Friday, April 27, 2018

ঘরে ঘরে হতে হবে পাঠাগার হাতে হাতে পৌঁছে দিতে হবে বই -সালাহউদ্দিন আইউবী


মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ এবং অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে জ্ঞানের দিক থেকে। যে জ্ঞানের সূচনা হয়ে থাকে পড়ার মাধ্যমে। যে কারণে পৃথিবীতে আগত যুগে যুগে সকল নবী-রাসূলের জীবনগঠনের জন্য মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রথম বাণী ছিল ‘পড়’। পৃথিবীর যেসব মহামানব আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের কর্মের শুরু সেই পড়া থেকেই। অসভ্য, বর্বর জাতিগুলোর সভ্যতার দিশা দেয়া হয়েছে যুগে যুগে পড়ার নতুন নতুন কৌশলের মাধ্যমে। পড়া মানুষকে এক উচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করে। পরিবার সমাজ রাষ্ট্র সবখানে পড়ুয়া শ্রেণীর কদর সম্পূর্ণই আলাদা। দিকভ্রান্ত জাতির পথের দিশা হয়ে বারবার সুন্দর সমাধান দিয়েছে পড়–য়া জাতি।
বই পড়তে পারাটা একটা ম্যাজিকের মতো। হাজার বছরের সমস্ত মানুষের কথা ইচ্ছে করলেই জানা যাচ্ছে। ইচ্ছে হলেই বেড়ানো যাচ্ছে মিসর, বেবিলন মেসোপটেমিয়া, ভারতবর্ষের সেই প্রাচীন সভ্যতায়।
পড়ার অভ্যাস করতে পারাটা একটা বিশাল সৌভাগ্যের ব্যাপার। তারা খুবই দুর্ভাগা যাদের পড়তে শেখার সুযোগ হয়নি। তাদের চেয়েও দুর্ভাগ্য তাদের যারা পড়তে শিখেও পড়ল না।
মানুষ সাধারণত খুব নিকট অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে পারে না। জৈবিক ধারণাতেই তাদের জীবন চালিত। অতীত বলতে তাদের থাকে কিছু স্বার্থগত স্মৃতি আর ভবিষ্যৎ বলতে কিছু সঞ্চয় পরিকল্পনা। খাওয়া খাদ্য বাসস্থানের স্বল্পমেয়াদি প্রকল্প কিছু ইতর শ্রেণীর প্রাণীর থাকে। জ্ঞানের শুরু থেকে মানুষ খুঁজে গেছে মানুষের সাথে পশুর পার্থক্যটা আসলে কত দূর? সেই পার্থক্যের সত্যিকারের উপলব্ধির জন্য আল্লাহর বাণী পাঠালেন পড়ো তোমার প্রভুর নামে। জানিয়ে দিলেন মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। তাই সক্রেটিস বলেছিলেন তুমি নিজেকে জানো।
বই মানুষের চিন্তার খোরাক। বই পড়ে মানুষ চিন্তার জগতে বিপ্লব সৃষ্টি করতে পারে। বই না পড়ে যে মানুষ নিগূঢ়তম চিন্তার জগতে ঢুকতে পারে না, তা নয়। কিন্তু ওটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যথোপযুক্ত লোক খুঁজে নিয়ে তার সাথে দীর্ঘ আলাপ চালানো হতে পারে এক ধরনের চিন্তার খোরাক। বই হচ্ছে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে সহজতম পদ্ধতি হাজার বছরের মানুষের চিন্তার ইতিহাসকে সংযুক্ত করার। হয়ত ভবিষ্যতে এর চেয়ে সহজ কোনো উপায় বের হতে পারে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুব সুন্দর করে বলেছেন, মহাসমুদ্রের শত বছরের কল্লোল কেহ যদি এমন করিয়া বাঁধিয়া রাখিতে পারিত যে, সে ঘুমাইয়া পড়া শিশুটির মতো চুপ করিয়া থাকিত, তবে সেই নীরবতা শব্দের সহিত এই লাইব্রেরির তুলনা হইত। এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, প্রবাহ স্থির হইয়া আছে, মানবতার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে কাগজের কারাগারে বাঁধা পড়িয়া আছে। ইহারা সহসা যদি বিদ্রোহী হইয়া ওঠে, নিস্তব্ধতা ভাঙিয়া ফেলে, অক্ষরের বেড়া দগ্ধ করিয়া একেবারে বাহির হইয়া আসে! হিমালয় মাথার ওপরের কঠিন বরফের মধ্যে যেমন কত বন্যা বাঁধ আছে, তেমনি এই লাইব্রেরির মধ্যে মানবহৃদয়ের বন্যাকে বাঁধিয়া রাখিয়াছে!

জীবন বদলে দিতে পারেন
আপনি যদি প্রতিদিন ৩০-৬০ মিনিট স্টাডি করেন তবে প্রতি সপ্তাহে আপনার একটি বই সম্পন্ন হয়। প্রতি সপ্তাহে একটি বই সম্পন্ন হলে প্রতি বছর সম্পন্ন হয় ৫০টি বই। আর আপনি যদি সিলেকটিভ ফিল্ডে ৫০টি বই সম্পন্ন করেন তবে প্র্যাকটিকেল ফিল্ডে একটি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জিত হয়। কারণ মেজর ইউনিভার্সিটিতে একটি পিএইচডি প্রোগ্রামে সিলেবাসে ৪০ থেকে ৫০টি বই পড়ানো হয়ে থাকে। যদি এভাবে বছরে ৫০টি বই স্টাডি ধারা অব্যাহত রাখেন তবে পরবর্তী ১০ বছরে আপনার পঠিত বইয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫০০তে। যেখানে বিশ্বের মানুষ গড়ে মাত্র একটি বইয়ের কম স্টাডি করেন সেখানে সিলেকটিভ ফিল্ডে আপনি যদি ৫০০ বই স্টাডি করেন তবে আপনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের কতটা উচ্চমার্গে উত্তীর্ণ হবেন, ভাবতে পারেন?
সত্যি বলতে আপনি যদি প্রতিদিন ভোর বেলায় ৩০-৬০ মিনিট স্টাডি করার অভ্যাস করতে পারেন তবে এটি আগামী দশ বছরের মধ্যে আপনাকে আপনার ফিল্ডের smart reader, most knowledgeable, most expert, highest paid successful person এ উন্নীত করবে আপনি পৃথিবীর এমন কোন successful person পাবেন না যারা daily study habit এর মাধ্যমে নিজেদের জীবনে পরিবর্তন আনেননি।
আমার পরিচিত বইপড়–য়া একজন ব্যক্তিত্ব হলেন অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলের নির্বাচিত সাবেক ভিপি, একসময়ের রাজপথ কাঁপানো তুখোড় ছাত্রনেতা। যিনি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই সরকারি অর্থায়নে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানাবিধ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। তাকে আমি তার ব্যক্তিজীবনের অবিস্মরণীয় এই যোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম- তিনি শুধু বলেছিলেন ‘আমি কখনো দিনের বেলা ঘুমাই না। সবাই যখন ঘুমাতো আমি তখন পড়ালেখা করতাম। ফজরের নামাজের পর সবসময় কমপক্ষে দুই ঘণ্টা পড়ালেখার অভ্যাস আমার ছিল ; এখনো যেটা আমি অব্যাহত রেখেছি।’

ব্যবহারিক টিপস
১.আপনার study field সিলেক্ট করুন ও সিলেবাস তৈরি করুন।
২.টিভি, রেডিও, সোশ্যাল মিডিয়া ও সকল প্রকার ইলেকট্রিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার একটি নিয়মতান্ত্রিকতার আওতায় নিয়ে আসুন এবং সময় অপচয় রোধ করুন।
৩.দিনের সকল কাজের লিস্ট করুন এবং সময় ও অগ্রাধিকার অনুযায়ী শিডিউল তৈরি করুন।
৪.প্রতিদিন ফজরের আগে ঘুম থেকে জাগুন।
৫.পড়ালেখার মাধ্যমে দ্বীনের কাজ শুরু করুন এবং আপনার মনে ইনভেস্ট করুন।
আগামীকাল থেকে তো অনেক কিছুই শুরু করলাম, এবার না হয় আজ থেকে শুরু করি, কেমন?

