Thursday, August 17, 2017

ইকবাল ছিলেন আমার আধ্যাত্মিক সহায়' - সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী (রহঃ)


লিখেছেনঃ সুজন হাফিজ (বাশার ইবনে হাদীস)
[পাকিস্তানের একটি খ্যতনামা বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাহিত্যিক মাসিক পত্রিকা “সাইয়ারা” ১৯৬৩ সালের মে মাসে ইকবাল সংখ্যা প্রকাশ করে। জনাব গোলাম হোসাইন আজহার মাওলানা মওদূদী (রহঃ) সাহেবের আলোচ্য সাক্ষাতকারটি উক্ত বিশেষ সংখ্যার জন্য গ্রহণ করেন। এ সাক্ষাতকার কয়েকবার দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।]
“ইকবাল আমার আধ্যাত্নিক সহায় ছিলেন…………”

কয়েক বছর আগে মাসিক তরজমানুল কুরআনের পাতা উল্টাতে গিয়ে উপরোক্ত বাক্যটি আমার চোখে পড়ে। আমার মনে হল, বাক্যটিতে প্রবল আবেগ অনুভূতির ছোঁয়া রয়েছে। এ বাক্যটির মূলে কোন্‌ মনস্তাত্ত্বিক রহস্য রয়েছে, জানা দরকার ছিল। বহুবার হয়েছে মাওলানার সাথে এ বিষয়ে কথা বলি। কিন্তু প্রতিবারই মাওলানার ব্যস্ততার কথা মনে পরতেই সে ইচ্ছা চাপা পড়ে যায়। এবার যখন সাইয়ারার ইকবাল সংখ্যার প্রয়োজন পড়েছে, আমি সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বহু দিনের অপূর্ণ ইচ্ছাটা মাওলানাকে জানালাম। মাওলানা আমাকে কোন একদিন বিকেলে তার কাছে যেতে বললেন। আমি ১৪ ই এপ্রিল বিকেলে উপস্থিত হলাম। নিম্নে মাওলানার সাথে আমার কথোপকথন এর সারসংক্ষেপ তুলে ধরছি-

