামায়াতে ইসলামী কোন সুফী তরিকার অনুসারী নয়। তবে কোরআন-হাদীসসম্মত সকল তরিকা সমর্থনযোগ্য মনে করে। বিভিন্ন তরিকার বহুসংখ্যক পীরমাশায়েখ বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে অথবা অনুকুলে রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দানে এমন একাধিক ইসলামী দল রয়েছে যারা সুফীবাদী নির্দিষ্ট তরিকার বাস্তবায়নে নিয়োজিত বা সমর্থক। এক্ষেত্রেও জামায়াতে ইসলামী সার্বজনীন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
১৫. জামায়াতে ইসলামীতে ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক কাজের রিপোর্টিংয়ের ব্যবস্থা আছে। একে যথাযথভাবে কাজে লাগানো হলে তা সুচিন্তিত রুটিন হিসাবে কাজকে সুশৃংখল ও সহজ করে, এতে সংগঠনের উন্নতি ও অবনতির যথার্থ পরিচয় পেয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া যায় এবং আপন জনশক্তির নিকট কর্মসূচী সম্পর্কে ধারণা পরিস্কার থাকে। অন্যান্য ইসলামী সংগঠনে এই রিপোর্টিংয়ের ব্যবস্থা নাই।
১৬. সুফীবাদী ইসলামী দলগুলো বিভিন্ন নফল কাজকে অজীফা হিসাবে আদায় করতে দেয়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী নিজের কর্মীদেরকে ব্যক্তিগত রিপোর্ট বইয়ের মাধ্যমে কুরআন অধ্যয়ন, হাদীস অধ্যয়ন, ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন, জামায়াতে নামাজ, দাওয়াতী কাজ, কর্মী যোগাযোগ, আত্মসমালোচনা, সামাজিক কাজ ইত্যাদি কাজের নির্দেশ দেয় যা বিভিন্ন কারণে অপেক্ষাকৃত বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
১৭. ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, পেশজীবি, বুদ্ধিজীবি, সাহিত্য-সংস্কৃতি ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর মজবুত অংগ সংগঠন বা সহযোগী সংগঠন রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য ইসলামী দলে তদ্রুপ নাই।
১৮. জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির বিপুল পরিমাণে আধুনিক শিক্ষিত ছাত্রসমাজকে ইসলামী আন্দোলনে শরীক করতে পেরেছে। কিন্তু অন্যান্য ইসলামী দলের ছাত্র সংগঠনের অবদান এক্ষেত্রে নিতান্তই নগণ্য।
১৯. দ্বীন ইসলাম বিশ্বজনীন জীবন-বিধান জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যাণকামী। জামায়াতে ইসলামীতে অমুসলিমদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত, কর্মসূচী ও কার্যক্রম রয়েছে, কিন্তু অন্যান্য অনেক ইসলামী দলে তা নেই।
২০. জামায়াতে ইসলামী সর্ব সাধারণ নেতা-কর্মীকে কোরআন-হাদীস বুঝে পড়তে হয়। কোরআন-হাদীসের সহজবোধ্য অনুবাদ ও ব্যাখ্যাগ্রন্থ জামায়াতে ইসলামী চালু করেছে। কিন্তু অন্যান্য অনেক ইসলামী সংগঠনেই সাংগঠনিক পরিসরে এধরণের ব্যাপক চর্চার নির্দেশনা নাই। অধিকন্তু কিছু ইসলামী দল বা জামায়াত কোরআন-হাদীস সকলে বুঝে পড়াকে আপত্তিকর বিবেচনা করে। কিছু ইসলামী ব্যক্তিত্ব বা সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে অনুসরণ করে বর্তমানে কোরআন-হাদীসের সহজ ব্যাখ্যাগ্রন্থ চালু করেছে মাত্র।
২১. জামায়াতে ইসলামী শিরক-বিদায়াত বিরোধী, কিন্তু বাংলাদেশে কিছু ইসলামী গ্রুপ আছে যাদের মধ্যে শিরক-বিদায়াতের প্রাধান্য রয়েছে।
২২. জামায়াতে ইসলামী সিরাতুন্নবী (সা:) মাহফিল করে থাকে এবং শিরকী-বিদয়াতী আকিদা ও আমল থেকে মুক্ত অবস্থায় মিলাদুন্নবী(সা:) উৎযাপনকেও সমর্থন করে। কিন্তু একদিকে মিলদুন্নবী(সা:) উৎযাপনের বিরোধীতা, অন্যদিকে মিলাদুন্নবী(সা:)কে ইসলামের প্রধানতম আমল ও ধর্মীয় উৎসব (ঈদে) পরিণত করার প্রচেষ্টা - এই উভয় বাড়াবাড়ির মাঝখানে জামায়াতে ইসলামী সঠিক অবস্থানে রয়েছে।