বই পড়ার কৌশল
সবার পড়ার ধরন এক রকম নয়। একেকজনের পড়ার ধরন একেক রকম। অভিজ্ঞতার আলোকে শেয়ার করছি : নতুন কোনো বই পেলেই বই ও লেখকের নাম এবং কতটা ভালো করে দেখি। লেখক পরিচিতি থাকলে একনজর দেখা উচিত। অনেক সময় মূল মলাট উল্টালেই লেখকের কথা চোখে পড়ে । এটা অবশ্যই পড়তে হবে। তাতে বইয়ের মূল বক্তব্যটা সহজেই উপলব্ধি করা যায়।
এরপর পড়া শুরু হয় সূচিপত্র থেকেই। অতীব গুরুত্বপূর্ণ কোন অধ্যায় পেলে সেখানেই কৌতূহলী মন নিয়ে আগে ঢু মারি। তা না হলে সকল অধ্যায় সমান গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে প্রথম অধ্যায় থেকেই করতে থাকি। হাতের কাছে লাল কালির কলম থাকতেই হবে। লাল কালির কলম ছাড়া মার্কিং করা কঠিন। সচরাচর লাল, নীল এবং সবুজ তিনটি কলম এবং অনেক ক্ষেত্রে text liner অথবা marker pen ব্যবহার করা যায়।
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ লাইনগুলোতে বা কোন বিখ্যাত ব্যক্তি বা মনীষীর উক্তি পেলে লাল কালি দিয়ে underline বা text liner দিয়ে mark করে রাখি। তবে অপেক্ষা কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলিতে সবুজ, কখনো নীল কালি ব্যবহার করি; যাতে বিষয়ের ভিন্নতা সহজেই চোখে পড়ে। এতে করে পরবর্তীতে এই বিষয়টা খুঁজে বের করতে অনেক সহজ হয়।
কোন নতুন বই ও লেখকের নাম উল্লেখ থাকলে লাল কালি দিয়ে গোল চিহ্ন দিই। ইংরেজি বা অন্যান্য বিদেশি কোনো শব্দ পেলে গোল চিহ্ন দিয়ে ডিকশনারি থেকে অর্থ বের করে পাশের ফাঁকা জায়গায় অ্যারো চিহ্ন দিয়ে রাখি। নতুন কোন পারিভাষিক শব্দ তার এ টু জেড অভিধান ঘেঁটে বের করার চেষ্টা করি বা পড়ে ফেলি (ব্যস্ততা না থাকলে)!
গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর পাশে তারকা চিহ্ন ব্যবহার করি। খুব বেশি হলে তিন তারকা অপেক্ষাকৃত কম হলে দু’টি বা তার চেয়েও কম হলে একটি তারকা চিহ্ন ব্যবহার করি।
মজার হাসির কোন প্রসঙ্গ পেলে হাসির emoji আটকানোর চেষ্টা করি অথবা হা-হা-হা লিখে রাখি।
বিস্ময়কর অবাস্তব ঘটনা বা প্রসঙ্গ এলে!!! দিই। ভালোলাগা লাইনটুকু তৎক্ষণাৎ আত্মস্থ করার চেষ্টা করি। কোন বিষয়ে লেখকের মতের সাথে অমিল হলে পরে নিজস্ব মতামত লিখে রাখি কালো কালিতে। অত্যধিক ভালো লাগলে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতাসূচক কথাবার্তাও লেখার চেষ্টা করি।
আর একটি কথা বই পড়া যখন শুরু করি তখন পৃষ্ঠার উপরে নিজের স্বাক্ষর বানানসহ বাংলা ইংরেজি ও হিজরি তারিখ- সন – বারের নাম এবং সময় লিখে রাখি। সম্পূর্ণ বই তাড়াহুড়ো করে শেষ করার জন্য কখনোই খুব বেশি তাড়া অনুভব করি না বলেই স্বাভাবিক গতিতে ধীর-স্থিরভাবে তা পড়ার চেষ্টা করি। তবে কখনো কখনো বই সাইজে ছোট এবং অত্যধিক ভালোলাগার হলে এক বৈঠকে শেষ হয়ে যায়।
বই পড়ার সময় আরেকটি কাজ খুবই জরুরি তাহলো নোট রাখা। অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি হাতের কাছে রাখার নোটবুকে তৎক্ষণাৎ টুকে রাখা পৃষ্ঠা নম্বরসহ। বইয়ের রিভিউ লেখা বা অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনে নোটবুকে চোখ বুলালেই যথেষ্ট। যদিও এটা আমার সবসময় করা হয়ে ওঠে না। তবে চেষ্টা করছি নিয়মিত করার। বই পড়া শেষ হলে শেষ পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর দিন-তারিখ সময়ের উল্লেখপূর্বক নিজস্ব মতামত সংক্ষেপে লিখে ফেলি।
আর একটা কথা, সচরাচর ধার করে বই পড়ি না । বই ধার করা ও ধার দেয়া যদিও পছন্দের কাজ।
আমার সংগ্রহে বেশকিছু গ্রন্থের পিডিএফ ফাইল রয়েছে। ল্যাপটপ বা মোবাইলের মাধ্যমে মাঝে – মধ্যে তা থেকে পছন্দসই বই পড়ে থাকি । তবে সত্য বলতে- হার্ডকপি পড়ার মজাই অন্যরকম।
নতুন বা পুরাতন বইয়ের গন্ধে অন্যরকম এক আকর্ষণ বোধ করি যা আমার কাছে খুবই ভালো লাগার। তবে কখনও দীর্ঘ সময় বা স্বল্প সময়ে সফরে থাকলে সেখানে হার্ডকপি বহন করা সম্ভব না হলে pdf file থাকলেও পড়ার ক্ষুধা মেটানো যায়! সময়টাও বেশ সুন্দর কাটে। সে হিসাবে পছন্দের কয়েকটি বইয়ের পিডিএফ ফাইল সব সময় মোবাইলে রাখি। টুকটাক পড়িও!
সর্বোপরি, বন্ধুদের আড্ডায় বা কারো সাথে গল্পের সময় বইয়ের অনুরূপ প্রসঙ্গ এলে পরে ওইসব বইয়ের শিক্ষণীয় বিষয় বা লব্ধ জ্ঞান তাদের সাথে নিজের মতো করে শেয়ার করি এবং তাদের কেউ বইটি পড়তে উৎসাহিত করি।
‘বাঙালির বই পড়ার আগ্রহ প্রবল কিন্তু বই কেনার বেলায় এসে অবলা।’- সৈয়দ মুজতবা আলী।
কিন্তু বর্তমানে, আমাদের বই কেনার বেলায় যেমন অবহেলা! facebook আসার পরে অনেক ক্ষেত্রে facebook আসক্তির কারণে বই পড়ার বেলায়ও তেমনি অবহেলা।
আসুন! নিজে বই পড়ি, সুন্দর জীবন গড়ি এবং অন্যদেরকেও বই পড়ায় উৎসাহিত করি।