★মাওলানা! আপনি একবার লিখেছিলেন যে, ইকবাল আপনার আধ্যাত্মিক সহায় ছিলেন। এর পটভূমিকা কি?
ডক্টর ইকবাল আমাকে পাঠান কোট যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। তিনি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, যে তুমি যদি এখানে এসে বস, তাহলে আমিও বছরে ৬ মাস এখানে এসে কাটাবো। এ আহ্বানে এমন একটা আকর্ষণ ছিল যে, আমি তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত প্রস্তাব গ্রহণ করে নেই এবং হায়দারাবাদ থেকে পাঠানকোট চলে আসি। কিন্তু এ ঘটনার বেদনাদায়ক দিক এই যে, আমি মার্চ মাসে পাঠানকোটে স্থানান্তরিত হলাম। আর এপ্রিলে ডক্টর সাহেবের ইন্তিকাল হয়ে গেল। সে সময় এ ঘটনায় আমি নিদারুণভাবে মর্মাহত হই। তখনকার সেই অনুভূতি আমাকে এই বাক্যটি লিখতে উদ্বুদ্ধ করে।
★মাওলানা! আপনার মধ্যে ও মরহুম আল্লামা ইকবাল এর মধ্যে এ ব্যপারে যে আলাপ আলোচনা বা চিঠির আদান-প্রদান হয়, তা বিশদভাবে জানালে ভালো হয়।
সেই চিঠিপত্রগুলো তো আমার কাছে নেই। তবে অন্যান্য বিবরণ দিচ্ছি। মাওলানা স্বীয় স্বভাবসুলভ ধীর আওয়াজে বলতে শুরু করলেন-
চৌধুরী নিয়াজ আলী সাহেব ইসলামের সেবার উদ্দেশ্যে একটি প্রতিষ্ঠান কায়েম করার লক্ষ্যে জমি ওয়াকফ করেন এবং দালান কোঠা বানাতে আরম্ভ করেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কি ধরনের হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে তার কোন সুনির্দিষ্ট ধারণা ছিল না, তিনি আমার কাছে পরামর্শ চান যে, কি ধরনের প্রতিষ্ঠান কায়েম করা উচিত। আমি একটা পরিকল্পনা লিখে দেই। এটি পরবর্তীকালে আমার দারুল ইসলামের পরিকল্পনাটিরই অনুরূপ ছিল।
ইতিমধ্যে তিনি আল্লামা ইকবালের কাছেও পরামর্শ চেয়ে চিঠি লিখেন। এ চিঠি লেখালেখির পুরো বৃত্তান্ত আমার জানা নেই। তবে চৌধুরী নিয়ায আলী সাহেবের কাছ থেকেই আমি জেনেছি যে, আমার পরিকল্পনাটি তিনি আল্লামা ইকবাল মরহুমকে দেখিয়েছিলেন এবং আল্লামা ইকবাল তা পছন্দ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, এ ধরনের কাজই বর্তমান সময়ের দাবী। এ সংক্রান্ত যাবতীয় চিঠিপত্র চৌধুরী নিয়াজ আলী সাহেবের নিকট সংরক্ষিত হয়েছে এবং তার কাছ থেকে তা সংগ্রহও করা যেতে পারে। বরঞ্চ আমার যতদূর মনে পড়ে, তিনি একবার তা প্রকাশও করেছেন।
সম্ভবতঃ ১৯৩৬ সালেরই কথা। আল্লামা ইকবাল এ বছর সর্বপ্রথম নজীর নিয়াজী অথবা মিয়া শফী সাহেবকে দিয়ে আমাকে হায়দারাবাদ ত্যাগ করে পাঞ্জাবে স্থানান্তরিত হবার অনুরোধ করে চিঠি লেখান। কিন্তু তখন আমি সেই অনুরোধ রক্ষায় অক্ষমতা প্রকাশ করি। কেননা তখন আমি হায়দ্রাবাদেই থাকার চিন্তা-ভাবনা করেছিলাম। আর যে ধরনের প্রতিষ্ঠান কায়েম করার প্রস্তাব তিনি দিয়েছিলেন, সে ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান কায়েম করার লক্ষ্যে হায়দারাবাদে আমি জমিও খরিদ করেছিলাম।
★আল্লামা ইকবাল আপনাকে পাঞ্জাব চলে আসার জন্য অন্য কোনো বিশেষ কারণও লিখেছিলেন নাকি?
শুধু এ বাসনা ব্যক্ত করেছিলেন যে, আমি যেন পাঞ্জাবে চলে আসি। এর চেয়ে কিছু লেখেননি। তখন তো আমি বুঝতে পারিনি এর পেছনে কি কল্যাণ চিন্তা সক্রিয় ছিল। তবে ১৯৩৭ সালের মাঝামাঝি নাগাদ আমি স্বতস্ফুর্তভাবে অনুভব করতে থাকি যে, ভারতের দক্ষিণ অঞ্চল ত্যাগ করে আমার উত্তর ভারতে চলে যাওয়া উচিত। সেই সময় চৌধুরী নিয়াজ আলী সাহেব আমাকে পাঞ্জাব সফর করার জন্য পীড়াপীড়ি করেন এবং একটি ইসলামী প্রতিষ্ঠান কায়েম করার জন্য যে জায়গাটি তিনি ওয়াকফ করেছিলেন, অন্তত সেই জায়গাটি দেখার জন্য আমাকে জোর অনুরোধ করেন। আমি নিজেও ভাবছিলাম, উত্তর ভারত সফর করে এমন একটি জায়গা আমার বাছাই করা