২৩. আদালতে সাহাবার বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকায়েদের কিতাব বর্ণিত আকীদায় জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাসী। জামায়াতে ইসলামী দ্ব্যর্থহীনভাবে বিশ্বাস করে যে, সাহাবায়ে কেরাম (রা:) নবী করিম (সা: )-এর আনুগত্যের একমাত্র আদর্শ নমুনা এবং ইজমায়ে সাহাবা শরীয়তের অকাট্য দলিল। জামায়তে ইসলামীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে সাহাবায়ে কেরামের সত্যনিষ্ঠ ও সংগ্রামী জীবনধারা দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরে তার আলোকে কর্মীদের গড়ে তোলা হয়। সাহাবায়ে কেরামের জীবনী জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের অবশ্য পাঠ্য, যেমন-আবদুল মাবুদের লিখিত কয়েক খন্ডে বিভক্ত `আসহাবে রাছুলের জীবনকথা' গ্রন্থ। এভাবে জামায়াতে ইসলামীর সামগ্রিক কর্মকান্ডে সাহাবায়ে কেরামের জীবনাদর্শের ব্যাপকচর্চা ও অনুশীলন রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য ইসলামী সংগঠনে সাহাবায়ে কেরামের জীবনাদর্শের এ ধরণের ব্যাপক চর্চা নাই। অনেক ইসলামী সংগঠনে পরবর্তী কালের কোন কোন ইসলামী ব্যক্তিত্ব বা পীর-অলির জীবনীচর্চাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। সাহাবাদের অতিভক্তি শুধু তাদের মুখে মুখেই, বাস্তবে খুঁজে পাওয়া দুরূহ। সাহাবাদের মত ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গ করার আকীদা ও আমল জামাযাতে ইসলামী ও এর সহযোগী সকল সংগঠনেই ব্যাপক দেখা যায়।
২৪. একজন কওমী আলেম মাওলানা মাসউদুর রহমানের ভাষায়: “জামায়াতে ইসলামী পুরোপুরি নবী-আসহাবদের নকশায়ে কদম অনুসরণ করে চলেছেন অর্থাৎ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের স্ট্রাকচারে গড়া উঠা একটি বিজ্ঞানভিত্তিক দল, এখানে আকিদাগত কোন খোরাফাত বা ভেজাল নেই। আপনি যদি অন্যান্য ইসলামী দল গুলো নিয়ে তাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে দেখবেন কিছু না কিছু আকিদা ও কর্মগত দিক থেকে ঝামেলা রয়েছে, কিন্তু জামায়াত সম্পূর্ণ আকিদা শুদ্ধ একটি দল।” অন্য কিছু ইসলামী দলের আকীদা ও আমলের মধ্যে প্রচুর শিরক, কুফর ও মোনাফেকী দেখা যায়। তারা যখন জামায়াতের আকীদা খারাপের কথা বলে তখন এই প্রবাদটা মনে আসে: চালুনী বলে সূচেরে, তোর গায়ে ছেদা।
২৫. বৃহত্তর ইসলামী ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী সবসময় অগ্রগামী সংগঠন, কিন্তু অন্যান্য ইসলামী দলের ভূমিকা এক্ষেত্রে অনেক সময় আপত্তিজনক।
২৬. ইসলামী জাতীয়তা ভ্রাতৃত্বের চেতনা বিশ্ব মুসলিম ঐক্যের এবং শক্তিমত্তার অন্যতম প্রধান উৎস। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের মুসলিম জাতীয়তার চেতনা এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রধানতম অবলম্বন এবং হাতিয়ার। জামায়াতে ইসলামীর দলীয় আদর্শ ও তৎপরতায় এবং নেতা-কর্মীদের মধ্যে ইসলামী জাতীয়তা-ভ্রাতৃত্বের চেতনায় উজ্জীবন অন্যান্য ইসলামী সংগঠনের তুলনায় উত্তমভাবে প্রকাশিত হয়। এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী ঐতিহাসিক প্রমাণ রেখেছে।
২৭. জামায়াতে ইসলামীতে আধুনিক শিক্ষিত ও ধর্মীয় শিক্ষিতদের সুষম সমন্বয় রয়েছে, কিন্তু অন্যান্য ইসলামী সংগঠনের সেরূপ নাই।
২৮. আধুনিক যুগে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা সৃষ্টির কার্যক্রম জামায়াতে ইসলামীতে যথেষ্ঠ রয়েছে, কিন্তু অন্যান্য ইসলামী দলে তা কমই রয়েছে।
২৯. জাতীয় সংসদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। কাজেই ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্য লোকদেরকেই কোন ইসলামী দলের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী করা উচিত। এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী আপন সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় গড়ে তোলা যোগ্যলোকদের মধ্য থেকে বাছাই করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী করে থাকে। যে কেউ প্রার্থিতা চেয়ে প্রার্থী হতে পারেনা। কিন্তু অন্যান্য ইসলামী দলগুলো বাতিল দলগুলোর মত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য দরখাস্তের আহবান করে যেকোন ব্যক্তিকেই প্রার্থী করে দেয় অথবা যেকোন ব্যক্তি প্রার্থিতা চেয়ে প্রার্থী হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সে ব্যাক্তি ইসলামী চিন্তাচেতনা ও আমলের হতেও পারে অথবা না ও হতে পারে।