শিশুদেরকেও বই পাঠের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত
গবেষণায় দেখা গেছে যেসব বাচ্চাকে ছোটবেলায় বই পড়ে শুনানো হয় তারা তাদের counterpart বা অন্য বাচ্চারা যাদেরকে বই পড়ে শুনানো হয় না, তাদের চেয়ে ভালো পাঠক হয়। কারণ ছোটবেলা থেকে তারা বই পড়ার সাথে পরিচিত হয়। যাদের বাসায় ছোটখাটো লাইব্রেরি থাকে তাদেরও ভালো পাঠক হিসেবে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কেবল বই পড়া যথেষ্ট নয়, কিশোরদেরকে বইয়ের আলোচনায় যুক্ত করতে হবে। সে একটা বই পড়ে কি বুঝতে পারল, কি নতুন তথ্য শিখলো, কোন জিনিসটার সাথে সে একমত, কোন জিনিসটার সাথে একমত নয় তাদেরকে এই ধরনের প্রশ্ন করতে হবে। অবশ্যই প্রথম দিনেই কোন শিশু এই পদ্ধতিতে অসাধারণ কিছু করে ফেলতে হয়ত পারবে না, কিন্তু ২-১ বছরের মধ্যেই তারা ভালো পাঠক হয়ে উঠবে, চিন্তা করতে শিখবে। নিজের মতো করে অ্যানালাইসিস করবে। বেশিরভাগ সময়েই আমরা বাচ্চাদেরকে এই প্রশ্নগুলি করি না। আমরা নিজেরাও এই পদ্ধতির সাথে পরিচিত নই। কিন্তু একবার এই পদ্ধতির সাথে পরিচিত হলে এটা কি সূর্যের ভবিষ্যৎ সময়ের জন্য অনেক ফলপ্রসূ কিছু হবে।
শিশু-কিশোরদেরকে যাচ্ছেতাই শিখতে দেয়া যাবে না। তাদেরকে বুঝাতে হবে যে কেবল বইটি পড়লেই কোনো জিনিস সত্য হয়ে যায় না। যেকোনো বিষয়কে যুক্তি বুদ্ধি এবং জ্ঞান দিয়ে যাচাই বাছাই করার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। যেকোনো দাবিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভালো reference লাগে এটাও তাদেরকে ছোটবেলা থেকে শেখানো উচিত।
সূত্র মতে, যেসব শিশু-কিশোর কোন কিছু শেখার পরে অন্যদের সাথে শেয়ার করছে, তার বন্ধুদেরকে বুঝিয়ে দিচ্ছে, যে কোন জিনিসের কারণ ব্যাখ্যা করতে পারছে তারা অনেক ভালো শিখছে, তাদের analytical skill বাড়ছে। যারা আলোচনা করে শিখছে, অন্যের মত এবং চিন্তার সাথে পরিচিত হচ্ছে, কয়েক বছরের ব্যবধানে যারা কেবল নিজে নিজে পড়ছে তাদের তুলনায় অনেক গভীর জ্ঞান নিয়ে বেড়ে উঠছে। শিশু-কিশোররা বই পড়ার পরে তাদেরকে এই বইয়ের ওপর নিজের ভাষায় একটা summary লিখতে বলা যেতে পারে, ৫ মিনিট এই বইয়ের ওপর কথা বলতে দেয়া যেতে পারে। এটাও তাদের বুঝ শক্তিকে আরও শাণিত করবে। তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে তাদের নিজের মতকে ডিফেন্ড করার কৌশল শেখাতে হবে। এই জিনিসগুলো রাতে খাবার টেবিলে গল্প বা আড্ডার সময় করা যেতে পারে। কোন একটা ছুটির দিনে পরিবারের সবাই নিজের পছন্দমত বই পড়বেন এবং পারস্পরিক knowledge sharing session করবে এরকম কিছু একটা করা যেতে পারে।
শুধু বিনোদনের জন্য নয়, তাদেরকে ধীরে ধীরে জ্ঞানমূলক বই এবং নিজের লেভেলের চেয়েও কিছুটা কঠিন বইয়ের দিকে নিয়ে যেতে হবে। অবশ্যই শুরু হতে হবে আনন্দের কিছু দিয়ে, সহজ কিছু দিয়ে। তাদেরকে feedback দিতে হবে। কি ভালো করেছি কি আরো ভালো করা যেত এ বিষয়ে বুঝিয়ে বলতে হবে। তাদেরকে একটা কাজ আরও সুন্দর করে করার, শেখার সুযোগ দিতে হবে। এই বিশ্বাস তৈরি করতে হবে যে- হ্যাঁ তুমি চেষ্টা করছো এবং উন্নতি লাভ করছো। ভালো কিছু করা যে সহজ না এবং উন্নতি একটা নিয়মিত পদ্ধতি- এ বিষয়ে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন।
সবশেষে তাদের সাথে অন্তরঙ্গতার কোনো বিকল্প নেই। আপনি কয়েকটা মজার বই দিয়ে তাদের সাথে আপনার সম্পর্কের সূচনা করতে পারেন। এই বই হয়তো তার জীবন বদলে দেবে একজন কিশোর হয়ে উঠবে আগামীর ভালো পাঠক, লেখক কিংবা অ্যানালিস্ট।

লেখালেখির পূর্বশর্ত গভীর অধ্যয়ন
পড়ার মাধ্যমে পুঞ্জীভূত জ্ঞানের সমষ্টি একসময় লেখনীশক্তি দিয়ে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তাআলাও প্রথমে মানুষকে পড়তে বলেছেন এর পরেই কলমের ব্যবহার করতে বলেছেন অর্থাৎ লেখার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। শুধুমাত্র পড়ার জন্য পড়ার চেয়ে অনেক উত্তম হলো লেখার জন্য পড়া। লিখতে না পারলেও অন্তত কোন একটা বিষয়ে গভীরভাবে পড়াশোনা থাকা এবং সে বিষয়ে নলেজ শেয়ার করা এবং সম্ভব হলে অবশ্যই লেখা উচিত। আর লেখালেখি করতে হলে গল্পের বইয়ের পাশাপাশি জ্ঞানমূলক বই পড়া খুবই দরকার। ধরুন আপনি হুমায়ূন আহমেদের বই পড়তে ভালোবাসেন। বিনোদনের জন্যই উনার বই খুবই সুপাঠ্য কিন্তু গেম তৈরিতে অংশগ্রহণের জন্য খুব বেশি উপযোগী নয়। পশ্চিমা সভ্যতার উন্নতির পেছনে একটা বড় নিয়ামক হলো গেম তৈরি। তারা প্রতিদিন নতুন নতুন ধারণা তৈরি করছে। এটা তখনই সম্ভব যখন আপনি জ্ঞানমূলক বই পড়বেন।
পৃথিবীর সেরা গ্রন্থ দিয়ে
পাঠাভ্যাসের উন্মোচন হোক

যুগে যুগে বিশ্ব ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে কিছু গ্রন্থ। আর যারা পাল্টাতে চেয়েছে তারাও সবার আগে চেষ্টা করেছে সেই গ্রন্থগুলোর আদি-অন্ত পড়ে ফেলার।
মোঙ্গলরা আব্বাসীয় সাম্রাজ্যে আক্রমণ চালিয়ে বাগদাদের কয়েক লক্ষ লোককে হত্যা করেছিল। পুরো বাগদাদকে শ্মশান বানিয়ে দিয়েছিল। তারা মুসলিম উম্মাহ সবচেয়ে বড় ক্ষতি যেটা করেছিল তা হলো তারা কয়েক লক্ষ বই সংবলিত ‘দারুল হিকমাহ’ নামের বিশ্বের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরিটা ধ্বংস করেছিল। মানবসভ্যতা মহামূল্যবান বইগুলো এক এক করে ফোরাত নদীতে ফেলে দিয়েছিল। ফুরাতের স্রোত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বইয়ের স্তূপের কারণে! দীর্ঘদিন ফুরাতের সেই পানি বাগদাদ বাঁশি ব্যবহার করতে পারেন কারণ, তা ঐসব বইয়ের কালি আর মন্ডতে বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল!
মঙ্গলবার সেই কয়েক লক্ষ বই এ জন্যই ধ্বংস করেছিল যে, তারা শুনেছিল, তখনকার দিনের দুই বিশ্ব পরাশক্তি, superpower, রোমান ও পারস্য সভ্যতার ধ্বংস করতে পেরেছিল যে যাযাবর, পশ্চাৎপদ, বর্বর আরবরা, তাদের মূল শক্তি নিহিত ছিল এই বইয়ের মধ্যেই। এই কারণেই তাদের সমস্ত রাগ ছিল বইয়ের ওপরে!
বস্তুত তাদের বিশ্বাস আর ধারণা অমূলক ছিল না। মুসলমানরা একটামাত্র বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিপদটা সাধন করতে পেরেছিল। সেই বই তথা আরবি ভাষায় সেই কিতাবটা হলো ‘আল কুরআন’। মহাবিশ্ব al-quran! এটা এমন একটা বই যে, এর মধ্যে বিন্দুমাত্র সন্দেহ সংশয় নেই, থাকার উপায় নেই।
এই একটিমাত্র বই বর্বর অশিক্ষিত ও পশ্চাৎপদ আরব জাতিকে মহা ক্ষমতাধর করে তুলেছিল। এতটা ক্ষমতাধর যে, তারা ছয় হাজার বছরের ঐশ্বর্য ও শক্তিসমৃদ্ধ পারস্য সাম্রাজ্যকে, সাড়ে চার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী মহাশক্তিধর রোমান সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে তাদের ওপরে নিজেদের কর্তৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
সঙ্গত কারণেই মোঙ্গল তাতাররা ভীত ছিল তাদের ক্ষমতা, নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে, তাই তারা মুসলিম সাম্রাজ্য ধ্বংস করার পাশাপাশি তাদের সমাজ থেকে সব বই ধ্বংস করেছিল।
ইতিহাস কিন্তু সেই মুঘল সেই বর্বর তাতারদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছে। বাগদাদ আক্রমণ ও সেখানে তাদের দ্বারা পরিচালিত পৈশাচিক ধ্বংসযজ্ঞের মাত্র ৪০ বছরের মধ্যেই তাতাররা, মোগলরা নিজেদের অজান্তেই ইসলামের কাছে তথা বিস্ময়কর গ্রন্থ, আল কুরআনের কাছে নিজেদের সমর্পণ করে দেয়। মোগলরা, তাতাররা মুসলমান হয়ে যায়!
এর কারণটা কী ছিল? একমাত্র দৃশ্যমান কারণ এটা ছিল যে, তারা প্রায় ১১ লক্ষ মুসলমানকে হত্যা ও তাদের সমাজ তাদের সমস্ত বইপত্র ধ্বংস করার পরেই যে গুটিকতক মুসলমানকে বাঁচিয়ে রেখেছিল, তার বেশিরভাগই তাদের হাতে বন্দিনী নারী ও মুসলিম নারী। এই নারীদের প্রায় সবাই ছিলেন শিক্ষিতা। তারা প্রত্যেকেই নিজের মন-মগজে শত শত বই এবং মহা বিস্ময়কর গ্রন্থ আল কুরআনের শিক্ষাকে ধারণ করে রেখেছিলেন।
তাতাররা বই ধ্বংস করেছিল বাগদাদের ১১ লক্ষ বই পাঠককে হত্যা করেছিল বটে কিন্তু তারপরেও যে একটি বই পাঠক পাঠিকা কি নিজেদের বিকৃত লালসা মেটানোর জন্য বাঁচিয়ে রেখেছিল, সেই মাত্র গুটিকতক বই পাঠিকার হাতে মাত্র চল্লিশ বছরের মধ্যে তারা নিজেদের লালিত ঐতিহ্য সাম্রাজ্য সভ্যতাকে বিসর্জন দেয়। স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুসলমান হয়ে যায়! কি অসাধারণ ক্ষমতা সেই বইয়ের! ভাবতে গেলেও বিস্ময়ে বিমূঢ় হতে হয়।
আজ মুসলমান তরুণ যুবকদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা সবচেয়ে কম। কুরআন তেলাওয়াত এর কিছুটা অভ্যাস থাকলেও যথাযথভাবেই মহাগ্রন্থ অধ্যয়নের কোন ইচ্ছাই আজ যুবসমাজের নেই।
কী লজ্জা! কী নির্মম পরিণতি! নিদারুণ মানসিক বিকৃতি!!
মুসলমান যুবক তরুণদের শোচনীয় মানসিক বিপর্যয় নিয়ে ভাবতে গেলে ক্রোধে-আক্রোশে, অনুতাপে আর অনুশোচনায় চেতনা বিবশ হয়ে আসে যেন, চোখ ফেটে অশ্রু বেরিয়ে আসে, চোখ ভিজে যায়!
নিজেদের বিপর্যয় অবস্থা কাটিয়ে উঠতে হলে, নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হলে, করাতে হলে সকল কিছুর আগে আশ্রয় নিতে হবে সেই বইয়ের কাছে, ডুবতে হবে বইয়ের সাগরে, এর পাতায় পাতায়, বিচরণ করে বেড়াতে হবে, নিজেদের সজ্জিত করতে হবে নতুন করে। তাই আমার প্রতিদিনের সকালটা শুরু হোক পৃথিবীর সেরা গ্রন্থ আল কুরআন অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে।