উচিত যেখানে আমার আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুসারে কাজ করার সুযোগ পাব। এ চিন্তা- ভাবনার ফলেই ১৯৩৭ সালে সম্ভবতঃ আগস্ট মাসের শেষের সিকে পাঞ্জাব সফর করি এবং জলন্ধর ও লাহোর হয়ে পাঠানকোট উপনীত হই। এ সফরে মরহুম আল্লামা ইকবালের সাথে আমার বিস্তারিত আলোচনা হয়। তিনি আমাকে অনুরোধ করেন যে, চৌধুরী নিয়াজ আলী সাহেব যে জায়গা ওয়াকফ করেছেন, সেটাই যেন আমি বেছে নেই এবং চৌধুরী সাহেবের কাছে যে পরিকল্পনা আমি পাঠিয়েছিলাম, সে অনুসারে একটি প্রতিষ্ঠান যেন তৈরি করি।
★উত্তর ভারতকে কেন্দ্র করে কাজ শুরু করার ইচ্ছা আপনার কেন হল?
আমি উপলব্ধি করলাম যে, দক্ষিণ ভারতে কাজ করার সুযোগ দিন দিন কমে যাচ্ছে। আর মুসলমানদের ভবিষ্যতের ফয়সালা অনেকাংশে উত্তর ভারতেই হবে।
★আপনার ও আল্লামা ইকবালের মধ্যে যে বিস্তারিত আলোচনা হয় তার কোন কোন বিষয়ে হয়েছিল?
সে সময় যে কথাবার্তা হয়েছিল, তার বিষয়বস্তু ছিল এটাই যে, বর্তমানে মুসলমানদের জন্য কি ধরনের গঠন মূলক কাজের প্রয়োজন। এ ব্যপারে আমার ও মহুম আল্লামা ইকবালের চিন্তাধারা প্রায় একই রকম ছিল।এ কাজের জন্য আমি যে রূপরেখা দিয়াছিলাম, সেটাই তার মনোপুত ছিল। ঐ রূপরেখাই কিভাবে বাস্তবায়িত করা যায়, সেটাই আমার চিন্তা-ভাবনা করছিলাম। তবে বিস্তারিত আমার মনে নেই।
★ভারতে একটা ইসলামী আন্দোলন চালানো কি তখন আপনাদের লক্ষ্য ছিল?
সে সময় আন্দোলন আমাদের লক্ষ্য ছিল না। সে সময় আমাদের লক্ষ্য ছিল দু’টো। প্রথমতঃ যে তাত্ত্বিক ও জ্ঞানগত শূন্যতার কারণে বর্তমান যুগের মানুষের চোখে ইসলামী জীবনব্যবস্থা অসম্পূর্ণ ও অকার্যোপযোগী বলে মনে হয়, সেই শূন্যতা পূরণ করা। দ্বিতীয়তঃ এমন কিছু লোক তৈরি করা, যারা মুসলমানদের তাত্ত্বিক ও বাস্তব ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে। একটা নির্ভেজাল ও সর্বাত্মক ইসলামী আন্দোলনের ধারণা তখন আমাদের সামনে ছিল না।
★আল্লামা ইকবাল তখন তাত্ত্বিক ক্ষেত্রে কোন কোন কাজের উপর অধিক গুরুত্ব দিতেন?
বেশি বিস্তারিত ভাবে মনে নেই। ইসলামী আইন ও দর্শনের পুনঃ সংকলন তার কাম্য ছিল। সে সময় এটিই ছিল আলোচ্য বিষয়।
★মাওলানা! শুনেছি, আল্লামা ইকবাল তরজুমানুল কোরআন বিশেষভাবে অধ্যায়ন করতেন?
এটা আমি পরে নাযীর নিয়াজী সাহেব ও মিয়া শফী সাহেবের কাছ থেকে জেনেছি যে, আল্লামা মরহুম অত্যন্ত মনোযোগের সাথে তরজুমানুল কোরআন' পড়তেন। তাছাড়া আল জিহাদ ফিল ইসলাম পরিয়ে শুনেছিলেন এবং খুবই পছন্দ করেছিলেন।
★মাওলানা! ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ইকবালের শ্রেষ্ঠত্বের মূল কারণটি কি?
সেই সময় আসলে এমন একজন মানুষের প্রয়োজন ছিল; যিনি পাশ্চাত্য শিক্ষায় গর্বিত সাধারণ লোকদের চেয়েও বেশি শিক্ষিত এবং পাশ্চাত্য বিদ্যায় তাদের চেয়েও দক্ষ ও পারদর্শী হবেন, আর তারপরও এত জোরদার ভাষায় ইসলামী জীবন পদ্ধতিকে সমর্থন করবেন, যে পাশ্চাত্য পূজারীরা তার সামনে কথা বলারই সাহস পাবে না। সেই দুর্লভ ব্যক্তিত্ব ছিল ইকবালের। সেকালে পাশ্চাত্য জ্ঞান- বিজ্ঞানের প্রবল প্রতাপ ছিল এবং এরূপ সাধারণ ধারণা প্রচলিত ছিল যে, পাশ্চাত্য সভ্যতার সাথে আপোষ (compromise) করা এবং পাশ্চাত্য মতবাদগুলোর সাথে ইসলামী দর্শনের সমন্বয় সাধন করা অপরিহার্য। আল্লামা ইকবাল এ ধারণা খন্ডন করেছিলেন। এটিই ইকবালের আসল অবদান। এ দিক থেকে দেখতে গেলে আল্লামা ইকবালের ব্যক্তিত্ব ইসলামী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সহায় ছিল। সামগ্রিকভাবে তিনি যে অবদান রাখেন, তা অত্যন্তঃ গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। -( সাইয়ারা, মে, ১৯৬৩ এর সৌজন্যে)