৩০. রাছুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: “অচিরেই তোমরা নেতৃত্ব পদের অভিলাষী হয়ে পড়বে। আর কিয়ামতের দিন এটা তোমাদের জন্য লজ্জ্বা ও দুঃখের কারণ হবে” (আবু হুরাইরা -রাঃ বর্ণিত, বুখারী শরীফ)। নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলামের সাধারণ নীতি হল, যে ব্যক্তি কোন পদের জন্য প্রার্থী হয় সে ব্যক্তি সে পদের অযোগ্য সাব্যস্ত হয়। জামায়াতে ইসলামী এ নীতি অনুসরণ করে থাকে। কিন্তু অন্যান্য ইসলামী দল এ নীতি মোটেও গুরুত্ব দেয়না অথবা যথাযথভাবে পালন করে না।
৩১. জামায়াতে ইসলামী নীতিগতভাবে ব্যক্তি পূজায় বিশ্বাসী নয়, কিন্তু অন্যান্য কিছু ইসলামী দল আছে যারা জাহেলিয়াত প্রভাবিত পীরবাদ অথবা অন্যকিছু সূত্রে ব্যক্তিপূজায় নিয়োজিত।
৩২. জামায়াতে ইসলামী আন্তুর্জাতিক, কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দানে কার্যরত অন্যান্য ইসলামী দল পুরোপুরি তা নয়
অতএব তুলনামুলক বিচারে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ উত্তম বিবেচিত হওয়ায় অধিকতর গ্রহণযোগ্য ইসলামী সংগঠন। যেকোন আদর্শবাদী সংগঠনেই প্রতিকুল দোষত্রুটি অনুপ্রবেশ করতে পারে। সুস্থ শরীরে রোগ হতে পারে, সেজন্য প্রয়োজন যথোপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা। অতএব গঠনমূলক ও নির্দেশমূলক সমালোচনার মাধ্যমে নিয়মিত দোষত্রুটি সংশোধনের প্রক্রিয়া বজায় রাখা এবং বিদ্যমান গুণাবলীর বিকাশ সাধন ও উন্নততর গুণাবলীর সমন্বয় সাধন করার প্রয়াস চালু রাখা উচিত। এর পাশাপাশি দাওয়াত, সংগঠন ও প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, মানবসেবা ও আয়-উন্নতিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে ব্যাপক শক্তি সঞ্চয় এবং গণমুখী তৎপরতার মাধ্যমে অগ্রসর হলে জামায়াতে ইসলামী আগামী দিনের ইসলামী আন্দোলনে অধিকতর অবদান রাখতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ । এখানে উল্লেখ্য যে, যথার্থ আত্মমূল্যায়নের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর মত আদর্শবাদী আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করা এবং বিরোধী ইসলামী দলের লোকদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার হ্রাস করা এই নিবন্ধের প্রধান উদ্দেশ্য
বিশেষ দ্রষ্টব্য: জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে বহু পূর্ব থেকে ভ্রান্ত প্রচারণা রয়েছে। বাংলাদেশে একজন পীর বলছেন, জামায়াতে ইসলামী ইসলামী
দল নয়, একটি রাজনৈতিক দল মাত্র। এই আলোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, জামায়াতে ইসলামী উত্তম ইসলামী সংগঠন। অধিকন্তু গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণ করে সংশোধিত হওয়ার মতো উদারতা জামায়াতে
ইসলামীর রয়েছে এবং জামায়াতে ইসলামী একটি জিহাদী-শহীদি কাফেলা। অতএব ইসলামের পক্ষে কোন ক্ষতিকর কাজে জামায়াতে
ইসলামী লিপ্ত থাকতে পারেনা। জামায়াতে ইসলামী দ্বারা অতীতে বিশ্বব্যাপী
ইসলামের বহুমূখী কল্যাণ সাধিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে, ইনশাআল্লাহ। অতএব যে সকল ইসলামী মহল কোন না কোন কোন কারণে ইসলামের কোন ক্ষতির আশংকায়
খুলুছিয়তের সাথে জামায়াতে ইসলামের বিরোধিতা করেন তারা নিঃসন্দেহে আশংকামুক্ত হয়ে
এদলের সাথে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে পারেন। এধরণের ঐক্য গঠনে রয়েছে অফুরন্ত কল্যাণ। অন্যথায় জাতিকে ক্ষতির মুখে নিক্ষেপ করার ঐতিহাসিক দায় গ্রহণ করতে হবে এবং
আলমে আখেরাতে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে।
Subscribe to:
Posts (Atom)
Popular Posts
-
(জবাবদানকারী একজন ক্বওমী আলেম:) বন্ধুরা, ফেসবুক খুললেই দেখা যায়, মওদুদী ছাহাবা বিদ্বেষী, জামায়াত শিবির সাহাবা বিদ্বেষী, বিশেষ করে লা মা...
-
Official Website: Bangla: https://jamaat-e-islami.org English: https://www.jamaat-e-islami.org/en/ E-book: www.bjilibrary.c...
-
লিখেছেনঃ জীবন রহমান হৃদয় সৌদি বাদশাহ এর আমন্ত্রণে ১৯৬১ সালের ডিসেম্বর মাসে রিয়াদে পৌঁছেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ)। আলোচনার এ...