প্রিয় বন্ধুরা
যুগে যুগে জ্ঞানচর্চাকারীরাই মসনদে সমাসীন ছিলেন। আজ মুসলমানরা বসনিয়া থেকে আরাকান পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বে নির্যাতিত, অত্যাচারিত, ক্ষমতাচ্যুত, বিচ্যুত। কিন্তু এই মুসলমানরাই এক সময় ছিল পৃথিবীর সেরা জাতি। সোনালি সেই ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল জ্ঞান চর্চার মাধ্যমেই। মুসলমানদের ঘরে ঘরে ছিল বই পড়ার অভ্যাস। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি উদ্যোক্তা ও পরিচালক ছিল মুসলমানরা। বাগদাদের দারুল হিকমা পরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঠাগারটি ছিল গ্রানাডায়। গ্রানাডার এই লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা ছিল ৪ লক্ষ। ঐ একই সময়ে ইউরোপ জুড়ে সবচেয়ে বড় যে পাঠাগারগুলো ছিল তা ছিল মূলত খ্রিস্টান পাদ্রীদের মঠে বা গির্জায়। আর ইউরোপীয় ঐতিহাসিকদের মতে, পুরো ইউরোপব্যাপী কোন গির্জা বা মঠে চার শতের বেশি বই ছিল না। (সূত্র : History of the reign of Ferdinand and Isabella the Catholic. William H prescott, 1837, pp.188)
সে সময় মুসলিম জনমানসই এমন ছিল যে, ছেলে-বুড়ো নারী-পুরুষ কিংবা ধনী-গরিব সবাই বই-পাগল ছিলেন। প্রতিটি বাড়িতে ছিল গ্রন্থাগার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক লাইব্রেরি। কে কার চেয়ে বেশি বই জোগাড় করতে পারে, তা নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলত সমাজবাসীর মধ্যে। একে অপরকে উপহার হিসেবে তারা বই দেয়া নেয়া করতেন। কারো বাড়িতে বেড়াতে গেলেও উপহার হিসেবে বই নিয়ে যেতেন। ইতিহাসে দেখা যায় স্বয়ং খলিফা দ্বিতীয় আল-হাকাম উপহার হিসেবে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন বই। তার নিজের যে ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ছিল সেখানে বইয়ের সংখ্যা ছিল ষাট হাজার।
আর পশ্চিমা ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের গবেষণায় এটা আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, ১০ শতাব্দীতে ইউরোপের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি অবস্থান ও বইয়ের বাজার বসতো মুসলিম আন্দালুস তথা স্পেনে।
সেই সমাজে কেবল পুরুষদের বেলাতেই যে এরকম মনোজাগতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন ঘটে ছিল তাই নয়, নারীদের বেলাতেও এরকম একইভাবে উত্তরণ ঘটেছিল। তার প্রমাণ আমরা পাই খলিফা দ্বিতীয় আল-হাকামের আমলে এ ঘটনায়।
রাজ পরিবারের এক যুবকের বিয়ে দেয়ার জন্য খলিফা উপযুক্ত পাত্রী খুঁজছিলেন। তিনি নিজে অত্যন্ত বিদ্বান ও বিদ্যোৎসাহী, তেমনি তিনি রাজ পরিবারের জন্য সেরকমই একটি পাত্রী খুঁজছিলেন।
তাই খলিফা এক বিস্ময়কর ঘোষণা জারি করলেন পাত্রীর খোঁজ চেয়ে। তিনি ঘোষণা করলেন; গ্রানাডা শহরে যে বাড়িতে বিবাহযোগ্য এমন পাত্রী রয়েছে, যে পাত্রী একদিকে পুরো আল কুরআন মুখস্থ করেছে অর্থাৎ কুরআনে হাফেজ এবং এর পাশাপাশি ইসলামের যে কোন একটি হাদিসশাস্ত্র যার মোটামুটি জানা আছে সেরকম পাত্রীর অভিভাবকরা যেন তাদের বাড়ির বারান্দা বা বেলকুনির বাইরে রাতের বেলায় প্রজ্জ্বোল্যমান বাতি টাঙিয়ে রাখেন।
কেবল খলিফাকেই নয়, পৌর গ্রানাডাবাসীকে অবাক করে দিয়ে সে রাতে শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়ির বেলকুনিতেই প্রজ্জ্বোল্যমান বাতি টাঙানো হয়েছিল। অর্থাৎ প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কেমন যুবতী মেয়ের উপস্থিতি ছিল, যে মেয়েটি একাধারে কুরআনে হাফেজ আবার অন্যদিকে হাদিস শাস্ত্রেও তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল।
প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ নিয়ে যারা ভাবেন, মুসলমান হিসেবে মুসলিম বিশ্ব নিয়ে যারা ভাবেন, মুসলিমদের একটি স্থায়ী ও অর্থবহ পরিবর্তনের জন্য যারা নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন। হতাশাগ্রস্ত মুসলিম যুবসমাজের আগামীর আলোর দিশারি হিসেবে যারা দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও অপসংস্কৃতির মূলোৎপাটনের স্বপ্নধারা বিভোর। বিপ্লব বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক সোনালি সমাজের কারিগর হিসেবে যাদের গড়ে তোলা হচ্ছে, সেই মানুষগুলোকে স্বপ্ন দেখতে হবে এক নতুন বিপ্লবী জ্ঞানচর্চাময় সমাজের। ঘরে ঘরে গড়ে তুলতে হবে পাঠাগার, হাতে হাতে পৌঁছে দিতে হবে বই, নিজে অধ্যয়ন করে জানিয়ে দিতে হবে, আবার সেই সোনালি সমাজ আমরা গড়ব এই বই হাতে নিয়ে- পৃথিবীকে আলোকিত করব ইনশাআল্লাহ।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক প্রেরণা

Wednesday, April 25, 2018

তুরস্কে মাওলানা মওদুদী ও তাফহীমুল কুরআনের প্রভাব



লিখেছেনঃ এরবাকান



সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ )বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ যার ক্ষুর ধার লেখনী ও বিশাল সাহিত্য ভাণ্ডার তাঁকে আজও আমাদের মাঝে জীবন্ত রেখছে। তুরস্ক আজ যে ইসলাম পন্থী একটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে এটা তৈরিতে মাওলানার সাহিত্যের ভূমিকা অপরিসীম।


ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকনের উপর মাওলানা মওদুদীর প্রভাব-
ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান হলেন তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের মহান সিপাহ সালার। তিনি তার বক্তব্যে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ভরে মাওলানা মওদূদীর (রহঃ)নাম নিতেন। তিনি মাওলানাকে ইমাম বলে অবহিত করতেন এবং তার সাহিত্য পড়ার জন্য তার জনশক্তিকে উৎসাহ যোগাতেন। তার মৃত্যুর আগে এরজুরুম শহরের একটি সমাবেশে বলেছিলেন আমি দেখতে পাচ্ছি নিকট ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে জিহাদ নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি তৈরি হবে তাই আপনারা মাওলানা মওদূদীর (রহঃ) 'আল জিহাদু ফিল ইসলাম' বইটি পড়ে নিবেন। তিনি হয়তবা আজকের আইএস এর কথাই বলেছিলেন।
তার প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলন 'মিল্লি গুরুশে' এর সিলেবাসে মাওলানা মউদূদীর (রহঃ) অনেক বই রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হল-