Wednesday, August 16, 2017

রাছুলুল্লাহ (সাঃ)-এর বহু বিবাহের সমালোচনার জবাবে প্রখ্যাত বৃটিশ নারী অধিকার কর্মী

অনেক অবিবেচক নাস্তিক আজকাল বুঝে কিংবা না বুঝেই রাসূল স. এর বিবাহ নিয়ে কটাক্ষ বা অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে দেখা যায়। যা সত্যিই দু:খজনক। তাদের খুবই সুন্দর জবাব দিয়েছেন Annie Besant . . .

প্রখ্যাত বৃটিশ নারী অধিকার কর্মী, সমাজতত্ত্ববিদ ও লেখিকা Annie Besant বলেন,
"কিন্তু তুমি কি আমাকে বুঝাতে চাইছ ভরা যৌবনের উচ্ছাসে পরিপূর্ণ সেই টগবগে যুবক সম্পর্কে, যে যুবক ২৪ বছর বয়সে তার চেয়ে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন এবং ২৬ বছর যাবৎ তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য ছিলেন, তিনি ৫০ বছর বয়সের পড়তি যৌবনে এসে বিয়ে করেছিলেন কেবল যৌনাকাংখা ও যৌন তাড়না মেটাতে? না, মানুষের জীবনকে এভাবে বিচার করতে হয় না। অধিকন্তু, যদি তুমি ঐসব মহিলাদের দিকে লক্ষ্য কর যাদেরকে তিনি বিয়ে করেছিলেন, তাদের প্রত্যেকের সাথেই হয় মৈত্রীচুক্তির ব্যাপার ছিল, অথবা তাঁর ছাহাবীদের জন্য কিছু প্রাপ্তিযোগের বিষয় ছিল কিংবা মহিলাটির জন্য আশ্রয় ও নিরাপত্তার খুব প্রয়োজন ছিল।"
"Annie Besant ( http://en.wikipedia.org/wiki/Annie_Besant), The Life and Teachings of Muhammad (1932), p. 4)

ইউরোপীয় বিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে নামাজের অসাধারণ উপকারিতা