১।তাফহীমূল কোরআন

২। ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী

৩।ইসলামি রেনেসাঁ আন্দোলন

৪।কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা

৫। আ্ল কুরআনের মর্ম কথা।

৬। সমস্যা ও সমধান

৭।আসুন মুসলিম হই।

৮। আসুন দুনিয়াকে পরিবর্তন করি।

৯। খিলাফাত ও রাজতন্ত্র

১০। ইসলাম পরিচিতি।

তুরস্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের উদ্যোগে নিয়মিত তাফহীম পাঠ করা হয়ে থাকে। কিছু কিছু রয়েছে যারা এক যুগের ও বেশী সময় ধরে নিয়মিত ভাবে তাফহীম পাঠ করে আসছেন। প্রতি বছর বিভিন্ন সংগঠের উদ্যোগে তাফহীমুল কোরআন পাঠ প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে।

তুরস্কে ২ টি প্রকাশনা থেকে তাফহীম প্রকাশিত হয়ে থাকে। একটি ৭০ এর দশকে প্রকাশিত হয়েছে অপরটি হয়েছে ২০০০ সালের পর। বর্তমান সময়ে চিন্তার দ্বন্দে মাওলানা মওদূদীর (রহঃ) সাহিত্যের যেন কোন জুড়ি নেই। যিনি শত বছরের সকল জঞ্জাল কে মুছে ফেলে আমাদের সামনে এক নিরেট ইসলাম পেশ করার লক্ষে আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন। বাংলাদেশ জামায়াতেে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের শাহাদাত এবং এই দলটিকে ঘিরে ইয়াহুদি ও সাম্রাজ্য বাদীদের মাথা বাথা যেন তুরস্কে মাওলানা মউদূদীর (রহঃ) সাহিত্যের প্রভাবে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে

Source: Facebook page

তুরস্কের শীর্ষ আলেম , তুরস্ক সরকারের ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং তুরস্কের গ্র্যান্ড মুফতি শায়েখ ড. আলি আরবাশ হাফিঃ বলেন -
" তাফহিমুল কোরআন হলো তুরস্কের যুবকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী গ্রহণযোগ্য তাফসীর। আমরা তুরস্কের যুবকদেরকে এই তাফসীর পড়তে উৎসাহিত করি "।

Friday, April 20, 2018

কাব্যের দায় মিটিয়ে কবি গোলাম মোহাম্মদ এগিয়ে গেছেন আদর্শের ঝাণ্ডা হাতে -তৌহিদুর রহমান



বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সমালোচেক, সব্যসাচী লেখক, কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ গোলাম মোহাম্মদের মৃত্যুর পর কবিকে নিয়ে আয়োজিত নাগরিক শোকসভায় বলেছিলেন, ‘আমাদের একটা অসম্ভব রকমের খারাপ অভ্যাস আছে। তা হচ্ছে, আমরা বেঁচে থাকতে কাউকে যথাযথ মূল্যায়ন করি না, আবার মরণের পরে তাকে নিয়ে কিছুদিন উৎসাহ দেখাই। তারপর সব ভুলে যাই। আমাদের মধ্যে আরো একটা বিষয় প্রকটভাবে আটকে আছে, তা হচ্ছে রাজনীতি। আমরা সবকিছুর সাথে রাজনীতি যুক্ত করে ফেলি। সৈয়দ আলী আহসান আমাদের বড় কবিদের মধ্যে একজন। সৈয়দ আলী আহসানকে নিয়ে তার মৃত্যুর পরে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল এখন তা নেই। আমরা ইতোমধ্যেই তাকে ভুলতে বসেছি। কেন এটা হবে? তার কবিতা তখনও যা ছিল এখনও তাই আছে। একই কথা প্রযোজ্য কবি শামসুর রাহমানের ক্ষেত্রে। সৈয়দ আলী আহসানের মুত্যুর পরে তাকে নিয়ে কবি গোলাম মোহাম্মদ ভালো একটা কবিতা লিখেছিল। আমাদের উচিত অগ্রজদের নিয়ে কাজ করা। তাদের বাঁচিয়ে রাখা।’