সিজদাকে মানবদেহের ক্ষতিকর ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক তরঙ্গ নিষ্ক্রিয় করার উৎকৃ্ষ্ট উপায় বর্ণনা করেছেন এক ইউরোপীয় বিজ্ঞানী।

তিনি বলেছেন ,'মানুষের শরীর প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক তরঙ্গ গ্রহণ করে।আপনার প্রাত্যাহিক ব্যবহৃত এমন সব যন্ত্র থেকেই এই তরঙ্গগুলো আপনাকে গ্রহণ করতে হচ্ছে।যেমন,গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ,ক্যাল্কুলেটর,মোবাইল,রিমোট কন্ট্রোল,টিভি ইত্যাদি।রাতে যে আলো পাচ্ছেন ,সেই বাতি থেকেও এই তরঙ্গগুলো আমাদের দেহে প্রবেশ করছে।অথচ এই গুলো এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ আমাদের নেই।একভাবে বলাযায়,এই বৈ্দ্যুতিক তরঙ্গ গুলো হজম করার উল্লেখযোগ্য সোর্স আমরা।এর ফলে কী হচ্ছে? মাথাব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছি,অস্বস্তি অনুভব করছি,আলস্য ঘিরে ধরছে আমাদের এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ব্যথার সৃষ্টি করছে। এমনকি শেষ পর্যন্ত ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি দ্বারা আমরা আক্রান্ত হচ্ছি।
এর সমাধান কী?ইউরোপের ওই অমুসলিম বিজ্ঞানী এ নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করে দেহের ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক চার্জ অপসারণের যে সর্বোৎকৃ্ষ্ট উপায় বের করেছেন তা হলো,যদি কপালকে একাধিকবার মাটিতে রাখা হয়,এতে ক্ষতিকর পজিটিভ ইলেকট্রো-ম্যাগনেটক চার্জ অপসারিত হয়।বজ্রপাতের মতো পজিটিভ ইলেকট্রনিকের সিগন্যালগুলো যেমন গ্রাউন্ডের মাধ্যমেই নিষ্ক্রিয় হয়,বিষয়টি ঠিক সে রকম। তিনি সবাইকে কপালকে মাটির সাথে লাগিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ইলেক্ট্র-ম্যাগনেটিক সিগন্যাল গুলো নিষ্ক্রিইয় করার জন্য।কপালকে বালুর সাথে লাগিয়ে রাখার জন্য উৎকৃষ্ট বলে গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলের দিকেই মাথা রেখে কপালকে গ্রাউন্ডের সাথে ঠেকিয়ে রাখাকে এ লক্ষ্য অর্জনের উপায় হিসেবে বলেছেন।তিনি জানান, এতে ক্ষতিকর চার্জ গুলো অপসারণ সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে ইন্টারনেটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে,এখানে আশ্চর্য জনকভাবে সত্য যে,মক্কাই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল এবং পবিত্র কাবাই পৃথিবীর একেবারে কেন্দ্রবিন্দু। এতে যে বিষয়টি পরিষ্কার তা হলো,দেহ থেকে ক্ষতিকর ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক সিগন্যালগুলো অপসারণের সর্বোত্তম উপায় হলো সিজদা করা, যা মুসলমানরা পাঁচ বেলা নামাযে করে থাকে।এমন একটি সৃষ্টশীল উপায়ে যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, সেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের আদর্শ পথও এটি।
যে মন্তব্যের মাধ্যমে ওই নিবন্ধের সমাপ্তি ঘতে,তা হলো, মানুষের বিশ্বাস করা ও জানা উচিত,তারা স্রষ্ঠার নির্দেশ পালন করতে গিয়ে যা করবে, তা নেহাত নিজের প্রয়োজনেই করবে।



নামাযের আগে কিছুক্ষণ নামাযের মোরাকাবা [নামায সম্পর্কে চিন্তা] করা উচিত। প্রতীক্ষা ছাড়া যে নামায হয় তা হয় প্রাণহীন, হালকা নামায। সুতরাং নামাযের আগে নামায সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত।

-----তবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মৌলানা ইলিয়াস [রহ]

Tuesday, August 15, 2017

মদিনা ইউনিভার্সিটি ও মাওলানা মওদূদী (রঃ)

লিখেছেনঃ জীবন রহমান হৃদয়

সৌদি বাদশাহ এর আমন্ত্রণে ১৯৬১ সালের ডিসেম্বর মাসে রিয়াদে পৌঁছেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ)। আলোচনার এক পর্যায়ে বাদশাহ আশাবাদ ব্যক্ত করেন মদিনায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। আর এ জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দিতে অনুরোধ করেন মাওলানা মওদূদী(রঃ) কে।

১৯৬১ সালের ২১ ডিসেম্বর একটি পরিকল্পনা খসড়া রচনা করেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ)। সাথে চৌধুরী গোলাম মুহাম্মাদ ও খলিল আহমাদ হামিদী কে নিয়ে বাদশাহর প্রাসাদে গিয়ে তা পেশ করেন।


পরিকল্পনা খসড়ার(পরবর্তীতে এটাই সংবিধান) শুরুতে তিনি উল্লেখ করেন-
"এটি এমন এক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হবে,যেখান থেকে তৈরী আলেমরা সারা বিশ্বের সকল সমস্যার সমাধানে সক্ষম হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩ টি স্তরে ৯ বছরের শিক্ষা কার্যক্রম থাকবে। ১ম স্তরঃ ৪ বছরের।এখানে শিক্ষার্থীরা কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, ইসলামের ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান অধ্যয়ন করবে। ২য় স্তর ৩ বছরের। এখানে থাকবে ৫টি ফ্যাকাল্টি। ৩য় স্তর ২ বছরের। এই স্তরে কোন স্কলার পূর্বের দুই স্তরের যেকোনো বিষয়ে গবেষণা করতে পারবে।"

পরিকল্পনা খসড়াটি বাদশার এতটাই পছন্দ হয় যে সঙ্গে সঙ্গে খসড়া বাস্তবায়নে সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ) এর সাথে শায়েখ মোহাম্মদ আকবর, শায়েখ আব্দুল লতিফ, শায়েখ মোহাম্মদ আলী আল্ হারাকান কে নির্দেশ দেন। শুরু হয়ে যায় পুরোদমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম।
১৯৬২ সালের জানুয়ারী মাসে মাওলানা দেশে ফিরে আসেন! কিন্তু মদিনা ইউনিভার্সিটির এক জরুরী প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকবার জন্য মাওলানা কে আবারও আমন্ত্রণ জানান সৌদি বাদশাহ। ফলে ১৯৬২ সালের মে মাসে আবারও মদিনা মনোয়ারায় উপস্থিত হন মুজাদ্দেদ সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ)।

স্থাপনের প্রথমে মদিনা ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত করা হয় শায়েখ মোহাম্মদ আলী আল্ হারাকান কে। পরবর্তীতে ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল পরিকল্পনাকারী ও সংবিধান প্রণয়নকারী সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ)। তিনি মৃত্যু অবধি উক্ত সম্মানিত পদে বহাল ছিলেন!
১৯৬২ সালের মে মাসেই প্রতিষ্ঠা হয় বিশ্বখ্যাত সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান 'রাবেতা আলমে আল ইসলামী'।
৩ নাম্বার ছবিতে সেই প্রতিষ্ঠা কমিটির দস্তখত সম্বলিত নথি। সবার মাঝে সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী রহমাতুল্লাহি আলাইহির দস্তখত।