আজ যেন বাংলাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই সাহিত্য সমালোচকের কথার প্রতিফলন আমরা পরতে পরতে দেখতে পাচ্ছি। আজ আবদুল মান্নান সৈয়দ নিজেই নিজের উদাহরণ হয়ে রইলেন আমাদের মাঝে। এত বড় একজন লেখক, কবি, সাহিত্য সমালোচক, শিক্ষাবিদ অথচ তাকে আমরা একদম ভুলে গেছি। গুণী এই লেখক বেঁচে থাকতে তার কাছ থেকে যে আমরা কতভাবে খেদমত গ্রহণ করেছি তার ইয়ত্তা নেই! তিনি টানা দুই বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে কবি গোলাম মোহাম্মদ রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড সম্পাদনা করেছিলেন। আর তাই হয়তো কবি গোলাম মোহাম্মকে আমরা কিছুটা হলেও চিনতে পেরেছি। তা না হলে কবি গোলাম মোহাম্মদও অনেকের মতো আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যেতেন। তাই কবি গোলাম মোহাম্মদকে বাঁচিয়ে রাখার সম্পূর্ণ কৃতিত্বটা দিতে চাই অত্যন্ত উদার ও বড় মনের মানুষ কবি আবদুল আবদুল মান্নান সৈয়দকে। কবি গোলাম মোহাম্মদকে নিয়ে আলোচনার প্রারম্ভে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি বাংলাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সমালোচেক, সব্যসাচী লেখক, কবি আবদুল মান্নান সৈয়দকে।
পাঠকের দৃষ্টিগ্রাহ্যের জন্য সৈয়দ আলী আহসানকে নিয়ে লেখা কবি গোলাম মোহাম্মদের ‘আলোকদিয়ার আলোর ছেলে’ কবিতাটি এখানে উদ্ধৃত করা হলো।
আলোকদিয়ার আলোর ছেলে কোথায় চলে যায়,
সেই বেদনা বুকের ভেতর কেবল মোচড় খায়।
আলোকদিয়ার সবুজ জুড়ে কিসের বিষাদ নামে
নবগঙ্গা ব্যথায় কাঁপে বরুনাতৈল গ্রামে
পাখিগুলোর কণ্ঠে করুণ সুর
কোথায় গেল সেই ছেলেটি সে আজ কত দূর
নীল আকাশে কাঁপন জাগে সেই ছেলেটি কই
আকাশ নীলে ব্যথার প্রলেপ কষ্টে ফোটে খই
গ্রামে গ্রামে বৃক্ষলতায় কান্না ঝরে পড়ে
সেই ছেলেটির জন্য কাঁদে মানুষ ঘরে ঘরে
মাঠে মাঠে বাতাস কাঁদে ফসল ওঠে কেঁদে
সেই ছেলেটির জন্য কত ব্যথার গাঁথা বেঁধে
মানুষ তারে ভালোবাসে ফেলে চোখের পানি
মাগফেরাতের দোয়া করে স্মৃতির আঁচল টানি।
কবি গোলাম মোহাম্মদকে আমি পুরোপুরি পাঠ করেছি। কবি গোলাম মোহাম্মদ রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড প্রস্তুত করেছিলাম প্রায় দুই বছর ধরে। সে সময় কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ সার্বক্ষণিক পাশে থেকে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন আর আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তা পালন করেছি। তখন দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা গোলাম মোহাম্মদকে নিয়ে, তার কাব্য নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা হয়েছে। তখনই আমরা বুঝেছি যে গোলাম মোহাম্মদ একজন বড় মাপের কবি। তার সমগ্র রচনা জাতির সামনে উপস্থাপিত করার দায়িত্বটা আমাদেরই ছিল, কিন্তু আমরা তা পারিনি। আমাদেরও অনেক সীমাবদ্ধতা, প্রতিকূলতা ছিল, আছে। তা আমরা আজও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সম্প্রতি কবি গোলাম মোহাম্মদের সঙ্গীত সমগ্র পুরোটা সম্পাদনা করেছি। সাধারণ ভাষায় লেখা অতি অসাধারণ অসংখ্য গান মুগ্ধ করার মতো। রচনা সমগ্র প্রথম খণ্ডের কাজ করার সময় আবদুল মান্নান সৈয়দের কাছ থেকে যে দিকনির্দেশনা পেয়েছিলাম তা এখন পাথেয় হিসেবে কাজে দিচ্ছে। আমি জীবনের দীর্ঘ সময় জুড়ে দেশের প্রথিতযশা লেখক, কবি, সাহিত্যিক সাংবাদিকের সাথে কাজ করেছি। সর্বজন শ্রদ্ধেয় আল্লামা আবদুল মান্নান তালিবের কাছ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর ধরে শিখেছি। বর্তমান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আল মাহমুদের সাথে এক বছর ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। বিশিষ্ট নজরুল গবেষক শাহাবুদ্দীন আহমদের সাথে অনেকগুলো বইয়ের কাজ করেছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কবি বেনজীর আহমদের ‘হেমন্তিকা’ ও ‘জিন্দেগী’ কাব্যগ্রন্থ এবং শাহাবুদ্দীন আহমদের ‘চতুর্দশ শতাব্দীর বাংলা কবিতা’। বিভিন্ন লেখকের অন্তত দুই হাজারের অধিক গ্রন্থ সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে সম্পাদনা, সংশোধন, পরিমার্জন করেছি। কাজ করতে গিয়ে ভুল হয়েছে, ভুল হলে অগ্রজদের কাছ থেকে শিখেছি। এখনো প্রতিনিয়ত শিখছি অনেকের কাছ থেকে। এই সব উঁচুস্তরের মানুষের সাথে কাজ করতে গিয়ে মণি-মাণিক্য সঞ্চয় হয়েছে অনেক। যা মনের মণিকোঠায় তুলে রেখেছি সযতনে। আজ আমাদের মাথা আছে কিন্তু সেই মাথার উপরে আচ্ছাদন নেই। কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে সহসা মনের পর্দায় ভেসে ওঠে কয়েকটি জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের নাম। আল্লামা আবদুল মান্নান তালিব, একেএম নাজির আহমদ, অধ্যক্ষ আব্দুর রব, কথাশিল্পী জামেদ আলী, নজরুল গবেষক শাহাবুদ্দীন আহমদ, সব্যসাচী লেখক আবদুল মান্নান সৈয়দ, কবি মতিউর রহমান মল্লিক, কবি গোলাম মোহাম্মদ প্রমুখ ছিলেন এক একটি নক্ষত্র। কথাশিল্পী জামেদ আলী ছাড়া খুব কাছাকাছি সময়ের মধ্যে অন্যদেরকে আমরা হারিয়েছি। তাদের অভাব এখন আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আজ আল্লামা আবদুল মান্নান তালিবের মতো বহুভাষাবিদ একই সাথে কুরআন-হাদিস, বিজ্ঞান, ইতিহাস-ঐতিহ্য, ফেকাহ, কবিতা, ছন্দ, অর্থনীতি, দর্শন ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখে এমন লোক পাওয়া দুষ্কর। তাই বলছিলাম যে, আজ আর আমাদের মাথার উপরে ছাতা নেই। আমরা যে হাজার হাজার কাজ করেছি কিন্তু কোথাও নিজের নামটা পর্যন্ত ব্যবহার করিনি। আমরা নাম-জসের পাগল ছিলাম না, ছিলাম কাজের পাগল। আবদুল মান্নান তালিব প্রায়ই বলতেন, মুসলমানরা দুনিয়াতে এমন বড় বড় কাজ করেছেন অথচ নিজের নামটা পর্যন্ত প্রকাশ করেননি। না জানি আত্মপ্রচারের দায়ে দণ্ডিত হয়ে পরকালে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় কিনা। কিন্তু আজ পরিস্থিতি পাল্টেছে অন্যের ওপরে নিজের নামটা না দেখলে অনেকে মনোক্ষুণœ হয়, কাজ করা ছেড়ে দেয়, এমনকি সংগঠন ত্যাগ করে। নিজের গলা থেকে আল্লাহর রজ্জু পর্যন্ত খুলে ফেলে।
কবি গোলাম মোহাম্মদ ছিলেন এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত। এই কবি ছিলেন কাজপাগল একজন মহৎ মনের মানুষ। কাজের গন্ধ পেলে তিনি আদেশের অপেক্ষা করতেন না। ঝাঁপিয়ে পড়তেন কাজে। নীরবে নিভৃতে অসংখ্য গান কবিতা লিখে গেছেন কবি গোলাম মোহাম্মদ। তিনি শুধু লিখেই গেছেন কিন্তু তা প্রকাশের কোনো পেরেশানি তার মধ্যে লক্ষ করিনি। আমাদের উচিত তার সমগ্র কর্মকাণ্ড জাতির সামনে উপস্থাপিত করা, তুলে ধরা।
কবি গোলাম মোহাম্মদের প্রত্যেকটি কাব্যগ্রন্থ ভিন্ন ভিন্ন আমেজের। তার প্রতিটি কবিতা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভিন্ন। তবে আশর্দিক দিক দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে মনে হবে তা অভিন্ন। তার কবিতার অন্তর্গত ভাব একগুচ্ছে জমা করলে বুঝা যায় তা এক একটি তসবিদানার মতো, কিন্তু অবিচ্ছন্ন সূত্রে একত্র করলে দেখা যাবে তা জমাট ঈমানী শক্তিতে একতাবদ্ধ। তার প্রতিটা কবিতার আলাদা স্বাদ স্বতন্ত্রভাবে গ্রহণ করা খুবই সহজ। তার এক একটি কবিতা পাঠ করে, তার গান শুনে মুগ্ধ হতে হয়। তাকে পাঠ করে ও শুনে কাটিয়ে দেয়া যায় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কিংবা বছর। পাঠক শ্রোতাকে বিমুগ্ধ করার বিমোহিত করার ক্ষমতা যে লেখক বা কবির যত বেশি সেই লেখক বা কবির কালোত্তীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। কবি গোলাম মোহাম্মদ এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সফল বলে আমরা মনে করি।
উপমা, অলঙ্কার, ভাববিন্দু মিলে সৃষ্টি হয়েছে তার কবিতার শরীর। তার কবিতা বিভিন্ন মাত্রায়, বিভিন্ন ভাব অলঙ্কারে প্রকাশিত হলেও তার যোগফল কিন্তু একটাই। আর তা হলো আদর্শ। এই আদর্শিক বুনন সহজে চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। তার মতো অধিক সহজ সরল সাবলীল ভাষায় কবিতার জমিন এত নিখুঁতভাবে ভরাট করতে ইতঃপূর্বে অন্য কোনো কবিকে দেখা যায়নি। সুচ সুতা, সেলাই বুনন, কারুকাজ সবই কবির একান্ত নিজের। সবক্ষেত্রেই কবির নিজের নিপুণতা নিজেই ধরে রেখেছেন।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইসলামি গানের স্বতন্ত্র একটা ধারা তৈরি করেছেন, যা কালজয়ী। কবি মতিউর রহমান মল্লিক সেখান থেকে কিছুটা হলেও সরে এসে আদর্শিক ও বৈপ্লবিক নতুন একটা ধারা সৃষ্টি করেছেন। মল্লিক থেকে আরো কিছুটা সামনে এগিয়ে এসে কবি গোলাম মোহাম্মদ অতি সহজ সরল ও মোলায়েম ভাব-ভাষায় সৃষ্টি করেছেন তার গীতিকাব্য। যা পাঠক-শ্রোতাকে আবিষ্ট করে। ধরে রাখে। সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। কবি গোলাম মোহাম্মদের বিশেষ কৃতিত্ব এইখানে যে তিনি সব সময় একদম পরিচিত শব্দে তার কাব্য-গানের ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। চেনা শব্দে এভাবে কাব্য ভাষা ও বিষয় অাকর্ষণ করতে ইতঃপূর্বে খুব কম কবিকেই দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে তিনি বিরল। তার প্রতিটা কবিতা গান পরস্পর থেকে আলাদা তবে তা নতুন আঙ্গিকে নতুন কাব্যভাবনায় সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে পাঠকের আকর্ষণ তার প্রতি।
পথহারা জনগণকে জাগিয়ে তোলার সেরা হাতিয়ার হচ্ছে কবিতা। সেই আদিকাল থেকে তাই সবচেয়ে আকর্ষণীয় মাধ্যম হিসেবে কবিতাই সব সময় আদৃত হয়ে আসছে। কবিতা মানুষকে সুন্দরের স্বপ্ন দেখায়। মনকে করে তোলে সতেজ। কবিতার মাধ্যমে খুব সহজে মানুষের মনে আদর্শের বীজ বুনে দেয়া যায়।
গত শতাব্দী থেকে বলা যায় দুনিয়া জুড়ে মানুষের মধ্যে আত্মোপলব্ধি ও আত্মানুসন্ধানের ঢেউ জেগে উঠেছে। মানুষ খুঁজতে শুরু করেছে আপন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আদর্শিক ঠিকানা। নিজের যা আছে তাই নিয়ে সে জেগে উঠতে চাই। বেঁচে থাকতে চাই আপন ঐতিহ্য নিয়ে। আমরা জানি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আদর্শিক রাস্তা ধরেই এগিয়ে চলে মানব সভ্যতা। আর সে কারণেই আজ মুসলিম জাতিও সামনে এগিয়ে যেতে চায় তার স্বর্ণখচিত দ্যুতিময় অতীত ঐতিহ্যের পথ ধরে। মুসলমানদের আছে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ। আছে দেড় হাজার বছরের গৌরবময় সোনালি ইতিহাস। এরই ধারাবাহিকতায় যেসব মনীষী আদর্শিক সাহিত্যের ক্ষেত্রে স্বাক্ষর রেখে গেছেন কবি গোলাম মোহাম্মদ তাদের অনেকের মধ্যে একজন। আমাদের পূর্বসূরি কবি গোলাম মোস্তফা, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কবি শাহাদাৎ হোসেন, কবি ফররুখ আহমদ প্রমুখ হচ্ছেন সেই আদর্শের একেকজন সিপাহসালার।