Friday, July 21, 2017

মাওলানা মওদূদী (রহঃ) কি আলিম ছিলেন? কোন কোন ইসলামপন্থীর সমােলাচনার নায্য জবাব

লিখেছেনঃ সিরাজুল ইসলাম

মাওলানা মওদূদী (রহঃ) ও তার, চিন্তাধারা, তাঁকে যাঁরা চিনতেন এবং তাঁর সাথে কাজ করতেন তাঁরা জানতেন তিনি একজন ‘আলিম; এমনকি যাঁরা পরে তাঁর সংশ্রব থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন তাঁরাও তাঁর আলিম হওয়াকে অস্বীকার করতেন না। তাঁরা তাঁর সাথে অন্য বিষয়ে মতভেদ করতেন সেজন্য দূরে সরে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু লোক যারা নিজেরা মূলত আলিম নয়, তারাই তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটায় এবং বলে যে তিনি আলিম ছিলেন না।


ইসলামে আলিম হবার নিয়ম কী? আলিম হবার নিয়ম হচ্ছে আপনি একজন আলিমের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট বিষয় অধ্যয়ন করবেন। এরপর আপনার উস্তায যখন নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনি পারঙ্গম হয়েছেন বলে নিশ্চিত হবেন তখন তিনি আপনাকে ইজাযাহ [সনদ] দান করবেন। এভাবে আপনি ঐ বিষয়ে আলিম হবেন। ইসলামে আলিম হবার এটাই হচ্ছে ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতেই আলিম হয়েছেন আমাদের আগের দিনের উলামারা, আয়িম্মা আল-মুজতাহিদীন, মুহাদ্দিসীনগণ সবাই। এখনকার মাদ্রাসা বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি,এইচ-ডি নেয়াটা মূলত ঐ ইজাযাহ সিস্টেম থেকে আসা পথ। উস্তায সায়্যিদ আবুল আলা মওদূদী (রহঃ) মূলত সেই ট্র্যাডিশনাল ইসলামিক ইজাযাহ পদ্ধতিতে গড়ে উঠা আলিম। তিনি ইসলামের মৌলিক সবগুলো বিষয়ে তৎকালীন ভারতের প্রসিদ্ধ আলিমদের থেকে ইজাযাহ প্রাপ্ত। তাই তাঁকে যাঁরা চিনতেন তেমন বিরোধীরাও তাঁর আলিম হওয়া নিয়ে কথা বলত না। তাঁর পরিবারের কাছে তাঁর ইজাযাহগুলো এখনও সংরক্ষিত। মুশকিল হচ্ছে তাঁর জীবনীকাররা তাঁর ইজাযাহগুলো সম্পর্কে লিখেন নাই। এমনকি জামায়াতে ইসলামী থেকেও তাঁর যে সমস্ত জীবনী বের করা হয়েছে – যেমন আব্বাস আলী খানের লিখা মাস্টারপিস 'মাওলানা মওদূদী, একটি জীবন, একটি আন্দোলন, একটি ইতিহাস'– সেগুলোতেও এগুলোর উল্লেখ নাই। এর কারণ সম্ভবত উস্তায মওদূদীর (রহঃ)প্রচার বিমুখতা। যাই হোক আমি নিজে তাঁর সম্পর্কে পড়তে গিয়ে অল্প কয়েকটা বিষয়ে জানতে পারলাম। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ফকীহ এবং সালাফী আলিম ডঃ সায়্যিদ আব্দুল হালিম মুহাম্মদ হুসাইন [হাফিজাহুল্লাহ] এর লিখা 'নাযারাত ফী ফিকরি আবীল-আলা আল-মওদূদী' –ﻧﻈﺎﺭﺍﺕ ﻓﻲ ﻓﻜﺮ ﺃﺑﻲ ﺍﻷﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻮﺩﻭ কিতাবে মাওলানা মওদূদীর শিক্ষাগত যোগ্যতার যে বিবরণ তিনি দিয়েছেন তা থেকে আমি পাঠকদের জন্য উল্লেখ করছি-
১। আরবী ভাষা, নাহু, সরফ, আল-মা’ক্বুলাত ওয়াল-বালাগাহ ওয়াল মা’আনীঃ