আশির দশকের গোড়ার দিকে বাংলা কবিতাকে নাস্তিক্যবাদ ও আদর্শহীনতার কবল থেকে মুক্ত করার একটা প্রয়াস শুরু হয়েছিল। এ প্রচেষ্টার অনেকখানিই সফল হয়েছে নব্বই দশকে এসে। একঝাঁক বিশ্বাসী কবি এই প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, কবি মতিউর রহমান মল্লিক, কবি সোলায়মান আহসান, কবি আসাদ বিন হাফিজ, কবি মুকুল চৌধুরী, কবি হাসান আলীম, কবি মোশাররফ হোসেন খান, কবি গোলাম মোহাম্মদ, কবি গাজী এনামুল হক প্রমুখ। এরা বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে একটা ভিন্ন ধারা সৃষ্টি করতে অনেকটাই সফল হয়েছেন। আশির দশক থেকে শুরু হওয়া এই ধারা আজ অবধি সামনে এগিয়ে যাচ্ছে এটা দৃঢ়তার সাথে বলা যায়।
আদর্শবাদী কবিদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন কবি গোলাম মোহাম্মদ। তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন আশির দশক থেকেই। কিন্তু তার প্রায় সব কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে নব্বই দশকে এসে, কোন কোনটা তারও পরে। নব্বই দশকের শেষে কবি গোলাম মোহাম্মদের সাতটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑঅদৃশ্যের চিল (১৯৯৭), ফিরে চলা এক নদী (১৯৯৮), হিজল বনের পাখি (১৯৯৯), ঘাসফুল বেদনা (২০০০) হে সুসূর হে নৈকট্য (২০০২), এছাড়া ছড়াগ্রন্থ ছড়ায় ছড়ায় সুরের মিনার (২০০১) এবং নানুর বাড়ী (২০০২)। কবির প্রকাশিত প্রতিটি গ্রন্থই নন্দিত এবং ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে, যা সচরাচর হয় না।
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও ইসলামী সাহিত্যের দিকনির্দেশক আবদুল মান্নান তালিব, বিদগ্ধ আলোচক নজরুল গবেষক শাহাবুদ্দীন আহমদ, বর্তমান বাংলাসাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম কবি আল মাহমুদ, বাংলাসাহিত্যের অন্যতম প্রধান সাহিত্য সমালোচক কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ প্রমুখ কবি, লেখক ও সাহিত্য সমালোচক গোলাম মোহাম্মদকে যখন কবি হিসেবে গ্রাহ্যের মধ্যে নিয়ে আসেন এবং বিশেষভাবে তার কবিতাকে উচ্চকিত করেন তখন সাহিত্যাঙ্গনের অনেকেই এই কবিকে সমীহ না করে পারেন না। এ দিক দিয়ে কবি গোলাম মোহাম্মদ সৌভাগ্যবান এবং সার্থক।
আল্লামা আবদুল মান্নান তালিব বলেন, ‘ইসলামকে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শ ও জীবনব্যবস্থা হিসেবে তিনি গ্রহণ করেছিলেন। নিজের জীবন ও সাহিত্য কর্মকে এজন্য উৎসর্গিত করেছিলেন। এ ব্যাপারে তার সমগ্র কাব্যকর্মে কোনো জড়তা অস্পষ্টতা নেই। আধুনিক ও উত্তর-আধুনিক বিশ্বে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের তিনি ছিলেন একজন বলিষ্ঠ কবিকণ্ঠ।’ (ভূমিকা, কবি গোলাম মোহাম্মদ রচনাসমগ্র)
আবদুল মান্নান সৈয়দ বলেন, ‘কবিতা লিখতেন গোলাম মোহাম্মদ (১৯৫৯-২০০২), গান লিখতেন, ছবি আঁকতেন। তাঁর ছোট প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছিলেন শিল্পকোণ। মানুষটি ছিলেন যেন একটি বিজনতার অধিবাসী, স্মিতহাস্যময়, স্বল্পভাষী। ছন্দোবদ্ধ পদ লেখেন যাঁরা, তারা সবসময় পদ্যে পড়ে থাকে, কবিতায় উত্তীর্ণ হয় না। গোলাম মোহাম্মদের কবিতায় পেতাম কবিতারই আস্বাদ। আমার স্বভাব হচ্ছে, ভালো-লাগাটুকু অনেক সময় লিখে, অন্তত মুখে, জানানো। গোলাম মোহাম্মদকে একাধিকবার আমি জানিয়েছি, তাঁর কবিতা আমার ভালো লাগছে।’ (হিজল বনের পাখি, কবি গোলাম মোহাম্মদ স্মারক, পৃষ্ঠা ৭)
এরপর তার সমসাময়িক প্রায় সকলেই কবিকে নিয়ে লিখেছেন। তরুণ প্রজন্মের প্রায় সব কবি, লেখক, সাহিত্যিক, সংগঠক তাকে পাঠ করেন, তাকে নিয়ে ভাবেন। তাকে নিয়ে লিখেছেন অনেকেই। এটা তার অনেক বড় পাওয়া। তার গানের ভক্ত শিশু, ছেলে, বুড়ো, যুবা সকলেই।
‘সেই সংগ্রামী মানুষের সারিতে
আমাকেই রাখিও রহমান
যারা কোরআনের আহ্বানে নির্ভীক
নির্ভয়ে সব করে দান।’
(কবি গোলাম মোহাম্মদ রচনাসমগ্র, পৃষ্ঠা ২১৩)
‘কাশেমের মায়ের কোল হয়নি খালি
খালি হলো কোটি কোটি মায়েদের কোল,
কোটি কোটি বুকে জ্বলে ব্যথার আগুন
শাহাদাত ভাঙছে সকল আগল।’
(ঐ, পৃষ্ঠা ২১২)
‘হলদে ডানার সেই পাখিটি
এখন ডালে ডাকে না
মনের কোণে রঙিন ছবি
এখন সে আর আঁকে না।
এখন কেন হচ্ছে মানুষ খুন
দুঃখের আগুন জ্বলছে অনেক গুণ…।’
(ঐ, পৃষ্ঠা ২১৪)
‘হিজল বনে পালিয়ে গেছে পাখি
যতই তারে করুণ কেঁদে ডাকি
দেয় না সাড়া নীরব গহিন বন
বাতাসে তার ব্যথার গুঞ্জরণ।’
(ঐ, পৃষ্ঠা ২১৫)
কবি গোলাম মোহাম্মদ এ ধরনের অজস্র গানের জনক। আসলে গানের মাধ্যমেই তার পরিচিতিটা সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হিজল বনে পালিয়ে গেছে পাখি- এই পঙ্ক্তি উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথেই মনের মাঝে ভেসে উঠে একটি নাম একটি ছবি, তা হলো কবি গোলাম মোহাম্মদ। ‘পাঞ্জেরি’ শব্দটি শুনলেই যেমন মনের মাঝে ভেসে ওঠে কবি ফররুখ আহমদের কথা। ‘বিদ্রোহী’ শব্দটি শুনলেই ভাবতে থাকি নজরুলের কথা। সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে- শুনলেই মন ছুটে যায় সাগর দাড়িতে- কবি মাইকেল মধুসূদনকে মনে পড়ে যায়। ইয়া নবী সালাম আলাইকা, ইয়া রাসূল সালাম আলাইকা, ইয়া হাবিব সালাম আলাইকা- শুনলেই চিন্তা করি কবি গোলাম মোস্তফার কথা। এই খানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে শুনলেই পল্লীকবি জসিম উদ্দীন সামনে এসে হাজির হয়। এমনিভাবে কে ঐ শুনালো মোরে আজানের ধ্বনি- শোনামাত্রই কায়কোবাদকে আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে হয় না। আরো অনেক কবিই আমাদের অন্তরকে নাড়া দেয় গভীরভাবে। প্রত্যেক কবির একটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে যা তাকে আলাদা করে চিনতে আমাদের সাহায্য করে। তেমনি কবি গোলাম মোহাম্মদের অনেক গান কবিতা মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে, সেসব চরণগুলো শুনলেই মনের পর্দায় ভেসে ওঠে কবি গোলাম মোহাম্মদের নাম। লক্ষ বছর ঝরনায় ডুবে রস পায় নাকো নুড়ি-(নজরুল) তেমনি লক্ষ লক্ষ পৃষ্ঠা লিখেও অনেকেই পাননি কবি খ্যাতি। কবি গোলাম মোহাম্মদ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয়ার মতো অসংখ্য গানের স্রষ্টা কবি গোলাম মোহাম্মদ। সুর যত সহজে মানুষের মনে ঝংকার তোলে সাহিত্যের অন্য কোন মাধ্যমে অত সহজে মানুষের মনে স্থান করে নেয়া যায় না। এদিক দিয়ে গোলাম মোহাম্মদ এগিয়ে গেছেন নিঃসন্দেহে। আমার মনে হয় গান না লিখলে গোলাম মোহাম্মদ কখনো এতটা জনপ্রিয় ও কালজয়ী হতে পারতেন না।
কবি গোলাম মোহাম্মদ একটা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন- যেখানে থাকবে না ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বঞ্চনা, লাঞ্ছনা। স্বপ্ন দেখতেন মানবতার জয়গানের, স্বপ্ন দেখতেন কালজয়ী এক শ্রেষ্ঠ সভ্যতার। যে সভ্যতা ধারণ করেছিলেন সর্বযুগের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা হযরত মুহাম্মদ সা:। সুন্দর সেই জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি লিখেছেন অসংখ্য গান কবিতা। যা অনেক দিক থেকেই সাহিত্য আকাশে শুকতারার মতো জ্বলজ্বল করছে। যা প্রতিনিয়ত অনেক আদর্শবাদী মানুষের মনে অনুরণিত হয়, হচ্ছে।
গানের মতো তার কবিতাও পাঠকমহলে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। যা শিল্পবিচারে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে মনে করেন সুপণ্ডিত সাহিত্য সমালোচকরা। তার কবিতার কিছু উদাহরণ পেশ করা হলো-
‘পাখি
পাখিরে তোর ঈমান বড়ই পাকা
আহা!
তোর গানে যে মনের বিনয় মাখা।
(পাখিরে তোর, হিজল বনের পাখি)
‘হাতটারে সাফ কর সাফ কর দিল
মুছে যাবে যন্ত্রণা সব মুশকিল
তাল তাল আন্ধার পাপ কর দূর
পুষ্পিত দিন পাবে ঘ্রাণ সুমধুর।’
(হাসতো নিখিল, অদৃশ্যের চিল)
‘তৃতীয় বিশ্বের যুবক মাত্রই বিষণ্ণতার রোগী
তার সামনে অন্ধকার, মহানগরীর ডাস্টবিনের মতো
পচা রাজনীতির আস্ফালন!’
(ফসলহীন সময়ের কথা, ফিরে চলা এক নদী)
‘সেও তো ধ্বনির কাজ
তোমার প্রভুর নামে পড়
অনন্ত ভাবের ফুল ফুটে হলো
ভাষার বাগান।’
(হরফের সাঁকো, ঘাস ফুল বেদনা)
শব্দে-ছন্দে, ভাব-কল্পনায়, আদর্শ-উদ্দীপনায়, আশা-ভালোবাসায় গোলাম মোহাম্মদের অনেক কবিতা অতুলনীয়, অসাধারণ ও অনন্য। পাঠক পুলকিত, শিহরিত ও চমকিত হয় তা পাঠ করে। তার কবিতা পাঠক সহজেই হৃদয়ে ধারণ করতে পারে। তার কবিতা মনকে আন্দোলিত করে, উদ্দীপিত করে, বিমোহিত করে। তার কবিতায় ছন্দের অপূর্ব দোলা আছে। তার কবিতায় কোথাও ছন্দের ভুল পরিলক্ষিত হয় না। পাঠক মাত্রেই মোহনীয় সেই ছন্দ দোলায় দুলতে থাকে এবং একজন আদর্শবান, বড় ও ভালো মানুষ হবার স্বপ্ন জাগে মনে। দায়িত্বশীল, ন্যায়নিষ্ঠ, কর্তব্যপরায়ণ মানুষ গড়তে সহায়তা করে তার লেখা। স্বপ্ন ভরা উদ্দীপনাময় তার কবিতা নতুন প্রজন্মের পাথেয় হতে পারে।
আমি মনে করি গোলাম মোহাম্মদ একটি কালজয়ী প্রতিভা। বিশেষ করে গানের মাধ্যমে তিনি সুদীর্ঘকাল মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন। তার গান আবেদন ছড়াবে যুগ যুগ ধরে। তার সৃষ্টিসম্ভার প্রকাশিত হলে পাঠক, সাহিত্যালোচক তাকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পারবে। তিনি শুধু একজন কবি ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন উঁচুমাপের চিত্রশিল্পী। ছিলেন সংগঠক। সর্বোপরি ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন একজন বড় মনের মানুষ, বড় মাপের মানুষ। কবি, শিল্পী, সংগঠক হিসেবে তিনি যতটা পরিচিতি লাভ করেছেন, তার থেকে অধিক পরিচিতি পেয়েছেন গীতিকার হিসেবে। তার গান কালোত্তীর্ণ হতে পেরেছে বলে আমাদের বিশ্বাস। তার আজন্ম স্বপ্ন ছিল এদেশে আল্লাহ প্রদত্ত জীবনবিধান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবতার মুক্তি। তিনি ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক কবি। তিনি ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ মানবতাবাদী কবি।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক

Wednesday, April 18, 2018

বাংলাদেশে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ আকর্ষণীয় স্থান কোথায়?



নীলগিরি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্র। এ পর্যটন কেন্দ্রের উচ্চতা প্রায় ৩ হাজার ফুট। এটি বান্দরবান জেলার থানছি উপজেলায় অবস্থিত।
বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে এই পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান। এ পর্বতের পাশেই রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত আদিবাসী সম্প্রদায় ম্রো-পল্লী। যাদের বিচিত্র সংস্কৃতি দেখার মত।
বর্ষা মৌসুমে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র থেকে মেঘ ছোয়ার দূর্লভ সুযোগ রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নীলগিরি থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। বান্দরবানের সবচেয়ে সুন্দর ও আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র এটি। এটি সেনা তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এর পাশেই রয়েছে একটি সেনা ক্যাম্প। নিরিবিলিতে স্বপরিবারে কয়েক দিন কাটাতে এটি একটি আর্দশ জায়গা।
যাতায়াত
পর্যটকদের নীলগিরি যেতে হলে বান্দরবান জেলা সদরের রুমা জীপষ্টেশন থেকে থানছিগামী জীপ অথবা বাসে করে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে যেতে হবে। বান্দরবনা জীপ ষ্টেশন থেকে জীপ, ল্যান্ড রোভার, ল্যান্ড ক্রুজারসহ অন্যান্য হালকা গাড়ী ভাড়ায় পাওয়া যায়। নীলগিরি যাওয়ার পথে সেনা চেকপোষ্টে পর্যটকদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। বান্দরবান জেলা সদর থেকে সাধারণত বিকেল ৫ টার পর নীলগিরির উদ্দেশে কোন গাড়ী যেতে দেয়া হয় না।
ভাড়া
আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্ধারিত ৫সিট বিশিষ্ট ছোট জীপ রয়েছে। এর ভাড়া ২৩০০ টাকা। এছাড়া ৮সিট বিশিষ্ট বড় জীপের ভাড়া ২৮০০ টাকা।
নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র বান্দরবান জেলা সদর থেকে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যায়। এ ছাড়া নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র রাত্রি যাপনের জন্য বান্দরবান সদর সেনা রিজিয়নে বুকিং দেয়া যায়। তাছাড়া নীলগিরি পর্যটনে গিয়ে সরাসরি বুকিং করা যায়। বান্দরবান জেলা সদর থেকে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় অধিকাংশ পর্যটক দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসেন।
কটেজ ভাড়ানীলগিরিতে রয়েছে বেশ কিছু কটেজ। যেমন- 'গিরি মারমেট' (ভাড়া-৭৫০০ টাকা, ধারণক্ষমতা-৮/১০ জন); 'মেঘদূত' (ভাড়া-৬৫০০ টাকা, ধারণক্ষমতা-৮/১০ জন); 'নীলাঙ্গনা' (ভাড়া-৫৫০০ টাকা, ধারণক্ষমতা- ৪/৬ জন)। এছাড়া কাপলরা ২৭৫০ টাকায় ১ রুম ভাড়া পাবেন।

See this video:



Please browse this link: http://nilgiriresort.com


Popular Posts