এগুলোতে তিনি ইজাজাহ লাভ করেছেন দিল্লীর দারুল

উলুমে ভারতের প্রখ্যাত আলিম মাওলানা শায়খ আব্দুস-সালাম নিয়াজীর [রহিমাহুল্লাহ] কাছ থেকে।
২। হাদীস ও উলুম আল-হাদীসঃ

শায়খ ইশফাক্বুদ্দীন কান্দাহলাবীর [রহিমাহুল্লাহ] কাছ থেকে এ বিষয়ে ইজাযাহ লাভ করেন তিনি।

৩। ফিক্বহ, তাফসীর বায়দাওয়ী এবং আল-মাতূল ফী ‘ইলম আল-মা’আনী ওয়াল-বালাগাহঃ

এ বিষয়গুলোতে তিনি ইজাযাহ লাভ করেন শায়খ শরীফুল্লাহর [রহিমাহুল্লাহ] কাছ থেকে।

৪। ইংরেজী ভাষাঃ

মৌলভী মুহাম্মদ ফাদিল এর হাতে মাত্র চার মাসে তিনি ইংরেজী ভাষা শিক্ষায় বুৎপত্তি লাভ করেন।

ডঃ শায়খ আব্দুস-সালাম আযাদী নীচে মন্তব্যে উস্তায মওদূদীর (রহঃ) শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আরো লিখেছেনঃ

উস্তায নাদীমুল্লাহ হাসনাইন ও শায়খ নিয়ায ফাতেহ পুরির কাছ থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। মুহাম্মাদ ফাদিল এর কাছে শুধু ইংরেজি ভাষা না, ইতিহাস, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান ও বিভিন্ন ধর্মের তুলনামূলক আলোচনা পড়েছেন। তিনি মাওলানা ইশফাকুর রহমান কান্ধল্ভীর কাছ থেকে হাদীস ফিকহ ও আরবী সাহিত্য পাঠদানের ইজাযাহ নেন ১৯২৭ সালে এবং তিরমিযি ও মুওয়াত্তা ইমাম মালিক শিক্ষা দানের ইজাযাত গ্রহন করেন ১৯২৮ সনে। এই দু বছর তিনি সম্পূর্ণ সময় ব্যয় করেছেন লেখা পড়ার পেছনে। দেওবন্দে তিনি তাদের পত্রিকা আল জামইয়্যাতের সম্পাদক তখনই হতে পেরেছেন যখন সেখানকার আলিমরা তাঁকে সার্টিফাই করেছেন। কিছু মুর্খ লোক বলে "তিনি আলিম ছিলেন না"। তারা জানেন না মাওলানার অনেক বই বুঝতে হলে ছোট খাট আলেমদের পক্ষেও সম্ভব হবে না। ইসলামে যখন কাউকে আলিম বলা হয় তখন মাদ্রাসা পাশ কাউকে বুঝায় না। আলিম একটা বিরাট ব্যাপার। সায়্যিদ মওদূদী (রহঃ) মূলত আলিম শব্দটার যথার্থ অর্থেই আলিম। এটা কারো ভুল ভাঙ্গানোর জন্য না, বরং যারা অন্যায় অভিযোগের কোন সন্তোষজনক জবাব জানতেন না তাদের জন্য।

আমাদের ঘোষনা, আমাদের চ্যালেঞ্জ:
আল্লামা মওদুদী (রহ.) শুধু আলেমই নন, 
বরং বিশ্বব্যাপী অসংখ্য আলেমের উস্তাদ।
Please brwose this label link and see all post: 

আমাদের দোয়া: 
হে আল্লাহ! হে সমস্ত ক্ষমতার মালিক! আল্লাহ’র দ্বীনের এই একনিষ্ঠ মুজাহিদকে যারা অপবাদ দেয়, অপমান করতে চায় তাদের হয় হেদায়াত দান করো, না হয় দুনিয়া ও আখেরাতে উচিত শিক্ষাদান করো, আমিন 

Popular Posts